#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
রিফাত মুন্নির কথা অনুযায়ী ঐদিকে তাকাতেই মেঘলাকে দেখতে পেয়ে যায়। রিফাত মেঘলাকে এতদিন পর দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘মেঘলা তুমি এখানে।’
এতদিন পর চেনা পরিচিত কন্ঠটি শুনে পিছনে ফিরে তাকায় মেঘলা। পিছনে ফিরতেই নিজের চেনা মানুষটিকে দেখতে পায়। মেঘলার নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ আগেও অনেকবার রিফাতকে কল্পনা করেছে সে। ভালোবাসার মানুষ যতই কষ্ট দিক তাকে এয় সহজে ভোলা হয়তো যায়না। তবে মেঘলা তার মনকে শক্ত করে। নিজেকে কোনভাবে অসহায় দেখতে চায়না সে।
রিফাত মেঘলার কাছে আসে। মেঘলার হাত ধরে বলে,
‘জানো তোমায় কত খুজেছি আমি। আমার সাথে যোগাযোগ করো নি কেন? এত অভিমান আমার উপর। আমি জানি আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়। কিন্তু ,,,’
মেঘলা রিফাতকে দেখে অপরিচিত হওয়ার ভান করে বলে,
‘কে আপনি? আমি তো আপনাকে চিনি না। আমাকে এভাবে স্পর্শ করবেন না৷ চলে যান আমার সামনে থেকে।’
রিফাত খুব কষ্ট পায় মেঘলার কথায়।
‘আমি সত্যি নিজের কাজের জন্য অনেক অনুতপ্ত। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। ফিরে এসো আমার কাছে।’
মেঘলা আখিকে বলে,
‘আখি চল এখান থেকে। জানি না কোথা থেকে চলে আসে অদ্ভুত মানুষ সব।’
মেঘলা চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে রিফাত মেঘলার হাত টেনে ধরে। মেঘলা সরাসরি রিফাতের হাত ঝ’টকা মে’রে সরিয়ে দেয়। রিফাত ভাবতেও পারেনি মেঘলা এরকম একটা কাজ করতে পারে কোনদিন। সে শুধু বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে ছিল মেঘলার দিকে।
আরিয়ান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। কিছু বুঝতে না পারায় আখিকে জিজ্ঞেসা করে। আখি সব ঘটনা আরিয়ানকে খুলে বলে।
আরিয়ান সব শুনে মেঘলার সামনে আসে। মেঘলার হাতটা শক্ত করে ধরে। রিফাতের সামনে দিয়েই নিয়ে আসে মেঘলাকে।
রিফাতের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছিল এই দৃশ্য দেখে। মুন্নি রিফাতের কাছে আসে। রিফাত মুন্নিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
‘ঐ ছেলেটা কে? এভাবে আমার স্ত্রীর হাত ধরার পারমিশন ওকে কে দিয়েছে?’
‘ভাইয়া কুল। মাথা ঠান্ডা করো। ঐ ছেলেটা হলো ভাবির বান্ধবীর ভাই। ওদের সাথেই ভাবি এখানে এসেছে।’
রিফাতের মনে এখনো তোলপাড় চলছে। নিজের প্রিয়তমাকে এভাবে অন্য একটি ছেলে হাত ধরে নিয়ে গেল সেই কথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
৩৭.
মেঘলা কটেজে ফিরে এসেই রুমের দরজা বন্ধ করে কেদে চলেছে। রিফাতের সাথে আচমকা এই সাক্ষাৎ এর ফলেই মেঘলার এমনটা হচ্ছে। মেঘলা নিজের মনকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে যে রিফাতকে ভুলে যেতে হবে।
আখি আর আরিয়ান মেঘলার ব্যাপার নিয়েই কথা বলছে। আখি আরিয়ানকে বলছে,
‘আমার মনে হয় মেঘলা এখনো রিফাতকে ভালোবাসে। তাই এমন করছে।’
আরিয়ান বেশ রাগী গলায় বলে,
‘তোরা মেয়েরা এমন কেন রে? যারা তোদের কষ্ট দেয় তোরা তাদের জন্য নিজের মূল্যবান চোখের জল নষ্ট করিস। আমার একদম ভালো লাগে না এসব।’
মেঘলা নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। মেঘলার দিকে তাকিয়ে আখি ও আরিয়ান উভয়েই চমকিত হয়। মেয়েটাকে দেখে বোঝার উপায় নেই একটু আগে মেয়েটা কাদছিল।
মেঘলা বেশ স্বাভাবিক ভাবে বলে,
‘আমাদের কালকে ঝুলন্ত ব্রিজে ঘুরতে যেতে হবে। তোমরা সব প্রস্তুতি করে রাখো।’
মেঘলার কথায় আরিয়ান ও আখি দুজনেই স্বস্তি পায়। আখি মেঘলার পাশে আসে।
‘হ্যা আমরা যাবো তো। গিয়ে অনেক মজা করব। তবে যাই বলিস তোকে এভাবে শক্ত রূপে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। মেয়েদের এরকমই শক্ত থাকতে হয়।’
মেঘলা আখিকে বলে,
‘এখন আমি একটু একা আশপাশটা ঘুরে দেখতে চাই৷ তোরা এখানে থাক। প্লিজ কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করিস না।’
আরিয়ান কিছু বলতে চাইলে আখি তাকে ইশারা করে থামিয়ে দেয়।
‘আচ্ছা মেঘ তুই যা। নিজের মতো কিছুক্ষণ একলা সময় উপভোগ কর।’
মেঘলা বাইরের দিকে যায়। আরিয়ান আখিকে ধমক দিয়ে বলে,
‘এভাবে ওকে বাইরে পাঠানো ঠিক হলো না কিন্তু। যদি কোন বিপদ হয়?’
‘তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া৷ খারাপ কিছুই হবে না।’
মেঘলা বাইরে এসে এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে। আচমকা রিফাত তার সামনে চলে আসে। মেঘলা রিফাতকে দেখে চোখমুখে কাঠিন্য ভাব করে নেয়। রিফাত মেঘলার সামনে এসে দাড়ায়।
‘আমার সাথে কথা বলবে না মেঘলা?’
‘অচেনা মানুষের সাথে আমি কথা বলিনা।’
‘আমি কি তোমার অচেনা?’
মেঘলা রিফাতের কোন কথার জবাব না দিয়ে নিজের মতো হেটে যেতে থাকে। রিফাত তার হাত আটকে ধরে। মেঘলা রিফাতের দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘এভাবে একটা মেয়ের হাত ধরা অসভ্যতামি জানেন না আপনি? হাত ছাড়ুন বলছি আমার।’
রিফাত কোন কথা শোনে না। মেঘলার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে। মেঘলা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে রিফাতকে ধা’ক্কা দেয়। রিফাত একটু দূরে গিয়ে ছি’টকে পড়ে। কিছুটা আ’ঘাত লাগে তার তবে তার মনের আঘাতের কাছে এটা কিছুই না।
৩৮.
রিফাত বুঝতে পারছে সে মেঘলাকে যেমন কষ্ট দিয়েছে সেই কষ্টই এখন সুদসমেত ফেরত পাচ্ছে। রিফাত মেঘলার দিকে তাকায়। কিরকম অনুভূতিহীন হয়ে দাড়িয়ে আছে সে। রিফাত মেঘলার কাছে আসে। মেঘলাকে ভালোভাবে বোঝানোর জন্য বলে,
‘তুমি আমাকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখতে পারো না?’
মেঘলা কঠিনভাবে জবাব দেয়,
‘আমি জিবনে অনেক এগিয়ে এসেছি। অতিতকে পেছনে ফেলে আমি এখন সামনে এগিয়ে যেতে চাই। পিছনে ফিরে তাকানোর ইচ্ছা নাই।’
এমন সময় আরিয়ানও সেখানে চলে আসে। রিফাতকে দেখে বেশ রাগ হয় তার। আরিয়ান মেঘলার কাছে আসে। মেঘলার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘চলো আমার সাথে।’
রিফাত মেঘলাকে প্রশ্ন করে,
‘এই ছেলেটা কে মেঘলা?’
আরিয়ান জবাব দেয়,
‘আমি মেঘলার বাগদত্তা। খুব শীঘ্রই আমাদের বিয়ে হতে চলেছে।’
রিফাত আরিয়ানের কলার চেপে বলে,
‘একদম চুপ। মেঘলা আমার স্ত্রী। আমার সামনে ওকে বিয়ের কথা বলার সাহস কোথায় পেলে তুমি?’
‘আমি একদম ঠিক বলছি। মেঘলার সাথে আমার কয়েক মাস আগেই দেখা হয়েছে। ওর সব অতীত জেনেই আমি ওকে মেনে নিয়েছি। সামনেই আমাদের বিয়ে।’
রিফাত অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকায়। মেঘলার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না।
‘মেঘলা তুমি বলো এই ছেলেটা যা বলছে সব মিথ্যা। আমি জানি তুমি আমার উপর রাগ করে আছ তাই এমন করছ। কিন্তু আমি জানি তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে কখনো নিজের জিবনে যায়গা দিবেনা।’
মেঘলা দৃঢ় চিত্তে বলে,
‘উনি যা বলেছেন তা শতভাগ সত্য। আমি অতিত ভুলে ওনাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। আরিয়ান চলুন এখান থেকে।’
মেঘলা আরিয়ানের হাত ধরে রিফাতের সামনে থেকে চলে যায়। রিফাতের কষ্টগুলো সীমা ছাড়িয়ে যায়। আর নিজেকে সামলাতে পারে না সে। চিৎকার করে ওঠে রিফাত।
মেঘলা কিছুদূর গিয়েই আরিয়ানের হাত ছেড়ে দেয়।
‘আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে ওখান থেকে নিয়ে আসার জন্য। আপনি না এলে হয়তো রিফাত আমাকে আসতেই দিত না।’
‘ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নাই। আমি শুধু এটা ভেবে অবাক হচ্ছি আমার মিথ্যাতে তুমি তাল মেলালে কেন?’
আরিয়ানের মনে নানান অনূভুতি সারা দিচ্ছে। তার মনে হতে থাকে মেঘলাও হয়তোবা তাকে পছন্দ করে। সেই কারণেই এভাবে বলেছে।
মেঘলা আরিয়ানের সব স্বপ্নে পানি ঢেলে বলে,
‘কারণ এমনটা না করলে রিফাত হয়তো সবসময় আমার পিছনে পড়ে থাকতো।’
আরিয়ান ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। একটু বেশিই আশা করে ফেলেছিল সে। মেঘলা ভাবে,
‘রিফাতকে এটাও দেখাতে চেয়েছিলাম ও যেমন ফাবিহাকে নিয়ে সুখে আছে আমিও তেমন অন্য কাউকে নিয়ে সুখে আছি।’
✨
রিফাত নিজের ভগ্ন হৃদয় নিয়ে হোটেলে নিজের বুক করা রুমে আসে। মেঘলার বলা কথাগুলো তাকে কষ্ট দিচ্ছে। মেঘলার পাশে আরিয়ানকে কিছুতেই মানতে পারছে না সে। রিফাত অনেক ভেঙে পড়েছে। রিফাত মেঘলাকে এত সহজে অন্য কারো হতে দেবে না। রিফাত নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করে,
‘যেকোন মূল্যে আমি মেঘলাকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনবোই। মেঘলা শুধু আর শুধু আমার। কেউ মেঘলাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ২০(বোনাস পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি
রিফাত নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করে,
‘যেকোন মূল্যে আমি মেঘলাকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনবোই। মেঘলা শুধু আর শুধু আমার। কেউ মেঘলাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।’
মুন্নি রিফাতের কাছে আসে। রিফাতের উদাসীন চেহারা দেখে প্রশ্ন করে,
‘কি হয়েছে ভাইয়া তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?’
রিফাত মলীন চেহারা করে নেয়। মুন্নিকে আজকের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়৷ সব শুনে মুন্নি মনটা খারাপ করে নেয়। আচমকা মুন্নির মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।
‘রিফাত ভাইয়া আমার মনে হয় ভাবি মিথ্যা বলেছে তোমাকে। কারণ আমার মনে হয় আরিয়ানের সাথে তার খুব অল্পদিনের পরিচয়। তুমি একটা কাজ করো ভাবির উপর নজর রাখো৷ এত তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিওনা। ভাবি তোমাকে নিশ্চয়ই ক্ষমা করে দিবে।’
রিফাত শুকনো মুখে করে নেয়। মেঘলার করা খারাপ ব্যবহারগুলো মেনে নিতে তার কষ্ট হচ্ছে।
রিফাত আচমকা বলে,
‘আমি থাকবোনা এখানে। মেঘলার জন্য হয়তো আমি ঠিক না। আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। ঐ আরিয়ান হয়তো ওকে সুখে রাখতে পারবে।’
রিফাতের কথা শুনে খুব রাগ হচ্ছিল মুন্নির।
‘তুমি এত সহজে হাল ছেড়ে দিচ্ছ কেন ভাইয়া? তুমি আমার কথাটা শুনো। যাই হয়ে যাক না কেন মেঘলা ভাবিকে তোমাকে মানাতেই হবে। আমি জানি তোমরা একে অপরকে কত ভালোবাসো। আমি এটাও খুব ভালো করে জানি ভাবি যত যাই বলুক এখনো তোমাকেই ভালোবাসে। আমি চাইলে সেটা তোমাকে প্রমাণও করে দিতে পারি।’
রিফাত কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে,
‘কিভাবে?’
মুন্নি কিছু একটা জিনিস নিয়ে অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে৷ রিফাতের হাত ধরে বলে,
‘চল আমার সাথে।’
মুন্নি রিফাতকে নিয়ে মেঘলাদের কটেজে যায়। আরিয়ান ও আখি তাদের কটেজে দেখে মোটেই খুশি হয়না। মেঘলা জিজ্ঞেস করে,
‘তোমরা এখানে কেন এসেছ?’
মুন্নি সামান্য হাসি দেয়। রিফাতকে ঠেলে সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ভাইয়া আজই ফিরে যাবে। তাই শেষবারের মতো দেখা করতে এলো।’
মেঘলা রিফাতের চলে যাওয়ার কথা শুনে মনে মনে অনেক কষ্ট পেলেও সেটা প্রকাশ করে না। বরঞ্চ বলে,
‘চলে যাবেন ভালো কথা এভাবে দেখা করতে এসেছেন কেন?’
রিফাত আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে চলে যায় বাহিরে। মুন্নি মেঘলার দিকে আঙুল তুলে বলে,
‘আমি জানি আমার ভাইয়া তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে কিন্তু তুমি যেটা করছ সেটাও ঠিক না। জানো এই একবছর ভাইয়া তোমার জন্য কিভাবে অপেক্ষা করেছে। তুমি নিজেও তো ভাইয়াকে মিথ্যা বলেছিলা পরিস্থিতি যাইহোক না কেন এটা তো অস্বীকার করতে পারবা না। ভাইয়ার রিয়্যাক্ট করা তো অস্বাভাবিক ছিল না। ভাইয়ার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখ তুমিও এমন করতে। যাইহোক আমার আর কিছু বলার নাই। আমি যাচ্ছি। ভালো থেকো তুমি।’
মুন্নি চলে যায়। মেঘলা মুন্নির বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে।
৩৯.
আজকে ঝুলন্ত ব্রিজে ঘুরতে যাবে সবাই। এই নিয়ে অনেক সুন্দর তোড়জোড় সবার৷ আখি, আরিয়ান খুব আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছে। মেঘলার মনে তেমন কোন আগ্রহ নেই। সে শুধু রিফাতের কথাই ভাবছিল। মেঘলাকে এভাবে কিছু ভাবতে দেখে আরিয়ান বলে,
‘তুমি কি ভাবছ? যাবা না আমাদের সাথে?’
মেঘলা জোরপূর্বক হেসে মাথা নাড়ায়। আরিয়ান মেঘলাকে তৈরি হতে বলে। মেঘলা ও আখি একসাথে তৈরি হয়ে নেয়। মেঘলা একটি নীল রঙের শাড়ি পড়ে। আরিয়ান মেঘলাকে দেখে বলে,
‘তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।’
মেঘলার খুব অস্বস্তি হতে থাকে। আরিয়ানের চাহনি, তার কথাবার্তা মেঘলার কাছে ভালো লাগে না।
মেঘলা চেষ্টা করে আরিয়ানকে এড়িয়ে যেতে। তাই আখিকে বলে,
‘চল আমরা যাই।’
আখি এগিয়ে যেতে থাকে মেঘলার সাথে। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করে বসে,
‘আমার আরিয়ান ভাইকে তোমার কেমন লাগে? ‘
মেঘলা চমকিত হয় আখির কথায়। প্রসঙ্গ ঘোরানোর জন্য বলে,
‘ওনার গান ছাড়া আর কিছুই আমার ভালো লাগে না।’
আরিয়ান মেঘলার কথাটা শুনে যায়। মেঘলার উপর খুব রাগ হয় তার।
‘এই মেয়েটা এভাবে বলল আমায়। আমি এটা মানব বা। আমিও আজ মেঘলাকে দেখিয়ে দেব। নিজের প্রেমে পড়তে বাধ্য করবোই। এই আরিয়ান খান একবার যাকে পছন্দ করে তাকে নিজের করে না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পায়না।’
✨
রাঙামাটির বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে আসে হাজার হাজার মানুষ। আজ আখি, আরিয়ান ও মেঘলাও এসেছে। ব্রিজটা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় আখি। তার উক্তি,
‘জানি না এই ব্রিজটা কিভাবে তৈরি করা হয়েছে। আর সবথেকে বড় ব্যাপার ব্রিজটা টিকে আছে। আমার তো বিশ্বাসই হয়না।’
আরিয়ান বলে,
‘চল ব্রিজের উপর দিয়ে একটু হেটে বেড়াই। তাহলে বিশ্বাস হবে।’
আরিয়ান,আখি ও মেঘলা একসাথে ব্রিজের কাছে যায়। ব্রিজে ওঠার সময় আরিয়ান মেঘলার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,
‘আমার হাতটা ধরো। নাহলে অসুবিধা হতে পারে।’
মেঘলা সবিনয়ে বলে,
‘আমার কোন অসুবিধা নাই। আমার একা চলার অভ্যাস আছে।’
মেঘলার কথা পছন্দ হয়না আরিয়ানের। সে একপ্রকার জোর করেই মেঘলার হাত ধরে ব্রিজে ওঠে। মেঘলা নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু আরিয়ান এত জোরে ধরেছিল যে ছাড়াতেই পারে না।
আরিয়ান ব্রিজ পার করতেই মেঘলাকে বলে,
‘আমি অনেকদিন থেকে তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। মনে আছে গতবছর যখন তুমি বাসে করে আসছিলে। তখনই আমাদের প্রথম দেখা। সেদিন থেকেই তোমাকে ভালো লেগে গেছে আমার। আমি,, ‘
‘আর কিছু বলিয়েন না। আমার পক্ষে সম্ভব নয় আপনাকে ভালোবাসা।’
মেঘলা নিজের মতো করে চলে যায়। আরিয়ান নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। এই প্রথম কেউ তাকে রিজেক্ট করল। মেঘলার উপর খুব রাগ হয় তার।
৪০.
মেঘলা নিজের মতো করে হেটে আসছিল। তাই কিছু খেয়ালই করেনি। আচমকা কেউ তার নাম ধরে ডাক দেয়। মেঘলা পিছনে ফিরে তাকাতেই আখিকে দেখতে পায়। আখি মেঘলার কাছে আসে। মেঘলার হাতটা ধরে বলে,
‘এভাবে চলে আসলি কেন? চল ঐদিকটায় যাই।’
মেঘলার থেকে কোন জবাব না নিয়েই আখি মেঘলাকে টেনে নিয়ে যায়।
মুন্নি ও রিফাতও আজ ঝুলন্ত ব্রিজে এসেছে। মুন্নি আজ আসতে চায়নি। রিফাতই মুন্নিকে নিয়ে এসেছে। উদ্দ্যেশ্য একটাই মেঘলার সাথে শেষবারের মতো একবার দেখা করা। রিফাত এত কষ্ট পাওয়ার পরও মেঘলাকে ভুলতে পারছে না। এটাই যে সত্যিকারের ভালোবাসা।
রিফাত ঝুলন্ত ব্রিজের কাছে এসে মেঘলাকেই খুজতে থাকে। মেঘলা ব্রিজের বিপরীত দিকে থাকতে পারে এই ভেবে রিফাত ব্রিজে ওঠে। মুন্নিও রিফাতের সাথে আসতে চায়। রিফাত তখন বলে,
‘তোর আসার দরকার নাই। তুই এখানেই থাক। আমি শুধু মেঘলাকে শেষবারের মতো দেখব।’
মুন্নি কৌতুহলবশত জিজ্ঞেস করে,
‘আচ্ছা ভাইয়া তুমি কি করে জানলে যে মেঘলারা এখানে আছে।’
রিফাত মৃদু হাসে।
‘আমি ওদের কটেজে একজন লোককে ঠিক করে রেখেছিলাম সব খোজ খবর নেয়ার জন্য। আচ্ছা তুই এখানে থাক আমি আসছি।’
রিফাত চলে যায়। মুন্নি ভাবতে থাকে ভালোবাসা কতটা গভীর হলে কারো কাছ থেকে এত পরিমাণ কষ্ট পেলেও তাকে ভালোবাসা যায়।
রিফাত যখন ঝুলন্ত ব্রিজের মাঝখানে ছিল। তখন আচমকা গো’লা’গু’লির আওয়াজ শুনতে পায়। বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাই ওপাশ থেকে এদিকে ছুটে আসছিল। রিফাতের ভয় হতে থাকে মেঘলার জন্য। মেঘলা যদি ব্রিজের ঐদিকে থাকে তাহলে বিপদ হতে পারে। তাই রিফাত আর দেরি না করে দৌড় দেয়। আশেপাশের মানুষ রিফাতকে সতর্ক করে বলে,
‘ঐ দিকে কিছু স’ন্ত্রা’সী হা’মলা চালিয়েছে। বিপদ হতে পারে।’
রিফাত তাদের সবার কথা অগ্রাহ্য করে ছুটে যায় মেঘলাকে বাচানোর উদ্দ্যেশ্যে।
রিফাত ঝুলন্ত সেতু পার করে দেখে স’ন্ত্রাসীরা কয়েকজন মানুষকে জি’ম্মি করে রেখেছে। তাদের মধ্যে মেঘলাকে দেখে রিফাতের বুকটা চ্যাত করে ওঠে।
আরিয়ান ও আখি একটি নিরাপদ যায়গায় গিয়ে ছিল। আখি আরিয়ানকে বলে ,
‘ভাইয়া মেঘলার কি হবে? আমাদের তো ওকে বাচাতে হবে।’
আরিয়ান ধমক দিয়ে বলে,
‘আগে তুই নিজের চিন্তা কর। আমরা কত কষ্ট করে পালিয়ে আসতে পারলাম। মেঘলাকে মনে হয় জিম্মি করা হয়েছে। এখন ওকে বাচাতে যাওয়া মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা।’
মেঘলার মাথায় ব’ন্দুক ধরে ছিল সন্ত্রাসী’রা। রিফাত কোন কিছু না ভেবেই এগিয়ে যায় মেঘলাকে বাচাতে।
সন্ত্রা’সীরা রিফাতকে এগোতে মানা করে কিন্তু রিফাত কোন কথা না শুনে এগিয়ে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨