স্পর্শ পর্ব-১১

0
1293

# স্পর্শ
#পর্ব ১১
#writer_nahida_islam

উনি প্রেগন্যান্ট, প্রায় তিন মাস হয়ে যাচ্ছে। উনার খাওয়া দাওয়াতে অনেক অবহেলা করেন। ঠিক মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবেন। আর কিছু টেস্ট লিখে দিয়ে গিয়েছি তা করাতে ভুলবেন না।

কথাটা শোনে অতসীর চোখ দিয়ে স্রোতের মতো পানি গড়িয়ে পড়ছে। এতোটা কেয়ারলেস নিজের ভেতরে ছোট্ট একটা প্রাণ বেড়ে উঠচ্ছে তা একটু গুন অক্ষর ও টের পায়নি।

-ঐ পাশান অত্যাচারী বংশের বাচ্চা হওয়ার থেকে না হওয়া ভালো ছিলো। গর্ভের কলংক এটা।

অতসী কথাটা শোনো জোরে চিৎকার করে উঠে,

-মা ও আমার সন্তান। ওর পিতার পরিচয় যা ই হক না কেনো আমি ওর মা।

-এই সন্তান রেখে কী করবি।

-তুমি যখন আমাকে গর্ভেধারন করেছিলে তখন কী একবার ও ভেবেছিলে আমাকে তোমার পেটে রেখে কী করবে।

-তুই আর এ বাচ্চাটা এক নয় অতসী।

অতসী খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কেনো।

-তোর বাবার সাথে বরাবরই আমার সম্পর্ক ভালো ছিলো, আমাকে অনেক যত্ন নিতো সেখানে ইফাজ তোর ছায়াটা ও সহ্য করতে পারে না। তারপর তোরা দুজনই ডিভোর্সের কথা ভাবছিস।ডিভোর্স হয়ে গেলে এ বাচ্চাকে খাওয়াবি কী।

-আল্লাহ কাউকে সৃষ্টি করলে তার রিজিক ও দিয়ে দেয়। আল্লাহ সবার রিজিকের মালিক। তোমাকে এগুলো না ভাবলে ও চলবে।

-তাও সেই তো আমাদের ঘাড়ে এসেই পড়বি।

-মা

-চিল্লিয়ে কী হবে আমাদের ঘাড়ে ই তো চেপে বসবি।

-ডিভোর্স তো হলো ই না তার আগে ই তোমার এতো চিন্তা।

-মেয়ের হলে বুঝবি কতো জ্বালা। তার থেকে ভালো ডিভোর্সের প্রয়োজন নাই। বাচ্চাটা হলে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো বাচ্চাটা তোদের সম্পর্ক আবার জোরা লাগাতে পারে।

-মা হয়েছে, অনেক বলেছো। এখন আমার সামনে থেকে চলে যাও।

অতসী বালিশে মুখগুজে কাঁদছে। কাদবে না ই বা কেনো যখন শুনেছিলো মা হবে তখন তো মনের ভেতর সুপ্ত অনুভূতিগুলো নাড়াচাড়া দিয়ে উঠেছিলো। এমন অনুভূতি এইটুকু জীবনে কখনো অনুভব হয়নি। হয়তো ইফাজ অনেক অত্যাচার করেছে কিন্তু বাচ্চাটা তো আল্লাহর দান।

অতসীর কতশত স্বপ্ন বুনতো বিয়ের আগে । ছোট্ট একটা সংসার হবে। মা হবে। ছোট ছোট হাত পা গুলো বার বার ছুয়ে দেখবে।ছোট মুখটাতে অসংখ্য চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিবে। আর যখন কান্না করবে তখন হাজার গল্পের ঝুড়ি খুলে বসবে, আদর করে বুকে জড়িয়ে সে কী আনন্দ। আর বরটা খুব আদর করবে। প্রতিদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরে আর যা ই হক ভালো করে দুটো কথা বলবে। কিন্তু সবার ভাগ্য তো আর এক নয়।

অতসী জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে। এতো কষ্টের মধ্যে ও কেনো জানি আনন্দ লাগছে। আসার পর থেকে কেউ একবার কল দিয়ে জিজ্ঞেস ও করেনি কেমন আছি। নিজে ই নিজের বোকামির কথা ভেবে হাসি পাচ্ছে। যারা বাসা থেকে বের করে দিলো তারা নাকি আবার কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবে কেমন আছে।

-আপু তুই কী পাগল হয়ে গেছিস। এভাবে হাসছিস কেনো।

অতসী হঠাৎ করো শব্দ শুনে ভয় পেয়ে গেলো। পিছনে ফিরে দেখলো শিমু।

-অনেকদিন হাসা হয় না তাই একটু হেসে দেখলাম।

– বাবা ডাকছে কখন থেকে তুই শুনিসনি।

-না তো। আচ্ছা তুই যা আমি বাবার কাছে আসছি।

আমি মাথায় ওড়নাটা দিয়ে বাবার রুমের দিকে পা বাড়ালাম, দরজায় দাড়িয়ে অনুমতি চাইতে ই বাবা জোরে কেদে উঠলো। আমি দ্রুত গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম।

–মারে আমি তোকে এই আগুনেট মধ্যে ফেলেছি। আমাকে তুই মাফ করে দিস।

-তোমার কোনো দোষ নেই বাবা আমার ভাগ্য যা ছিলো তাই ই হয়েছে। কোনো বাবা মা ই চায়না তার সন্তান কষ্টে থাকুক।

-তুই আর ঐ বাড়িতে পা রাখিস না মা।

–নিজে তো কামাই করতে জানোনা। আবার মেয়েকে বলছো শ্বশুর বাড়ি না যেতে। দুইটা মেয়ে আছে বিয়ে দিতে হবে। সেই খেয়াল কী আছে তোমার।

-মা বাবাকে কেনো বকছো। বললাম তো আমি তোমাদের সংসারে বোঝা হয়ে থাকবো না।

-শোন মেয়ে এতো কিছু করে লাভ নেই ইফাজ আসলে সোজা চলে যাবি। মেয়েদের এতো তেজ থাকা ভালো না।

অতসী কিছু বলে না শুধু চোখ মুছে রুম থেকে বের হয়ে আসে। মা তো খারাপ কিছু বলেনি,ভয় পাচ্ছে আমি আমার সন্তান বাড়তি খরচ হয়ে দাড়াবো তাই। ভাগ্য কী কখনো পরিবর্তন হবে না। কিন্তু যা ই হয়ে যাক ঐ বাসায় আমি যাচ্ছি না তা সিউর।

হঠাৎ ফোন বেজে উঠতে ই রিসিভ করলো মা।কিছুক্ষন কথা বলে ই ফোনটা আমাকে দিলো। হয়তো ইফাজ হবে তাই ফোনটা ধরতে চাইনি। মা জোর করে আমার কানে দিয়ে চলে গেলো, কন্ঠটা চিনতে অসুবিধে হলো না। দাদিমা কল দিয়েছে।

-কেমন আছিস তুই।

-এই তো দাদিমা ভালো।

-আর কতো রাগ করে থাকবি এবার তো বাসায় চলে আয়।

-সবার ভাগ্যে কী আর সব সুখ থাকে বলো।

-কদিন পর বাচ্চার মা হবি এখন এসব রাগ অভিমান ভুলে চলে আয়।

-আমি আসেনি দাদিমা বিনা অপরাধে বের করে দেওয়া হয়েছে।

-নিজরে সংসার ধরে রাখতে হয়। বিয়ে হলে কতো ঝড়ঝাপটা ই কাটাতে হয়।

-যদি ইফাজ ঠিক থাকতো তাহলে সংসার ধরে রাখার চেষ্টা করতাম। যে সংসার আমার না তা ধরে রাখার কোনো প্রশ্ন ই আসে না।

-অতসী চলে আয় বোন। এসব জেদ করিস না একদিন দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। ইফাজ পরিবর্তন হবে।

-ইফাজ পরিবর্তন হবে তা আমি ও জানি কিন্তু আমি চলে যাওয়ার পর।আচ্ছা দাদিমা রাখি পরে আবার কল দিবো।

এটুকু বলে ই কেটে দিলাম। যতো কথা বলবো তত এসব কথা শুনতে হবে।

দুপুরের খাবার খেয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। অমনি কলিং বেল বাজলো। আমার শরীরটা ভালো নেই তাই আমি উঠলাম না। আগের ন্যায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।

-অতসী।

ডাকটা শুনে চোখ মেলে তাকাতে ই দেখলাম ইফাজ এসেছে সাথে আরেকটা লোক।

ইফাজ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

– ডিভোর্স চাচ্ছিলে না। তার আগে আমার টাকা টা দিয়ে নাও।

-কীসের টাকা।

-ন্যাকা সেজো না। খুব ভালো করে ই জানো কিসের টাকা।

-টাকা দেওয়ার সময় তো আমাকে দেননি। তাহলে এখন আমার কাছে খুজছেন কেনো।

-তোমার মা তো নিয়েছে।

-তাহলে মায়ের কাছে খুঁজুন।

-ইফাজ বিয়েটাকে তুমি ছেলে খেলা মনে করো না। অতসীর পেটে তোমার বাচ্চা এখন কীসের ডিভোর্সের কথা বলছো।

-বাচ্চা মানে?

-নিজের বউয়ের প্রতি তো কোনো খোজ ই নেই।

– বাচ্চা তো কি হয়েছে। আমার বাচ্চা আমাকে দিয়ে দিক। শেষ হয়ে গেলো জামেলা।

– কেনো আপনাকে দিবো?

-তোমার এখন ও সেই ক্ষমতা হয়নি আমার বাচ্চা নিজরে কাছে রেখে মানুষ করার। নিজে ই তো খেতে পাবে না।

অতসী হেসে বললো,

-আমি যেহেতু দশ মাস নিজের পেটে রাখার ক্ষমতা রাখি তাহলে বাকি সময়টা ও আমার কাছে রাখতে পারবো।

-তা সময়ে দেখা যাবে।

-হে, তা তো অবশ্য ই। সময় এদিন আপনাকে আমার থেকে খারাপ পরিস্থিতিতে ফেলবে। এতো টাকার অহংকার তখন কিছুই থাকবে না।

-অভিশাপ দিচ্ছো নাকি।

-সেই সাধ্য কী আমার আছে।

-এসব না বলে উকিন নিয়ে এসেছি, ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেন।

-শরিয়ত মুতাবেক অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তালাক দিলে তা সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগপর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না।

চলবে,

[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]