#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২৩[মিথিলা রহস্য ভেদ]
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)
ক্যান্টিনে মুখোমুখি বসে আছে মিথিলা আর সামু।দুজনেই চুপচাপ! কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করার পর মিথিলা সামুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “আজকে তোমাকে আলাদা করে ডেকে আনার একটা বিশেষ কারণ আছে সামু।আমার লাইফ স্টোরি শুনতে চাও?জানো আমি এরকম ছিলাম না আগে।শুনতে চাও কেন এরকম হয়েছি আমি?”
সামু দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলতে থাকে,
— “হ্যা আপু আমি শুনতে চাই।”
মিথিলা মুচকি হেসে বলতে শুরু করে,
— “তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়তাম।বয়স তখন ১৬ হলেও মনের দিক থেকে এর থেকেও ছোট ছিলাম।আমরা দুই বোন!আমার বড় বোন রিহা।আপুর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অনেক সুখেই আছে সে! যাইহোক মূল কথায় আসি। তখনকার সময়ে ভালোবাসা শুধু একটা সাধারণ শব্দই মনে করতাম। ভালোবাসা জিনিসটায় বিশ্বাস ছিল না একদমই।তখন এমন একজন মানুষ আমার জীবনে আসলো!যার জন্য ভালোবাসা জিনিসটার উপলব্ধি আমি করতে পেরেছিলাম। রক্তিম! রক্তিম ছিলো আমাদের পাশের বাড়ির ছেলে।ওটা ওদের নিজস্ব বাসাই ছিল।ওর বাবা এলাকায় অনেক প্রভাবশালী ছিল।ওর মা ছিল না। রক্তিম তখন মাস্টার্সে পড়তো।ওর চরিত্র অত্যন্ত ভালো ছিল বিধায় তাকে এলাকার সবাই অনেক পছন্দ করতো।এবার আসি মূল কথায়।আমার মায়ের খুব প্রিয় ব্যাক্তি ছিল রক্তিম।আমার মাকে রক্তিম মামণি বলে ডাকতো। খুব ভালোবাসো আমার মাকে।জানো সামু আমি রক্তিমকে প্রথম প্রথম খুব ভয় পেতাম।তখন বাবা একদিন হঠাৎ করেই একটা আদেশ জাড়ি করলেন যে রক্তিম আমাকে রোজ এসে পড়াবে। এগুলো শুনেই আমার হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছিলো।তারপর থেকে রোজ সন্ধ্যায় রক্তিম আসতো আমাকে পড়াতে। একদিন পড়া না পারলেই যা ধমক দিতো এখনো মনে হলে ভয় করে। যাইহোক এভাবে অনেকদিন চলে যায়! একদিন যদি রক্তিম আমাকে পড়াতে না আসতো তাহলে আমার দম বন্ধ হয়ে যেতো। একদিন না দেখলেই কেমন যেনো ফিল হতো।বুঝতেই পারছিলাম না কি হচ্ছে আমার সাথে! একদিন কলেজে যাওয়ার পথে একটা রেস্টুরেন্টে রক্তিম আর একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখেছিলাম। সেদিন বুকের বা পাশে কেমন যেনো চিনচিন ব্যাথা অনুভব করেছিলাম।সেদিন আর কলেজে গেলাম না সোজা বাসায় চলে এলাম।সোজা বাসায় এসে দরজা লাগিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলাম অনেকক্ষণ।তারপর আপুর দরজা ধাক্কানোর শব্দে দরজা খুলতে বাধ্য হয়েছিলাম। দরজা খোলার পরপরই আপু আমাকে ঐ অবস্থায় দেখে বলেছিল,
— কিরে তোর চোখ-মুখ এরকম দেখাচ্ছে কেন? কেঁদেছিস নাকি…..?
আমি অনেক গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলাম,
— কই না তো আপু।কাদিনি আমি!
সেদিন আপু আর কিছু বলেনি।হয়তো কিছু একটা বুঝতে পেরেছিল।এরপর থেকে রক্তিমের সাথে প্রয়োজন ছাড়া আর কথা বলতাম না।ব্যাস শুরু হলো আমার ইগনোর। রক্তিম হয়তো কিছু একটা বুঝতে পেরেছিল। একদিন পড়ানোর সময় আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
— কি ব্যাপার মিথিলা! তোমার কি কিছু হয়েছে? তুমি ঠিক আছো তো….?
প্রতিউত্তরে আমি বলেছিলাম,
— কই না তো। কিছু হয়নি আমার।আমি একদম ঠিক আছি!
রক্তিম আর কিছু না বলে আমায় পড়ানোয় মনোযোগ দেয়।এভাবে কেটে যায় ১৫ দিন।তখন একদিন রক্তিম বিকেলে আমাদের বাড়িতে আসে।তাও আবার একটা মেয়েকে নিয়ে। মেয়েটাকে অনেক পর্যবেক্ষণ করার পর আমি চিনতে পারলাম। রেস্টুরেন্টে যাকে রক্তিমের সাথে দেখেছিলাম ঐ টাই সেই মেয়ে ছিল।তারপর মা আমাকে ঘর থেকে ডেকে এনে পরিচয় করিয়ে দিল। মেয়েটার নাম আনিকা!আনিকা আপু হলো রক্তিমের মামাতো বোন।ওর নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে।সেই হিসেবেই ইনভাইট করতে এসেছিল আমাদের।আমি তো পুরোই অবাক তখন!যে আমি এতোদিন ধরে রক্তিমকে ভুল বুঝেছিলাম। রক্তিমদের বাড়িতেই বিয়ের ব্যাবস্থা করা হয়। সেদিন হলুদ সন্ধ্যা ছিল।সবাই অনেক মজা করছিল।আমি ঠিক করেই নিয়েছিলাম রক্তিমকে নিজের মনের কথা বলবো।তখন সময় করে আমি রক্তিমের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। অনেক ভয় হচ্ছিলো আমার নিজের অনূভুতি প্রকাশ করার সময়। হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর কেউ ছিল না বিধায় আমি রক্তিমের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম। রক্তিম আমার দিকে না তাকিয়েই বলে ফেললো,
— কিছু বলবে মিথিলা?
আমি মাথা নাড়িয়ে “হ্যা”জানালাম। রক্তিম অস্পষ্ট সুরে বললো,
— বেশ!বলো তবে কি বলবে?
আমি চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস টেনে বলতে লাগলাম,
— জানি না কিভাবে নিজের এই কখনো আপনাকে না বলা অনূভুতিগুলো প্রকাশ করবো!আপনাকে প্রথম থেকেই আমার অনেক ভালো লাগতো। কিন্তু সেটা কখন যে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসাতে পরিণত হয়েছে আমিই টের পাইনি। আপনাকে এই কয়েকমাসে অনেক ভালোবাসি ফেলেছি বিশ্বাস করুন! সেদিন আপনাকে রেস্টুরেন্টে আনিকা আপুর সাথে দেখেছিলাম।আমি ভেবেছিলাম হয়তো আপনারা দুজন দুজনকে ভালোবাসেন। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।আই ওয়াজ রং!মাফ করবেন আমায়! কিন্তু আমি আপনাকে সত্যিই অনেক ভালবাসি।
আমি চোখ খুলবো তার আগেই আমার ডান গালে জোড়ে থাপ্পড় মারে রক্তিম। রক্তিমের চোখ ভয়ংকর লাল ছিল।আমি ওনার রাগের কারণই বুঝতে পারছিলাম না। রক্তিম রেগে আমাকে বলতে লাগছিল,
— তোমার মন এরকম আমি আজকে জানলাম।আরে আনিকাকে আমি নিজের বোন থেকে কোনো অংশে কম দেখি না।আর তুমি কিনা তাকে ছি!আর তোমার এই সাহস কোথা থেকে আসে? স্টুডেন্ট হয়ে টিচারকে প্রপোজ করতে লজ্জা করেনা তোমার?শুনে রাখো তোমার মতো মেয়েদেরকে অন্তত যা করা হোক না কেন ভালোবাসা যায় না।সব মেয়েরাই লিসার মতো।হ্যা হ্যা লিসার মতো!
এতগুলো কথা বলে উনি ছাদ থেকে চলে গেছিলেন। সেদিন অপমান বোধ, লজ্জা সবকিছু মিলিয়ে ডিপরেশনে চলে গেছিলাম। কিন্তু লিসা কে সেটাই জানা হয়নি।সব মিলিয়ে প্রচন্ড জেদ চেপে যায় আমার।আর সব মিলিয়ে রক্তিমের প্রতি আমার ভালবাসাটা ঘৃণার আড়ালে চাপা পড়ে গেল।এর একবছর পর বাবা মা রোড এক্সিডেন্ট করে মারা গেলেন।সব মিলিয়ে কি অবস্থা হয়েছিল আমার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো কিছুটা হলেও সামু।এখন জানিনা কিভাবে রক্তিম আমার প্রতি তার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে পেরেছে।আর উৎসর প্রতি পাগলামির কথা যদি বলো তাহলে আমি বলবো সেগুলো কিছুই না।জাস্ট মোহ!
এতক্ষন ধরে মনযোগ সহকারে মিথিলার কথা গুলো শুনলো সামু।
চলবে……