সমাপ্তিতে সূচনা পর্ব-৫+৬

0
178

#সমাপ্তিতে_সূচনা
#পর্ব ৫+৬
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

সজল সেই মেয়েটির সামনে বসে আছে শেষবার রিপনের সাথে যাকে দেখা গিয়েছিলো। মেয়েটি বললো,“আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে কেন?”

সজল রিপনের ছবি মেয়েটির সামনে রেখে বললেন,“একে চিনেন?”

“না।”

“একটু ভালোভাবে দেখুন।”

“বললাম তো চিনি না। কে ওনি?”

সজল এবার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগ্রহ করা ভিডিওটি মেয়েটিকে দেখালো। মেয়েটি এবার থতমত খেয়ে গেল।

সজল বললো,“এখনো বলবেন চিনেন না?”

“আসলে….।”

“কি?”

“সে আমার প্রেমিক ছিলো। তবে সেদিন আমাদের মধ্যে সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছে।”

“শেষ হয়ে গেছে নাকি তাকে খু/ন করে আপনি শেষ করে দিয়েছেন?”

“কী? রিপন খু/ন হয়েছে?”

মেয়েটির চমকে যাওয়া মুখশ্রীর দিকে বেশ গভীরভাবে তাকালো সজল। চমকানোটা অভিনয় নাকি সত্যি, সেটা বোঝার চেষ্টা করছে।

“দেখুন আমি তাকে মা/রি/নি। সত্যি বলছি। আমি কিছু করিনি।”

সজল বললো,“আপনি শান্ত হন। আপনি কিছু না করলে আপনার কিছু হবে না। আপনি আমাদের বলুন সেদিন রিপনের সাথে আপনি তার ফ্লাটে গিয়েছিলেন?”

“হ্যাঁ।”

“তারপর কি হলো?”

মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বললো,“স্যার আমি খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে। আমি সরল মনে রিপনকে ভালোবেসেছিলাম। সে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলো। আমি ভাবলাম তার পরিবারের সাথে দেখা করতে নিয়ে যাবে, কিন্তু না। সেখানে গিয়ে আমি সমস্ত ঘর ফাঁকা পেলাম। তারপর জানতে পারলাম রিপন সেখানে একা থাকে।
তারপর কথা বলার এক পর্যায়ে রিপন আমাকে বাজেভাবে স্পর্শ করছিলো। আমি বিরক্ত হয়ে চলে আসছিলাম, তখন ও বললো, ও আমাকে ওখানে রু/ম/ডে/ট এর জন্য নিয়ে এসেছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটি এতটা জগন্য মানসিকতার জানতে পেরে রাগে দুঃখে আমি তার গালে থাপ্পড় মেরে দেই। তখন সে রেগে গিয়ে আমার সাথে জোর-জবরদস্তি করা শুরু করে। আমি ভেবেছিলাম, আমার জীবনটা বোধহয় সেখানেই শেষ। ঠিক সেই মূহুর্তে রিপন খুব ভয় পেয়ে চিৎকার করে বলছিলো,“না এ হতে পারে না। তুমি আসতে পারো না।” রিপনের কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই। রিপন আমার থেকে কিছুটা দূরে সরায় আমি সেই সুযোগে পালিয়ে আসি।
তারপর কি হয়েছে আমি জানি না স্যার।”

সজল মেয়েটির কথা খুব ভালোভাবে শুনলো। তারপর বললো, “রিপন কি দেখে ভয় পেয়েছিলো সেটা আপনি জানেন?”

“না স্যার।”

“আচ্ছা। আপনি তবে যান। পরে প্রয়োজন হলে আমরা আবার আপনার সাথে যোগাযোগ করবো।”

মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। সজল মনেমনে বলছে,“রাব্বি, রিপন উভয়ই কাউকে দেখে ভয় পাচ্ছিলো। কিন্তু কে সে? কেনই বা এত ভয়?”
_____

নীলির ভোররাত থেকে ব্যাথা শুরু হয়। শান্ত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বলে, একটা বাড়িতে নিয়ে আসে।

নীলি ব্যথায় ছটফট করতে করতে বলে,“হাসপাতালে না গিয়ে এখানে কেন শান্ত?”

“এখানে একজন ভালো নার্স রয়েছে নীলি। তিনি তার বাড়িতে ডেলিভারি করাবে বলে জানিয়েছে। ”

“মানে?”

এরমাঝে নীলি ব্যথায় চিৎকার দিয়ে ওঠে। শান্ত বলে,“কথা বলো না। শান্ত থাকার চেষ্টা করো, কিছু হবে না আমাদের বাচ্চার।”

নীলিকে ঘরে নিয়ে এসে শোয়ানো হলো। ঘরের ভিতরে এক মধ্যবয়স্কা মহিলা উপস্থিত রয়েছে। শান্ত বলে,“বাচ্চা হতে কত সময় লাগবে?”

মহিলা বললো,“বাহিরের ঘরে যাও, দেখছি।”

শান্ত বাহিরের ঘরে গেল। মহিলা নীলির ডেলিভারি করাচ্ছে। বেশ কিছু সময় পর শান্ত বাহির থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।

শান্ত বাহির থেকে বলে,“আসবো?”

মহিলা বললো,“হ্যাঁ।”

শান্ত ভিতরে আসলে মহিলা বাচ্চা শান্তর কোলে তুলে দিয়ে বলে,“তোমার ছেলে সন্তান হয়েছে। তবে আপনার স্ত্রীর প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে।”

শান্ত বলে,“আমি খুব খুশি হয়েছে৷ এবার চলুন আমরা যাই।”

নীলি সব শুনতে পাচ্ছিলো। মহিলাটি বললো,“আপনার স্ত্রীর কি করবো?”

“ব্লিডিং হচ্ছে তো, এখানে রেখে দিন। একসময় ম/রে যাবে। তাছাড়া এই নির্জন স্থানে তাকে নিতে কেউ আসবে না।”

নীলি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,“এসব কি বলছো শান্ত?”

শান্ত নীলির দিকে তাকিয়ে বললো,“তুমি যা শুনছো। দুঃখিত নীলি তোমাকে সেদিন মিথ্যা বলার জন্য। আসলে আমার আর তাহিয়ার অনেক দিনের সম্পর্ক। তোমাকে অনেক আগেই ছেড়ে দিতাম, কিন্তু কি করবো বলো? তাহিয়া কোনদিন মা হতে পারবে না, তাই এই বাচ্চাটা আমাদের সংসারে খুব প্রয়োজন। তুমি বেঁচে থাকলে নিশ্চয় এই বাচ্চা আমাদের দিবে না, তাই তুমি বরং এখানে বসে ম/রো। চিন্তা নেই, যদিও অতিরিক্ত ব্লিডিং বন্ধ হয়ে যায়, তবুও তুমি বাঁচতে পারবে না। কারণ আমি তোমাকে এখানে তালাবন্দি করে রেখে যাবো।”

নীলি বিষ্ময় নিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে। শান্ত বললো,“আমি আসছি নীলি। ভালো থেকো, ওপারে।”

নীলি অনুরোধের সুরে বললো,“আমার বাচ্চাকে নিয়ে এভাবে যেও না শান্ত। আমাকে নিয়ে চলো, প্লীজ আমার সন্তানের থেকে আমাকে হারিয়ে যেতে দিও না। আমি তোমার কাছে জীবন ভিক্ষা চাইছি।”

“সেটা সম্ভব নয়।”

শান্ত বাচ্চা কোলে নিয়ে এগিয়ে যেতে নিলে নীলি শান্তর পা জড়িয়ে ধরে বললো,“প্লীজ শান্ত। মা ও সন্তানকে আলাদা করো না। শান্ত দয়া করো।”

শান্ত বললো,“আমি যে দয়া করতে জানি না।”

“পা ছাড়।” বলে শান্ত নীলিকে লাথি মেরে ফেলে দিলো। মহিলাকে নিয়ে বাহিরে এসে, বাহির থেকে তালাবদ্ধ করে চলে গেল।

নীলি ভিতরে বসে কান্না করছে। হঠাৎ নীলির কানে একটা কথা বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে,“আচ্ছা এত ভালোবাসার পর মানুষ বেঈমানী কিভাবে করে?”

নীলির স্মৃতির পাতায় শান্তর তাকে যত্ন করা, ভালোবাসা সবকিছু ফুটে উঠছে। আজকের শান্ত আর সেই শান্তকে সে মেলাতে পারছে না।

জীবনের আশা যখন ছেড়ে দিয়েছিলো ঠিক তখনি দরজা খোলার শব্দ পায় নীলি। নীলি খুশি হয়ে বলে,“আমি জানতাম শান্ত তুমি আমার সাথে বেঈমানী করতে পারো না।”

নীলি কথাটি বলে যখন সামনে তাকায় তখন সে চমকে উঠে। নীলি ভয় পেয়ে বলে,“ভূত।”

“না। ভূত নয় সত্যি। বাস্তব।”

আগন্তুকের কন্ঠ পেয়ে নীলি আরো চমকে উঠে।
আগন্তুক মেঝেতে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পায় সেখানে রক্তে লাল হয়ে গেছে। আগন্তুক নিচু হয়ে নীলির বাহু ধরে তাকে তুললো। নীলি বিষ্ময়িত নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রইছে।

আগন্তুক বললো,“বেঈমান কখনো বেঈমানী করা ছাড়তে পারে না নীলি। জেনেশুনে বেঈমানকে বিয়ে করেছিলে, তার ফল তো পেতে হবে।”

নীলি শারীরিক সব ব্যাথা ভুলে আগন্তুকের দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। আগন্তুক তাকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

আগন্তুক পুনরায় বললো,“বলেছিলাম তো সন্তানকে কাছে পেতে হলে শান্তর থেকে দূরে থাকো। তুমি কথাটা গুরুত্ব দিলে না। তার ফল পাচ্ছো।”

নীলি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,“আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একটু বেশি অন্ধ হয়েছি।”

আগন্তুক নীলিকে নিয়ে হাসপাতালে আসলো। হাসপাতালে আসতে আসতে নীলি জ্ঞান হারায়। জ্ঞান হারানোর আগ অব্দি নীলি আগন্তুকের দিকে মায়া-ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।

*
চলবে,
(ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#সমাপ্তিতে_সূচনা
#পর্ব ৬
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

সজল বেশ চিন্তিত হয়ে বসে রয়েছে। দু’টো খু/ন হয়ে গেল, কিন্তু তার সমাধান নাই। উপর মহল থেকে বেশ চাপ দেওয়া হয়েছে। কেসটা যেকোন মূহুর্তে তার হাত থেকে চলে যেতে পারে। সজলের চিন্তার কারণ তার ব্যর্থতা। কেসটা তার হাত থেকে চলে যাওয়া মানে সে ব্যর্থ।

সজল রিপনের বাসার সামনের দোকান থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ বারবার দেখছে, কিন্তু তাতে শুধু ঐ মেয়েটার সাথে তাকে দেখা ছাড়া বিশেষ কিছু নেই। কেউ নেই।

সহকারী অফিসার রাজু বললো,“স্যার একটা কথা বলি?”

“হ্যাঁ বলো।”

“স্যার আমরা ঘটনার দিনের ফুটেজ শুধু না দেখে তার আগের ফুটেজগুলো চেক করলে কেমন হয়? রিপনকে তার ফ্লাটে এসে কেউ মে/রে গেল। যে কাজটি করেছে নিশ্চয় সে একদিনে প্লান করেনি। হয়তো প্রথমে রিপনকে ফলো করেছে, তারপর প্লান সাজিয়েছে। কয়েকদিন আগের ফুটেজগুলো আমরা চেক করি। হয়তো কিছু পাওয়া যেতে পারে।”

সজল কিছুক্ষণ ভেবে বললো,“তুমি খুব ভালো একটা কথা বলেছো রাজু। আমাদের এই কাজটা আরো আগে করা উচিত ছিলো।”

রাজু মুচকি হাসলো। সজল দশদিন আগের ফুটেজ চেয়ে পাঠালো।
*
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সজলদের কাউকে সন্দেহ হচ্ছে না। সবকিছু বেশ স্বাভাবিক লাগছে। তেমন অস্বাভাবিক, সন্দেহবাজন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

হঠাৎ সজলের চোখ একটা বিল্ডিং এর মাঝ দিয়ে যাওয়া গলির ওখানে পড়লো। সিসিটিভি ফুটেজে গলির মুখটা ততটা স্পষ্ট নয় তবুও বেশ দেখা যাচ্ছে৷ সজল বললো,“একটু ব্যাক করো তো?”

“হ্যাঁ।”

দশ সেকেন্ড সামনে এগানো হলো। সজল হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বললো,“স্টাপ করো?”

সজল খুব ভালোভাবে দেখলো। গলির মুখে এক মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সজল মিনমিন কন্ঠে বললো,“ফুলি?”

সজল কোনকিছু না ভেবে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
______
বেশ অনেকটা সময় পর নীলির জ্ঞান ফিরলো। জ্ঞান ফিরতে নীলি ‘আমার সন্তান’ বলে কান্না করে দিলো।

হঠাৎ নীলির হাসপাতালে আসার ঘটনা মনে পড়লো। তাকে যে নিয়ে এসেছে তার কথা মনে পড়লো।

নীলি বেডে ধীরে ধীরে উঠে বসলো। একজন নার্স এরমধ্যে এগিয়ে আসলো। নার্স বললো,“আপনার কিছু লাগবে?”

“আচ্ছা আমাকে যে নিয়ে এসেছে সে কোথায়?”

“সে চলে গেছে। আপনার চিকিৎসা সব খরচ দিয়ে, সে চলে গেছে। আমাদেরকে বললো আপনার খেয়াল রাখতে।
সেই যে গেল আর আসলো না।”

“ওহ।”

নীলি ডাক্তারকে ডাকতে বললো। ডাক্তার আসলো এক প্রকার জোর করে ভর্তি বাতিল করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো নীলি।
*

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে নীলি নিজেদের বাড়ি এলো। সেখানে এসে দরজায় তালা দেখে বুঝে গেল, শান্ত এখানে নেই। নীলি মনেমনে বললো,“শান্ত তবে তাহিয়ার সাথে সংসার সাজাতে গেল।”

দরজার সামনে বসে পড়লো নীলি। কান্না করতে করতে বললো,“সংসার সাজাবে যখন সাজাও না। আমার সন্তানকে কেন কেড়ে নিলে? কেন?”
____

সজল ফুলির খোঁজে বাসায় এসে থমকে যায়। তাদের বাড়িতে কেউ নেই। সমস্ত বাড়ি ফাঁকা। মাকে ফোন দিবে ভেবে ফোন বের করে দেখে তার বাসা থেকে তাকে অনেকবার ফোন করা হয়েছে। ফোন সাইলেন্ট থাকায় সে বুঝতে পারেনি।

সজল তৎক্ষনাৎ তার মাকে ফোন দেয়। তার মা ফোন তুলে বলে,“কই থাকিস? এতগুলো কল দিলাম ধরলি না।”

“আম্মু কি হয়েছে? তোমার কন্ঠ এমন লাগছে কেন?”

“তুই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আয়। ফুলি রায়ানকে মে/রে পালিয়েছে। আমরা ঠিক সময় বাসায় না ফিরলে রায়ানকে একেবারে না মে/রে ফুলি যেতো না।”

“কি? এসব কি বলছো তুমি আম্মু?”

“ঠিক বলছি। রায়ানের অবস্থা বেশি ভালো না। সবাই এখন তোকে দোষ দিচ্ছে, কোথা থেকে তুলে এনেছিলি ফুলিকে?”

সজল ফোন রেখে দেয়। তৎক্ষনাৎ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
*

হাসপাতালে এসে সজল তার কাকা-কাকী এবং বাবা-মাকে দেখতে পায়। কাকা এবং বাবা বাসায় ছিলো না। ঘটনা শুনে এখানে আসে।

সজল বললো,“ভাইয়া কেমন আছে এখন?”

সজলের মা বলে,“জানি না। ডাক্তার এখনো কিছু বলেনি।”

কাকী মা এগিয়ে এসে সজলের গায়ে থাপ্পড় মারলো। তারপর বললো,“সব তোর জন্য হয়েছে। কোথা থেকে না কোথা থেকে তুলে এনেছিলি মেয়েটাকে? মেয়েটা আমার ছেলেকে খু/ন করে দিলো।”

কাকীমা কান্নায় ভেঙে পড়লো। কাকা এগিয়ে এসে তাকে ধরে বললো,“খু/ন করেছে কি বলছো এসব? রায়ান বেঁচে আছে এখনো। আর ও বেঁচে যাবে।”

কাকী মা বললো,“কোন অবস্থায় ওকে এনেছি তোমরা জানো? ওর গায়ে কত রক্ত ছিলো। কত?”

কাকী মা জ্ঞান হারালো। রায়ানের র/ক্তা/ক্ত দেহ এবং ফুলির একের পর এক ছুরি চালানোর দৃশ্য মনে করে কাকী মা জ্ঞান হারালো।
___
রায়ানের চিকিৎসা চলছে। অন্যদিকে সজল ফুলি সম্পর্কে জানতে উদ্ধৃত হচ্ছে। ফুলি আগে যেখানে কাজ করতো সেখানে খোঁজ নিলো।
ফুলি কে? কতদিন সেখানে কাজ করছিলো? কোথা থেকে এসেছে? সবকিছু।

তবে ব্যর্থ। সেখান থেকে বেশি কিছু জানা যায়নি। শুধু এতটুকু জানলো, ফুলি সেখানে একমাস কাজ করেছে। ফুলি নিজে থেকে তাদের বাড়িতে কাজ করতে এসেছিলো। যে তথ্যটুকু সজল আগেই সংগ্রহ করেছিলো। আগেরবার শুধু সজল ফুলির কথার সত্যতা যাচাই করছিলো, তাই বিশেষ কিছু জানার প্রয়োজন হয়নি।

*
সজল সাহানা বেগমের সামনে বসে আছে। সাহানা বেগমের সামনে ফুলির একটা ছবি রাখলো। তারপর বললো,“একে চিনেন? রাব্বি সাহেবের মৃত্যুর আগে একবারও দেখেছিলেন?”

সাহানা বেগম ফুলির ছবির দিকে তাকিয়ে বললেন,“হ্যাঁ। ফুলি। আমাদের পাশের ফ্লাটে কাজ করতো।”

সাহানা বেগম একটু থেমে পুনরায় বললেন,“এরসাথে রাব্বির খু/নের কোন সংযোগ আছে স্যার?”

সজল বললো,“এ আপনাদের পাশে ফ্লাটে কাজ করতো আর আপনারা আমাকে আগে জানাননি?”

সাহানা বেগম বললেন,“আপনারা তো ওর কথা জানতে চাননি?”

“আচ্ছা রাব্বির মৃ/ত্যু/র পর ও আপনাদের ফ্লাটে এসেছিলো?”

“হ্যাঁ একবার দেখেছিলাম।”

“সম্ভাবত তখনই আপনার ফোন থেকে নাম্বার মুছে দিয়েছে।”

“মানে? তারমানে কি ফুলি খু/ন করেছে?”

“হ্যাঁ।”

সজল সাহানা বেগমকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।
*
সজলের এখন ফুলিকে খুঁজে বের করাটা কাজ। ফুলি খু/নি তা প্রমাণিত। শুধু খু/নে/র কোন কারণ দেখছে না সজল।

কেসটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলো,“রাব্বি, রিপন ও রায়ান বন্ধু। এবং তারা এক গ্রামেই থাকে।”

ফুলিকে খুঁজে বের করার পাশাপাশি খু/নে/র কারণটা সজলকে খুঁজে বের করতে হবে। রায়ানের সাথে ফুলির কিসের শত্রুতা? কেন সে তার দুই বন্ধুসহ তাকে মা/র/তে চাইছে? কেন?

এসব প্রশ্নের উত্তর একমাত্র ফুলি এবং রায়ান দিতে পারে। এজন্য রায়ানের বেঁচে থাকা প্রয়োজন।
*
সজল সব স্থানে ফুলিকে খুঁজে বের করার জন্য লোক লাগিয়ে দিলো।

অন্যদিকে রায়ানের চিকিৎসা চলছে। অনেক র/ক্ত/ক্ষ/রন হওয়ায় রক্তের প্রয়োজন। রায়ানের ব্লাড গ্রুপের রক্ত ব্লাড ব্যাংকে পাওয়া যায়নি।

রায়ানের বাবা, কাকা রক্তের জন্য চারদিকে খোঁজ লাগাচ্ছে। ঠিক সেই মূহুর্তে একজন এসে বললো,“আমার রক্তের গ্রুপ….। আমি রক্ত দিতে পারি।”

রায়ানের বাবা, মা তো হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। তারা মেয়েটিকে নিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে।

রায়ানের রেখে যাওয়া পুলিশরা বাঁধা দিচ্ছিলো তবে রায়ানের বাবা, মা তাদের থামিয়ে দিলো। ডাক্তারের সাথে মেয়েটি ভিতরে চলে গেল রক্ত দেওয়ার জন্য।

ডাক্তার বললো,“আপনি ওনার(নার্স) সাথে ওদিকটায় যান।”

মেয়েটি মাথা নাড়ালো। নার্সের সাথে কিছুটা যাওয়ার পর নার্স বললো,“আপনি একটু এখানে দাঁড়ান আমি এখনি আসছি।”

মেয়েটি মনেমনে বললো,“মেঘ না চাইতে বৃষ্টি।”

মেয়েটি মাথা নাড়ালো। নার্স এমারজেন্সি কাজে চলে গেল। মেয়েটি ঘুরে অন্যদিকে চলে এলো।

রায়ানের বেডের সামনে দু’জন নার্স রয়েছে। মেয়েটি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো। মেয়েটি অন্যদিকে চলে গেল। সেদিকটায় জানালা রয়েছে। মেয়েটি কিছুটা আড়ালে গিয়ে একটি বল জানালার গ্লাসে মে/রে দিলো।

শব্দ পেয়ে নার্স দু’জন এদিকে দেখতে চলে এলো। মেয়েটি রায়ানের কাছে চলে গেল। রায়ানের কাছে গিয়ে কানে কানে বললো,“শুভ বিদায়। চিরবিদায়।”

অক্সিজেন মাক্সটা খুলে দিলো। তারপর নিজের কাছে থাকা ছুরিটা বের করে রায়ানের গ/লা/য় বসিয়ে দিলো।

এরমধ্যে নার্সরা এদিকে এগিয়ে আসছে। পায়ে শব্দ পেয়ে মেয়েটি উল্টোদিকে চলে গেল।
____
রায়ানের মৃ/ত/দে/হের পাশে বসে তার পরিবার কান্না করছে। অন্যদিকে সজল সবার উপর চিৎকার, চেঁচামেচি করছে।
সজল বললো,“অপরিচিত কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে এলাউ করলেন কিভাবে আপনারা?”

পুলিশরা বললো,“আপনাদের পরিবার এলাউ করলে আমরা বাঁধা দেওয়ার কে?”

সজল এগিয়ে এসে তার পরিবারকে বললো,“যখন জানতে রায়ানের উপর যে আঘাত করেছে সে একটা মেয়ে, তাহলে একটা মেয়েকে কিভাবে রায়ানের কাছে যেতে দিলে?”

রায়ানের বাবা বললো,“কিন্তু ও তো ফুলি ছিলো না?”

সজল বললো,“ফুলি ছিলো না সেটা তোমরা বুঝলে কিভাবে? আমাকে বলো? ছদ্মবেশে কি আসতে পারে না?”

“ছদ্মবেশে আসবে ঠিক আছে। কিন্তু গায়ের রং কিভাবে বদলাবে?”

“মানে?”

“যে মেয়েটা র/ক্ত দিতে এসেছিলো তার হাত দুধের মতো সাদা ছিলো। মুখটা ওড়না দিয়ে আড়াল করা ছিলো, তবে হাত দেখেছি। সুন্দর ছিলো। তাই তো ও ফুলি সেটা আমরা ভাবিনি। কালো হলে নিশ্চয় বাঁধা দিতাম।”

সজল বিষ্ময়িত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বিরবির করে বললো,“তবে কি ফুলি চরিত্রটাই মিথ্যা?”

*
চলবে,