#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-১২
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
শ্রাবণের শেষ সপ্তাহ। সকালে ঘুম ভাঙতেই চোখে পড়লো বাইরের তুমুল বর্ষণ। টিনের চালের বৃষ্টির অপূর্ব ঝমঝম শব্দ কানে শ্রুতিমধুর আবেশ সৃষ্টি করে। ঘুমু ঘুমু চোখে বারান্দার বৃষ্টি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ধারা একবার চোখ বুলালো ফাঁকা রুমটিতে। শুদ্ধকে দেখা যাচ্ছে না। এমনিতে তো আজকাল পড়া শুরু করার পর থেকে প্রতিদিন ভোর হতে না হতেই ধারাকে উঠিয়ে দেয়। আজ হঠাৎ ব্যতিক্রম হলো কেন? ধারা একটা হাই তুলে উঠে বসলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলো আসলেই অনেক বেলা হয়ে গেছে। বাইরে বৃষ্টি বলে তেমন বোঝা যাচ্ছে না। দেরি হয়ে গেছে বুঝতে পেরেও ধারার মধ্যে তাড়াহুড়োর কোন লক্ষণ দেখা গেল না। সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টি দেখা প্রকৃতির একটা সুন্দর সারপ্রাইজ। চারপাশটা কেমন যেন হিমেল আবরণে জড়িয়ে আছে। ধারা গায়ের পাতলা কাঁথাটা টেনে পা থেকে গলা পর্যন্ত আষ্টেপৃষ্ঠে মুড়িয়ে রাখলো। এভাবে ঘুমু ঘুমু ভাবটা নিয়ে হালকা উষ্ণতাটা ধারার ভালো লাগছে। এভাবেই আপাদমস্তক কাঁথায় পেঁচিয়ে ধারা হাঁটুতে মুখ ভার দিয়ে রেখে বারান্দায় তাকিয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলো। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ পৃথিবীর সেরা শ্রুতিমধুর শব্দগুলোর একটি। এতদিন নিজেদের পাকা দালানে বসে বসে এই শ্রুতিমধুর ধ্বনি থেকে ধারা বঞ্চিত ছিল। আহ! কি সুন্দর!
তার এই সুন্দর মুহুর্তে ব্যাঘাত ঘটালো ফোনের কর্কশ রিংটোন। তার ছোট কাকী রুনা ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে অনেক কথাই হলো তার সাথে। ধারার বিয়েতে উপস্থিত না থাকতে পারায় রুনা ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করলো। কাকীর সাথে কথা শেষ হলে ধারা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। কুঁচকানো জামা কাপড় হাত দিয়ে ঠিক করে এলোমেলো চুলগুলোকে হাত খোঁপা করে নিল সে। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ধারা নিচে নেমে দেখলো খোদেজা বারান্দায় টিনের ফুটো দিয়ে টুপটুপ করে পড়া বৃষ্টির পানির জায়গায় জায়গায় মগ, পাতিল, ছোট ছোট বাটি পেতে রাখছে। বড় বড় বালতিগুলো সব বাইরে পাতা। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য। মাঝের চৌকিতে চুমকি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। শুদ্ধ একটা মোড়ার উপর পা তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে। খোদেজা মগ, বাটিগুলো ঠিক ঠিক জায়গায় রাখতে রাখতে বলল,
‘সেই রাইত থিকা বৃষ্টি নামছে। তবুও এতক্ষণে একটু জোরও কমে নাই। আজকে মনে হয় সারাদিনই বৃষ্টি থাকবো রে মাহতাব। ঘর দুয়ার বৃষ্টিতে সব ভাইসা যাইবো মনে হইতাছে।’
শুদ্ধ ল্যাপটপের থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই বলল,
‘ভেসে গেলে যাবে আম্মা। আমরা একটা কলা গাছের ভেলা বানিয়ে ভাসতে ভাসতে ঘুরবো।’
খোদেজা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘ফাইজলামো করিস না তো!’
মায়ের দিকে তাকিয়ে শুদ্ধ হাসতে লাগলো। স্বভাবতই তার গাল ডেবে গেলো। প্রতিবারের মতোই একটা ধাক্কা খেলো ধারা। ছেলেদের গালের টোলও যে এতো সুন্দর হয় তা শুদ্ধকে না দেখলে বোঝা সম্ভব না। কাঁঠের সিঁড়িতে ধারাকে ওমন থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খোদেজা বলল, ‘বউ, ওইখানে দাঁড়ায় আছো কেন? আসো, নিচে আসো।’
ধারা নিচে নেমে এলে খোদেজা বলল,
‘তুমি তো মনে হয় এখনও মুখ ধোও নাই না? এই বৃষ্টির ভিতরে আর কলপাড়ে যাবা কেমনে! একটা কাজ করো দরজার সামনে পাতা বালতি থিকাই বৃষ্টির পানি দিয়া মুখ ধুইয়া ফেলো। খোদেজার কথা মতোই করলো ধারা। টুথ ব্রাশ নিয়ে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করে ধারা মগ দিয়ে বালতি থেকে পানি তুলে মুখ ধুয়ে নিল। বাইরে বৃষ্টির যা তেজ! পায়ের কাছটায় বৃষ্টির ছাটে ভিজে আসলো ধারার। ফিরে এসে দেখলো শুদ্ধ’র নজর এখনো ল্যাপটপেই। আজ ইচ্ছে করেই ধারাকে এতো বেলা করে ঘুমাতে দিয়েছে শুদ্ধ। গতকাল অনেক রাত পর্যন্তই পড়েছে ধারা। তাই আজ এই বৃষ্টির দিনে একটু ছাড় না হয় দেওয়াই যাক! খোদেজা চৌকির কাছ দিয়ে যাবার সময় চুমকির গায়ের কাঁথা টেনে বলল,
‘ঐ মাইয়া, উঠ! আর কত ঘুমাবি? তাড়াতাড়ি উঠ।’
চুমকি একবার চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে খোদেজা চলে যাবার পর আবারো কাঁথা টেনে ঘুমিয়ে পড়লো। শুদ্ধ বলল,
‘আম্মা কিছু খেতে দাও। খিদে লাগছে তো! গরম গরম ভাত দাও।’
খোদেজা বলল, ‘এই বৃষ্টির মধ্যে আমি গরম গরম ভাত পাবো কই? গতাকালের দোকান থেকে আনা পাউরুটি আর কলা আছে। তোমরা সবাই তা দিয়াই কাজ সাইরা নাও বাপু। আমার পান্তা ভাতেই হবে।’
এই বলে খোদেজা পাউরুটি আর কলা বের করে ধারা আর শুদ্ধকে দিলো। চুমকিরটা রেখে দিলো পরে উঠে খাবে বলে। শুদ্ধ পাউরুটিতে কামড় বসাতে বসাতে তার মাকে বলল, ‘আম্মা, তুমিও একটা পাউরুটি খেয়ে নাও। পান্তা ভাত খাওয়া লাগবে না।’
‘তা না হয় খাইলাম একটা। দুপুরে কি খাবি? আজকে তো চুলায় রান্না করা যাইবো না কোনমতেই। রসুইঘরের চালা একদিকে কাইত হইয়া বৃষ্টির পানি সব ঢুকতাছে। মাটির চুলা ভিজ্জা রইছে। আগুন ধরবো না। তোরে কয়বার বলছিলাম রসুইঘরের চালটা আগে ঠিক কইরা নে। কবে বৃষ্টিতে ভাইঙ্গা পড়ে! দেখলি তো, আমার কথাই সত্যি হইলো। এদিকে সিলিন্ডারের গ্যাসও শেষ। ঘরের মধ্যে যে রান্না করবো তারও উপায় নাই। এখন বল, কি হইবো?’
শুদ্ধ মোড়া থেকে পা নামিয়ে বলল, ‘আচ্ছা বেশ! দোষটা যেহেতু আমারই। আজকের রান্নাটাও আমিই করবো।’
‘করবি টা কেমনে?’
‘তোমার না একটা আলগা ছোট মাটির চুলা আছে আম্মা! গতবছর চুমকি বায়না ধরায় বানিয়ে দিয়েছিলে। ঐটা তো চুমকি ঘরের মধ্যেই রেখে দিয়েছিল। ঐটা বের করো।’
‘কি জানি বাপু! আমি বুঝি না তোর কাজ কারবার।’
‘আহা আম্মা! তুমি বের করো তো। তারপর দেখো আমি কি করি। শর্টকাটে আজকে আমি খিচুড়ি রান্না করবো। সাথে ডিমভাজা। বৃষ্টির মধ্যে খিচুড়ি ডিম ভাজা দারুণ হবে।’
খোদেজা চৌকির তলা থেকে মাটির আলগা চুলাটা বের করে আনতে গেলো। ধারা এতক্ষণে জিজ্ঞাসা করলো,
‘আপনি রান্নাও করতে পারেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘কি বলেন!’
‘এতো অবাক হবার কি আছে?খাওয়াটা কি শুধু মেয়েদের কাজ? ছেলেরা কি খায় না? তাহলে তারা রান্না করতে পারবে না কেন? মেসে থাকতে তো আমার রান্না আমিই করে খেতাম। আজকে আমার রান্না খেয়ে দেখবেন। মনে হয় না অতোটাও খারাপ রান্না করি।’
ধারা সত্যিই অবাক হয়েছিল। গ্রামে তো সে এতদিন এই দেখে এসেছে। ছেলেরা রান্না করা তো দূর! রান্নাঘরের নাম থেকেও একশ মাইল দূরে থাকে। নিজেদের বাড়িতেও তো এতদিন এমনটাই দেখে এসেছে ধারা। মেয়েলি কাজে হাত লাগানো নাকি পুরুষদের জন্য শোভা পায় না। আজকে শুদ্ধ’র মুখে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী কথা শুনে অবাক না হয়ে ধারা কিভাবে পারে!
ততক্ষণে খোদেজা চুলা নিয়ে চলে এসেছে। শুদ্ধ’র সামনে রেখে বলল, ‘শুধু এই চুলা দিয়েই কি হবে আমি কিছু বুঝতাছি না কিন্তু। রান্নাঘর থিকা লাকড়ি আনবি কেমনে? এই বৃষ্টির মধ্যে আনতে গেলে তো সবই ভিজা যাবো। আর এই ঘরের মধ্যে তুই চুলা ধরাবিই কেমনে?’
‘ওটা আমি ব্যবস্থা করে নেবো।’
এই বলে শুদ্ধ উঠে বারান্দায় গেলো। একটা বহু পুরনো ভাঙা চেয়ার পড়ে ছিল অনেক আগে থেকেই। সেটাকেই একটা দা দিয়ে কয়েক টুকরো করলো। নিজের রুমে গিয়ে একটা ব্যাগে ভরে পুরনো কাগজপত্র নিয়ে এলো সাথে করে। সেগুলো সহ চুলোটাকে বাতাসের প্রবাহের বিপরীতের বারান্দায় নিয়ে এমনভাবে রাখলো যাতে ধোয়া সব বাইরে চলে যায়। এর জন্য ঘরের দরজাও সম্পূর্ণ খুলে দিল। বাইরে তখন একনাগাড়ে বৃষ্টি ঝড়েই যাচ্ছে। খোদেজা দরজার ধারে গিয়ে বৃষ্টির পানি দিয়েই চাল ডাল ধুয়ে আনলো। ধারা বসে বসে বটি দিয়ে পেঁয়াজ মরিচ কেটে দিলো। চুমকি ততক্ষণে এমন শোরগোলের আওয়াজ পেয়ে ঘুম ছেড়ে উঠে বসলো। ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই উৎফুল্ল হয়ে বিছানা থেকে নেমে আসলো সে। শুদ্ধ’র সামনে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল, ‘মাহতাব ভাই, আজকে কি আমরা চড়ুইভাতি করতাছি?’
শুদ্ধ হেসে বলল, ‘হ্যাঁ রে চুমকি। এটাকে একটা ছোট খাটো চড়ুইভাতি বলাই যায়। কি বলেন ধারা?’
ধারা থতমত খেয়ে উঠলো। শুদ্ধ যে হঠাৎ করে তার নাম উচ্চারণ করবে এটা সে ভাবতে পারেনি। শুদ্ধ বলল, ‘আপনি তো এমনভাবে চমকে গেলেন যেন আমি ভূত দেখার কথা বললাম। বাই দা ওয়ে, আপনি না একদিন বাঁশ ঝাড়ের নিচে কি দেখেছিলেন! আপনার ঐ ভূত বন্ধু এসে আবার দেখা দিয়েছিল?’
খানিক শাসনের চোখে শুদ্ধ’র দিকে তাকালো ধারা। চুমকি ভূতের কথা শুনে ভয় পেয়ে বলল,
‘বাবা গো! তুমি কি দেখছিলা ভাবী? আমি হইলে তো সেইখানেই অজ্ঞান হইয়া যাইতাম।’
খোদেজা পেছন থেকে বলে উঠলো, ‘ঐ ছেমড়ি, তুই পরে অজ্ঞান হইস। এখন যাইয়া আগে মুখ ধুইয়া আয়। বইসা বইসা সবার কাছে মুখের গন্ধ ছড়াইতাছে।’
গাল ফুলিয়ে মুখ ধুতে গেল চুমকি। শুদ্ধ মাটির চুলায় কয়েকটা লাকড়ি ঢুকিয়ে কাগজের টুকরো দিয়ে আগুন ধরালো। মুহুর্তের মধ্যে ধোঁয়ায় ছেয়ে গেলো ঘর। সবাই কাশতে আরম্ভ করে দিলো। খোদেজা কাশতে কাশতে বলল, ‘ঐ মাহতাব, তুই ওঠ। কি যে করতাছোস!’
শুদ্ধ বলল, ‘আম্মা, আমি বলছি না আজকে আমি একা রান্না করবো। কোন লেডিস হাত দিবে না। তোমরা চৌকির উপর পা তুলে বসো তো।’
শুদ্ধ চুলায় সব মশলাপাতি কষিয়ে চাল ডাল দিয়ে দিলো। ধারা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে শুদ্ধ’র রান্না দেখতে লাগলো। মহা আনন্দে চুলার সামনে বসে রইলো চুমকি। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার এখনই খেতে ইচ্ছে করছে। বাইরে তখনও ঝড়ছে অবিরাম শ্রাবণ ধারা। টিনের চালে ঝমঝম শব্দ। ভেজা মাটির গা বেঁয়ে পুকুরের দিকে নেমে যাচ্ছে বৃষ্টির জল। আর ঘরের ভেতর চলছে চারটে মানুষের একটুপর পর হাসি ঠাট্টা। এভাবেই গল্প, হাসি, মজায় একসময় ওদের খিচুড়ি রান্না শেষ হলো। রান্না শেষ হতেই খোদেজা বলল, ‘নে এবার তোরা হাত মুখ ধুয়ে নে। আর যে গোসল করবি কর।’
খোদেজার মুখের কথা শেষ হতে না হতেই চুমকি এক দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। খোদেজা চেঁচিয়ে উঠে বলল, ‘কি করতাছোস চুমকি? এই বৃষ্টির মধ্যে ভিজিস না। ঠান্ডা লাইগা যাইবো। পুকুর থিকা তাড়াতাড়ি কয়টা ডুব দিয়া আইয়া পড়। বৃষ্টিতে ভিজিস না বেশি।’
খোদেজার কথাগুলো বৃষ্টির শব্দের সাথে মিশে গিয়ে তেমনভাবে চুমকির কানে পৌঁছালো না। আর যদিওবা পৌছালো সে তেমন গা করলো না। চুমকি তো তখন মনের সুখে বৃষ্টিতে ভিজছে। শুদ্ধ তার মাকে বলছে, ‘থাক আম্মা। ভিজুক। প্রতিদিন তো আর ভিজে না। মাঝে মাঝে একটু আধটু ভিজলে সমস্যা হয় না।’
খোদেজা তাই চুপ হয়ে গেলো। চুমকি বৃষ্টি ভেজা অবস্থায় হঠাৎ দৌঁড়ে গিয়ে দরজায় দাঁড়ানো ধারাকে টেনে আনলো বৃষ্টিতে। ধারার সামনে শুদ্ধ দাঁড়িয়ে ছিল। ধাক্কা লাগায় ধারার সাথে সেও চলে এলো বাইরে। বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে ধারার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আরে!’
ধারা পুরো ভিজে গিয়ে জবুথবু হয়ে বলল, ‘আমি কি ইচ্ছে করে আপনাকে এনেছি নাকি! ধাক্কা লেগেছে। আর আপনিই তো এই মাত্র বললেন, একটু আধটু ভিজলে কিছু হয় না। তাহলে সমস্যা কি?’
শুদ্ধ ভিজে যাওয়া মাথার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে মৃদু হেসে বলল, ‘ধারা, আপনি কিন্তু চালাক হয়ে যাচ্ছেন।’
ধারা আর চুমকি একে অপরের দিকে তাকিয়ে খানিক ঠোঁট চেঁপে হাসলো। ওরা তিনজন উঠোনে দাঁড়িয়ে শ্রাবণের ঝরিয়ে দেওয়া আনন্দের উল্লাসে মেতে উঠলো। দৌড়াতে গিয়ে চুমকি কাঁদায় পিছলে পড়ে গেলো। তা দেখে হাসিতে ফেটে পড়লো ধারা শুদ্ধ। খানিকবাদে দরজার কাছে দাঁড়ানো খোদেজাকেও টেনে নিয়ে এলো শুদ্ধ। খোদেজা মিথ্যা রাগের ভাণ ধরে বলল,
‘আরে আরে কি করোস কি? তোরা ভিজ। আমার কি আর সেই সময় আছে!’
শুদ্ধ শুনলো না। মাকে টেনে নিয়ে এলো নিজেদের কাছে বাইরে। পানি ছিটিয়ে ছিটিয়ে আজ মাকেও নিজেদের সাথে বাচ্চা বানিয়ে দিল তারা।
গোসল শেষে দুপুর হলে মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে একসাথে খেতে বসলো সবাই। খোদেজা সবার প্লেটেই খিচুড়ি বেড়ে দিল। গরম ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি। তার সাথে ডিম ভাজা। দেখেই যেন সবার পেটে খিদে মোচড় দিয়ে উঠলো। চুমকি হঠাৎ বাঁধ সাধলো। সে হাত দিয়ে খাবে না। তার ভালো লাগছে না। তাকে খাইয়ে দিতে হবে। বিরক্ত হবার ভাণ ধরেও খোদেজা শেষমেশ চুমকির আর্জিতে ধরা দিলো। নিজের প্লেট থেকে খাইয়ে দিতে লাগলো চুমকিকে। চুমকি তো ভীষণ খুশি। শুদ্ধ বলে উঠলো, ‘আম্মা, শুধু কি চুমকিকেই খাইয়ে দিবা? আমাকেও একটু দেখো।’
এই বলে শুদ্ধ মায়ের কাছে গিয়ে মুখ হা করে রইলো। আনন্দের সাথে খাইয়ে দিতে লাগলো খোদেজা। ধারা হাসিমুখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। দৃশ্যটা এতোটাই সুন্দর! ধারাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে খোদেজা বলল, ‘বউ, তুমিও হা করো তো! তুমি বাদ যাবা কেন? শ্বাশুড়ি হইছি তাতে কি হইছে! ওরা যেমন তুমিও আমার কাছে ওমনই। নাও হা করো।’
খোদেজা এক নলা ধারার দিকে বাড়িয়ে দিলো। ধারাও মুখ হা করে খোদেজার হাত দিয়ে খেলো। সবকিছু ভীষণ ভালো লাগতে লাগলো তার। এমন মুহুর্ত সে খুব কমই দেখেছে। তাদের বাড়িতে তো সবাই সবসময় একপ্রকার গম্ভীর হয়েই থাকে। সবকিছু চলে কড়া নিয়মের সাথে। তাদের কাছে ডাইনিং টেবিল আছে। দুপুরে খাবার জন্য দশ আইটেম থাকে। থাকে না শুধু এতো আনন্দ। এতো হাসি ঠাট্টা। ধারার চোখ ছলছল করে উঠলো। ঠিক তখনই তার মনে পড়লো তার ছোট কাকী তার বিয়ের ছবি দেখতে চেয়েছিল। সকালেই চেয়েছিল। খাওয়া শেষ করেই সে তার কাছে যেই ছবিগুলো ছিল সেই সব ইমুতে পাঠিয়ে দিলো। কিন্তু সে কি আর জানতো এই ছবিগুলোই একদিন তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াবে!
চলবে,
#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-১৩
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
আজ রোদের তেজ বড়ই বেশি। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাও দুষ্কর। হাসুর মা ভেবেছিল ঘরে থাকা মসুরের ডালগুলো সব বের করে উঠোনে রোদ দিবে। কিন্তু সকাল থেকে বাড়ির যেই অবস্থা তার জন্য সব কিছুই যেন থেমে গেছে। তার ছেলে মনিরের বউ রোকসানা সকাল থেকেই কেঁদে যাচ্ছে। সে নাকি মনিরের ফোনে কোন মেয়ের সাথে মনিরের ঘনিষ্ঠ ছবি দেখেছে। মনিরকে এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে স্পষ্ট করে তো কিছু বলছেই না তার উপরে চেঁচামেচি, গালাগালি করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছে। বাড়ির পরিবেশটাই যেন কেমন পাল্টে গেছে। হাসুর মা মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হাসুও বাড়িতে নেই। এই সমস্যার সে কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। খোদেজা এসেছিল প্রতিবেশী হাসুর মার কাছে রান্নার জন্য কিছু সরিষা চাইতে। এসে দেখলো মনির বউয়ের সাথে কি নিয়ে যেন চেঁচামেচি করে বাইরে চলে গেলো। হাসুর মাও ঘরের সামনের খুঁটির সাথে উদাস মনে হেলান দিয়ে রয়েছে। মনিরের কথার ধরন দেখে খোদেজা ব্যাপারটা কিছুটা আঁচ করতে পারলো। তাই আর কিছু না ঘেঁটে চুপচাপ সেখান থেকে চলে এলো সে। নিজের দাওয়ায় এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বেলা বোঝার চেষ্টা করলো। তার ছেলে আর ছেলের বৌ গেছে শহরে। না জানি আসতে আসতে কতক্ষণ লাগে!
গ্রামের পথে আসতেই শুদ্ধ খেয়াল করলো সরকারি দপ্তর থেকে কিছু লোক এসে পাকা সড়কে কিছু ফিতা নিয়ে কি যেন মাপামাপি করছে। এই সড়কের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া অঞ্চলে মাঝে আরেকটা রাস্তা পাকা করা হবে। তারই পরিকল্পনা চলছে। শুদ্ধ উপলব্ধি করলো রূপনগর আর তাদের আশেপাশের গ্রামগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া খুব ভালো মতোই লেগেছে। গ্রামের মধ্যে পাকা রাস্তা ঘাট, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি সবই আছে। গ্রামটি শহরের কাছ ঘেঁষে হওয়াতেই সব সুযোগ ভালো মতো পাচ্ছে তারা। এই তো বছর কয়েক আগেও তো শুদ্ধ যখন উচ্চ শিক্ষার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়েছিল তখনও তো এই গ্রামের অবস্থা এতোটা ভালো ছিল না। রাস্তাঘাট ছিল কাঁচা। বর্ষাকালে বৃষ্টি এলে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে হাঁটার মতো অবস্থাও থাকতো না। আজ সেখানে সবকিছু কতো সুন্দর! কিন্তু শুধু রাস্তাঘাট পাঁকা হলেই কি তাকে উন্নত বলা যায়? আসল উন্নতি তো তখন হবে যখন এই গ্রামের মানুষের চিন্তা চেতনার দুয়ার হবে বিস্তৃত, অজ্ঞতা মুক্ত ও কুসংস্কারহীন। সেই উন্নতি রূপনগরে কতটা হয়েছে তা ঠিক শুদ্ধ’র জানা নেই।
অটো থামিয়ে অটোচালক অন্যদের সাথে কথা বলে জানতে পারলো, এই রাস্তা দিয়ে যেতে হলে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে৷ শুদ্ধ ভীষণ বিরক্তবোধ করলো। এমনিতেই ধারাকে নিয়ে তার বন্ধুর কাছে দুই ঘন্টার মতো পড়িয়ে তারপর এসেছে। সাধারণত রোজ বিকেলেই শহরে ধারাকে নিয়ে বন্ধুর কাছে প্রাইভেট পড়াতে যায় শুদ্ধ। আজ তার বন্ধুর বিকেলে কিছু কাজ থাকায় সেই পড়া বিকেলে না পড়িয়ে সকালেই পড়িয়ে দিয়েছে। রূপনগর থেকে মূল শহর খুব বেশি দূরে নয়। অটোরিকশায় যেতে সময় লাগে চল্লিশ মিনিট। যদিও রোজ আসা যাওয়ার জন্য একটু সমস্যাই। তবুও তার বন্ধুকে রাজী করিয়ে যে দুই মাস তার কাছে ধারাকে একা পড়াতে পারছে তাই বেশি। অটোতে বসে থাকতে থাকতে গরমে ঘাম ছুটে যাচ্ছে শুদ্ধ ধারার। অটো থেকে একবার মাথা বের করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে শুদ্ধ ধারাকে বলল,
‘চলুন ধারা নেমে যাই। এখানে কতক্ষণ বসে থাকতে হয় না হয়! দেরি হয়ে যাবে। এখান থেকে আমাদের বাড়ি গ্রামের ছোট পথে গেলে খুব বেশি দূরে নয়। তবে যাওয়ার সময় একটা ছোট সাঁকো পরে। আপনি সাঁকো দিয়ে যেতে ভয় পান না তো!’
সাঁকো দিয়ে অনেকবার যাওয়া আসা হলেও ধারার সাঁকো তে একেবারেই যে ভয় লাগে না তা বলা যায় না। তবুও সেই কথাটা সে শুদ্ধকে বলল না। আবার না খোঁচারাজ কোন কথায় পরে এ নিয়ে খোঁচা দিয়ে বসেন! তাই শুদ্ধ’র কথায় হেসে মাথা দুলিয়ে সে সায় দিলো। অটো থেকে নেমে পড়ে গ্রামের শর্টকাট পথ ধরলো তারা। একেকজনের বাড়ির উপর দিয়ে যাওয়ার সময় সবাই তাদের কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো শুদ্ধ’র সাথে থাকা অচেনা সুন্দরী মেয়েটিকে। ধারার সংকোচ হতে লাগলো। অবশেষে সব বাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে যখন তারা মরা খালের কাছে চলে এলো তখনই একটু স্বস্তি হলো ধারার। কিন্তু তা বেশিক্ষণ টিকলো না। সামনে চওড়া খাল। তার উপর দিয়ে সোজা চলে গেছে বাঁশের নড়বড়ে লম্বা সাঁকো। শুদ্ধই আগে চড়লো সাঁকো তে। তারপর ধারা। দুজন মানুষের কদম পড়তেই সাঁকো দুলতে শুরু করে দিলো। পায়ের নিচে শুধু একটাই বাঁশ। তাকেই আশ্রয় করে যেতে হবে ওপারে। ধরে ধরে হাঁটার জন্য পাশ দিয়ে উপরে আরেকটা বাঁশকে আড়াআড়ি ভাবে স্থাপন করা হয়েছে। সেটাই ভালো মতো হাত দিয়ে ধরে রেখে সাবধান সাঁকো পার হতে লাগলো তারা। সাঁকো টা কেমন যেন পিচ্ছিল হয়ে আছে। বোধহয় একটু আগেই কেউ ভেজা পায়ে পার হয়েছিল। ধারা খুব আস্তে আস্তে পার হতে লাগলো। বুকের মধ্যে হৃদস্পন্দন কিছুটা হলেও বেড়ে গেছে তার। যদিও খালে পানি একদম নেই বললেই চলে। পানির নিচ থেকে আঠালো মাটিও চোখে পড়ছে। খানিক শঙ্কিত মুখে সেদিকেই বারবার চোখ দিচ্ছিল ধারা। এখানে একবার কেউ যদি পড়ে একেবারে কাঁদায় নাস্তানাবুদ হয়েই উঠতে হবে তার। ভাবতে ভাবতেই পা পিছলে গেলো ধারার। সে নিজে পড়লো তো পড়লোই সাথে করে বাঁচার জন্য সামনের শুদ্ধ’র শার্ট খামছে ধরায় তাকেও নিয়ে পড়লো। ঝপ করে একপ্রকার বিকট শব্দ হলো খালের সেই কাঁদা পানিতে। খানিক নাকানিচুবানি খেয়ে দুজনেই সোজা হয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো পানিতে। কাঁদায় মাখামাখি ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে তারা। শুদ্ধ বলল,
‘এটা কি হলো ধারা?’
হাত দিয়ে চুলের কাঁদা পরিষ্কার করতে করতে ধারা বলল, ‘আমি কি জানি! আমি কি ইচ্ছে করে করেছি?’
‘আপনার সাঁকো তে সমস্যা হলে সেটা আমাকে আগে বলবেন না!’
‘বললে কি হতো? সেই তো আপনি আবার আমাকে পরে এটা নিয়েও ঠাট্টা করতেন। তাই বলিনি।’
‘ঠাট্টার ভয়ে কাঁদায় মাখামাখি হওয়া আপনার বেশি উপযোগী মনে হলো? কি অদ্ভুত! আচ্ছা, আপনার কি কোন পড়ে যাওয়ার রোগ আছে? এই নিয়ে আপনি আমার সামনেই ঠিক কয়বার পড়লেন বলুন তো?’
চোখে ঠাট্টার ভাব ফুটিয়েই শুদ্ধ ধারার দিকে তাকিয়ে রইলো। ধারা মুখ ঘুরিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘ঐ যে শুরু হয়ে গেল! খোঁচারাজ ইজ ব্যাক।’
ধারা তাড়াহুড়ো করে উঠার চেষ্টা করতেই আঠালো মাটির চুম্বকে আবার বসে পড়লো। সামনে আগানো তো দূর! এক পা তুলতে গেলে আরেক পা দেবে যায়। এ দেখি মহা সমস্যা!
খানিক এমন ভাবেই চেষ্টা মেষ্টা চালিয়ে ধারা ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,
‘এ মা! এ তো উঠাই যাচ্ছে না। এভাবে কি কাঁদার মধ্যেই আটকে থাকবো নাকি! এখন কি হবে?’
শুদ্ধ নির্বিকার গলায় বলল, ‘কি আর হবে? এখানেই একটা সংসার পেতে বসবো। দুই তিনটা বাচ্চা কাচ্চা পয়দা করবো। তারাও এই কাঁদার মধ্যেই মনের আনন্দে লুটোপুটি খেলবে। আমাদের কাঁদায় মাখানো সুন্দর লুটোপুটি সংসার। দারুণ হবে কিন্তু! কি, দারুণ না ধারা?’
ধারা কটমট করে শুদ্ধ’র দিকে তাকালো। নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে বসে রইলো শুদ্ধ। ধারা আবারো এক দমক হুটোপুটি করে উঠার চেষ্টা করলে শুদ্ধ বলল, ‘এমন ভাবে উঠলে কোনদিনও উঠতে পারবেন না ধারা।’
এই বলে শুদ্ধ খুব আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। এক পা সাবধানে সামনে বাড়িয়ে আবার অনেকক্ষণ পর আরেক পা বাড়ালো। তারপর ধারার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
‘এভাবে উঠুন।’
শুদ্ধ’র হাত ধরে ধারা এরপর সাবধানেই খাল থেকে উঠে এলো। এরপর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যেকজনই তাদের দুজনকে দেখলো মুখ হা করে তাকিয়ে রইলো। এমন ভরদুপুরে দুজন কাঁদায় মাখা মানব মানবীকে দেখলে যে কারোরই অবাক হবার কথা। বাড়ির কাছে আসলে খোদেজা ওদের দুজনকে দেখে ভূত দেখার মতই চমকে উঠলো। তারপর সব ঘটনা শুনে হাসতে হাসতে বলল,
‘আগে গোসল করে পরিষ্কার হয়ে নে তোরা। তারপর বাকিটা শুনবো। কি যে করিস না তোরা।’
চুলায় রান্না বসানো ছিল তার। তাই তাড়াতাড়িই সরতে হলো তাকে। খোদেজা রান্নাঘরে চলে গেলে শুদ্ধ ধারা চলে এলো পুকুর পাড়ে। সকালে শহরে যাবার আগে দুজনেই গোসল সেরে জামাকাপড় পুকুড় পাড়ে তারের উপর রোদে শুকাতে দিয়েছিল। গোসলে ঢোকার আগে তা সেখান থেকে নেবার জন্য দুজনে যখন একসাথেই হাত বাড়ালো তখন শুদ্ধ বলে উঠলো,
‘আপনি এখন জামাকাপড় নিচ্ছেন কেন? গোসলখানায় এখন আমি যাবে।’
‘ইশ! বললেই হলো। আমি আগে জামাকাপড় নিতে এসেছি তাই আমি যাবো।’
‘জ্বি না। আপনি আগে না। আমরা দুজনে একসাথেই নিয়েছি।’
‘তাহলে আপনি আগে যেতে চাচ্ছেন কেন?’
‘কারণ দোষটা আপনার। আপনি আমাকে টেনে না ধরলে তো আর আমি খালে পড়তাম না।’
‘আচ্ছা! আর আপনি যদি ঐ শর্টকাটে না আসতে চাইতেন তাহলে আমরা কেউই খালে পরতাম না। তাই মূল দোষটা আপনার।’
‘বললেই হলো! আমি তো আপনাকে আগে জিজ্ঞাসা করেই নিয়েছিলাম সাঁকোর ব্যাপারে। কিন্তু আপনিই তখন হিরো সাজার জন্য…ওপস! সরি, হিরোইন সাজার জন্য কিছু বলেননি আর আমাদেরকে খালে পড়তে হয়েছিল।’
যুক্তিতে হেরে যাবার মুখোমুখি হতেই ধারা কথা ঘুরিয়ে বলল,
‘তাতে কি হয়েছে? এমনিতে তো কত বড় বড় কথা বলেন। লেডিস ফার্স্ট, এটা জানেন না? তাই আমিই আগে যাবো।’
পাশের টলমলে পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময়ী হাসি ঠোঁটে চেঁপে শুদ্ধ ধারাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ধারা, আপনি সাঁতার পারেন?’
নিজের ঠাঁট বজায় রেখেই ধারা দ্রুত জবাব দিল,
‘হ্যাঁ।’
‘সিরিয়াসলি?’
‘হ্যাঁ।’
‘শিওর তো?
বারবার একই প্রশ্ন করায় ধারা কপট বিরক্তের স্বরে বলল,
‘আরে হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ! এখন এইটাও কি আপনাকে করে দেখাতে হবে?’
শুদ্ধ নির্লিপ্ত স্বরে বলল,
‘তাহলে তো মন্দ হয় না।’
কথার সারমর্ম বোধগম্য না হতেই এক সেকেন্ডের মধ্যেই ধারাকে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌছে দিয়ে শুদ্ধ এক ধাক্কায় পুকুরে ফেলে দিল তাকে। তারপর নিজেও ঝাঁপ দিয়ে পুকুরে পানিতে গিয়ে পড়লো।
চলবে,