সর্বনাশীনি তুমি পর্ব-০৫

0
273

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:৫
#Mishmi_muntaha_moon

অনেক ভেবেচিন্তে পাঞ্জাবি নিলো যেহেতু সেহরিশ বেশিরভাগ পাঞ্জাবি পরে তাই আর সাথে একটা আতর নিয়ে নিলো নিজ আইডিয়ায়।
পরেরদিন সকালে কলেজ গেলো না উপমা ভালো লাগছে না বলে সকালে সেহরিশ নিজে এলো উপমাদের বাসায় উপমার ফেমিলিকে সাথে করে নিয়ে যেতে ছোট একটা আয়োজন করা হয়েছে।দিনটা শুক্রবার হওয়ায় উপমার আব্বুও বাসায়ই ছিলো।বাড়িতে এসে কিছুক্ষন বসে কথাবার্তা বলল।উপমার আব্বুও সুন্দর ভাবেই কথা বলল।
কিন্তু যেই সেহরিশ উনাদের ওর সাথে যেতে বলল সাথে সাথে উপমার বাবা সুন্দর ভাবে না করে দিলো।কিছুটা এক্সকিউজও দিলো।অনেক জোর করার পরও না করায় কঠিন মুখ অথচ জোড়পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বিদায় দেওয়ার উদ্দেশ্যে উঠে পড়লো।উপমার তার আব্বুর সিদ্ধান্তে খুবই মন খারাপ হলো কিন্তু কিছু বলতেও পারলো না।

_

সারাটা দিন উপমার অস্থিরতায় কাটলো।এতো কষ্ট করে গিফট কিনলো তাও দেওয়া হলো না।বারান্দায় ঝুলে ঝুলে সুর্যাস্ত দেখছে।দূর থেকে কোকিল ডাকার আওয়াজ আসছে।চোখ বন্ধ করে উপভোগ করার মাঝেই গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনতে পেয়ে অলস ভংগিতে চোখ খুলতে পরিচিত কালো গাড়িটি দেখে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো এইটা কি সেই চেনা গাড়িটাই নাকি।তখনই মোবাইল বেজে ওঠায় ব্রু কুচকে বারান্দা থেকে চলে যায়।আননোন নাম্বার সেভ করা না।কানে ধরে চুপ থাকলো কন্ঠ শুনার জন্য পরিচিত কেউ কিনা।

‘নিচে আসো উপমা আমি ওয়েট করছি।আন্টিকে বলে আসো। আমি কল দিয়ে বলেছিলাম আন্টিকে।’

বলেই কল কেটে দিলো সেহরিশ।উপমা কিছুক্ষন দাড়িয়েই ভাবলো কতো চতুর ছেলেটা আগে ভাগেই তার মাকে পটিয়ে রেখেছে।তার মার আচরণে তো এইটা বোঝায় যায় যে তার মা রোকেয়ার প্রস্তাবে রাজি।

উপমা আগে গেলো তার মার কাছে। উপমার বাবা মা একসাথেই বসে ছিলো।উপমাকে দেখে তার মা বলল

‘হুম আমাকে ইশফা কল করে বলেছিলো যা তুই তারাতারি রেডি হয়ে নে ‘

‘কোথায় যাওয়ার কথা বলছো?

‘ইশফার আম্মু দাওয়াত দিয়েছিলো। আমাকে ফোন করে বলল উপমা কে পাঠিয়ে দিতে। ‘

‘ওহ’

উপমা জোড়পূর্বক হাসি টেনে কেটে পড়লো।মনে মনে ভাবলো ‘উফ আম্মু তো ছুপেরুস্তাম নিকলে’

রুমে এসে চিন্তায় পরে গেলো কি পড়বে। মনে হচ্ছে যেনো কোনো জামাই নেই তার।অনেক ভেবেচিন্তে হাল্কা গোলাপি রঙের একটা গাউন পরে চুল গুলো ভালোভাবে বেধে নিলো।
নিচে যেতেই সেহরিশকে নজরে পড়লো বেগুনি রঙের পাঞ্জাবী। উপমা সেহরিশের সামনে গিয়ে দাড়াতেই সেহরিশ চোখের সানগ্লাস খুলে উপমাকে নিজ থেকে উপর পর্যন্ত পরোখ করে বলল
‘প্রায় আধাঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম’

উপমা সেহরিশের কথা ইগনোর করে মুচকি হেসে বলল
‘হ্যাপি বার্থডে’

‘থেংক ইউ।এইবার গাড়িতে উঠে বসো নাহলে তোমার বাবা দেখলে তুলকালাম পাকাবে’

সেহরিশের কথায় উপমা মুখ বাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

_
গাড়িটা একটা সুন্দর রেস্টুরেন্টের সামনে থামালো সেহরিশ।তারপর বিনাবাক্য হাত ধরে রেস্টুরেন্টের টপফ্লোরের নিয়ে গেলো। টপফ্লোরটা একটা খোলামেলা জায়গা।ফুলের টব দিয়ে ডেকোরেট করা হয়েছে।একটা টেবিলের সামনে হাত ছেড়ে বসতে বললে বসে আশে পাশে দেখতে লাগলো উপমা।
কিছুক্ষন চোখ ঘুরিয়ে এদিক সেদিক দেখে সামনে তাকাতেই সেহরিশের অপলক চাহনিতে চোখ আটকাতেই চোখ নামিয়ে ঠোট কামড়াতে লাফলো উপমা।

‘আম্মুর কথায় স্ট্রেস ফিল করছো?’

সেহরিশের কথায় উপমা চমকে তাকালো সেহরিশের দিকে।মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে তারাহুরো করে বলল

‘না না,, স্ট্রেস ফিল করবো কেনো উনি তো আমাকে ফ্রি মাইন্ডে বলেছে আমি কিছু মনে করি নি বরং,,,,।বাই দা ওয়ে আপনি জানলেন কি করে।কান পেতে শুনেছেন নাকি!’

উপমা কথায় সেহরিশ চেয়ারে গা এলিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বলল
‘আমি কান পাতি নি বরং তোমাদের কথা আমার কানে এসে ধরা দিয়েছে।’

‘যত্তসব আজগুবি কথাবার্তা’
উপমা ফিসফিস করে বলে টেবিলে তাকিয়ে থাকলো।গিফটের কথা মনে পড়তেই ব্যাগ থেকে একটা শপিংব্যাগ বের করে টেবিলের উপর দিয়ে সামনে বাড়িয়ে বলল

‘আপনার বার্থডে গিফট’

সেহরিশ এক ভ্রু উচিয়ে দেখে মুচকি হেসে দিলো।তারপর উপমার হাত থেকে নিয়ে মাথাটা নিচু করে বলল
‘থেংক ইউ ডেয়ার’

সেহরিশের সম্বোধন করার শব্দ টি শুনে কিছুটা লজ্জা পেলো।মিইয়ে যাওয়া স্বরে বলল
‘আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি’

‘হুম?’

‘আপনি তো আগেই আমাকে বলতে পারতেন আমি তো আবার খুব ভালো মনের মানুষ মাইন্ড করতাম না।’

‘সব কথা মুখে বলতে হয় না চোখের ভাষা বুঝতে হয় কথার রেশ অনুভব করতে হয় এইসবে তো তুমি মাথামোটা’

__

বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হতে হতে ৮ বাজলো।রাস্তাঘাট আলোকিত। বাড়ির কাছাকাছি পৌছাতেই হঠাৎ কিছু হলো রাস্তার সামনে কোনো ব্যাক্তিছায়া দেখে হঠাৎ ব্রেক কষলো কিন্তু গাড়ি বেশি স্পিডে চলায় ব্রেক ততক্ষণে না হওয়ায় সেহরিশ গাড়ি বা দিকে বাকিয়ে দিলো।আকস্মিক ঘটনায় অস্থিরভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস এর গতি কমে যেতে লাগলো উপমার।সামনে গাছ, সেহরিশ সাথে সাথেই উপমাকে জরিয়ে ধরলো।তারপর ভয়ংকর আওয়াজ গাছে বারি খাওয়ার।আর ধোয়ার ছুটাছুটি সর্বস্তরে।

চলবে,,,