স্মৃতির দেয়াল পর্ব-২৪+২৫

0
2320

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২৪
Writer -Afnan Lara
.
দূরের একটা ফাঁকা রোড দিয়ে মুনতাহা হেঁটে চলেছে,উদ্দেশ্য হলো হেঁটে হেঁটে ঢাকা ফিরে যাবে
এই লোকটার সাথে আর থাকা সম্ভব নাহ,অনেক কিছু করেও সে নীলের মন থেকে হিয়াকে মুছতে পারলো না
এই দাগ আজীবন থাকবে,মুনের বোঝা হয়ে গেছে
গায়ের সেই জর্জেটের ওড়না দিয়ে চোখের পানি মুছেও লাভ হচ্ছে না,চোখজোড়া বার বার ভিজে যাচ্ছে
খিধেতে পেটটা কেমন করছে,রাগের মাথায় এক গ্লাস পানি খাওয়াও হলো না তার
রাগে মন চাচ্ছে পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফ দিতে
কিন্তু নাহহহ! নীল আর হিয়ার খাতিরে আমি কেন নিজের জীবনটা দিয়ে দেবো??
দিব না!
.
এবার মুনের চোখ গেলো কতগুলো বখাটে ছেলের দিকে,মনে পড়ে গেলো বিয়ের দিনের কথা
সেদিন নীল ওকে তুষার আর কতগুলো ছেলের থেকে বাঁচিয়েছিলো
না বাঁচালেই হতো,বাঁচিয়ে এমন বন্ধনে আবদ্ধ করেছে যে এখন আমি নতুন করে বিয়েও করতে পারবো না
এত কষ্ট কিভবে সহ্য করবো?
.
ওমা ছেলেগুলো পিছু নিয়েছে কেন?এরকম নির্জন এরিয়াতে একা বের হওয়া মানেই বিপদ,আমার বেলা তো ডাবল বিপদ,এখন তো নীল ও নাই,আমার কথা তার মনে আছে কিনা তাও তো জানি না
সবসময় তো হিয়ার কথা ভাবে,আমাকে মনে হয় ভুলেই গেছে
.
ছেলেগুলো সামনে এসে পড়লো,,এবার কি করবো??
নীল যদি থাকত!!
নাহ উনার হেল্প আমি কেন নিব,আমি নিজেই নিজেকে সেফ করতে পারি
.
কিগো ললনা!
.
মুন ঢোক গিলে দৌড় দিলো,নিজেকে সে সেফ করতে পারে দৌড় মেরে,ঐবার পিছন ফিরে দৌড় দিয়েছিলো,এবার সোজা দৌড় দিয়েছছে কারণ সে ঢাকায় ফিরবে
কে বলতে পারে দৌড়াতে দৌড়াতেই ঢাকায় পৌঁছে গেলো
বাহ মুন তোর বুদ্ধির তারিফ করতে হয়
ওয়াহহহ!
.
মুন দৌড় থামিয়ে পিছন ফিরে দেখলো একটা ছেলে ও নেই,দম ফেলে সামনে তাকাতেই কলিজা ধরে গেছে ওর
ছেলেগুলো সব নাহলেও তাদের মাঝের একজন ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে এখন
সে সাত পাঁচ না ভেবেই সোজা মুনের হাতটা ধরে বললো”তোকে আজ বাসায় নিয়ে যাবো,ভাত রেঁধে খাওয়াবি”
.
মনে হচ্ছে মাথার তার ছিঁড়া
.
মুন হাত মুছড়াতে মুছড়াতে বললো”পাগলের ভাত নাই”
.
আমি পাগল না,কিন্তু তোর পাগল,এমনিতে সব ঠিক আছে,আজ তোকে আমার লাগবে
.
মুনের ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে,চেঁচাতে গিয়ে নিজের মুখ বন্ধ হয়ে গেলো এমন নির্জন এলাকা দেখে,কোথাও একটা পিঁপড়া পর্যন্ত নেই
.
ছেলেটার সাথে হাতাহাতি করতে গিয়ে মুন বেশ বড় রকম চোট পেয়েছে
ছেলেটা যে সত্যি সত্যি পাগল টা প্রুভ করেই দিলো
তার হাতের সিলভার ব্রেসলেটটার দরুন মুন হাতে চোট পেয়েছে,ছেলেটা হাতাহাতির এক পর্যায়ে ব্রেসলেট খুলে মুনকে ভয় দেখাচ্ছিলো কারণ তার ব্রেসলেট ধারালো ডিজাইন করা ছিলো,কোন খবিশ এমন ব্রেসলেট পরতে পারে তাই ভেবে পাচ্ছে না মুন
মুন হাতের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় করে ছেলেটাকে চড় মেরে বললো”এত বেয়াদব কেন আপনি!”
.
ছেলেটা চড় খেয়ে আরও রেগে গেছে,মুনের সেই চোটে খাঁমছে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে ওকে নিজের বাড়ির দিকে
মুন এবার মুখ খুলে নীলকে ডাকলো কারণ তার পক্ষে আর কষ্ট সহ্য করা সহজ হচ্ছিলো না,এখন মনে হলো হিয়ার নাম সারাদিন শুনা আরও ভালো!
ছেলেটার বাড়ি আর এক মোড় ঘুরলেই,মুন বারবার নীলকে ডাকছে
একটা সময়ে পাগল ছেলেটার হাত ছাড়িয়ে মুন জান নিয়ে দৌড় দিলো সেই আবারও,পাগল বলেই হাতটা ছাড়াতে পেরেছে
এবার নীল আসতে এত দেরি কেন করছে তাই মাথায় ঢুকছে না ওর,এর ভিতরে পাগল ছেলেটা আবারও ছুটেছে ওকে ধাওয়া করে
মুন যেতে যেতে নীলের গায়ের সাথে ধাক্কা খেলো
নীলকে দেখে যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছে মুন,শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে
.
এত দেরি কেন করলেন আসতে,ঐ পাগলটা আর একটুর জন্য আমার জীবন শেষ করে দিতো
.
পাগলটা এসে হাজির,সে নীলের দিকে আঙ্গুল তুলে বললো”এই পোলা তুই কে??কোথা থেকে আসছিস?আমার বউরে আমার হাতে দিয়ে চলে যা নাহলে তোরে পুলিশে দেবো”
.
মুন নীলের পিছনে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে
নীল পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো”পুলিশে দিবে?”
.
হুম দিবো
.
তো দাও
.
ছেলেটা ব্রু কুঁচকে তাকালো নীলের দিকে
নীল পকেট থেকে গান বের করে একবার ঘুরিয়ে ছেলেটার দিকে তাক করে বললো”পুলিশকে পুলিশে দাও”
.
ছেলেটা ঢোক গিলে বললো”তুমি পুলিশ এটা বিশ্বাস করি না আমি,তোমার গায়ে পুলিশের জামা নেই”
.
যখন গুলি গিয়ে কপালের মাঝখানে টিপের মতন পড়বে তখন বুঝবে আমি পুলিশ নাকি অন্য কিছু
.
ছেলেটা নীলের কথার তোয়াক্কা না করে এগিয়ে আসলো মুনের দিকে
মুন নীলের শার্টটা খাঁমছে ধরে বললো”এই লোকটা আমাকে ব্যাথা দিয়েছে”
.
কি করেছে?
.
মুন হাত বাড়িয়ে দেখালো,নীলের মাথা গেলো গরম হয়ে,গানের পিঠ দিয়ে দুম করে ছেলেটার মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে দিলো সে
পাগল তো পাগলই,সামান্য বাড়িতেই সে কাত হয়ে গেছে
মুন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো”কানে ধরেছি আর জীবনে আমি পালাবো না”
.
নীল মুনকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো”তোমার ডিভোর্স চাই তাই না?ফাইন,আমি তোমায় দেবো ডিভোর্স,চলো এখন”
.
নীল মুনকে সাথে নিয়ে চললো,পাগলটাকে অজ্ঞান হতে দেখে মুনের যা ভালো লাগছিলো শেষে নীলের এমন কথা শুনো তার ভালো লাগা গায়েব হয়ে গেছে
.
কি বললেন?আমাকে ডিভোর্স দিবেন?
.
নীল হাঁটতে হাঁটতে সোজা পথের দিকে চেয়ে বললো’হুম”
.
দিতে পারবেন?
.
বাধ্য করলে
.
সরি
.
এটা ঠিক করোনি আজ,,তোমার হাতে চোট দিয়েছে ছেলেটা,আরও খারাপ কিছু হতে পারতো
.
আর পালাবো না সত্যি
.
ডিভোর্স দিয়ে দিব,কারণ আমি এমনিতেও হিয়া হিয়া করবো সবসময়,আর তুমি ডেইলি ঘ্যানঘ্যান করবে এটা নিয়ে
না আমার সহ্য হচ্ছে না তোমার
সো এসব কিছুর মুক্তি আমি দিয়ে দেবো
.
নীল মুনকে হোটেলে নিয়ে আসতেই ভাবীরা সব একজোট হয়ে জানতে চাইলেন মুন ঠিক আছে কিনা,কোথায় গিয়েছিলো কেন গিয়েছিলো
মুন চুপচাপ নীলের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে চোরের মতন
.
নীল গালটা ফুলিয়ে মুনের হাত ধরে রিসিপশানের পাশে থাকা সোফায় বসিয়ে দিলো তারপর চলে গেলো ফার্স্ট এইড বক্স আনতে
উর্মি ভাবী মুনকে জিজ্ঞেস করলেন যে কি হয়েছে,মুন ভয়ে মুখ খুলছে না
নীল মুনের হাত টেনে ধরে বললো”দেখো ভাবী,ভাইয়া,এরকম করার কোনো মানে আছে??রাগ করে ভালো কথা,তাই বলে এরকম টাইপ রাগ করবে??আমাকে কি ওর নিজের বয়সী মনে হয়?আমি ওর থেকে ৭/৮বছরের বড়,তাহলে কোন দিক দিয়ে ও আমাকে সমবয়সী ভাবে,আমি কিছু বললেই তার রাগ দেখাতে হবে
এবার তো লিমিট ক্রস করে ফেলেছে,এরকম নির্জন একটা জায়গায় কিনা রাগ করে বেরিয়ে পড়লো
দেখো তোমরা!! বখাটে ছেলে একটা ওর হাতের কি হাল করেছে,আর দেরি হলে এরকম দাঁড়িয়ে থাকার মতন অবস্থাতেও থাকতো না সে
.
মুন নাক টেনে বললো”রাগ উঠান কেন আপনি?সারাদিন হিয়া হিয়া করেন কেন?
জানো উর্মি ভাবী! উনি আমাকে সকালে হিয়ার জন্য কতগুলো কথা শুনালেন”
.
উর্মি ভাবী মুনের হাতটা এপিঠ ওপিঠ দেখতে দেখতে বললেন”নীল?দোষ কি একার মুনের?তোমার তো দোষ আরও বেশি দেখছি আমি
হিয়াকে যখন মনে গেঁথেই রেখেছো তখন মুনকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছো কেন,কি কারনে বিয়ে করলে?
বিয়ে করেছো ভালো করেছো,এবার ওকে নিজের স্ত্রীর অধিকার টা তো অন্তত দাও
পৃথিবীর কোনো মেয়ে এটা সইবে না যে তার স্বামী বিয়ের পরেও প্রাক্তনের প্রেমে মগ্ন থাকে
মুন এতদিন সহ্য করছে এটাই অনেক
.
হ্যাঁ!!অনেক সহ্য করেছে ও,আর না,আমি ওকে মুক্তি দিয়ে দিব,বিয়ে করে ভুল করেছি
আমি ডিভোর্স দিয়ে মুক্তি দিব,ওকে আমি টাচ করিনি এখনও,ভালো ছেলের সাথেই বিয়ে দিতে পারবো আবার
.
মুন এক ধমক দিলো নীলকে,তারপর বললো”ব্যস অনেক হয়েছে,আমাকে নিয়ে অনেক ভেবেছেন আপনি,আর না”
.
মুন হাতে ব্যান্ডেজ না লাগিয়েই চলে গেলো রুমের দিকে
.
উর্মি ভাবী আরাফকে কোলে নিয়ে বললেন”পপি,মিশু?যে যার রুমে যাও,আমরা বিকেলবেলা ঘুরতে বের হবো
আর নীল!মুনকে বুঝার চেষ্টা করো,দুজনেই মুখ ফিরিয়ে নিলে সম্পর্কটা অদৃশ্য হয়ে যাবে”
.
সবসময় আমি কেন ওকে বোঝার চেষ্টা করবো?ও কেন আমাকে বুঝতে চায় না,আমার কত টেনসন হচ্ছিলো ওকে এমন একটা জায়গায় হারিয়ে,এর আগেও ও এই জায়গায় এমন করে বিপদে পড়েছিলো,ঠিকসময়ে আমি থাকায় ওকে বাঁচাতে পেরেছি
আর আজকে ওকে পেতে দেরি হওয়ায় আমার কলিজা বের হয়ে আসছিলো,ও কেন বুঝে না ওর কিছু হয়ে গেলে….
.
কিছু হয়ে গেলে??
.
নীল শক্ত চোখে উর্মী ভাবীর দিকে তাকিয়ে আছে,তারপর চোখের পলক ফেলে বললো”কিছু না,মুনতাহা আমার দায়িত্ব এর বেশি কিছু না”
.
নীল ও চলে গেলো,উমি ভাবী মুচকি হেসে বললেন”এত টান???
হিয়া তু তো গেয়া!!!বিকজ মুন আগেয়া!!”

মুন বিছানায় বসে আছে মুখটা চালকুমড়ো করে
নীল রুমে ঢুকতেই সে আরেকদিকে ফিরে গেলো
নীল দরজা লাগিয়ে এগিয়ে আসলো ওর দিকে
মুনের তো ভয়ে গলা শুকিয়ে শুকনো কাঠ হয়ে গেছে নীলকে এদিকে আসতে দেখে
নীল মুনের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো পাশে থাকা ডিভানের দিলে
ওকে ওখানে বসিয়ে দিয়ে বললো”আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাবে না”
.
কিহ বললেন?
.
তুমি তো বললে তোমার ব্যাপারে আর না ভাবতে
বিছানায় শুয়ে তো তোমার আরাম হবে ভেবেই তো আমি এতদিন তোমাকে কিচ্ছু বলিনি,বাট এখন আর কিছু ভাববো না,কারণ তুমি সেটাই চাও,সো সোফায় শোও
আমার সাথে শুতে হবে না
তোমাকে বুঝতে হবে তোমাকে আমি এতদিন অনেক অধিকার দিয়েছি যেটা আমার জায়গায় অন্য নীল থাকলে করতো না
.
হেল্প করে কোঁটা দিচ্ছেন?
.
যা খুশি মনে করো,বাই!
.
নীল বিছানায় বসে ফোন কানে ধরলো,মানে হিয়াকে ফোন করছে??

মুনের মেজাজ অনেক গরম হয়ে গেছে
হনহনিয়ে সোফা থেকে নেমে নীলের থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো সে
তারপর বললো”হ্যালো?”
তোর আর কাম কাজ নেই?তোর বুঝতে কষ্ট হয় যে তোর প্রেমিক বিয়ে করেছে?তাহলে আবারও বলছি হ্যাঁ নীল বিয়ে করেছে,মুনতাহাকে,যেমনটা তুমি সাকিবকে করেছো
এরকম কথায় কথায় ফোন দিয়ে আমাদের ডিস্টার্ব করবা না!
কি হলো কথা বলো না কেন?
.
বলবে কি করে?আমি তো হিয়াকে কলই করি নাই,
.
মুন ফোনটা নীলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো”তাহলে কানে ধরলেন কেন?”
.
আসিফ আমাকে ভয়েজ মেসেজ দিয়েছিলো সেটা শুনার জন্যই কানে ধরেছিলাম
.
মুন রেগে চলে গেলো আবার সোফায়,,
.
নীল গায়ের শার্টটা খুলে পিঠ চাপতে চাপতে বললো”হিয়াকে এসব বলবা না কখনও,আমি ওর সাথে ধমক দিয়ে কখনও কিছু বলি নাই”
.
আমাকে যে দিনে দশবার ধমক দেন সেটা?
.
কারণ তুমি আমার স্ত্রী
.
মুন মুখটা ফুলিয়ে চুপ করে থাকলো,পরে মাথায় আসলো ওর আর হিয়ার মাঝের তফাৎ টা নীল নিজের মুখে বললো আজ!!
বিশ্বাস হচ্ছে না
.
নীল বারবার পিঠ চাপছে,মানে নিশ্চয় ব্যাথা করছে??
মালিশ করে দেবো?
না থাক!লোকটা খুব খারাপ,হিয়াকেই বলুক না,আমার কি
.
নীল ব্যাথায় কুকড়িয়ে বললো”এই বিছানায় প্রব্লেম আছে,আমার পিঠে প্রচণ্ড ব্যাথা করছে,সকাল থেকে একটু একটু ছিল,এখন অনেক বেড়ে গেছে”
চলবে♥

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২৫
Writer -Afnan Lara
.
বেশ হয়েছে,এবার হিয়া আসছে না কেন মালিশ করে দিতে?এসবে তো বউ কাজে লাগে,এসব ভেবেও তো মানুষ বউয়ের কদর করা শেখে,অবশ্য কাকে নিয়ে ভাবছি!!
এর কাছে তো বউয়ের চেয়ে এক্সের দাম বেশি
.
নীল চুপ করে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে
মুন বেশ কিছুক্ষণ ধরে নীলকে লক্ষ করছে,,হঠাৎ দরজায় নক হতেই সে উঠে গিয়ে দেখলো হোটেলের লোক এসেছে খাবার দিতে,মুন খাবারের ট্রেটা হাতে নিয়ে বললো”গরম তেল পাওয়া যাবে?মালিশ করার?”
.
জি ম্যাম
.
তাহলে প্লিস নিয়ে আসুন,আমরা এক্সট্রা পে করবো
.
লোকটা চলে গেলো,মুন খাবারের ট্রেটা রেখে বললো”নিন খান”
.
নীল যেন শুনলোই না,মাথাটা বালিশের নিচে নিয়ে চুপ করে আছে সে
পনেরো মিনিট পর লোকটা আবার আসলো গরম তেল নিয়ে
মুন তেল হাতে নিয়ে দরজা লাগালো,তারপর নীলের দিকে তাকিয়ে বললো”শেষমেষ ঐ বউ কাজে আসছে,কোনো প্রেমিকা নয়”
.
নীল তাও কিছু বলছে না,মুন কাছে এসে বসলো,তারপর হাতে তেল ঘষে নীলের পিঠ থকে কাঁথা সরিয়ে সেখানে মালিশ করা শুরু করতেই নীল মাথা তুলে বললো”আমার কেয়ার করতে হবে না,সকল ব্যাথা সহ্য করতে পারি আমি”
.
আমাকে ঐ পাগলের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন ঠিক সেই খাতিরে আমি এখন মালিশ করছি,ব্যস এর বাহিরের কিছু না
আপনার প্রতি আমার কেনো ভালেবাসা নেই,শুধু ঋন চুকাচ্ছি আমি
.
নীল চুপ করে থাকলো,তার ভালো লাগছে মালিশে,,মুনের হাত নরম,আর ছোট হওয়ায় নীলের আরামটা অধিক বেড়ে গেছে
মুন নীলের পিঠ দেখে রীতিমত ক্রাশিত,,মনে হয় যেন লোক লাগিয়ে পিঠকে এত স্মুথ বানিয়েছে,এত সুন্দর মানুষের পিঠ হতে পারে তা নীলের পিঠ না দেখলে মুনের বিশ্বাসই হতো না
পিঠ দেখতে দেখতে সে মালিশ করে যাচ্ছে
.
নীল ঘুমিয়ে পড়েছে,সাথে মুন ও,তাও নীলের ঠিক পাশেই
দুপুর ২টোর দিকে নীলের ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো,চোখ খুলতেই তার চোখ গেলো সবার আগে মুনের উপর
মুন একদম ওর পাশেই শুয়ে আছে,চোখে রাজ্যের ঘুম তার
নীল সাথে সাথে সরে গেলো,তারপর পিঠে হাত দিয়ে বুঝলো ব্যাথা অনেকটা কমে আসছে
মুনের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো নীল,মুনের কারণেই এখন তার একটু ভালো লাগছে,খাবার যেমন আনা হয়েছে তেমনি আছে,নীল ও খায়নি,মুন ও না
নীল বিছানা থেকে নেমে শার্ট গায়ে দিয়ে বারান্দায় আসলো,,সুন্দর বাতাস এসে গায়ে লাগছে প্রতি এক মিনিটে
ফাগুনের এই সময়টায় একটা বাতাস আসে,এত সুন্দর তা বলার বাহিরে
পাহাড়ি অঞ্চলে তো মনে দোল খেলে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়,রাঙামাটির কোণা কোণার সাথে নীল পরিচিত
কারণ পুলিশ হওয়ার পরে তার প্রথম পোস্টিং হয়েছিলো রাঙামাটিতে
কম বেশি সবাই নীলকে চিনে এখানে,,নীল নিচে তাকাতেই একটা লোককে দেখলো পিঠে কাঠ নিয়ে যাচ্ছে,উনি নীলকে দেখে থেমে গিয়ে বললেন”স্যার কেমন আছেন?”
.
ভালো,আপনি?
.
ভালো,,তা আপনি এই হোটেলে??বিয়ে করলেন নাকি?
ম্যাডামকে সাথে করে এনেছেন?
.
নীল হালকা হেসে বললো”করতেই হলো”
.
খুব খুশি হলাম আপনার বিয়ের কথা শুনে,ম্যাডামকে নিয়ে আমার বাড়িতে আইসেন
.
বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে লোকটা চলে গেলেন
নীল পিছন ফিরে মুনের দিকে তাকালো
মুন উঠে গেছে ততক্ষণে,,নীলের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে ডিভানে এসে বসলো সে
.
নীল রুমে এসে মুনে দিকে তাকিয়ে ওর পাশে বসলো ডিভানের উপর
.
কি চান আবার?এবার কি ফ্লোরে বসাবেন?
.
নীল মুনের চোট আলা হাতটা ধরলো,তারপর শান্ত গলায় বললো”শুনো তাহা,,আই এম সরি,আমার ওভাবে রিয়েক্ট করা উচিত হয়নি”
.
আপনি ডিভানে শুবেন,আর আমি বিছানায়
কথাটা ঠিক থাকবে,যা বলে ফেলেছেন তা আর ফেরত নেওয়া যাবে না,, যায় ও না
আলাদাই শুবো আমরা
জানি তো কেন আলাদা করে দিলেন,নিশ্চয় হিয়া কিছু বলেছে
.
কাল শপিংমলে হিয়ার সাথে মিট হওয়ার পর থেকে ওর সাথে আর কথা বলিনি আমি
.
মিথ্যা বলবেন না আপনি,হিয়ার সাথে কথা না বলে- না আপনি থাকতে পারেন -না হিয়া পারে
আপনি তো আমাকে বিয়ে করেছেন আপনার আর হিয়ার প্রেমলীলা দেখানোর জন্য
.
কথা শেষ করে মুন বিছানায় গিয়ে বসলো
নীল খাবার নিয়ে বসেছে খাওয়ার জন্য
মুন এখনও চুপ করে আছে এবং ওর খাওয়া দেখছে
নীল হঠাৎ উঠে এসে মুনের পাশে বসে বললো”হা করো”
.
হিয়া জানলে মরে যাবে
.
হা করো,আমি খাইয়ে দিচ্ছি
.
এত আদর??কিসের জন্যে?
.
কেন?আমি কি আমার ওয়াইফের কেয়ার নিতে পারি না?
.
হ্যাঁ পারেন,তবে হিয়াকে ভুলে গিয়ে আমাকে কেয়ার দেখাতে আসবেন তার আগে না,আমি আপনার হাতে কিছু খাবো না
.
মুন উঠে চলে গেলো ফ্রেশ হতে,রেডি হয়ে নেবে কারণ বিকালে সবাই ঘুরতে যাবে বলেছিলো
.
নীলের খারাপ লাগলো,পরে মাথায় আসলো হয়তবা মুনের জায়গায় অন্য মেয়ে হলেও এমন করতো
.
মুন বেশ কিছুক্ষন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বালতি ভর্তি করতে পানির কল অন করার জায়গায় ভুলে শাওয়ারটাই অন করে দিলো ,তারপর তাড়াহুড়ো করে সেটা অফ ও করলো কিন্তু ততক্ষণে সে ভিজে গেছে
ওড়না দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলো মুন
নীল খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে পিছন ফিরতেই মুনকে দেখলো আধভেজা অবস্থায় ব্যস্ত হয়ে নিজের জামা বের করছে ব্যাগ থেকে
.
ভিজলে কি করে?
.
আপনাকে কেন বলবো?
.
নীল চুপচাপ শার্টের উপর দিয়ে জ্যাকেট পরছে,মুন এবার বেশি বেশি করছে,এরকম রুড বিহেভ করার কি দরকার??হাসবেন্ড হই ওর,ঠিক করে কথা বললেই পারে
.
মুন একটা আকাশি রঙের থ্রি পিস পরে বললো”চলুন”
.
কিছুই খেলে না
.
খাব না,আপনার কি?
.
না খেলে আজ তুমি ঘুরতে যাবে না,কাল রাতেও কিছু খাওনি,সারাদিন গিয়ে এখন বিকেল চারটা বাজে
.
না খেয়ে মরে যাব,তাও আপনার এত কেয়ার করতে হবে না আমার,হিয়াকে কল করে জিজ্ঞেস করেন খেয়েছে কিনা,আপনি তো আবার কাল থেকে নাকি ওর সাথে কথা বলেন নি
.
ফাইন!আজকে তুমি এখানেই থাকবে

নীল হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে,বের হয়ে বাহিরে দিয়ে রুম লক করে চলে গেলো,,ভাইয়া ভাবীরা সবাই ঘুরতে বেরিয়েছে,একসাথে আসলেও সবাই যে যার মতন জায়গায় ঘুরছে,তাই নীল মুনকে নিয়ে বেরিয়েছে নাকি বের হয় নাই তা কেউ জানে না
মুনের খুব খারাপ লাগছে,নীল এতটা খারাপ কি করে হতে পারে
খাবার খাইনি বলে আমাকে বন্দি করে চলে গেলো
আমি এখন একা একা কি করে থাকবো
.
নীল আশেপাশের একটা পাহাড় দেখতে এসেছে,চুপচাপ সেখানে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছে সে এখন
মাঝে মাঝে ফোন বের করে একটা দুটো ছবি তুলছে
হোটেলের ইলেক্ট্রিসিটি গেছে পানিতে,,নীল যাওয়ার এক ঘন্টার মাঝেই সকল লাইন চ্যুত
মুন এতক্ষণ টিভি দেখছিলো,তার এবার আরও রাগ হচ্ছে নীলের উপর
সন্ধ্যা নেমে এসেছে কেউই আসছে না
মুন গায়ে কাঁথা জড়িয়ে টেবিলে থাকা খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে
তার জীবনে এত কষ্ট লেখা আছে জানলে সে তুষারকেই বিয়ে করতো
নীল এখনও আসছে না,রাত হয়ে গেছে,ভাবীরা ভাইয়ারা সবাই কই,আমাকে কি তাদের মনে নেই??
নীলের তো নিশ্চয় মনে নেই
এত অন্ধকার,একটা মোমবাতি নেই,কারেন্ট কখন আসবে
ভয় করছে অনেক,আমার দোষ,আমি কেন খাবারের উপর রাগ করলাম,লোকটা মুখ ফুটে যাই বলে তাই করে এটা তো জানি আমি,তাহলে রাগ দেখালাম কেন?
কত বড় খারাপ লোক হলে নিজের ওয়াইফকে ঘুরতে এনে রুমে বন্দি করে নিজে চলে যেতে পারে?
আমি এতই খারাপ তার কাছে?হিয়ার এত দাম??
.
মুন কাঁদতে কাঁদতে বিছানার এক কোণে শুয়ে পড়েছে,খাবার খাবারের জায়গায় পড়ে আছে
নীল ফিরলো ৮টার দিকে
এসে দেখলো রিসিপশানে মোমবাতি জ্বলে
সে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো বিকেল থেকে কারেন্ট নেই
ভাইয়া ভাবীরা ও ফিরছে এক এক করে
পপি ভাবী নীলকে দেখতে পেয়ে মুনের কথা জিজ্ঞেস করলেন
নীল বললো সে মুনকে সবেমাত্র রুমে রেখে এসেছে
.
ভাবী আর কিছু জানতে চাইলেন না,চলে গেলেন,নীল একটা মোমবাতি হাতে রুমে ফেরত আসলো
রুমের দরজা খুলতেই তার নিজের বুকটা কেঁপে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে
পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই
আজ কি সে বেশি করে ফেললো?
মোমবাতিটা টেবিলের উপর রাখতে গিয়ে খাবারগুলো দেখলো নীল
তার মানে খাবার ও খায়নি
.
নীল দরজা লাগিয়ে মুনের পাশে এসে দেখলো ও ঘুমাচ্ছে
নীল ওর গায়ে কাঁথা টেনে দিতেই মুন জেগে গিয়ে একটু পিছিয়ে বললো”কে?”
.
আমি
.
মুন মোমের আলোয় কোনোরকম নীলকে চিনলো তারপর মুখটা ভার করে আবারও শুয়ে পড়লো
নীল কি যেন ভেবে মুনকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো”মুন আমাকে মাফ করে দাও,আমি জানতাম না বিকেল থেকে এখানে কারেন্ট ছিল না,এতটা সময় তুমি একা ছিলে ভাবতেই খারাপ লাগছে অনেক”
.
বাদ দিন,আমি এমনিতেও আপনার শুধু দায়িত্ব ছাড়া আর কিছু না
দায়িত্ব জিনিস ফ্লোরে রাখলেও কি,বিছানায় রাখলেও কি,সেটা না ভাঙ্গলেই হয় এটা দেখার বিষয়
.
মুন নীলকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে একটু দূরে সরে গেলো
নীলের খুব খারাপ লাগছে,নিজেই নিজেকে দোষারোপ করছে সে এখন
মুন প্রচুর কেঁদেছে আজ,তাই আর এখন চোখ দিয়ে পানি আসছে না তার
সে বুঝে গেছে নীলের কাছে তার বিন্দুমাত্র দাম নেই,কদর নেই,নাহলে এতটা কেউ করতে পারে না নিজের ওয়াইফের সাথে
মুন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চোখটা খুলতেই কিসের যেন কান্নার আওয়াজ পেলো
চমকে উঠে বসলো সে
কে কাঁদছে?
.
সামনে তাকিয়ে দেখলো বারান্দায় নীল দাঁড়িয়ে থেকে বারবার চোখ মুছতেছে
আমি কি স্বপ্নে দেখতেছি নাকি সত্যি উনি কাঁদছেন,হিয়া কি মরছে নাকি
মুন এগিয়ে এসে বললো”কি হয়েছে হিয়ার?”
.
নীল মুনের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো”খুব কষ্ট দিয়েছি তোমায়,আর কখনও এমন হবে না মুন”
.
মুন মনে মনে ভাবলো তার জন্য কাঁদছিলো তাহলে
.
নীল মুনকে জড়িয়ে ধরেছে এ প্রথম সেটা মুনের মাথায় নেই,তার মাথায় ঢুকছে না নীল হঠাৎ বদলে গেলো কেন
.
নীল কাঁদতে কাঁদতে বললো”সেও অন্ধকারে অনেক ভয় পায়,তার শরীর খারাপ হয়ে যায় অন্ধকার দেখলে
তাহলে নিশ্চয় মুনের ও খারাপ লেগেছে,ভয় পেয়েছে সে
.
মুন নীলকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো”জড়িয়ে ধরলে এতক্ষণ যে আমি কষ্টে ছিলাম সেটা ঠিক হয়ে যাবে?
আর কত আমাকে কষ্ট দিবেন আপনি??আর কত?”
.
নীল নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছতেছে চুপচাপ
ছেলেদের জীবনেও কাঁদতে দেখেনি মুন,এ প্রথম দেখলো
আর নীল এরকম ইমোশনাল হয়ে গেছে কেন সেটাই ভেবে পাচ্ছে না মুন
নীলকে টেস্ট করতে সে বললো”আপনার তো খুশি হওয়া উচিত,আমাকে এরকম ফেলে রেখে ঘুরতে গেলেন এটা যদি হিয়া শুনে সে তো খুশিতে মরেই যাবে”
.
নীল চোখ মুছে মুনের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ চলে গেলো রুমে,সেখানে এক কোণায় বসে বললো”মাফ করে দাও প্লিস,তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমার নিজের আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে এখন ”
.
শেষে সরি বলতে সবাই পারে,সরি টা যেন না বলতে হয় এমন প্রতিজ্ঞা কজনে করে?
.
(ওদের মিলটা শীঘ্রই হবে)
চলবে♥