স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২৮
Writer -Afnan Lara
.
আমি মাঝে মাঝে বুঝে পাই না যে আপনি এক দিক দিয়ে হিয়াকে ভালোবাসেন আরেক দিক দিয়ে ওর কাছে ফিরে যান না,আবার আমাকে বিয়ে করে আমাকেও কষ্ট দিচ্ছেন,কেন বলুনতো?
.
তোমার এত কিছু বুঝতে হবে না,ধরো আমার রুমাল,ভালো করে চুল মুছো
.
মুন রুমাল দিয়ে চুল মুছে চুলে এক ঝাড়া দিয়ে দিলো,নীল হাত দিয়ে নিজের মুখ মুছে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই
মুন বললো”জানি এখন বলবেন হিয়া ও কত চুলের পানির ঝাড়া দিয়েছিলো”
.
জি না,আমি সেটা বলবো না, কারন হিয়া এমন করেনি কখনও
.
মুন দাঁত কেলিয়ে মনে মনে খুশিতে মরে যাচ্ছে,মুনের গালে এমন হাসি দেখে নীল ও হাসলো
♣
তারা হিলটপ রিসোর্ট এ এসে গেছে,দুপুর দুটো বাজে তখন
মুন রুমে ঢুকে হাতের শাড়ীটা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেছে
নীল বারান্দায় এসে বড় করে একটা শ্বাস নিলো
কি ভালো লাগছে তার,অবশ্য কাপ্তাইতেও ভালো লেগেছিলো
মুনের কারণে হুটহাট প্ল্যান চেঞ্জ হয়ে যায় আজকাল
.
ওর কথা মাথায় আসলো তাই নীল মুচকি হেসে পিছনে তাকাতেই আটকে গেলো মুনকে দেখে
মুন নীলের দেওয়া শাড়ীটা পরে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে
নীল বাঁকা হাসি দিয়ে বললো”বেশ তো”
.
হুম বেশ,এবার খাবারের ব্যবস্থা করুন,অনেক অনেক খিধে পেয়েছে আমার
.
নীল ফোন হাতে নিয়ে বিছানায় এসে বসে কল করলো রুম সার্ভিসে,নিচে গিয়ে খাবার আনার ঝামেলাতে জড়ালো না সে
কথা শেষ করতে না করতেই নীলের ফোন বাজলো একটা আননউন নাম্বার থেকে কল এসেছে,নীল রিসিভ করেই শুনতে পেলো মুনের মায়ের গলা
প্রথমে চিনতে পারেনি সে,পরে যখন বললো”মুনতাহাকে দাও আমি ওর মা,,” তখন চিনলো সে
.
নীল অবাক হলো,কারণ উনি যাতে জেল থেকে না বের হতে পারেন সেই নিয়ে পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে এসেছিলো নীল,তাহলে কি করে বের হলেন তাই বুঝলো না সে,মুনের হাতে ফোন দিয়ে সে ভাবলো আসিফের সাথে কথা বলবে
এত জলদি জামিন পেলো কি করে মাথায় ঢুকছে না
.
মুন হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সেলিনা বললেন”খুশি তো তুই?তোরে আমি সেই ছোটকাল থেকে বড় করেছিলাম,যখন তোর মা তোরে জন্ম দিয়ে মরেছিলো,এইটুকুর খাতিরেও তো মানুষ সৎ মায়ের কদর করে
কিন্তু তুই কি করেছিস,ছিঃ!এটা ঠিক করিসনি,আমাকে একবার দেখতে পর্যন্ত আসলি না,তুই জীবনে সুখী হবি না
তোর ঐ স্বামী তো আমাকে জেলে পুরেছিলো,দেখিস ঐ স্বামী তোকে একদিন বাসা থেকে ধাক্কা মেরে বের করবে
সেদিন তোর জায়গা আমার বাসাতেও হবে না
যে মেয়ে মায়ের কদর করে না তাকে আমি আমার বাসায় ঠাঁই দেব না
দরকার হলে তোর বাবার কাছে দুটো অপশান দেবো,হয় আমি নয় তুই,দেখি তখন সে কি করে
.
মুন থ মেরে বসে আছে মায়ের সব কথা শুনে,নীল মুনের থেকে ফোন নিয়ে আসিফকে কল করে রাগারাগি করলো কেন জামিন দিয়েছে সেটা নিয়ে
আসিফ বললো ওরা নাকি নাম করা উকিল ধরিয়েছে,কেসটা হ্যান্ডেল করাই যাচ্ছিলো না,তুষার তো জেলে দুইশবার ঘুরপাক খেয়েছে এই জামিন নিতে
.
মুনের খিধে গায়েব হয়ে গেছে,ঢোক গিলে সে নীলের মুখের দিকে চেয়ে রইলো,এই ছেলেটা আমাকে এমনিতেও কদর করে না,মায়ের এই অভিশাপে তো মনে হয় আর আমার দিকেও তাকাবে না
.
নীল সাথে সাথে মুনের দিকে তাকিয়ে বললো”উনি কি বললেন তোমাকে?”
.
বকলো
.
আরেকবার কল করলে বলে দিও সাবধানে কথা বলতে,না হলে আবারও তাকে জেলে পুরে দিব
.
মুন যেন নীলের কথা শুনলোই না,মায়ের কথায় খারাপ লাগলো ওর
আবার মাথায় আসলো দোষটা ঘুরেফিরে ওরই,সে কেন একবারও মায়ের খবর নিলো না
.
নীল বিছানার উপর থেকে জ্যাকেটটা নিয়ে বারান্দায় মেলে দিয়ে আসলো,ফোনের দিকে তাকাতেই হিয়ার কথা মনে পড়ে গেলো ওর
এক নজর মুনের দিকে তাকিয়ে দেখলো কি করছে
মুন তখন চুলে বেনি কাটছিলো
নীল হিয়াকে ফোন করে কানে ধরলো ফোন,হিয়া রিসিভ করেই কেঁদে কেঁদে বললো”এতক্ষণে মনে পড়েছে?”
.
সরি
.
মুনতাহা কোথায়?
.
ঐ তো,বসে আছে
.
এতটা বিজি পারসন হলে কবে থেকে?? এটা ঠিক করোনি নীল,আমাকে তো কখনও তুমি ব্যস্ততা দেখাও না,তাহলে দুদিন ধরে এমন কেন করছো?আমার খুব খারাপ লেগেছে
.
এই যে শুনুন,খাবার দিতে লোক এসেছে
.
আসছি!
আচ্ছা হিয়া একটু লাইনে থাকো
.
নীল গিয়ে দরজা খুলে খাবারের ট্রেটা হাতে নিয়ে মুনের সামনে রেখে বললো”নাও খাওয়া শুরু করো,আমি একটা কাজ সেরে আসছি”
.
আপনি আমার সাথে খাবেন না?
.
খাব তো,একটু ওয়েট করো
.
নীল বারান্দায় এসে হ্যালো বলতেই হিয়া জিজ্ঞেস করলো ওরা কোথায়
.
নীল ও বলে ফেললো তারা রাঙামাটি ঘুরতে এসেছে
.
ওহহহহহ,হানিমুনে আসলে,সরি ডিস্টার্ব করার জন্য
.
নাহ,ডিস্টার্ব কিসের,কল তো আমিই করেছিলাম,,আসলে হানিমুন না,ফ্যামিলি ট্যুরে এসেছি সবাই
.
ভালো,ইঞ্জয় করো
.
হিয়া লাইন কেটে দিলো সাথে সাথে
.
আমি জানি হিয়া তোমার খুব খারাপ লাগলো,কিন্তু তুমি তো জানো না যে আমার আর মুনের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক টা এখনও তৈরিই হয়নি
.
কি হলো আসবেন না?খিধায় তো মরে যাচ্ছি
.
নীল ফোন পকেটে ঢুকিয়ে মুনের সামনে বরাবর বসলো,মুন জিজ্ঞেস করলো নীল কার সাথো কথা বলছিলো
.
হিয়ার সাথে
.
মুন চুপচাপ খাবার খাওয়ায় মন দিয়েছে, আর কিছু বলছে না
নীল ও নিজের খাওয়াতে মন দিলো,হিয়ার কথা শুনে মুন চুপ হয়ে গেছে,তবে সত্যি ওকে জানানো উচিত বলে আজ পর্যন্ত সব সত্যি বলে এসেছি,মিথ্যার আশ্রয়ে কাউকে ভালো রাখা যায় না,সত্যি বললে যদি সে কষ্ট পায় তো পাক,অন্তত নিজেকে দোষী মনে হবে না কখনও
.
কি হলো?এমন বারবার তাকাচ্ছেন কেন?
.
না মানে হিয়ার কথা শুনেও কিছু বলছো না যে তাই ভাবলাম কি হলো,তাহার শরীর ঠিক আছে কিনা
দেখো আমি কিন্তু সত্যিটা বলেছি যে কার সাথে কথা বলেছিলাম
.
আমাকে না বললেও আমি ঠিক টের পেয়েছি আপনি হিয়ার সাথে কথা বলছিলেন,কারণ আপনি সহজে সরি বলার মতন লোক না,সরি বললেন তার মানে নিশ্চয় হিয়া
কারণ আপনি অন্যদের তো সরি বলবেনই না
.
তোমাকেও কিন্তু বলেছি
.
হুম,আমাকে আর হিয়াকে
.
হইছে,ওর কথা বাদ,খাওয়ার সময় এত কথা বলতে নেই
.
লাস্ট প্রশ্ন,সরি বললেন কেন ওকে?বাবু লাগ কলেছে?
.
নীল ব্রু কুঁচকে বললো”তোমার রাগ না হলেই হয়,ওর রাগ দেখার জন্য সাকিব আছে”
.
আচ্ছা এটা বুঝেন বুঝি?তাহলে ওকে কল করার কি দরকার?আপনার মনে হয় না এসবে সাকিবের মন খারাপ হতে পারে
যেমনটা আমার হয়
.
নীল এক চামচ মুখে দিয়ে মুনের কথায় ভাবনায় পড়ে গেলো
আসলেই তো মুন ঠিক বলছে
.
মুন আলু চিবাতে চিবাতে বললো”হুম সাকিবের কথা ভাবুন,সাথে আমারও,নিজের বউটাকে এত কষ্ট দিয়ে কি লাভ”
.
নীল মুচকি হাসলো মুনের কথায়,,
♣
এসময়ে বৃষ্টি শুরু হলো,অবিশ্বাস্য ব্যাপার,অবশ্য পাহাড়ী অঞ্চল তো তেমন অসম্ভব ও না
মুন তো সেই কখন থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করছে
নীল তো ভাত খেয়ে ভাতঘুম দিয়েছে একেবারে,সবসময়কার মতন উপুড় হয়ে সে ঘুমাচ্ছে
মুন চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিকে অনুভব করছে,বছরের প্রথম বৃষ্টি,কি ভালো লাগা লেগে থাকে এই বৃষ্টিতে
মন চায় ভিজি একটু,কিন্তু পরার মতন যে কিছুই নেই,ইস এত বড় সুযোগ হাত ছাড়া করতে হচ্ছে,গতবছর তো আমি হাতছাড়া করিনি,মন মত ভিজেছিলাম
মেঘের ডাক শুনা গেছে,নীল ডাকটা শুনে কাঁথা মুড়িয়ে আরেকদিকে ফিরে গেলো
মুন বারান্দা থেকে সোজা নীলের কাছে এসে হাঁটুগেড়ে বসে নীলের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো
ভেবেছিলো বিয়ের পরে প্রেম করবে,তা আর হলো না
লোকটাকে ভাল্লাগে আবার ভাল্লাগে না
কেমন যেন আগোছালো
সে কাকে রেখে কাকে ভালোবাসবে তা বুঝতে পারে না
একে বলে ডিসিশনহীনতা রোগ
ডিসিশন নিতে পারে না কাকে নিয়ে জীবনে মোভ অন করা উচিত
স্টুপিড পুলিশ অফিসার একটা,তবে প্রাউড ফিল হচ্ছে একজন পুলিশের ওয়াইফ হয়ে,আরও ভাল্লাগতো এই পুলিশের বাচ্চার মা হতে পারলে তা মনে হয় আর হবে না
নীলের মাথার চুলগুলো এলিয়ে পড়েছে ওর কপাল জুড়ে
মুন হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কি যেন ভেবে কপালে চুমু খেলো একটা
তারপর নিজেই লজ্জা পেয়ে এক ছুটে বারান্দায় চলে আসলো
নীল জানতেও পারলো না তার অগোচরে আমি তাকে চুমু দিয়ে ফেলেছি,এটা ভিডিও করে হিয়াকে দেখালে আজকেই মরতো,হিহি!নীল জানলোই না
মুন ফিক করে হেসে দিয়ে আর কূল পেলো না
পিছন থেকে একটা হাত ওকে এক টান মেরে রুমে নিয়ে গেলো
নীলকে দেখে মুনের গলা শুকিয়ে গেছে,সে চোখ বড় করে শুধু নীলকে দেখছে
নীল ব্রু কুঁচকে বললো”চুমু দিয়েছিলে?”
.
না মানে,কে বললো?আন্দাজে আমি আপনাকে চুমু দেবো কেন?
.
আমার মনে হয়েছিলো পরে উঠে এসে তোমার মুখ থেকে চুমুর কথা শুনে সিউর হলাম
কি বললে যেন,আমি জানলামই না?
.
মুন যেতে যেতে দেয়ালের সাথে লেগে গেছে
নীল ওর একপাশে দেয়ালে হাত রেখে বললো”সাহস তো কম না তোমার”
.
আমি চুমু দি নাই সত্যি
.
নীল এক দৃষ্টিতে মুনের কানের লতির দিকে তাকিয়ে আছে,বৃষ্টির পানির ছিঁটে সেখানে পড়েছে,মুন মনে হয় বারান্দার কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিলো
মুন নীলের এমন রাঙানো চোখ দেখে নিজের চোখ বন্ধ করে বললো”সত্যি বলছি আমি চুমু দিই নাই”
.
নীলের ঠোঁট জোড়ার স্পর্শ মুন নিজের কানের কাছে টের পেলো,টের পেতেই চোখ খুললো সে
নীল মাথাটা উঠিয়ে দেয়াল থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বললো”আমিও দিই নাই”
.
মুন নিজের চোখ আর নিজের শ্রবণ ক্ষমতাকে বিশ্বাস করতে পারছে না,নীল কি করলো এটা,কেন করলো,নিজের হুসে আছে তো??
আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
.
নীল কাঁথা টেনে শুয়ে পড়েছে আবার,আর মুন দেয়ালের সাথে ফ্রিজড হয়ে দাঁড়য়ে আছে এখনও
তার কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না,দিনে দুপুরে কি হলো এটা
ঢোক গিলে কানে হাত দিলো সে তারপর নীলের কাছে এসে গলা শক্ত করে বললো”আপনি আমাকে….?”
.
এই নিয়ে কিছু বলতে চাই না
.
এখন হিয়া কাঁদবে না?এটা জানলে কষ্ট পাবে না?এখন আপনার স্মৃতির দেয়াল ভাঙ্গলো না?এখন আপনার ভালোবাসার মানুষের অধিকারে ভাগ বসলো না?
.
নীল শোয়া থেকে উঠে মুনের হাত টেনে ধরে বললো”হিয়া এসব কিছুই জানবে না
আর জানলেও কি!
.
কি?কিছু না?
.
আমি তোমাকে চুমুটা এতসব ভেবে দি নাই
.
কি ভেবে দিলেন?
.
জানি না কি ভেবে দিয়েছি তবে মাথা গুলিয়ে গিয়েছিলো বলে এমনটা করেছি আর কিছু না
.
মুন মনে মনে বললো”আমাকে চুমু খেয়েও হিয়ার নাম করছে,অসভ্য ধরনের লোক একটা”
.
আর কানে দেওয়া চুমুকে চুমু বলে না,ওটাকে কিছুই বলে না
সামান্য একটা কথা কে কি থেকে কিসে নিয়ে যাচ্ছো
.
কানে চুমু ছোট ব্যাপার নাকি বড় ব্যাপার সেটা হিয়ার সিনক্রিয়েটের উপর নির্ভর করবে
হাত ছাড়ুন আমার,আমি দেখাচ্ছি কোনটা বড় ব্যাপার আর কোনটা ছোট ব্যাপার
চলবে♥
স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২৯
Writer -Afnan Lara
.
মুন নীলের ফোনটা মুঠো করে ধরে ছুটলো বারান্দার দিকে
নীল বিছানা থেকে নেমে ওর হাত ধরে আটকালো
তারপর ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো”হিয়া জানলে তুলকালাম বাঁধাবে,তোমাকে টাচ করা যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তো আই এম সরি,এরকম ঝামেলা পাকাইও না তাও”
.
মুন ব্রু কুঁচকে বললো”হাত ছাড়ুন,দিব না ফোন ওকে,এত ভয় পেতে হবে না”
.
আমি ভয় পাই না,শুধু চাই ঝামেলা যেন না হয়
.
মুন বিছানায় ফিরে আসলো,কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে চুপ করে থাকলো সে
নীল ওর একপাশে এসে বসলো আরেকদিকে মুখ করে,দুজনে দুদিকে মুখ করে আছে এখন
.
কি হলো কিছু বলছো না যে?
.
কি বলবো?আমি এমন একজন স্ত্রী যার হাসবেন্ড তাকে ছুঁয়ে আবার সরি বলে,আবার ভয়ে শেষ হয়ে যায় এই ভেবে যে তার প্রাক্তন না জেনে ফেলে
.
নীল দুম করে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে বললো”তোমার সাথে কথা বলাটাই বেকার”
.
হুম বলিয়েন না কথা,হিয়াকে কল করে বলেন,পারেনই তো এটা,আর তো কিছু পারেন না
.
নীল উঁচু হয়ে মুনকে ঝাপটে ধরে শুইয়ে দিয়ে বললো”জোর করে ঘুম পাড়াতে পারি”
.
হাত ছাড়ুন,একবার এক রুপ কিভাবে নেন আপনি?
.
ঘুমাও
.
নীল মুখটা বালিশের ভেতরের দিকে গুজে নিলো
মুন বেশ অনেকক্ষণ বকরবকর করে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো শেষমেষ
বিকাল বেলা ঘুড়ঘুড় করে মেঘের ডাকে নীল জেগে গেলো,জেগে দেখলো তার ধানিলঙ্কা বউ তার বুকের ভিতরে ঢুকে আরামসে ঘুমাচ্ছে
নীল কারেন্ট এ শক লাগার মতন চমকে মুনকে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দিলো
মুন চোখ দুটো ডলে বললো”কি হলো?”
.
পরে মুনকে কেন এমন করে সরালো এটা ভেবে নীলের খারাপ লাগলো,মুন এখনও ঘুমের ঘোরে হেলছে দুলছে
নীল মুচকি হেসে ওকে আবার কাছে টেনে আনলো,মুনের খবর নেই,সে ঘুমের ঘোরে কোন রাজ্যে আছে তা কেউ জানে না
সে নিজেও জানে না
নীল মুনকে কাছে টেনে এনে ভাবলো”কোনোদিন এই বুকে হিয়া ব্যতীত কাউকে জায়গা দেবো না বলেছিলাম আর আজ দিয়ে দিলাম
মানুষ কত কিছু করে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে
তবে মুনকে এসব থেকে দূরে ঠেলে ওকে আমি কষ্ট দিচ্ছি ঠিক কিন্তু আমার যে ভেতর থেকে ভালোবাসাবোধটা আসে না ওর জন্য
জীবনে একজনকেই যে খুব করে ভালোবেসেছিলাম
তখন মুনকে ছুঁয়ে আমি সেই অনূভূতি পাইনি যেটাতে হিয়ার হাত ধরলে পেতাম,আমার মন প্রাণ সব হিয়ার মাঝে ডুবে আছে তাহলে কি করে আমি মুনকে সেই ভালোবাসা দেবো যেটা ও আমার থেকে চাইছে
.
সন্ধ্যা হয়ে গেছে,নীল শুয়ে শুয়ে বারান্দা ছেদ করে যে আকাশ দেখা যায়,মেঘলা আকাশ,সেটাই দেখছে চুপটি করে,আর মুন খুব যত্নে তার বুকের সাথে মাথা লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে
নীল নড়ছে না,নড়লে যদি মুন জেগে যায়,মুনের ঘুমের ধরন দেখে বুঝা যাচ্ছে সে খুব আরাম পেয়েছে নীলের খালি বুকে
নীলের ফোন বেজে উঠতেই মুন এবার গেলো জেগে
নীলের বুকে নিজেকে দেখে ছিটকে দূরে চলে গেলো সে
তারপর মাথায় আসলো নীল স্বাভাবিক ভাবেই ওর দিকে চেয়ে আছে এখনও
তার মানে নীলের সম্মতি ছিলো,নীল মুনের এমন ভাবগতি দেখে কোনো রিয়েকশানই করলো না,চুপচাপ ফোন ধরে কল রিসিভ করলো সে
মেজো ভাইয়ার কল,ভাইয়া জানালো বৃষ্টির কারণে তারা সবাই হিলটপে ফিরে আসছে,তাবুতে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে থাকা সহজ হবে না
নীল ঠিক আছে বলে ফোন রাখলো,মুন চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো”কতক্ষণ ধরে এমন শুয়েছিলাম?”
.
ইটস ওকে
.
নীল উঠে চলে গেলো ফ্রেশ হতে,মুনের মাথা কাজ করছে না নীল এখানে আসার পর থেকে কেমন যেন বিহেভ করছে
ঠিক বুঝে উঠা যাচ্ছে না,তবে যেমনই করুক,বেশ ভালো করছে,এমনটাই তো চেয়েছিলাম
তার বুকে ঘুমিয়েছি আমি,ইস কি লজ্জা!!
.
মুন দাঁত কেলিয়ে বিছানা থেকে নামলো,,কাল তারা সবাই ঢাকায় ফিরে যাবে,এখানেও আর ভালো লাগছে না,এ কদিন ভালোই থাকলাম আর কি!
.
মুন ভাবতে ভাবতে সেঁতসেঁতে বারান্দায় পা রাখলো
চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে,বারান্দাটা সম্পূর্ণ ভিজে গেছে
মুন পায়ের জুতোটা এক পাশে রেখে ভেজা ফ্লোরে পা রাখলো,শীতল অনুভূতি হতেই বেশ করে হাসলো সে
খুব ভালো লাগা কাজ করছে তার
নীল ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মুন খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
এমন করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?দুপুরবেলায় ভিজেছিলে মনে আছে??নাকি জ্বর বাঁধিয়েই ছাড়বা আজকে
.
আরে আসুন না,অনেক ভালো লাগবে
.
দরকার নাই,আমার এরকম উদ্ভট ফিলিংস লাগবে না,বরং তুমি চলে আসো ওখান থেকে
.
মুন একটু এগিয়ে নীলের হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে আসলো
ফিল করুন,চোখ বন্ধ করে
.
নীল চোখদুটো বন্ধ করলো,আজ নিজের সামনে সে হিয়াকে নয় মুনকে দেখতে পাচ্ছে,এতদিন চোখ বন্ধ করলেই হিয়ার কথা মাথায় আসতো আর আজ মুন
.
মুন নীলের হাতটা ধরে রেখেছে এখনও
.
কি ভালো লাগছে তো?
.
হুমমমম
.
অনেক সময় জ্বর সর্দির ভয়ে মানুষ আসল ভালো লাগা অনুভব করা থেকেই দূরে থাকে,এটা কিন্তু ঠিক না
এই যে দেখুন আজ আপনাকে আমি কি দারুন অনুভূতি শেখালাম
.
নীল বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বললো”থ্যাংকস”
.
চোখের সামনে থেকে হঠাৎ মুনের ছবিটা চলে যেতেই নীল চোখ খুললো,মুন রুমে চলে গেছে হাতটা ছেড়ে দিয়ে
নীল এক দৃষ্টিতে মুনের দিকে তাকিয়ে রইলো,মুন পানি এক গ্লাস খেয়ে চুলগুলোকে একসাথে করে একপাশে এনে বিছানায় গিয়ে বসে নীলকে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই দেখলো নীল আগে থেকেই ওকে দেখছে
.
নীল মুনের চাহনি দেখে চোখদুটোকে নামিয়ে চুপচাপ চেয়ার টেনে বসলো,,মুন পা তুলে বসে কোলে বালিশ রেখে বললো”চা খাওয়াবেন না?সব চেয়ে নিতে হয়?কিছু নিজ থেকেও করা যায়,বুঝলেন মিঃপুলিশ?”
.
নীল চেয়ার থেকে উঠে যেতে যেতে বললো”ওয়েট করো,চা নিয়ে আসছি”
.
নীল চলে গেলো,মুন নীলের পরনের শার্টটা বিছানার উপর থেকে নিয়ে পরে ফেললো এক মিনিটেই,নীল শুধু জ্যাকেটটা পরে গেছে,গায়ের শার্টটা খুলে এখানে রেখে ছিল দুপুরবেলাতেই
মুন আয়নার কাছে গিয়ে বললো”হাই হ্যালো!!আই এম নীলের ওয়াইফ
হিয়া?দেখছো আমি কত হ্যাপি??তোমার নীল আমার হতে চলেছে,কেমন লাগছে তোমার?বিস্তারিত বলো!
ও কি করে বলবা,তুমি তো ঢাকায়,হিহি!!
.
নীল এসে যেতে পারে বলে মুন জলদি করে শার্টটা খুলতে গিয়ে একটা বোতাম খুলে ফেললো,এবার সারা রুম খুঁজেও সুই সুতো পেলো না সে
তাই শার্টটা লুকিয়ে ফেললো নীল আসার আগেই
নীল এই শার্টের খবর জানতে না চাইলেই বাঁচি
.
দশমিনিট পর নীল ফিরলো,চা আর বিসকিট নিয়ে,মুন চোরের মতন রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলো,নীল রুমে ঢুকে বললো”কি হয়েছে?এরকম করে ওখানে কি করছো তুমি?”
.
না মানে,আপনার অপেক্ষা করছিলাম,চলুন চা খাই
মুন দুম করে বিছানায় বসে পড়ে চা খাওয়ায় মনযোগ দিলো
নীল সন্দেহের দৃষ্টিতে মুনের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতের চা টুকু সাবাড় করছে
.
মুন এদিক ওদিক তাকিয়ে যতবারই নীলের দিকে তাকাচ্ছে ততবারই দেখছে নীল ওর দিকে তাকিয়ে
.
তাহা ভুলে যেও না যে তোমার হাসবেন্ড একজন পুলিশ অফিসার
.
তততততো?
.
ততততো মানে হলো তুমি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো
.
কিছুই না
.
নীল চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে বললো”সত্যি তো?”
.
হুম সত্যি তো
.
নীল ঘড়িটাও টেবিলের উপর রাখলো তারপর গায়ের জ্যাকেটটা খুলতে খুলতে বললো”লাস্টবার আস্ক করতেছি তাহা,এরপর হাত চলবে”
.
মুন ঢোক গিলে খাটের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বললো”ইয়ে মানে আমি আপনার শার্টের বোতাম ছুটিয়ে ফেলেছি পরতে গিয়ে,আর কখনও এমন হবে না,মাফ করে দেন”
.
নীল ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”সামান্য এই ব্যাপার?”
.
হুম,আপনি ঘড়ি আর জ্যাকেট খুললেন কেন?
.
ফ্রেশ হবো তাই
.
ওয়াসরুমের দিকে নীল চলে যেতেই মুন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো,নীল যেভাবে লুক নিয়ে ঘড়ি খুলছিলো আমার জানটা বের হতে হতে থেমেছে
বাপরে বাপ,এবার বুঝতেছি পুলিশের বউ হওয়ার অপকারিতা
বউয়ের দিকেও এমন করে তাকায় যেন রিমান্ডের আসামীর দিকে তাকাচ্ছে
♣
নীলের ফোনে মিনা কার্টুন দেখছে মুন,তার সময় কাটছিলো না বলে নীল ওর হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়েছে,টিভির ডিসলাইনে সমস্যা নাহলে তো টিভি দেখা যেতো
মুন মিনা কার্টুন খুব মনযোগ দিয়ে দেখছে শুয়ে শুয়ে
নীল পায়চারি করছে একবার বারান্দায় তো একবার রুমে
শেষে জ্যাকেটটা পরে নিয়ে বললো”তাহা তুমি থাকো,আমি একটু হেঁটে আসি”
.
আমিও যাব
.
বাহিরে ঠাণ্ডা, দরকার নেই,তার উপর বৃষ্টিতে পথঘাট পিচ্ছিল হয়ে আছে
.
তো কি হয়েছে,আপনি আছেন না?
.
নীল আর মানা করলো না,মুনকে নিয়েই বের হলো
মুন দুহাত ভাঁজ করে নীলের পাশে পাশে হাঁটছে আর নীলের গায়ের জ্যাকেটটার দিকে লোভী চোখে তাকাচ্ছে সে
নীলের সেদিকে নজর নেই,সে পথটা দেখে হাঁটায় ব্যস্ত
শেষে মুন মুখ ফুটে বলেই দিলো যে তার জ্যাকেটটা লাগবে
নীল জ্যাকেটটা খুলতে খুলতে বললো”ঠাণ্ডার কথা বলেছিলাম তোমায়,এখন শীত করছে তো?”
.
তো কিছে?,জ্যাকেটটা দিয়ে দিলেই হতো,উল্টো আমাকে চাইতে হচ্ছে কেন?
.
আমি যাই করি তাতেই তো দোষ হয়ে যায় তাই না?
.
হুম তাই,এদিক ওদিক না চেয়ে এখন থেকে আমার দিকে চাইবেন
.
মুন কথাটা বলার পর থেকে নীল শুধু মুনের দিকেই তাকিয়ে আছে
মুনকে জ্বালানোর জন্য
.
আপনি এমন কেন বলুন তো,আমাকে বিরক্ত করতে ভাল্লাগে আপনার?
.
তুমি তো বললে শুধু তোমার দিকে চাইতাম তাই তো করছি আমি
কথাটা শেষ করার আগেই নীল হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলো
মুন নীলের ডান হাতটা টেনে ধরলো সাথে সাথে তারপর চিন্তিত হয়ে বললো”আপনি ঠিক আছেন?”
.
হুম,আই এম ওকে
.
আরও থাকুন তাকিয়ে
.
সব তো তুমিই বলো,যাই হোক চলো ফিরে যাই
.
আচ্ছা
.
মুন নীলের হাতটা ছাড়লো না আর,নীল ও কিছু বললো না,দুজন মিলে একসাথে হোটেলের রুমে চলে আসলো
মুনের বেশ লেগেছে এই সময়টায়,তার চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে নীলের হাত ধরে হাঁটা টা
.
নীলের জ্যাকেটটাকে ছুঁয়ে মুচকি হেসে মুন নীলের দিকে তাকালো,নীল ফোনে গেমস খেলছে
লোকটা তাকে কবে ভালোবাসবে তাই ভেবেই মুনের আর সয় না অপেক্ষা
কানের পিছনে চুল গুলো আবারও গুজতে গিয়ে নীলের দেওয়া সেই অনুভূতির কথা মাথায় আসতেই মুন আবারও হেসে ফেললো
নীল গেমস থেকে চোখ উঠিয়ে বললো”এত হাসির কারণ কি?”
.
মুন মলিন চোখে চেয়ে বললো”আপনার দেওয়া প্রথম স্পর্শ”
.
নীল চোখ নামিয়ে নিলো সাথে সাথে
আসলেই কি সে আজ ঠিক করেছিলো?হিয়াকে ধোকা দেয়নি তো সে?
.
কি ভাবছেন বলুন তো?দিলেন তো দিলেনই তাহলে সেটাকে মনে করে মুখটা ফ্যাকাসে করেন কেন আপনি?
আমি হিয়াকে কিছু বলবো না তো
.
সেটার জন্য না
.
তাহলে?
.
কিছু না বাদ দাও,আর এইসব কিছু নিয়ে কথা বলার দরকার নেই
চলবে♥