সে আমার মায়াবতী পর্ব-১২+১৩

0
535

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১২
প্রায় ঘন্টাখানেক হতে চললো, দড়জা দিয়ে বসে আছি। যাবো না লোকটার সামনে। প্রথম দুই-দিন ভালো ব্যবহার করে এখন আমাকে ভুল বুঝে ব্যথা দিলো।
আচ্ছা আমি কি ওনার ওপর অভিমান করেছি? কিন্তু কেন? কে হয় আমার?ভাবনা চিন্তার মাঝেই চাচ্চু এসে দড়জা ধাক্কা দিলো,

— ঈশা মা কি হয়েছে আমার ছোট মায়ের? দড়জা বন্ধ করে আছে কেন?দড়জাটা খোল মা!

চাচ্চুর কথায় মাঝেই দড়জা খুলে দিলাম, আহারে এমনিতেই ছেলে না থাকার কারনে সব দিক একা হাতে সামলাচ্ছে তার ওপর আবার আমার জন্য চিন্তা করে ঘর পর্যন্ত এসেছে।

— কি হয়েছে মা, তোমার বোনের বিয়ে, আর তুমি ঘরে দড়জা দিয়ে আছো! কেউ কিছু বলেছে?মা কি কিছু বলেছে? আমার ছোট মাকে?

চাচ্চুর কিথা জমে থাকা কান্না গুলো ঠেলে আসতে চাইছে, কিন্তু তবুও নিজেকে সামলে বলে উঠলাম।

— না না চাচ্চু আসলে এমনি, আপু চলে যাবে তো তাই মন খারাপ ( মন খারাপ করে)

— আমার বড় মা টা চলে যাবে, ছোট মা টাও কদিন পর চলে যাবে। আমার কি কম খারাপ লাগছে? যাও মা তুমি নাই বলে বার বার সামিয়া তোমার কথা জিজ্ঞাস করছে।

— আমি মোটেও তোমাদের ছেড়ে যাবো না।

— পাগলি সেটা সময় হোক। এখন চলো।

— হুম চলো।

নিচে নামতেই দেখলাম একে একে সবার হাতে মেহেদি দেয়া, আপুর কাছে যেতেই দেখলাম দু-হাত ভর্তি মেহেদি দেয়া, সায়ন ভাইয়ার নাম লেখা মাঝে। মায়া আর তুবা আমাকে খুজছিলো, ভেবেছিলো বাগেনে গিয়েছি, আসা মাত্রই বকা বকি শুরু করলো,আমার জন্য নিজেরাও মেহেদী দিতে পারে নি। আমাকে জোর করে মেহেদি দিতে বসিয়েছে। কি করার আমিও বসে পরলাম। কিন্তু চোখ গুলো বার বার বেহায়ার মতো মিঃ চৌধুরী কে খুজছে,। কেন এমন হচ্ছে নিজেও বুঝতে পারছি না।

হাত ভর্তি মেহেদি দিয়ে বসে আছি, চোখে মুখে চুল আছরে পরছে, কাওকে বলতেও পারছি না। তুবা, মায়া সকলের হাত ভর্তি মেহেদি ভাবতে ভাবতেই চোখে পরলো সুন্দর একটি দৃশ্য।

— তুবা দু-হাতে মেহেদি দিয়ে বসে আছে। তুহিন ভাইয়া এটা সেটা বলে ওকে খাওয়াচ্ছে। তুবার চোখ মুখ বিরক্তি তে কুচকে আছে দেখাই যাচ্ছে বেচারিকে জোর করে খাওয়াচ্ছে। এক পর্যায়ে খাওয়া শেষ হলে তুবা কে টেনে কপালে চুমু দিলো, তুবা রাগী চোখে তাকাতেই হেসে দিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো, মেয়েটা নিজেও তার প্রেমিক পুরুষ এর বুকে ঠাই নিলো।খেয়াল করলাম আমি ছাড়া আরও অনেকেই এই দৃশ্য দেখছে কেউ মুগ্ধ নয়নে তো মেয়েরা ক্ষুব্দ নয়নে।
সায়ন ভাইয়া কি সুন্দর আপুর মেহেদি তে ফু- দিচ্ছে আর কথা বলছে। মেয়েটা সত্যি ভাজ্ঞ্যবতি। এর মাঝেই রাইসা কে অনেকক্ষন না দেখে ভাবতে লাগলাম কোথায় গেলো। হটাৎ চোখে পরলো রাইসা আর রাহুল নামের ছেলেটা এক সাথে কথা বলতে বলতে নিচে নামছে। আচ্ছা ওরা কি একে ওপর কে চিনে? কিন্তু এই ছেলে তো বড় পক্ষ। মায়াকে একবার জিজ্ঞেস করবো? ভাবতে ভাবতেই চোখে পরলো আরেক জোরা কপতি কে। আবির ভাইয়া তার প্রেয়শির রাগ ভাংগাচ্ছে এটা সেটা বলে , কিন্তু মেয়েটা বড্য অভিমানি, মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। মুচকি হেসে ভাবলাম নিজের ঘরে একবার যাওয়া উচিত। যেই ভাবা সেই কাজ, মোটামুটি শুকিয়ে যাওয়া মেহেদি নিয়ে যেই না নিজের ঘরে যাবো ওমনি পুরো বাড়ির লাইটিং অফ হয়ে গেল, কিছু বোঝার আগে এক জোরা হাত আমার ঘরে টেনে নিয়ে দড়জা টা দ্রিম করে আটকে দিলো। ভয়ে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছি, কোন মতে কিছু বলার পূর্বেই কোমড় জরিয়ে ধরে, ফিসফিস করে বলতে লাগলো!

— সরি, আম সরি আমার ঈশু পাখি! ট্রাস্ট মি আম রিয়েলি সরি, আর হবে না প্লিজ ফরগিভ মি,

আমি হা করে আছি, কারন কি হচ্ছে আমার সাথে,,সবাই কি আমাকে পায় নাকি? এ আবার কে, আচ্ছা ভার্সিটি তে যে ছিলো উনি কি সে?নাকি মিঃ চৌধুরি?ছি ছি আমি কি সব ভাবছি উনি হবে কিভাবে? উনি তো নেই, আর এই লোকটাই বা আমার পিছে পরে আছে কেন?
উফফ ভাবতে পারছি না, না একে এবার শিক্ষা দিতেই হবে, ব্যটা আমাকে এই নিয়ে দু-বার টাচ করেছে, কিছু বলবো তার আগেই বলে উঠলো….!

— এই মেয়ে চুপ করে কি আমার জান নিতে চাও নাকি? কি হলো কথা বল?

— এই এই আপনি কি বলে ডাকলেন এই মেয়ে? এটা আমার খুব চেনা, এই নামে আমাকে কেউ ডেকেছে,

আমি কথা গুলো বলার সময় বারবার মিঃ চৌধুরীর নাম টা মনে আসছে৷ আচ্ছা এটা কি উনি, আমি কিছু ভাবনার মধ্যে আনমনে ভেবে বললাম!

— মিঃ চৌধুরি?

জানি না লোকটার কি হলো আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে গভির চুম্বন লেপ্টে দিলো।তার সাথে ঠোটে হালকা করে চুমু খেল,
আমি শক খেয়ে চোখ খোলার সাথে সাথেই দেখি উনি নেই, লোকটা কি ম্যজিক জানে কখন আসে কখন যায় বুঝতেই পারি না, যে করেই হোক এই লোক কে যানতে হবে। পেটের মধ্যে ক্ষুদা অনুভব হতেই বিরবির করে বললাম,

— আমার তো আর তুহিন ভাই আর আবির ভাই নেই যে খায়িয়ে দেবে, তাই আমার চাচিমার কাছেই যাই। দেখি ফ্রি আছে কিনা। হাযার হোক মেয়ের বিয়ে অনেক কাজ ওনার,

ঘর থেকে বের হয়ে দেখি একে একে সবাই খেতে বসলেও, ছেলের বাড়ির লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ছাদে। তাই চাচিমা কে না পেয়ে ছাদে গিয়ে দেখি, সবাই এদিকেই। আমি নখ কামরে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম মিঃ চৌধুরি, চোখ ছোট ছোট করে এদিক তাকিয়ে আছে। আশে পাশে তাকিয়ে বুঝলাম লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, দ্রুত মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলাম। সবাই খেতে বসেছে এদিকে আমার ও খুদা পেয়েছে, সায়ন ভাইয়া আপুকে খায়িয়ে দেয়ার সময় আমাকে ডেকে নিয়েও এক নলা মুখে পুরে দিলো।আমিও হেসে খেয়ে নিলাম। এর মধ্যেই আপু সায়ন ভাইয়াকে বলে উঠলো!

— Thank you সায়ন। আমার মতো আমার বোনকে ভালোবাসার জন্য।

— ঈশা কি শুধু তোমার বোন? আমার ও বোন আমার ছোট বোন,

ভাইয়ার কথা শুনে তুবা তেরে এসে বললো আচ্ছা, তাহলে আমি কি? ভাইয়া তুবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো আমার তিনটা বোন। মায়া যদিও রেগে থাকার মিথ্যা অভিনয় করেছিলো,বাট ভাইয়ের কথায় গলে গিয়ে সায়ন ভাইয়ার এক হাত জড়িয়ে ধরে হেসে দিলো।সবাই খেতে বসেছে বিধায় আমিও বসেছি, কিন্তু মিঃ চৌধুরির সাথেই বসতে হলো,অন্য মেয়ে বেচারিরা সামনে পেয়েও কথা বলতে পারছে না আর আমি কিনা দূরে থাকতে চাই তাই কি লোকটার সাথেই এসে পরি। হায় কপাল একি আমার ভাগ্য নাকি দূর্ভাগ্য। খেতে খেতে খেয়াল করলাম লোকটার যথেস্ট মাধূয্য আছে।চাল চলন, কথা, স্মার্টনেস,খাওয়া সব কিছুতেই যেনো মুগ্ধতার ছোঁয়া। আমি খাচ্চি কিন্তু লোকটা একভাবেই তাকিয়ে আছে, আচ্ছা লোক তো? এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে?
কিন্তু কিছুই বলবো না, কথাই বলবো না ওনার সাথে।
কোন মতে একটু খেয়ে উঠে গেলাম, সবাই আস্তে আস্তে বের হচ্ছে, আমিও বের হবো এমন টাইমে মিঃ চৌধুরি আমার সামনে এসে হালকা ঘার কাত করে ঠোট কামরে হেসে বলে উঠলো,

— মিস – ঈশা আপনাকে তখন বকার জন্য এইভাবে বিহেভ করার জন্য সরি। সরি এক্সেপ্ট করা আর না করা তোমার বিষয় বাট এই আরাভ কাউকে সরি বলে না সেখানে তোমাকে সরি বলেছে মেয়ে! অভিমানি মেয়েরা যে এত কিউট কেন আমি জানি না কিন্তু তুমি কেন এত সুন্দর তা জানি, ( হেসে দিয়ে)

— এ্য,

— বাই মিস অভিমানি। তবে হ্যা কাল যেন এত সাজে না দেখি,

বলেই চুলে ব্রাশ করতে করতে নেমে গেলো।

আমিও নামার সময় দেখি মায়া হা করে তাকিয়ে আছে।এই মেয়েটার কি ভাইয়ের মতো রোগ আছে নাকি? এমন স্টেচু হয়ে আছে কেন?

— এই মায়া কি হলো? এমন হা করে আছো কেন।

— এই ভাইয়া তোমাকে কি বললো, এটা কি ঠিক শুনলাম নাকি।

আমি ওর কথা শুনে হেসে এই সেই বুঝিয়ে নিচে নিয়ে এলাম। সময় এর সাথে সাথে ওরাও চলে যাওয়ার সময় হলে সবাই চলে গেলো। আমিও ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলাম। কিন্তু একি এই লোকটার কথা কেন ভাবাচ্ছে আমাকে? উফফ পাগল হয়ে যাবো।

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃস্টি তে দেখবেন।রিচেক হয় নি)

#চলবে

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৩
আজ হলুদে হলুদে সেজে উঠেছে প্রতিটা মানুষ। আপুর হলুদ বিধায় মেয়েদের জন্য হলুদ শাড়ি ছেলেদের জন্য কালো পাঞ্জাবি, প্রতিটা রমনি তার প্রেমিক পুরুষ এর সাথে সেজে উঠেছে একি রুপে।আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি, আজকে যেহুত হলুদ তাই আপুকে হলুদ সবুজ কম্বেসন এ শাড়ি সাথে ফুলের গহনা পরিয়েছে৷ ভারি মেকাপ এর সাথে মেহেদি রঙের হাত, দেখতে পুরো নতুন বউ। আমিও যে কি ভাবি না, আপু তো নতুন বউই।হটাৎ করেই চাচিমার সকালের কথা মনে পরে গেলো,আমি ভাবতে লাগলাম —

— হ্যাঁ রে ঈশা দেখি দেখি আমার মা টার মেহেদীর রঙ, কেমন হয়েছে।

আমিও হাত বারিয়ে দিলাম, নিজের কাছেই একটা ভালোলাগা কাজ করছে, কি সুন্দর রঙ হয়েছে মেহেদী, দু-হাত ভর্তি ঘারো টকটকে রঙ, আমিও ব্যস্ত হয়ে হাত দেখার সময় চাচিমা হাতে চুমু দিয়ে বললো,

— মাশাল্লাহ আমার মেয়েটার ভাগ্য তো অনেক ভালোবাসা পাবে, সে কি জানে তার বর তাকে কি পরিমান ভালো বাসবে! হু ( হেসে হেসে)

— চাচিমা কি বলো এসব, ছি

চাচিমার কথায় লজ্জায় মুখ ঢেকে কথাটা বলেই দৌরে নিজের রুমে চলে এলাম।
এর মধ্যেই চাচ্চু চাচিমার কাছে গিয়ে বলে উঠলো–

— দিন দিন নাবিলা আর মায়ের অত্যাচার মেয়েটার ওপর বাড়ছে। তাই নিপা আমি ভাবছিলাম কি মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে।সামিয়ার বিয়ের পর যদি মেয়েটার ও!

— আমিও সেটাই ভাবছি। কিন্তু মেয়েটার অতীত জেনে কেউ যদি!

— চিন্তা করো না, এমন কারোর হাতেই মেয়ে দিবো, যে আমার মেয়েটার অতীত না, মেয়েটাকে ভালোবাসবে।রানী করে রাখবে।

— হ্যা আমিও চাই আমার ছোট মা টা সুখে থাকুক,

— ওতো কিছু ভেবো না, সামিয়ার বিয়েটা শেষ হোক তার পর মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করবো।

চাচ্চু – চাচিমা নিজেদের কথা বলার মাঝেই রাইসা নামের মেয়েটা যে আমার বিরুদ্ধে সরযন্ত্র করছে তা ওদের নিজেদের অজানা।

— বিয়ে দিবে তাই না? আবার রানী হয়ে থাকবে! হা শেকরে বালি গো চাচ্চু। যানো আমার না খুব আফসোস হচ্চে তোমাদের সো-কোল্ড ঈশার জন্য।চিন্তা করো না। তোমাদের এই মেয়ে আছে না! সব চিন্তা ভ্যনিস করে দিবে।শুধু আজকের দিনটাই কালকে ও এমনিতেই বিদায় হয়ে যাবে। তোমার বড় মেয়ের সাথে ছোট মেয়েও কাল শশুর বাড়ি যাবে।কিন্তু আদোও তোমার ছোট মেয়ে শশুর বাড়ি যাবে নাকি হা হা হা।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে একে একে সবাই সেজে উঠেছে। খালি আমি শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছি, কারন একে তো শাড়ি না সামলানোর ভয় তার ওপর যদি ওই লোকটা আবার আসে? ভাবনার মাঝেই তুবা ঘরে এসে হাজির হলো। বাহ মেয়েটাকে আজও কি মিস্টি লাগছে। হলুদ শাড়ি, ফুলের গহনা, পার্লার থেকে সাজায়
বউ বউ লাগছে। তুবার কথায় ধ্যন ফিরলো।

— কি রে এমন তাকিয়ে আছিস কেন?

— ইয়ার তোকে না দারুন লাগছে। ইশ পুরো বউ বউ৷ আহা এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন? ভাইয়ার জন্য কিছু রাখ। বাসর ঘরেও!

–ঈশায়া তুই দিন দিন অসভ্য হচ্ছিস। দেখিস তুই আবার আমার আগে বিয়েটা সেরে ফেলিস না।

— আচ্ছা হয়েছে লেট হচ্চে, আমাকে সাজিয়ে দে না!

— তুই এমন কেন? সবাই পার্লার থেকে সাজতে পাগল আর তুই কিনা ঘরে সিম্পল সাজিস।

— আমার এত আটা ময়দা ভালো লাগে না। কত কি মাখে, আমি ওই সিম্পল এই ঠিক আছি। তুই দিবি নাকি

— দিচ্ছি মেরি বেহেন। আপনি বসুন।

আস্তে আস্তে আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে আর আমি আয়নায় মুগ্ধ হয়ে দেখছি নিজেকে। হলুদ শাড়ি, হালকা সাজে, হাত ভর্তি চুড়ি, ফুলের গহনা। আমি অবাক নয়নে নিজেকে দেখছি।

— দেখি দেখি ঈশা, তোকে এত সুন্দর লাগছে। ইস আমি ফিদা।

— হয়েছে আপনি এবার আর এসব না বলে চলেন।

আমি আর তুবা কোন মতে আপুর কাছে গেলাম, আপু সহ সবাই দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অসস্তি তে সরে এলাম, এর মধ্যেই শুনলাম হলুদ নিয়ে ছেলে পক্ষের সবাই এসেছে। আমিও নিচে গেলাম, মায়া এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম, মায়া ও সেই তুবার মতো সেম কথা বলায় সবার সামনে হালকা লজ্জা পেলাম। মায়াও আমাদের মতো সেম সেজেছে। হটাৎ শুনলাম আমাকে চাচ্চু ডাকছে তাই দেখার জন্য বাহিরে যেতে, নিচে পা বারাতেই হুট করেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে তার ওপরেই পরতে পরতে বেচেঁছি, কারন লোকটা নিজেই আমাকে ধরে আছে।এর মধ্যেই ফুলের বর্ষন শুরু হলো।আমি হা করে সুর্দশন লোকটার দিকে তাকিয়ে আছি।কালো পাঞ্জাবি তে হাতা ফোল্ড করা, যদিও তার নিজের স্টাইলে আছে, কালো ঘারো চোখের গভির চাহনির লোকটাকে কে দেখে কেন আমি অন্যরকম হয়ে যাই, এ কেমন অনূভতি আমার?

— আজকে কি সারাদিন এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি ঈশা ( হেসে দিয়ে)

— তুবার কথায় নিজের সম্ভিত ফিরে পেলাম। একি ছি ছি সবাই এদিকেই তাকিয়ে আছে। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। লোকটা এখনো একি ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন৷

— আব না মানে প পরে যাচ্ছিলাম

— ওওও আচ্ছা তাই নাকি? মায়া আমি কি কিছু বলেছি?

— মোটেও না।

— আহা তোমরা মেয়েটার সাথে এমন করছো কেন?

— কথার মাঝেই দেখলাম মিঃ চৌধুরী কিছু না বলে হেটে চলে গেলো ভিতরে। আচ্ছা আমি কি কোন ভাবে ওনাকে হার্ড করলাম? কিন্তু আমি তো কিছুই করি নি। না চাইতেও চোখ দু-টো ঝাপসা হয়ে এলো,

— বড় ভাইয়ার আবার কি হলো?

— জানি না। এমনিতেও তো আসতে চাইছিলো না?

—আহা এসব রাখো তোমরা চলো ভাবির কাছে যাই।

— সবাই চলে যেতে নিলেও মায়ার হাত ধরে আবির ভাইয়া বলে উঠলো-

— শুভ্রপরি তুমি এত সেজেছো কেন?তুমি কি পাগল করতে চাও আমায়।

— আপনি তো এমনিতেই পাগল আর কি পাগল করবো। ( লজ্জা পেয়ে)

— পরিটা রে, কবে পাবো তোমায়?

— আপাদত এই বিয়েটা শেষ হতে দিন। অসভ্য লোক।

— তোমার জন্যই অসভ্য।

হেসে সবাই ভেতরে চলে গেলো, আমিও চলে গেলাম। ভেতরে যেতেই দেখি মিঃ চৌধুরী আপন মনে কথা বলছে ব্লুটুথ এ।

— এ জন্যই মেয়েটার কাছাকাছি যেতে চাই না। জান তুমি কি বোঝ আমি যে কি পরিমান তোমাতে আসক্ত আমার মায়াবতি। আমাকে তো অনেক আগেই পাগল করেছো।এত সাজতে বারন করলাম না তুমি তো আমার কথা শুনবে না, সেই শাড়ি, চুড়ি, ফুলের রানি সেজে এসেছো।কিন্তু জান তোমার পিঠ যে কত বড় সরযন্ত্র চলছে তা তুমি জানো না। আমার মায়াবতির রক্ষা আমি নিজেই করতে জানি। জাস্ট কালকের অপেক্ষা জান শুধু আজকের রাতটুকু এর পর তুমি আমার। ( বাকা হেসে)

একে একে সবাই মিলে আপুকে হলুদ লাগানোর এক পর্যায় আমিও দিলাম, এর মধ্যে খেয়াল করলাম মিঃ চৌধুরী আড় চোখে অনেক বার আমার দিকে তাকিয়েছেন৷ আমি না চাইতেও আমার নজর ওনার কাছে কেন যায়।
তার মাঝেই নাচ গানে তুবা মায়া, আবুর ভাইয়া , তুহিন ভাইয়া, সবাই আনন্দ করলেন। যদিও আমাকে ডেকেছে, কিন্তু রাহুল নামের ছেলেটার চাহনি দেখে আমার যেতে ইচ্ছা করে নি৷
সবাই ক্লান্ত হয়ে গল্পের আসর জমালে চাচিমার কথায় ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কেউ একজন আমার কোমড়ে শাড়ি ভেদ করে হলুদ স্পর্শ করে দেয়। ভয়ে, রাগে ঠান্ডায় জমে যাই। এতটুকু বুঝতে পারছি লোকটা ধির পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার কোমড় টেনে হুট করেই ঠোটে চুমু খেয়ে নেশালো কন্ঠে বলে ওঠলো!

— পাগল করার জন্য তোমার রুপ না জান ওই মায়াবতী চোখ গুলোই এনাফ। তুমি কি জানো আজ আমার ফুলের রানি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,
কিন্তু জান বি রেডি, আমাকে এতদিন অনেক জ্বালিয়েছো।কাল থেকে আমার পালা, বি রেডি মাই কুইন।

না আর না, অনেক সাহস নিয়ে আজকে বলেই ফেললাম।

— আপ আপনি কে? প্লিজ এভাবে হুট হাট আমার কাছে আসবেন না। চলে যান প্লিজ, কেউ আমাকে এভাবে দেখলে অ অন্যকিছু ভাববে৷ প্লি

— সসস ডোন্ট পেনিক জান, ভয় পেয়ো না, আমি কিচ্ছু করবো না, আর প্লিজ কেদো না৷

কারো পায়ের শব্দে আমি চমকে উঠি আচ্ছা, এখন এই অচেনা লোকটার সাথে আমাকে দেখলে? কি হবে ভাবতেই চোখ বেয়ে তরতর করে জল গড়িয়ে পরলো।
লোকটা হটাৎ আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে উঠলো।

— বি রেডি এন্ড প্রিপেইড মাই কুইন। কাল আমার জিবনে আপনার আগোমন জান। আমার মায়াবতি কে নিজের করে নিবো আমি।

বলেই হটাৎ ছেড়ে চলে গেলো। কিন্তু আমি আজও লোকটাকে চিনতে পারলাম না। কিন্তু কি বলে গেলো। কালকে কি হবে?
আমার জিবনে কি ঘটতে চলেছে কাল?

#চলবে….