সায়েবা আসক্তি পর্ব-০৪

0
578

#সায়েবা_আসক্তি
#লেখিকা_সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৪

আজ চার দিন যাবত সায়েবা বাসায় শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছে। কমড়ের ব্যাথা অনেকটা কমে গেছে।কাল থেকে ভার্সিটিতে যেতে পারবে।এই কয়েকদিন ফারহানের সাথে কোন রকম দেখা হয় নি সায়েবার।সায়েবা মনে মনে খুব খেপে আছে ফারহানের উপর। একবার দেখা হোক,তখন হাড়ে মজ্জায় বুঝিয়ে দিবে এই সায়েবা কি জিনিস।এইসব ভাবতে ভাবতেই সায়েবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সে এখনো ভালোবাসে ফারহান কে।ফারহানের জায়গায় অন্য কাওকে ভাবতেই পারে না। কিন্তু ফারহান তাকে বরাবরই উপেক্ষা করে।

🌸

ভার্সিটি তে ঢুকতেই আদিবের সাথে দেখা হয়ে গেলো সায়েবার।আদিব মিষ্টি হেসে সায়েবার দিকে এগিয়ে গেলো।

— কেমন আছেন সাহেবান?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন? (মুচকি হেসে)

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তো শরীর ঠিক আছে তো?

— জ্বি ভাইয়া।

আদিব সায়েবার দিকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— তোমাকে একটা গোপন কথা বলার আছে।আমি জানি এই কথাটা বললে বন্ধু সমাজ আমাকে মীরজাফর বলে ঘোষিত করবে। কিন্তু ইউ নো,,হার এক ফ্রেন্ড কামিনা হোতা হ্যা।

আদিবের বলার ভঙ্গি দেখে ফিক করে হেসে দিল সায়েবা।আদিব সায়েবা দিকে ঝুকে ফিসফিস করে বললো,

— তুমি জানো ফারহান তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসে!

আদিবের কথা শুনে চমকে উঠলো সায়েবা।চোখ বড় বড় করে আদিবের দিকে তাকালে আদিব মাথা নাড়িয়ে বোঝায় সে যা বলেছে তা পুরোপুরি সত্যি।

সায়েবা নিজের বিশ্বয় কাটিয়ে আদিবের দিকে তাকিয়ে অভিমানী গলায় বললো,

— আপনি ও আমার সাথে এভাবে মজা করতে পারলেন ভাইয়া!আপনার কাছে এরকম কিছু আশা করি নি।

আদিব সায়েবার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে নিলো।সিরিয়াস চোখে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,

— আমি মজা করছি না সাহেবান। ফারহান তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে।তোমার পড়াশোনায় ক্ষতি হবে ভেবে তোমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে।কিন্তু বিশ্বাস করো সে তোমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।

সায়েবার আজকে অবাক হওয়ার দিন।সায়েবা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে। তার দৃষ্টি বলে দিচ্ছে সে এখনো আদিবের কথা বিশ্বাস করে নি।

— আপনি এসব কি বলছেন ভাইয়া। আ।আর শরীর ঠিক আছে তো? জ্বর টর হয়নি তো?

— আরে আমার কিছু হয় নি। তুমি আমাকে বিশ্বাস কেন করছো না!

সায়েবা অসহায় গলায় বললো,

— আপনি বিশ্বাস যোগ্য কোন কথা বলেন নি ভাইয়া।

আদিব কিছু একটা ভাবলো, তারপর সায়েবার দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমি প্রমাণ করে দিতে পারি ফারহান তোমাকে ভালোবাসে।

সায়েবা সন্দিহান গলায় বললো,

— কিভাবে?

— আজকে তুমি ভার্সিটির যে কোন ছেলে কে প্রপোজ করবে।তবে ফারহান থাকা কালিন করতে হবে। তখন দেখবে ফারহান কিভাবে লুচির মতো ফুলে।

আদিবের কথাটা সায়েবার খুব পছন্দ হলো। সে খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,

— তা তো করাই যায়। তবে ইন্সটেন্ট ছেলে পাবো কোথায়?

সায়েবার কথা শুনে আদিব ও কিছুটা চিন্তায় পরে গেলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে সায়েবার দিকে চোখ যেতেই দেখলো সায়েবা তার দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে হাসছে।

আদিব কিছুটা হচকচিয়ে গেলো। ভয়ার্ত গলায় বললো,

— একদম না।আমি তোমাকে বোন বোন নজরে দেখি।এসব অস্তাগফিরুল্লাহ কাজ আমাকে দিয়ে করানোর চিন্তা ও করো না। ফারহান আমাকে আস্তো রাখবে না।

আদিবের কাদো কাদো গলা শুনে হু হা করে হেসে উঠলো সায়েবা।হঠাৎ করে আদিবের হাত জরিয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো,

— আমি ও আপনাকে ভাই ভাই নজরে দেখি ভাইয়া।বোনের সুখের জন্য এতোটুকু তো করতেই পারেন।

সায়েবার ইনোসেন্ট ফেসের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললো আদিব।এখন তার নিজের মাথা নিজের ই ফাটাতে ইচ্ছে হচ্ছে। এজন্যই গুরু জনেরা বলে, কারোর ভালো করতে নেই। উপকারী কে বাঘে খায়।

আদিব তারাতাড়ি চোখ ঘুড়িয়ে আসেপাশে তাকাতেই ফারহান কে চোখে পড়লো। ফারহান ওদের দিকেই সরু চোখে তাকিয়ে আছে। আদিব নিজের কপালের ঘাম মুছে অসহায় গলায় বললো,

— মরে গেলে একটা ভাই হারাবে।বর গেলে বর পাওয়া যায়। কিন্তু ভাই গেলে ভাই পাওয়া যায় না পাগলা।

সায়েবা মাছি তাড়াবার মতো করে বললো,

— আমি আপনার জন্য প্রতি বছর দান সদকা করবো ভাইয়া।আপনার নামে এতিমখানা খুলবো। আপনার নাম শহীদের খাতায় তোলা হবে।বোনার জন্য জীবন দিলো ভার্সিটি পড়ুয়া তাগড়া যুবক। ভাবেন একবার! আপনি তো সেলিব্রিটি হয়ে যাবেন।

— আমি সেলিব্রিটি হতে চাই না!

— আরে কিছু হবে না। চলেন তো।

আদিব কাপা কাপা পায়ে এগিয়ে যেতেই সায়েবা কটমট করে তাকালো।

— এভাবে মুখ কালো করে রেখেছেন কেন? আমি আপনাকে সাগরে ফেলে দিচ্ছি নাকি?আজব!হাসুন।

সায়েবার কথা শুনে আদিব দুঃখী দুঃখী গলায় বললো,

— তুমি কখনো বাঘের খাচায় থাকা হরিণ কে হাসতে দেখেছো?

সায়েবা কিছু না বলে আদিবের হাত ধরে সামনে এগিয়ে গেলো। ফারহান এখনো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দৃষ্টি সায়েবার হাতের দিকে।

ফারহানের দিকে এগিয়ে যেতেই ফারহান গম্ভীর গলায় বললো,

— এসব কি হচ্ছে?

সায়েবা ফারহানের দিকে তাকিয়ে ক্লোজআপ স্মাইল দিলো।আদিবের দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে বললো,,

— কিছু না ভাইয়া।আমি আদিব ভাইয়াকে নিজের মনের কথা বলতে চাই। আসলে ওইদিন সবার সামনে নিজের মনের কথা বলে ভুল করেছিলাম।এজন্য অনেক সমস্যা ফেস করতে হয়েছে।তাই আমি আদিব ভাইয়াকে একান্তে নিজের মনের কথা বলতে চাই।

সায়েবার কথা শুনে ফারহান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে। দাত কিড়মিড় করে বললো,

— তা কি মনের কথা বলবে শুনি?

সায়েবা ফারহানের দিকে তাকিয়ে লজ্জা লজ্জা ভাব করে বললো,

— আরে ধুর। সবার সামনে সব কিছু বলা যায় বাকি?আমরা একটু একান্তে সময় কাটাতে চাইছি।

ফারহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। রক্তবর্ন চোখে তাকিয়ে আদিব কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— আদিব একটু এদিকে আয়।কথা আছে তোর সাথে।

ফারহানের কথা শুনে সায়েবা তড়িঘড়ি করে বললো,

— না না।আদিব ভাইয়া এখন কোথাও যাবে না। আহা! বুঝতে পারছেন না কেন! নতুন নতুন প্রেমে পড়লে একটু বেশি সময় কাটাতে হয় নিজেদের মধ্যে। একজন আরেকজন কে জানতে হবে তো।তাহলেই ভবিষ্যতে সুন্দর করে গুছিয়ে সংসার করা যাবে।বন্ধুর কথা চিন্তা করে আপনাদের একটু সেক্রিফাইস করতে হবে ভাইয়া।আপনাদের কেও সময় দিবে।কিন্তু প্রেমিকা হিসেবে আমাকে বেশি সময় দিবে আর কি।কিছু মনে করবেন না প্লিজ। প্রেমে পড়লে বন্ধু আর বন্ধু থাকে না। সে হয়ে যায় প্রেমিকার সম্পত্তি।

আদিব চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সায়েবার দিকে। এই মেয়েটা আজ ওর প্রান নিয়েই ছাড়বে।কাপা কাপা চোখে ফারহানের দিকে তাকাতেই কলিজা শুকিয়ে সাহারা মরুভূমির মতো হয়ে গেলো। ফারহান রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আদিব চোখের ইশারায় বোঝালো ‘আমার কোন দোষ নাই ভাই’

ফারহান শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বললো,,

— তাই নাকি ধূলোর রানী?তা কে কার প্রেমে পড়লো?

ফারহানের হাতা গোটানো দেখে দুজনেই শুকনো ঢোক গিললো।

— কি হলো? কথা বেরুচ্ছে না কেন?

ফারহান ধমকে উঠতেই আদিব আর সায়েবা দুজন দুজনের দিকে আঙুল তুলে পয়েন্ট আউট করলো।
ওদের কান্ড দেখে ফারহান ভ্রু কুচকে তাকালো।

ওরা নিজেরাও হচকচিয়ে গেলো। সায়েবা বোকা হেসে আদিবের আঙুল টা আবার আদিবের দিকে ঘুড়িয়ে দিলো।

আদিব অবাক হয়ে সায়েবার দিকে তাকাতেই সায়েবা চোখ দিয়ে ইশারা করলো।

আদিব জোরপূর্বক হেসে ফারহানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।

ফারহান সায়েবার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো। আদিবের কাধে হাত রেখে ঘাড় কাত করে সায়েবার দিকে তাকাতেই সায়েবা হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে জোরপূর্বক হাসলো।

— আদিব আবার প্রেম টেম ঠিক করে করতে পারে না। এক কাজ করি।আমি তোমাদেএ দুজন কে আগে প্রেম করাটা ঠিক ঠাক শিখিয়ে দেই।পরে সুখে সংসার করাটা ও শিখিয়ে দিবো।চলো চলো।শুভ কাজে দেড়ি করতে নেই।

চলবে,,,