স্মৃতির দেয়াল পর্ব-২২+২৩

0
2348

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২২
Writer -Afnan Lara
.
এক মিনিট,আপনাকে না কে কল করেছিলো?ওটা রিসিভ করেন,যদি হিয়া হয়ে থাকে তাহলে আজ আপনার কপালে অনেক দুঃখ আছে
.
নীল মুনের হাত টেনে ধরে বললো”তো??আমি কি ওকে ভয় পাই নাকি,এখন আমার কাছে একটাই কাজ আর সেটা হলো তোমার এমন কথায় কথায় হিয়ার নাম বলাটা বন্ধ করা
.
মুন হাত টানতে গিয়ে দেখলো আরাফ দরজার কাছে মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে ওদের দুজনের ঝগড়া দেখছে
নীল মুন দুজনেই দুই জায়গায় সরে গেলো আরাফকে দেখে
.
ছোট মা তোমাকে মাম্মাম ডাকছে
.
আসছি
.
মুন উঠে চলে গেলো,নীল ফোন হাতে নিয়ে দেখলো লাইন এখনও একটিভ,নাম্বারটা অচেনা,নীল হ্যালো বলতেই হিয়া কেটে দিলো লাইনটা,কে ছিল তা নীল বুঝলোই না
.
সে রেডি হয়ে নিলো অফিস যাবে বলে,দিন শুরু হয় মুনের সাথে ঝগড়াজাটি দিয়ে আর শেষ ও হয় একই রিজনে
কি মেয়ে বিয়ে করলাম রে ভাই

ভাবী আমায় ডাকছিলে?
.
হুমম
.
ভাবী চায়ের পাতিলে চা পাতা দিতে দিতে মুনের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলেন,তারপর বললেন”আরাফকে পাঠিয়েছি সেই দশমিনিট আগে,আরাফ মনে হয় পুরো বাড়ি চক্কর কেটে তারপর গিয়েছে
যাই হোক,জলদি করে রেডি সেডি হয়ে নাও,আমরা সবাই আজ সন্ধ্যায় রাঙামাটির জন্য বের হবো
সারা রাত জার্নি,দিনের শুরুতে একটু ঘুম তারপর ঘুরাফিরা
.
মুন চোখটা উপরে তুলে বললো”উনি যাবেন?”
.
সে যাবে নাকি যাবে না তা তোমার ভাসুররা দেখে নেবে,নীল যতই না না করুক ভাইদের অনেক ভয় পায় আর তাদের কথার অমান্য করে না কখনও
.
মুন ভেবেই নিয়েছে নীল যাবে না,নীল রাজি হলেও হিয়া তাকে কিছুতেই বউ নিয়ে হানিমুন করতে দেবে না
তা নিয়ে মুন একশো পারসেন্ট সিউর
তাই ভাবীদের জোরাজুরিতে সে এখন ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে চুপচাপ,যা হবার তা দেখা যাবে
নীল অফিসে চলে গেছে,যাওয়ার আগে একজন আরেকজনের মুখ দেখেনি
দেখা প্রয়োজন ও না
কারণ দুজনে ঠিক কোন পথে পাল্লা দিয়ে চলছে তারা কেউ জানে না
মুন কয়েকটা শাড়ী নিলো যেগুলো মা দিয়েছিলো
কিন্তু ওখানে গিয়ে কি শুধুই শাড়ী পরবো?
লোকটাকে মা এত করে বলেছে আমাকে নিয়ে শপিং করিয়ে দিতে তা আর করলো না,হিয়া হলে নাচতে নাচতে যেতো
মা আসলেন ওর রুমে ঠিক কয়েক ঘন্টা পর
মুন ততক্ষণে ব্যাগটাকে আধখোলা রেখে নিজের অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে
.
মুন নাও ধরো টাকা,গিয়ে শপিং করে এসো,সাথে উর্মিকে নিয়ে যেও,রাঙামাটিতে পরার তোমার ভালো ড্রেস নেই জানি আমি
.
মুন ও খুশিতে গদগদ হয়ে গেছে,উর্মি ভাবী নিজের ব্যাগ প্যাক করে মুনকে নিয়ে বের হলেন শপিংয়ে,তার ও কিছু কেনাকাটার দরকার ছিলো
বাসার কারে করে একটু দূরের একটা ভালো মার্কেটে আসলো তারা
ভাবী মুনকে আইসক্রিম ধরিয়ে দিলেন,কেন দিলেন তার কারণ মুন বুঝলো না তবে তার খুব ভাল্লাগলো,ভাবী একটা হার পছন্দ করতে জুয়েলারি সেকশানের দিকে গেছেন
মুন এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে আর হাতের চকবারটা খাচ্ছে
হঠাৎ সে হালকা পাতলা ধাক্কা খেয়ে গেলো হিয়ার সাথে
হিয়াকে হুট করে এখানে দেখে মুনের মন চাইলো এক দৌড় দিতে তারপর ভাবলো নাহহ,চোরে পালায়,আমি তো চোর না
.
হিয়া বিরক্ত হলো মুনকে দেখে,তাও হেসে বললো “কেমন আছো,নীলকে নিয়ে শপিংয়ে এসেছো বুঝি?”
.
মুন আইসক্রিম খেতে খেতে বললো”উনি তো অফিসে,আমি বড় ভাবীর সাথে এসেছি”
.
ওহহ কোথায় যাবে বুঝি?কজ এই সিজনে তো তেমন একটা শপিং করে না কেউ
.
ঐ যে তুমি শপিং করছো,তেমনই হুদাই শপিং করছি আমরা
.
বেশ কথা জানো তো,,তা নীল কেমন আছে?
.
মুন বিড় বিড় করে বললো “তোমার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ”
.
কিছু বললে?শুনতে পেলাম না
.
বললাম আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে,ভালো না থাকার তো কারন নেই,খুব জ্বালাতন করি তাকে,একটুও মন খারাপ করে থাকতে দেই না
.
হিয়া পাশের ক্যাফের একটা সিটে বসে গিয়ে বললো”ওর মন খারাপ থাকবে কেন?”
.
(মরণণণণণণণ!!)না আসলে অফিসের কাজের চাপে এত স্ট্রেস নিয়ে থাকে,,আমি উনাকে কত বলি এত স্ট্রেস না নিতে,আজীবনের জন্য ভুলে যেতে এসব
.
হিয়া ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো”বসো,,আইসক্রিম আরেকটা খাবে?”
.
না থাক একটাতেই আমার পেট ভরে যায়,অবশ্য উনি থাকলে আরেকটা খেতাম,,উনাকে দেখলেই আমার খেতে ইচ্ছে করে
.
হিয়া মনে মনে ভাবলো এই মেয়েটা শুধু ডাবল মিনিং কথা বলে,,বোকাসোকা ভেবেছিলাম কিন্তু ওতোটাও বোকা না
.
তুমি ও কিছু খাও,,কি কিনতে এসেছো?
.
মুন??
.
মুন পিছনে তাকিয়ে বললো”ভাবী,তোমার হার কেনা হয়েছে?”
.
ভাবী একটু এগিয়ে এসে হিয়াকে দেখে চিনতে পারলেন হিয়া সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো”আসসালামু আলাইকুম,ভালো আছেন ভাবী?সরি সরি আপু”
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম,,ভালো,তুমি?
.
মুন রাগে ফুঁসছে,,ও জানে হিয়া ইচ্ছে করে ভাবী বলেছে আগে
.
মুন??চলো এবার তোমায় জামা কিনে দিব
.
আচ্ছা আসি হিয়াপু
.
হিয়ার মাথা গরম হয়ে গেছে,কারণ উর্মি ওর সাথে ঠিক করে কথাই বললো না,ভালো তুমি বলেই চলে গেলো
.
মুন নিজের মনমত জামা খুঁজছে কিনার জন্য,উর্মি ভাবী বললেন”ঐ মেয়েটাকে আবার কই পেলে?”
.
সবসময় চিপকুর মতন পিছে পিছে থাকে,আমার তো ভয় করে না জানি রাঙামাটি এসে হাজির হয়
.
বলেছো?
.
না,পাগলে কামড়ায় নাই,তবে তোমার দেবর যে পাগলা মার্কা,সে নির্ঘাত হিয়াকে বলে দেবে যে তারা গোটা গুষ্টি শুদ্ধ রাঙামাটি যাচ্ছে
.
তুমি নীলকে আজকে ফোন রিসিভ করা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবা
.
হুমমমম
.
মুন পাঁচ ছয়টা জামা নিয়ে এক দৌড় দিলো খুশিতে,জীবনে এ প্রথম সে এতগুলো জামা কিনলো তাও একসাথে,খুশি আর ধরে না,কিছু দূরে গিয়েই দুম করে ধাক্কা খেলো সেই আবারও
তবে হিয়ার সাথে না,নীলের সাথে
নীলকে দেখে মুনের বিশ্বাস হলো না,বোকার মতন চেয়ে আছে সে এখনও
নীল ভ্রু কুঁচকে বললো”জামা নিয়ে পালাচ্ছিলে?ওমন করে দৌড় দিলে কেন?”
.
পালাবো কেন,খুশির ঠেলায় দৌড় দিয়েছিলাম,আপনি দেখে হাঁটতে পারেন না?
.
ও এখন আমার দোষ?নিজে তো আসমানের দিকে তাকিয়ে দৌড়াচ্ছিলে
যাই হোক,শপিং শেষ??আমি তোমাদের নিতে এসেছি,ডিউটি শেষে বাসায় ফিরছিলাম,মা বললো তোমাদের নিয়ে আসতে
.
আমরা তো কার এনেছি
.
তো কি হয়েছে?
.
উর্মি ভাবী এগিয়ে এসে বললেন”মুন তুমি নীলের সাথে চলে যাও,আমার আরও কিছু বাকি আছে,আমি ওগুলো কিনে বাসার কারে চলে আসবো
.
আচ্ছা
.
মুন নীলের সাথে চললো,আইসক্রিমের দোকানের দিকে চোখ পরতেই ড্যাবড্যাব করে চেয়ে হেঁটে যাচ্ছে সে
.
নীল ফোন চেক করতে করতে মুনের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো মুন আইসক্রিম খেতে চাচ্ছে
.
খাবে?
.
খাওয়ালে তো মানা করি না
.
নীল গেলো আইসক্রিম আনতে,মুন এদিক ওদিক তাকাতে গিয়ে হঠাৎ দূরের লাইনে হিয়াকে দেখতে পেয়ে পিছোতে পিছোতে নীলের গায়ে সাথে লেগে গেলো
.
কি হলো?
.
ইয়ে মানে,আপনাকে না আজ অনেক সুন্দর লাগছে
.
পাম দিচ্ছো নাকি অন্য ব্যাপার?
.
পাম কেন দিবো,,ইয়ে আমার দিকে একটু তাকান
.
এমন করছো কেন বলোতো?
.
হিয়া আসছে এদিকে,সেটা দেখে মুন নীলের গলার পাশে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো ওকে
.
এমন করছো কেন তাহা?কি হয়েছে তোমার?
.
দেখুন না আমাকে,আমাকে কেমন লাগছে তা তো বললেন না
.
ভালে লাগে,গলার থেকে হাত সরাও এখন,তোমাকে বলছি না আমাকে এমন টাচ করবা না
.
কাল যে আমার ফিতা…
.
চুপ! এত জোরে কেউ এসব বলে?মানুষ কি ভাববে??রাগের মাথায় ফিতা খুলে দিয়েছি,এটা এত মনে রাখতে হবে না
.
কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মাথায় রাখবো
.
ফিতা?কিসের ফিতা খুলেছো নীল?
.
মুন আর নীল দুজনে তাকালো হিয়ার দিকে,হিয়া হাতে শপিং ব্যাগ কতগুলো নিয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে
মুন নিজের কপালে নিজে ঠোকর দিয়ে ভাবলো”এত কষ্ট করেও লাভ হলো না,দুজনেই আবার এক হয়ে গেলো”
.
ঐ আসলে আমার ব্লাউজেরর….
.
চুপ!
.
কি বললে মুন?কিসের ফিতা?
.
নীল কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,কথা কাটানোর জন্য বললো”কেমন আছো হিয়া?তুমি এখানে?”
.
এর ভিতরে মুন তার কথাটা ঢুকিয়ে দিলো,সে বললো”ফিতা তো ব্লাউজেরই হয় তাই না হিয়াপু??
মানুষ তো আর যখন তখন বিয়ার গেটের ফিতা খুলে না”
.
.
হিয়া চোখ বড় করে নীলের দিকে তাকালো,,
মুন আইসক্রিম হাতে নিয়ে বললো”আপনারা কথা বলুন,আমি অটো দিয়ে যেতে পারবো,আর নয়ত উর্মি ভাবীর কাছ যাই কেমন?”
.
দাঁড়াও,চলো আমার সাথে
.
নীল মুনের হাত ধরে নিয়ে গেলো,হিয়া মূর্তি হয়ে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে,নীল এ প্রথম ওর সাথে ভালোমতন কথা বললো না,এতটা বদলে গেলো নীল
হিয়ার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না
.
হাত ছাড়ুন,আপনার আর হিয়ার মাঝে আমি আসব না,তাই তো চলে আসতে চেয়েছি
.
যে ভাবে ফিতা ফিতা করে সব ফাঁস করেছো, ওখানে আমার পক্ষে থাকা অসম্ভব হয়ে গিয়েছিলো
.
মুন দাঁত কেলিয়ে বললো”সরি নীল ভাইয়া”
.
নীল ভাইয়া?নতুন করে আবার কি শুরু করলে?
.
আপনার তো খুশি হওয়ার কথা,আপনার বউ আপনাকে ভাইয়া ডাকছে তার মানে সে আপনার আর আপনার প্রাক্তনের মাঝে আসবে না
.
তুমি সারাদিন এসব নিয়েই থাকো
.
রাঙামাটিতে যেতে রাজি হয়েছেন?
.
না গিয়ে আর কি করবো,ভাইয়া বলেছে না গেলে আমার পোস্টিং রাঙামাটিতে করে দেবে আবার
.
একদম ঠিক হয়েছে
.
নীল গাড়ীর দরজা খুলে দিলো,মুন গিয়ে বসলো সেখানে,এক হাতে ব্যাগ আর আরেক হাতে আইসক্রিম নিয়ে
নীল ড্রাইভ করছে চুপচাপ,মুন ও চুপচাপ,দুজনের মুখে কোনো কথা নেই
তবে মুন মনে মনে খুশিতে মরে যাচ্ছে,কারণ নীল আজ হিয়ার সাথে সামনা সামনি দেখা হওয়ার পরেও ঠিকঠাক কথা বলতে পারেনি
.
নীল মোড়ে ঢুকতে ঢুকতে বললো”এরকম মিট মিট করে হাসছো কেন?”
.
শপিং মলের একটা ছেলেকে হেব্বি লেগেছে,তাকে বিয়ে করলে হয়ত আমার জীবনটা নদীর জলে ভেসে যেতো না
.
নীল ব্রু কুঁচকে মুনের দিকে তাকিয়ে আবারও গাড়ী চালানোতে মন দিলো
একমিনিট পর হালকা একটা নিশ্বাস ফেলে বললো”ছেলেটির কথা আমাকে বললে কেন?”
.
আপনি আমার হাসির কারণ জানতে চাইলেন তো তাই,জ্বালা জ্বালা ফিলিং?
.
আমি তোমার মতন না যে সারাদিন থার্ড পারসনকে নিয়ে পড়ে থাকবো
.
তাহলে আপনি মানছেন হিয়া থার্ড পারসন আমাদের মাঝে?
.
একটু চুপ থাকো,এত কথা বলতে পারো তুমি,তোমার সাথে কথায় পেরে উঠি না আমি

বাসায় ফিরে নীল ফোন বের করলো হিয়াকে কল দেবে বলে
মুন ব্যাগগুলো বিছানায় রাখতে গিয়ে বিষয়টা খেয়াল করলো,নীল ফোন হাতে নিতেই ও দুম করে পড়ে গেলো নিচে
.
নীল চমকে এগিয়ে এসে বললো”কি হয়েছে??”
.
পা মচকে গেলো
.
কি করে,দেখি
.
নীল হাটুঁগেড়ে বসে মুনের পায়ে হাত দিতেই মুন ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”কাতুকুতু ”
.
পা মচকালে তা তো ঠিক করতে হবে,কাতুকুতু এক সাইডে রাখো
এটা বলেই নীল মুনের পায়ে একটা মোচড় দিলো আগের মোচড় যাওয়ার জন্য,কিন্তু সে তো জানে না মুন মিথ্যাে বলেছিলো
হয়ে গেলো বিপত্তি!!!
আর তা হলো মুনের ভালো পা মোচড় খেয়ে এখন সত্যি সত্যি মচকে গেছে
এক চিৎকার দিয়ে মুন কেঁদে ফেললো শেষে
চলবে♥

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২৩
Writer -Afnan Lara
.
উল্টো রিয়েকশান হলো কেন তাই বুঝলাম না
.
আপনার কি দরকার ছিলো আমার পায়ে মোচড় দেয়ার??
সবসময় মোচড়েই মোচড় যায় না,বেকুব পুলিশ একটা!!!
আমার ব্যাথা ১৪গুন বাড়িয়ে দিছে,অসভ্য লোক
.
ভালোর জন্য করেছিলাম এমন হবে জানলে করতাম না,আই এম সরি,দেখি বিছানায় এসে বসো,,আমি দেখছি কি করা যায়
.
কি আর করবেন,আমার যা ক্ষতি করার তা তো করেই দিছেন,রাঙামাটি যাওয়া যাবে কিনা তাই ভাবছি এখন
.
মুনের চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই নীলের রুমে এসে হাজির হয়ে গেছে
মুনের পায়ের এমন হাল দেখে সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো,ট্যুর ক্যানসেল ও হতে পারে এসব ভেবে বাচ্চারা কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে
শেষে মায়ের বুদ্ধিতে মুনের পায়ে মালিশ করে দেওয়ার কথা উঠলো
নাহার এসে মালিশ করে দিয়ে গেছে,সবাই প্রে করছে যেন জলদি করে মুনের পা সেরে ওঠে
এদিকে মুন চোখ দিয়ে নীলকে গিলে খাচ্ছে বারবার
নীল ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে চুপ করে আছে,হিয়াকে নিয়ে একদিন সাঁকো পার হতে গিয়ে ওর কারণে হিয়া নিচে পড়ে গিয়ে কাদায় মাখো মাখো অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো,সেবার হিয়ার পায়ে ব্যান্ডেজ করাতে হয়েছিলো
এখন মুনের তেমন হয় কিনা তা ভেবে নীলের ভয় করছে
মুনের কিছু হলে মা আস্ত রাখবে না
মুন ভ্রু কুঁচকে বললো”ট্যুর তো আমি মরে গেলেও ক্যানসেল হতে দেবো না,দরকার হলে আপনি আমায় কোলে নিয়ে যাবেন,তাও আমি এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে দেবো না”
.
তোমায় এত ভাবতে হবে না,আমি অলরেডি প্রচুর টেনসনে আছি

হিয়ার ফোন এসেছে সেই আবারও
নীল গেছে শাওয়ার নিতে,মুন ফোনটা জ্বলছে দেখে অনেক কষ্টে বিছানা থেকে নামলো,গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে দেখলো আননউন নাম্বার
তাও আগ্রহ বশত রিসিভ করলো সে,,ওপাশ থেকে হিয়ার আওয়াজ পেয়েই মুন চিনে ফেললো
তার মানে এটা হিয়ার নাম্বার
.
এহেমএহেম!হ্যালো কে???হু আর ইউ??
.
মুনতাহা?নীল কোথায়?
.
আপনি কে?
.
আমি হিয়া
.
ওহ হিয়াপু!!নীল তো বাথরুমে গেছে,গোসল করতে
.
বিকাল বেলায় গোসল!
.
ইস আপু,এভাবে লজ্জা দাও কেন,লজ্জায় গিয়ে লিচু গাছে ঝুলতে ইচ্ছে করছে আমার
.
তুমি লজ্জা পেলে কেন?আমি তো অবাক হলাম কারণ নীল এ সময়ে গোসল করে না
.
ঐ আসলে আমরা তো টু…..
.
টু?
.
আমরা ট্রুথ ডেয়ার খেলসিলাম,তো আমি উনাকে গোসল করার ডেয়ার দিসি
.
একটু তো কেয়ার করো ওর,এসময়ে গোসল করলে নীলের নির্ঘাত ঠাণ্ডা লেগে যাবে
.
তাহলে তো আমারও হয়ে যাবে
.
তোমার কেন হবে?
.
ইস আপু আমাকে এতো লজ্জা কেন দিচ্ছো
.
হিয়া রেগেমেগে লাইনটাই কেটে দিলো
নীল বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মুন হাসতে হাসতে হাঁটার জন্য পা বাড়াতেই দুম করে নিচে পড়ে গেছে সাথে সাথে
.
আরে আরে,নামতে গেলে কেন?
.
মুন মুখের সামনে এসে পড়া বাধ্য চুলগুলো সরিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো”এই ব্যাথার কাছে আমার মনের সুখ কিছু না,আই এম সো হ্যাপি”
.
এত হ্যাপি কেন?
.
আপনি বুঝবেন না,আমাকে উঠান,পায়ে ব্যাথা একটু কমেছে মনে হলো
.
তাই পড়ে গেলে?
.
ও কিছু না,,আমি আজ কি পরে যাব একটু চুজ করে দিন না
.
জার্নিতে যাই পরা থাকুক এটা কোনো ব্যাপার না,,কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় কি পরবা ওটা মেইন
.
ভাবীরা সবাই দেখবে,বাসার জামা পরে তো আর যাওয়া যায় না
.
নীল মাথা নাড়িয়ে আলমারি খুললো,, মুন নীলের দিকে চেয়ে থেকে বললো”শুনুন”
.
জি বলুন
.
আমাকে কেমন লাগে আপনার?
.
আগে ভাল্লাগতো,এখন বেশি বেশি ঘাউড়ামি করো হিয়াকে নিয়ে তাই একটুও ভালো লাগে না
.
মুন মুখ বাঁকিয়ে পা ধরে নাড়াচাড়া করছে,নীলের কথা মাথায় ঢুকায়নি সে
নীল একটা হলুদ আর খয়েরী রঙের কম্বিনেশনের সেলোয়ার কামিজ বের করতে করতে বললো”অবশ্য এটাও মনে হয় যে কেউ একজন প্রেমে হাবুডুুবু খাচ্ছে”
.
আমি?তাও আপনার প্রেমে?জীবনেও না,আমার শখ নাই এমন একটা লোককে ভালোবাসার যে কিনা আরেকজনকে ভালোবাসে
.
তাহলে ভালো,,বাট এটা বুঝলাম না তুমি যখন আমাকে পছন্দই করো না,ভালো ও বাসো না তাহলে হিয়ার কথা আমি ভাবলে তোমার এত জ্বলে কেন?
.
আমার জ্বলে না,আমার বিরক্ত লাগে,কারণ আমি আপনার স্ত্রী,আমার সাথে কথা বলুন,আমাকে নিয়ে বলুন সমস্যা নেই বাট ঐ মেয়ের নাম নিতে হবে না,নাম নিলেই মেজাজ খারাপ লাগে অনেক

যে যার কার নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে,,সবার কার ভর্তি, নীলের কারে শুধু মুন,আর কেউ নেই
ভাবীরা বুদ্ধি করে ওদের একা ছেড়েছে
মুন গালটা ফুলিয়ে রেখেছে কারণ অন্ধকারে সে কিছুই দেখছে না,শুধু শুধু বসে আছে বলে তার মুডটাই অফ হয়ে আছে
নীল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটা গান প্লে করলো,,মোটামুটি ভালো হলেও মুনের একদমই ভালো লাগছে না
গায়ে কাঁটা দেওয়া রোমান্টিক গান মুনের ভাল্লাগে,যেমন ধরো আশিকি টু এর গানগুলো
মুন সুইচ টিপে সেই গানটা খুঁজে বের করে ফেলেছে
নীলের মনে পড়লো হিয়ার কথা,,হিয়াকে ডেডিকেট করে এই গানটা সে বহুবার গেয়েছিলো,হিয়া মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতো
হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে মুনের কোমড়ে হাত লেগে গেলো নীলের
মুন চমকে তাকালো,সাথে নীল ও,,হিয়ার চিন্তা গায়েব
মুন ঠিকঠাক হয়ে বসে আবারও জানালার দিকে ফিরে তাকালো,যেন কিছুই হয়নি
নীল নিজের হাতটা এপিঠ করলো,হিয়ার নাম লিখা সেখানে,ট্যাটু আকারে
এই ট্যাটু উঠিয়ে ফেলা যায় তবে নীল উঠায়নি
মুন আজও এই ট্যাটু দেখেনি,দেখলে তুলকালাম বাঁধাবে
নীল শখ করে লাগিয়েছিলো এটা আমেরিকাতে
কে জানত ট্যাটু লাগিয়েও মানুষটাকে সে পাবে না
মুন হঠাৎ চেঁচিয়ে বললো কার থামাতে
নীল হিয়ার চিন্তাকে আবারও এক সাইড করে মুনের কথায় কার থামালো,মুন বললো সে ফুচকা খাবে,পথে দেখেছিলো
নীল আর কি করবে,কার থামিয়ে এখন সে ফুচকা খাওয়াচ্ছে মুনকে
মুন নিজে খেতে খেতে একটা নিয়ে নীলের মুখে পুরে দিয়েছে
নীল প্রস্তুত ছিলো না,ফুচকা ওর ও ভাল্লাগে তবে হিয়ার সাথে সাথে ওর লাইফ থেকে অনেক কিছুই মুছে গেছে ফুচকা খাওয়াও উঠে গেছে,মুন হঠাৎ করে আবার মনে করিয়ে দিলো
নীল আরেকটা ফুচকা নিয়ে মুখে পুরতে পুরতে বললো”আমারও ভাল্লাগে”
.
মুন ফিক করে হেসে দিয়ে দেখলো নীলের ঠোঁটের কোনায় মরিচের বিচি লেগে আছে,টক খেতে গিয়ে লাগিয়েছে নীল
মুন হাত বাড়িয়ে হাতের পিঠ দিয়ে মুছে দিলো,তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো
নীল কিছুক্ষনের জন্য একটা ঘোরে চলে গিয়েছিলো
কারণ ওর মুখে এমন খাবার লেগে থাকলে হিয়া টিসু খুজে বের করে সেটা দিয়ে মুছে দিতো
আর মুন কিনা নিজের হাত দিয়েই মুছে দিলো
দুটো মানুষের মাঝে দুরকম তফাৎ,ভালোই
.
কি ভালোই?
.
কিছু না,চলো যাই,লেট হয়ে যাবে
.
মুন ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে গিয়ে কারে বসেছে,নীল ও এসে বসছে,, মুন বললো”আজ আমার জামাইর এক্স না থাকলে……”
.
না থাকলে?
.
থাক বলার ইচ্ছে নেই
.
জানো হিয়াকে নিয়ে আমি অনেকবার লং ড্রাইভে গিয়েছিলাম
.
তো?
.
তো আমি যে গান প্লে করতাম ওটাই ওর ভাল্লাগতো
.
একটা কথা বলি শুনেন,স্বামী স্ত্রীর সব মিললে তারা স্বামী স্ত্রী না ভাইবোন হয়ে যায়,এটা মাথায় রাখবেন,হিয়ার সাথে আপনার সব মিলতো বলেই ও আজ আপনার স্ত্রী না
আমি আপনার স্ত্রী,যার সাথে আপনার পানি খাওয়াও মিলে না
আমি পানি কম খাই,আর আপনি বেশি
.
কি লজিক রে বাবা!

রাত ২টোর সময় সবাই রাঙামাটিতে এসে হাজির,,মুনের পা ঠিক আছে এখন,মোচড়টা তারা বের হওয়ার আগেই সেরেছে
মুনের প্রচুর ঘুম পাচ্ছে তাও ভদ্রতার খাতিরে সে এখন রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে উর্মি ভাবীর পাশে
ভাবীরা সব একসাথ হয়ে আছেন,আর ভাইয়ারা সবাই আর নীল মিলে গেছে কাগজপত্রে সাইন করতে
মুন ঢুলে পড়ছে এমন অবস্থা
উর্মি ভাবী মুনের এমন কাজে হেসে বললেন”আরাফ আর তোমার মধ্যে তফাৎ অনেক কম”
.
মুন দাঁত কেলালো,আসলেই তো,আরাফ ঘুমাচ্ছে আর আমি ঘুমাতে যেয়েও পারছি না তাও দুজনের অবস্থা প্রায়ই একই রকম
নীল এসে বললো সব কাজ শেষ
এটা বলেই মুনের কাছ থেকে ব্যাগটা নিয়ে চললো,মুন ও পিছু পিছু আসছে
নীল দরজা খুলতেই মুন এক দৌড়ে বিছানায় চলে গেলো,বিছানায় শুয়ে মুখ তুলে দেখলো সে কতগুলো গোলাপের পাপড়ির উপর শুয়ে আছে,এসব দেখে তার ঘুম গেলো গায়েব হয়ে
মাথা তুলে ফুলগুলোর দিকে তাকানো শেষ করে এবার নীলের দিকে তাকালো মুন
নীল হা করে বললো”হানিমুন প্যাকেজ?”
.
আপনার আইডিয়া হতে পারে না এটা
.
হুম ঠিক,নিশ্চয় উর্মি ভাবী এমনটা করেছে
.
মুন ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো”চলেন হানিমুন করে ফেলি”
.
নীল নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলতে খুলতে বললো”আমরা যে আসছি এটা কি হানিমুন না?”
.
আপনাকে বোঝানো সম্ভব না
.
তোমার না খুব ঘুম পাচ্ছিলো?তো ঘুমাও না
.
হুম,আগে দেখতে দেন,প্রথমবার হানিমুনে এসেছি,রুমটার ডেকোরেশন তো উপভোগ করতে দিন একটু,আপনার ঘুম পেলে সাইডে এসে শুয়ে পড়েন
.
নীল জ্যাকেট খুলে গায়ের জামাটা চেঞ্জ করে আরেকটা পরে পাশে এসে শুয়ে পড়েছে ভালো ছেলের মতন,এদিকে মুন পুরো রুমটা দেখে রীতিমত অবাক হচ্ছে,কি সুন্দর করে সারপ্রাইজ দিলো তারা,আর নীলকে দেখো,সব মাটি করে দিছে
.
মুন চুপিচাপি নীলের ফোন নিয়ে টিপাটিপি করে সাইলেন্ট করলো তারপর শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লো সে
পরেরদিন সকালটা শুরু হলো নীলের রাগ দিয়ে আর তার রাগের কারণ হলো মুন তার ফোন সাইলেন্ট কেন করেছে সেটা
ফোন তো আর এমনি এমনি সাইলেন্ট হয় না
মুন নীলের এমন রাগ দেখে চুপসে গেছে
নীল আরও রেগেছে কারণ হিয়া ওকে ৪০বার কল করেছে
মুন একটা সময়ে কেঁদে ফেললো নীলের বকুনি শুনতে শুনতে
কাঁদতে কাঁদতে নাকের পানি চোখের পানি এক করে দিলো সে
নীল এবার থেমেছে,ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে ওয়াসরুমে চলে গেছে সে এখন
মুন চোখ মুছতে মুছতে বললো”প্রাক্তনের কল রিসিভ করতে পারে নাই বলে বউকে ঝাড়ি দিলো,আমি থাকবো না এখানে,কথা বলুন যত বলার”
.
মুন বিছানা থেকে নেমে বেরিয়ে চলে গেলো
নীল ওয়াসরুম থেকে বেরিয়েছে ৩০মিনিট পর
তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ফোন হাতে নিলো হিয়াকে কল দেবে বলে কিন্তু যখন তার মাথায় আসলো মুন রুমে নেই তখন সে ফোন রেখে ছুটলো বাহিরের দিকে
পরপর সব রুমে ভাইয়া ভাবীরা,এক এক করে সবার রুমে নক করে নীল সিউর হলো মুন ওখানে নেই
মাথায় হাত দিয়ে ছুটলো সে মুনকে খুঁজতে
ও বাচ্চামো করে এ ব্যাপার জানত
নীল,তবে এরকম টাইপের বাচ্চামো এখানে এসে করবে তা নিয়ে একটুও ভাবেনি নীল
বেশি বকেনি সে,আবার কম ও না,মুন এরকম রাগ করবে জানলে তার জেদ ভেতরেই লুকিয়ে রাখত নীল
.
এখন এই মেয়েটাকে কোথায় খুঁজবো আমি!কি একটা বিপদে ফেললো আমাকে
চলবে♥