স্পর্শ পর্ব-১০

0
977

#স্পর্শ
#পর্ব_১০
#writer_nahida_islam

হঠাৎ ইফাজ রুমে ডুকলো। রোহান কথা বলছে অতসী হেসে হেসে উওর দিচ্ছে। ইফাজ বিদ্যুৎ গতিতে অতসী প্লেটটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে অতসীর মুখ চেপে ধরে।
অতসীর চোখ দিয়ে পানি পড়তে ই রোহান এসে ইফাজকে ধাক্কা দেয়।

-ভাইয়া এটা কী করছো। ভাবি ব্যাথা পাচ্ছে তো।
-ভাবি ব্যাথা পাচ্ছে নাকি তুই ব্যাথা পাচ্ছিস তা তো দেখতে ই পাচ্ছি।

–ভাইয়া তুমি কী পাগল। এতো নিচু মনমানসিকতা।

-রোহান তুই চলে যা আমার সামনে থেকে। আমার বউয়ের আশেপাশে কখনো আসবি না।

-বউ কাকে বলছো ভাইয়া, অত্যাচারের পাত্র বলতে পারো। আসার পর থেকে দেখছি ভাবিকে তোমারা কীভাবে রেখেছো। একটা মানুষ এতো মানুষিক শারীর অশান্তি মধ্যে কীভাবে থাকতে পারে বলতে পারবা।

-আমার বউ আমাকে বুঝতে দে।

রোহান আর কোনো কথা বললো না রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রানু বেগম এককোণে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। ভয় পাচ্ছে যদি অতসীর গায়ে আবার হাত তুলে।

ইফাজ রানুর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,

-দাড়িয়ে তামশা দেখছেনএখানে। যান আপনার কাজ করেন।

-যাচ্ছি ভাইজান।

ইফাজ অতসীর সামনে গিয়ে বললো,

-এই ড্রেস পরেছিস কেনো।

-ভুল হয়েছে। এখন থেকে বাথরুমে গেলো ও আপনার অনুমতি নিয়ে যাবো।

-সব সময় ঠোটের সামনে কথা প্রস্তুত ই থাকে। আমি কথা বলতে লেইট হতে পারি কিন্তু তোর উওর দিতে লেইট হয়না।

-এখন কী কথা ও আপনার অনুমতি নিয়ে বলবো নাকি।

-আর একটা কথা বললে..

অতসী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

–কী থাপ্পড় মারবেন তো।

-রোহানের সাথে কথা বলবি না।

-আপনি যখন সুমির সাথে ঢলাঢলি করেন আমি কিছু বলি।

-সুমি আমার বোন।

-রোহান ও আমার ভাইয়ের মতো।

-ভাই থেকে বর হতে বেশি সময় লাগে না।

-বোন থেকে ও বউ হতে বেশি সময় লাগে না।

ইফাজ থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতে ই অতসী হাতটা ধরে ফেলে।

-সাবধান ইফাজ চৌধুরী। মেয়েরা যেমন সহ্য করতে জানে তেমনি প্রতিবাদ ও করতে যানে। যেভাবে ভালোবাসতে যানে কষ্ট পেলে সেভাবে আঘত করতে ও জানে। কিন্তু মেয়েরা তো মায়ের জাত। তাই সব সময় তাদের অগ্নিরুপটা দেখায় না। এমন কিছু করবেন না যাতে আমি আমার ভালেবাসা ভুলে গিয়ে আঘাত করার জন্য অগ্রসর হই।

-মুখে কথা ফুটে বেশ তাই না।

-তো কী করবেন। সময় হলে সব দেখবি কী করি আর না করি।

-ওকে আশায় থাকলাম আপনার সিনেমা দেখার।

-সিনেমা মানে।

-আপনি যা দেখাবেন তা সিনেমার থেকে কম হবে না আমি সিউর।

গায়ে হাত তুলতে চাচ্ছি না। কথাটা বলে ই ইফাজ রুম থেকে বের হয়ে যায়। অতসী পাশে রাখা টেবিলের উপর থেকে পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে। এতো মানুষিক অশান্তি আর নিতে পারছে না। এখান থেকে বের হতে পারলে ই শান্তি।

বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো,
রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানানো, গুষ্টি শুদ্ধো লোকের সকল কাজ করে দেওয়া। দুপুরে রান্না সবাইকে খাবার খাওয়ানো, আর রাতে ক্লান্ত শরিরে একটা অমানুষের সয্যা সঙ্গি হওয়া। কারনে অকারণে কথা শোনা আর শারীরিক অত্যাচারের মধ্য দিয়ে।

অতসী নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করছে তাও কেনো জানি অমানুষগুলোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেড়ে উঠছে না। সহ্য কর সহ্য কর শুনতে শুনতে কান জালাপালা হয়ে গেছে।

-নাইকাদের মতো ছাদে বসে বসে যে ঢং করছো তো বাসার কাজ করবে কে।

কথাটা শুনে ই পিছনে তাকিয়ে দেখলাম সুমি।

-আমি নাইকা হলে তো খলনাইকা মিলিয়েছো ভালো।

-তোর মতো বেদ্দপ মাইয়া আমার বাপের জন্মে দেখিনি।

-নেও তোমার জন্মে দেখে নেও।

-যা নিচে গিয়ে কাজ কর।

-তোমার খাই ও না তোমার পড়ি ও না তাহলে তোমার কথা শুনবো কেনো। তুমি ই তো এবাড়িতে উড়ে এসে জুড়ে বসেছো। এই যে আসছো আর যাও ই না।

-তুই আমাকে কী বললি তোকে যদি এই বাসা থেকে না বের করেছি তাহলে আমার নাম ও সুমি না।

-যাও প্লিজ আমাকে এ বাসা থেকে বের করে দেও আমি নরক থেকে বের হতে চাই।

সুমি দৌড়ে নিচে চলে গেলো। আমি ও আস্তে আস্তে নিচের দিকে যেতে লাগলাম। প্রায় দুপুট হতে চললো রান্না বসাতে হবে। ইদানীং সুমি আমার সাথে আঠার মতো লেগে আছে। আল্লাহ আমাকে এই কোন পরিক্ষায় ফেলেছে কে জানে।
আমি কিচেনে ডুকে সবজিগুলো ফ্রিজ থেকে বের করলাম। রানুকে ডাকতে বাহিরে যেতে ই আমার শ্বাশুড়ি সিংহের মতো গর্জন দিয়ে বললো,

-তুই সুমিকে কী বলেছিস।

-কিছু বলেনি মা।

হঠাৎ উনি আমার চুলের মুঠিতে ধরে আমাকে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে দেয়। ব্যাথা সহ্য না করতে পেরে আমি উনার হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে ই উনি নিচে পড়ে যায়। নিচে পড়ে ই জোরে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। মায়ের কান্না শুনে ইফাজ দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। ইফাজ বের হয়ে উনাকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে যায়।
আমি এখন ও দরজার বাহিরে বসে বসে কাঁদছি। বেশ কিছুক্ষন পর ইফাজ এসে আবার চুলের মুঠিতে ধরে টানতে টানতে বললো, আমার মাকে মেরে আবার নাটক করছিস,গেইটের সামনে মেইন রাস্তায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে যায়।

-তোর সাহস দেখে আমি আবাক হচ্ছি তুই আমার মাকে মেরেছিস। আমার বাসায় তোর আর কোনো জায়গা হবে না। সময় মতো ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবি।

-আমি উনাকে মারিনি। উনি তো আমার মায়ের মতো।

-তোর আর কোনো নাটক আমি দেখতে চাইনা।

ইফাজ দারোয়ানকে বললো গেইট লাগিয়ে দিতে। দারোয়ান গেইট লাগিয়ে দেয়। আমি চোখ মুছে বসা থেকে উঠে পরি। পাশে স্যান্ডেল ও নেই। এই রোদে রাস্তা গরম হয় আছে। একটা পা ফেললে মনে হয় পা টা পুরো নিচ দিয়ে পোড়ে যাচ্ছে। তাও এসব যন্ত্রনা মনের যন্ত্রণা থেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে।

অতসী বাড়ির ভেতরে ডুকে ই মা বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। অতসীর মা দৌড়ে এসে মেয়ের এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যায়। অতসীকে রুমে নিয়ে যায়।

অতসীর মা সাথে সাথে অতসীকে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে। অতসী কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। চুপ করে থাকতে দেখে শিমু নীলু দুজন ই নিষেধ করে এখন কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য।

অতসীকে ওয়াশরুম দিয়ে বাহিরে দাড়িশে আছে নীলু। অতসীর মা ইফাজকে ফোন দিয়ে ঘটনাটা জানতে পারলো। কিন্তু অতসীর মায়ের বিশ্বাস হচ্ছে না অতসী এমন কাজ করবে। নাহ্ কখনো ই না। অতসী কখনো বড়দের গায়ে হাত তুলবে না সে যতই অপরাধ করুক না কেনো। মেয়েকে ছোট থেকে বড় করেছে কখনো তো এমন হয়নি। অতসীকে আদর করে ডেকে যে কাজটা দিতো তা কষ্ট হলে ও করে দিতো। যা বলতো তাই ই শুনতে, বড় হয়ে ও কোনো কাজের অবাধ্য হয়নি। অতো লক্ষি মেয়ে কী কখনো কাউকে মারার মতো কাজ করতে পারে।

রাতে হঠাৎ অতসী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, শরীরটা ও দূর্বল তাই বাসায় ই একটা ডাক্তার ডাকলো। ডাক্তার এসে বস চেকাপ করার পর যা বললো তার জন্য কেউ ই প্রস্তাব ছিলো না।

-উনি প্রেগন্যান্ট, প্রায় তিন মাস হয়ে যাচ্ছে। উনার খাওয়া দাওয়াতে অনেক অবহেলা করেন। ঠিক মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবেন। আর কিছু টেস্ট লিখে দিয়ে গিয়েছি তা করাতে ভুলবেন না।

চলব