স্মৃতির দেয়াল পর্ব-৩৪+৩৫

0
2059

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_৩৪
Writer -Afnan Lara
.
বালতিটা উপরে ধরলো মুনতাহা,এবার বালতির সব পানি মিঃ নীলের মাথায় ঢেলে দেওয়া হবে হুহাহাহাহা!!
ঢেলে দেওয়ার আগেই হয়ে গেলো বিপত্তি
আর সেটা হলো ঠিক সময়ে নীল চোখদুটো বড় বড় করে খুলে ফেললো
বরাবর মুনের দিকে তাকিয়ে আছে সে এখন
মুন ঢোক গিলে বালতি রেখে পালালো,পিছনে আর তাকালো না
নীল বালতির দিকে তাকাচ্ছে আর মুনের চলে যাওয়া দেখছে
যা বুঝলাম তা হলো আমাকে বালতির পানিতে ভিজানোর জন্য এসেছিলো
কিন্তু আমি কি দোষ করলাম আবার,মেয়েটার মাথায় কি পোকামাকড় আছে?আমাকে নিজের বর থেকে এবার সোজা শত্রুই বানিয়ে ফেললো?
.
ভাবতে ভাবতে নীল উঠে ফ্রেশ হতে গেলো
মুন ভয়ে ভয়ে নিপার রুমে ঢুকেছে,নিপা হেসে তাকালো মুনের দিকে তারপর শাড়ীর কুচিতে সেফটিপিন লাগাতে লাগাতে বললো”কি গো!পারলে নাতো ভাইয়াকে ডেকোরেশনের দিকে পাঠাতে?”
.
হার মানার মতো মেয়ে আমি নই,উনাকে তো পাঠিয়েই ছাড়বো
.
এখন আমাকে সাজিয়ে দাও,পরে ভাইয়ার পিছে লাগিও
.
আচ্ছা
.
মুন নিপার চুলটাকে ছেড়ে দিবে নাকি খোঁপা করবে তা নিয়ে কনফিউশনে আছে,একবার গোল করছে তো একবার ছেড়ে দিচ্ছে
.
নিপা ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে বললো”ছেড়েই দাও
সামির আমার খোঁপা করা চুল পছন্দ করে না একটুও
বলে আমাকে নাকি মহিলা মহিলা লাগে
.
হিহিহি,,
.
তাহা?আমার নীল শার্টটা দেখেছো?পাচ্ছি না কোথাও
.
নীল শার্ট তো দেখিনি তবে নীলকে দেখেছি
.
নিপা ফিক করে হেসে দিলো মুনের কথায়
.
নীল তো রেগে গেলো,ভাবলো আজ মুনের হলোটা কি,আমাকে নিয়ে ফান করলো?
ওরে বুঝাবো পুলিশের সাথে ফান করার ফল
মানেটা নাহয় ব্যাকরণ ভাষায় ও বুঝিয়ে দেবো
.
নীল রেডি হয়ে বের হতেই মুন ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো,যেন এতক্ষণ ধরে এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো নীলের সামনে যাবে বলে
.
কি?এমন পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
.
আপনাকে মা বাবা আর উর্মি ভাবী বলেছেন ডেকোরেশনে হেল্প করতে,ঐ ম্যানেজারকে হটিয়ে
.
রিয়েলি?
.
অবশ্যই
.
মিথ্যা কথা বলার দরকার নাই একদমই,কারণ আমি ভালো করে জানি উনারা এসব বলবেন না,উনারা জানেন আমি এসব করতে পছন্দ করি না
.
মুন বোকার মতন চেয়ে থাকলো নীলের দিকে,তার এত সুন্দর করে গুছিয়ে বলা মিথ্যেটায় পানি ঢেলে দিলো নীল
আজিব তো!
.
আচ্ছা আমি যাই,মা মনে হয় ডাকে
.
নীল মুনের হাতের কব্জি মুঠো করে ধরে বললো”কোথায় যাচ্ছো,তোমার সাথে আমার অনেক হিসাব নিকাশ আছে”
.
কি বললেন,কিসের হিসাব?আমি কি আপনার কাছে ধারদেনা করেছি নাকি
.
সেটা করোনি তবে সকাল থেকে আমাকে প্রচুর ডিস্টার্ব করতেছো,এখন না থামালে আজ এত ভালো একটা দিন আমার তুমি হেসে খেলে নষ্ট করে দিবা
.
তো কি করবেন এখন
.
কি করবো?
.
হুম
.
চলো আমার সাথে
.
নীল মুনকে টেনে নিয়ে গেলো ডেকোরেশনের জায়গায়,সেখানে মুনকে স্টেজ সাজানোর দায়িত্ব দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো নীল
.
আপনি এটা ঠিক করছেন না কিন্তু,কাজটা আপনার,উল্টে আমি করছি এখন
.
তোমার দোষের শাস্তি,শোকর করো জেলে পুরি নাই এখনও
.
একটু ফান করলেই জেলে পুরতে হবে?
.
বাসার মালিক চাইলেই ভাড়াটিয়া বদলাতে পারে আবার ভাড়া দিতে পারে
.
আপনি একটা!!!
.
চুপচাপ স্টেজ সাজাও এখন

মা দেখেন নীল আর মুন মিলে ডেকোরেশনের কাজে হাত লাগিয়েছে
.
নিপা রেডি হয়ে এসে বললো”ভুল ভাবছো,মুন চেয়েছিলো নীলকে দিয়ে ডেকোরেশন করাবে এখন উল্টো নীল মুনকে দিয়ে সেই কাজ করাচ্ছে
.
নীল বাচ্চা মেয়েটাকে এটা কি কাজ দিলো,ম্যানেজার আর বাকি লোকদের কি অভাব পড়েছে নাকি
এসময়ে মুনের রেডি হওয়ার সময়,তোর শশুড় বাড়ির সবাই ওকে দেখবে এই অবস্থায় দেলে কি ভাববে বলতো
যা মুনকে নিয়ে আয়
.
নীল ভাইয়া আমার কথা শোনে?
.
আচ্ছা তোমরা থাকো,আমি যাচ্ছি ওদের দুজনের খুনসুটির প্যাচ খুলতে
.
নীল উর্মি ভাবীকে আসতে দেখে মুনের হাত ধরে স্টেজ থেকে নামিয়ে পাশে দাঁড় করালো
.
ভাবী মুচকি হেসে বললেন”দেবরমশাই,আমার চোখে ধুলো দেওয়া এত সোজা না,নতুন বউকে দিয়ে কাজ করাচ্ছো?এখন এই কাজ তুমি করবে,আর মুনের অন্য কাজ আছে”
.
নীল ব্রু কুঁচকে বললো”কি কাজ?”
.
তোমার বউকে নিয়ে পালিয়ে যাব না আমরা,অন্য কাজ আছে,নিজের চোখেই দেখবে
.
ভাবী মুনের হাত ধরে নিয়ে গেলেন,একেবারে সোজা নীলের রুমে,সেখানে পপি ভাবী আর মিশু ভাবী উপস্থিত আছেন
পপি ভাবীর হাতে স্বর্নের একটা মোটা হার, আর মিশু ভাবীর হাতে গোলাপি শাড়ী,,তিনজন মিলে মুনকে বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে দিলেন
মুন বারবার বলছে এঙ্গেজমেন্ট আসলে কার
.
ভাবীরা ওর কান টেনে বললেন”নিপার,তবে উনারা আগ্রহ করে আজ নীলের ওয়াইফকে দেখতে চাইবে তাই এত আয়োজন”
.
মুন সেজেগুজে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো,,নীল গালটা ফুলিয়ে স্টেজ সাজাচ্ছে
চ্যালেঞ্জ জিততে পেরে গর্বে মুনের নাচতে মন চাচ্ছে
একটু ঢং করে দাঁড়ালো সে তারপর লিচু গাছের একটা শুকনো ঢাল নিয়ে নীলের পিঠের দিকে ছুঁড়ে মারলো
নীল পিঠে হাত দিয়ে পিছনে তাকিয়ে আটকে গেছে,মেজাজ গরম নিয়ে তাকিয়ে ছিলো তবে মুনকে আজ অন্যরকম সাজে দেখে সে সব ভুলে কাত হয়ে গেছে একেবারে
মুন ভাবলো নীল বুঝি রেগে হনহনিয়ে আসবে শাস্তি দিতে কিন্তু তা আর হলো কই,উল্টো নীল হ্যাং হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
মুন তার দুহাত রেলিংয়ে রেখে দাঁত কেলিয়ে বললো”মে ইতনি সুন্দার হু মে কেয়া কারু!!”
.
নীলের মনে পড়লো মুন অতিরিক্ত দাম দেখাচ্ছে,মুখটা ঘুরানের আগে সে বললো”তো মইরা যাও”
.
নীলের রুমের নিচে ডেকোরেশন টা হচ্ছে বলে দুজন উপর নিচে থেকে ঝগড়া চালিয়ে যাচ্ছে
মুন তো রেগে বললো”একা মরতাম ক্যান,আপনি সহ মরেন!সাথে হিয়াকে নিয়ে”
.
নীল শুকনো ঢাল টা খুঁজে বের করে সেটা ফেরত মুনের গায়ে মেরে বললো”আর একবার হিয়ার নাম নিলে গোটা লিচু গাছটা তুলে গায়ে ফেলবো তোমার,, চিনো আমাকে?”
.
হ্যাঁ,দ্যা বিচুটিপাতা পুলিশম্যান
.
কথাটা বলে মুন গায়েব নিমিষেই,,নীল কোমড়ে হাত দিয়ে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে ভাবলো মুন বেশি সাহস দেখাচ্ছে আজ সকাল থেকে,আমাকে কি ওর ভয় লাগেনা??ভয় লাগার কাজ করে আজ ওর ভয় পাওয়াবো ভালো করে
.♣
কি গো মুনতাহা,শেষমেষ আমার ভাইয়াকে দিয়ে কাজে হাত লাগিয়েই ছাড়লা তাহলে
.
আমার ওতো সাধ্য নাই,,আমি তো এটা করতে গেলাম উল্টো আমাকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলেন উনি
পরে উর্মি ভাবী এসে বাঁচালেন
.
হিহি,তাও,জিতলে তো
.
হুমম,খুব ভাল্লাগছে
.
নীল দূরে থেকে সবটা শুনলো,দাঁতে দাঁত চেপে বললো”ভাল্লাগছে?ভালো লাগাচ্ছি”
.
তাহা?
.
হুম,কি?
.
একটু রুমে আসো তো,আমার ওয়াচ পাচ্ছি না
.
আপনার আজ কি হয়েছে বলুনতো,একবার একটা পাচ্ছেন না
.
নীল মুনের কথার জবাব না দিয়ে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো রুমে,,রুমে ঢুকিয়ে দরজাটাও লাগিয়ে ফেললো
মুনের আর বুঝতে বাকি নেই তার আর নিপার কথা নীল সবটা শুনেছে
মুন তো ভয়ে একসের হয়ে দেয়ালের সাথে লেগে আগে থেকেই পিঠে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে
যদি আবার ঐদিনের মতো করে সেই ভয়ে
.
নীল মুচকি হেসে দেয়ালে হাত রেখে বললো”চ্যালেঞ্জ? ”
.
না,ও কিছু না,এমনি আমি আর নিপা আপু এমনি এমনি কথা বলছিলাম
.
আমাকে দিয়ে কাজ করানোর
.
না সত্যি,,ওসব কিছু না
.
নীল মুনের থুতনিটা টিপে ধরে বললো”ওসব না?তাহলে কি?”
.
চুমু দিবেন?
.
হঠাৎ এই কেমন প্রশ্ন!
.
চুমু দিবেন সেটা বললে শান্তিতে ঢোক গিলতাম,ভয়ে ঢোক গিলি নাই অনেকক্ষন হলো
.
গিলো,আমি চুমু দিব না,বাচ্চাদের নীল চুমু দেয় না
.
চুমু তো বাচ্চাদেরই দেয়
.
ও!! তুমি ঐ চুমু বুঝিয়েছো?
.
তো আপনি কোন চুমু বুঝিয়েছেন?
.
কিছু না,ঢোক গিলে নাও
.
গিললে কি করবেন?
.
এত কথার প্যাচ কি করে লাগাতে পারো বলোতো,পাগল একটা তুমি,আগে জানতাম না এত পাগলামিতে ভরপুর তোমার গোটা মাথা,ডেইলি নতুন করে তোমার একটা অভ্যাসের সাথে পরিচিত হচ্ছি আমি
.
বিয়ের দিন থেকেই পরিচিত হতেন,হিয়ার নাম নিয়েই তো গাফলা করে দিলেন
.
আচ্ছা ওসব বাদ,,আমি কোথায় ছিলাম যেন?
.
চুমু
.
উফ!!কিসের চুমু,আমি বলছিলাম আমাকে দিয়ে ডেকোরেশন এর কাজ করাইলা সেটার কথা
.
ও হ্যাঁ
.
হুমম,,,তো এখন তুমি আমার একটা কাজ করবে
.
কি কাজ?আমার এমনিতেও অনেক কাজ,নিপা আপুর শশুড় বাড়ির লোক এসে পড়বে এখন
.
আমার নীল শার্টটা এখনও পাইনি,খুঁজে দাও
.
আলমারিতেই থাকার কথা
.
আলমারির সব জামাকাপড় আমি বের করেছি,পাইনি
.
তো আমি কোথায় পাবো?
.
কথা বলতে বলতে মুন আলমারি খুললো,জামা যা আছে সবগুলোর মধ্যপ ২০টাই নীল রঙের
মুন কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”মজা করলেন?”
.
একদমই না,হালকা+ডিপ ব্লু রঙের মিশ্রনের একটা শার্ট আছে এই সব গুলো নীলের মধ্যে,মানে উপরে ঘাড়ো নীল আর তার সাথে মিশে আছে হালকা নীল,আমার অনেক প্রিয়
ওটা খুঁজে দাও,তাহলে তোমাকে মাফ করে দিব
.
মুন দুটো শার্ট দুইহাতে নিয়ে রঙ মেলাচ্ছিলো,ওর মাথা এখনই ঘুরাচ্ছে,,বাকি ১৮টা কে চেক করবে,ওমা গো,বাঁচাও গো
.
হেহে!আমাকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ ধরা! এবার বুঝো

কিরে নীল?মুনতাহা কোথায়?
.
শার্ট পাই না বলে ওকে খুঁজতে দিয়েছি,,সমস্যা নেই,সামিররা আসার আগেই ও এখানে এসে যাবে
.
তুই বুঝি এখন এই জামা পাল্টে নীল জামা পরবি??মেয়েটাকে জ্বালাতে ভাল্লাগে তোর?
.
ও আমাকে জ্বালায় তখন তোমরা দেখো না
.
ও বাচ্চা মেয়ে,কিন্তু তুই তো বাচ্চা না,,এনাফ ম্যাচিউর
সুন্দর করে বুঝিয়ে শুনিয়ে ওকেও ম্যাচিউর করে তুলতে হবে তোকে
.
যেদিন ওকে গাছে দেখেছিলাম সর্ব প্রথম সেদিন আমার মানা উচিত ছিলো ও এক নাম্বারের বাঁদরনি,,যাই হোক,যে টাস্ক দিয়েছি ওসবেই ওর আক্কেল দাঁত উঠে যাবে
.
তোরা দুজন আসলেই অুবুঝ,একজন আরেকজনকে শাস্তি দেওয়ার পিছনে লেগে থাকিস
অবশ্য এতদিন তো এটা ছিলে না,হুট করে তোরা একসাথে বদলে গেলি কেন
.
ধরে নাও মাঝের দেয়ালটা হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি
.
কেন?কি এমন হলো?
.
নীল টিভি অন করে সোফায় বসতে বসতে বললো”যার জন্য দেয়াল ছিলো সে এখন আরেকজনকে মেনে নিয়েছে হাসি হাসি,তাই ভাবলাম আমি কেন আর দেয়াল রাখবো”
.
মা হাসলেন,মায়ের হাসির উজ্জ্বলতায় নীল অবাক হলো
যেন মা হাতে আকাশের চাঁদ পেয়েছেন এতটা খুশি হয়েছেন তিনি
.
নীল টিভিতে চোখ রাখার আগেই ওর চোখ পড়লো মুনের উপর
মুন হাতে নীল শার্টটা নিয়ে আসছে এদিকে,,এত জলদি পেয়ে যাবে ভেবে নীল অবাক হলো
মুন শার্টটা ওর দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো”এখন এটা না পরলে মেরে হাঁড়গোড় ভেঙ্গে দিব”
.
পরবো না,মন চাইছে না আসলে,আই এম বিজি
.
মুন টেবিলের উপর থেকে জুস এক গ্লাস নিয়ে বললো”পরবেন না সত্যি???”
.
এই এই,এসব কি,,টম এন্ড জেরি শো চলছে নাকি এখানে?
চলবে♥

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_৩৫
Writer -Afnan Lara
.
যাই হোক,আমার কথা না শুনলে আমি এখন জুস সব আপনার গায়ে ঢেলে দেবো,ভাল্লাগবে??
.
জেলে পুরে দিব ধরে
.
দিয়েন,,জেলে গেলে যাব তাও জুস ঢেলেই ছাড়বো আমি
.
ফাইন,যাচ্ছি চেঞ্জ করতে
.
নীল মুনের হাত থেকে শার্টটা ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো
মুন দাঁত কেলিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে,,এরপর চোখ ফিরিয়ে বাসার গেটের দিকে তাকাতেই মুন দেখলো একটা কার ঢুকছে,কারটা চেনা চেনা লাগলো,
আরেহ এটা তো হিয়া আর সাকিবদের কার
ওরা আসছে কেন?আজকের দিনটায় পানি ঢেলে দিবে,নিশ্চয় নীল ইনবাইট করেছে,অসভ্য একটা!
.
হিয়া কার থেকে নামলো,,পরনে সবুজ রঙের একটা শাড়ী যার আঁচলটা সম্পূর্ণ নীল
.
মুন তো এটা খেয়াল করে চোখ কপালে উঠিয়ে ফেলেছে,,তারমানে নীল আর হিয়া আজ সেম কালারের ড্রেস পরা থাকবে?
না এটা কিছুতেই হতে পারে না!!আমার এখন কি করা উচিত?
ভাবতে ভাবতে মুন নিজের হাতে থাকা জুসের গ্লাসটার দিকে তাকালো
হিয়া আর সাকিব কার থেকে নেমে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলছে
মুন এই সুযোগে জুস গায়ে ঢেলে দিয়ে দৌড়ে মায়ের কাছে গেলো,মা নিজের রুমে রেডি হচ্ছেন
.
একি রে!! তোর গায়ে জুস পড়লো কি করে?
.
উনাকে জুস দিতে গিয়ে ভুলে আমার গায়ে পড়ে গেলো,,এখন কি করবো?তোমার কাছে কোনো নীল শাড়ী আছে??একদম গোটা নীল রঙ এমন টাইপের
.
শাড়ী তো আছে,তবে তোর গোটা নীল রঙের লাগবে কেন?
.
দাও না,প্লিস
.
আচ্ছা ঠিক আছে,দিচ্ছি,আমার একটা নীল শাড়ী আছে,,নিপার বিয়ের দিনগুলোতো পরবো বলে দুটো শাড়ীর সাথে ঐ একটাও নিয়েছিলাম,ওটা তুই রেখে দে বরং
.
মুন তো শাড়ী হাতে পেয়ে লাফিয়ে উঠেছে,এক দৌড়ে নীলের রুমে চলে গেলো সে,গিয়ে দরজাও লাগিয়ে ফেললো,,হিয়া আর সাকিব এখনও গেটের কাছে কিসব আলাপ করছে
আল্লাহ!!! ওরা যেন আজ ওখানে দাঁড়িয়ে গল্প করতেই থাকে,বাসার ভেতর আর আসার দরকার নাই
.
মুন গায়ের শাড়ী খুলতে খুলতে হিয়া যেন বাসায় না আসে সেই দোয়া করছে,তখন নীল রেডি হয়ে ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে মুনকে এমন বেশে দেখে একটা চিৎকার করলো
মুন ও চিৎকার করলো,তারপর দুজনে চুপ হয়ে গেলো
মুন আরেকদিকে ফিরে গিয়ে বললো”চিৎকারের কি আছে,ওয়াসরুম তো একটাই,তাই আমি এখানেই চেঞ্জ করছিলাম,আপনার কি সমস্যা?”
.
তুমিও তো চিৎকার করলে,চেঞ্জ করতেছো ক্যান!গোলাপি শাড়ীটা তো ভালো ছিলো
.
অনেক ভালো ছিলো,তবে আমার সেটা ভাল্লাগে না বলে চেঞ্জ করতেছি,আর একটা কথা- আপনার সাহস হলো কি করে হিয়া আর সাকিবকে নিপা আপুর এঙ্গেজমেন্টে দাওয়াত করার?কোন দিকের আত্নীয় হয় আপনার??
মায়ের কাছে বিচার দেবো আমি আপনার নামে
.
কি বললে?হিয়া এসেছে?
.
হুম,আপনার পিয়া এসেছে,উড়ে যান তার কাছে
.
নীল সেদিকে ছুটতেই মুন শাড়ী হাতে নিয়ে দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে বললো”যতক্ষন না আমি শাড়ীটা পরে নিব ততক্ষণ আপনি এখানে থাকবেন,আমার সাথে বের হবেন”
.
তো পরো শাড়ী
.
মুন নীলের দিকে তাকাচ্ছে আর একটা করে কুচি ধরছে
নীল হঠাৎ নিচে বসে কুচি ঠিক করে গুছিয়ে দিতে দিতে বললো”আমার দিকে নজর দিতে হবে না,পালাচ্ছি না,কুচিতে নজর দাও,সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে”
.
এত সুন্দর করে কুচি ধরছেন,এক্সপেরিয়েন্স আছে অনেক?
.
মায়ের শাড়ীর কুচি ঠিক করে দিতাম সবসময়
.
মুন আঁচল কাঁধে উঠিয়ে বড় করে শ্বাস নিয়ে বললো”চলুন যাই”
.
নীল মুনকে নিয়ে সোফার রুমের দিকে আসলো,হিয়া আর সাকিব নিপার সাথে কথা বলছে
নিপা পিছন ফিরপ নীলের দিকে চেয়ে বললো”ভাইয়া জানিস,হিয়া আপুরা নাকি সামিরদের বাসার দোতলায় থাকে,এবং সামিরের অফিসের কলিগ হলো সাকিব ভাইয়া,,সেই সূত্রে আজ আমাদের গেস্ট উনারা”
.
ওহ!
.
মুন মনে মনে ভাবছে তার মানে নীল দাওয়াত দেয়নি
.
হিয়া মুন আর নীলের দিকে তাকিয়ে আছে চুপচাপ,কারণ ওরা দুজন একই রঙের জামা- শাড়ী পরেছে,,মুন দাঁত কেলিয়ে বললো”দাঁড়িয়ে আছো কেন তোমরা,বসো না,এই যে শুনুন,আমার সাথে একটু আসবেন রান্নাঘরে
.
নীল ফিসফিস করে বললো”আমি এসে কি করবো?”
.
যেটা বলছি ওটা করেন
.
মুন চোখ রাঙিয়প চলে গেলো,নীল ও পিছু পিছু আসলো,,
শরবতে চিনি দিতে দিতে মুন বললো”নাস্তা বানাচ্ছি ওগুলো ওদের দিয়ে আসবেন,আমার একা হাতে এত কাজ হবে না”
.
বাকিরা কোথায়?নাহার কোথায়?
.
সবাই রেডি হতে যে যার রুমে গেছে,নাহার বাগানে বাবুর্চিদের কাজে গেছে মশলা বাটতে,উনারা যে মহিলা এনেছেন উনার কাজ নাকি স্লো
.
ওহ,,শরবতে চিনি কম দিও,হিয়া চিনি কম খায়
.
মুন চোখ রাঙিয়ে বললো”দেখি বলুন তো!আমি শরবতে কয় চামচ চিনি খাই??”
.
নীল পকেটে হাত ঢুকিয়ে তাকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”এক চা চামচ আর তার সাথে এক চিমটি ”
.
মুন ইয়া বড় হা করে বললো”আপনি জানলেন কি করে?
.
কিছু কিছু ওয়াইফ মনে করে তাদের স্বামী সারাদিন অন্যের স্ত্রী নিয়ে ভাবে আসলে এটা কিন্তু ফেক,,সে আসলে নিজের স্ত্রীর কথাই বেশি ভাবে
.
আহারে এসেছে আমার বীরপুরুষ, ধরেন ট্রে,চলুন আমার সাথে,শরবত আর বিসকিট দিয়ে এসে চা পাঠাবো,এই ট্রে দিয়ে এসে আবার ওখানেই আটকে যাইয়েন না
.
নীল মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো,,হিয়া কানের দুলটা ঠিক করে পরছিলো খুলে গিয়েছিলো বলে,,সাকিব সেটা ঠিক করে দিচ্ছে নিজ থেকেই
নীল ওদের দেখে মুচকি হেসে ট্রেটা সেন্টার টেবিলের উপর রাখলো
হিয়া ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে,এখনও নীলকে খেয়াল করেনি সে
সাকিন দুলটা ঠিক করে দিতে দিতে বললো”দুল খুলে গেলে এতটা বিচলিত হওয়ার দরকার নেই,এই দুল হারালে আমি তোমায় বকবো না,বরং তোমার মন ভালো করতে আরেকটা এনে দেবো”
.
সেটা জানি,তবে আমি কোনো কিছু হারিয়ে ফেললে সেটার স্মৃতি সহজে ভুলতে পারি না
.
নীল যখন বুঝলো ওরা দুজন ওকে খেয়াল করেনি ও চুপচাপ কেটে পড়েছে
মুন তাকের উপর উঠে উঁকি মেরে দেখছে সোফার রুমে কি ঘটছে
নীল রান্নাঘরে এসে দেখলো রান্নাঘর ফাঁকা,কিন্তু মুন গেলো কই?
মুন??
.
চুপপপপ,আস্তে,দেখতে দাওও
.
কি দেখতে দিতাম,আরে তুমি উপরে কি করছো?
.
ওহহহ,আপনি এসে পড়েছেন,আসলে এখান থেকে সোফার রুমটা ভালোমতন দেখা যায় না করিডোরের কারণে
.
সোফার রুম দেখে কি করবা তুমি?
.
খই ভাজবো,সরুন,আমি নামবো,,চা বানাচ্ছি,আমাকে কাপ ধুয়ে দেন
.
আমাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছো
.
স্ত্রীকে কাজে হেল্প করা সুন্নত
.
আমাকে হাদিস শুনাচ্ছো??আমি হাদিস শুনানো শুরু করলে কোথাও থাকার কূল পাবা না
হাদিয়ে লিখা নাই স্ত্রী সারাদিন স্বামীর কানের কাছে পেনপেন করবে,যেটা তুমি করো,আইছে আবার আমাকে হাদিস শুনাইতে
.
হইছে,আবার শুরু করিয়েন না
.
মুন চা বানিয়ে নিয়ে বললো”ওকে চলুন যাই,,কি ভাগ্য আমার,হাসবেন্ডের প্রাক্তনের জন্য নাস্তা নিয়ে যাই”
.
নীল মুনের কান টেনে ধরলো সাথে সাথে,,দুজনকে এমন অবস্থায় হিয়া দেখলো,তারপর মুচকি হাসলো,কারণ সে বুঝে গেছে সে নীলের হবার আর কোনো চান্স নেই,আর তার ও সাকিবের হয়ে যাওয়া উচিত
বিধাতা দুদিকের নাম দুদিকে লিখে দিয়েছে,মেনে নেওয়া উচিত আমার
.
কি ভাবো হিয়াপু,চা ঠাণ্ডা হচ্ছে খেয়ে নাও,আর সাকিব ভাইয়া আপনিও
.
জি ম্যাডাম!নীল তোমার ওয়াইফ এরকম চটপটে কথা বলে আগে জানতাম না,ঐবার দেখে মনে হয়েছিলো চুপচাপ প্রকৃতির
.
নীল আস্তে করে বললো”ও কি জিনিস কেবল আমি জানি”
.
মা বাবা রেডি হয়ে সোফার রুমে আসতেই নীল আর মুনকে এক সাথে একই রঙে দেখে খুব খুশি হলেন,হিয়া আর সাকিবকে রেখে আগে ওদের দিকেই চোখ গেছে তাদের
এরই মাঝে সামিরদের বাসার সবাই চলে এসেছে,,,নীল সামিরকে জড়িয়ে ধরে বললো”কি খবর,অনেকদিন পর দেখলাম”
.
ভালো,,আপনি কেমন আছন?
.
আপনি বলিও না ভাই,আমরা একই বয়সী
.
সামির ভেতরে ঢুকতেই মুন এসে সালাম দিলো
সামির মুচকি হেসে বললো”নিপার ছোট ভাবী তার মানে আমার ও ভাবী,,আমার বড় হোন সম্পর্কে,সালাম তো আমার দেওয়া উচিত”
.
মুন দাঁত কেলালো,,এক এক করে সবাই ভেতরে ঢুকছে
সামিরের মা বাবা এসেই বললেন”নীলের নতুন বউ কোথায়”
.
মুন সেদিকে গেলো দেখতে,,,নীল আর মুনকে একসাথে করে রেখেছে সবাই,আলাদা হতেই দিচ্ছে না,হিয়া এক কোণায় দাঁড়িয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে সেই কখন থেকে
এমন একটা দিন আসবে কখনও ভাবিনি আমি,ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারোর,,আমার জায়গা অন্যজন নিয়ে হাসছে,এখানে আমার থাকার কথা ছিলো,কিন্তু সেটা হলো না
সাকিব হিয়ার হাতটা ধরলো,,হিয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো”ওদের দেখতে ভাল্লাগছে”
.
হুমম,,যেমনটা আমাদের
.
হিয়া সাকিবের দিকে ফিরে বসে বললো”কি করলে আমি একেবারে নীলকে ভুলে যেতে পারবো?”
.
অনেকদিন হলো,,,এবার বাবা হয়ে গেলে হয়ত এমন একটা দিনে ছেলের এঙ্গেজমেন্ট করাবো
.
হিয়া সাকিবের হাতটা ছেড়ে দিলো,তারপর কিসব ভেবে কপালের ঘাম মুছে বললো”আচ্ছা”
.
হিয়ার মুখে আচ্ছা শুনে সাকিব তব্দা খেয়ে গেছে,,সে হিয়ার হাতটা আবারও ধরে বললো”মজা করছো না তো?নাকি জেদের বশে?আমি কিন্তু সিরিয়াস”
.
আমিও সিরিয়াস,,পারবে না আমাকে বাচ্চার মা বানিয়ে দিতে?ওর মুখের দিকে চেয়ে আমি সব ভুলে যেতে পারবো হয়তবা
.
সাকিব পকেট থেকে একটা সোনালী রঙের ব্রেসলেট বের করে হিয়ার বাম হাতে পরিয়ে দিলো সাথে সাথে
বিয়ের এ কটা বছর হিয়া অনেকবার সাকিবের থেকে গিফট পেয়েছে,তবে আজকের গিফটটা আলাদা স্পেশাল মনে হচ্ছে
হিয়া চোখ তুলে তাকালো সাকিবের দিকে
সাকিব মুচকি হেসে বললো”তিনটা বছর ধরে এই ব্রেসলেট নিয়ে ঘুরছি আমি”
.
কেন??
.
তুমি আমাকে মেনে নিবে সেটা শুনার অপেক্ষায়,ঠিক করে রেখেছিলাম তুমি আমাকে মেনে নিলে আমি এটা তোমাকে পরাবো,আর আজ সেটা সার্থক
.
হিয়ার চোখে পানি এসে গেছে,তবে আজ সেটা নীলের জন্য না
সাকিবের জন্য,সাকিব ওকে সত্যিই ভালোবাসে,আর সে ওকে এতটাদিন দেয়ালের ওপারে রেখেছে
ওর ভালোবাসার কাছে আজ সে নিজেই হেরে গেলো
.
মুন নীলের চোখের দিকে খেয়াল করছে
হিয়ার দিকে তাকালে জোরেশোরে চিমটি কেটে দিবো একদম,আজ এক বিন্দু ও ছাড় দেবো না উনাকে
যে আমার সে শুধু আমার,চোখ তুলে ফেলবো একদম
.
কি গো মেয়ে?বরের দিকে ওমন করে তাকাচ্ছো যেন গিলে খাবে
.
মুন ঢোক গিলে চোখটা সামিরের মায়ের দিকে ফিরিয়ে বললো”ঐ আসলে এতবড় মানুষ তো গলা দিয়ে যাবে না সেটাই ভাবছিলাম”
.
হাহা!!
.
নীল ব্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিকে
মুন আমাকে গিলে খেতে চাচ্ছে কেন?আমি কি করলাম আবার,হিয়ার সাথেও তো তেমন কথা হলো না, তাহলে কারণ কি?
এই মেয়েটার মাথা খারাপ,হুদাই আমাকে গিলে খেতে চায়
.
নীল চলে গেলো মায়ের কাছে,মুন ও পিছু নিলো
.
করিডোর দিয়ে দুজন মিলে যাচ্ছে,নীল পিছনে ফিরে বললো”আমাকে ফলো করছো কেন বলোতো?”
.
আমি হলাম মৌমাছি
.
তোহ?
.
আপনি হলেন মধু
চলবে♥