সায়েবা আসক্তি পর্ব-২২+২৩

0
924

#সায়েবা_আসক্তি
#লেখিকা_সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২২

(অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ)

সায়েবার অনার্স শেষ হয়ে গেছে। মাস্টার্সের প্রস্তুতি চলছে । সায়েবার রেজাল্ট আউট হওয়ার পর সবাই বাহ বাহ দিলেও ফারহান তাকে কঠিন ঝাড়ি দিয়েছে।এতো খারাপ রেজাল্ট একটা মানুষ কিভাবে করতে পারে তা সে ভেবে পায় না।তার বউয়ের রেজাল্ট দেখে তার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। তার মতে এতো জঘন্য রেজাল্ট করার জন্য সায়েবা অনেক পরিশ্রম করে পড়া ফাকি দিয়েছে।দেশে থাকলে সে চুমু খেয়ে গাল লাল করে দিতো।একমাত্র বউ কে তো আর মারা যায় না! তাই কষ্ট হলেও চুমু খেয়ে কঠিন শাস্তি দিতো।

ফারহানের কথা শুনে সায়েবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে ছিল।তার রেজাল্ট এতটা ও খারাপ হয় নি। ফারহানের মতো ভালো ছাত্র না হলেও সে মোটামোটি ভালো ছাত্রী। কিন্তু ফারহানের রিয়্যাকশন দেখে মনে হচ্ছে সে ফেল করে বসে আছে।তাও সব নাম্বারে জিরো পেয়ে।সায়েবার মনটা অসম্ভব রকমের খারাপ হয়ে গেলো। ফারহান অযথাই তার সাথে রাগারাগি করে। একটু ও ভালোবাসে না।সারাটা দিন অভিমানে গাল ফুলিয়েই কেটে গেলো। ফারহান তার অভিমান তো বুঝলোই না উল্টো তার গাল ফোলানোর জন্য ধমকা ধমকি করলো। তার হিসেবে সায়েবা গাল ফুলিয়ে ভয়ংকর অন্যায় করে ফেলেছে।এর জন্য তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। গাল ফুলিয়ে ফুলিয়ে তাকে টর্চার করবে সেটা সে কিছুতেই মেনে নিবে না। এই ফোলানো গাল দেখে যে তার জাপটে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করে কিন্তু খেতে পারে না এটা তো কম কষ্টের না!শীতের রাতে ফ্রিজে ঢুকে থাকার মতো কষ্টের! এই মেয়ে সেটা বুঝলে তো! ফারহান ঠিক করে রেখেছে,দেশে গিয়ে সবার আগে এই মেয়ের গালে কুটুস করে একটা কামড় বসিয়ে দিবে।

দুই দিন হলো সায়েবা বাবার বাড়ি গিয়ে বসে আছে। ফারহান কল করে কয়েক দফা হুমকি দিয়েও কাজ হয় নি। সে যাবে না মানে যাবে না। এক সপ্তাহ সে এখানেই থাকবে। ফারহান রেগে আগুন হয়ে কল কেটেছে আর কল করে নি।যদিও ও বাড়ির সবাই সায়েবা কে কিছুদিন এখানেই থাকার অনুমতি দিয়েছে।কিন্তু ফারহান সাফ সাফ মানা করছে।সায়েবা ও অনড়।যে পর্যন্ত ফারহান তার অভিমান না ভাঙ্গাবে সে যাবে না।

🌸

চৌধুরী ভিলায় আজ উৎসব মুখর পরিবেশ।বাড়ির ছোট ছেলে আজ বাড়ি ফিরবে এ নিয়ে সবার খুশির শেষ নেই।কিন্তু যার সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা সে জানে ও না আজ ফারহান ফিরছে!ফারহান সবাইকে কড়া গলায় নিষেধ করেছে সায়েবা কে কিছু জানাতে।সে এসে এই মেয়ের পা ভাঙবে সবার আগে।যাতে যখন তখন বাবার বাড়ি দৌড়াতে না পারে।তার জন্য দরকার হলে সারাজীবন কোলে নিয়ে ঘুরবে।

সকাল সকাল আদিব এসে উপস্থিত হয়েছে ফুপির বাড়ি।আজ তার প্রান প্রিয় বন্ধু আসছে।তাই সে না এসে থাকতে পারে নি। ফায়জার এনগেজমেন্টের পর আদিব আর এ বাসায় আসে নি। ফারহানা বেগম কয়েকবার আসতে বললেও কাজের বাহানা দিয়ে আসে নি সে।এতে ফারহানা বেগম অনেকটা রেগে ছিল তার উপর। কিন্তু আজ আদিব আসতেই রাগ গলে পানি হয়ে গেছে। সে এখন নানান রকম রান্নায় ব্যাস্ত। ফারহান কে রিসিভ করতে কেউ যাবে না। ফারহান নিজেই কাউকে যেতে মানা করেছে।এমনকি ফ্লাইট কয়টার তা ও বলে নি কাউকে।নহলে হাজার নিষেধ সত্ত্বেও সবাই গিয়ে হাজির হতো এয়ারপোর্টে।

আদিব আসার পর থেকেই ফোনের মধ্যে মুখ গুজে বসে আছে। ফরহাদ এসে তার পাসে বসেছে এতে তার কোন খেয়াল নেই।ফরহাদ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে। তার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য গলা খাকারি ফিতেই আদিব হচকচিয়ে তাকালো।সে সত্যিই ফরহাদ কে খেয়াল করে নি।ফরহাদ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মলিন হেসে বললো,

— কিছু বলবে ভাই?

— কি হয়েছে তোর?

— আমার আবার কি হবে?(জোর করে হাসার চেষ্টা করে)

— কিছুই হয় নি?

— নাহ।

— তাহলে চেহারার এই হাল কেন?

আদিব নিজের দৃষ্টি লুকাতে লাগলো। এদিক ওদিক তাকিতুকি করে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বললো,

— আসলে অফিসে অনেক কাজের প্রেসার তাই,,,

ফরহাদ খ্যাঁক করে উঠলো। রুঢ় গলায় বললো,

— আমাকে কাজের চাপ শিখাস? বারো হাজার স্টাফ আমার আন্ডারে চাকরি করে। আর বাপের আন্ডারে কাজ করে কাজের প্রেসার দেখানো হচ্ছে? মামা তোকে দিয়ে কি কাজ করায় আমি জানি না ভেবেছিস?থাপড়ে গাল ফাটিয়ে দিবো বেয়াদব।

আদিব আর বলার মতো কিছু খুজে পেলো না। মাথা নিচু করে বসে রইলো। আড় চোখে চোখ ঘুরিয়ে কাঙ্খিত মানুষ টা কে না পেয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো। আজ অনেকদিন হলো ফায়জা কে দেখে না সে।ফায়জা ও তার সামনে আসে নি ওইদিনের পর থেকে। দুজনের মধ্যেই লুকোচুরি চলছে।কিন্তু প্রেমিক মন তো তা মানে না। পাহার সমান অভিমান নিয়েও প্রেয়সীকে দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকে।কিন্তু নিষ্ঠুর প্রেয়সী তা বোঝে না।

🌸

এয়ারপোর্টের বাইরে এসে প্রান ভরে নিশ্বাস নিলো ফারহান। কতো দিন পরে নিজের দেশের মাটির ঘ্রাণ পেলো সে!বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। ড্রাইভার কে কল করে চলে আসতে বলেছিলো সে।তাই ড্রাইভার ভোর থেকে এসে অপেক্ষা করছে। ফারহান লাগেজ গুলো গাড়িতে তুলে পিছনের সিটে বসে পরলো। গাড়ি চলতে শুরু করতেই চোখ বন্ধ করে নিলো।বাসায় যেতে আধঘন্টার মতো সময় লাগবে।এই আধঘন্টা এক যুগের মতো মনে হচ্ছে ফারহানের।

আটটার মধ্যে বাসায় পৌঁছে গেলো ফারহান। কেয়ারটেকার কে লাগেজ গুলো উপরে তুলে দিতে বলে বাসায় ঢুকে গেলো সে।কলিং বেল বাজাতেই ফারহানা বেগম দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললেন।সামনে ফারহান কে দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না। ছেলেকে জাপটে ধরে কান্না করে দিলেন।ফারহানের চোখেও পানি ভির করেছে।কতদিন পরে মায়ের উষ্ণ আলিঙ্গন পেলো।মায়ের কপালে চুমু খেয়ে তাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো সে।সানোয়ার সাহেব আসতেই মাকে ছেড়ে বাবা কে জরিয়ে ধরলো।

— কেমন আছো আব্বু?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। জার্নিতে কোন সমস্যা হয় নি তো?

— না আব্বু।

ফরহাদ অস্থির হয়ে বললো,

— আরে আমরা ও লাইনে আছি।

ফারহান হেসে ভাইকে জরিয়ে ধরলো। আদিব লাফিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জাপটে ধরলো ফারহান কে।

সবার সাথে কথা বলে ফারহান ফায়জার কথা জানতে চাইলো।ফারহানা বেগম বললেন, ফায়জা হসপিটালে আছে।ইমার্জেন্সি অপারেশন আছে তার।কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে।

ফারহান নিজের রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। দশ মিনিটের মধ্যে শাওয়ার নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। সবাই দেখেও কিছু বললো না। কারণ তারা জানে ফারহান কোথায় যাচ্ছে।

সায়েবাদের বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই সাহেরা বেগম দরজা খুললেন।ফারহান কে দেখে মুচকি হেসে ভিতরে আসতে বললেন। ফারহান সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে সায়েবার কথা জানতে চাইতেই সায়েবার রুম দেখিয়ে দিলেন তিনি।

দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই সায়েবার ঘুমন্ত মুখশ্রী চোখে পড়লো ফারহানের।বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে সায়েবা।ফারহান সায়েবার আদুরে তেলতেলে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েক মিনিট। আস্তে করে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সাহেরা বেগম আর শোয়েব কে তাদের বাসায় আসতে বলে বের হয়ে গেলো সায়েবা কে নিয়ে। সাহেরা বেগম হা করে তাকিয়ে ছিল ফারহানের দিকে।

সায়েবা কে নিয়ে বাসায় ঢুকতেই সবাই মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো। সায়েবা এখনো ঘুমিয়ে কাদা।
ফারহান সায়েবা কে বেডে শুইয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাসে শুয়ে পরলো।
সায়েবা একটু নড়ে-চড়ে উঠতেই ফারহান তাকে হালকা করে বুকের সাথে চেপে ধরলো। কপালে চুমু খেয়ে গালের মধ্যে কুট করে কামড় বসিয়ে দিলো।

চলবে,,,,

#সায়েবা_আসক্তি
#লেখিকা_সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২৩

ইদানীং ফারহানের ভাবনা গুলো খু জ্বালাতন করছিলো সায়েবা কে।কয়েক দিন ঠিক করে ঘুম হচ্ছে না। না পেরে রাতে একটা হালকা পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ নিয়েছিলো সে।তাই এতো বেলা হওয়ার পরেও ঘুম ভাঙেনি তার।এমনিতেই সায়েবার ঘুম খুব গভীর। ঘুমের মধ্যে নিয়ে ফেলে দিয়ে আসলেও সে টের পাবে না।
মুখের উপর গরম নিশ্বাসের আভাস পেতেই নড়েচড়ে উঠল সায়েবা।মনে হচ্ছে কেউ তাকে বারবার উষ্ণ স্পর্শ দিচ্ছে। তবুও সে চোখ খুলছে না। চোখ মুখ কুচকে নড়েচড়ে আবার ঘুমানোয় মন দিলো। কিন্তু গালে কামড় পরতেই ঘুম কে ছুটি দিয়ে লাফিয়ে উঠলো সায়েবা।হঠাৎ করে এমন হওয়ায় পুরো শরীর কাপছে তার। ফারহান সায়েবার অবস্থা টা বুঝতে পেরে তাকে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেললো। সায়েবা এখানো ঘোরের মধ্যে আছে। ফারহান আলতো হাতে সায়েবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একটু স্বাভাবিক হওয়ার পরেই খেয়াল হয় তাকে কেউ আকড়ে ধরে আছে।অবাক হয়ে তার দিকে ঘুরতেই ফারহান কে দেখে স্থির হয়ে গেলো সে।মিনিট কয়েক পলকহীন চোখে তাকিয়ে থেকে ঝাপিয়ে পরলো ফারহানের বুকে।খাটের উপর হেলে পরলো ফারহান।চোখে পানি আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে প্রেয়সীর মাথা নিজের বক্ষে চেপে ধরে রইলো। একেই বুঝি পরম সুখ বলে।মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো সায়েবা কে। সায়েবা ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। সে জানে না এটা বাস্তব নাকি কল্পনা! যাই হোক না কেন ফারহান তার সামনে আছে এটাই যথেষ্ট।

— আর কতো কাদবে বউ?বর এতো দিন পরে এসেছে, কই জরিয়ে ধরে আদর করবে!তা না করে কান্না করে ভাসিয়ে দিচ্ছো।

ফারহানের কথা শুনে হুস ফিরলো সায়েবার। ঝড়ের গতিতে সরে গেলো ফারহানের কাছ থেকে। এভাবে সরে যাওয়ায় ফারহানের মেজাজ খারাপ হলেও কিছু বললো না। সায়েবা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। হুট করে কান্না টাও বন্ধ হয়ে গেছে। কাপা কাপা হাতে ফারহানের গাল স্পর্শ করতেই চোখ থেকে আবার পানি পরতে শুরু করলো। কান্নার কারণে গলা থেকে স্বর বের হচ্ছে না। ফারহান সায়েবাকে কাছে টেনে সন্তপর্ণে চুমু খেলো তার ললাটে। সায়েবার কান্না মাখা মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো ফারহানের স্পর্শে। সায়েবার আদর মাখা মুখের লজ্জা টুকু নিজের চোখে বন্দী করে নিলো ফারহান। তাকে নিজের কোলে তুলে দিয়ে কাধে ঘারে মুখ গুজে বসে রইলো।

— আমাকে জানালেন না কেন?

সায়েবার অভিমানী গলা শুনে মুচকি হাসলো ফারহান।সায়েবাকে আরেকটু চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বললো,

— সুযোগ দিয়েছিলে বুঝি?খুব তো রাগ করে চলে গিয়েছিলে বাবার বাড়ি। তাহলে আমি কেন বলবো?

সায়েবা আহত গলায় বললো,

— আমি অভিমান করেছিলাম। আপনি আমার অভিমান ভাঙাবেন না?

— আমি ও অভিমান করে আছি।অনেক পুরোনো অভিমান। তুমি ভাঙিয়ে ছিলে?তুমি তো আমার অভিমানের খবর ও রাখো নি।

ফারহানের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো সায়েবা।ফারহানের কথা কিছুই মাথায় ঢুকলো না তার।

— আমি কি কোন ভুল করেছি?

— আমি কেন বলবো?তুমি নিজেই ভাবো তুমি কি ভুল করেছো?এখন নিচে চলো।সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।

ফারহানের কথায় সায়েবার খেয়াল হলো সে ফারহানদের বাসায়।

— আমি এখানে এলাম কিভাবে?(অবাক গলায়)

— তোমার একমাত্র বরের কোলে চড়ে।

সায়েবা বিস্ফোরিত চোখে তাকালো ফারহানের দিকে।

— সবার সামনে আপনি আমাকে কোলে করে নিয়ে এসেছেন?

— হ্যা।এমন রিয়্যাক্ট করার কিছু হয়নি।এর আগেও আমি তোমাকে রাস্তা ভর্তি লোকের সামনে কোলে নিয়েছি।

— অসভ্য।(বিরবির করে)

— আমি শুনেছি।এখন যদি না চাও অসভ্যগিরি শুরু করি তাহলে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি নিচে যাচ্ছি। নিচে ভাইয়া আর আদিব আছে।হিজাবের উপর বড় ওরনা দিয়ে বড় করে ঘোমটা দিয়ে আসবে।আমি যেটা দিয়ে তোমাকে ঢেকে নিয়ে এসেছি ওটাই পড়ে আসো।এটা তুলনামূলক ভাবে বড় আছে।বুঝেছো?

— হুম।

ফারহান সায়েবার অভিমানে ফুলিয়ে রাখা গাল টেনে পর পর কয়েকটা চুমু খেয়ে তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সায়েবা এখনো গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আগের গম্ভীর ফারহানের সাথে এ ফারহানের কোন মিল ই নেই।ঘুমের ঔষধের জন্য মাথাটা এখনো ঝিম ঝিম করছে।সায়েবা ওয়াশরুমে চলে গেলো। একটু শাওয়ার নিলে হয়তো ভালো লাগবে।

🌸

হসপিটাল থেকে মাত্রই এসেছে ফায়জা।তার সাথে জাবের ও এসেছে।ড্রয়িং রুমে এসে আদিবের মুখোমুখি হতেই চোখ নামিয়ে নিলো ফায়জা।এই ছেলের চোখের দিকে তাকালে কলিজা কেপে উঠে তার।কি ভয়ংকর সে দৃষ্টি। জাবের হাসি মুখে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। ফারহানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার দিকে। ফারহানা বেগম বাদে জাবেরের উপস্থিতি তে কেউই সন্তুষ্ট নয়।তবুও সবাই তার সাথে হাসি মুখেই কথা বলছে।ফায়জা বিরক্তিতে মুখ কুচকে আছে। এই লোকটা প্রচন্ড গায়ে পড়া।এমন গায়েপড়া মানুষ ফায়জার একদম পছন্দ নয়।হসপিটাল থেকে অনেকটা জোর করেই তার সাথে চলে এলো সে।নুন্যতম আত্মসম্মান বোধ নেই!

ফারহানের কাছে গিয়ে ফারহান কে জরিয়ে ধরলো ফায়জা।কতদিন পরে ছোট ভাই কে কাছে পেলো।

— তুই ঠিক আছিস ভাই?আসতে কোন সমস্যা হয় নি তো?

— উফফ আপু।আমি ছোট বাচ্চা নই।তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমরা এক সাথে ব্রেকফাস্ট করবো।

ফায়জা আড়চোখে আদিবের দিকে তাকালো। সে নিজের ফোনে মগ্ন।ফায়জা নামের কেউ তার সামনে আছে যেন তার চোখেই পড়ছে না।
ফায়জার ভাবতে প্রচন্ড লজ্জা হয় এই ছেলেটার জন্য সে রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারে না। তার ভাবনা গুলো মন কে এলোমেলো করে দেয়।এখন তো আদিবের চোখের দিকে তাকাতেও ভয় হয়।তার অনুভূতি গুলো না এই ইঁচড়েপাকা ছেলেটা বুঝে ফেলে!

নিজেকে সামলে নিয়ে ফায়জা নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। আদিব চোরা চোখে একবার তাকিয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দিলো। তার মনে এখন ঝড় উঠেছে।আর সেই ঝড় এখন সামনে বসে থাকা মানুষটাকে যে কোন সময় লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা বড্ড দায় হয়ে পড়েছে। ফারহান ফায়জা আর আদিব দুজনের দিকেই এতোক্ষন খেয়াল করছিলো। দুজনের হাবভাব দেখে মুচকি হাসলো সে। সামনে বসে থাকা মানুষটাকে তার একদম ভালো লাগছে না। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।

আদিব উঠে চলে গেলো দোতালার দিকে।ফরহাদ ফারহান কে খোচা দিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— কি বুঝলি ভাই?

— আরেকটা সুন্নতের অংশ হতে পারবো তা বুঝলাম।

ফরহাদ অসহায় গলায় বললো,

— আমি তোদের সবার বড়!আমার দিকেও একটু ধ্যান দে।

— চিন্তা করো না। তোমাকে আন্তর্জাতিক ব্যাচেলর গ্রুপের সভাপতি করে দেয়া হবে।

— আমার অভিশাপ লাগবে দেখিস।

— লাগবে না। তুমি নিজেই নিজের ব্যবস্থা না করলে আমাদের কি করার আছে।এবার ভাবো তুমি কি করবে?

— দেখে নিবো তোদের।সব-কয়টা মীরজাফর।

🌸

ফায়জা ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই দেখলো আদিব তার বিছানায় আয়েস করে বসে আছে। আদিব কে দেখে শুকনো ঢোক গিললো ফায়জা।সে রাতের পর থেকে আদিব কে দেখলে ভয় হয় তার।

— এখানে কি করছো তুমি?

ফায়জার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো আদিব। বেড থেকে নেমে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো ফায়জার দিকে। ফায়জা সেখানেই ফ্রিজ হয়ে দাড়িয়ে আছে। আদিব ফায়জার মুখোমুখি দাড়ালো। এক দৃষ্টিতে ফায়জার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুকাল।নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব আরেকটু ঘুচিয়ে নেশালো গলায় বললো,

— শাস্তির পরিমান খুব বেশি বাড়িয়ে ফেলছো সোনা।সহ্য করতে পারবে তো?আমি কিন্তু একচুল ও ছাড় দিবো না। কড়ায় গন্ডায় উসুল করে নিবো।তখন আবার আমাকে নিষ্ঠুর বলোনা কিন্তু। আমি মেনে নিবো না।

আদিবের গরম নিশ্বাস ফায়জার মুখের উপর আচড়ে পরছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।কোন রকম কাপা কাপা গলায় বললো,

— কি বলছো এসব? পাগলামি বন্ধ করো আদিব।সরে দাড়াও।

— আমি কাছে আসলেই ফোসকা পড়ে বুঝি?ওই ডাক্তার কাছে আসলে পড়ে না?

— মুখ সামলে কথা বলো আদিব।কি বলছো খেয়াল আছে? আর সে কাছে আসলে ফোসকা পড়বে কেন।আমার বাগদত্তা সে।কয়েকদিন পরে স্বামী হবে।আমার উপর একদিন সম্পুর্ন অধিকার থাকবে তার। যার বিচরণ আমার সমস্ত সত্ত্বা জুরে থাকবে তার কাছে আসায় ফোসকা পড়ার কথা নয় নিশ্চয়ই।

আদিব শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে ফায়জার দিকে। তবে তার চোখ থেকে আগুন বেরুচ্ছে। দৃষ্টিতে যদি কাউকে জ্বালিয়ে দেয়া যেতো তাহলে সামনে দাড়িয়ে থাকা এই রমনী এতোক্ষণে ভস্ম হয়ে যেতো।

— সেই একদিন টা তোমার জীবনে খুব জলদি আসবে সোনা। আজকের এই কথা গুলোর মাশুল দেয়ার জন্য সেদিন প্রস্তুত থেকো। তোমার সমস্ত সত্ত্বায় বিচরনের ঝড় না তুলে আমি আদিব ক্ষান্ত হবো না। কথা দিলাম।

চলবে,,,