সুখতারার খোজে পর্ব-১০

0
449

#সুখতারার_খোজে🧚‍♀️
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ১০

-তুমি? ইউ রাস্কেল!!

মেয়েটিকে উঁচিয়ে বলে উঠলো কবিতা। প্রচন্ড কঠোর আওয়াজ হওয়ায় পুরো কফিসপ যেন নীরব হয়ে তাকিয়ে রইলো একটি মেয়ের দিকে। কবিতা ঘৃনা ভরা চোখে তাকালো অভ্রের দিকে। মুখ ফিরিয়ে আছে অভ্র। হাত পা বিচলিত! অস্ফুটস্বরে ‘ড্যাম ইট’ বলে উঠে দাড়ালো অভ্র। সবাই কেমন অপলক চোখে তাকিয়ে তাদের দিকে। খুব ভালো নাটক উপভোগে ব্যাস্ত পুরো কফিসপ। অভ্র কবিতাকে কিছু বলতে গেলে কবিতা থামিয়ে দিলো। চোখে পুকুর সম পানি টইটই করছে কবিতার! কথাটা বুকে ছুড়ির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করে তুলেছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটার থেকে অন্য কাউকে ভালোবাসি’ কথা শোনা চারটি খানি কথা? কবিতার পৃথিবীতে মায়া নামক শব্দই যেন চলে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে ঘৃনায় লিপ্ত চোখে একপলক তাকিয়ে কফিসপ থেকে বেড়িয়ে এলো কবিতা। অভ্র পিছন থেকে ছুটতে লাগলো। অথচ এতে পরম শান্তি অনুভব করলো লাল লেহেঙ্গা পড়া মেয়েটি! এতদিনে অনেকটা হালকা লাগছে তার। হঠাৎ যেন চারপাশে বসন্ত ওলাওঠা করে উঠলো। ফুটপাত দিয়ে চোখের পানি মুছছে আর হাটছে কবিতা। অভ্র একপ্রকার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। এসে দাড়ালো কবিতার সামনে। অভ্রকে দেখেই শরীর রি রি করে উঠছে কবিতার। অভ্রের মুখে বিষন্নতা! সে বললো,

-কবিতা তুমি ভুল ভাবছো। আমি…

-ব্যাস!

নাক টেনে বলে উঠলো কবিতা। অভ্র বিচলিত কন্ঠে বললো,

-আমি তোমায় সবটা বলি আগে..!

-আমি শুনতে চাইনা! প্লিজ সাইড দিন। আমার বান্ধবীকে ভালোবেসে বিয়ে করলেন আমায়? আবার আরেকটি মেয়েকে বলা হচ্ছে যে ‘কবিতাকে ডিভোর্স দিবো? দিন!

আবারো চোখ মুছলো কবিতা। বাধ ভেঙে স্রোতের মতো নোনাজল গুলো গড়িয়ে পরছে কবিতার। হেঁচকি উঠছে! গলায় দলা পাকাচ্ছে কথা বলতে। বুকে ঝিলিক মারছে কত কত কষ্ট! কবিতা নাক টেনে ফের বললো,

-থাকতে চাই না আমি আপনার মতো একজন মানুষের সাথে! কত দিন? ছয় মাস তো? না! ছয় না, মাত্র তিনমাসের মধ্যে ডিভোর্স পাবেন আপনি! কেন দু দুটো জিবন নষ্ট করলেন আপনি?

মুখচোখ লাল হয়ে উঠলো কবিতার। সেকেন্ড পরপর চোখের পানি মুছেও কেমন বারবার গড়িয়ে পড়ছে! মুখ ভিজে উঠছে! অভ্র কিছু বলতে গেলেই থামিয়ে দিলো কবিতা। নাক টেনে বললো,

-জানি! তিনমাসও বেশি আপনার কাছে! পাষাণ,ঘৃন্য, জঘন্য মানুষ আপনি অভ্রনীল অলিভ অভ্র! না হয় এই তিনমাস কলেজের অজুহাতে কোন ছাত্রী হোস্টেলে থাকবো! হয়েছে? প্লিজ লিভ মি। যেতে দিন। প্লিজ!

কবিতা পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই হাত শক্ত করে ধরলো অভ্র। পুরো শরীরে যেন কাটা বিধলো সেই স্পর্শে। শরীর ঘৃনায় ঝাকি দিয়ে উঠলো কয়েকবার। অতপর ছাড়াবার চেষ্টা! অভ্র আরও শক্ত করে চেপে ধরলো হাত। মুখ ভিজে গেলো আবারো। বুকে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। অভ্র কিয়দংশ কাছে টেনে বললো,

-কবিতা আমি ঝোঁকের বসে…

-বিয়ে? ঝোঁকের বসে একজন জিবন সঙ্গিনী বেছে নিলেন? আমার জিবন নিয়ে ভাবনা আসেনি? একটা মেয়ের জিবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আপনি দ্বিতীয় বার ভাবলেন না আলীভ অভ্র! ভুলটা আমারি! তারার সাথে খারাপ ব্যাবহার সেই রিসিপশনে দেখে আমি আপনায় সঠিক ভেবেছি! কথা হয়নি প্রায় দুদীন! খুশি হয়েছিলেন?

-আমার কথাটা শোন কবিতা। মাথাটা একটু ঠান্ডা…

-কি সম্পর্ক আপনার সাথে তারার? কবে কার সম্পর্কের শত্রুতা আপনার ওর সাথে?

মাথা নিচু করে বললো অভ্র,

-ছয় মাস!

-ছিহ্! আপনার জন্য তারা এতটা ভেঙে পড়েছে! কেন ভাঙলেন আপনার আর তারার সম্পর্ক? কেন বলুন, কেন?

ঘুরে দাড়ায় অভ্র। কন্ঠ কড়া অভ্রের,

-বিশ্বাসঘাতকিনি একটা মেয়ে। টাকার লোভে সব বিক্রি..

কথা শেষ হওয়ার আগেই সামনে ঘুড়িয়ে কষে চড় দিলো কবিতা। অপ্রস্তুত হয়ে হেলে পড়ে অভ্র। কবিতা তারার বেলায় দৃঢ় তা যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না অভ্র!

-অনেক বলেছেন! আপনারাই এ সমাজের এক একটা কীট অভ্র! যার বিরুদ্ধে এত বড় কথাটা বলতে যাচ্ছিলেন তার প্রসঙ্গ তোলারও উপযুক্ততা নেই আপনার।

-কবিতা!

কন্ঠে অপমানের সংঘাত অভ্রের। লোক জড় হতে লাগলো। ভরা রাস্তায় চড়টা সশব্দে হওয়ায় পুরো রাস্তার লোক তা নটিস করেছে। অভ্র হাল থেকে হাত সড়িয়ে ঘৃণ্য বর্বরোচিত হয়ে বলে,

-আপনার মুখে থুথু ছেটাতে ইচ্ছে করছে! থুথু!

পাশ কাটিয়ে চলে গেলো কবিতা। অভ্রের আজ খুব একা লাগছে! খুব কড়া অপমান গুলো কাটার মতো বিধছে তার শরীরে। সত্যিই কি বিশ্বাস ঘাতকতা করেনি তারা? আমায় ঠকায়নি? টাকার বিনিময়ে..!! আর ভাবতে পারে না অভ্র। ভীর আগের মতোই পাতলা হয়ে যায়। ধির পায়ে হেটে আসে ড্রাইভার। তাকে দেখেই অভ্র বললো,

-আমি আসছি! নাও ইউ গো।

_______

রিকশায় বসে ফোঁপাচ্ছে কবিতা! তারার নামে বলা সব কটুক্তি হজম হচ্ছে না কবিতার। দুটি জিবন নিয়ে খেললো অভ্র। অথচ, আজ সকালেই কবিতা কত খুশি ছিলো! কি রকম টেনে তাকে বিছানা থেকে তুললো? কাল কড়া শাষনে কত সুন্দর বুঝিয়ে পড়ালো? আর তার মনে এমন ভাবনা? সত্যি, রুপ দেখে বিচার করা দায় কে কেমন!

-ম্যাডাম কিছু হয়েছে?

প্রশ্ন কর্নকুহরে পৌছাতেই তড়িঘড়ি চোখের পানি হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছলো কবিতা। অতপর বললো,

-না! আপনি চলুন..

-এসেছি তো অনেক্ষণ,আপনিই তো বসে আছেন।

কবিতা আশেপাশে তাকিয়েই উদ্ভ্রান্তের মতো নেমে হাটা ধরে। রিকশাওয়ালা ফের ডাক দেয়,

-ম্যাডাম ভারাটা?

কবিতা ঘরে হেটে এসে বিশ টাকার জায়গায় একশত টাকার একটা নোট দিয়ে চলে যায়। হাজার ডাকার পরও কবিতা আর পেছন ফেরে না। হয়তো পেছন ফেরার দিন শেষ! আর কোন সুযোগ নেই তাকাবার।

দোতলা বাড়িটার মেন গেইট দিয়ে জোরে হেঁটে চলে। অথচ, ইরা ওখানে বসে ছিলেন। রোজ কবিতার অচরণ আর আজকের আচরণে কতটা তফাত? ইরা উঠে দাড়ালেন।ছুটে চললেন কবিতার যাওয়ার পানে। বাড়িতে ডুকলো অভ্রও। কবিতাকে সে এভাবে ফেরাতে কখনো চায়নি, চায়না। তাহলে কিভাবে ফেরাবে? ক’মাস সংসার করে? অতকিছু না ভেবে দৌড়ে দোতলায় গেলো অভ্র। কবিতা আলমাড়ি থেকে কাপড় নামাচ্ছে। ইরা পেছন ছুটছে আর জিজ্ঞেস করছে,’কি হয়েছে মা? এসব কেন করছো?’ কবিতা শোনবার পাত্রী নয়। অভ্র দরজায় দাড়িয়ে থমকে গেলো। এত তারাতাড়ি কবিতা সত্যি সত্যি এত বড় ডিসিশন নিবে তা ভাবেনি অভ্র। লাগেজ গুছিয়ে ওভাবেই হাটতে লাগলো কবিতা। কিন্তু দরজায় ঠাই দাড়িয়ে অভ্র৷ কবিতা মাথা নিচু করে বললো,

-সরে যান। যেতে দিন।

-তুমি এমন করতে পারোনা কবিতা।

-যেতে দিন।

-কবিতা এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে।

-যেতে দিন।

-কবিতা!

কবিতা এক ছিটকে সড়িয়ে যেতে নিলেই অভ্র সামনে এসে দাড়ায়। বলে,

-যেতে চাও তো? যাবে। কিন্তু তিনমাস তোমায় এখানেই থাকতে হবে।

কথা শেষ হতেই সশব্দে থাপ্পড় মারলেন ইরা! অভ্র কিছুটা ছিটকে গেলো। নোনাজল ভর্তি চোখ নিয়ে পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে গেলো কবিতা! অভ্রের রাগ এবার উপচে পড়তে লাগলো তনয়ার উপর! সামনে পেলে হয়তো খুন’ই করে ফেলতো তূরের বোনকে!

#চলবে..