#সাইকো লাভার❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ
#পর্ব- ১০
রোজ শুভ্রর পাশে ধপ করে বসে পড়ে। শুভ্র বলে একটা চিৎকার করলো। রোজের হাত, পা কাঁপছে। ও এটা কি করে ফেললো? রোজ শুভ্রকে ঝাকিয়ে বললো।”
—-” শুভ্র উঠুন প্লিজ। আমি এটা করতে চাইনি। ওটাতে এত ধার ছিলো আমি জানতাম না। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন,
এদিকে শুভ্রর রক্তে। টাইলস করা সাদা ফ্লোর লাল হয়ে গিয়েছে। রোজ দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। বাইরে গিয়ে বডিগার্ডদের ডেকে আনলো। বডিগার্ডরা শুভ্রকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে বললো!”
—-” এসব কি করে হলো ম্যাম?”
রোজ কাঁদতে, কাঁদতে বললো,
—-” আমার জন্য আমি বুঝতে পারিনি। আপনারা ওনাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠান। ওনাকে এক্ষুনি হসপিটালে নিতে হবে।”
বডিগার্ডরা শুভ্রকে নিয়ে গাড়িতে বসালো। রোজ ওর বাড়ির লোককে ফোন দিলো। এরপর ওনাদের হসপিটালে আসতে বললো। রোজ নিজে ড্রাইভ করে হসপিটালে পৌছালো। ডক্টররা শুভ্রকে দেখে চমকে বললো,
—-” ওনার এমন অবস্থা কি করে হলো?”
রোজ কাঁদতে, কাঁদতে বললো!”
—-” ডক্টর ওনাকে ঠিক করে দিন প্লিজ,
ডক্টর রোজকে বললো।”
—-” আপনি ওনার কি হন?”
রোজ আজকে চট করে বলে দিলো,
—-” আমি ওনার বউ মিসেস নাবিলা রোজ চৌধুরী। উনি আমার স্বামী হয়। আপনি আমার স্বামীকে ঠিক করে দিন প্লিজ!”
ডক্টররা রোজকে শান্ত হতে বলে। শুভ্রকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে গেলো। রোজ কাঁদতে, কাঁদতে নিচে বসে পড়লো। এরমাঝে সবাই চলে এলো। রোদ দৌড়ে এসে রোজকে ওঠালো। রোজ রোদকে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে বললো,
—-” আমি এটা কি করে ফেললাম ভাইয়া? যেই মানুষটা আমাকে এত ভালবাসে। আজকে আমি তার এ অবস্থা করলাম। আমি কি করে নিজেকে ক্ষমা করবো।”
তামান্নাও এসেছে তামান্না অবাক হয়ে বললো,
—-” তুই করেছিস মানে?”
রোজ সবটা বললো। সব শুনে তামান্না ঠাস করে রোজকে একটা চর মেরে দিলো। রোজ গালে হাত দিয়ে চুপ করে আছে। তামান্না রোজকে ধরে বললো!”
—-” এত পাষান তুই রোজ? নিজের স্বামীকে নিজেই মারলি? শুভ্র ভাই তোকে অনেক ভালবাসে রে। আমি খেয়াল করে দেখেছি। যখনি তুই ওনার পাশে থাকিস। তখন ওনার মুখে এক অন্যরকম হাসি থাকে। হয়তো উনি আমার রক্তের কেউ না। কিন্তুু যেদিন থেকে তোর সাথে ওনার এংগেজমেন্ট হয়েছে। সেদিন থেকে ওনাকে দাভাই মেনে এসেছি। হয়তো সাহস করে বলতে পারিনি। যে শুভ্র ভাই আমার ভাই হবে? আর তুই তার এই অবস্থা করলি?”
রোজের মাও রোজকে বললো,
—-” ছিঃ ছিঃ তুই আমার মেয়ে? এটা ভাবলেও ঘৃনা হচ্ছে। নিজের স্বামীকে নিজের হাতে মারতে গিয়েছিলি?”
রোদ এবার এক ধমক দিয়ে বললো।”
—-” আহ এসব কি হচ্ছে? রোজ তো বললো ও ইচ্ছে করে করেনি,
রোজের বাবাই এগিয়ে এসে বললো!”
—-” কিন্তুু ওর ধারাই তো শুভ্র জখম হয়েছে। আজ যদি ছেলেটার কিছু হয়ে যায়?”
রোজ চেঁচিয়ে বললো,
—-” নাহহহ ওনার কিছু হবে না।”
এরমাঝে ডক্টর বেরিয়ে এলো। ডক্টরকে দেখে রোজ ছুটে গিয়ে বললো,
—-” ডক্টর আমার স্বামী কেমন আছে?”
ডক্টর তড়িঘড়ি বললো!”
—-” ওনাকে বাঁচাতে হলে এক্ষুনি ২ব্যাগ রক্ত লাগবে। আঘাতের কারনে ওনার শরীর থেকে অনেক রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে। এক্ষুনি রক্ত দিতে না পারলে ওনাকে বাঁচানো যাবে না,
রোজ বলে উঠলো।”
—-” আমি দেবো রক্ত ডক্টর। যত রক্ত লাগে আমার শরীর থেকে নিন। কিন্তুু ওনাকে বাঁচিয়ে দিন,
ডক্টর হতাশ হয়ে বললো!”
—-” দেখুন বাঁচানোর মালিক আল্লাহ। আর চাইলেই তো রক্ত দেয়া যায় না। ওনার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ,
রোজ খুশি হয়ে বললো।”
—-” আমারও ও পজেটিভ আমি রক্ত দেবো চলুন,
ডক্টর একটু চমকে বললো!”
—-” কিন্তুু একজনের শরীর থেকে এত রক্ত নেওয়া যায় না,
রোজ জিদ ধরে বললো।”
—-” আমি আমার স্বামীকে রক্ত দেবো ব্যাস চলুন,
বাধ্য হয়ে ডক্টর রোজের শরীর থেকে। ২ব্যাগ রক্ত নিলো রক্ত নেয়ার পর। রোজ অসুস্থ হয়ে গেলো। তাই ওকে স্যালাইন দিতে হলো। আর সাথে ঘুমের ইনজেকশনও। কারন রোজের শরীরে রক্ত চলাচল কম ছিলো। শুভ্রর অপারেশন শেষ হলেও। ডক্টর এখনো কিছু বলতে পারছে না!”
_____________________
রোজের ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর। ও দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। গিয়ে রোদকে ধরে বললো,
—-” ভাইয়া শুভ্র কেমন আছে? এতক্ষণ তো অপারেশন হয়ে যাওয়ার কথা তাই না?”
রোদ চুপ করে আছে। রোদকে চুপ থাকতে দেখে রোজ ভয় পেয়ে গেলো। কাঁপা, কাঁপা গলায় বললো।”
—-” শুভ্র ঠিক আছে তো?”
তামান্না এগিয়ে এসে বললো,
—-” রোজ শান্ত হ প্লিজ!”
রোজ এবার চেঁচিয়ে বললো,
—-” তোমরা কেউ কেন কিছু বলছো না? কেমন আছে শুভ্র? উনি ঠিক আছে তো? প্লিজ আমাকে বলো।”
তামান্না চোখ মুছে বললো,
—-” ঠিক নেই শুভ্র ভাই!”
রোজ দু পা পিছিয়ে গিয়ে বললো,
—-” মমমমমানে?”
রোদ রোজকে ধরে বললো।”
—-” অপারেশন হলেও শুভ্রর সেন্স কবে আসবে। এটা ডক্টর বলতে পারছে না। কারন ওর পেটের আঘাতটা খুব গভীর। তাই এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না,
রোজ দেয়াল ঘেসে বসে পড়লো। এখন ওর কানে দুটো কথা বাজছে। সেন্সলেস হওয়ার আগে শুভ্র বলেছিলো। আই লাভ ইউ রেড রোজ। আর আঘাতটা খুব গভীর। রোজ হঠাৎ বিরবির করে বললো!”
—-” আই লাই ইউ টু শুভ্র। এটা কি করে ফেললাম আমি?”
রোজ উঠে আইসিইউতে যেতে গেলো। কিন্তুু ডক্টররা বাধা দিলো। রোজ হাত জোড় করে কেঁদে বললো,
—-” প্লিজ ডক্টর আমাকে যেতে দিন। আমি কোনো ঝামেলা করবো না।”
ডক্টর রায়জাদা বললো,
—-” কিন্তুু এভাবে যাওয়া যায় না। আইসিইউতে আমরা কাউকে এলাও করি না!”
রোজ অনেক মিনতি করলো। তাই ডক্টর রায়জাদা বললো,
—-” আচ্ছা যান কিন্তুু কান্নাকাটি করবেন না।”
রোজ খুশি হয়ে দৌড়ে ভেতরে গেলো। গিয়ে রোজের বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো। নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে শুভ্র। মুখে অক্সিজেন পড়ানো। স্লোলি নিঃশ্বাস নিচ্ছে। রোজ শুভ্রর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে আস্তে বললো,
—-” শুভ্র আমার উপর রাগ করেছেন তাই না? আমি আপনাকে এত কষ্ট দিয়েছি। এত অপমান করেছি যে আপনি রেগে আছেন। আর রেগে এখন ঘুমিয়ে আছেন। আমাকে কষ্ট দিতে এমন করছেন না? উঠুন না শুভ্র একবার চোখ খুলুন। আমি আর কোনদিন আপনাকে কষ্ট দেবো না। আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো। আই লাভ ইউ শুভ্র। এবার উঠে যান প্লিজ। আমিও আপনাকে ভালবাসি শুভ্র। আমি পারছি না আপনাকে এভাবে দেখতে। আপনি আমাকে শাস্তি দিন। কিন্তুু আগে আপনি চোখ খুলুন!”
বলতে, বলতে রোজ জোড়ে কেঁদে দিলো। নার্সরা ভেতরে ঢুকে বললো,
—-” একি ম্যাম আপনি কি করছেন? এমন করলে আপনাকে বের করে দেওয়া হবে।”
রোজ তবুও বারবার বলেই যাচ্ছে,
—-” শুভ্র আমি বলছি আপনি উঠুন!”
নার্সরা বাধ্য হয়ে রোজকে বাইরে নিয়ে এলো। রোজ যে শুভ্রকে ভালবেসে ফেলেছে। তাই তো এখন ওর এত কষ্ট হচ্ছে। রোজ কাঁদতে, কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে গেলো। রোদ রোজকে ধরে ফেললো। এরপর কোলে নিয়ে কেবিনে শুইয়ে দিলো। এভাবে ৩দিন কেটে গিয়েছে। শুভ্রর সেন্স আসেনি আর রোজকেও ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রেখেছে। ৩দিনে সেন্স না আসায় ডক্টররা শুভ্রকে বাড়ি নিয়ে যেতে বললো। কিন্তুু রোজ বললো হসপিটালেই রাখবে। আর ডক্টরদের সাথে ও নিজে শুভ্রর খেয়াল রাখবে। রোজের জেদের কাছে হার মানতে হলো। আরো ৪দিন কেটে গিয়েছে। রোজ সবসময় শুভ্রর পাশে থেকেছে। ডক্টর রায়জাদা এসে বললো,
—-” মিসেস চৌধুরী এই ইনজেকশনটা লাগবে। আমার আরেকটা পেশেন্ট দেখতে হবে। আপনি এটা গিয়ে নিয়ে আসুন। হসপিটালের ফার্মেসীতে পেয়ে যাবেন।”
রোজ চলে গেলো ওটা আনতে। আর ডক্টরও গেলো আরেক কেবিনে। ইনজেকশন নিয়ে এসে রোজের চোখ বড়, বড় হয়ে গেলো। কারন বেডের উপর শুভ্র বসে আছে। রোজ দৌড়ে গিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রতো মহা অবাক রোজ কি না ওকে জড়িয়ে ধরেছে,
______________________
শুভ্র রোজকে ছাড়িয়ে বললো!”
—-” আমি হসপিটালে কি করে এলাম?”
রোজ মুখটা ছোট করে বললো,
—-” আমি এনেছিলাম আপনাকে। আপনার সেন্স এসেছে শুভ্র। আমি এক্ষুণি ডক্টরকে ডাকছি।”
বলে রোজ বেরিয়ে গেলো। শুভ্র রোজকে দেখে শুধু অবাক হচ্ছে। রোজকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যে শুভ্রর সেন্স আসাতে ও কতটা খুশি হয়েছে। রোজ ডক্টরকে ডেকে আনলো, ডক্টর এসে বললো,
—-” যাক অবশেষে আপনার সেন্স এলো!”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কেন কতদিন পর সেন্স এলো?”
ডক্টর আঙুল দিয়ে বললো।”
—-” পুরো ৭দিন পর,
শুভ্র অবাক হয়ে বললো!”
—-” হোয়াট?”
রোজ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। তামান্না দৌড়ে এসে বললো,
—-” দাভাই তোমার সেন্স এসেছে।”
শুভ্র খানিকটা চমকে বললো,
—-” দাভাই?”
তামান্না আমতা, আমতা করে শুভ্রকে সব বললো। এরপর মুখটা কালো করে বললো!”
—-” সরি আর বলবো না,
শুভ্র রেগে বললো।”
—-” কি বললি তুই?”
তামান্না কাঁদো, কাঁদো ভাবে বললো,
—-” আর বলবো না!”
শুভ্র হেসে বললো,
—-” আর না বললে। এই দাভাই তার বোনকে মেরে। আলুর ভর্তা বানিয়ে ফেলবে।”
তামান্না খুশি হয়ে গেলো। ডক্টর শুভ্রর চেকআপ করে বললো,
—-” ওনাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন!”
অতঃপর শুভ্রকে বাড়ি নিয়ে এলো। বাড়ি আনার পর রোজ শুভ্রর সম্পূর্ণ খেয়াল রাখলো। কিন্তুু শুভ্র রোজের সাথে তেমন কোন কথা বলেনি। রোজ বুঝতে পারছে রোজ যা করেছে। তার জন্য শুভ্র এমন করছে। এদিকে শুভ্রও পারছে না রোজকে ইগনোর করতে। এভাবে ১মাস কেটে গিয়েছে। শুভ্র রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো অফিস যেতে। রোজ শুভ্রকে ডেকে বললো,
—-” শুভ্র ব্রেকফাস্ট করবেন না?”
শুভ্র পিছনে না তাকিয়েই বললো।”
—-” সেটা তোমার দেখতে হবে না,
বলে চলে গেলো। রোজও ব্রেকফাস্ট না করে চলে গেলো। শুভ্র অফিসে গিয়েও শান্তি পাচ্ছে না। বারবার রোজের কথা মনে পড়ছে। প্রতিদিন রাত ১০টায় বাড়ি আসে। কিন্তুু আজকে ৮টার সময় বাড়ি চলে এলো। বাড়ি এসে অবাক হয়ে গেলো। পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে আছে। শুভ্র মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে উপরে গেলো। এখানে এসে হা হয়ে গেলো। পুরো রুম ফেইরি লাইট দিয়ে সাজানো। শুভ্র রুমের লাইট জ্বালিয়ে আরেকদফা শকড হলো। রুমটা পুরো সাজানো। বিছানা গোলাপ দিয়ে সাজানো। একপাশে রোজ দাড়িয়ে আছে। রোজের পড়নে পাতলা একটা কালো শাড়ী। হাতে কালো কাচের চুরি। গলায় কালো নেকলেস। কানে কালো কানের দুল। ঠোটে খয়েরী লিপস্টিক। হাতে এক গোছা লাল গোলাপের তোড়া। রোজ পা টিপে, টিপে শুভ্রর সামনে এসে। হাটু গেড়ে বসে পড়লো। শুভ্র হা করে তাকিয়ে আছে। রোজ গোলাপগুলো এগিয়ে দিয়ে বললো!”
—-” আই লাভ ইউ শুভ্র। আপনি পারবেন না? আপনার রেড রোজকে ক্ষমা করতে? আপনি পারবেন না? আপনার রেড রোজকে আপন করে নিতে?”
শুভ্র চুপ করে আছে দেখে। রোজ হতাশ হয়ে উঠে বসলো। এরপর কেঁদে দিয়ে বললো,
—-” আই এম সরি শুভ্র। আমি সেদিন বুঝতে পারিনি। যে ছুড়িটাতে অত ধার ছিলো। আমিতো শুধু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।”
শুভ্র হুট করে রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” হিসসসস আমি কোন এক্সপ্লেইন চাইনি!”
দুজন দুজনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। একটু পর শুভ্র রোজকে কোলে তুলে নিলো। এরপর রোজকে বিছানায় নিয়ে গেলো। রোজ শুভ্রর বুকে মুখ লুকিয়ে আছে। শুভ্র রোজকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে। রোজের ঠোটে ঠোট ছুইয়ে দিলো। রোজ শুভ্রর শার্ট খামচে ধরে আছে। আজকের এই রাতে দুটো আত্মা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো। শুভ্রও তার রেড রোজের ভালবাসা জয় করে তাকে নিজের করে নিলো। পূর্নতা পেলো দুজনের ভালবাসা,
#চলবে…