হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-৭+৮

0
586

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_৭
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

ইশু দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলে উঠে,
— সেটাই তো বলছি ।এইসব কিছুই জানি না। কিন্তু তোর কথাগুলো শুনে মনে হলো যে তুই প্রেমে পড়েছিল।বাই দ্যা ওয়ে তোকে এসব বলেছে কে রে?
উৎস আনমনে বলে উঠে,
— এটাতো আমাকে…..
এইটুকু বলে উৎস চুপ হয়ে গেল। ইশু উৎসকে বলে উঠে,
— কী হলো বল?
উৎস আমতা আমতা করে বলে উঠে,
— কেউ না।
উৎস ইশুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল।ইশু দাঁত কেলিয়ে নিজে নিজেই বলে উঠে,
— আমি যেটা ভাবছি সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে তো খুব ভালো হবে।
_________________________
— আচ্ছা তোর কোনো শাড়ি আছে সামু?
সামুকে জিজ্ঞেস করলেন মিসেস সাহেরা চৌধুরী।সামু বইয়ের দিকে তাকিয়েই বলে উঠে,
— না তো!কেন মামণি?
মিসেস সাহেরা চৌধুরী চিন্তিত স্বরে বলে উঠলেন,
— উৎসর কাছে শুনলাম কয়েকদিন পর তোদের নবীনবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে তো মেয়েরা শাড়ি পড়বে। কালকে উৎসকে নিয়ে শপিংয়ে রাবি। ওখানে তোর যা ভালো লাগবে সেটা কিনে আনবি কেমন!
সামু স্মিত হেসে বলে উঠে,
— এসবের কী দরকার আছে মামণি?আমার তো ড্রেস আছেই।
মিসেস সাহেরা চৌধুরী রাগী স্বরে বলে উঠলেন,
— দরকার আছে তাই বলছি।তুই আর একটা কথাও বলবি না। কালকে উৎসর সাথে শপিংয়ে যাবি দ্যাটস ফাইনাল।
এতটুকু বলেই চলে গেলেন মিসেস সাহেরা চৌধুরী উনি চলে যেতেই সামু বিরবির করে বলতে লাগলো,
— শপিংয়ে যাওয়ার হলে তো ইশুর সাথেই যেতে পারি কিন্তু মামণি তো আমাকে বলে গেল উৎস ভাইয়ার সাথে যেতে।এই জায়গাটিতেই তো ভালো লাগছে না আমার।ভয় হচ্ছে যদি উনি ওনার গাঁয়ে কাদা ছুড়ে মারার প্রতিশোধ নিতে চায়।আমিও সামু হু!দেখবো উনি কী করতে পারেন। উল্টো আমি ওনাকে ফাঁসিয়ে দেবো।
_______________________
— কিছু কি বলবি আপু?থাকলে বলে ফেল।
নীরবে কথাটা তার বড় বোন রিহাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে মিথিলা। মিথিলা আজকেই ওর বড় বোনের বাড়িতে এসেছে।রিহার বিয়ে হয়েছে ৩ বছর হলো। এরমধ্যে মিথিলা ওর সাথে দেখা করতে খুবই কম আসে।আজ রিহা ওকে ডেকে পাঠিয়েছে।রিহা ওর স্বামী আর ১ ছেলে নিয়েই ওর সংসার। আজকে মিথিলাকে কোনো এক কারন বশত ডেকে আনে রিহা।রিহা কঠিন মুখ করে বলে উঠে,
— বিয়ে করছিস কবে? রক্তিম ছেলেটা যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেটা কি তুই বুঝিস না।বাবা মা মারা যাওয়ার পর তোকে নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু রক্তিম তখন আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।ও যে তোকে কতোটা চায় সেটা কী তুই বুঝিস না?নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করিস!কোনটা?
মিথিলা এতক্ষন মনোযোগ সহকারে ওর আপুর কথা শুনছিল। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরই হু হা করে হাসতে লাগলো মিথিলা। কিছুক্ষণ হাসার পর মিথিলা দেখে রিহা ওর দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রিহা রাগী স্বরে মিথিলাকে বলে উঠে,
— আশ্চর্য!এতে হাসির কি হলো?
মিথিলা মুচকি হেসে বলতে শুরু করে,
— বিয়ে করবো!তাও রক্তিমকে? অসম্ভব।তুই তো জানিসই ও আমার সাথে কী করেছে তার পরেও তুই তুই ওর হয়ে কথা বলছিস?আমার যথেষ্ট আত্মসম্মান আছে।আমি ওকে কোনোদিন ও ক্ষমা করবোনা। কোনোদিন ও না!
এই বলে মিথিলা অন্য রুমে চলে গেল।রিহা ওখানেই দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
________________________________________
সকালে……..
— আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো আমি?পেত্নীদের এতো সাজার কি আছে?
উৎসর কথায় মিসেস সাহেরা চৌধুরী রেগে গেলেন। ব্রেকফাস্ট করার পরপরই মিসেস সাহেরা চৌধুরী উৎসকে বললেন যে সামু আর ইশুকে শপিং করাতে নিয়ে যেতে।উৎস প্রচন্ড বিরক্ত এই ভেবে যে সামু ওর সাথে যাচ্ছে। এরমধ্যেই সামু আর ইশু চলে এলো।উৎস অনেক কষ্টে ইশুকে শপিংয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছে কারন সামুকে ও একা সামলাতে পারবেনা।এতে সামুর ও অনেক লাভ হয়েছে।সামুও অনেক খুশি হয়েছে।
_________________________
— এই তোরা পিছনে বসছিস কেন?আমি কী তোদের ড্রাইভার?
রেগে কথাটা বলে উঠে উৎস।সামুর মুখে লেগে আছে সেই মিষ্টি হাসি।যা উৎসকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।উৎস বারবার আড়চোখে সামুর দিকে তাকাচ্ছিল যা ইশুর চোখ এড়ায়নি।এখন সামু আর ইশু এসে গাড়ির পিছনে বসে বিধায় উৎস রেগে এই কথাটি বলে।ইশু নিজের চশমাটা ঠিক করে মুচকি হেসে একবার সামু আর উৎসর দিকে বলে উঠে,
— আমি পিছনের পিঠেই বসবো।সামু তুই সামনের সিটে বস গিয়ে প্লিয।
ইশুর ইমোশনাল ভাবে অনুরোধের কারনে সামু গলে গেল।সামু রাগী চোখে উৎসর দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটলো।সামু গিয়ে সামনের সিটে বসলো।
চলবে….

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_৮
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

সামু রাগী চোখে উৎসর দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটলো।সামু গিয়ে সামনের সিটে বসলো।গাড়ি তার আপন গতিতে ছুটে চলেছে। জানালার লুকিং গ্লাসে ইশুকে মিটমিটিয়ে হাসতে দেখে উৎস ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,
— ইশু তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?একা একা হাসছিস কেন?
ইশু আগের ন্যায় হাসতে থাকে। হেসে হেসেই বলে উঠে,
— যেভাবে তার দিকে তাকিয়েছিলি তাঁতে তো তুই ই পাগল হয়েছিস,আমি কেন হতে যাবো?
এই কথা শুনে উৎসর মুখটা একেবারে চুপসে যায়।তা দেখে সামু ইশুকে বলে উঠে,
— কী নিয়ে এতো কথা বলছিস রে তোরা শুনতে পারি?
ইশু আড়চোখে উৎসর দিকে তাকিয়ে সামুকে বলে উঠে,
— কেন তুই শুনিসনি?
সামু ভ্রু কুঁচকে ইশুকে প্রশ্ন করে উঠে,
— শুনলে কি আর তোকে জিজ্ঞেস করতাম যে কি হয়েছে!
ইশু নিজের চশমাটা ঠিক করে বলে উঠে,
— হ্যা সেটাই তো।
গাড়িতে কেউ আর কোনো কথা বলেনি।
_________________________________
— এখানে বসে আছিস যে!মন খারাপ?
মিথিলা মৃদু হাসলো। সেই হাসির পিছনে লুকিয়ে আছে শত না বলা কথা। ভার্সিটির পেছনের দিকটায় পুকুর পাড়ে বসে ছিল মিথিলা।প্রমা মিথিলার পাশে বসে পড়লো। আজকে মিথিলার মুখে বিষন্নতার ছাপ দেখতে পাচ্ছে প্রমা। মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
— তোর কী হয়েছে বল তো?মন খারাপ কেন সেটাও তো বলছিস না।আমি বুঝবো কি করে।
মিথিলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— তোর বুঝতে হবে না।বাই দ্যা ওয়ে বাকিরা কোথায়?
প্রমা গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে শুরু করে,
— উৎস তো আজ আসেনি আর বাকিরা স্টেজ সাজাচ্ছে যেহেতু নবীনবরণ উৎসব হবে।
মিথিলা অস্পষ্ট সুরে বলে উঠে,
— ওহ!
____________________________
— হোয়াট! তুমি কি বাচ্চা নাকি যে ডল নিয়ে খেলবে?
ভ্রু কুঁচকে সামুকে কথাটি জিজ্ঞেস করে উৎস।আর তখনি ইশু উৎসকে বলে উঠে,
— ওর ডলটা পছন্দ হয়েছে তাই নিয়েছে।এতে তুই ওকে বাচ্চা বললি?দারা আমি আম্মুকে ফোন করে সব বলছি।
ইশু যেইনা ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে যাবে ওমনি উৎস আমতা আমতা করে বলে উঠে,
— সবসময় ভয় দেখাস কেন আমাকে?
সামু মিষ্টি হেসে বলে উঠে,
— আমি কি একবারো বলেছি যে ডল নিয়ে খেলবো?আমিতো ডলটা সাজিয়ে রাখবো হু!
উৎস সামুকে যতই দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে। এরমধ্যেই ইশু বলে উঠে,
— শাড়িটাই তো কেনা হয়নি!
উৎস বলতে লাগলো,
— হুম চল।
________________________
— কোমড় টা ভেঙ্গে গেল মাগোওওও!
সবাই উৎসক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। মেয়েটি মাঠেই কারো সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছে।তার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছে সে হচ্ছে শিহাব।মেয়েটিকে টেনে তুললো প্রমা।প্রমা মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— তুমি ঠিক আছো তো?কোথাও লাগেনি তো তোমার?
মেয়েটি শিহাবের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে প্রমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— ঠিক তখনই হবো যখন….বাই দ্যা ওয়ে আমি মিহু! ফার্স্ট ইয়ার।
শিহাব মৃদু হেসে মিহুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— এতদিন ধরে শুনে এসেছি রাতকানা রোগী আছে এখন আজকে জানলাম দিনকানা রোগী ও আছে।
সবাই হাসতে শুরু করে শিহাবের কথা শুনে।মিহুর রাগে মুখ লাল হয়ে গেছে।মিহু সোজা গিয়ে শিহাবের মুখোমুখি দাঁড়ালো।ক্যাম্পাসের সবাই ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো এখানে সিনেমার সুটিং হচ্ছে। মিহু চারপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এখন পুরো ক্যাম্পাসের মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।মিহু দাঁত কেলিয়ে নিজের পা দিয়ে সোজা শিহাবের পায়ের ওপর জোড়ে লাথি মারলো।এই ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট হতভম্ব হয়ে গেলো। শিহাব নিজের পা টা কে ধরে লাফালাফি করতে লাগলো। মিথিলা আর আরিফ এসে ওকে ধরলো। শিহাব মিহুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
— তোমাকে আমি ছাড়ুম না।দেইখা নিমু। দোস্ত এই মাইয়া তো পুরা সামুর কার্বন কপি।
প্রমা হেসে হেসে বলতে লাগলো,
— তোর কী হবে শিহাব?সামুর সঙ্গেই তো পারিস না। সেখানে আরেকজন এসেছে।ইশ! বেচারা।কেন মিহুকে খোচাতে গেলি বলতো?নাহলে তো এরকম হতো না।
শিহাব মুখটাকে কাদো কালো বানিয়ে বলে উঠে,
— আমি কী জানতাম নাকি এই মাইয়া সামুর কার্বন কপি?জানলে জীবনে খোচাতে যেতাম না!আর তোরে এতো দুঃখ প্রকাশ করতে হইবো না ছাগলি!
প্রমা শিহাবের শেষের কথা শুনে রাগে ফুসে উঠলো‌।
বলতে থাকে,
— তোর কী আরো মাইর খাওয়ার শখ হয়েছে ছাগল?তাহলে উৎসকে বলে সামুকে আনিয়ে দিচ্ছি কেমন?
সামুর নাম শুনেই শিহাবের মুখ ভয়ে চুপসে গেল। শিহাব কাদো কাদো মুখে বলতে থাকে,
— থাম মেরি মা!সামুকে ডাকতে হইবো না।এই একটাই আমার অবস্থা খারাপ করে দিছে।

মিহু দূর থেকে ওদের কে দেখতে লাগলো। হঠাৎ করেই ওর ফোন বাজতে লাগলো।মিহু একপাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো। কথপোকথন গুলো এমন ছিল…
— হুম রে তোর ভার্সিটিতেই এসে ভর্তি হয়েছি।কিহ!
আজ আসতে পারবিনা। আচ্ছা সমস্যা নেই কালকে যা হয়েছে তারপর এখন বাসায় চলে যাবো।আরে আর বলিস না আমি একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যাই। দোষটা কিন্তু ওনারই ছিল।উনি না দেখে হাঁটছিলেন।তারপর আবার আমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কথা শুনাচ্ছিল।আমি সিউর ওনারা সিনিয়র।এই পুরো ঘটনা আমি কালকে সরাসরি বলবো তোকে।এখন রাখছি বাই।
ফোনে কথা বলা শেষে মিহু একবার দূর থেকেই শিহাবকে একপলক দেখে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে।
চলবে……