#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_১৩
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)
রুহি সিরিয়াস ভঙ্গিতে গলা খাঁকারি দিয়ে বলা শুরু করলো,
— “আমার এক কাজিন এখানে পড়াশোনা করে।ওর কাছ থেকেই শুনেছি। উনাকে যতোই রসিকতা করতে দেখা যাক না কেন?উনি ঠিক এর থেকেও বেশি গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ।তোরা নতুন এসেছিস, আস্তে আস্তে দেখতে পাবি।”
রুহির কথায় সামুকে বেশ অবাক হতে দেখা যায়। কিন্তু মিহুকে আগের মতোই বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে।সামু আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই সবার মতো ব্যাস্ত আছে।সামু হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
— “যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।আমি বরং উঠি!তোরাও কি চলে যাবি?নাকি থাকবি?”
রুহি মিহুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “হুম চলে যাবো।মিহু তুই?”
মিহু মাথা উঁচু করে রুহি আর সামুর দিকে একনজর তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “কাল তো নবীনবরণ উৎসব তাইনা?সো আমরা তিনজনেই শাড়ি পরে আসবো। খবরদার কেউ দ্বিমত পোষণ করবি না।আর হে আমার একটা কাজ করার বাকি আছে,আমি যাবোনা।তোরা সাবধানে চলে যাস বাই।”
মিহু ব্যাগ হাতে নিয়ে চলে যায়। রুহি আর সামু একে ওপরের দিকে তাকিয়ে উঠে যায় চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
____________________
— “আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।”
শিহাব অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে। কিছুক্ষণ আগেই শিহাব লাইব্রেরিতে এসেছিল একটা বই নিতে।তখনি হুট করে কোথা থেকে মিহু চলে আসে।তারপর এই কথা বলে। শিহাব এখনো অবাকের চরম পর্যায়ে আছে। মিহু যে তাকে সরি বলেছে তাও স্বেচ্ছায় সেটা কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না শিহাবের।মিহুর কথায় শিহাবের হুশ এলো।
— “অবাক হয়েছেন তাইতো?”
শিহাব গম্ভীর কন্ঠে বললো,
— “হ্যা!”
মিহু মুচকি হেসে নিজের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “কি আর করবো বলুন ভাইয়া?রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকেনা। অনেক অনেক দুঃখিত ভাইয়া।আমি সত্যি অনেক লজ্জিত। আপনি পারলে আমাকে মাফ করে দেবেন ভাইয়া।আজ তাহলে আসি কেমন!বাই।”
মিহু কথাটা বলেই দ্রুত হেঁটে চলে যেতে লাগলো।তখনি শিহাব বলে উঠলো,
— “দাঁড়াও!”
মিহু পেছনে ঘুরে দেখলো শিহাব চোখে সানগ্লাস দিয়ে কিলার লুকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ঠোঁটে রয়েছে বাঁকা হাসি। মিহু আবার গিয়ে শিহাবের সামনে দাঁড়ালো। নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
— “আবার ডেকেছেন কেন ভাইয়া? কোনো দরকার ছিল বুঝি?”
শিহাব বিরক্তিকর সুরে বলে উঠলো,
— “ডোন্ট কল মি ভাইয়া!সেই কখন থেকেই ভাইয়া ডাকছো হোয়াই?আমি তোমার ভাই কবে থেকে হলাম?আমাকে নাম ধরেই থাকতে পারো।আর যদি না পারো তাহলে কিছুই ডাকবেনা।গট ইট!আর হে কালকে যেনো অনুষ্ঠানে তোমাকে দেখতে পাই।”
কথাগুলো বলে খুব তাড়াতাড়িই মিহুর সামনে থেকে চলে গেলো শিহাব। মিহু আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে শিহাবের চলে যাওয়ার দিকে।মিহু আনমনে মুচকি হেসে বলতে লাগে,
— “বাই এনি চান্স আমি ওনার এই লুকের ওপর ক্রাশ খাইনি তো।না মোটেও না!বাই দ্যা ওয়ে ওনার কথাগুলো আমার সুবিধার ঠেকছে না। ওনার এই গাম্ভীর্যতার পেছনে কি কোনো বড় মতলব আছে।যাই থাকুক না কেন এই মিহুর সঙ্গে উনি পারবে না!”
____________________
পার্কিং এর কাছে দাঁড়িয়ে আছে সামু। সামুর মুখে বিরক্তিকর আভা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।এখন প্রায় ১৮ মিনিট হয়ে গেলো কিন্তু উৎসর কোনো দেখা নেই।উৎস আসছে না দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো সামুর।সামু কিছু একটা ভেবে দ্রুত পা চালিয়ে ভার্সিটির ভেতরে ঢুকে গেলো।এখন আশেপাশে বেশি স্টুডেন্ট নেই বললেই চলে।যারা আছে তারা কথা বলায় ব্যাস্ত।সামু হলরুম চেক করে দেখলো এখানে উৎস নেই। তাহলে কোথায় গেল?এই ভেবেই অনেক চিন্তা হচ্ছে সামুর।যতোই হোক উৎস ওর মামণির একমাত্র ছেলে।তাই এই ভেবেই চিন্তাটা আরো প্রখর হচ্ছে সামুর।সামু কয়েকটা ক্লাসরুম থেকে করলো কিন্তু উৎসকে পেলো না।আরো কয়েক পা এগিয়ে একটা ক্লাসরুমে ফিসফিসানির আওয়াজ শুনতে পেল সামু।সামু ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সেখানে। দরজা কিছুটা ফাক করে যা দেখলো তা দেখার জন্য সামু মোটেও প্রস্তুত ছিল না। দরজার ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে মিথিলা উৎসর একেবারে কাছাকাছি আছে। মিথিলা দুই হাতে উৎসর গলা জড়িয়ে ধরে আছে।আর উৎস মিথিলার কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে।সামু পিছিয়ে গেলো না উল্টো পুরো দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে দিল।এতে উৎস মিথিলার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মিথিলাকে চেয়ারে বসায়।উৎস সামুর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে উঠে,
— “তোমাকে তো আমি বলেছিলাম পার্কিং এর কাছে দাড়িয়ে থাকতে।আমি তো এখনই যেতাম।আর পারমিশন না নিয়ে দরজা খুলে এসেছো কেন?”
সামু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলতে থাকে,
— “ওহ সরি! আপনাদের প্রাইভেট সময়ে আমি এসে ব্যাঘাত ঘটিয়েছি।আমি অনেক দুঃখিত।মাফ করবেন আমায়! কিন্তু আপনি এই আপুটার সাথে
এখানে?”
উৎস কিছু বলবে তখনি মিথিলা বলতে থাকে,
— “ইউ!একেতো পারমিশন না নিয়ে দরজা খুলে ঢুকে পড়েছো।তাও আবার প্রশ্ন করছো।লাইক সিরিয়াসলি!”
উৎস মিথিলাকে বললো,
— “তুমি যেখানে বসে আছো সেখানেই বসে থাকো উঠবে না একদম।”
মিথিলা চুপ করে বসে থাকলো।উৎস সামুকে রেগে বলতে থাকলো,
— “তুমি কে আমার পার্সোনাল বিষয়ে কথা বলার? তুমি আমার পার্সোনাল বিষয়ে কথা বলার অধিকার রাখো না।সো চুপ থাকো!”
সামু চোখের কোণে হাজারো প্রশ্নের ভির লেগে আছে।সামু আর কিছু না বলে দৌড়ে চলে গেল।
চলবে………