#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১৪
–সত্যি বিয়ে করেছি তোদের কে বলা হয়নি।
একথা শোনে নাবিলার চরম পরিমানের রাগ হচ্ছে। মনে মনে বলতে লাগলো এ বিয়ে আমি টিকতে দিবো না। তুই শুধু আমার।
নাবিলা স্বাভাবিক ভাবে ই বলতে শুরু করলো, কীভাবে বিয়ে করলি বল তো।
শুভ্র বলতে শুরু করলো প্রথম দিন থেকে সব কথা। শুভ্র অহানর কথা বলছে এদিকে নাবিলা লুচির মতো ফুলছে। কিন্তু শুভ্রকে বুঝতে দিচ্ছে না নাবিলার এই অনুভূতি।
—আচ্ছা শুভ্র অহনাকে তো এখনো বাসায় আনিস তাই না।
— নাহ। কিন্তু খুব দ্রুত নিয়ে আসবো, অহনাকে আমি অনেক ভালোবাসি।
আরো কিছুক্ষন কথা বলতে বলতে শুভ্র এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে। নাবিলা চাচ্ছিলো ই এটা, শুভ্রকে কথায় ভুলিয়ে রাখতে যেনো অহনার সাথে কথা না বলতে পারে।
অহনা তো তোমাদের বাড়িতে এখনো পারমানেন্ট ভাবে যাইনি আর যেতে ও দিবো না। এতো ভালোবাসা শেষ করে দিবো।এমন ব্যবস্থা করবো তুমি নিজে ই অহনাকে ঘৃণা করবে। এটা বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো নাবিলা।
পরের দিন সকালে,
নাবিলা জিহাদকে কল করলো অহনার ব্যপারে জানার জন্য। নাবিলার দেশে থাকা কোন এক ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে জিহার এর নম্বর নিলো কারন শুভ্র মুখে জিহাদের নামটা অনেক বার শোনেছে। কল রিসিভ করার পর,
—- কে আপনি।
—তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী।
—মানে ঠিক বুঝলাম না।
—তাহলে শোনো, আমি নাবিলা।
— আপনি নাবিলা নাকি কাবিলা এটা দিয়ে আমি কী করবো।
—ফাজলামো না করে আমার কথা শোনো।
—বলেন।
—তোমার অহনাকে চাই আমার শুভ্র কে চাই।
আমরা দুজন হাত মিলালে কিন্তু দুজনের উদ্দেশ্য সফল হবে।
—হুম। কিন্তু শুভ্র জানতে পেলে কিন্তু জানে মেরে ফেলবে।
—তুৃমি আমার উপর ভরসা রেখো জিহাদ কিছু হবে না।
—আচ্ছা কী করতে হবে বলেন।
—তুমি আজকে ই অহনাদের বাসায় যেবে ওর সাথে কিছু ছবি তুলে আমাকে দিবো। তাহলে ই হয়ে যাবে।
—আচ্ছা ঠিক আছে। এতে কাজ হবে তো।
—হুম তুৃমি যাও।
ঐদিকে অহনার কষ্টগুলো দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। অহনা ছাদের একপাশে দড়িয়ে ফুল গাছগুলোকে একমনে দেখছে।আর ভাবছে, রনিকে তো শুভ্রর মা সব কিছু বলে গেছে বিয়ের ব্যাপারে, ছেলেটা ও সুন্দর করে মেনে নিয়েছে,শুধু এইটুকুই বলেছে, আমার ছোট্ট পরীটা যদি ভালো থাকে তাহলে আমি ও ভালো থাকবো। রনি কী অদ্ভুত টাইপের ছেলে আমার সুখের জন্য নিজের ভালোবাসা টা বিসর্জন দিলো। এটা ই ভালো হইছে যদি বলে বসতো অহনা তোকে চাই তাহলে আমি বা কী করতে পারতাম ছেলেটার জন্য।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ই রনি ছাদে আসলো।
—এই অহনা তুই এখানে তোকে আমি কত খুজলাম। ছাদে কি করতেছিস।
—কিছু না ভাইয়া দাড়িয়ে আছি। কেনো কিছু বলবে নাকি।
–হুম আর মন খারাপ করে থাকিস না শুভ্র হয়তো কাজে ব্যস্ত আছে।
—ভালোবাসলে হাজার ব্যস্ততার মধ্যে ও কথা বলা যায় ভাইয়া।
—আরে অহনা তুই শুধু শুধু ভুল বুঝিস না। আমরা সবাই আছি তো সব ঠিক হয়ে যাবে।
—হুম।
—আচ্ছা অহনা চল আজকে তোকে ঘুরতে নিয়ে যাই। তোর ভালো লাগবে।
—না ভাইয়া আমি কোথাও যাবো না।
—আর চল তো ভালো লাগবে। নাকি আমাকে ভয় পাচ্ছিস। না যেতে চাইলে আমি অনেক রাগ করবো অহনা।
রাজি হলাম রনি ভাইয়ার জোরাজুরিতে, উনি যখন সব কিছু জানে ই তাহলে উনার সাথে যেতে তো আমার কোনো সমস্যা নাই। তাই্ সিদ্ধান্ত নিলাম যাবো আমি।
বিকেল বেলা।
আমি রেডি হলাম। রেডি হলাম বলতে শুধু লং থ্রি -পিছ পড়ে চুলগুলো এক সাইডে এনে রেখেছি এতোটুকু ই। কিন্তু যাকে মন থেকে ভালোবাসা যায় সে দেখতে কুৎসিত হলে ও পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মনে হয়। রনির ও তাই মনে হচ্ছে। বার বার প্রেমে পড়তে মন চাচ্ছে কিন্তু অহনা অন্য কারো বিবাহিত স্ত্রী এটা মনে হওয়ার পর মনকে শক্ত করে নিতে হয়।
রনি আর অহনা যেই না দরজা খুলে বের হতে যাবে অমনি জিহাদ এর আগমন।
অহনা জিহাদকে দেখে রীতি মতো শকট। কখনো তো বাসায় আসেনি আর শুভ্র জানতে পারলে ও অহনার সমস্যা হবে।
—আপনি কেনো এসেছেন।
—এদিক দিয়ে ই যাচ্ছিলাম ভাবছি তোমাকে দেখে যাই।
—কেনো বহিরে সাইনবোর্ড লাগিয়েছি নাকি যে, আমার বাসার পাশ দিয়ে গেলে আমাকে দেখে যাবেন।
—এমন করে বলছো কেনো, আর তোমার সাথে এটা কে।
—আপনাকে বলার কোনো প্রয়োজন মনে করছি না।
এই বলে পাশ কাটিয়ে রনিকে নিয়ে চলে গেলো।
যাও পাখি যাও দুদিন পর থেকে আমাকে ই খুজবা। একবার আমার হতে দেও এই তেজ আর থাকবে না। যাই আমার কাজ করি।
সাথে সাথে নাবিলাকে কল করে,
—হে বলো জিহাদ।
—আমার কাজটা সহজ হয়ে গেছে। অহনার সাথে একটা ছেলে ওরা মনে হয় ঘুরতে বের হয়েছে। রাতে ওদের পিক পেয়ে যাবে। তোমার আর শুভ্র কিছু পিক দিয়ো তো আমাকে।
—এইটা টেনশন করো না পেয়ে যাবে। এখন কথা না বলে ওদেরকে ফলো করো।
—ওকে।
রনি অহনাকে নিয়ে একটি বলুচরের দিকে যায়। কারন অহনার প্রকৃতি দেখতে ভালো লাগে এটা রনি জানে। তাই নিয়ে আসলো। দুজকে ই হাটতেছে। অনেক মানুষ ই এখানে ঘুরতে আসে।
অহনা চোখ বন্ধ করে প্রকৃতিকে উপভোগ করছে।স্নিগ্ধ বাতাস বার বার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে। রনি একমনে তাকিয়ে তা দেখছে। যানে তার ছোট্ট পরীটা এখন অন্য কারো তাও মনটা যে তা মানতে নারাজ।
এখানে এসে মনটা কিছুটা ভালো লাগছে। অহনা ও চাইছিলো নিজে একটু চিন্তা মুক্ত রাখতে। দুজনে মিলে অনেক ছবি তোললো। অহনার ছবি তোলতে অনেক ভালো লাগে। তারপর মাঝ রাস্তা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফুচকা খেলো, পরিবেশ টা সুন্দর তাই অহনা থাকতে চাইলো কিছুক্ষণ।
এভাবে ই অনেক রাত হয়ে গেলো, মানুষের শুন্য হতে লাগলো রাস্তা গুলো অহনা আবদার করলো খালি পায়ে হাটবে। কয়েক ঘন্টা জন্য হলে ও অহনা একটু সস্তি চাচ্ছে তা বুঝস যাচ্ছে। ক্লান্ত হয়ে গেছে এই কদিনে। অহনার এসব পাগলামি দেখে অপন মনে হাসতেছে রনি।
কিন্তু অহনা তো জানতো না এসব পাগলামি যে জীবনে কাল হয়ে দাড়াবে।
ঐদিকে,
জিহাদ দূর থেকে অনেকগুকো পিক তোলেছে অহনার আর রনির। ওদের পিকগুলো এডিট করে অনেকটা ই কাছে নিয়ে এসেছে যে কেউ দেখলে ই সন্দেহ করবে।
খুশি মনে পিকগুলো পাঠিয়ে দিলো নাবিলার কাছে।
বেশকিছু ক্ষন পর,
— কী রে শুভ্র কাজ করতেছিস।
—হে ফোনটা দে তো আজকে আমার জানপাখি টাকে কল দিতে ই হবে। এতো ব্যস্ত থাকি মোবাইলে সীম লাগাইতে ই পারি না।
—তুই এমন চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করলি আমার জানা ছিলো না।
—দেখ আর যা ই বলিস, অহনাকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবি না তাহলে কী করি এটা জীবনে ও ভাবতে পারবি না।
ফোনটা শুভ্র কে দিয়ে বললো,
— বাজে কথা বলবো কেনো, এই দেখ তোর বউ অন্য ছেলের সাথে। ছবি না দেখালে তো বিশ্বাস করতি না। বলি কী এমন মেয়েকে কী করে বিয়ে করলি।
চলবে।