হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-১৭

0
564

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_১৭
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

হলরুমে বর্তমানে নিস্তব্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে।চেয়ারে বসে আছে উৎস।দুই হাতে নিজের মাথা চেপে ধরেছে।একপাশে দাঁড়িয়ে আছে সামু।মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।আজকে যেনো উৎসর এক নতুন রুপ দেখেছে সামু।পাশেই বসে আছে প্রমা!উৎস মাথা থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে একবার আড়চোখে সামুর দিকে তাকিয়ে তারপর প্রমাকে বলে উঠে,
— “আমাকে আটকালি কেন তোরা?আজকে মেরেই ফেলতাম ঐ জানোয়ারটাকে!কোথায় ও?”
প্রমা গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে শুরু করলো,
— “হসপিটালে নিয়ে গেছে শিহাব আর আরিফ।যা মেরেছিস ওকে ১ মাসের আগে বেড থেকে উঠতে পারবেনা।হিহি!”
উৎস ঘড়িতে টাইম চেক করে চেয়ার থেকে উঠে যায়।প্রমা কিছু একটা ভেবে হলরুম থেকে চলে যায়।সামুর হাত-পা কাঁপছে।কারণ উৎস এখন ভয়ংকর পর্যায়ে রেগে আছে সামুর ওপর।তা বেশ বুঝতে পারছে সামু।উৎস সামুর ভয়ার্ত মুখ দেখে একটা বাঁকা হাসি দিল। সামু মনে অনেক সাহস সঞ্চয় করে উৎসকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গেলেই উৎস খপ করে সামুর ডান হাতটা ধরে হেঁচকা টান দিয়ে সামুকে নিজের বুকে এনে ফেললো।সামু উৎসর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল‌‌।উৎসর ঠোঁটের কোণে এখনো সেই বাঁকা হাসি লেগে আছে।উৎস সামুকে বলতে শুরু করে,
— “এতো সাহস পাও কোথা থেকে তুমি?একা একা গেছিলে কেনো ওদিকটায়।আমি যদি ঠিক সময় ওখানে না পৌছাতাম তাহলে কি হতো নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো।”
সামু ঢোক গিলে বলতে থাকে,
— “আমি পানি খেতে গেছিলাম ওদিকটায়।আপনি কি করে জানলেন আমি বিপদে পড়েছি?”
উৎস মৃদু হাসলো।সামুর থেকে যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে বলতে থাকে,
— “মিথিলার সামনে থেকে যখন পালিয়েছিলাম এর আগে প্রমা বলেছিল তুমি এসেছো। বিশ্বাস করতে চাইনি! কিন্তু যখন তুমি মিহুর সাথে কথা বলেছিলে তখনি নিজ চোখে তোমাকে দেখার পর বিশ্বাস করলাম এই আরকি!এর কিছুক্ষণ পর দেখলাম মিহু আর রুহিই শুধু আছে আর তুমি নেই ওদের মাঝে। তারপর ওদেরকে গিয়ে জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারলাম তুমি ওদিকটায় গিয়েছো তারপর যা হওয়ার তাই হলো।এখন আমার সাথে বাড়ি চলো।”
সামুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উৎস ওর হাত টা ধরে টেনে নিয়ে গেল‌। কিছুক্ষণ আগেই সামুকে একা পেয়ে জিসান সেদিনের ক্ষোভ ওর ওপর প্রকোপ করতে চেয়েছিল। জিসান সামুকে ছুড়ি দিয়ে মারতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই উৎস (গল্পের আসল লেখিকা স্বর্না তালুকদার বৃন্দা)এসে জিসানকে ধরে ফেলে।উৎস একাই জিসানকে অনেক মারতে থাকে তখন সামু কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে শিহাব,আরিফ আর প্রমাকে ডেকে আনে তারপর ওরা উৎসকে অনেক কষ্টে থামায়।আর জিসানকে হসপিটালে নিয়ে যায়।
_________________________
— “এভাবে চুপ করে বসে আছো কেন মিস মিহু?”
শিহাবের কথায় তার দিকে তাকায় মিহু। ভার্সিটির পেছনে পুকুর পাড়ে বসে ছিল মিহু।তখন শিহাব হসপিটাল থেকে ফিরে এসে মিহুকে একা মন খারাপ করে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে তার পাশে গিয়ে বসে পড়ে শিহাব।মিহু মৃদু হাসলো!সামনে পড়ে থাকা অবাধ্য চুলগুলোকে কানের পেছনে গুজে দিয়ে বলে উঠে,
— “এমনেই! ভালো লাগছেনা এই আরকি।”
শিহাব এবার পুকুরের সচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে মিহুকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
— “তোমার বাবা মা কিংবা ভাই বোনের সাথে কথা বলো ফোনে।তাহলেই ভালো লাগবে। এতদূর হোস্টেল থেকে পড়াশোনা করছো তাই হয়তো বাবা মার কথা মনে হচ্ছে তাইনা?”
মিহু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,
— “নেই!”
শিহাব অবাক হলো। অনেক!শিহাব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মিহুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “নেই মানে?”
মিহু স্পষ্ট ভাবে বলতে থাকে,
— “আমি ছোট বেলা থেকেই এতিমখানায় বড় হয়েছি।আমার বাবা মা কে তা আমার জানা নেই।পেয়ে গেছেন উত্তর!এখন আমি যাই।”
শিহাব কিছু বলবে তার আগেই মিহু দ্রুত চলে যায়। শিহাব যদি মিহুর চোখের দিকে একবার তাকাতো তাহলে হয়তো দেখতে পেতো মিহুর চোখে পানি ছিল। আফসোস!মিহু তার আগেই চলে গেল। শিহাব দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে মৃদু হাসলো। আপনমনে বলে উঠলো,
— “আমাদের জীবন দেখি একেবারেই মিলে গেছে তবে কিছুটা ডিফারেন্টস আছে।”
____________________________
— “কি হয়েছে ভাইয়া তোর হাতে ব্যান্ডেজ কেনো?”
ইশু উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে উৎসকে।উৎস আর সামু বাড়িতে আসার পরই ইশুর প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। মিসেস সাহেরা চৌধুরী বাড়িতে নেই বিধায় উৎস আর সামু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।উৎস সামুকে ইশারা করায় সামু ইশুকে নিয়ে চলে গেল।উৎস স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।সামু ইশুকে রুমে নিয়ে এসে সব খুলে বলে।সব শুনে মাথায় হাত নিয়ে বসে পড়ে। তারপর পরক্ষনেই কিছু মনে করে সামুকে দেখতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
— “কিরে তোর কোথাও লাগেনি তো?”
সামু মৃদু হেসে উত্তর দিল,
— “না না কোথাও লাগেনি আমার।”
ইশু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
____________________________
— “একটা সত্যি করে কথা বলুন তো আমাকে?”
উৎস বাগানের দোলনায় এসে বসেছিল।তখনি সামু কোথা থেকে ঝড়ের বেগে ছুটে আসে আর এই প্রশ্ন করে।উৎস সামুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুই হাত পকেটে গুজে বলতে থাকে,
— “কি কথা?”
সামু গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে শুরু করে,
— “তখন আমি যখন আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে আমি যে বিপদে পড়েছিলাম সেটা আপনি কি করে জানলেন তখন প্রতিত্তরে আপনি প্রথমেই বলেছিলেন যে আপনি মিথিলার সামনে থেকে পালিয়েছিলেন।তো এর মানে কি দাঁড়ায়। আপনারা দুজন দুজনকে ভালোবাসেন রাইট।তাহলে আপনি মিথিলার থেকে পালিয়েছিলেন কেনো?”
উৎস বিরক্তিকর সুরে বলতে থাকে,
— “আমি মিথিলাকে ভালোবাসি এই কথা কখন বললাম?”
সামু ঢোক গিলে বলতে থাকে,
— “না মানে আপনি বলেন নি ঠিক কিন্তু সেদিন তো আমি আপনাদের দুজনকেই একি ক্লাসরুমে……”
উৎস অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সামুর দিকে।সামুকে বলতে থাকে,
— “তাই তুমি ধরে নিলে যে আমি ওকে ভালবাসি? মানে সিরিয়াসলি!তুমি যে এতোটা বোকা আমি জানতাম না।”
সামু এবার কঠোর গলায় বলে উঠে,
— “আমি বোকা নই!ঐ সময় আমার যায়গায় যে কেউ থাকলে ঠিক এটাই ভাবতো।আর এখন যদি আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করি সেদিন আপনারা দুজন আমাকে অপমান কেন করেছিলেন তখন আপনি কি জবাব দেবেন?”
উৎস এবার কিছু একটা ভেবে আবার দোলনায় বসে পড়লো। সামু কে ইশারা করলো পাশে বসার জন্য।সামু উৎসর কথা মতো উৎসর পাশে বসে পড়লো‌।উৎস রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে সামুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “আচ্ছা এসবের পেছনে কোনো কারণ আছে বলে তোমার মনে হয় কী?”
সামুর স্পষ্ট জবাব,
— “কোনো কারণ থাকতে পারে বুঝি?”
উৎস মৃদু হাসলো।তারপর বলতে শুরু করলো,
— “হুম এর পিছনে অবশ্যই একটা কারণ আছে।যেটা এখন আমি তোমাকে বলবো।”
সামু উৎসক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উৎসর দিকে।অপেক্ষা করছে উৎসর বলার।উৎস বলতে শুরু করে,
— “সেদিনের কথা মনে আছে তোমার?যেদিন তুমি আর ইশু আড়ি পেতে আমার কথা শুনছিলে।ঐদিন আমি এতোটা রাগান্বিত কেন ছিলাম জানো?কারণ সেদিন আমি মিথিলাকে প্রত্যাক্ষান করেছিলাম।ও আমাকে সেদিন প্রপোজ করেছিল সবার অগোচরেই।তারপর রাতেই শুনলাম ও হাত কেটেছে।আমি ভেবেছিলাম হাতের শিরা কেটেছে।বাট আই ওয়াজ রং!ও হাতের শিরা কাঁটেনি। আমাকে ভয় দেখানোর জন্য নাকি হাতের কিছুটা ওপরে সাধারণ কেটেছে।তারপরের পরশু দিন আমি ওর বোনের সাথে দেখা করি।দেন উনি আমাকে জানায় সেদিনের পরই নাকি মিথিলাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।ও নাকি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে আমাকে পাওয়ার জন্য।তখন ওর বোন আমাকে অনুরোধ করে মিথিলাকে যেনো কিছুদিনের জন্য আমি প্রটেক্ট করি।ওনার অনুরোধ আমি ফেলতে পারিনি সামু।আর সেদিন যা দেখেছিলে তা ভুল ছিল। মিথিলা আমাকে ফোন করে বলেছিল যে ফাঁকা ক্লাসরুম টায় যেতে ও নাকি কোনো বিপদে পড়েছে।
তারপর আমি সেখানে গিয়ে দেখি ও চেয়ারে বসে আছে।আমি যখন ওকে জিজ্ঞেস করি যে কি হয়েছে তখন ও সোজা আমার সামনে চলে আসে আর হয়তো ও কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু তখনি হঠাৎ করেই দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়।আর ও আমার গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বলতে থাকে যে ওর অন্ধকারে ভয় করছে।আর তখনই তুমি দরজা খুলে চলে এলে।আর তারপর যা ঘটেছে তা তো জানোই।আর মিথিলার মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না এবং ওর বোনের অনুরোধে ওকে প্রটেক্ট করার দায়িত্ব আমার ছিল।তাই তখন ওর পক্ষ ধরেছিলাম আর তোমাকে ঐ কথাগুলো বলেছিলাম।”
সব শুনে সামু অবাক হয়ে যায়।উৎস একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে।
চলবে…….