স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_৩০
Writer -Afnan Lara
.
পরেরদিন সকালবেলা যে যার মতন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো
সবাই যার যার গাড়ীতে
কাল রাত থেকে নীল হুট করেই চুপ হয়ে গেছে,মুখে কোনো কথা নেই তার,সাথে মুন ও
নিপার বিয়ে নিয়ে এবার সবাই ব্যস্ত হয়ে যাবে কারণ পরেরমাসেই ওর বিয়ে
ভাইয়ারা সবাই আর যাবে না,এখানেই থাকবে
একেবারে বিয়ে শেষ করে তারপর যাবে
বাসায় ফিরে মুন ও নিজ থেকে নীলের সাথে কথা বললো না আর
দুজনে নিজের মত যে যার কাজ করে যাচ্ছে
.
নীল বাসায় ফিরে রেডি হয়ে নিয়ে তার ডিউটিতেও চলে গেছে
নিপা আজ ফিরবে বাসায়,ভাবীরা সব ওর বিয়ের তৈরি নিয়ে আলোচনা করছে একসাথে বসে
মুন তার মনটা খারাপ করে নীলের বারান্দায় বসে লিচু গাছটাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে
♣
নীল অফিসে বসে ভাবছে মুনের কথা,কাল রাত থেকে মুন ও চুপ হয়ে গেলো আর সাথে আমিও
সেও কথা বলতে চায়নি আর আমিও না,আমাদের হলোটা কি??
আমি তো ওকে বকিনি,কিংবা ঝগড়া ও হয়নি
.
আসবো?
.
নীল নাকের নিচ থেকে কলমটা সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো হিয়া দাঁড়িয়ে আছে
কালো কোটি আর একটা হালকা গোলাপি গাউন পরা
খোলা চুল আর মুখটা মলিন,নীলের মুখে মূহুর্তেই হাসি ফুটে গেলো
নীল উঠে দাঁড়িয়ে বললো”তা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়?”
.
হিয়া এক পা দু পা করে আস্তে আস্তে নীলের সামনে এসে দাঁড়ালো
ওর মুখে হাসি নেই,চোখ দুটো নীলকে খুব করে দেখছে যেন কতটা বছর দেখেনি মানুষটাকে
নীলের মুখ দিয়েও কথা বের হচ্ছে না,হিয়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও থমকে গেছে
হিয়া চোখ দুটো বন্ধ করে নীলকে জড়িয়ে ধরলো আর কিছু না বলে
নীল ওকে আটকাতে পারলো না,চুপ করে শুধু দাঁড়িয়ে থাকলো সে
হিয়া তার মুখ নীলের বুকে ডুবিয়ে বললো”তোমাকে অনেক ভালোবাসি নীল,তোমার চেয়েও অনেক বেশি,আমি আর পারবো না নীল,এতবছর অনেক করেও আমি সাকিবকে মেনে নিতে পারিনি,আমার মনপ্রান সবটা জুড়ে শুধু তুমি,সাকিব আমার হাত ধরলে আমি সেই ভালোলাগা খুঁজে পাই না যেটা তুমি ধরলে পেতাম
সাকিব অনেক কেয়ার করে,অনেক ভালোবাসে যাকে বলে এক্সট্রা পারফেক্ট
তবে আমার সেই পারফেক্ট লোকটাকে চাই না
আমার শুধু আমার নীলকে চাই,যে আমাকে ভালোবাসি না বললেও আমি ঠিক টের পেয়ে যেতাম,যার গায়ের গন্ধে আমি নিরাপদ অনুভব করতাম,নীল আমি আর পারবো না এই মিথ্যে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকতে
.
নীলের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তেই হাত উঠিয়ে মুছে ফেললো সে
মৃদু সুরে শুধু বললো”আমিও”
.
আমাদের সাথে এমন কেন হলো নীল!আমরা কি ক্ষতি করেছিলাম,আমাদের ভালোবাসায় কিসের খুঁত ছিলো?
সাকিবকে আমি মানতে পারছি না আর তুমি মুনতাহাকে মেনে নিতে পারছো না
আমার সাথে একই ঘরে সাকিবের থাকা নিয়ে তোমার প্রব্লেম না হলেও আমার হয়,আমার সহ্য হয়না তোমাকে আর মুনকে একসাথে দেখে
আমি তো তোমাকে ভালোবেসেছি,আমার কেন সহ্য হবে বলো?
তুমি তো কষ্টটাকে চাপা দিতে পারো,কিন্তু আমি যে পারি না নীল
আমার নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে,সাকিব আর আমি আজ পর্যন্ত স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে জড়ায়নি
সাকিব আমাকে জোর করেনি,আর আমার ও ওর প্রতি সেই ভালোবাসা আসে না আমি কি করবো?
জোর করে এই অনূভূতি আনানো যায় না নীল
তুমি প্লিস আমাকে মুক্ত করো এসব থেকে
আমি আর এভাবে লাইফটাকে চলতে দিতে পারি না
তোমার ভালোবাসা আমাকে শেষ করে দিচ্ছে,তুমি আমাকে এতটাই ভালোবাসো যে এখন অন্য কেউ আমাকে বাসলেও সেটা আমার চোখে পড়ে না
আমিও তো বাসি তাহলে কেন ৩য় পক্ষ আসে বারবার?
চলো না!! চলে যাই অনেক দূরে,যেখানে কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না
নীল এক কাজ করলে কেমন হয়?আমি সাকিবকে আর তুমি মুনতাহাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলে??
আমরা মুক্ত তাই না??আমাদের আর কোনো দায় রইলো না
আমরা আবারও একে অপরের হয়ে যাব,বলো না নীল এটা হয় না??
.
নীল হিয়ার হাত দুটো ধরে ওকে বুক থেকে সরিয়ে ফেললো তারপর নিজে জানালার কাছে চলে গিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো
হিয়া এক দৃষ্টিতে নীলের দিকে চেয়ে আছে নীলের উত্তরের আশায়
.
নীল দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো”না,এটা হয় না !”
.
কেন হয় না নীল??
.
তাহা আমার দায়িত্ব
.
আমি কি তাহলে?
.
তুমি আমার ভালোবাসা,যাকে ছোঁয়ার অধিকারটা আমি তিনবছর আগে হারিয়ে ফেলেছি আর কখনও পাবো না
.
চাইলেই পাবে নীল,চলে না আমরা পালিয়ে যাই
.
আমি চাই না সেটা
.
কেন চাও না নীল,আমার সবকিছু তোমার,আমি সাকিবকে ছুঁতে দেই না কারণ আমি সেই কবে থেকে স্বপ্ন দেখে এসেছি আমাকে নীল ছুঁবে আর কেউ না,এটার রাইট শুধু নীলের
.
আমি তোমার হাসবেন্ড না হিয়া,যার অধিকার তাকে বঞ্চিত করতে পারে না তুমি
.
তাহলে মুনতাহাকে তুমি কেন বঞ্চিত করছো?
উত্তরটা কিন্তু একই নীল
কারণ তুমিও আমাকেই চেয়েছো,আমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়েকে ছোঁয়ার মনমানসিকতা তোমায় হয় না
.
হিয়া তুমি চলে যাও
.
যাব না,আমি জানতে চাই তুমি কেন আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো?ভালোবাসার কাছে আজ দায়িত্ব হেরে গেছে??
দায়িত্ব যে কেউ নিতে পারে
.
তা পালন করতে পারে কজন??তাহার সারাজীবনের দায়িত্ব আমি নিয়েছি এজ এ হাসবেন্ড,ক্লিয়ার???
.
হিয়া কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে গেছে,নীল জানালার গ্রিল ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলেছে,হিয়ার কান্না তাকে আরও বেশি করে কষ্ট দিচ্ছে
নিজেকে আজ সে সামলাতে পারছে না
.
তার মানে তুমি বুঝাতে চাও আমার চেয়ে মুনতাহা বেশি জরুরি তোমার কাছে?
.
আমার কাছে তুমি সবচাইতে বেশি জরুরি
সবসময় ছিলে,এখনও আছো
কিন্তু তোমার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য,সারাজীবন আগলে রাখার জন্য সাকিব আছে তোমার পাশে
কিন্তু মুনতাহার কেউ নেই,ওর বাবা থেকেও নেই
মা তো সৎ মা,আর কে আছে?আমি আজ ওর দায়িত্ব থেকে দূরে চলে গেলে ওকে তুষারের মতন হিংস্র ছেলেরা একদিনও বাঁচতে দেবে না
.
ওওও!পুলিশ হয়ে এখন জনগণের সেবা এমন করে করছো??
.
হিয়া তুমি যাও প্লিস!আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো
আমিও তোমাকে ভালোবাসি তবে আমাদের দুজনের পথ দুদিক দিয়ে,আমরা কেউ কারোর নয়
আমাদের জীবনটা আরেকজনের জীবনের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে আছে যা থেকে চাইলেই পিছু হটা যাবে না
তুমি সাকিবকে আজকেই ডিভোর্স দিতে পারবে
কিন্তু আমি মুনতাহাকে দিতে পারবো না কারণ আমি নিজের সজ্ঞানে ওকে বিয়ে করেছি,ওর দায়িত্ব নিয়েছি,আমার পুরো পরিবার ওকে মেনে নিয়েছে,এবার একটা ভুল ডিসিশানে আমি পুরো পরিবারকে ভাঙ্গতে দিতে পারি না
তিনটা বছর আগেও তোমাকে ভালোবেসে আমি হেরে গিয়েছিলাম ভাগ্যের কাছে
এখন নিজে দাঁড়িয়ে সেই ভাগ্যকে বদলানোর মতন ভুল আমি করতে পারি না
তুমি তোমার বাবার কথা রাখতে সাকিবকে বিয়ে করেছিলা
আর আমি এখন মুনতাহা ডিভোর্স দিলে আমার গোটা পরিবার আমাকে ত্যায্য করে দেবে
আজ তুমি বলতে পারবা না পরিবার বড় নাকি ভালোবাসা
কারণ সেদিন আমি তোমাকে এই প্রশ্ন করিনি, তুমি সেদিন হেল্পলেস ছিলে
আর আজ আমি হেল্পলেস
গভীর ভালোবাসা বুকে রয়ে আছে তোমার জন্য অথচ সেটা প্রকাশ করার অধিকারটুকু আমার নেই
সো! বাসায় ফিরে যাও,পারলে সাকিবকে মেনে নাও
.
হিয়া চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”তুমি পারবে মুনতাহাকে মেনে নিতে?আমার জায়গা ওকে দিতে?ওকে ছুঁতে,ভালোবাসতে?”
.
কখনও হিয়ার জায়গায় অন্য একটা মেয়ের সাথে একই বিছানায় থাকতে হবে এটাও তো ভাবিনি কিন্তু তা তো হয়ে গেলো
.
তার মানে তুমি মুনতাহাকে মেনে নিবে?
.
যে স্মৃতি গুলো দিনরাত আমার চেখের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে,উঠতে বসতে মনে করিয়ে দিচ্ছে আমি সেই প্রেমিক যে নিজের সব থাকতেও ভালেবাসার মানুষটাকে আপন করে পাইনি সেই আমি মুনতাহাকে মেনে নিতে পারবো কিনা জানি না
.
ঠিক এই যন্ত্রনায় আমি আজ পর্যন্ত সাকিবকে আপন করতে পারিনি,জীবনের প্রথম প্রেম কখনও ভুলা যায় না
না আমি ভুলতে পারছি
না তুমি ভুলতে পারছো
.
হ্যালো?লোকমান?দুই কাপ কফি পাঠাও আমার রুমে
হিয়া,বসো চেয়ারে!
.
সেই আগের মতন কাঁদিয়ে কফি খাওয়ানোর অভ্যাসটা তোমার গেলো না
.
নীল হাসলো,চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো”তোমার বিয়ের দিন যে ভাবে কাঁদিয়েছো আমাকে,সেটার সামনে এটা কম না??”
.
আমার হাতে কিছুই ছিলো না,আমাকে দোষারোপ কেন করছো?
.
আমার হাতে কি কিছু আছে এখন?তুমি বলো তো!
.
আমি বিয়ের পরেই বলেছিলাম ডিভোর্স দিবো সাকিবকে
কিন্তু তুমি!!আমাকে সেটা করতে দাওনি
.
এখনও দিচ্ছি না
.
কেন নীল?
.
সাকিব আমার চেয়েও ভালো ছেলে,আমার মতন তোমাকে এত কাঁদাবে না
.
আমি কাঁদতে চাই,তোমার হাতের মার খেলেও আমার সেই কষ্ট হবে না যতটা সাকিবকে নিজের স্বামী বলতে গেলে হয়
.
কফি এসে গেছে,খেয়ে নাও,তারপর যাবে
.
ফাইন!!!আমি সাকিবকে আজকে ছুঁবো!
.
অল দ্যা বেস্ট
.
তোমার কি জ্বলছে না?
.
আমি মুনতাহাকে ছুঁয়েছি,সো তুমি সাকিবকে ছুঁলে আমার সমস্যা হওয়ার কথা না
.
কোথায় ছুঁয়েছো?
.
বলা বাহুল্য না
.
বলতে হবে,নাহলে গরম কফি গিলে ফেলবো
.
কানে
.
কানে কেন ছুঁতে গেসো?
.
ভাল্লাগছিলো ওকে
.
যদি আবার ভাল্লাগে?
.
তাহলে আবার ছুঁবো,ছেলে মানুষ তো আমি,মাথা ঠিক না থাকলে তো কথাই নেই
.
আমি আজকেই প্রেগন্যান্ট হবো দেখিও,সাকিবের বাচ্চার মা
.
তাহলে অভিনন্দন,অনেক শুভেচ্ছা,একটা ফুলের তোড়া কাল তোমার বাসায় পৌঁছে যাবে
.
আমাকে সাকিব ছুঁলে তোমার কি কিছুই যায় আসবে না?
.
আমি তো ভেবেছিলাম এই তিনবছরে অন্তত দুটো বাচ্চার মা হয়ে যাবা তুমি
.
আমি যাচ্ছি
.
নীল কফিতে চুমুক দিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো হিয়া দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে
.
কিছু বলবে?
.
আমার উপর রাগ করে মুনতাহাকে ছুঁতে হবে না
.
আমি ওকে তোমার উপর রাগ করে ছুঁই নিই,কিছু কিছু অনুভূতির নাম হয় না,কারণ হয় না,ওসব অনুভূতি এমনি এমনি সৃষ্টি হয়
.
তুমি ওকে ভালোবেসে ফেলো নি তো?
.
লোকমান??ম্যাডামের কারের দরজা খুলে দিও!!!
.
হিয়া চলে গেলো,আর পিছন ফিরে নীলের দিকে তাকালো না
নীল হিয়ার চলে যাওয়া দেখছে জানালা দিয়ে
ফোন বেজে উঠলো ওর,মুনের কল
কানে ধরতেই ওপাশ থেকে মুন গাল ফুলিয়ে বললো”আমি ফোন করতে চাইনি,নিপা আপু বললো কল করতে,আপুর এঙ্গেজমেন্টের রিং কিনতে সবাই শপিংমলে যাচ্ছে,আমাকে বলেছে আপনার সাথে যেতে,কাইন্ডলি অফিস থেকে ফিরে আমাকে নিয়ে যাইয়েন,নাকি হিয়ার চক্করে সেটাও ভুলে যাবেন?
.
ওকে
.
নীল ওকে বলে লাইন কেটে দিয়ে হেসে বললো”তাহা তুমি জানো না! আজ তোমার জন্য! শুধু তোমার জন্য আমি হিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছি,আজ স্মৃতির দেয়াল নয় বরং দায়িত্বের দেয়ালের উচ্চতা সব চাইতে বেশি ছিলো তাহা!
তুমি বুঝবে না
চলবে♥
স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_৩১
Writer -Afnan Lara
.
মুন একটা বিসকুট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাসার গেটের দিকে চেয়ে
বিসকুট টা আরাফ দিয়েছে,তারা সবাই শপিংমলে চলে গেছে সেই কখন
পুরো বাসাটা খালি এখন,অবশ্য নাহার ও আছে,সে রান্নাঘরে বাসন মাজছে
মুন এই সুযোগে বিসকুট টা মুখে পুরে লিচু গাছটায় উঠে বসে বসে পা দুলাচ্ছে আর উঁকি দিয়ে নীলের রুমের ঘড়িটার দিকে তাকচ্ছে
নীলের অফিস থেকে ফিরতে বিশ মিনিট লাগে
পাক্কা উনিশ মিনিট সম্পূর্ন হলে সে গাছ থেকে নেমে যাবে,নীলকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে সে গাছে উঠেছিলো
নিজের শখটাকে তো এভাবে আটকে রাখা যায় না
তার চেয়ে বরং আমি তার অগোচরেই আমার সেই শখটা মেটাবো
ইস,একটু তেঁতুল আর লবণ মরিচ হলে মন্দ হতো না
.
ঘড়িটার দিকে আবারও তাকালো মুন,ব্যাপারটা সে বুঝলো না কারণ বেশ অনেকক্ষণ আগে সে যখন তাকিয়েছিলো তখন দুপুর ১টা বাজে,অথচ এখনও দেখলো ১টা বাজে,ঘড়ি কি তাহলে নষ্ট হয়ে গেলো?
চোখটা ছোট করে আবারও তাকালো মুন,সেকেন্ডের কাঁটাটা নড়ছে না,তার মানে ঘড়ি নষ্ট,আমি তাহলে শেষ!!!
না জানি বিশ মিনিট হয়ে গেলো কিনা
মুন জলদি করে গাছ থেকে নাম,নাহলে তোর জামাই দেখলে পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে জেলে পুরবে তোকে
.
মুন ভয় পেয়ে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে একদম দোতলা বরাবর উচ্চতা থেকে দুরুম করে মাটিতে পড়লো,তার একটু পাশেই ফ্লোর,মানে ঢালাই করা জায়গাটা
এবার মুন মাটিতেই পড়েছে,খুব ব্যাথা পেলো সে,চিৎকার করতে গিয়ে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলো নীলের জিপের আওয়াজ পেয়ে
পা টা ধরে নাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো সে
এদিকে নীল জিপ থেকে নেমে পড়েছে
মুন ঢোক গিলে নীলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,পায়ে যে প্রচণ্ড ব্যাথা সেদিকে ওর ভ্রুক্ষেপ ও নেই
নীল হাঁটার জন্য সামনে পা বাড়াতেই দেখলো মুন সুন্দর করে মাটিতে বসে আছে ওর দিকে তাকিয়ে,চোখ দুটো ভিজে আছে,কান্না কে আটকে রাখলে যেমন দেখায় ঠিক তেমন
নীল সন্দেহ নিয়ে এগিয়ে এসে বললো”কি হলো?তুমি এমন করে বসে আছো কি জন্যে??তাও মাটিতে,মাথা ঠিক আছে তোমার?”
.
হুম ঠিক আছে
.
তাহলে উঠো,রেডি হয়ে নাও,শপিংয়ে যাব,লাঞ্চ ওখানেই করে নেবো
.
হেহে,আপনি যান ফ্রেশ হোন,আমি আসছি
.
চলো আমার সাথে
.
মুন ছলছল চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে থাকলো,কিছু আর বলতে পারলো না
.
কি হয়েছে?উঠছো না কেন?পায়ে হাত দিচ্ছো কেন?কি হয়েছে পায়ে?
.
নীল হাঁটুগেড়ে বসে মুনের পায়ে হাত দিলো,উপর থেকে শাড়ী একটু সরিয়ে দেখলো পা একটু ছিলে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে
নীল ব্রু কুঁচকপ মুনের দিকে তাকিয়ে বললো”আবার গাছে উঠেছিলা?”
.
না মানে হ্যাঁ
.
নীল মুনের পা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো,মুন মনে মনে ভাবছে নীল এখন বলবে”তোমার কারণে পা ভেঙ্গেছো তো নিজে নিজে উঠে রুমে আসবা,ভেবো না আমি কোলে নেবো”
কিন্তু নীল সেটা বলেনি,বরং নীল নিচু হয়ে মুনকে কোলে তুলে নিয়ে বললো”এই জন্য মানা করি গাছে ওঠা বাদ দাও,তোমার বিয়ে হয়ে গেছে,এখন তো পারো ম্যাচিউর হতে,এগুলো বাচ্চাদের কাজ,তোমার না,তুমি একটা মেয়ে,এরকম বাঁদরামো না করলে হয় না তোমার?”
.
মুন চুপ করে নীলের গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে
নীল ওকে বকতে বকতে সোফায় বসিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স আনতে গেলো
মুন নীলের চলে যাওয়া দেখছে,,নীল আবার ফেরত এসে পা ধরতেই মুন কেঁপে বললো”ব্যাথাটা বেশি,মনে হয় ডাক্তার দেখাতে হবে,অনেক উপর থেকে পড়েছি”
.
এখন আমি ড্রেসিং করে দিচ্ছি,তারপর আমাদের বাসার একজন আলাদা ডাক্তার আছে,উনাকে নিয়ে আসবো,মনে তো হয় না শপিংয়ে যেতে পারবা,আমি একা গেলে মা আমাকে কেলাবে,তোমার কারণে সবসময় ট্রিপ ক্যানসেল হয়
.
সরি,আর উঠবো না গাছে সত্যি
.
নীল ফোন কানে ধরে ডাক্তারকে ফোন করতে গেলো,নাহার মুনের কাছে এসে বললো তার কাজ শেষ
এবার সেও বাড়ি ফিরে গেলো
নীল ডাক্তারকে আসতে বলে মুনের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে সেই কখন থেকে
.
ডাক্তার এসে পায়ের অবস্থা চেক করে মুনকে জিজ্ঞেস করলেন কিরকম ব্যাথা করে,মুন জানালো পা নাড়ালেই ব্যাথা হয়
ডাক্তার বললেন কালকে সকালে পর্যন্ত দেখতে,সকাল অবদি ব্যাথা এরকম বেশি রয়ে গেলো ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে পায়ের পরীক্ষা করানোর জন্য,এখন আপাতত একটা নাপা এক্সট্রাই এনাফ
ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে নীল নিজের রুমের দিকে চললো
মুন চোরের মতন নীলের দিক তাকিয়ে আছে,ভয়ে বলতে পারছে না তাকে ও রুমে নিয়ে যেতে
নীল থেমে গিয়ে পিছন ফিরে বললো”আমি এখন মাকে ফোন করে তোমার কূকীর্তি সম্পর্কে জানাবো,সবসময় তোমার কারণে মা আমাকে বকে,আজ তোমার কারণে তোমাকেই বকবে”
.
নীল ফোন কানে ধরে মুনের সামনে থেকেই কল করলো মাকে,তারপর উনাকে সবটা জানালো,উনি কোনো রিয়েকশান না করেই কল কেটে দিলেন
মুন তো ভয়ে শেষ,কল কাটা মানে নিশ্চয় মা খুব রেগে গেছেন
নীল বিষয়টা বুঝলো না,চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলো সে
মুন সোফায় অসহায়ের মতন বসে ভাবছে এতক্ষণ নীল বকেছিলো,এবার গোটাশুদ্ধ পরিবার মিলে বকবে ওকে
ইস রে এমন জানলে আজ গাছে উঠতামই না
.
দশ মিনিটে পুরো ১৪গুষ্টি এসে হাজির
মুন তো ভয়ে চোখই খুলছে না
মা এসে মুনের পাশে বসে বললেন”নীল?এই নীল!”
.
নীল শাওয়ার নিচ্ছিলো, মায়ের এমন করে ডাকাডাকি শুনে সে তোয়ালে হাতে নিয়েই ছুটে আসলো
মা বললেন”তুই কি মেয়েটার কেনো যত্নই নিতে পারিস না??”
.
আমি আবার কি করলাম,ও নিজের দোষে পা ভেঙ্গেছে
.
সেটা নাহয় বুঝলাম,ও তো ইচ্ছে করে এমনটা করেনি
কিন্তু মেয়েটাকে এভাবে সোফায় ফেলে রেখেছিস কোন সাহসে??
.
সেটাতেও দোষ আমার?
.
হ্যাঁ তোর দোষ,বাচ্চামো করা একটা মেয়েকে বিয়ে করেছিস তো ওর ভালো মন্দ দেখে রাখা তোরই দায়িত্বের কাতারে পড়ে
.
ওকে মানা করলেও শুনে না,আমি কি করবো বলো?
.
ভালোবেসে বললে যে কেউ তার অভ্যাসকে ভুলে থাকতে পারে
.
নীল মুনের দিকে তাকালো,মুন তো অবাক,তাকে বকার বদলে সবাই নীলের দিকে রাগী লুক নিয়ে চেয়ে আছে
.
উর্মি ভাবী এসে বিষয়টা ধামাচাপা দিলেন,তিনি বললেন নীলকে
যে সে যেন মুনকে রুমপ নিয়ে যায়
প্রচণ্ড রাগ থাকার পরেও সবার চাপে পড়ে মুনকে তুলে রুমে নিয়ে আসলো নীল
আসতে আসতে বললো”আমি বুঝি না,সবসময় সব কিছুর জন্য আমাকে কেন দোষ দেয়”
.
উত্তরটা কি আমি দেবো?
.
দিন,দিয়ে উদ্ধার করুন আমায়
.
আপনাকে দোষ দেয় কারণ আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না,আমার মন খারাপের কারণ সবসময় আপনি থাকেন আর সেটা সবাই জানে
.
ভালো
চুপচাপ শুয়ে থাকো,পারলে আবার লিচু গাছে গিয়ে বসো আর নিচে পড়ো এবার সোজা উপরেই চলে যাবা
.
আমি মারা গেলে তো আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে আর আপনি মুক্ত হয়ে যাবেন,হিয়াকে ভালোবাসতে আর কোনো কষ্ট করতে হইলো না
.
টেবিলের উপর থেকে নিজের ফোনটা নিতে গিয়ে থেমে গেলো নীল,মুনের কথায় তার রাগ হলো,এক নজর তাকালে সে ওর দিকে
মুন শক্ত চোখে এদিকেই চেয়ে আছে
এত কঠিন কথা বলার কি দরকার ওর,কেন সহ্য করতে পারে না সে হিয়াকে
হিয়া কি দোষ করেছে,ওর কি ক্ষতি করেছে?আমার আর ওর মাঝে হিয়াকে তাহা ভিলেন মনে করে সবসময়
অন্য কোনো ভিলেন হলে তাহার ক্ষতি করার চেষ্টা করতো,কিন্তু সেটা না করে সে আজ সব ছেড়ে চলে গেছে,ওকে কে বুঝাবে,সবসময় শুধু হিয়া হিয়া
.
এই যে??ওদিকে তাকিয়ে এত কি ভাবছেন বলুন তো?
.
ভাবছি তোমার পা টা আরও ভেঙ্গে দিব সাথে মাথাও ফাটিয়ে দেবো,এমনিতেও তোমার কিছু হলে সবাই আমাকেই দোষ দপয়,তো এই সুযোগ হাত ছাড়া করার মতন না
তোমার উপর রাগ ঝেড়ে নিব,দোষ তো ঘুরেফিরে আমারই হবে মাঝ খান দিয়ে আমার প্রতিশোধ নেওয়াটাও হয়ে যাবে
.
মুন একটা বালিশ বুকে চেপে ধরে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বললো”হিয়ার সাথে ঝগড়া করেছেন বুঝি?তাই আমাকে মারতে চান এখন?”
.
নীল মুচকি হেসে তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুচতে মুচতে মুনের কাছাকাছি আসলো
মুন পিছিয়ে বিছানার শেষ প্রান্তে চলে গেছে
.
হুমমমম,তোমাকে মারলে আমার অনেক লাভ,যাকে বলে পথের কাঁটা উঠে যাবে
.
আআআআপনি সত্যি আমাকে মারবেন?
.
এমন মার মারবো,এমন মার মারবো যে বোবা হয়ে যাবা তুমি,মুখ দিয়ে তখন হিয়াও বের হবে না
.
নীল একদম মুনের কাছে চলে এসেছে,মুন তো নীলের কথাটা সত্যি ধরে নিলো
কারণ নীল হিয়ার জন্য সব করতে পারে এটা সে জানে
.
কি হলো?মারার আগেই বোবা হয়ে গেলে?
.
না,আপনি আমাকে মারিয়েন না,আমি আর হিয়াপুর নাম নিব না সত্যি,গাছেও উঠবো না
.
তোমাকে তো বিশ্বাস করতে পারছি না,কি করা যায় বলোতো??
আচ্ছা প্ল্যান চেঞ্জ,তোমাকে হাত দিয়ে মারবো না
.
সত্যি?
.
পিস্তল দিয়ে মেরে দিব,এত কষ্টের চেয়ে এক গুলিতেই সাফ হয়ে যাবে
.
আপনি এমন করবেন?
.
নীল মুনের গলা আলতো করে টিপে ধরে বললো”আমি সব পারি, ঐ যে তুমি বললা না এক্সের জন্য”
.
না,প্লিস আমি মরতে চাই না এখন,আমার তো বাচ্চাকাচ্চা ও হয়নি,নাতিপুতি তো দূরের কথা
এত জলদি আমি মরতে চাই না,গলা থেকে হাত সরান আমার দম বন্ধ লাগছে
.
আরেকটু চাপ দিলেই উপরে চলে যাবা
.
না!!!!
.
নীল হেসে দিয়ে মুনের গলা থেকে হাত সরিয়ে বিছানায় ঠিক হয়ে বসলো
মুন গলায় হাত দিয়ে বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছে,ভয়ে কপাল জুড়ে ঘাম এসে গেছে ওর
নীল এমন ভাবে কথা বললো যেন সত্যি সত্যি আজই মেরে দেবে আমাকে
.
আমাকে এত ভয় পাও কেন বলোতো?তোমার গায়ে আজ পর্যন্ত হাত তুলেছি আমি?
.
তুলতেও পারেন,যেমন আজ করলেন,আমার গলা টিপে ধরলেন,আর একটুর জন্য হয়ত মরেই যেতাম,আর আপনার পথ ক্লিয়ার…..
.
এটা আর কখনও বলবে না,তুমি আমার স্ত্রী
তুমি কেন আমার জীবন থেকে যাবে?
.
আমি থাকলেই যত সমস্যা তাই
.
না,সমস্যা না সেটা হলে তোমায় জোর করে বিয়ে করতাম না আমি,সব কিছু মেনে নিয়েই বিয়েটা করেছি,আর কখনও চলে যাওয়ার কথা বলবে না
আর রইলো কথা হিয়ার,সে তার হাসবেন্ডের সাথে হ্যাপি আছে
হয়ত দুদিন পর মামা ও হয়ে যাবো
.
নিপা আপুর বিয়ে এক মাস পরে,আর আপনি দুদিন পর মামা হবেন?
.
আমি হিয়ার বাচ্চার কথা বলছি
.
বর থেকে মামা?
.
হিয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে তো আমি ওর ভাইয়ার মতন,ওর বাবু হলে তো আমি বাবুটার মামাই হলাম তাই না?
.
মুন মাথা ধরে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে,তার মাথা গোল গোল ঘুরছে
ভাইয়া থেকে সাইয়া হয় শুনছিলাম
কিন্তু সাইয়া থেকে ভাইয়া হয়ে যায় তা এই প্রথম শুনলাম
দুম!!!!!
.
তাহা তুমি ঠিক আছো??মাথা ঘুরছে তোমার?শরীর খারাপ লাগছে?
.
আপনি প্লিস আমাকে কাগজেকলমে লিখে দেন যে আপনি সত্যি সত্যি হিয়া আপুর ভাই হয়ে গেছেন আর তার বাচ্চার মামা
তাহলে আমি আজীবনের জন্য সুস্থবোধ করবো
নাহলে আমার মাথা ঘুরানো যাবে না,প্লিস জলদি করুন
চলবে♥