স্ত্রীর অধিকার পর্ব-১৩

0
2772

#স্ত্রীর_অধিকার
#লেখিকাঃফারহানা_ইসলাম
#পর্বঃ১৩

আম্মার কথা শোনে আমি একটু স্বস্তি পেলাম।যাইহোক অর্নবের বিয়ের আগ পর্যন্ত অন্তত কোনো ঝামেলা হচ্ছে না।কিন্তু হঠাৎ করে এদের সবার এতো পরিবর্তনের কারন বুঝে উঠতে পারলাম না।কিন্তু তারপর ও মনে হলো হয়তো এরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে।।
হঠাৎ বাবা বললেন আচ্ছা অনু কাল তাহলে তুমি অভ্রকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করো।আমি টাকার সব ব্যবস্থা করে নিয়েছি।
,

,
বাবার কথা শোনে আমি একটু স্বস্তি পেলাম।যাইহোক বাবা সবসময় ই নিজের সন্তানকে আগলে রাখার চেষ্টা করে।শত ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানের দায়িত্বটা পালন করতে ভুলে যান না।সত্যি বাবাদের তুলনা হয় না।
,

,
সবার সাথে কথা বলে আমি অভ্রের ঘরের দিকে গেলাম।গিয়ে দেখি অভ্র ল্যাপটপে কী যেন করছে।আমি পেছন থেকে অভ্রকে জড়িয়ে ধরলাম।তারপর অভ্র বললো,,,,,,,,,,,

অনু তুমি??(অভ্র)

হ্যাঁ আমি।তুমি কী করছো??(আমি)

কিছু না ল্যাপটপে একটু কাজ করছিলাম।(অভ্র)

ও আচ্ছা।শোনো কাল তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাবো।ডাক্তার নীলিমা চৌধুরী(যুথি)র কাছে।(আমি)

অনু তোমাকে বলছিলাম না এই নামটা আমার কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে।আসলে নীলিমা মেয়েটি আমার ছোট বেলার বন্ধু।(অভ্র)

আমি সব জানি।।(আমি)

তুমি সব জানো।কিন্তু কীভাবে??(অভ্র)

নীলিমা আমাকে সব বলেছে।।(আমি)

ও আচ্ছা।তাহলে নীলিমার সাথেও তোমার আলাপ হয়ে গেছে।আর বাকি রইলাম আমি!!(অভ্র)

কী?তুমি বাকি রয়েছ মানে??(আমি)

এই তুমি এইভাবে আমাকে চোখ রাঙ্গাচ্ছো কেনো??আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি!!(অভ্র)

অভ্রের কথা শোনে আমি হেসে ই অস্থির।আসলে অভ্র খুব হাসাতে পারে।আমাকে এইভাবে হাসতে দেখে অভ্র জিজ্ঞেস করলো এই অনু তুমি এইভাবে হাসছো কেনো??

তখন আমি বললাম ঐ যে তোমার বাচ্চাদের মতো কথা শোনে।আসলে তুমি ও না পারো ভীষন হাসাতে।
তখন অভ্র বললো ও মা তাই বুঝি।
আমি বললাম হ্যাঁ।

আমাদের কথা বলার এক পর্যায়ে অভ্র আমার হাতে হাত রেখে বললো অনু আমি তোমাকে যত দেখছি তত ই অবাক হচ্ছি।আজ পর্যন্ত না পারলাম তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিতে।না পারলাম স্বামী হিসেবে কোনো দায়িত্ব পালন করতে।কিন্তু তাও তুমি আমার কথা কতো ই না ভাবো।আমার প্রতি তোমার কর্তব্যের বিন্দু মাত্র ও ঘাটতি আজ পর্যন্ত দেখলাম।আচ্ছা অনু বলো তো তুমি কোন ধাতু দিয়ে গড়া।

অভ্রের কথা শোনে আমি ওর হাত দুটো ধরে বললাম প্লীজ অভ্র এইসব বলে আমাকে লজ্জা দিবে না।আমি নিজে ই লজ্জিত যে আমি তোমার প্রতি কোনো দায়িত্ব ঠিক করে করতে পারছি না।সারাদিন তুমি ঘরে একা থাকো।আর আমি বাড়ির অন্যদের সাথে থাকি।বাড়ির সব কাজের দিকে মন দিয়ে থাকি।কিন্তু তুমি যে ঘরে একা থাকো সে ই দিকে আমার খেয়াল ই থাকে না।তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি সক্ষম হওয়া স্বত্ত্বেও তোমার ঠিকমতো খেয়াল রাখতে পারছি না।
কথাগুলো বলে অভ্রের দিকে খেয়াল করলাম।দেখলাম অভ্র র চোখ-মুখ অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে।
,

,
আমি অভ্রের চোখের পানি মুছে দিতে যাবো ঠিক তখনি অভ্র আমার হাত দুটো শক্ত করে ধরে বললো অনু এইগুলো আমার খুশির কান্না।আমি তো সৌভাগ্যবান যে তোমার মত একটা বউ পেয়েছি।দেখো না এমন ভাগ্য কয়জনের হয়।যে কি না এতো ভালো একটা বউ পায়।।

অভ্র র কথা শোনে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম।আর ওকে বলতে লাগলাম আমি তো তোমার চেয়েও সৌভাগ্যবতী যে এতো ভালো একটা স্বামী পেলাম।শুধু আজকের রাতটা পার হতে দাও।কাল থেকে শুরু হবে তোমার নতুন জীবন শুরু করার লড়াই।আমার খুব আনন্দ লাগছে।তুমি হাঁটতে পারবে।আর আমিও
তোমার হাত ধরে হাঁটতে পারবো।আর যারা তোমাকে নিয়ে এতো অযৌক্তিক মন্তব্য করেছে তাদেরকে ও কড়া জবাব দিতে পারবো।আমার অভ্র কোনো অংশে কম নয়।

অভ্র আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো তুমি শান্ত হও প্লীজ।আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
,

,
অভ্র র সাথে কথা বলে রুম থেকে বের হইলাম।হঠাৎ করে মোবাইলের রিং টা বেজে উঠলো।উফঃ অসহ্য।এই সময়ে আবার কে যে কল দিলো।রাহুল নয় তো!!এইসব ভাবতে ভাবতে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম মা কল করেছে।আজ অনেকদিন পর মা কল করলো।মায়ের কল রিসিভ করে কথা বললাম,,,,,,,,,,,,,

হ্যালো!!(আমি)

অনু মা তুই কেমন আছিস??(মা)

ভালো।মা তুমি কেমন আছো??ভাইয়া ভাবী আর জয় কেমন আছে??(আমি)

ভালো।তুই আমার ওপর রাগ করে আর একটা কল ও করলি না।একবারের জন্যে ও খোঁজ নিলি না তোর মা টা কেমন আছে!!<কাঁদতে কাঁদতে> (মা)

মা আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে মাফ করে দিও।(আমি)

না রে অনু।ভুল তো আমাদের হয়েছে।আমরা ই তোর জীবনটা শেষ করে দিয়েছি।।(মা)

না!!মা প্লীজ তুমি এইভাবে বলো না।আল্লাহ যা করার ভালোর জন্য ই করে।।(আমি)

অনু তুই বলছিস এইসব আমি বিশ্বাস ই করতে পারছি না।।(মা)

মা তুমি শোনলে খুশি হবে কাল থেকে অভ্র র চিকিৎসা চলবে।(আমি)

কী বলছিস অনু।সত্যি।আমাদের জামাই অন্য দশ জনের মতো চলাফেরা করতে পারবে।শোনে মনটা জুড়িয়ে গেলো।।(মা)

হ্যাঁ!মা।আচ্ছা এখন রাখছি।পরে কথা হবে।আর হ্যাঁ তুমি ভাইয়া,,ভাবী আর জয়কে নিয়ে আসবা।(আমি)

আচ্ছা ঠিক আছে।তুই ভালো থাকিস আর জামাইয়ের খেয়াল রাখিস।(মা)

আচ্ছা মা।(আমি)
,

,
মায়ের সাথে কথা বলে আমি নিচতলার দিকে যাচ্ছিলাম।কিন্তু যখন ই আমার শ্বাশুড়ির ঘরের সামনে আসলাম তখনি,,,,,,,,,,,,,,

চলবে