#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ২ + ৩
এই রে আমার কথা আমাকে ই ফিরিয়ে দিচ্ছে। আল্লাহ ই জানে আমার কপালে কী আছে।
—-মিস অহনা। আজকে কোথায় মিটিং আছে আমাকে জানান দ্রুত।
এটা বলে ই অহনার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। অহনা পিছাতে থাকে।
—- কী হলো
জানেমান পিছনে যাচ্ছো কেনো
—আপনি এগিয়ে আসছেন কেনো।
অহনার মুখের কাছে গিয়ে বললো,
—-আমি ফোন দিলে যদি রিসিভ না করো তাহলে অফিসে আসলে তোমার খবর আছে, বলে দিলাম।
বজ্জাত তোর খুব শখ না কথা বলার আজকে রাতে বুঝবি মজা মনে মনে বললো অহনা।
—মনে মনে আমাকে বকে লাভ নেই, তুমি অফিসের কোনো ছেলের সাথে ই কথা বলবা না প্রয়োজন হলে ও। যা কথা সব আমার সাথে আর কারো সাথে কোনো কথা নাই তোমার। মাইন্ড ইট অহনা।
—-ঠিক আছে, কিন্তু কেনো আমি কারো সাথে কথা বলবো না।
—- এতো প্রশ্ন করো না, আমি বলছি তাই কারো সাথে কথা বলবা না।
অফিস থেকে বাসায় আসার পর,
—–কীরে মা অফিস কেমন কাটলো, অফিসে তোর ভালো লাগে তো।
— (ভালো না লাগলে ও থাকতে হবে মা) মনে মনে বললাম।অনেক ভালো লেগেছে মা। তুমি চিন্তা করো না।
এই বলে আমার রুমে চলে আসলাম।
রুমে এসে বসে বসে রানু মন্ডল আর মাহফুজ রহমান এর গান ডাওনলোড করতেছি, শুভ্র বজ্জাতটা কল দিলে ই শোনাবো। আমার সাথে কথা বলার তো অনেক শখ।
এগুলো ভাবতে ভাবতে বজ্জাত টা দিলো কল,
আমি ও কল রিসিভ করে মাহফুজ এর গান শোনাতে লাগলাম। প্রথম বার কেটে দিয়ে আবার কল দিলো এইবার দিলাম রানু মান্ডলের গান। কয়েক বার কেটে দিয়ে কল দিলো আমি ও দুইজনের গান শোনিয়ে দিলাম।
হঠাৎ করে ফোনে মেসেজ আসলো, কালকে অফিসে আসো তোমাকে যে কী করি বুঝবা।
মেসেজটা পরে ঘুমিয়ে পড়লাম কালকে কী হবে অফিসে গেলে দেখা যাবে। আগে ভালো করে ঘুমাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দ্রুত অফিসে যেতে লাগলাম অফিসে ঢুকার সাথে সাথে ই একটা ছেলের সাথে খেলাম ধাক্কা তাও আবার শুভ্র সামনে। আজকে মনে হয় আমার কপলা দুঃখের শেষ নাই।
—-মিস অহনা দ্রুত আমার কেবিনে আসেন।
আমি আর কিছু না ভেবে দিলাম দৌড় শুভ্রর কেবিনের দিকে।
—- চুলে ধরে তুই মাহিম এর সাথে ধাক্কা খাইলি কেন। তোরে না বলছি কারো সাথে কথা বলবি না আর তুই ঐ ছেলে উপরে পরলি।
—–ছাড়ুন আমাকে আমি কী ইচ্ছে করে ধাক্কা খেলাম নাকি।
—- ইচ্ছে করে ই উপরে পরেছিস, আর কালকে রাতে কী করেছিস আমার কল ধরে।কীসব গান শোনালি এইগুলোও।
—– এতো শখ কেন আপনার আমার সাথে কথা বলার তাই এমন করছে। আর কখনো কল দিবেন না আমাকে।
—-খুব জোরে কথা বলতে শিখে গেছিস তো। আচ্ছা যা আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।
—- আমি কেনো কফিয়ে বানিয়ে আনবো।
—- বেশি প্রশ্ন করবি না আমি যা বলবো তোকে তাই করতে হবে।
চুপ চাপ গিয়ে কফি বানালাম। কফির সাথে অনেক টুকু লবন দিয়ে দিলাম বজ্জাত, হনুমান বাদর তোর কফির গুষ্টি গিলাই।
খুব সুন্দর করে স্যার এর সামনে কফিটা নিয়ে ধরলাম। রোমান্টিক একটা ভাব নিয়ে।
উনি ও হাত থেকে নিয়ে আমার দিকে একনজরে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করলো। কিন্তু অবাক করার বিষয় এই যে উনি সবটুকু কফি খেয়ে নিলেন। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
— এভাবে তাকিয়ে থেকো না নিজেকে কন্ট্রোল করা দায়। তুমি এখন যদি বিষ ও দিতে আমি হাসি মুখে খেয়ে নিতাম। ভালোবাসি তোমাকে।
অহনা কিছু না বলে কেবিন থেকে বের হয়ে চলে আসে।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সামনে আসলো মাহিম যার সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম।
— আপনি কী ঐ টাইমে ব্যথা পেয়ে ছিলেন।
—- না আমি ঠিক আছি।
এই বলে উঠে চলে যেতে লাগলাম। কিন্তু মাহিম ও আমার পিছনে পিছনে আসছে। এটা দেখতে পেলে আমার সাইকো বস টা আমার অবস্থা খারাপ করে ফেলবে
—- এই যে শোনছেন, আপনার নাম কী।
—- আমার নাম অহনা। আমি স্যার এর পি. এ।
—- কোন ক্লাস এ পড়েন আপনি আর বাসা কোথায়।
—- এই ভাই, আমি আপনার সাথে ধাক্কা খাইছি বলে কী চৌদ্দগুষ্টির পরিচয় দিতে হবে।
—- আপনার কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগে, সাথে আপনাকে ও।
—- আপনার তো দেখছি লজ্জা নাই।
— আপনার জন্য নির্লজ্জ হতে পারি তাতে কোনো আফসোস নাই।
মাহিমের সাথে কথা না বাড়িয়ে আমি কেবিনে গেলাম।
গিয়ে দেখি শুভ্র কিছু স্টাফদের সাথে কথা বলছে। শুভ্র আমাকে তেমন কোনো কাজ করতে দেয় না। এটা আমার ভালো লাগে না।
অফিস ছুটির পর,
—-চলো বাসায় দিয়ে আসি।
— আমি একা ই যেতে পারি।
— উঠতে বলছি উঠো। নয়তো তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।
আমি ভয়ে দ্রুত উঠে বসলাম।
গাড়িতে দুইজন ই চুপ, কথা বলি নাই। আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আর বলে গেলো কল রিসিভ করার জন্য।
বুঝলাম কোনো কারনে রেগে আছে আমার উপর, যা ই হক আমার কী রেগে থাকলে আমি তো আর ওনাকে ভালোবাসি না।
পরের দিন,
আজকে শাড়ি পরেছি, কেনো জানি ইচ্ছে করছে শাড়ি পড়ার জন্য। মিষ্টি কালারের শাড়ি সাথে ম্যাচিং করা চুড়ি কানের দুল আর গলায় কিছু পড়িনি। চুলগুলো খোপা করে রেখেছি।
চলে গেলাম অফিসে।
—সত্যি শাড়িতে অহনা তোকে অনেক সুন্দর লাগেরে। যে কেউ দেখলে ক্রাশ খাবে।আমাদের বললে ও তো আমরা পড়ে আসতে পারতাম।
— কী যে বলিস রিনি তুই তো আমার থেকে অনেক সুন্দর তোকে আমার থেকে বেশি সুন্দর লাগে। আমি সকালে ভাবলাম শাড়ি পরে যাই আগে ভাবিনি। তাই তোকে বলতে পারিনি।
হঠাৎ একটি মেয়ে এসে বললো,ম্যাম আপনাকে স্যার ডেকেছে। আপনি স্যার এর কেবিনে যান আমি আসছি।
আমি গেলাম শুভ্র কেবিনে,
শুভ্র কখন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একনজরে দেখছে আর আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
শুভ্র যত এগিয়ে আসছে, আমি তত পিছিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ দেওয়ালে সাথে পিঠ ঠেকে গেলো, শুভ্র এতোটা কাছে চলে এসেছে ওর নিশ্বাস এর শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি। অন্যরকম একটা ফিলিংস কাজ করছে, আমি কিছু বলতে পারতেছি না। হঠাৎ শুভ্র ঠোঁট দুটো আমার কপালে ছুয়ে দেয়।
এই প্রথম আমি কোনো পুরুষ মানুষ এর স্পর্শ পেলাম। আমি তো পুরা ই ফ্রিজ হয়ে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য।
শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাহিরে আসলাম, দেখলাম যে যার কাজে ব্যস্ত।
হঠাৎ মাহিম আমার হাত ধরে ফেলে।
চলবে
#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ৩
হঠাৎ মাহিম আমার হাত ধরে ফেললো।
— কী হলো আপনি আমার হাত ধরলেন কেনো।
—-চোখের সামনে এতো সুন্দরি মেয়ে থাকতে হাত না ধরে থাকা যায়।
—আপনি আমার হাত ছাড়বেন নাকি শুভ্রকে বলবো।
—-বলো শুভ্র কে আমি ভয় পাই নাকি।
এটা বলার সাথে সাথে পিছনে ঘুরে দেখি শুভ্র কথা বলতে বলতে আমাদের দিকে আসতেছে। ভয়ে তো আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে । শুভ আসতে দেখে মাহিম আমার হাত ছেড়ে চলে গেলো। ওহ্ আল্লাহ বেচে গেলাম।
—তুমি এইখানে করছো, কখন থেকে খুজতেছি তোমাকে।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি লজ্জায়, ঐ সময়ের কথা মনে পড়লে তো আরো বেশি লজ্জা লাগে।
আমাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
— এতো লজ্জা পেলে কিন্তু এখন সবার সামনে ই লিপ কিস করবো।
এটা শোনার পর বড় বড় চোখ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
এটা দেখে উনি মুচকি হাসি দিলেন।
বজ্জাত হনুমান লাজ লাজ্জার মাথা খাইছে। এমন নির্লজ্জ মানুষ আমি জীবনে ও দেখি নাই।
—- এই তুমি মনে মনে এতো বকছো কেনো আমাকে। আমি কী এমন তোমার পাকা ধানে মই দিয়েছি।
—- আপনি কী ভাবে জানলেন।
বজ্জাতের হাড্ডি একটা আবার বলে কী এমন পাকা ধানে মই দিয়েছি। তুই তো আমার জীবন টাকে ই মই দিয়ে দিচ্ছি। মনে মনে বললাম।
— চলো একটা মিটিং আছে।আমার পিছন পিছন আসো।
চুপ করে যেতে থাকলাম।
কিছুক্ষন পর,
সুন্দর একটা বাড়ির সামনে এনে গড়িটা থামালো, আমি কিছু ই বুঝতে পারলাম না, এ বাড়িতে কীসের মিটিং। কী করতে চাচ্ছে উনি আল্লাহ ই জানে,
আমকে হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেলো,
গিয়ে ই চুলে খোপায় ধরে বলতে লাগলো,
—- তোকে এতো সাজতে বলছে কে, আর তুই শাড়ি পড়লি কেনো, আমি তোকে বলছে এসব কর। তুই কোনো দিন আর সাজবি না আমি ছাড়া কেউ তোকে এভাবে দেখতে পারবে না।
এই বলে জোরে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো।
ধাক্কা টা জোরে ই দিলে টেবিল এর সাথে লেগে, মাথার এক সাইডে অনেকটুকু কেটে গেলো। আমি ব্যথায় জোরে কান্না করে দিলাম। আমার এমন অবস্থা দেখে শুভ এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো,
— জান কোথায় লেগেছে তোমার, আমি রাগের মাথায় বুঝতে পারিনি।মাফ করে দেও আমায়। এটা বলে ই হাত দিয়ে ফ্লোর কয়েকটা আগাত করে।
আমি কিছু বলছি না, কান্না ই করে যাচ্ছি।
কাটে যাওয়া যায়গায় চুমু দিয়ে। শুভ্র দ্রুত বেন্ডেজ করে দেয় কপালে।
শুভ্র আমাকে কোলে তুলে নেয়। গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দেয়। গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে। আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে উনি দাঁড়িয়ে আছে।
কোনো কথা বলেনি আমার সাথে। আমি ও কিছু না বলে চুপ করে বাসায় চলে যেতে লাগলাম।
বাসায় যাওয়ার পর ই মা দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করতেছে কপালে কী হলো,
এখন কী বলবো আমি, মা যদি শুভ্র কোনো কথা জানতে পারে তাহলে আমাকে অফিসে যেতে দিবে না। অতিরিক্ত টেনশন ও করবে সব কিছু ভেবো বললাম,
—-যাওয়ার সময় রিক্সা থেকে পরে গেছিলাম।
— কী বলিস দেখে শোনে যাবি তো মা তোর কিছু হলে আমি বাচবো নারে মা।
— যা এখন রুমে যা আমি খাবার নিয়ে আসছি।
কিছুক্ষণ পর,
—- এই অহনা তোর অফিস এর বস আসছে আয় তো তুই।
এটা শোনার পর তো ভয়ে আমি শেষ শুভ্র কেনো আসলো এখানে।
দৌড়ে গেলাম, গিয়ে দেখলাম আম্মু সাথে কথা বলতেছে।
—- কী হলো আপনি এখানে, কেনো আসছেন আপনি।
—- অহনা তুই এটা কীভাবে কথা বলতেছিস, উনি তোর জন্য ঔষধ নিয়ে আসছে আর তুই এমন ব্যবহার করতেছিস।
—- আচ্ছা সরি মা। ঔষধ দেওয়া হইছে এখন আপনি চলে যান।
— থাপ্পড় খাবি অহনা, যা চা নাস্তার ব্যবস্থা কর।
আমি আর কী চলে আসলাম। চা বানানোর জন্য।
মা আর শুভ্র জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
বেশকিছুক্ষন পর,
—-তাহলে আজ আসি আন্টি, অন্য দিন আবার আসবো।
— আচ্ছা বাবা,এসে কিন্তু। তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।
এদিকে আমি দর্শক হয়ে উনাদের কাহিনি দেখছি।
চলে যাবেন কেনো থেকে আমার মাথাটা খেয়ে যান। আমার মা টা ও না সবাইকে আপন করে নেয়।
এইদিন শুভ্র চলে গেলো যাওয়ার সময় শুভ্র নিষেধ করে গেলো অফিসে যাওয়ার জন্য আমি সুস্থ হলে আবার অফিসে যাবো।
কয়েকদিন কেটে গেলো আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। এই কয়েকদিন শুভ্র অনেক বার কল দিয়েছে মি রিসভ করে মাকে নিয়ে দিয়েছি কথা বলার জন্য। জানি অনেক রেগে আছে সামনে পেলে এক্সটা থ্যারাপি দিবে।
রুমে শুয়ে শুয়ে বই পড়তেছিলাম।হঠাৎ মা এসে বললো,
— অহনা শোন তোর রিমি বোনের বিয়ে তোর মামা কল করেছে এখন যাওয়ার জন্য তুই রেডি হয়ে নে।
—- আমি তো মা মহা খুশি কিন্তু এমন হঠাৎ করে কেনো বিয়ে।
— হঠাৎ করে ই এগুলো তোর ভাবতে হবে না এখন তুই রেডি হয়ে নে।
নেভি ব্লু কালারের একটা শাড়ি পরেছি। হালকা মেকআপ ঠোঁটে গাড় করে লাল লিপস্টিক দেওয়া।আমাকে সুন্দর ই লাগছে।
এতো সাজলেম যে শুভ্র হনুমান টা না নিষেধ করেছে সাজার জন্য। নিষেধ করুক উনি কী আর এই বিয়েতে আসবে নাকি। খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেলাম নানুর বাসায়।
সবার সাথে কথা বললাম, একটা ছেলের সাথে ভালো ই ভাব জমলো, আমি বেশি কথা বলতে চাইনি ছেলেটা ই এসে কথা বলতেছি। আমি ও হেঁসে হেঁসে উওর দিচ্ছেলাম।
হঠাৎ করে সামনে শুভ্রকে দেখতে পেলাম আমার দিকে এমন লুক দিয়ে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে এখন ই খেয়ে ফেলবে। আজকে আমি শেষ আল্লাহ তুমি বাঁচাও এই বলে এক দৌড়ে আম্মুর কাছে, কিন্তু তাও রক্ষে নেই আজকে…
চলবে