হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-২৮

0
533

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২৮
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

পুরো বাড়িটাই ঘুরে দেখছে সবাই। শিহাব একবার এদিক তো আরেকবার ওদিক তাকিয়ে হাঁটছে। এমনভাবে কিছুদূর হাঁটতেই হোঁচট খায় শিহাব।উৎস গিয়ে শিহাবকে উঠায় আর পিঠে একটা ছোট করে ধাক্কা মেরে বলে,
–“শালা!এদিক ওদিক তাকিয়ে হাটছিস কেন?এভাবে এদীক ওদিক তাকিয়ে হাঁটলে তো হোঁচট খেয়েছি হবে।”
শিহাব নিজের মুখটাকে কাঁদো কাঁদো বানিয়ে বলে,
— “সরি রে!আমি বুঝতে পারিনি।”
তখন হঠাৎ করে প্রমা বলে উঠে,
— “কেন তুই কি বাচ্চা নাকি যে বুঝতে পারিস নি?”
উৎস প্রমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে দেয়। শিহাবকে উঠতে সাহায্য করে। শিহাব উঠে দাড়ায় তারপর প্রমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— “হো আমি বাচ্চা!তাতে তোর কোনো সমস্যা আছে ছাগলী?”
প্রমা দ্বিগুণ রেগে জবাব দেয়,
— “তুই…..তুই আবার আমাকে ছাগলী বলছিস? শয়তান,বলল,কুমির,হাতি!”
মিথিলা ওদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “এই তোরা থাম প্লিজ। এখানে এসেও শুরু করে দিয়েছিস। প্লিজ থাম!”
প্রমা শিহাবের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “বিশ্বাস কর!প্রমার কথাতেই তো রেগে আমি এসব করেছি হু!”
প্রমা ফিক করে হেসে বলে,
— “তারমানে তুই শিকার করছিস যে তুই এসব শুরু করেছিস?”
শিহাব কিছু বলবে তার আগেই মিথিলা বলে,
— “হয়েছে তোরা এবার থাম।আর কিছু দেখার বাকি আছে?নাকি আগের যায়গায় গিয়ে বসি?”
প্রমা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে উঠে,
— “না থাক বাবা!আমি আরো ঘুরে দেখবো বাড়িটা।”
শিহাব হেসে বলতে থাকে,
— “তুই আর বাড়ির কোন যায়গা ঘুরবি বল তো?বাড়ির সব যায়গাই তো ঘুরা শেষ।”
প্রমা এদিক ওদিক তাকিয়ে তারপর বিরক্তিকর সুরে বলে,
— “ধুর!আবার ওখানে যেতে হবে ভাল্লাগে না।”
মিথিলা ভ্রু কুঁচকে প্রমাকে জিজ্ঞেস করে,
— “ভাল্লাগেনা কেন?তুই কি আংকেল কে ভয় পাস নাকি?”
প্রমা একটা ঢোক গিলে বলতে শুরু করে,
— “তা আর বলতে!”
মিথিলা একটুখানি মুচকি হেসে তারপর প্রমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “আরে আংকেল কে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।উনি অনেক ভালো মনের মানুষ।”
প্রমা টিস্যু দিয়ে নিজের কপালের ঘাম মুছে। মিথিলা সবাইকে বলে,
— “তাহলে চলো সবাই যাওয়া যাক।”
মিথিলার পিছুপিছু সবাই আসছে। শিহাব উৎসর পাশে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উৎসকে প্রশ্ন করে,
— “শোন আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে যে রক্তিম ভাই এখানেই আছে।তোর কি মনে হয়?”
প্রতিউত্তরে উৎস বলে,
— “আমারো তাই মনে হচ্ছে।দেখা যাক কি হয়।”
শিহাব বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
— “দেখা যাক।”
______________________
— “কিরে ব্যাগ গোছানো হচ্ছে কেন?কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
ইশুর কথায় সামু নিজের চোখের কোণে থাকা পানি টা মুছে ফেলে টিস্যু দিয়ে।মুখে মিথ্যা হাসির রেখা ফুটিয়ে ইশুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “চলে যাচ্ছি রে।মা এসেছে একটু আগেই।আমাকে নিতে!”
ইশু সামুর দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে বলে,
— “ফুল আন্টি কোথায় এসেছে?”
সামুর স্পষ্ট জবাব,
— “নিচে আছে।মামণির সাথে কথা বলছে। আজকে দুপুরের বাসে চলে যাবো।”
ইশু রেগে সামুকে বলে,
— “তোর মাথা ঠিক আছে তো?পারলে কয়েকদিন ওখানে গিয়ে থেকে আয়।বাট চলে যাবি এসব আবার কি কথা?”
সামু মুচকি হেসে বলতে থাকে,
— “কারণ তো আছেই।যাকে বোঝানোর জন্য এখানে আসা সেই তো বুঝলো না!”
— “কে সে?কাকে বোঝানোর জন্য এসেছিলি?”(ইশু)
________________________
এতক্ষন সবাই বসে খাবার খাওয়ার ঝামেলা শেষ করলো।তবে মিথিলার এখনো মন ভালো হয়নি।প্রমা মিথিলাকে ফিসফিসিয়ে বলে,
— “কি রে এখন কি করবি?”
মিথিলা মাথা নিচু করে বলে,
— “জানিনা।”
প্রমা আর কিছু বলবে তার আগেই বাড়ির ডোরবেল বেজে ওঠে‌।এই সময়ে কেউ এই বাড়িতে আসতে পারে দেখে সবাই অবাক হলেও অবাক হলেন না আরমান সাহেব।ওনার ঠোঁটের কোণে রহস্যময়ী হাসি লেগে আছে। আরমান সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “তা মিথিলা তুই যা গিয়ে দেখ তো দরজাটা খুলে যে কে এসেছে।”
মিথিলা মাথা নাড়িয়ে”হ্যা”জানায়। মিথিলার কেন যেনো অন্য রকম ফিলিং হচ্ছে। মিথিলা দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।দরজার বাইরে যাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো তাতে মিথিলা কাঁপাকাপি শুরু করে দিয়েছে। রক্তিম দাঁড়িয়ে আছে।সে ও মিথিলাকে দেখে অবাক হয়েছে।উৎস,প্রমা,আর শিহাব আসে ওদের সামনে। রক্তিম গম্ভীর কন্ঠে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— “তুমি এখানে?”
মিথিলা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
— “কেকেনননননন আসতে পারিনা বুঝি?”
উৎস ব্যাপারটা বুঝে। আরমান সাহেব এগিয়ে এলেন ওদের দিকে।উনি গম্ভীর কন্ঠে রক্তিমকে বললেন,
— “কেন মিথিলা কি এখানে আসতে পারবে না নাকি?”
রক্তিম প্রতিউত্তরে বলে,
— “আমি তো সেই কথা বলিনি বাবা। তবে ওকে এখানে দেখে অনেক অবাক হয়েছি।”
চলবে……