সাহেব_বিবি_গোলাম পর্ব-১২

0
1348

#সাহেব_বিবি_গোলাম
#নুশরাত_জেরিন
#পর্ব:১২

,
,
একটা কথা মনে পরতেই রাগ আমার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।শুভ জানতো প্রিতমের কথা?জানতো আমি প্রিতমকে ভালবাসি,তার জন্যই বিয়ের আসর ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলাম।এরপরও আমায় বিয়ে করলো কেনো?
আমি শুভর রাগী মুখের দিকে সরাসরি তাকালাম।তার রাগের বিন্দুমাত্র পাত্তা দিলামনা।ছেলেটাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম।একটু দুষ্টু হলেও ভেবেছিলাম আসলে সে ভালো মানুষ।
কিন্তু নাহ।এখন মনে হচ্ছে সে মোটেও তেমনটা না।
সে ইচ্ছে করে আমাকে আর প্রিতমকে আলাদা করেছে।কিন্তু কেনো?
আমি গম্ভীর গলায় বললাম,

—আপনি প্রিতমের কথা জানতেন?
জানতেন আমি ওকে ভালবাসি?

শুভর রাগী মুখটা আরও কঠোর দেখালো।চোয়াল শক্ত করে সে বললো,

–হ্যাঁ,তো?

–তো মানে?আপনি জেনেশুনে কেনো করলেন এমনটা?আমি অন্যকাউকে ভালবাসি জেনেও কেনো করলেন আমায় বিয়ে?কেনো?

শুভ নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দিলো,

—কারন আমি তোমাকে ভালবাসি!

আমি চমকে তাকালাম। চোখ নিমিষেই বড় হলো আমার।কি বলছে শুভ?সে আমায় ভালবাসে?আমায়?কাল আপার কথাগুলো তাহলে সত্যি ছিলো?কিন্তু এ কেমন ভালবাসা?যে ভালবাসা তার ভালবাসার মানুষটির সুখই কেড়ে নেয়।

আমি তার চোখে চোখ রেখেই বললাম,

—কিন্তু আমি প্রিতমকে ভালবাসি।আর সারাজীবন বাসবো।

শুভ রেগে গেলো বোধহয়।তার চোখ কেমন রক্তবর্ন হয়ে গেলো।আমার দিকে তেড়ে এসে দুকাধ আকড়ে ধরলো।
আমি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম।
শুভ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

—ওই নাম আর কক্ষনো উচ্চারন করবেনা,কক্ষনো না।
আমি যেনো কখনো তোমার মুখে ওই নাম না শুনি।

আমি কেন যেন ভয় পেলাম না কথাগুলো শুনে।প্রিতমের ব্যপারে আমি খুব সাহসী হয়ে উঠি সবসময়।ওর জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত আমি।আমার ভালবাসা যে সে।
কতো খুনসুটি কতো স্মৃতি আছে আমাদের!কতো রঙিন দিনছিলো তখন!
আমি বলে উঠলাম,

—মুখে না বললেও মনে যে থাকবে!ওর নাম খোদাই করে লেখা আছে যে মনে।

শুভ এবার গাল চেপে ধরলো।আমার মুখে এমন কথা হয়তো সে আশা করেনি।
বললো,

—মন থেকেও মুছে ফেলবো আমি!তোমার পুরোটা জুরে শুধু আমার নাম থাকবে,ওই বেইমানটার নাম নয়!

বলেই আমাকে ছেড়ে দুরে দাড়ালো শুভ।
লাইট ওফ করে বিছানায় শুয়ে পরলো।
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সে প্রিতমকে বেইমান কেনো বললো?কি বেইমানি করেছে সে?তাছাড়া শুভ তো প্রিতমকে চেনেই না,তাহলে এমন কথা বললো কেনো?নাকি আমারই জানার ভুল?হয়তো সে ঠিকই চেনে!

আমিও চুপচাপ খাটের একপাশে শুয়ে পরলাম।
শুভ আর জালালো না আমায়।
তবে কেন যেনো রাতভর ঘুমের দেখা পেলামনা।ভেতরটা খুব ছটফট করতে লাগলো।
শেষ রাতের দিকে খাট ছেড়ে উঠে বসলাম।
ঘুম না এলে শুধু শুধু শুয়ে থাকা যায়না।বিরক্ত লাগে।
আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম আমি।এমন সময় এককাপ চা হলে মন্দ হতোনা।কিন্তু এতো রাতে চা পাবো কোথায়?
হাটতে হাটতে সিড়ি বেয়ে ছাদে এসে দাড়ালাম।
বাইরে এখনো অন্ধকার হয়ে আছে।চারপাশের দৃশ্য কেমন যেন ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগছে।
আমি সাধারণত ভীতু মানুষ হলেও আজ মোটেও ভয় লাগছেনা।
একা একা লাগছে খুব।মনে হচ্ছে এক দৌড়ে প্রিতমের কাছে চলে যাই।জাপটে ধরে জরিয়ে রাখি তাকে।যাতে আর কখনো হারিয়ে যেতে না পারে।যদিও হারাবেই বা কিভাবে?তাকে তো কখনো পায় ই নি।
হঠাৎ পাশে শব্দ হতে আমি ফিরে তাকালাম।দেখি শুভ।প্যান্টের পকেটে দু-হাত দিয়ে সে দৃষ্টি সামনে রেখে দাড়িয়ে আছে।
আমার দিকে তাকাতেই সে মুচকি হাসলো।তবে হাসিটা কেমন ফ্যাকাসে মনে হলো আমার।
জোৎস্নার মৃদু আলো চারিদিকে মেখে আছে।শুভর মুখটা স্পষ্ট দেখা না গেলেও আবছা আলোয় আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সে সামনে তাকিয়েই বললো,

—আমার উপর রাগ করেছো বউ?

আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম।ছেলেটা এখন যতোই নরম নরম কথা বলুক না কেনো,আমি তাতে একদম গলবো না।
সে আমায় একটু আগে কাধে হাত দিয়ে কাধ ব্যাথা করে দিয়েছে,গালটাও চেপে ধরেছিলো।মনে পরতেই গালে ব্যাথা অনুভব হলো আমার।আনমনে গালে হাত দিয়ে ডললাম।
শুভ আঁড়চোখে সেদিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে মৃদু হাসলো।
বললো,

—বেশি ব্যাথা পেয়েছো?

আমি তারপরও কথা বললাম না।আমি রেগে আছি তার উপর।রেগে থাকা ব্যক্তি কখনো কথা বলেনা।
শুভ এগিয়ে এলো।গালে হাত রাখতে চাইলেই আমি সরে দাড়ালাম।
শুভ এবার হাত টেনে ধরলো।আমাকে পেছন ঘুরিয়ে কাধে মাথা রাখলো।
শক্ত করে জড়িয়ে বললো,

—ভুল হয়ে গেছে বউ,আর কক্ষনো এমন করবোনা।
কিন্তু তুমি আমায় কেনো রাগাও বলোতো?যাকেতাকে ভালবাসি ভালবাসি বলে বেড়াও কেনো?কষ্ট হয়না আমার?

আমি ফট করে চোখ বড় করলাম।কি বলতে চাইছে শুভ?যাকে তাকে কাকে বললো সে?প্রিতমকে?প্রিতম যে সে?
আমি ঝটকা দিয়ে তাকে সরালাম।রক্তচক্ষু নিয়ে তার দিকে ফিরলাম।
কেনো যেনো প্রচুর রাগ হলো আমার।
প্রিতমের নামে কিছু বললে আমার সহ্য হয়না।ভালবাসার মানুষটার নামে কেউ বাজে কথা বললে সহ্য হয় নাকি?বরংচ কষ্ট হয়।বুক জ্বালাপোড়া করে।এইযে আমার করছে এখন!
তবে কেন যেন মনে হচ্ছে শুভ প্রিতমকে চেনে।খুব ভালভাবেই চেনে।
আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললাম,

—প্রিতমকে আপনি চেনেন?

শুভ থতমত খেলো মনে হলো।সে আমতাআমতা করলো খুব।কেমন যেন অস্থির দেখাচ্ছে তাকে।
আমার চোখে চোখ রাখতেও তার কি দ্বীধা!
আমার সন্দেহের পরিমান বাড়লো।শুভ একবার চোখ তুলে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো।গটগট পায়ে হেটে চলে গেলো সে।,

,

,

চলবে…..