হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-১৫+১৬

0
526

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_১৫
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

এতক্ষন ধরে রুহি আর মিহুর সাথে গ্রুপ কলে কথা বলছিল সামু।রুহি আর মিহু নাছোড়বান্দা।ওরা সামুকে ফেলে কিছুতেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে না।সামু বিরক্তিকর সুরে নিজে নিজেই বলে উঠে,
— “আর পারছিনা আমি।সব দিক থেকেই ফেঁসে গেলাম।এখন কি করবো আমি?”
____________________________
— “কি হলো ও এখনো আসছে না কেন?”
রেগে ইশুকে কথাটা বলে উৎস।ইশু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠে,
— “কার কথা বলছিস?”
উৎস যথাসম্ভব নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ইশুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “জেনেও না জানার ভাব করছিস?আমি সামুর কথা বলছি ইডিয়েট।ও কার সাথে ভার্সিটিতে যাবে?আমার সাথেই তো তাইনা!”
ইশু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলতে থাকে,
— “ও আজ ভার্সিটিতে যাবে না।তুই চলে যা!”
উৎস অবাক হয়ে ইশুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “মানে……?ওর তো আজ করে আমার সাথে গানে পারফর্ম করার কথা!”
ইশু উৎসর চোখে চোখ রেখে বলতে থাকে,
— “সামু লিস্ট থেকে নাম তুলে নিয়েছে ভাইয়া।সো তুই আর কথা না বাড়িয়ে চলে যা ভার্সিটিতে।নয়তো দেরি হয়ে যাবে।”
উৎস আর কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হাত চলে যায়।
______________________________
— “কিরে এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?আমি মানুষ! এলিয়েন নই।”
সামু স্বাভাবিক ভাবেই কথাটা বলে উঠে সামু।ইশু সামুর সঙ্গে কথা বলার জন্য এসে দেখে সামু পুরোপুরি রেডি।শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে সামু।তা দেখেই ইশুর মুখ পুরাই হা হয়ে যায়।সামু নীল শাড়ি পড়েছে সাথে কিছু অর্নামেন্টস ও দিয়েছে।হালকা সাজ!তাতেই সামুকে অসাধারণ লাগছে।ইশু সামুর পা থেকে মাথা অব্দি চোখ বুলিয়ে তারপর সামুকে বলতে লাগলো,
— “তোকে সাধারণ সাজের মাঝেও অসাধারণ লাগছে।বাই দ্যা ওয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
সামু নিজের চুলগুলো ঠিক করে বলতে থাকে,
— “ভার্সিটির নবীনবরণ উৎসবে!”
ইশু অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ইশুর দিকে।বলতে শুরু করে,
— “বাট তুই তো যাওয়া ক্যান্সেল করে দিয়েছিস তাইনা?মত ঘুরলো কিভাবে….?”
সামু ইশুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলতে থাকে,
— “আমার দুইটা হারামি ফ্রেন্ড এর জন্য।ওরা আমি না গেলে নিজেরাও যাওয়া ক্যান্সেল করে দিতো।তাই বাধ্য হয়েই যাচ্ছি।”
ইশু কিছু একটা ভেবে বলতে থাকে,
— “তোকে তো ভাইয়া…?”
ইশু বাকি কথা বলার আগেই মুখ চেপে ধরলো।সামু সন্দিহান চোখে তাকিয়ে ইশুকে বলে উঠে,
— “লাস্ট এর কথাটুকু কি বললি তুই?কি বলতে চাইছিলি, অর্ধেক পথে থেমে গেলি কেন?”
ইশু কাশতে লাগলো।কাশি থামিয়ে বলতে থাকে,
— “না কিছুনা।তুই রেডি হো আমি যাই।টাটা!”
ইশু সামুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে রুম থেকে চলে গেল।সামু কিছু একটা ভেবে নিজের ফোন হাতে নিয়ে কাওকে ফোন লাগালো।ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হওয়ার পর সামু বলতে শুরু করলো,
— “আমি আসছি!তোরা যদি এখন না আসিস তাহলে তোদের খবর আছে বান্দর রা।তোদের জন্যই আসছি।নাহলে আমি কখনোই আসতাম না। আচ্ছা এখন রাখি বের হবো বাসা থেকে।ওকে বাই!”
সামু ফোন রেখে ওর ব্যাগ থেকে একটা ডায়েরী বের করলো।ডায়েরী টা বেশ পুরোনো।পুরো ডায়েরী তবে হাত বুলিয়ে বলতে শুরু করলো,
— “কেন এত কষ্ট দাও বলোতো? তোমার প্রতি আজ পর্যন্ত জমিয়ে রাখা অনুভূতি গুলো যে এই ডায়েরীতেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছি।যেদিন তুমি এই ডায়েরী টি খুলে পড়বে সেদিন আমার অনুভূতিগুলো কি বুঝতে পারবে তুমি?হয়তোবা বুঝতে পারবে।আবার হয়তো না!তবুও বলবো ভালোবাসি তোমায়। ভালোবাসি প্রিয়তম!খুব ভালোবাসি।”
সামু চোখের কোণে নিজের অজান্তেই চলে আসা পানিটুকু মুছে নিল। মুচকি হেসে ডায়েরীটি যথাস্থানে রেখে ব্যাগ হাতে নিয়ে নিচে চলে গেল।
__________________________
— “কিরে তুই এরকম মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন?”
প্রমার কথায় ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো উৎস।উৎস এতক্ষন কিছু একটা ভাবছিল।উৎস অন্যদিকে তাকিয়েই প্রমাকে বলে উঠে,
— “কিছু হয়নি আমার!বাকিরা কোথায়?”
প্রমা চারদিকে তাকিয়ে উৎসকে বলতে থাকে,
— “মিথিলার কথা নাহয় নাই বলি!আরিফ ওদিকটায় আছে,কাজ করছে বোধহয়।আর শিহাবকে গেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। কাজ কাম নাই তো তাই গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।”
উৎস হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে,
— “আর কিছুক্ষণ পরই অনুষ্ঠান শুরু হবে।”
প্রমা কিছু বলবে তার আগেই ওর চোখ আটকে যায়
একটা মেয়ের ওপর।মেয়েটা আর কেউ নয় সামু!সামু আসবেনা কথাটা উৎসর কাছেই শুনেছে প্রমা।এতো স্টুডেন্ট এর ভীরে সামুকে দৃষ্টির বাইরে হারিয়ে ফেলে প্রমা।প্রমা এদিক ওদিক তাকিয়ে সামুকে খুঁজতে থাকে বাট পায়না।উৎস প্রমাকে এভাবে বিচলিত হতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
— “হোয়াট হ্যাপেন্ড?কি হয়েছে তোর?এভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিস কেন?কাওকে খুজছিলি?”
প্রমা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠে,
— সামুকে দেখলাম এইমাত্র। কিন্তু ওর তো ভার্সিটিতে আসার কথা না তাইনা?”
উৎস অবিশ্বাস্য চোখে প্রমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “হোয়াট?কোথায় ও?”
চলবে………

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_১৬
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

উৎস প্রমাকে এভাবে বিচলিত হতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
— “হোয়াট হ্যাপেন্ড?কি হয়েছে তোর ?এভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিস কেন? কাওকে খুজছিলি?”
প্রমা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠে,
— “সামুকে দেখলাম এইমাত্র। কিন্তু ওর তো ভার্সিটিতে আসার কথা তাইনা?”
উৎস অবিশ্বাস্য চোখে প্রমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “হোয়াট?কোথায় ও…..?”
প্রমা ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।উৎসর দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “তুই সত্যি করে বল তো কী হয়েছে।সামু যদি এসেই থাকে তাহলে তো ওর তোর সাথে আসার কথা ছিল।তাহলে তোরা দুজন আলাদা আসলি কেন? প্লিজ আমাকে সব খুলে বল।তোদের খুনসুটিময় ঝগড়া দেখি না দুদিন ধরে।তাই আমার তোদেরকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না। প্লিজ তুই সব খুলে বল!”
উৎস দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সব ঘটনা খুলে বলে প্রমাকে।প্রমা সবকিছু শুনে “হা”হয়ে আছে।প্রমা ভ্রু কুঁচকে উৎসকে বলা শুরু করে,
— “শোন তুই সামুকে সব খুলে বল।দেখ ও কিন্তু তোকে ভুল বুঝেছে।কতদিন এসব ভুল বোঝাবুঝি চলবে বল।তুই ওকে সব খুলে বলে দে নয়তো আমিই……”
উৎস তৎক্ষণাৎ প্রমাকে বলে উঠে,
— “না!একদম না।তুই ওকে কিছুই বলবি না।যা জানানোর সব আমিই জানাবো।”
প্রমা মাথা নাড়িয়ে “হ্যা”বোঝায়। কিছুক্ষণ পর প্রমা হঠাৎ করেই বলে উঠে,
— “ভালোবাসিস সামুকে?”
উৎস প্রমার এরকম প্রশ্নে অনেক চমকে যায়।উৎস অবাক চাহনিতে প্রমাকে বলতে শুরু করে,
— “তুই ঠিক আছিস তো?এসব আজগুবি কথা কেন বলছিস?”
প্রমা ভ্রু কুঁচকে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে তারপর উৎসকে বলতে থাকে,
— “আমি কিন্তু এখনো আমার করা প্রশ্নের উত্তর পাইনি?আমি কি প্রশ্ন করেছি সেটা কোনো ফ্যাক্ট না!ফ্যাক্ট হলো আমি যে প্রশ্নটা করেছি সেটার উত্তর।সো তারাতাড়ি উত্তরটা দিয়ে দে।”
উৎস দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে উঠে,
— “জানিনা!তবে ও যে আমাকে ইগনোর করছে সেটা কেনো জানি না সহ্য হচ্ছে না আমার।”
প্রথম কথাটা শোনার পরে প্রমার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।প্রমা মুচকি হেসে বিরবির করে বলে উঠে,
— “কাম সারছে!”
প্রমা উৎসর কাছাকাছি থাকায় প্রমার বিরবির করে বলা কথাটা শুনে ফেলে উৎস।উৎস ভ্রু কুঁচকে প্রমাকে জিজ্ঞেস করে,
— “কাম সারছে মানে?”
প্রমা উৎসর কথা শুনে কাঁশতে শুরু করলো।আগের মতো পুনরায় বিরবির করে বলতে থাকে,
— “ধুর আরেকটু আস্তেই বললে পারতাম!তাহলে অন্তত উৎস কথাটা শুনতে পেতো না।এখন কি করি?”
উৎস এবার বিরক্তিকর সুরে বলতে লাগলো,
— “আবার বিরবির করছিস তুই? শিহাব ঠিকই বলে তুই একটা…….”
উৎস কিছু বলবে তার আগেই কেউ পেছন থেকে ওকে ডেকে ওঠে।উৎস পেছনে তাকিয়ে দেখে মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে। ভার্সিটির ছেলেরা লাল রঙের পাঞ্জাবি আর মেয়েরা নীল রঙের শাড়ি পড়েছে।মিথিলার শাড়ি ঠিক আছে কিন্তু মিথিলা এতটাই মেকআপ করেছে যে ওকে কোনো পেত্মীর থেকে কম লাগছে না।প্রমা মিথিলাকে এরকম ভাবে দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিল। কিন্তু মিথিলা যখন উৎসকে ডাক দেয় তখন প্রমা মিথিলার গলার স্বর শুনে মিথিলাকে চিনে ফেলে।প্রমা মিথিলাকে চিনতে পারার পর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। নাহলে মিথিলাকে ভুত ভেবেই হার্ট অ্যাটাক করতো প্রমা।আর এদিকে মিথিলাকে দেখে উৎস প্রচুর বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়।উৎস প্রমাকে ইশারা করে মিথিলার কাছে যাওয়ার জন্য।প্রমা মাথা নাড়িয়ে “হ্যা”জানায়।এই ফাঁকে উৎস কোথাও একটা চলে গেল।প্রমা মিথিলাকে নিয়ে এসে চেয়ারে বসালো।প্রমা একটা দাঁত কেলানো হাসি দিল। মিথিলা রেগে বলতে থাকে,
— “দেখলি তো উৎস কিভাবে আমাকে ইগনোর করলো‌। নিশ্চয়ই এসব সামুর জন্য করছে রাইট।ঐ মেয়ে আসার পর থেকেই উৎস আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না।ডিজগাস্টিং!”
প্রমা একটা ঢোক গিলে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “এসব কথা বাদ দে তো।আগে আমার কথা শোন। তোকে এখানে সব মেয়েদের মধ্যে বেশি সুন্দর লাগছে।”
প্রমার কথা শুনে মিথিলার মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। এরমধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয় শিহাব। শিহাব প্রমার পাশে যখন মিথিলাকে দেখে তখন পিছিয়ে যায়। শিহাব ভয়ার্ত কন্ঠে প্রমাকে বলে উঠে,
— “ঐ ছাগলি তোর পাশে মেয়েটা কেডা রে?ও মা গো বাঁচাও!”
প্রমা ঠোঁট চেপে হাসি আটকে রেখে শিহাবের পাশে এসে দাঁড়ালো। শিহাবকে কানে কানে কিছু বলার পর শিহাব ফিক করে হেসে দেয়।প্রমা শিহাবের হাতে চিমটি কেটে শিহাবকে ইশারা করে হাসতে মানা করে। শিহাব হাঁসি থামিয়ে গিয়ে মিথিলার পাশে দাঁড়ালো। মিথিলা এতক্ষন ধরে শিহাব আর প্রমার কান্ডকারখানা দেখছিল। শিহাবকে মুচকি হাসতে দেখে যেনো মিথিলার শরীরে আগুন ধরে গেলো রাগে। মিথিলা দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,
— “এভাবে হাসছিস কেন বলদ?”
শিহাব হাঁসি থামিয়ে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “একটা কথা বলি তোকে?না মানে আসলে কিভাবে যে কথাটা বলবো বুঝতে পারছিনা।”
মিথিলা ভ্রু কুঁচকে শিহাবকে বলতে থাকে,
— “ভনিতা না করে কি বলবি বলে ফেল!”
শিহাব দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
— “তোকে যে কি সুন্দর লাগছে!কি বলবো?পুরাই বিশ্বসুন্দরী!”
মিথিলার মুখে খুশির ঝলক দেখা যায় শিহাবের কথা শুনে।প্রমা শিহাবকে বিরবির করে আস্তে আস্তে বলতে থাকে,
— “বলছি কি শিহাব এবার একটু থাম ভাই।পামটা একটু বেশিই দিয়ে ফেলেছিস!”
পরক্ষনেই মিথিলা মুখ কালো করে বসে থাকে।প্রমা আর শিহাব একে অপরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মিথিলার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে। শিহাব মিথিলাকে বলতে থাকলো,
— “কি হয়েছে তোর মিথিলা?মন খারাপ কিসের জন্য?”
মিথিলা হাতের মুঠ শক্ত করে শিহাব আর প্রমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— “তোরা তো বলেছিস আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তাহলে যার এই কথাটা বলার কথা ছিল তারই তো পাত্তা নেই।”
শিহাব আর প্রমা এবার বুঝতে পারলো মিথিলার মন খারাপের কারণ। মিথিলার কথার বিনিময়ে প্রমা একটি দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো।
_________________________
— সামনে আসবেন না। খবরদার সামনে আসবেন না।”
মেয়েটির কথার বিনিময়ে জিসান একটা পৈশাচিক হাঁসি দিল।
চলবে……….