#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১৫
ফোনটা শুভ্র কে দিয়ে বললো,
— বাজে কথা বলবো কেনো, এই দেখ তোর বউ অন্য ছেলের সাথে। ছবি না দেখালে তো বিশ্বাস করতি না। বলি কী এমন মেয়েকে কী করে বিয়ে করলি।
ছবিগুলো দেখা মাএ ফোনটা বিছানায় ছুরে মারে। বিশ্বাস করি না এসব আমি। আমার অহনা এমন না। আর তুই এসব ছবি কোথা থেকে পেলি।
—তুই কালকে বললি না শুভ্র তারপর আমার এক বন্ধুকে বললাম, বন্ধুটা আমার কথা শোনে আমাকে এই ছবিগুলো দিলো।
তোর কী মনে হয় তোর এসব ফালতু ছবি আমাকে দিলে ই আমি অহনাকে অবিশ্বাস করবো। ভুল তুই নাবিলা। আমি অহনাকে অনেক ভালোবাসি তোর এসব নোংরা খেলা বিন্দু পরিমান অবিশ্বাস তৈরি করতে পারবে না আমার মনে। যা তুই আমার চোখের সামনে থেকে।
নাবিলা রেগে চলে গেলো, শুভ্রর ও প্রচন্ড রাগ হচ্ছে যা ই হক নিজের ভালোবাসার মানুষ এভাবে কেউ উপস্থাপন করলে খারাপ তো লাগে ই। শুভ্র আর একমুহূর্ত ও দেরি না করে নাবিলার ভাই তামিম এর কাছে গেলো। তামিমের রুমে ডুকার সাথে সাথে তামিম জিজ্ঞেস করলো।
—কী হয়েছে ভাইয়া কিছু লাগবে। আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো।
শুভ্র শান্ত ভাবে উওর দিলো,
—হে, তামিম তোর ফোনটা আমাকে দে তো।
তামিমের কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।
তামিমের ফোন থেকে সিম খুলে, নিজের ফোনে ডুকিয়ে সাথে সাথে কল দিলো অহনাকে।
কিন্তু অহনা কল রিসিভ করছে না। এতে শুভ্র দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেছে। শুভ্র মনে মনে চিন্তা করতেছে অহনা কী ইচ্ছে করে কল ধরতেছে না। ছবিগুলো কী সত্যি ই ছিলো।
প্রায় অনেক্ক্ষণ পর,
অহনাকে কল দিয়ে না পেয়ে শুভ্রর মার কাছে কল দিলো।
—-মা অহনার কি হয়েছে, অহনা আমার কল রিসিভ করছে না কেনো।
ছেলের এভাবে কথা বলতে দেখে শুভ্র মা বুঝতে পারলো ছেলে বেশ রেগে আছে।
— কি জানি বাবা তুই শান্ত হও। হয়তো দেখে নাই তুই কল দিলি। মাথা ঠান্ড কর। তুই কেমন আছিস বাবা।
— ভালো মা। আমার কিছু ই ভালো লাগছে না। রাখি এখন।
এভাবে রাতটা কেটে গেলো।
পরের দিন সকালে,
রাত করে বাসায় ফেরার কারনে অহনা ফোন সাইলেন্ট রেখে ঘুমিয়েছিলো। ঘুম থেকে উঠে দেখে একটা নম্বর থেকে অনেকগুলো কল এসেছে যেহেতু নম্বরটা দেখে বাংলাদেশের মনে হচ্ছে না তাই অহনা ধরে ই নিলো কল টা শুভ্র করেছে।
অহনা কান্না করতে লাগলো এতো দিন পর কল দিলো তাও কল রিসিভ করতে পারেনি।
ঐদিকে শুভ্র সিগারেট খাচ্ছে আর ভাবছে অহনা কী তাকে ভুলে গেলো, মিথ্যা ছিলো কী তাদের ভালোবাসা। দেখি তো আবার কল দিয়ে। এবার কল দেওয়ার সাথে সাথে অহনা রিসিভ করে।
—অহনা কোথায় ছিলে তুমি।কতোগুলো কল দিলম।
ঐপাশ থেকে শুধু ই কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। কান্নার জন্য অহনা কিছু বলতে পারতেছে না।
— এই পাগলি তুমি কান্না করতেছো কেনো। আমি চলে আসবো। আমার সব কাজ শেষ চলে আসবো আমি দুদিনের মধ্যে।
— আপনি এতোদিন কোথায় ছিলেন, কথা বলেননি কেনো আমার সাথে।
—একটু সমস্যায় ছিলাম জানেমান। আচ্ছা তুমি কী কোনো ছেলের সাথে কোন রকম ছবি তোলেছো।
আমি ছবি তোললাম তা উনি জানলো কীভাবে। যদি বললে রাগ করে এখন না বাসায় আসুক তারপর বলবো। কথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যাই।
— কী হলো অহনা কী ভাবছো। কিছু বলছো না কেনো।
— না ভাবছিলাম আপনি আমাকে ভুলে গেলেন নাকি। নতুন কাউকে পেয়ে
— নাহ্।আমি তোমাকে কখনো ভুলবো না।
এভাবো কথা হলো ওদের মাঝে অনেক্ষন।
শুভ্র আর ছবির ব্যাপারে জানতে চায়নি।
বিকেল বেলা,
অহনা ছাদে দাড়িয়ে আছে, পড়ন্ত বিকেলের টকটকা লাল সূর্যের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে অহনা। পাশে এসে নিঃশব্দ দাড়ালো রনি। কোনো কথা বলছে না প্রিয়তমা হাসি মুখ খানা মুগ্ধ নয়নে দেখছে।
রনির জানে এই একতরফা ভালোবাসার শেষ পরিণতিটা যে কষ্ট। তাও মন টা দমিয়ে রাখার কোনো ঔষধ যে তার কাছে নাই।
ছোট বেলে থেকে ই জানতো অহনার সাথে তার বিয়ে ঠিক। তাই অন্য কোনো মেয়ের প্রতি কখনো দৃষ্টি দেয়নি। সব সময় ই অহনাকে ভালোবাসে এসেছে। কিন্তু অহনাকে বিয়ের ব্যাপার টা জানানো হয়নি, অহনা ছোট ছিলো বলে।
কিন্তু আজ যে তার ছোট্ট পরীটা অনেক বড় হয়ে গেছে। কাউকে না জানিয়ে বিয়ে ও করে নিয়েছে। অন্য কোনো পুরুষ হলে হয়তো বা অহনার বিয়ে টা মেনে নিতো না। কিন্তু রনির কাছে ভালোবাসার মানে টা একটু আলাদা তাই তো প্রিয় মানুষটির সুখের জন্য মুখবন্ধ করে সব সহ্য করে নিচ্ছে।
হঠাৎ পিছন ফিরে রনিকে দেখলো অহনা ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে ডাকলো বার কয়েক কিন্তু সারা তো নাই। হঠাৎ ই ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো,
—এই ভাইয়া এতো কী ভাবছেন।
— কই কিছু না তো।
— কিছু না বললে ই হলো নাকি, কখন থেকে ডাকছি। কোনো সারা নেই।
—হুম কিছু না শুভ্র সাথে কথা হয়েছে।
—হে শুভ্র আগামী কাল চলে আসবে।
–তাহলে তো তুই অনেক খুশি।
—হে ভাইয়া।
এদিকে নাবিলাকে সারা দিন কল দিচ্ছে জিহাদ। নাবিলা বার বার কেটে দিচ্ছে। বিরক্ত হয়ে নাবিলা এবার কল রিসভ করলো।
—নিজের কাজ শেষ হয়েছে বলে আমাকে ভুলে গেলে চলবে নাকি।
—ভুলে যাবো কেনো, আর তুমি যে ছবি দিছো এগুলো দিয়ে কিছু হয়নি। শুভ্র অহনাকে অবিশ্বাস করেনি।
—তোমাদের ছবি দেও শুভ্র অহনাকে অবিশ্বাস করে নাই বলে কী হয়েছে। আমি অহনাকে অবিশ্বাস করাবো।
—আমি আসছি আগামী কাল বাংলাদেশ। যা হবে আগামী কাল আমি আসার পর ই হবে। রাখলাম এখন।
অহনা অনেক খুশি আজকে, শুভ্র আসতেছে। প্রিয় মানুষটি মুখটা দেখার জন্য মনটা বেকূল হয়ে আছে।
অহনা বুঝতে পারে রনি কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু এখন তো কিছু করার নেই। এসময় ভাবে ডেকে বলে দেই ভাইয়া আপনি চলে যান এখানে থাকলে আপনার কষ্ট টা আরো বাড়বে। কিন্তু পরক্ষণে ই মনে হয় এতে যদি আরো বেশি কষ্ট পায়।
বিকেলের দিকে, অহনার ফোনে কল আসে। রিসিভ করতে বললো,
—জানেমান রেডি হয়ে নিচে আসো, রাসেল গাড়ি নিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করতেছে।
— কেনো আমি কোথায় যাবো।
–এতো কথা বলো কেনো, যেটা করতে বলছি ঐটা করো।
এটা বলে ই কল কেটে দিলো, অহনা দ্রুত রেডি হতে চলে গেলো। শুভ্র কিনে দেওয়া ড্রেসগুলো থেকে একটা থ্রি পিছ পরে নিলো। স্কাফ পড়ে নিলো ২০ মিনিট এর মধ্যে রেডি হয়ে নিচে গেলো। গিয়ে দেখে রাসেল গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। গাড়িতে উঠে বসলো কিন্তু অহনা বাসার কাউকে বলে আসেনি।
ফোনটা ও ভুলে বাসায় রেখে আসছে।
কিছুক্ষণ পর দেখে রাগ রাসেল ঐ বাসায় নিয়ে আসে যে বাসায় শুভ্র অহনার বিয়ে হয়েছিলো। কিন্তু অহনার এই বাসাটা দেখলে ই ভয় লাগে।
রাসেলের ডাকে অহনা গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো
—ভাবি আপনি ভেতরে যান।
—কিন্তু শুভ্র কোথায়।
— কিছু বলা নিষেধ ভেতরে গেলে ই দেখতে পাবেন।
অহনা ভেতরে গিয়ে কাউকে পেলো না তাই ভয় পেতে লাগলো। রুমের ভেতরে অনেক অন্ধকার। লইটা জ্বালিয়ে দেখে শুভ্র দাড়িয়ে হাসতেছে।
শুভ্রকে এভাবে দেখে অহনা দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে। শুভ্র নিজেকে সামলাতে না পেরে অহনাকে নিয়ে বেডে পড়ে যায়।
—আল্লাহ এতো ওজন তুমি। কী খাও বলো তো।
—কী আমি ওজন বেশি।
ছাড়ুন আমাকে আমি আপনার কাছে থাকবো না।
—আরে আমি কী বলছি নাকি ওজন বেশি। জিজ্ঞেস করলাম কী খাও।
—হইছে আমাকে বুঝাতে হবে না দুইটা এক কথা ই।
—হইছে আমার মহারানী রাগ করতে হবে না অনেক দিন হলো রোমান্স করতে পারি না কই একটু আদর করবে তা না ঝগরা শুরু করে দিছো।
—হুম।
অহনা শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে। শুভ্র কপালে ঠোঁটের আলতো স্পর্শ দিলো।
—মামিমা শুভ্র কোথায়।আসার পর কোথায় চলে গেলো।
—আমাকে কী ছেলে সব কথা বলে যায় নাকি।
— বলে ও তো যেতে পারি তাই জিজ্ঞেস করলাম।
—খুজে দেখো কোথায়।
—খুজলাম তো সব খানে পাই না। রাত হয়ে যাচ্ছে । আচ্ছা ঐ যে একটা বাগান বাড়ি আছে না শুভ্র তো খুব প্রিয় জায়গা ঐখানে গিয়ে দেখি।
হায় আল্লাহ। ঐখানে তো শুভ্র আর অহনা আছে যাওয়ার সময় তো আমাকে বলে গেছে। এই মেয়ে শুভ্র সাথে অহনাকে দেখলে নিশ্চয় ই কোনো না কোনো জামেলা করবে। মনে মনে বললো কথাগুলো শুভ্র মা
— না না ঐখানে যাবে না তুমি বাসায় ই খুজে দেখো আছে হয়তো বা কোথাও।
—-না মামিমা আমি ঐখানে ই যাবো।
কারো কোনো কথা না শোনে ই বেরিয়ে পড়লো নাবিলা।
চলবে