সীমাহীন ভালোবাসার নীড় ২ পর্ব-০৪

0
273

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#সিজানঃ২
#পার্টঃ৪
,
,
,
,
অন্ধকার রুমে ফুটে উঠেছে অস্ফুট আলোর রেখা। সে অন্ধকার ঘরে দাঁড়িয়ে আছে এক রমনী তার সামনে লম্বা বোর্ডে ঝুলছে কিছু মানুষের ছবি সাথে কিছু নোট যেটাতে লিখা আছে তাদের সমস্ত কর্মবিধীর সূচি।তাদের মধ্যে দুইটা ছবির উপরে রীতিমতো লাল কালির দাগ বসে গেছে যেটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে ক্রোশ নামক চিহ্নের। ছবি দুইটা আর কারো না বরং হামিদ রহমান এবং নিশান চৌধুরী।

রমনী খুব আয়েশী ভঙ্গিতে পিছনে থাকা চেয়ারে বসে পড়লো পায়ের উপরে পা তুলে হাতে তার ধোয়া উঠা কফির মগ যাতে একের পর চুমুক দিয়ে চলেছে তার নরম ঠোঁট জোড়া।

—ড্যানি

হঠাৎ মেয়েলী কন্ঠে চমকে গেলো সুঠাম দেহী যুবোক। চেহারা দেখে অনুমান করা যায় বয়স তার ২৮ কিংবা ২৯ এর কাছাকাছিই হবে।

—জ্বি জ্বি ম্যাম

—এই হামিদের কেস কি ঠিক বুঝলাম না এই টাকলা মরলো কি করে

—সঠিক জানা নেই ম্যাম যতোদূর আমাদের খবরি রা জানালো তাতে হামিদ রহমানের মৃত্যুর পিছনে রয়েছে N.C লোকদের হাত

—হুম বুঝলাম তাদের হাত কিন্তু তারা যেখানে সেখানে তাকে ধরতে পারতো কিন্তু তারা ভার্সিটির সামনে কেনো গেলো আর হামিদ টাকলাই বা তার কম্পানি ছেড়ে ওইখানে কি করছিলো

—হামিদ রহমান কে ধাওয়া করা হয়েছিলো মিরপুর থেকেই কিন্তু সে পালাতে পালাতে ওতোদূর যেয়ে পৌছালো

—তারমানে তুমি বলতে চায়ছো এটা সম্পূর্ণ কো-ইনসিডেন্ট

—আপাতত দৃষ্টিতে তো তাই মনে হচ্ছে ম্যাম যে সম্পূর্ণ ঘটনাই কাকতলীয়

—সে যায় হোক কিন্তু এই এনসি লোকেরা এবার ভুল করেছে বিরাট ভুল তারা আমার শিকার কেরে নিয়েছে আমি নিজের জিনিস হারাতে পছন্দ করিনা যেটা আমার সেটা আমারই থাকে সেটার দিকে অন্য কারো নজর আমার মস্তিষ্ক কে ভিষণ পিড়া দেয় মাথার রগ গুলো অসহ্য ব্যাথা শুরু করে দেয়।

—ম্যাম আপনি কি

—ইয়েস তুমি যেটা ভাবছো জলদি করে ফেলো আমার সময় নষ্ট করা একদম পছন্দ না

—কিন্তু ম্যাম

—আমি দ্বিতীয় বার নিজের কথা রিপিট করতে পছন্দ করিনা ড্যানি এন্ড ইউ নো দেট

রমনীর হুংকারে কেপে উঠলো সুঠাম পেশিবহুল দেহের অধিকারী যুবোক টা এসি রুমেও ঘাম ঝড়তে শুরু করলো তার সে জানে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনী ঠিক কতোটা ভয়ংকরী। যে রমনী শান্তরুপে মানুষ কে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দিতে পারে তার ভয়ংকর রুপটা যে কতোটা প্রলয়কারী তা ভাবতেও তার শীরদ্বার বেয়ে ঘাম ঝড়ে পরলো।

—আপনার হুকুম মোতাবেক কাজ হয়ে যাবে আজকে রাতের মধ্যেই তাদের ফ্যাক্টরি জ্বালিয়ে পুরিয়ে ছাই হয়ে যাবে।

—আর হ্যা ওইখানে আমার সিম্বল ফেলে আসতে ভুইলোনা আবার তাকে তো জানাতে হবে তাইনা কে তার এতো বড় ক্ষতি করলো।

কথাটা বলেই খোশমেজাজে স্থান ত্যাগ করলো হৃদয় হীন রমনী। চিন্তাই ফেলে গেলো পিছনে ফেলা লোকটাকে।

—এর মাথা গেছে নিজ ইচ্ছাই মধুমাছির ছাত্তাই হাত দিতে যাচ্ছে।একটা বার এটা ভাবছেনা বাঘ খেপলে তার ই ক্ষতি অবশ্য বাঘিনী আর বাঘ কে ভয় পাই নাকি। ধূর কোন পাল্লাই পড়লাম। প্রানের ভয় না থাকলে কবে এরে ছাইড়া যাইতাম কিন্তু একবারে এর দল থেকে সরলে শত্রু পক্ষের গুলি লাগবে একেবারে কপালে।

ড্যানি বির বির করে চলে গেলো সেখান থেকে।

,
,
,
জ্বলন্ত ফ্যাকটারির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নির হাতে তার জ্বলন্ত সিগারেট।চোখ তার জ্বলতে থাকা ফ্যাকটোরিতে নিবদ্ধ।করা সিকিউরিটি ভেদ করে কেউ একজন এসে তার ফ্যাকটরী জ্বালিয়ে পুরিয়ে ছাই করে দিয়েছে ভাবতেই চোখ জোড়া রক্তিম আভা ছড়িয়ে পরলো তার সমস্ত মুখ জুড়ে মাথার রগ গুলো ফুলে উঠলো।

—নির সমস্ত কর্মী সুরক্ষিত রয়েছে যারা এই কাজ করেছে তাদের উদ্দেশ্য ছিলোনা কোন মানুষ এর ক্ষতি করা।

—কে করেছে এগুলো।

নির এর স্বাভাবিক স্বরে কেপে উঠলো।

—A.K

নির ভ্রু কুচকে তাকালো রিয়াজ এর দিকে। রিয়াজ তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে তার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিলো। নির চিরকুট হাতে নিয়ে চোখের সামনে মেলতেই অবাক হলো। চিঠিতে গোটা গোটা শব্দে লিখা রয়েছে

—মাফিয়া মশাই কেমন আছেন উপস সরি যার সামনে বর্তমানে তার ফ্যাক্টারি জ্বলছে সে কি করে ভালো থাকে। আমার না এই কাজ করার একদম ইচ্ছা ছিলোনা কিন্তু কি করবো বলেন তো্ আপনি উইদাউট নোটিশ আমার শিকার কে আমার চোখের সামনেই রক্তাক্ত করে দিলেন ব্যাপার টা মানা আমার জন্য দায়। আমার জিনিসের উপর কারো নজর যেখানে আমার সহ্য হয়না সেখানে ডাইরেক্ট আপনি উনাকে টাচ করলেন উফ ব্যাপার টা আমার মোটেও ভালো লাগেনি তাই নেক্সট টাইম আমার কাজে নিজের বাম হাত ঢুকাবেন না নাহলে ফ্যাক্টরির জায়গায় আপনিও থাকতে পারেন হু নোজ। (লাস্টে একটা স্মাইলি ইমোজি)

নির সম্পূর্ণ টা পরে হো হো করে হেসে উঠলো রিয়াজ অবাক হলো। তার ধারণা অনুযায়ী এই মহূর্তে নির লংকা কান্ড বাধাবে দুই চারজন কে খুন করলেও রিয়াজ চমকাতো না যতোটা চমকালো নির এর হাসিতে।

—নির আর ইউ অলরাইট।

—বুঝছিস রিয়াজ পিচ্চি নেমেছে আমার সাথে খেলতে সে মনে করেছে বড্ড বড় খেলোয়াড় হয়ে গেছে সে। ইশ বেচারীর পাখাটা গজাতে শুরু করেছে। কিছুদিন উড়ুক তার পরে নাহয় নির এর খাচায় বন্দি করা যাবে। কি বলিস

রিয়াজ বোকার মতো চেয়ে রইলো নির এর পানে। কোন কিছুই তার মাথায় আসছেনা

—নির তোর আইডিয়া আছে এই জ্বলন্ত ফ্যাক্টরির সাথে সাথে আমাদের কতো কোটি টাকার মাল নষ্ট হয়ে গেছে আর ইউ গোন ম্যাড

—পাখি ধরা দিতে চায়ছে নিজ থেকে তার সামনে এই সামান্য লোস তো কিছুই না চল আজকে পার্টি হবে

রিয়াজ গাধার মতো মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

,
,
,
,
দেখতে দেখতে পার হয়ে গেলো একটা সপ্তাহ।আদ্রি তৈরি হয়ে নিচে নেমেছে উদ্দেশ্য ভার্সিটি থেকে নির এর চেম্বার। নিচে নামতেই অবাক হয়ে গেলো তার সামনে সোফায় বসে আছেন নাহিদ খান। সম্পর্কে তার বাবা হন মানুষ টি।যে বাবা আজ অব্দি তাকে মেয়ে হিসেবে মানেন নি তার কথা অনুযায়ী তার একটাই মেয়ে আর একটাই ছেলে আদ্রি নামক কেউ তার লাইফে নেই।

আদ্রি কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই নাহিদ খানের গম্ভির কন্ঠ তার কানে এসে ঠেকে

—এখানে একজনার ছবি আছে দেখে নিউ আজ সন্ধ্যায় তোমার বিয়ে

কথাটা কানে যেতেই মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো হাত।

—আপনার সত্যি মনে হয় আমি আপনার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবো নিজেকে এতো গুরুত্ব দেওয়ার মানে কি মিস্টার খান

—তোমার তো সাহস কম না আমার বাড়িতে দ্বাড়িয়ে আমার টাকা খেয়ে আমাকেই কথা শুনাচ্ছো

—ফোর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এই বাসাটা আমার দাদুর যে মারা যাওয়ার আগে এই বাসাটা আমার আর আদ্রিয়ান ভাইয়ার নামে লিখে দিয়ে গেছেন

—তোমাকে আমি যেটা বললাম সেটা করবা নাহলে হাত পা বেধে বাসায় বসাতে সময় লাগবে না এই বিয়েটা আমার জন্য দরকার এই বিয়েটার শেষ এ তারা আমার সাথে ডিল সাইন করবে আর ডিলটা আমার জন্য এই সময় বড্ড প্রয়োজন ছোট বেলা থেকে আমার টাকা খেয়েছো পড়েছো এবার সেটার বিনিময়ে চায়

—ওহ তো আমাকে বিক্রি করতেন চান বাহ মিস্টার খান এর দিন এতো খারাপ যাচ্ছে যে তাকে তার মেয়েকে বিক্রি করতে হচ্ছে।

—খবরদার নিজেকে আমার মেয়ে হিসেবে গন্য করবে না তুই আমার মেয়ে না না জানি কার পাপের ফসল তোর মা আমার নাম করে গেছে

আদ্রি আর সহ্য করতে পারলোনা
—বেরিয়ে যাবেন এই মহূর্ত আমার বাসা থেকে নাহলে গার্ড ডেকে ধাক্কা মেরে বের করে দিবো

রাগে কাপতে কাপতে আদ্রির উদ্দেশ্য কিছু অকথ্য কথা বলে বেরিয়ে গেলেন সোফায় সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পরলো আদ্রি। বুকের মাঝে তীব্র হাহাকার করছে তার।কেন তার জীবন এমন কেন নিজের বাবার কাছে সে পাপের ফসল প্রশ্ন টা হাজার বার করেছে সে নিজেকে কিন্তু ফলাফল বরাবর ই তার কাছে শূন্য উওর নেই।

আজ এক সপ্তাহ পরে পুনরায় ডক্টর নির এর চেম্বারে হাজির হয়েছে আদ্রি।চোখ মুখ অসম্ভব ভাবে ফুলে আছে চোখ দুইটা রক্তিম আভা ধারণ করেছে। যে কেউ এক দেখাই বলে দিবে সারারাত জেগে কান্না করার ফলে চেহারার এই কাহিল দোষা

দরজায় নক করতেই ভিতর থেকে গম্ভির কন্ঠের অধিকারী যুবক তাকে পার্মিশান দিয়ে দিলো ভিতরে প্রবেশ করার।

নির একনজর তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নিলো। আজকে বড্ড সমস্যা হচ্ছে তার এই মুখের দিকে তাকাতে কিন্তু কেন সেটা সে জানেনা খালি জানেনা আজ এই চেহারার দিকে তাকানো মানেই তার সর্বনাশ অনিবার্য। সে চায়না এই সর্বনাশের স্বিকার হতে। চায়না নিশ্বেস হয়ে অন্য কারো মাঝে বাচতে।

নিরঃমিস আদ্রি কাম উইথ মি আজকের সেশান টা কিছু আলাদা হবে

আদ্রি বিনা বাক্য বেয়ে মেনে নিলো হাটা ধরলো মানুষটির পিছনে। দুইজনে এসে দাড়ালো একটা নিরিবিলি জায়গায় কানে ভেসে আসতো লাগলো পাখিদের কিচিরমিচির এর মধুর আওয়াজ সাথে নদীতে বহমান পানির স্রোতের কন্ঠ।সব মিলিয়ে পরিবেশ টা দারুন। হঠাৎ তার চোখ যায়,,,,,

চলবে!