#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_১৪
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)
বারান্দার দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে সামু।মন তার বিষন্নতায় ভরা। আজকে ভার্সিটিতে এসব ঘটে যাওয়ার পরপরই সামু গানের তালিকা থেকে নিজের নাম সরিয়ে নিয়েছে। বাড়িতে এসেছেও একা একা।কারোর সাথে কোনো কথা বলেনি। কিছুক্ষণ পরই রুমে ইশু প্রবেশ করলো। বারান্দায় গিয়ে দেখলো সামু দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে।ইশু সামুর পাশে গিয়ে বসলো।সামু পাশে তাকিয়ে দেখলো ইশু এসে বসেছে ওর পাশে।সামু কিছু না বলে আগের ন্যায় বসে থাকলো।ইশু সামুর কাঁধে হাত রেখে বলতে শুরু করলো,
— “কিরে কথা বলবি না আমার সাথে?”
সামু মুচকি হেসে বলে উঠে,
— “তোর সাথে কথা না বলার কি আছে?কি বলবি বল!”
ইশু এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে বলতে থাকে,
— “তোদের মাঝে কি আবার কিছু হয়েছে?আই মিন তোর আর ভাইয়ার মাঝে?”
সামু ইশুর দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে বলতে শুরু করে,
— “জানিনা!”
ইশু জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলে বলতে থাকে,
— “শোন কালকে যেহেতু ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান আছে তাই ঘুমিয়ে পড় তারাতাড়ি।”
সামু স্পষ্ট ভাবেই ইশুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— “আমি কালকে ভার্সিটিতে যাবোনা।”
ইশু এবার কিছু একটা ভেবে সামুকে বলতে থাকে,
— “কেন জানতে পারি?আর তোর তো ভাইয়ার সাথে পারফর্ম করার কথা তাইনা?”
সামু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,
— “আমি কালকে না ভার্সিটিতে যাবো আর না কারো সাথে পারফর্ম করবো।”
ইশু অবাক চোখে সামুর দিকে তাকালো।ইশু সামুকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
— “তোর কিছু তো একটা হয়েছে বুঝতেই পারছি।ভাইয়া ও কাওকে কিছু না বলে নিজের সোজা রুমে চলে গেছে।আর তোদের কি হয়েছে আমাকে তো বলবি নাকি?”
সামু অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “বললে বিশ্বাস করবি? বিশ্বাস করার ব্যাপারটা তোর বাট বলার ব্যাপারটা আমার!”
ইশু নিজের চশমাটা ঠিক করে বলতে থাকে,
— “প্লিজ তুই আমাকে সব খুলে বল!তুইতো সবসময় বলিস আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।যদি বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে থাকিস তাহলে বল প্লিজ!”
সামু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,
— “এখন যদি আমি বলি যে,তোর ভাইয়া আর ঐ মেয়েটা কি যেনো নাম ওহ হ্যা মনে পড়েছে মিথিলা আপুকে একটি ফাঁকা ক্লাসরুমে দরজা বন্ধরত অবস্থায় পেয়েছি তাহলে তুই বিশ্বাস করবি?”
ইশু অবাক চোখে সামুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “হোয়াট!ভাইয়া আর মিথিলা আপু।তোর কোথাও বুঝতে ভুল হয়েছে সামু। যেখানে ভাইয়া মিথিলা আপুকে মোটেও পাত্তা দেয়না সেখানে ওরা দুজন…!না না এখানে নিশ্চই কোনো ঘাপলা আছে।তুই ভাইয়াকে আগে থেকেই ভুল বুঝিসনা প্লিজ!”
ইশুর কথার পরিবর্তে সামু একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল।সামু উঠে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলো।ইশু সামুকে আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেল।
___________________________
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে উৎস। তাকিয়ে আছে রাতের আকাশের দিকে। উৎস পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তাকিয়ে দেখতে পেলো ইশু দাঁড়িয়ে আছে।ইশু উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “এরকম না করলেও পারতি ভাইয়া!”
উৎস আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে বলতে থাকে,
— “কেন আমি কি করেছি?”
ইশু রেগে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠে,
— “তুই আজকে কি করেছিস তুই জানিস না তাইনা?সামুকে কষ্ট কেন দিলি?তুই কি করবি নাকি করবি না সেটা তোর ব্যাপার। কিন্তু সামু ওর কি দোষ ছিল বলতে পারিস?ওকে কেন কষ্ট দিলি?”
উৎস দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইশুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “এখন বুঝতে পারছি কি বলছিস এতক্ষন ধরে।তুই এর পিছনের কারণটা না জেনেই আমাকে দোষারোপ করছিস!পুরো সত্যিটা তুই জানিসনা ইভেন সামুও না!আমি যে কোন পরিস্থিতিতে আছি সেটা একমাত্র আমিই জানি।”
উৎস এতক্ষন কথাগুলো বলে পাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো ইশু নেই। তারমানে অনেক আগেই ইশু নেই। তারমানে অনেক আগেই ইশু কথাগুলো না শুনেই চলে গেছে।উৎস রেগে দেয়ালে ঘুসি মারলো।আর বলতে থাকে,
— “কেউ আমাকে বোঝার চেষ্টা করছে না।কেউ পুরো সত্যিটা তো কেউ জানতেই চাইছে না। তবে সত্যিটা জানতে আর বেশি দেরি নেই সবার। কিন্তু সামু কি খুব বেশি কষ্ট পেলো?”
________________________________
— “মিহু দেখ তো চোর নামে পার্সেল এসেছে।”
মিহু অবাক চোখে তাকালো তার রুমমেট মিতুর দিকে। মিতুকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে উঠে মিহু,
— “কে পার্সেল পাঠিয়েছে?আর কিই বা পাঠিয়েছে?”
মিতু মিহুকে বলে উঠে,
— “আমি কি জানি?হয়তো তোর ভালোবাসার কোনো মানুষ পাঠিয়েছে!”
মিহু রেগে মিতুকে বলতে লাগে,
— “পাগল হয়েছিস! ভালোবাসার মানুষ কোত্থেকে আসবে।এসব কথা আমাকে আর বলবি না বলে দিচ্ছি।”
মিতু ভেংচি কেটে চলে যায়।মিহু পার্সেল খুলে দেখতে পেল একটা নীল শাড়ি,আর কিছু অর্নামেন্টস।মিহু মাথায় হাত দিয়ে বলতে থাকে,
— “এগুলো আমাকে আবার কে দিল?ওয়েট নাম নিশ্চয়ই থাকবে।”
মিহু অনেক খুঁজে একটা চিরকুট পেল। চিরকুট এ লেখা আছে,
“প্লিজ কালকে এই শাড়িটাই হয়ে ভার্সিটিতে এসো।আর তোমাকে কিন্তু এই শাড়িটাই পড়ে আসতে হবে।তোমাকে শাড়ি পরিহিতা রুপেই দেখতে চাই আমি।আর এতো বেশি মুচকি হাসি দিও না প্রেয়সী। তোমার ঐ হাসির কারণেই হয়তো একদিন মরেই যাবো আমি!”
ইতি তোমার,
শুভাকাঙ্ক্ষী।
মিহূ রাগী চোখে শাড়ি আর অর্নামেন্টস এর দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “সিরিয়াসলি!এই লোকটাকে যদি একবার সামনে পেতাম।রাত-বিরেতে এসব পাঠাচ্ছে। কিন্তু পাঠালো কে এগুলো।এই শুভাকাঙ্ক্ষী কে তা জানতেই হবে।আর হে কালকে যে ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান আছে সেটা এই অজ্ঞাত ব্যাক্তি জানালো কিভাবে?আর লিখেছে আমাকে শাড়িই পরিহিতা রুপে দেখতে চায় তারমানে এই অজ্ঞাত লোকটি ভার্সিটির কি কেউ?ওফ মাথাটা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।কি করবো বুঝতেই পারছি না।”
____________________________
— “আমি আর তোদের কতবার বলবো বল তো। আমার শরীরটা একটু খারাপ তাই আসতে পারবো না। প্লিজ আমার জন্য তোরা যাওয়া ক্যান্সেল করিস না।এতে আমার অনেক খারাপ লাগবে।তোরা চলে যা ভার্সিটিতে প্লিজ।আমাকে জোড় করিসনা।”
এতক্ষন ধরে রুহি আর মিহুর সাথে গ্রুপ কলে কথা বলছিল সামু।রুহি আর মিহু একেবারে নাছোড়বান্দা।ওরা সামুকে ফেলে কিছুতেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে না।সামু বিরক্তিকর সুরে নিজে নিজেই বলতে থাকে,
— “আর পারছিনা আমি!সব দিক থেকেই ফেঁসে গেলাম।”
চলবে………