#সাইকো লাভার❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#অন্তিম পর্ব
শুভ্র রাহির কথায় ভ্রু কুঁচকে নিরবের দিকে তাকালো। নিরব সেটা দেখে বাইন মাছের মতো মুচড়া মুচড়ি করছে। এবার শুভ্রও বিরক্তি নিয়ে বললো।”
—-” কি রে এমন করছিস কেন?”
নিরব মিনমিন করে বললো,
—-” ভাইয়া একটু শুনবি?”
রাহি ফোড়ন কেটে বললো!”
—-” শুভ্র আগে আমার কথা শোন। দেখ স্কুলে থাকতে তুই আমাকে পাত্তা দিসনি। কলেজে উঠে তো কোথায় গায়েব হয়ে গেলি। এখন আমি তোর ভাইকে ভালবাসি। আর তোর ভাইও আমাকে ভালবাসে। তাই তুই আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা কর,
আসলে রাহি হচ্ছে নিরবের ক্লাসমেট। যদিও কলেজ লাইফে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। পরে ভার্সিটিতে আবার ওদের দেখা হয়। আর তখন থেকেই রাহি নিরবকে পছন্দ করতো। নিরবেরও রাহিকে ভাল লাগতো। আর ভাললাগা থেকে ভালবাসা জন্ম নেয়। শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” নিরব তুই ওকে ভালবাসিস?”
নিরব আমতা, আমতা করে বললো,
—-” ইয়ে মানে ভাইয়া হ্যা!”
রোজ এতক্ষণ দর্শক হয়ে সব দেখেছে। নিরবের কথা শুনে বললো,
—-” তাহলে এমন আমতা, আমতা করছো কেন?”
রাহি মুচকি হেসে বললো।”
—-” আরে শুভ্র এটা তোর বউ নাকি?”
শুভ্র হেসে বললো,
—-” হ্যা ওর নাম রোজ। আর রোজ ও হচ্ছে রাহি। আমার আর নিরবের পরিচিত। আর এখন তো ও মিসেস নিরব হতে চলেছে!”
রোজ রাহির সাথে পরিচিত হয়ে নিলো। তবে আপাতত রোজের মাথায় অন্যকিছু চলছে। যেটা শুভ্রর কাছ থেকেই জানতে হবে। রাহির সাথে কথা বলে ওরা রুমে গেলো। রাহি এসেছে নিরবকে নিয়ে ঘুরতে যেতে। তাই নিরব রাহিকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। রোজ রুমে এসে শুভ্রকে কিছু বলবে তারআগে শুভ্র বললো,
—-” এখন ফ্রেশ হওয়া দরকার।”
বলে তোয়ালে নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। একেবারে শাওয়ার নিয়েই বেরিয়ে এলো শুভ্র। শুভ্রর পেটে, বুকে আঘাতের দাগ এখনো আছে। শুভ্র আয়নার সামনে যেতেই রোজের চোখ পড়লো শুভ্রর পিঠে। শুভ্রর পিঠেও একটা গোল দাগ। যেমনটা শুভ্রর বুকে যেখানে গুলি লেগে দাগ হয়ে আছে। রোজ শুভ্রর পিছনে দাড়িয়ে অবাক হয়ে বললো,
—-” শুভ্র তোমার পিঠে এই দাগ?”
শুভ্র চুল মুছতে, মুছতে বললো!”
—-” ছাড়ো এটা কিছুনা,
রোজ শুভ্রকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো।”
—-” আমাকে বলো প্লিজ,
শুভ্র এসে রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো!”
—-” অতীত ঘেটে কি লাভ রোজ?”
রোজ আর কিছু বললো না। ভাবলো নিরবের থেকে যদি জানা যায়। এরমাঝে শুভ্র বলে উঠলো,
—-” জানো তো সেইরাতে আমি তুমি ভেবে সাফিয়াকে বলেছিলাম। যে আমিতো ভেবেছি ওই ঘটনার পর তুমি আমাকে ভুলে যাবে।”
রোজ শুভ্রর বুক থেকে বিড়ালের মতো উকি দিয়ে বললো,
—-” কোন ঘটনা?”
শুভ্র মুখ কালো করে বললো!”
—-” আমি জানি তুমি রোদকে অনেক ভালবাসো। আর রোদের গুলি লেগে ওভাবে নিখোজ হওয়ায় তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো। তাই ভেবেছি এসবের মাঝে তুমি আমাকে ভুলে যাবে,
রোজ মন খারাপ করে বললো।”
—-” তুমি ওই ৭দিন কোথায় ছিলে? ভাইয়া নেই শুনেও তো তুমি এলেনা। এতে তো আমি আরো বেশী ডাউট করেছি তোমাকে,
শুভ্র কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো। এরপর নিজের মনে, মনে বললো!”
—-” না রেড রোজকে এটা বলার দরকার নেই। ও যদি জানে ওই ৭দিন আমি হসপিটালে ছিলাম। বিকজ চাচ্চু আমাকে ওনাকে মারার পর। মৃত ভেবে চলে আসার সময় গুলি করেছিলো। আর সেই গুলির দাগ আমার পিঠে। এটা শুনলে রোজ উত্তেজিত হয়ে যাবে। আর ওর এই সময় উত্তেজনা ভাল হবে না,
শুভ্র চুপ করে থেকে বললো।”
—-” এসব বাদ দাও প্লিজ,
রোজ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো!”
রাহি নাম্বার দিয়ে গিয়েছে। শুভ্র রাহির বাবাকে ফোন করে সব বললো। রাহির বাবা নিরব আর শুভ্র দুজনকেই চেনে। তাই উনি আপত্তি করলো না। তবে কথা হলো আগে শুভ্ররা রাহিদের বাড়ি যাবে। তারপর ওনারাও আসবে বিয়ের তারিখ দিতে। দেখতে, দেখতে ১মাস কেটে গিয়েছে। এরমাঝে ওদের বিয়ের তারিখও দিয়েছে। আজ নিরব আর রাহির বিয়ে। শুভ্র ওর কথামত আবিরকে ফিরিয়ে এনেছে। রাজন রায়জাদা সহ আবির আবিরের বউও এসেছে বিয়েতে। শুভ্রদের বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন করেছে। পুরো বাড়িটা অনেকরকম লাইটিং করেছে। অবশেষে ওদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো। রাহিকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে। নিরব বাসর ঘরে ঢুকতে গেলেই সবাই পথ আটকালো। নিরব ভ্রু কুঁচকে রোজকে বললো,
—-” এই তোমরা পথ আটকেছো কেন?”
রোজ কোমরে হাত দিয়ে বললো।”
—-” টাকা বের করো,
নিরব গোল, গোল চোখ করে বললো!”
—-” কোন টাকা? কিসের টাকা?”
রোজ দাত কেলিয়ে বললো,
—-” বউয়ের কাছে যাওয়ার আগে দিতে হয় রে পাগলা।”
নিরব এদিক, ওদিক তাকিয়ে বললো,
—-” আমার কাছে টাকা নেই!”
রোজ কপাল কুঁচকে বললো,
—-” টাকা বের করো।”
নিরব মিনমিন করে বললো,
—-” তোমার লজ্জা করে না? বড় ভাবী হয়ে টাকা চাও দেবরের কাছে?”
এরমাঝে শুভ্র এসে বললো!”
—-” এখানে কি হচ্ছে?”
শুভ্রকে দেখে নিরব বললো,
—-” ভাইয়া দেখ না এরা টাকা চাইতে এসেছে।”
শুভ্র রোজের হাত ধরে বললো,
—-” তুই রিল্যাক্সে বাসর কর একে আমি নিয়ে যাচ্ছি। জানিস তো? এদের দলের লিডার আমার বউ!”
বলে রোজকে নিয়ে গেলো। আর নিরব হা করে তাকিয়ে আছে। শুভ্রর বলা কথা ভাবছে রিল্যাক্সে বাসর কর। নিরব একবার সবার দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে দরজা আটকে দিলো। এদিকে রোজকে নিয়ে শুভ্র রুমেতো এসেছে। কিন্তুু শুভ্র পড়েছে মসিবতে। রোজ বারবার বলছে ওখানেই যাবে। আর ও নিরবের থেকেই টাকা নেবে। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে রোজকে দেখছে। রোজ বাচ্চাদের মতো হাত, পা ছুড়ছে। আপাতত একে দেখে কেউ ভাববে না। যে এর পেটে বাচ্চা আছে। এসব ভেবে শুভ্র একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বললো,
—-” এমন করছো কেন?”
_____________________
শুভ্রর এই শান্ত আওয়াজ শুনে। রোজ ভেজা বিড়ালের মতো চুপসে বললো।”
—-” আমি ওখানে যাবো,
শুভ্র শান্তভাবে রোজের দিকে তাকিয়ে আছে। রোজ শুভ্রকে এভাবে দেখে মনে, মনে বললো!”
—-” রোজ এখন রাম ধমক খেতে না চাইলে চুপ করে যা,
বলে রোজ চুপ হয়ে গেলো। চুপ করেই বিছানায় শুইয়ে পড়লো। শুভ্র লাইট বন্ধ করে রোজের পাশে শুয়ে পড়লো। রোজকে টেনে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। পরেরদিন সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। ওরাও ঘুম থেকে উঠে গেলো। শুভ্র আগেই উঠে গিয়েছে। আজকে নিরবের রিসেপশন তাই বাড়িতে কাজ আছে। রোজ ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেলো। নিরবকে একা পেয়ে ওর কাছে গিয়ে বললো।”
—-” নিরব তোমার সাথে কথা আছে,
নিরব হেসে বললো!”
—-” বলুন ভাবী,
রোজ নিরবকে জিগ্যেস করলো।”
—-” শুভ্রর পিঠে দাগ কিসের? তুমিতো অবশ্যই দেখেছো। আমি এটা বুঝেছি ওটা গুলির দাগ। কিন্তুু এই গুলি ওর কবে লাগলো?”
নিরব অবাক হয়ে বললো,
—-” ভাইয়া তোমাকে বলেনি?”
রোজ মাথা নেড়ে না বললো। নিরব হালকা হেসে বললো!”
—-” তাহলে ভাইয়া চায়নি তুমি উত্তেজিত হও,
রোজ ভ্রু নাচিয়ে বললো।”
—-” মানে?”
নিরব রোজকে সব বললো। এটাও বললো ওই ৭দিন শুভ্রর খুব খারাপ অবস্থা ছিলো। এরমাঝে নিরবকে শুভ্র ডাকলো তাই নিরব চলে গেলো। রোজ পা টিপে রুমে চলে এলো। বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে,
—-” কতকিছু সহ্য করেছে শুভ্র। হসপিটাল থেকে এসেই আবার এ্যাটাক হয়েছে ওর উপর। আর সেটাও করেছিলো আমার কাজিন। না আমি তোকে মেরে ভুল করিনি। আমার শুভ্রকে কতটা কষ্ট দিয়েছিস তোরা!”
এরমাঝে শুভ্র রুমে এলো। আর এসে রোজকে কাঁদতে দেখে অস্থির হয়ে গেলো। রোজের সামনে ফ্লোরে হাটুগেড়ে বসে বললো,
—-” রেড রোজ কি হয়েছে? তুমি এভাবে কাঁদছো কেন?”
রোজ শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বললো।”
—-” তুমি কেন আমাকে বলোনি শুভ্র? তোমার পিঠে গুলি লেগেছিলো। আর ওই ৭দিন হসপিটালে ছিলে কেন বলোনি?”
শুভ্র চমকে বললো,
—-” তুমি কি করে জানলে এসব?”
রোজ চোখ মুছে বললো!”
—-” আমি জানি আমি সব জানি,
শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” নিরব বলেছে তাই না?” ওকেতো আমি,
রোজ চোখ গরম করে তাকালো। সেটা দেখে শুভ্র মিনমিন করে বললো!”
—-” আমি ওকে কি বলবো? আমি কি ওকে কিছু বলতে পারি?”
রোজ ভেংচি কেটে বসে রইলো। শুভ্র বুঝলো রোজ রেগে আছে। শুভ্র রোজের পাশে বসে বললো,
—-” দেখো রেড রোজ এখন তো সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। তাহলে পুরোনো কথা কেন ভাবছো? এতে শুধুই মন খারাপ হবে। তাই এসব ভুলে যাওয়াটা ভাল হবে।”
রোজ হ্যা বললো। শুভ্র রোজের খাবার রুমে নিয়ে এসে ওকে খাইয়ে দিয়েছে। দুপুর হতেই সবাই রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। শুভ্র রোজকে দুরে, দুরে রেখেছে। রিসেপশন শেষে রাহি আর নিরব রাহিদের বাড়িতে গিয়েছে। রোজ আর শুভ্রকে যেতে বলেছিলো। কিন্তুু শুভ্র রোজকে নিয়ে যায়নি। এভাবেই ওদের দিনগুলো কাটছে। সাফিয়ার খোজ করলে ওরা বলেছে সামিরের সাথে পালিয়ে লন্ডন চলে গিয়েছে। আর সাফিয়া যা করেছে সেটাও বলেছে। সব শুনে সাফিয়ার প্রতি সবার ঘৃনা চলে এসেছে। তাই ওর খোজ আর কেউ করেনি,
____৭মাস পর____
শুভ্রর সারা শরীর কাঁপছে। চোখ দিয়ে সমানে পানি গড়িয়ে পড়ছে। নিরব শুভ্রকে সামলানোর চেষ্টা করছে। শুভ্র চোখমুখ শক্ত করে বললো!”
—-” নিরব আমাকে ছাড়। আমি ওটির ভিতরে যাবো,
নিরব শুভ্রকে ধরে রেখে বললো।”
—-” ভাইয়া রোজের কিছু হবে না। আর তোর বেবিরাও ঠিক থাকবে দেখিস,
বেবিরা বলার কারন হচ্ছে। রোজের টুইন বেবি হবে। শুভ্রকে রোদ আর নিরব অনেক কষ্টে ধরে রেখেছে। সাথে রোজের প্রতি শুভ্রর ভালবাসা দেখে অবাকও হয়েছে। কতক্ষণ পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেলো। শুভ্র নিজে থেকেই শান্ত হয়ে গেলো। দুজন নার্স দুটো বাচ্চা নিয়ে এলো তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে। দুটো বাচ্চাই একদম ফুটফুটে। নার্স দুজন মুচকি হেসে এগিয়ে এসে বললো!”
—-” কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার চৌধুরী। আপনার একটা ছেলে বেবি আর একটা মেয়ে বেবি হয়েছে,
শুভ্র সেদিকে কান না দিয়ে বললো।”
—-” আমার ওয়াইফ কেমন আছে?”
নার্সরা অবাক হলেও হেসে বললো,
—-” আপনার ওয়াইফ একদম ঠিক আছে। কিছুক্ষণ পরই ওনাকে কেবিনে দেয়া হবে!”
শুভ্র যেন প্রান খুজে পেলো। কাঁপা, কাঁপা হাতে নিজের বেবিদের ছুঁয়ে দিলো। এরপর আগে মেয়েকে কোলে নিলো। এত ছোট বাবু একসাথে কোলে নিলে যদি পড়ে যায়। এটা ভেবে শুভ্র একজন, একজন করে কোলে নিলো। খুশিতে শুভ্রর চোখে পানি চলে এসেছে। সবাই আজকে অনেক খুশী। রাহিতো লাফালাফি করছে। নিরব রাহিকে এক ধমক দিয়ে বললো,
—-” এই অবস্থায় লাফালাফি করছো কেন?”
রাহি ৩মাসের প্রেগন্যান্ট। নিরবের ধমক খেয়ে রাহি ভেংচি কেটে চুপ হয়ে গেলো। কতক্ষণ পর রোজকে কেবিনে শিফট করে দিলো ডক্টর। আর সাথে এটাও বলেছে বেবিরা একদম ঠিক আছে আর রোজও। চাইলে পরশুদিন বাড়ি নিয়ে যেতে পারে। শুভ্র রোজের মাথার কাছে গিয়ে বসলো। রোজ চোখ খুলেই বললো।”
—-” আমার বেবিরা কোথায়?”
রাহি আর তামান্না বেবিদের নিয়ে এলো। রোজ একসাথে দুজনকে দেখে মুখে হাত দিয়ে কেঁদে বললো,
—-” আমাদের বেবি শুভ্র!”
রোজ দুজনকে কোলে নিয়ে বুকে মিশিয়ে নিলো। রোজ চুপ করে মাতৃত্বটা অনুভব করছে। গতকাল পর্যন্ত যারা পেটে ছিলো। পেটে রেখেই এতদিন মাতৃত্বটা অনুভব করেছে। আর আজকে বেবিরা কোলে। সবাই তাকিয়ে দেখছে কিউট ফ্যামিলি একদম। ১দিন পর ওদের বাড়ি নিয়ে এলো। সবাই বেবি দুটোকে নিয়ে মেতে থাকে। শুভ্রর জীবনে এখন সুখের অভাব নেই,
_______________________
____৫বছর পর____
ফাইভ স্টার হোটেলে শুভ্রর ছেলে-মেয়ের জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। চারিদিকে লোকজনের আনাগোনা পুরো হোটেল শুভ্র যেভাবে বলেছে সেভাবে সাজিয়েছে। শুভ্র আর রোজ অভ্র আর শুভ্রতাকে নিয়ে এলো। ওহ হ্যা ওদের ছেলে-মেয়ে অভ্র আর শুভ্রতা। রোজ আর শুভ্রর সাথে মিলিয়েই নাম রেখেছে। অভ্রর পুরো নাম রিজন চৌধুরী অভ্র। আর শুভ্রর পুরো নাম রজনী চৌধুরী শুভ্রতা। দুই ভাই-বোনকে কালার ম্যাচ করে ড্রেস পড়িয়েছে। দুজনই ব্লাক ড্রেস পড়া আজকে। অভ্র দেখতে শুভ্রর মতো হয়েছে। আর শুভ্রতা দেখতে রোজের মতো। সবাই এক, এক করে চলে এলো। মেঘ এসেই শুভ্রতাকে ঘুরে, ঘুরে দেখছে। সেটা দেখে শুভ্রতা বললো।”
—-” মেঘ ভাইয়া এভাবে কি দেখছো?”
মেঘ মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—-” তোকে দেখছি রে পাগলি!”
শুভ্রতা রেগে বললো,
—-” আমি পাগলি নই।”
মেঘ শুভ্রতার মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
—-” তুই এত স্টুপিড কেন? আরে গাধী এটা হচ্ছে ভালবাসার নাম!”
তামান্না এটা শুনে ফেললো। শুনে চোখ বড়, বড় করে তাকিয়ে বললো,
—-” এই মেঘ কি বললি তুই?”
মেঘ মানে, মানে কেটে পড়লো। তামান্না হা করে তাকিয়ে আছে। বেচারী এটা ভাবছে তার ৭বছরের ছেলে এগুলো কি বলে গেলো? এদিকে অভ্র মেঘলাকে খুজছে। এবার আর না পেয়ে নিরবকে গিয়ে বললো।”
—-” চাচ্চু তোমার মেয়ে কোথায়?”
মেঘলা নিরবের পিছন থেকে বেরিয়ে বললো,
—-” এইতো আমি ভাইয়া!”
অভ্র রেগে কিছু বলবে। তারআগে ওদের কেক কাটতে নিয়ে গেলো। কেক কাটা শেষে সব বাচ্চারা খেলছে। আর বড়রা গেস্টদের সাথে কথা বলছে। মেঘ শুভ্রতাকে না পেয়ে খুজতে লাগলো। খুজে পেয়ে মেঘের মাথা গরম হয়ে গেলো। মেঘ গিয়ে শুভ্রতার সাথের ছেলেটাকে চর মেরে বললো,
—-” তোর সাহস তো কম না। তুই ওকে টাচ করলি কেন? আর কি বললি তুই? ও তোর শুভ্রতা? আকাশের শুভ্রতা? শোন ও শুধু আমার শুভ্রতা #মেঘের_শুভ্রতা বুঝলি?”
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। রোদ আর তামান্না গালে হাত দিয়ে হা করে আছে। রোজ মিটিমিটি হাসছে। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। নিরব দাত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে। রাহি বড়, বড় চোখ করে মেঘকে দেখছে। অভ্র মেঘলার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। শুভ্রর ভ্রু কুঁচকানো দেখে শুভ্রতা বললো।”
—-” পাপা আমি ওকে বকিনি। মেঘ ভাইয়া মেরেছে,
শুভ্র মেয়ের এমন কথা শুনে বললো!”
—-” আমি জানিতো মা,
শুভ্রতা এবার রোজকে বললো।”
—-” মাম্মা সত্যি বলছি,
রোজও হেসে বললো!”
—-” আমরা জানি বেবি,
রোদ মেঘের কাছে গিয়ে বললো।”
—-” বাবা তুমি এত রেগে আছো কেন?”
মেঘ ফোস ফোস করে বললো,
—-” ও কেন বললো পাপা? যে শুভ্রতা নাকি আকাশের শুভ্রতা?”
অভ্র কপাল কুঁচকে বললো!”
—-” মেঘ ভাইয়া ও এটা বলেছে? এই ছেলেটা মেঘলাকেও এটা বলেছিলো। যে মেঘলা নাকি আকাশের মেঘলা একে আমি,
বলে গিয়ে ঠাটিয়ে চর মারলো। বেচারা আকাশ এবার কেঁদে দিলো। আকাশের বাবা, মা এসে তো ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে। সবাই ওনাদের বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলো। অভ্র আর মেঘকেও রাগ করলো। কিন্তুু তাতে ওদের কিছু হয়েছে বলে মনে হয় না। দুজনেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।”
—-” আমরা একদম ঠিক করেছি মাম্মা, পাপা,
সবাই বুঝলো এদের কিছু বলে লাভ নেই। পার্টি শেষে সবাই বাড়ি চলে গেলো। সবাই এখন খুব ভাল আছে সুখে আছে নিজেদের বেবি নিয়ে। সবাই ওদের জন্য দোয়া করবেন। যাতে ওরা এভাবেই থাকতে পারে।”
#সমাপ্ত…