#সৎ_মা (১৬)
#সামসুজ্জামান_সিফাত
অবশেষে আমরা আরিফের বাড়ি চলে এলাম। আমাদের দুজনকে এক সাথে দেখে আরিফের পরিবারের সবাই অবাক হয়ে গেল। আরিফের মা এসে বলে উঠলো,”কি রে তোরা দুইটা কি সত্যি সত্যি ই এসেছিস নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি।”
আমি বললাম,”স্বপ্ন দেখছেন আন্টি।”
আন্টি আমার কান মলে দিয়ে বলল,”দেখ বাঁদর বলে কি ? আমি স্বপ্ন দেখতে যাবো কেন ?”
আমি একটু হেঁসে বললাম,”আসলেই তো স্বপ্ন দেখবে কেন ? স্বপ্ন রাতে দেখে আর এখন তো দিন।”
– হয়েছে আর পাকনামো করতে হবে না।
আন্টি এবার আরিফের কান ধরে বলল,”কিরে হতচ্ছাড়া কিছু বলবি না নাকি ?”
আরিফ একটু অভিমানি সুরে বলল,”আমাকে কথা বলার সুযোগ দিয়ছো কি ?”
– কথা বলার জন্য আবার সুযোগ লাগে নাকি। আচ্ছা বাদ দে এসব। এখন বল দেশে এলি কবে ?
– এই ত দেশে এসে ই বাড়ি আসলাম।
– দেশে আসছিস আমাদের বলিসনি কেন ?
– তোমাদের চমকে দিব বলে।
– সিফাতের সাথে দেখা হলো কীভাবে ?
– আমি তাকে কালকে ফোন করে বলে দিয়েছি যে, আজকে আসবো সে যেন বিমানবন্দরে থাকে।
এবার আন্টি আবার আমার কাছে এসে বলল,”আমার হতচ্ছাড়া টা না হয় বলেনি, তুই তো একবার বলতে পারতি নাকি ?”
– আমি বললে পরে ত তোমার এই হতচ্ছাড়া টা আমাকে ই ধরতো।
আরিফ এবার রেগে গিয়ে বলল,”দেখো মা দেখো, তোমার দেখাদেখি সবাই আমাকে হতচ্ছাড়া বলে।”
– বলে ভালো করে। এখন কথা বাদ দিয়ে দুজনে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে একটু বিশ্রাম কর আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।
দুজনে কিছু না বলে হাত মুখ ধুয়ে আরিফের রুমে চলে এলাম। আরিফ কাপড় পাল্টাতে পাল্টাতে বলল,”কিরে বিয়ে সাদী করবি না নাকি ?”
– করবো রে করবো। তুই করবি না ?
– হ্যাঁ, বিয়ে করবো বলে ই ত দেশে আসলাম।
– ওহ্ আচ্ছা। তা কতদিন আছিস দেশে ?
– এসেছি ত তিন মাসের জন্য। তবে এর আগে যদি ডাক পরে তাহলে চলে যেতে হবে।
– ওহ্ আচ্ছা।
– হ্যাঁ। আচ্ছা দোস্ত ভালো একটা মেয়ে দেখ ত। তবে কোনো বড়লোকের মেয়ে না আর সুন্দরী লাগবে না। কথা হলো, মন ভালো থাকতে হবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– আমি চাই, এমন কাউকে জীবন সঙ্গিনী বানাবো, যার মনে কি না কোনো হিংসা নেই। যে কি না, গরিব মানুষ কে মানুষ বলে ই গন্য করে।
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে আরিফের মা বলল,”এই ত একটা কথার মতো কথা বললি। হ্যাঁ সিফাত তোর বন্ধু যেমন বলেছে ঠিক সেরকম ই একটা মেয়ে দেখ তাহলে। আমরা ও দেখি পাই কি না।”
– আচ্ছা আন্টি।
আন্টি আবার চলে গেল। মনে হয় ঘরের সামনে দিয়ে যাবার সময় আরিফের কথা শুনে ঘরে ঢুকে কথাটা বলল। এবার আরিফ আমায় জিজ্ঞেস করল,”তুই কবে বিয়ে করবি বল ?”
– করবো রে করবো, সময় হোক তারপর করবো।
– কবে সময় হবে বুড়ো হয়ে গেলে নাকি ?
– নারে দোস্ত, আগে বোন, মামা-মামী আর মামাতো বোন কে খুঁজে বের করি তারপর।
– আচ্ছা। কিন্তু তাদের কোনো ছবি আছে তোর কাছে ?
– এই টাই ত সমস্যা রে, আমার কাছে ওদের কোনো ছবি নেই। ছবি থাকলে এতদিনে ওদের খুঁজে বের করে ফেলতাম।
– আচ্ছা সমস্যা নাই। কালকে না নরসিংদী যাওয়া হবে ? তখন না হয় আবার তোর মামার বাড়ি গিয়ে কিছু তথ্য জেনে আসবো।
– আচ্ছা।
দুজনে মিলে কথা বলতে লাগলাম। একটু পর আরিফের মা এসে কিছু শুকনো খাবার দিয়ে আমাকে বলে গেল, দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে যাওয়ার কথা। সাথে আরিফ ও একি কথা বলল। তাই ভাবলাম, বিকেলে একবারে আরিফকে নিয়ে বাড়ি যাবো।
দুপুর তিনটার দিকে খাবার শেষ করে কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে আরিফ কে নিয়ে বের হয়ে যাই। সোজা বাড়ি চলে এলাম। মা আর আরিফ কথা বলতে লাগলো। আমি আমার ঘরে চলে এলাম। আরিফ মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আমার ঘরে এসে বলল,”আয় ঘুরে আসি।”
– ঠিক আছে চল।
আরিফ অনেকদিন পর দেশে আসলো, তাই আমি ও ভাবলাম তাকে নিয়ে শহর টা একটু ঘুরা যাক। দুজনে গাড়ি নিয়ে বের হলাম। আরিফ বলল সে গাড়ি চালাবে। তাই আমি ও তাকে ই চালাতে দিলাম। হঠাৎ করে ই আরিফ গাড়ি থামিয়ে ফেলল। আমি জিজ্ঞেস করলাম,”কি রে গাড়ি থামালি কেন ?”
সে রাস্তার ওপাশে হাত দিয়ে একটা মেয়েকে দেখিয়ে বলল,”দোস্ত দেখ ত ওই মেয়েকে তোর ভাবি বানালে কেমন হয় ?”
– মনে ত হচ্ছে ভালো ই হয়। আচ্ছা তুই এক কাজ কর, মেয়েটার সাথে কথা বলে আয় গিয়ে।
– আচ্ছা, তাহলে তুই বস আমি আসছি।
আরিফ মেয়েটার কাছে গেল। কিছুক্ষণ কথা বলার পর সে ফিরে এলো। তবে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি দেখতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম,”কি রে কাজ হয়ে গেছে নাকি ?”
– ভেবে বলবে বলেছে।
– তা ভাবির নাম কি ?
সে জিহ্বা কামড়ে বলল,”এই যা দেখি, নাম ঠিকানা ই ত জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। এবার কি হবে ?”
– আবার জিজ্ঞেস করে আয় গিয়ে।
বলেই ওইদিকে ফিরতে দেখি মেয়েটা আর নেই। অনেক্ষণ খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। মনে হয় চলে গেছে। রাত দশটা পর্যন্ত পুরো শহর টা ঘুরলাম দু’জনে। তারপর একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে আরিফকে নামিয়ে দেবার জন্য আরিফের বাড়ির সামনে এলাম। আরিফ বলে উঠলো,”সিফাত আজকে আমার বাড়ি থাকলে হয় না ?”
– নারে বাড়িতে সবাই চিন্তা করবে।
– বাড়িতে ফোন দিয়ে জানিয়ে দে।
– না অন্য একদিন থাকবোনে।
– অন্য একদিন না আজকে ই থাক। বলা ত যায় না কখন কি হয়ে যায়। যদি আজকে যারা যাই তাহলে পরে কি আর একসাথে থাকা হবে ?
ভেবে দেখলাম, আরিফ ঠিক ই বলেছে। কারণ, হায়াত মৌৎয়ের কথা বলা যায় না। কখন কার কি হয়ে যায়। তাই রাজি হয়ে গেলাম।
পরেরদিন সকালে আরিফের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে দশটার দিকে দুজনে নরসিংদীর উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
অবশেষে নরসিংদী চলে এলাম। আকিবের শশুর বাড়ি ঢুকতেই কয়েকজন মিলে আমায় ঘিরে ফেলল। কিছু বুঝে উঠার আগে ই একজন আমায় বেঁধে ফেলল। কই থেকে যেন আকিব এসে বলতে লাগলো,”এবার মজা বুঝ চান্দু। এই ক’দিন আমি মজা বুঝেছি। কেন সেদিন এত চালাকি করতে গিয়েছিলি ?”
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একটি মেয়ে বলে উঠলো,”এখন আমাদের টাকা দিন নয়তো ছাড়া পাবেন না। ওইদিন পঁচিশ হাজার দিলেই চলতো, কিন্তু আজকে আর পঁচিশ হাজারে চলবে না। আজকে আমাদের পঞ্চাশ হাজার দিতে হবে। নয়তো কোনো ছাড়া ছাড়ি নেই।”
– এত টাকা! পাঁচশো টাকায় হয় না ?
পাশ থেকে আকিবের বৌ বলে উঠলো,”দেখ কিপ্টামি করবি না।”
– এই কথা বলতে পারলেন ভাবি ?
– জ্বি মশাই বলতে পারলাম।
আরেকজন বলে উঠলো,”এত কথা না বলে টাকা গুলো দিয়ে দিন।”
আমি মন খারাপের বান করে বললাম,”একটা এতিম ছেলের থেকে টাকা নিতে আপনাদের বিবেকে বাঁধা দিবে না একবার ও ?”
দেখলাম, নাদিয়া মাথা নুইয়ে ফেলল। এবার সে সবাইকে বলল,”এই তোরা সিফাত কে ছেড়ে দে। আর তোদের টাকা লাগবে তাই না ? আচ্ছা ঠিক আছে।”
এবার নাদিয়া তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,”বাবা ওদের তুমি টাকা দিয়ে দাও।”
সবাই নাদিয়ার কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,”কি রে হঠাৎ মত পাল্টে দিলি কেন ?”
– আমার সাথে একটু আসো বলছি। সিফাত তোরা বস আমরা আসতাছি।
বলে ই নাদিয়া সবাইকে নিয়ে অন্য ঘরে গেল। কিছুক্ষণ পর সবাই একে একে এসে ক্ষমা চাইতে লাগলো। আমি ত কিছু ই বুঝলাম না। পাশে আরিফ ছিল। তার কানের কাছে গিয়ে বললাম,”কিরে কি হলো ? কিছু ই ত বুঝলাম না। সবাই এভাবে ক্ষমা চাইলো কেন ?”
– আরে বেটা তুই যে বলেছিস তুই এতিম তাই জন্য মনে হয়।
– ওহ্ আচ্ছা।
তারপর আরিফকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। সবার সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে, আকিব, নাদিয়া আর আরিফকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য প্রথমে মামার বাড়ি যাবো এরপর ওইদিনের মত বাবাকে এক নজর দেখে ঢাকা চলে যাবো।
চলবে।