সিনিয়র লাভ বার্ড পর্ব-১৯+২০

0
336

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(১৯)
#লেখিকা_এমএ_তাহিনা

-রামিম হাওলাদারই কি এসব অবৈধ ব্যবসার মেইন? নাকি তার উপরে আরো কেউ আছে? বললো পূরবি।

শান বললো- থাকতে পারে, আমি সঠিক জানিনা।

জেসি ভ্রু কুঁচকে বলে- মেইন কালপ্রিট অন্য জন, রামিম হাওলাদার তো মাত্র দাবার গুটি। কেউ একজন আছে যে সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছে। আর ওরা তার নির্দেশমত কাজ করছে। খুব বেশি দূরে নেই সেই দিন, আমরা খুব শীগ্রই আসল কালপ্রিট কে খুজে বের করবো। সিয়াম রাইসুরকে নিয়ে আসুন,,।

সিয়াম রাইসুরকে নিয়ে আসল, এখন মুটামুটি সুস্থ রাইসুর। হাতের ক্ষতটা শুকাতে সময় লাগবে। রাইসুরকে একটি চেয়ারে বসানো হলো। শান একদৃষ্টিতে রাইসুরের দিকে তাকিয়ে আছে, আবার অবাক হয়ে রূপকের দিকে তাকাচ্ছে। একই রকম দেখতে দুটো মানুষ তার সামনে।

রূপক শানের মুখে অবাকতার রেশ দেখে বলে- উনি রাইসুর, রাইসুর হাওলাদার। আমার ভাইয়া।

শান নিজেকে সামলে নিয়ে বলে- কিন্তু ওকে তো কখনো দেখলাম না।

দেখবি কি করে? আমার যে বড় ভাই আছে সেটাই তো আমি জানতাম না। ওই রামিম হাওলাদার আমাকে জানতে দেয়নি। উনি আমার বাবার বাবা আর আমি একসময় তাকে দাদু ডাকতাম। তাই চুপ আছি, আর আমি চুপ থাকলেও আইন থাকবেনা, আমি আইনকে যথা সাধ্য সাহায্য করছি এবং করবো যাতে কেউ পার না পায়।

আরো কিছুক্ষণ সবাইকে কিছু প্রশ্ন করে পূরবিরা, তারপর সবাইকে নিয়ে আবারো তাদের জন্য বরাদ্দ করা জায়গায় রাখা হয়। অন্ধকার লোহার জেলে।

.
কল্পের মনটা ভীষণ খারাপ। এনগেজমেন্টের দিন পর থেকে একবারও পূরবির সাথে দেখা হয়নি তার, আর না ফোনে কথা হয়েছে। কল্প অনেকবার কল করেছে কিন্তু পূরবি রিসিভ করেনি। কখনো বা ফোন বন্ধ বলেছে। কল্পের ভাবনার মাঝেই তার হাতের ফোনটা বেজে উঠে। আশা নিয়ে ফোনের দিকে তাকালো, কিন্তু আবারো নিরাশ হতে হলো। সূর্য কল দিয়েছে, কল রিসিভ করে কানে ধরে কল্প। ওপাশ থেকে সূর্য বলে- কিরে কথা বলছিস না কেনো? ফোন রিসিভ করে যে সবার আগে সালাম দিতে হয় সেটা কি ভুলে গেছিস?

কল্প দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে- আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছিস?

সূর্য দাত কেলিয়ে বলে- এইতো আবার আগের কল্প হয়ে গেছিস। ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

ওপাশ থেকে সূর্য হয়তো কিছু বুঝতে পারলো, আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো- মন খারাপ কল্প?

কল্প কিঞ্চিৎ হাসলো, তারপর বললো- আমি তো তোকে কিছু বলিনি, বুঝে গেলি কি করে?

সূর্য প্রাউড ফিল করার মতো করে বলে- এটাকেই বলে বন্ধুত্ব। দেখেছিস তুই আমাকে কিছু বলিস নি, কিন্তু আমি ঠিকই বুঝে গেছি তোর কোনো কারণে মন খারাপ। এখন ঝটপট বল কেনো মন খারাপ?

-‘কতোদিন হলো পূরবিকে দেখিনি, ওর একটা গলার স্বর পর্যন্ত শুনিনি। আমার মন কেমন আনচান করে ওর জন্য। কিন্তু কিছু বলতে পারিনা, ও আমাকে আগেই বলেছে ওর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাকে কিছু বলতে পারবেনা। যদিও আমি বুঝে গেছি ও ভীষণ ব্যস্ত থাকে। নাহলে কখনো ও ইচ্ছে করে আমার ফোন কেটে দেয় না। আমার কোনো অভিযোগ নেই ওর প্রতি যতো ইচ্ছে উড়ুক এখন। কয়েকদিন পরে বিয়ে হয়ে গেলে নিজের কাছে বেঁধে রেখে দিবো।

ওপাশ থেকে সূর্য হেসে বলে- চল পূরবির সাথে দেখা করি।

কল্প মলিন হেসে বলে- পূরবি কোথায় আছে সেটা যদি জানতাম তবে এতোক্ষণ বসে থাকতাম না। কবেই ওর কাছে চলে যেতাম।

সূর্য মাছি তাড়ানোর মতো করে বলে- নো টেনশন আমি আছি কি করতে? ঠিকই খুজে বের করে ফেলবো পূরবি কোথায় আছে। তুই জলদি রেডি হো আমি আসছি তোদের বাসায়।

কল্প সূর্যের কথা মতো রেডি হয়ে নিলো, কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য উপস্থিত হলো কল্পের বাসার সামনে। কল্প সূর্যের বাইকে ছড়ে বসলো। তারপর চিন্তিত হয়ে বললো- কিকরে খুজবো পূরবি কোথায়?

সূর্য দাঁত কেলিয়ে বলে- দেখতে থাক।

প্রায় আধাঘন্টা পরে হাওলাদার বাড়িতে পৌছায় সূর্য ও কল্প। কল্প এখনো বুঝতে পারছে না সূর্য কি করতে চাইছে। সূর্য রূপকের নাম ধরে ডাক দিতেই রূপক তার রুম থেকে বেরিয়ে আসে। কল্প ও সূর্যকে দেখে অবাক হয় সাথে খুশিও হয়। এতোদিন ভার্সিটিতে তেমন যেতে না পারায় কারোরই তেমন দেখা হয়নি। রূপক সূর্য ও কল্পকে বসতে বলে কিচেনে গিয়ে নিজের হাতে তিন কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসে। দুজনের দিকে কফির কাফ এগিয়ে দিয়ে নিজেও সোফায় বসে। সূর্য কফি শেষ করে বলে- তোমার কাছে কিছু জানতে এসেছিলাম রূপ।

রূপক অভয় দিয়ে বলে- জিজ্ঞেস করো যদি পারি তো বলবো।

কল্প উদ্বিগ্ন হয়ে বলে- পূরবি কোথায়? আমি সিনিয়রকে ফোনে পাইনি এতোদিন। ভার্সিটিতেও আসেনি। সবদিক থেকেই ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ। ও নিজেও আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করছে না।

রূপক ভ্রু কুঁচকে বলে- আমি কি করে বলবো পূরবি কোথায়? আমি কি ওর প্রেমিক যে ওর সবকিছু আমি জানবো!

নাক ফুলিয়ে কল্প বলে- মজা করোনা রূপক, আমার সত্যিই পূরবির জন্য চিন্তা হচ্ছে। তুমি প্লিজ পূরবির ঠিকানা আমায় দাও।

রূপক দুষ্টু হেসে বলে- বিয়ের আগেই হবু বউকে ছাড়া থাকতে পারছো না বিয়ে হলে তো ঘর থেকেই বের করবেনা দেখছি।

এবার রেগে যায় কল্প, দাড়িয়ে গিয়ে বলে- মজা বাদ দাও রূপক আমার সত্যিই পূরবির জন্য চিন্তা হচ্ছে। আমি ওর সাথে কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না। প্লিজ তুমি ওর বাসার ঠিকানা আমায় দাও।

এবার সিরিয়াস হয়ে রূপক বলে- পূরবির মা বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে তারা কিছু জানে কি না।

কল্প কপালে হাত ঘষে বলে- তারা কিছুই জানেন না। আমার মতো তাদেরও পূরবি কিছু বলেনি।

লম্বা শ্বাস নিয়ে রূপক বলে- পূরবির সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিলো গতকাল। আর হয়নি। ওকে ফোন করছি দেখি ধরে কি না। বলেই রূপক নিজের ফোন দিয়ে পূরবির নাম্বারে ডায়াল করলো। কিন্তু রিসিভ হলোনা। হতাশ হয়ে কল্প তাকিয়ে রয় সূর্যের দিকে। সূর্য রূপককে বলে- এমন কারো নাম্বার আছে যার কাছ থেকে পূরবির খবর জানা যাবে?

রূপক কিছুক্ষণ ভেবে রুশার নাম্বারে ডায়াল করলো, কিন্তু রুশার নাম্বারও বন্ধ। এবার রূপকও চিন্তিত হলো ভীষণ। অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠলো। সূর্য ও কল্পকে একটু বসতে বলে রুমে গিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসলো। তারপর তিনজন বেরিয়ে গেলো বাইক নিয়ে গোয়েন্দা অফিসে। সূর্য ও কল্প কিছু বুঝতে পারছেনা তারা শুধু রূপকের বাইকের পিছনে যাচ্ছে। মাঝ রাস্তায় ফোনে কল আসায় রূপক বাইক থামিয়ে কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে রুশা বলে- কল্পকে পূরবির ব্যাপারে কিছু জানতে দিয়ো না, পূরবি অসুস্থ সে জন্য কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। আমিও করতে পারবো না। ওইদিকটা সামলানোর জন্য শুধু মাত্র তোমার সাথে যোগাযোগ করেছি।

রুশার কথা শুনে কিছু বুঝতে পারলো না রূপক, উদ্বিগ্ন হয়ে বলে- কি হয়েছে পূরবির?

পাশ থেকে কল্প শুনে অস্থির হয়ে প্রশ্ন করে- আমার সিনিয়রের কি হয়েছে রূপক?

ওপাশ থেকে তাড়াহুড়ো করে রুশা বলে- রূপক কল্প যেনো কিছু জানতে না পারে, হেন্ডেল করো সব। আমি পরে তোমার সাথে যোগাযোগ করে সব জানাবো। প্লিজ হ্যান্ডেল দিস। বলেই ফোন কেটে দিলো রুশা। রূপক আবারো ডায়াল করলে ওপাশ থেকে বন্ধ বললো। কিছুই বুঝতে না পারলে এটা বুঝলো কল্পকে পূরবির কাজের সম্পর্কে বলা যাবেনা। রূপক কল্পের কাঁধে হাত রেখে বললো- তোমার পূরবি ঠিক আছে কল্প। সে নেটওয়ার্কের বাহিরে তাই যোগাযোগ করতে পারছেনা।

কিন্তু কল্পের মন কি সে কথা মানলো? চোখ ছলছল করে উঠলো কল্পের। তার মন বারবার বলছে তার সিনিয়রের সাথে কিছু হয়েছে। কোনো বিপদ হয়নি তো?

চলবে, ইনশাআল্লাহ,

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(২০)
#লেখিকা_এমএ_তাহিনা

-‘ডাক্তার পূরবির কি অবস্থা এখন?

রুশার প্রশ্নে ডাক্তার লম্বা শ্বাস নিয়ে বললেন- ‘ আপাতত বিপদমুক্ত। আপনি তার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের চিন্তা করুন। আপনার নিজেরও বাম হাতে গুলি লেগেছে।

-‘পূরবিকে কখন কেভিনে শিফট করবেন?

আরো কয়েকঘন্টা পরে কেভিনে শিফট করবো। বলেই ডাক্তার নার্সকে রুশার খেয়াল রাখতে বলে চলে গেলেন।

রুশা মনে মনে কিঞ্চিত হেসে বললো- পূরবিকে নিয়ে আমার চিন্তা তো হবেই ডাক্তার। পূরবি আমার সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর হলেও ও আমাকে বন্ধুর মতোই ভালোবাসে। সবসময়ই আমার বিপদে এগিয়ে আসে। যেমন গতকাল রাতে এসেছিলো। নিজের জীবনের কথা না ভেবে আমার উপর চালানো গুলি নিজের শরীরে বহন করলো। আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা সবকিছুর রহস্য সামনে আসা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

এসব চিন্তা করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়লো রুশা।

.
অন্ধকার রুমে মাথা নিচু করে হাটুতে মুখ লুকিয়ে বসে আছে কল্প। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে এই কয়েকদিনে। আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেছে নিজেকে ঘর বন্দী করে রেখেছে সে। সেদিন রূপকের সাথে রুশার কথা বলার পরে রূপক যা বলেছিলো তাই বিশ্বাস করে চলে এসেছিলো সে। কিন্তু মন কি সে কথা বিশ্বাস করেছিলো? না! কল্পের মন এসব বিশ্বাস করেনি। পারু শেখ ও ফাইয়াজ শেখেরও পাগল হওয়ার মতো অবস্থা। কেউ জানেনা পূরবির খবর। রূপকও জানেনা কিছু। বলাবাহুল্য রূপকের ও চোখের নিচে কালি পড়েছে। রুশার চিন্তায় তারও ঘুম আসেনা, সব এলো মেলো লাগে। কল্পের মা রূপককে ফোন করে বাসায় আনিয়েছেন কল্পকে নিয়ে যাতে রূপক একটু ঘুরে আসে। সূর্য শত চেষ্টা করেও কল্পকে ঘর থেকে বের করতে পারেনি। শেষ ভরসা রূপক।

রূপক কল্পের মাকে সালাম দিয়ে কল্পের রুমের সামনে দাড়ালো। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ কি করবে বুঝতে পারছেনা। পিছন পিছন সূর্য ও এসে উপস্থিত হয়েছে। তারও বন্ধুর জন্য কষ্ট হচ্ছে। সে যদি পারতো তো পূরবিকে তুলে নিয়ে এসে কল্পের সাথে এক রুমে বন্দী করে রাখতো। কিন্তু পূরবির তো খবরই কেউ জানেনা। কোথায় আছে কেমন আছে কিছুই কেউ জানেনা। সূর্য ভাবনা থেকে বেরিয়ে রূপককে ইশারা করলো দরজায় করাঘাত করতে। রূপক আস্তে করে করাঘাত করে মৃদু স্বরে ডাকলো- কল্প! কল্প দরজা খুলো।

কিন্তু কল্প দরজা খুললো না। আনিকা খান চোখের পানি মুছছেন বারবার। তার সহজ সরল ছেলেটার এই অবস্থা সহ্য করতে পারছেন না তিনি। রূপক কিছু একটা ভেবে আবারো করাঘাত করে ডাকলো- কল্প দরজা খুলো পূরবিকে খুজে বের করতে হবে তো। চলো আমরা সবাই মিলে পূরবিকে খুজে বের করবো। কল্প তুমি শুনতে পাচ্ছো আমার কথা?

কিছু সেকেন্ড পরেই দরজা খুলে দিলো কল্প। রূপক ও সূর্য ভিতরে প্রবেশ করলো। আনিকা খান দরজার বাহিরেই দাড়িয়ে রইলেন। রূপক কল্পের কাঁধে হাত রেখে বললো- এভাবে কি করে চলবে কল্প? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো কি অবস্থা করেছো? তোমাকে এভাবে দেখলে পূরবি কতোটা কষ্ট পাবে বলোতো। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। না তুমি বরং গোসল করে একেবারে ফ্রেশ হয়ে বের হও৷ আমরা পূরবিকে খুঁজতে যাবো।

কল্প মাথা তুলে রূপকের দিকে ছলছল চোখে তাকায়, রূপক কল্পের গাল টেনে বলে- তুমি তো একদমই বাচ্চাদের মতো কল্প। তোমাকে এখন সত্যিই বাচ্চা লাগছে। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। বলেই টেলে কল্পকে ওয়াশরুমে ঢুকালো রূপক। সূর্য আলমারি থেকে প্যান্ট ও টাওয়াল বের করে দিলো কল্পের হাতে।

আধাঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বের হলো কল্প। তাকে দেখতে এখন স্নিগ্ধ লাগছে। বাহিরে দাঁড়ানো আনিকা খান সস্থি পেলেন। রান্না ঘরে চলে গেলেন খাবার আনতে। কল্প মাথা মুছে শার্ট ও জুতা পড়ে রেডি হয়ে নিলো। ওয়ালেট মোবাইল সব নিয়ে বাইকের চাবিও হাতে নিলো। তখনই আনিকা খান হাতে প্লেট নিয়ে ঢুকলেন। কল্প খাবার দেখে নাক সিটকালো, তার একদমই খেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু মানলেন না আনিকা খান রূপক ও সূর্যকে কিছু একটা ইশারা করলেন। রূপক ও সূর্য কল্পকে চেপে ধরে তিনজন একসাথে বসলো। আনিকা খান ভাত মাখিয়ে তিনজনের মুখে লোকমা তুলে দিতে লাগলেন। কল্প মায়ের পাগলামি দেখে হাসলো। হঠাৎ করেই মনে হলো তার এমন পাগলামি করা ঠিক হয়নি। সে না খেয়ে থাকলে তার মায়েরও খাওয়া হয়না এটা সে জানে। নিশ্চয়ই তার মাও এতোদিন ভালো মতো খাওয়া দাওয়া করেন নি। কল্প নিজেও প্লেটে হাত রাখলো। ভাতের লোকমা তুলে নিয়ে আনিকা খানের মুখের সামনে ধরলো। আনিকা খান মুচকি হেসে খেয়ে নিলেন।

খাওয়া শেষ করে কল্প সূর্য ও রূপক বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। মূলত তারা পার্কে যাচ্ছে। প্লেনটা রূপকের, মন ভালো করার জন্য নির্জন নিরিবিলি জায়গা প্রয়োজন। সেটা যদি হয় প্রকৃতির মাঝে তাহলে আরো ভালো।

পার্কের ঘাসের উপরে শুয়ে আছে তিনজন। খুলা আকাশের দিকে নজর তাদের। কল্প দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে- কিছু কি করা যায় না?

রূপক শ্বাস ছেড়ে বলে-, পূরবির সময় হলে ও নিজে থেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করবে। তুমি শুধু শুধু নিজেকে এতোদিন কষ্ট দিলে। এতে কি লাভ হলো? উল্টো নিজের ক্ষতি। পূরবি যদি তোমার এমন করার কথা জানতে পারে তো খুব কষ্ট পাবে। নিজেকে দোষী মনে করবে।

কল্প তাছিল্য করে হেসে বলে- সত্যিই কি কষ্ট পাবে?

রূপক ভ্রু কুঁচকে বলে- তোমার সন্দেহ আছে?

কল্প মলিন হেসে বলে- আমি পূরবিকে ভালোবাসি। পাগল উন্মাদের মতো ভালোবাসি। কিন্তু পূরবি? ও আমাকে বুঝতেই চায়না৷ আমাকে কষ্ট দিয়ে ও আনন্দ পায় মনে হয়। তাই তো আমাকে এতো কষ্ট দেয়। আমাকে ওর দহনে পোড়াতে ভীষণ ভালোবাসে সে। আমার কষ্ট হলেও তার কিছু যায় আসেনা।

রূপক সূর্যের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হেসে বললো- ওরে পাগল প্রেমিক, পূরবি তোকে কতোটা ভালোবাসে তা তুই আমাদের থেকেও ভালো করে জানিস। শুধু শুধু অভিমান করছিস। পূরবির উপর অভিমান করে তুই নিজেও কষ্ট পাস।

কল্প মুখ ফুলিয়ে বলে- তো কি করবো? আমার তো কোনো মূল্য নেই তার কাছে। সে থাকুক তার মতো। একবার শুধু যোগাযোগ হোক সবকিছু শেষ করে দিবো।

সূর্য ভ্রু কুঁচকে বলে- কি শেষ করবি? অবশ্য শেষ করলে আরো ভালো হবে আমি একটু চান্স নেওয়ার চেষ্টা করবো। আমাকে আর কষ্ট করে সিনিয়র বউ খুজতে হবেনা। ভালো কাজ দুস্ত তুই পূরবিকে আমাকে দিয়ে দিস।

কল্প আগুন চোখে সূর্যের দিকে তাকালো। সূর্য বিপরীতে দাঁত কেলিয়ে বলে- এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো?

কল্প দাঁতে দাঁত চেপে বলে- সিনিয়র আমার, আমি ছাড়া আর কারো না। ও যদি আমাকে কখনো ছেড়ে চলে যেতেও চায় তো বেঁধে রাখবো। আমি যতোই ভালো হইনা কেনো। পূরবির ভাগ যদি কেউ নিতে চায় তো তাকে শেষ করে দিবো। ভালোবাসার মানুষের জন্য হিংস্র হতে আমার সময় লাগবে না।

সূর্য মুখ গোমড়া করে বলে- মজা করেছিলাম ভাই। পূরবি তো তোরই। সে তো আমার সিনিয়র ভাবি হয়। আমি তো সিনিয়র ভাবির বান্ধবীদের মধ্যে কাউকে পটিয়ে নিবো। রুশা না কি যেনো একজনের নাম মেবি,,

রূপক কপট রাগ দেখিয়ে বলে- খবরদার সূর্যের বাচ্চা, রুশা জান আমার, তোর ভাবি হয়। সম্মান দিয়ে কথা বল।

সূর্য মুখ গোমরা করে বলে- তাহলে আমার কে?

রূপক কিছু একটা ভেবে বলে- পূরবির আরেকটা বান্ধবী আছে, জেসি। তাকে পটানোর ট্রাই করতে পারিস।

সূর্য খুশিতে গদগদ হয়ে বলে- সেটাই করবো। জয় সিনিয়রদের জয়।

কল্প ও রূপক উচ্চস্বরে হেসে উঠে।

চলবে ইনশাআল্লাহ✨