#সাইকো লাভার❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৮
শুভ্র পাগলের মতো হাসতে, হাসতে আবার ল্যাপটপে চোখ রাখলো।”
রোজ নিজেও কিছু বুঝতে পারছে না। কারন ওই রাতের কোন কথা ওর মনে নেই। রোজ মাথা চেপে ধরে বসে পড়লো। মনে করার চেষ্টা করতে চাইছে। তামান্না রোজের পাশে বসে বললো,
—-” রোজ তোর কি মনে নেই?”
রোজ আচমকা কেঁদে দিলো। সবাই মহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। যেই মেয়েকে গত ২বছরে কেউ কাঁদতে দেখেনি। আজকে হঠাৎ সে কেন কাঁদছে? রোজ হাত জোড় করে বলে উঠলো!”
—-” তোমরা আমাকে একটু একা থাকতে দেবে?”
রোদ হনহন করে বেরিয়ে গেলো। বাকিরাও আস্তে, আস্তে চলে গেলো। রোজ পেটে হাত দিয়ে বসে আছে। রোজ চোখ বন্ধ করে ফেললো। কেমন ঝাপসা কিছু ভাসছে চোখের সামনে। রোজ মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরলো। মাথাটা কেমন যেন খুব ব্যথা করছে। ধীরে, ধীরে সেই রাতের সব মনে পড়ে গেলো। রোজ ধপ করে চোখ খুলে ফেললো। স্পষ্ট যেন সবটা চোখের সামনে ভাসছে। রোজের চোখ ছলছল করছে। অস্ফুট আওয়াজে মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,
—-” শুভ্র? এটা কি করে হতে পারে? তারমানে শুভ্র বেঁচে আছে? ইচ্ছে করে আমার সামনে আসছে না? আর ও ইচ্ছে করে এমন করলো? কিন্তুু কেন এমন করছে ও? কোন ভুলের শাস্তি দিচ্ছে আমাকে?”
রোজ আর কিছু ভাবতে পারছে না। মাথাটা মনে হয় এবার ছিড়ে যাবে। রোজ একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেটটা মুখে দিতে গিয়েও থেমে গেলো। থেমে গিয়ে পেটে হাত দিয়ে বললো।”
—-” কেন এলি তুই? কেন এসেছিস বল? আমাকে জ্বালাতে এসেছিস? যেভাবে তোর বাবা আমাকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে সেভাবে? আমি আর কত সহ্য করবো বলতে পারিস? আরে আমিও মানুষ আমারও কষ্ট হয়। আমি সত্যিই আর পারছি না রে। এভাবে কোন মানুষ বাঁচতে পারে না,
শুভ্র অবাক হয়ে সব দেখে বললো!”
—-” রোজ এসব কি বললো? আমি ওকে জ্বালিয়েছি? আর ও এসব কি বললো? ও কি সত্যিই জানেনা ওর কি অপরাধ? ও আমাকে মারতে চেয়েছিলো সেটা ভুলে গেলো? আজও আমার বুকে, পেটে সেই আঘাত আছে আর ও বলছে ওর কি অপরাধ?”
শুভ্র ল্যাপটপ রেখে জানালার কাছে গেলো। জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে কাউকে ফোন দিয়ে বললো,
—-” আজই বাংলাদেশে ফিরবো আমি। ইয়া সব রেডি রাখ ড্যানি।”
বলে ফোন কেটে দিলো এরপর বললো,
—-” সময় এসে গিয়েছে মুখোমুখি হওয়ার!”
এরমাঝে কেউ একজন বললো,
—-” তুই কি এটা ঠিক করলি ভাইয়া?”
শুভ্র সেদিকে না তাকিয়েই বললো।”
—-” নিরব তুই ভাল করেই জানিস। আমি কেন এসব করেছি?”
নিরব শুভ্রর পাশে দাড়িয়ে বললো,
—-” তাই বলে নিজের বেবিকে খেলার গুটি বানাবি?”
শুভ্র কিছু বললো না শুধু হাসলো। নিরবও আর কিছু বললো না। হ্যা নিরব শুভ্রর চাচাতে ভাই। আর নিরব কেন শুভ্রকে শএু ভাবতো পরে জানবেন!”
রাত ৮টা বাজে। রোজ গাড়ির উপর বসে আছে। হাতে আজকে মদের বোতল নেই। চুপচাপ রাস্তার পাশে গাড়ি নিয়ে বসে আছে। আচমকা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। রোজের চিৎকারে মনে হচ্ছে আকাশ, বাতাসও কাঁপছে। রোজ চিৎকার করে কেঁদে বললো,
—-” কেন হলো এমন বলো? আমার সাথে এমন কেন হলো? আমার জীবনটা কেন এরকম হয়ে গেলো? আমার বুকের ভেতর অসহ্য ব্যথা হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। মনে হচ্ছে আমি যেন মরে যাচ্ছি। আমার কি দোষ ছিলো আল্লাহ? কেন বিনা দোষে আমাকে শাস্তি পেতে হলো? স্বপ্ন দেখা কি পাপ? কাউকে বিশ্বাস করা কি অন্যায়? কাউকে ভালবাসা কি ভুল? তাহলে আমি কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছি? আমি কোন অন্যায়ের শাস্তি পাচ্ছি? আমি কোন ভুলের শাস্তি পাচ্ছি? আমিতো স্বপ্ন দেখে পাপ করিনি। আমিতো বিশ্বাস করে অন্যায় করিনি। আমিতো ভালবেসে ভুল করিনি তাহলে কেন? কেন আমার জীবন এলোমেলো হয়ে গেলো? এত কষ্ট কি আমার প্রাপ্য ছিলো? ভাগ্য আমাকে নিয়েই কেন খেললো? কেন?”
রোজ গাড়ি থেকে নেমে বসে পড়লো। এরপর পেটে হাত দিয়ে বললো।”
—-” ওরই বা কি দোষ? ও কেন বাজে কথা শুনবে? কে বিশ্বাস করবে ও শুভ্র চৌধুরীর সন্তান? সবাই জানে শুভ্র চৌধুরী মৃত। কেন ওর বাবা ওকে শাস্তি দিতে চাইছে? নাকি আমাকে দিতে চাইছে শাস্তি? যদি তাই হয় তাহলে আমি জানতে চাই। কোন ভুলের শাস্তি আমি পাচ্ছি?”
শুভ্র লন্ডন থেকে চলে এসেছে। আর এখান দিয়েই যাচ্ছিলো। রোজের বলা সব কথাই ও শুনেছে। এবার শুভ্র শকড হয়ে বসে আছে। ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। রোজ কেন বলছে যে কোন ভুলের শাস্তি? শুভ্র নিজেকে শক্ত রেখে চলে গেলো। রোজ ওখানে কতক্ষণ থেকে বাড়ি ফিরে এলো,
_____________________
২দিন পর সকালে রোজ বসে খাচ্ছে। প্রতিদিন ঠিকমত না খেলেও আজকে খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে উঠতেই রোদ বললো!”
—-” আজকে তোর আমাদের সাথে নিরবদের বাড়ি যেতে হবে,
রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” নিরবকে কি করে চিনিস তুই?”
রোদ খেতে, খেতে বললো,
—-” ভুলে যাচ্ছিস কেন? আমি আর বাবাই বিজনেস করি। ওর বাড়িতে বিজনেস পার্টি আছে!”
রোজ অবাক হয়ে বললো,
—-” এখন আবার কোন বিজনেস পার্টি?”
তামান্না এগিয়ে এসে বললো।”
—-” আরে এখানে সব বিজনেস পার্টনাররা থাকবে। আর তোর ভাইয়া নিরবের বিজনেস পার্টনার,
রোজ ওহহহ বলে চলে গেলো। রাতে সবাই মিলে নিরবদের বাড়িতে এলো। পুরো বাড়ি লাইটিং করেছে। আর খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। রোজকে দেখেই নিরব এসে বললো।”
—-” আমিতো ভাবতেই পারছি না তুমি আসবে,
রোজ কিছু না বলে আরেকপাশে চলে গেলো। সবাই সবার সাথে কথা বলছে। তবে এখানে বেশী মানুষ নেই। মানুষ নেই বললেই চলে। এরমাঝে সাদা লাইট বন্ধ হয়ে নীল লাইট জ্বলে উঠলো। আর স্টেজের মতো সাজানো ওখানে টিভি রাখা। স্টেজে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। যাকে চেনা যাচ্ছেনা মুখে মাস্ক থাকায়। ছেলেটা গিটার নিয়ে এসে সুর তুললো!”
?এক হাসিনা থি, এক দিওয়ানা থা?
?কেয়া উমার, কেয়া জামা, কেয়া জামানা থা?
?হে, হে, হে, হে, হে, লা, লা, লা, লা, লা?
এরমাঝে টিভি অন হয়ে গেলো,
?এক হাসিনা থি, এক দিওয়ানা থা?
?কেয়া উমার, কেয়া জামা, কেয়া জামানা থা?
সবাই গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখছে।”
?এক দিন ও মিলে, রোজ মিলনে লাগে?২
এতটুকু গাইতেই টিভিতে। রোজ আর শুভ্রর প্রথম দেখার ছবি ভেসে এলো। রোজ হা করে সেদিকে তাকিয়ে আছে। সাথে রোজের পরিবারের সবাই। তবে নিরব একফোটাও অবাক হচ্ছে না,
?ফির মোহাব্বত হুয়ি, বাস কায়ামাত হুয়ি?
তখনি রোজ আর শুভ্রর বিয়ের ছবি ভেসে উঠলো!”
?সুনকে ইয়ে দাসতা, খো গায়ে তুম কাহা?
?লোগ হায়রান হ্যায়, কিউকি আনজান হ্যায়?
?ইসকে কি ও গালি, বাত জিস্কে চালি?
টিভিতে একেরপর এক ছবি দেখাচ্ছে। আর প্রত্যেকটা ছবিই রোজ আর শুভ্রর,
?উস গালি ম্যা মেরা আনা জানা থা?
?এক হাসিনা থি, এক দিওয়ানা থা?
?কেয়া উমার থি, কেয়া সামা থা, কেয়া জামানা থা?
?এক হাসিনা থি, এক দিওয়ানা থা?
রোজ স্টেজে যেতে গেলেই নিরব ধরে ফেললো। রোজ রেগে নিরবকে বললো।”
—-” নিরব আমার হাত ছাড়ো,
নিরব মুচকি হেসে বললো!”
—-” আজ না ভাবী,
রোজ চমকে বললো।”
—-” ভাবী মানে? এসব কি বলছো তুমি?”
নিরব রোজের হাত ছেড়ে বললো,
—-” একটু ওয়েট করো আজ সব জেনে যাবে!”
রোজের মাথায় কিছু ঢুকছে না। এসব ছবি এখানে টিভিতে কি করে এলো? আর স্টেজের ছেলেটাই বা কে?”
?উস হাসিনে কাহা, সুনো জানে বাফা?২
?ইয়ে ফালাক ইয়ে জামি তেরে বিন কুস নেহি?
?তুঝপে মারতি হু ম্যা, পিয়ার কারতি হু ম্যা?
?তেরে বিন জিন্দেগি কুছ নেহি কুছ নেহি?
এরপর টিভিতে ভেসে এলো। সেই ২বছর আগের রাতের ছবি। যেই রাতে রোজ শুভ্রকে খুন করতে চেয়েছিলো। এটা দেখে রোজের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো,
?আশিকি ম্যা উনকা আলাম কেয়া সুহানা থা?
?এক হাসিনা থি, এক দিওয়ানা থা?
?কেয়া উমার থি, কেয়া সামা থা, কেয়া জামানা থা?
?এক হাসিনা থি, এক দিওয়ানা থা?
এবার দেখালো রোজ শুভ্রর পেটে ছুড়ি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এরপর শুভ্রকে ব্রিজের কাছে দাড় করিয়ে ওর বুকে গুলি চালিয়ে দিলো। এরপর নিজ হাতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। রোদ আর তামান্না তো জাস্ট শকড। রোজ এর আগামাথা বুঝতে পারছে না। ও এক দৌড়ে স্টেজে চলে গেলো। গিয়েই ছেলেটার মাস্ক টেনে খুলে ফেললো। এবার সবার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। রোজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। স্টেজে আর কেউ না বরং শুভ্র, রোজ অবাক হয়ে বললো।”
—-” শুভ্র তুমি?”
শুভ্র টিভি বন্ধ করে দিলো। সাথে, সাথে সাদা লাইট জ্বলে উঠলো। রোজ তাকিয়ে দেখলো এখানে সবাই ওর পরিচিত। ওর পরিবারের লোকজন নিরব আর শুভ্র। এছাড়া আশপাশে আর কেউ নেই। শুভ্র বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
—-” ইয়েস ইটস মি শুভ্র চৌধুরী। সুয়াগাত নেহি কারোগে হামারা?”
স্টেজ থেকে নেমে নিরবের কাছে গিয়ে বললো,
—-” তো খুবতো বলেছিলি তুই। যে ভাইয়া ঠিক টাইমে আসতে পারবি না। এবার দেখলি তো কেমন এন্ট্রি মারলাম?”
নিরব হাত মিলিয়ে বললো!”
—-” সুপারব ভাইয়া,
সবার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। রোদ এগিয়ে এসে বললো।”
—-” শুভ্র তুই বেঁচে আছিস? আর টিভিতে এসব কি দেখালি?”
শুভ্র রোদকে দেখে বললো,
—-” যা দেখলি সেটাই ঠিক!”
তামান্না ও এগিয়ে এসে বললো,
—-” রোজ তোকে মারতে চেয়েছিলো দাভাই?”
শুভ্র একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বললো।”
—-” সবটাতো তোরা নিজেরাই দেখলি,
এবার রোজ হাততালি দিতে, দিতে বললো!”
—-” ওয়াও শুভ্র কি চাল চেলেছো তুমি। টিভিতে তো সবাইকে সবটা দেখালে। তা তুমি যে আমার ভাইয়াকে মারতে চেয়েছিলো। ২বছর আগে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার সময় তুমি ওকে গুলি করেছিলো। সেই ছবি এখানে কেন নেই? নাকি নিজের আসল চেহারাটা লুকোতে চাইছো। এটা নেই কেন বলো?”
শুভ্র অবাক হয়ে বললো,
—-” আমি রোদকে মারতে চেয়েছি মানে? আর ইউ ক্রেজি রোজ? আমি রোদকে কেন মারতে চাইবো?”
রোদও এবার অবাক হয়ে বললো।”
—-” শুভ্র তুই কি বলছিস? তুইতো আমাকে গুলি করেছিলি। এটাও বলেছিলি তুই মাফিয়া এটা আমি জেনে গিয়েছিলাম। আর তাই তুই আমাকে মারতে চাস,
শুভ্র কিছু একটা ভেবে বললো!”
—-” ওইদিন কত তারিখ ছিলো?”
রোজ চট করে বললো,
—-” আগস্ট ৭তারিখ।”
এবার শুভ্র খানিকটা হেসে বললো,
—-” হ্যা খুন আমি ৭তারিখে করেছিলাম। তবে সেটা আমি আর নিরব মিলে করেছিলাম। আমাদের বড় চাচ্চু আরহান চৌধুরীকে!”
____________________
সবাই একসাথে বলে উঠলো,
—-” হোয়াট?”
শুভ্র হেসে বললো।”
—-” হ্যা কারন ওই লোকটা পাপী। আর আমরা ওনাকে শাস্তি দিয়েছি,
রোজ শুভ্রর সামনে দাড়িয়ে বললো!”
—-” কি প্রমান আছো তোমার কাছে? যে ওইদিন তুমি তোমার চাচ্চুকে মেরেছো?”
শুভ্র হেসে বললো,
—-” নিরব তোর ফোনটা দে তো। তুইতো আবার কাউকে মারলে তার ভিডিও করিস।”
নিরব ওর ফোন দিলো। শুভ্র সবাইকে একটা ভিডিও দেখালো। যেখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে শুভ্র আর নিরব খুন করছে। আর ভিডিওতে বছর সহ মাস এবং তারিখও আছে। রোজ তাচ্ছিল্য হেসে বললো!”
—-” তাহলে তুমি কি? তোমরা দুভাই ও তো পাপী। তোমরাও তো খুনি মাফিয়া,
শুভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-” আমরা? আই নো আমরা খুন করি। কিন্তুু এমন মানুষদের খুন করি। যাদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। যারা বেঁচে থাকলে সমাজ নোংরা হবে।”
রোজ হু হা করে হেসে বললো,
—-” তারপরও তুমি একজন খুনি। তুমি একজন মাফিয়া এটা পাল্টে যাবে না। আর সাথে তোমার এই ভাই নিরবও!”
শুভ্র তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
—-” হ্যা যেমন আমাদের অতীত পাল্টে যাবে না। যেমন আমরা আমদের আম্মু, বাবাইকে ফিরে পাবো না। ফিরে পাবোনা দিদাকে ঠিক তেমন।”
রোদ অবাক হয়ে বললো,
—-” মানে?”
শুভ্রর চোখ ছলছল করছে!”
—-” কেউ খুনি হয়ে জন্মায় না রোজ। আমিও খুনি হয়ে জন্মাইনি। আর না তো মাফিয়া হওয়ার কোন ইচ্ছে আমার ছিলো। আম্মু, বাবাই, দিদাকে নিয়ে খুব ভাল ছিলাম আমরা দুভাই। নিরবের আম্মু আর বাবাই ও ছোট থাকতেই মারা গিয়েছে। সব সম্পতি আমার বাবাইয়ের নামে ছিলো। বাবাই নামকরা বিজনেসম্যান ছিলো। আমার বয়স যখন ১৬বছর। নিরবের বয়স তখন ১৪বছর। ১দিন আমি আর নিরব ঘুরতে গিয়েছিলাম। কারন আমরা মাঝে মাঝেই ঘুরতে যেতাম। বাড়ি এসে দেখলাম আম্মু আর বাবাই ফ্যানের সাথে ঝুলছে। আর দিদা রক্তাক্ত হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। আমরা বাড়ি ঢোকার পর একটা গাড়ি বেরিয়ে গিয়েছিলো। নিজের পরিবারকে এভাবে দেখে মুহূর্তেই দুনিয়াটা থমকে গিয়েছিলো। নিরবকে আমার আম্মু আর বাবাই নিজের সন্তানের মতো ভালবাসতো। সেদিন গলা জড়িয়ে ধরে দুভাই চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। আমাদের চিৎকার শোনার জন্য সেদিন কেউ ছিলো না। আমরা চিরতরে এতিম হয়ে গেলাম। হয়তো সেদিন আমাদের কান্নায় সব থমকে গিয়েছিলো। এরমাঝে আরহান চাচ্চু এসে হাজির হলো। আমাদের অনেক শান্তনা দিলো উনি। সবার লাশ দাফন করার পর চাচ্চু আমাদের কাছে এসে বললো। এই পৃথিবীতে ভাল মানুষের দাম নেই। আমাদের যারা এতিম করেছে তাদের যেন আমরা শাস্তি দেই। আর তার জন্য আমাদের গান হাতে নিতে হবে। তখন প্রতিশোধের নেশাটা মাথায় চড়ে গিয়েছিলো। চাচ্চুর কথামতো চলে এলাম অন্ধকার জগতে। চাচ্চুর সাথে মাফিয়াদের কানেকশন ছিলো। চাচ্চু হয়তো ভাবতে পারেনি আমি মাএ ২২বছর বয়সে সবার লিডার হয়ে যাবো। আর বাবার বিজনেস আমি এত ভাল করে সামলাবো। যখন মাফিয়া জগতের লিডার আমি হয়ে গেলাম। আর বিজনেস জগতেও আমার নাম হলো। সেটা ওনার সহ্য হয়নি উনি নিরবকে সরিয়ে নিলো। নিরবের কানে বিষ ঢাললো বাবাই ওর বাবাইকে মেরেছে সম্পতির জন্য। আর নিরব সেটা বিশ্বাসও করে নিলো। কারন সব সম্পতি বাবাইর নামে ছিলো। নিরব আমার বিপক্ষে চলে গেলো। কিন্তুু ভালবাসাটা ছিলো তাই কখনো আমার ক্ষতি করেনি ও। আর ২বছর আগেই আমরা জেনেছিলাম। আমাদের এতিম করেছে ওই আরহান। তাই সেদিন আমরা ওনাকে মেরে ফেলি। আর এই ৬মাস যে নিরব তোমার পিছনে ঘুরঘুর করতো। ওটা আসলে ও তোমাকে দেখে রাখতো আমার কথায়। আর এই ৬মাস নিরবই আমাকে হেল্প করেছে। তুমি এরকম কি করে হয়েছো সেটাও আমি জেনেছি। তোমার ভার্সিটির বাজে ফ্রেন্ডদের চক্করে পড়ে। কিন্তুু তুমি কি করে ভাবলে? যে আমি রোদকে মারতে চাইবো?”
শুভ্রর কথা শুনে সবাই কেঁদে ফেলেছে। শুভ্রর প্রশ্ন শুনে রোজ বললো।”
—-” তুমি কি করে ভাবলে যে আমি তোমাকে খুন করতে চাইবো?”
শুভ্র চমকে বললো,
—-” মানে?”
রোজ চোখ মুছে বললো!”
—-” ওটা আমি ছিলাম না শুভ্র। আমি জানিনা ওটা কে ছিলো?”
এবার শুভ্র কতক্ষণ ভেবে বললো,
—-” তারমানে এই পুরোটা কারো প্লান। প্রথমে আমি সেজে রোদকে গুলি করা। আর তারপর রোজ সেজে আমাকে মারতে চাওয়া। আসলে আমাদের ভুল বোঝানো হয়েছে। শিট এত বড় খেলাটা কে খেলতে পারে?”
নিরব বলে উঠলো।”
—-” আমিও এখন সেটা ভাবছি,
হুট করেই শুভ্র বললো!”
—-” আই থিংক, নো আই এম সিওর আমি বুঝতে পেরেছি। এবার আমি সবার সামনে আনবো ওদের,
রোজ এসবে কান না দিয়ে বললো।”
—-” কিন্তুু এতকিছুর পরও এটা পাল্টে যাবে না। যে তুমি এই খেলায় নিজের সন্তানকে গুটি বানাতে চেয়েছো,
শুভ্র রেগে চেঁচিয়ে বললো!”
—-” জাস্ট সাট আপ রোজ। তুমি ভাবলে কি করে আমি এটা করবো? আরে আমার এমন কোন ইচ্ছে থাকলে। তুমি প্রেগন্যান্ট জেনে আমি বাংলাদেশে আসতাম না। আমাকে দেখানো হয়েছে তুমি আমাকে খুন করতে চেয়েছো। তবুও আমি তোমাকে ভালবেসেছি। আর আমি এমন করেছি যাতে তুমি আমাকে না ছাড়তে পারো। যাতে তুমি নিজে আমাকে চাও। আমার যদি কোন খারাপ ইনটেনশন থাকতো। তাহলে আমি লন্ডনেই থেকে যেতাম। আর সবাই তোমাকে খারাপ বলতো। কারন তোমার কাছে কোন প্রমান ছিলো না। যেটা দিয়ে তুমি বলতে পারতে যে তোমার পেটে আমার সন্তান। কারন সবার কাছে আমি মৃত। আমি আজও তোমাকেই ভালবাসি। আর আমি আমার সন্তানকেও ভালবাসি। তুমি কোনদিন আমাকে বোঝোনি আর বুঝবেও না। আমার জায়গায় তুমি থাকলে কি করতে বলো? যদি তুমি জানতে যে আমি তোমাকে মারতে চাই। তাহলে তুমি কি করতে বলো?”
রোজ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। শুভ্র ওখান থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। রোজ ঠায় দাড়িয়ে আছে সেখানে,
#চলবে…