হারিয়েছি নামপরিচয় পর্ব-১৭+১৮

0
243

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মুন্নি স্টেজ থেকে নামতেই নজর যায় মেঘলার উপর। সে চিৎকার করে বলে ওঠে,
‘ভাবি তুমি এখানে আছো।’

মেঘলার নজর যায় মুন্নির দিকে। মুন্নি তার দিকেই আসছিল। আখি, আরিয়ান হতবাক হয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিল। অনেকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।

মুন্নি কাছে এসে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে। মেঘলাও মুন্নিকে আগলে নেয়।
‘কেমন আছ তুমি ভাবি? আজ কতদিন পর তোমাকে দেখলাম। কই ছিলা এতদিন? জানো কত মিস করি আমি তোমাকে। তুমি আমাকে মিস করোনা?’

‘আমিও তোমাকে মিস করি মুন্নি। এখন একটু ঐদিকে চলো তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।’

মুন্নিকে সাথে নিয়ে একটু বাইরের দিকে যায় মেঘলা। আরিয়ান ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারছিল না। তাই আখিকে প্রশ্ন করে,
‘তুই চিনিস এই মেয়েটাকে? মেঘলাকে এভাবে ভাবি বলছিল কেন?’

‘আমি চিনি না ওকে। তবে যেটুকু বুঝলাম মেয়েটা মেঘলার ননদ হতে পারে। মেঘলার থেকে ওর অতীতের ব্যাপারে অনেক কিছু জেনেছিলাম। সে থেকে এটুকু ধারণা করতে পারি।’

‘কি জানিস তুই মেঘলার অতীতের ব্যাপারে সেটা আমাকেও বল।’

আখি আরিয়ানকে মেঘলার অতীতের ব্যাপারে সবকিছু বলে। সব শুনে হতবাক হয়ে যায় আরিয়ান। তার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হচ্ছিল না।

আখি আফসোসের সুরে বলে,
‘মেয়েটার জন্য খুব কষ্ট হয় আমার। অন্যের কথা ভাবতে গিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। প্রথমে নিজের মা-বাবার কথা শুনে নিজের নামপরিচয় সবকিছু হারিয়ে ফেলল,,,আর তারপর,,নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকেও কষ্ট পেয়ে গেল। আমার যদি ক্ষমতা থাকত তাহলে আমি ওর সব কষ্ট দূর করে দিতাম। কিন্তু সেটা আর পারলাম কই।’

আরিয়ান আখির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
‘দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি সবকিছু ঠিক করে দেব।’

শেষের কথাটুকু বলে অদ্ভুতভাবে হাসে আরিয়ান। মনে মনে বলে,
‘মেঘলার অতীত ভুলিয়ে দিয়ে আমিই হয়ে উঠব ওর বর্তমান।’

৩৩.
মেঘলা মুন্নিকে নিয়ে একটু দূরে যায়। মুন্নি কৌতুহলী হয়ে বলতে থাকে,
‘এখন আমাকে তুমি নিজের ব্যাপারে বলো। এতদিন দূরে ছিলা কেন? আমাদের কথা একটুও মনে পড়েনা? তুমি জানো রিফাত ভাইয়া,,,’

মুন্নির পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই মেঘলা ধমকের সুরে বলে,
‘স্টপ। ঐ লোকটার নামও আমি শুনতে চাইনা। আমি জিবনে মুভ অন করে গেছি। নিজের বর্তমান নিয়ে যথেষ্ট ভালো আছি। অতীতের কালো ছায়া আর ফেরত চাইনা। তুমি প্লিজ এই প্রসঙ্গ টেনে এনো না।’

‘এমন করে কেন বলছ? রিফাত ভাইয়া সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসে, অনেক মিস করে তোমাকে।’

মেঘলার রিফাতের কথা শুনতেই বিরক্ত লাগছিল। তাই সে বলে,
‘তোমার কাছে একটা রিকোয়েস্ট করতে চাই আমার সামনে ঐ নামটা আর নেবে না। আর ঐ লোকটাকেও বলবা না যে আমি এখানে আছি।’

‘কিন্তু,,,’

‘কোন কিন্তু না। তুমি যদি আমাকে বিন্দুমাত্র ভালোবেসে থাকো, যদি আমাকে সামান্য সম্মান করে থাকো তাহলে আমার কথাটা রেখো। আমি এখন আসছি। বেস্ট অফ লাক। আই উইশ যে তুমি এই প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করবে।’

মেঘলা নিজের মতো চলে যায়। মুন্নি কিছু একটা ভেবে রিফাতকে ফোন করে। রিফাত কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রথমে ফোনটা রিসিভ করতে পারে না। দ্বিতীয় বার ফোনটা বেজে উঠতেই রিসিভ করে।

‘কি হয়েছে মুন্নি এই সময় কল কেন করেছিস? আমি এখন ব্যস্ত আছি।’

‘রাখো তোমার ব্যস্ততা। আমি তোমার একমাত্র বোন আছি এখানে চট্টগ্রামে অডিশন দিতে আর তুমি,,, কত করে বললাম আসতে। তুমি এলেও না।’

‘আমি তো এখন অফিসের কাজে ব্যস্ত।’

‘কাজের খেতায় আগুন। তুমি সব কাজ রেখে চট্টগ্রামে চলে এসো। ইটস মাই অর্ডার। অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে এখানে শুধুমাত্র তোমার জন্য।’

‘কি সারপ্রাইজ?’

‘সেটা এলেই দেখতে পারবা। এখন আমি রাখছি। ও হ্যা একটা সুখবর দেওয়ার ছিল আমি না এখানে মূল প্রতিযোগিতায় চান্স পেয়ে গেছি। এখন আর একটা ধাপ পের হলেই রিয়েলিটি শো এর মঞ্চে যেতে পারবো। আমাকে টিভিতে দেখাবে। উফ ভাবতে পারছ।’

রিফাত মুন্নিকে অভিনন্দন জানিয়ে কল কে’টে দেয়। এখন মুন্নি, মেহেরের সাথে আর খারাপ ব্যবহার করে না রিফাত। সে বুঝতে পেরেছে তাদের আসলে কোন দোষ নেই, সব দোষ তার বাবার। রিফাত তার মাকেও বলে দিয়েছে সবকিছু ঠিক করতে। কিন্তু রোজিয়া কোন কথা শুনতেই রাজি হয়।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য বের হয় রিফাত। না জানি সেখানে কোন সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে রিফাতের জন্য।

৩৪.
আখি মেঘলাকে অনেকক্ষণ ধরে রাজি করানোর চেষ্টা করছে রাঙ্গামাটি ঘুরতে যাওয়ার জন্য কিন্তু মেঘলা কোনভাবে রাজিই হচ্ছে না। মেঘলার একটাই কথা এই সময় পড়া ছেড়ে ঘুরতে যেতে পারবে না। আখিও নাছোড়বান্দা। সে যখন একবার বলেছে ঘুরতে নিয়ে যাবে তখন যাবেই।

কোন উপায় না পেয়ে মেঘলাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল শুরু করে দেয়।

‘তুই যদি না যাস তাহলে আমি তোর সাথে কথা বলব না। এখন ভেবে দেখ কি করবি।’

‘কথা যদি না বলিস না বলবি। তবুও এরকম অন্যায় আবদার করবি না। আমার এভাবে ঘুরে বেড়ানোর সময় নেই। তোর যেতে ইচ্ছে করলে তুই যা রাঙামাটি।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।’

বলেই বেড়িয়ে যেতে যাচ্ছিল তখনই মেঘলা তার হাত ধরে ফেলে।
‘তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন আখি? ওকে ফাইন আমি যাবো রাঙামাটি। এবার খুশি হয়ে যা। তবে একটা কথা ওখানে গিয়ে বেশিদিন কিন্তু থাকতে পারব না। দুই একদিন থেকে চলে আসব।’

‘মাত্র দুইদিন থাকব ওখানে। তুই একদম চিন্তা করিস না। এখন যা গোছগাছ শুরু কর।’

মেঘলা চলে যায়। মেঘলা চলে যেতেই আখি আরিয়ানকে ফোন লাগায়। আরিয়ান ফোন রিসিভ করতেই আখি উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘আমাকে ট্রিট দে ভাইয়া। তোর জন্য অনেক সুন্দর খুশির খবর এনেছি।’

‘বেশি নাটক না করে বল কি বলবি।’

‘বলছি। মেঘলা রাঙামাটি যেতে রাজি হয়েছে। সো এখন আমরা কাল রাঙামাটি যাচ্ছি। ট্যুরটা খুব মজার হবে। তুই শুধু ভেবে দেখ মেঘলাকে কিভাবে ইমপ্রেস করবি। যদি তোর মোটা মাথায় কোন বুদ্ধি না আসে আমার থেকে হেল্প নিতে পারিস।’

‘এত উপকার করা লাগবে না তোর। আমি কি করব সেটা আমি ভেবে নেবো। ফোন রাখ এখন।’


রিফাত চট্টগ্রামের মাটিতে পা রাখে। মুন্নিকে ফোন করে। মুন্নি ফোন রিসিভ করে রিফাতের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,
‘আমি তোমার সামনেই আছি। কল দিতে হবে না।’

‘তোর কথামতো চট্টগ্রামে এলাম। এখন কি সারপ্রাইজ দিবি বল।’

‘সবুর করো ভাইয়া। সবুরের ফল মিষ্টি হয়।’

‘টক মিষ্টি ঝাল বাদ দিয়ে কি বলবি সেটা বল।’

‘সারপ্রাইজ এত সহজে পাবা না। সারপ্রাইজ পাওয়ার জন্য আমার সাথে কাল রাঙামাটি যেতে হবে।’

‘তুই কি শুরু করেছিস বল তো? একবার চট্টগ্রাম একবার রাঙামাটি। আমাকে কি এভাবে গোটা বাংলাদেশ ঘুরাবি?’

‘প্রয়োজন হলে তাই করব। কাল রাঙামাটি চলো। তাহলেই সব বুঝবে।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

রাঙামাটিতে এসে দম ফেলতে লাগল মেঘলা। রোজ চট্টগ্রামে তার সময় যায় পড়াশোনায়। চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি জিবন থেকে তাই এখন রাঙামাটিই উপায়। এখানে এসে বেশ ভালো লাগছে মেঘলার। চারিদিকে পাহাড়, ঝর্ণা সবমিলিয়ে সুন্দর মনোরোম পরিবেশ।

আখি মেঘলাকে বলে,
‘এখানে এসে পস্তাবে না বলেছিলাম। দেখো তুমি পস্তাবেও না। কত সুন্দর দৃশ্য চারিদিকে। আমার তো ইচ্ছা করছে সমুজের মধ্যে হারিয়ে যেতে।’

মেঘলা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। এমন সময় আরিয়ান তাদের কাছে আসে। আরিয়ান মুগ্ধদৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকায়। মেঘলা হলুদ কালারের সালোয়ারের উপর একটা কালো কালারের সোয়েটার পড়েছে। বেশ সুন্দরী লাগছে তাকে এই রূপে দেখে।

আরিয়ানকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফেলে মেঘলা। খুব অস্বস্তি হতে থাকে তার।

‘এখানকার সৌন্দর্য পরেও উপভোগ করা যাবে। আগে আমাদের বুক করা কটেজে যাই।’

আরিয়ানের কথায় সায় দেয় আখি।

‘হ্যা চল। এসব সৌন্দর্য পরে দেখব।’

মেঘলার কেন জানি যেতে ইচ্ছা করছিল না। এই সৌন্দর্য আরো কিছুক্ষণ দেখতে চাইছিল সে। আখির জোরাজুরিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই চলে যায় মেঘলা।

কটেজে উঠেছে থেকে মেঘলার মনটা ছটফট করছিল বাইরে আসার জন্য। আখি মেঘলার এরকম ছটফটানি দেখে মুখ টিপে হাসে।

‘শখ দেখ মহারাণীর। তুই তো এখানে আসতেই চাইছিলি না। আমি একপ্রকার জোর করে নিয়ে এলাম। এজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্ত।’

মেঘলার সেদিকে কোন খেয়াল নেই। তার অজান্তে যে কত বড় ষড়যন্ত্র চলছে সেটা সে বুঝবেই বা কি করে! রাঙামাটির মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক বড় বিপদ। যেটা শুধু মেঘলা নয় অন্য কেউই উপলব্ধি করতে পারছে না!

৩৫.
সকালের ব্রেকফাস্ট করে সবাই বের হয়েছে রাঙামাটি ঘুরে দেখার জন্য। রাঙামাটির মধ্যে রয়েছে দর্শনীয় অনেক কিছু। রিলিতে লেক, ঝুলন্ত ব্রিজ, হ্যাপি আইল্যান্ড আরো অনেক কিছু।

মেঘলারা চলেছে রিলিতে লেকের দিকে। রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় এটি অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সবথেকে উচু লেক। এর উচ্চতা ১৮৮০ ফুট।

রাঙামাটি শহর থেকে যাওয়ার সমত রাস্তার মধ্যিখানে তাদের গাড়ি হঠাৎ ন’ষ্ট হয়ে যায়। এভাবে অচেনা অজানা যায়গায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশ বিপাকে পড়তে হলো তাদের।

আশেপাশে সাহায্যের জন্য কাউকে পাওয়াও যাচ্ছে না। কারণ পাহাড়ি এলাকায় জনবসতি বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক কম। আর এমন যায়গায় আটকে গেছে যে দূর দূরন্ত পর্যন্ত কোন লোকালয় নেই।

আরিয়ান ড্রাইভারের সাথে কথা বলে য বুঝল এখান থেকে আর ৫ কি.মি দূরে একটা বাজার আছে। সেখানে সাহায্য মিলতে পারে। কিন্তু এতদূর কিভাবে যাবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

মেঘলা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বলল,
‘এখানে সময় নষ্ট না করে আমরা বরং হাটা শুরু করি। যদি কোন গাড়ি পেয়ে যাই ভালো। আর নাহলে একটু নাহয় কষ্ট করে বাজার অব্দি গেলাম।’

আখিও সায় দেয় মেঘলার সাথে। সবাই মিলে হাটা শুরু করে। একটু সামনে যেতেই ঝোপে কিছু একটা নড়ে ওঠার শব্দ শুনতে পায় তারা।

আখি ভয়ে গুটিয়ে যায়। আরিয়ান সাহস করে বলে,
‘কে ওখানে?’

ঝোপের আড়াল থেকে কয়েকজন মুখঢাকা মানুষ বেড়িয়ে আসে।তাদের সবার হাতে ভয়ানক অ’স্ত্র। আখি ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। আরিয়ান ইশারা করে পালিয়ে যাওয়ার। তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে যাবে তখনই লোকগুলো তাদের ঘিরে ধরে। তাদের মধ্যে একজন বলে,
‘তোদের সবার কাছে যা যা আছে সব আমাদের দিয়ে দে। নাহলে,, ‘

সবাই সেই মুহুর্তে ভয় পেয়ে যায়। তাই নিজেদের কাছে টাকা, পয়সা,মোবাইল যা ছিল সব দিয়ে দেয়। ছিন’তাইকারীরা সেসব নিয়ে পালিয়ে যায়। এই মুহুর্তে সবাই খুব অসহায় হয়ে আছে।

আরিয়ান আখিকে সামলানোর চেষ্টা করে। মেঘলার নজর যায় কিছুটা দূরে। দুজন পাহাড়ি মহিলা হেটে যাচ্ছে। মেঘলা তাদের কাছে যায়। দুজন পাহাড়ি মহিলা দাড়িয়ে যায়। মেঘলা নিজের সব অসুবিধার কথা বললে তারা সাহায্য করবে বলে জানায়। মেঘলা আরিয়ান ও আখিকেও ডেকে আনে। পাহাড়ি মহিলারা তাদের পথ চিনিয়ে নিয়ে আসে।

আখি মন খারাপ করে বলে,
‘আমরা এখন কি করে ফিরে যাবো? হাতে একটা টাকাও নাই। ফোনটাও নিয়ে গেল ওরা। এখন কি এই পাহাড়েই থাকব চিরকাল?’

আরিয়ান ব্যঙ্গ করে বলে,
‘তোর নাকি পাহাড় খুব ভালো লাগে। তাহলে আর অসুবিধা কি থাক। এখানেই থেকে যা।’

‘এইরকম ক্রিটিকাল সিচুয়েশনেও তুই মজা করছিস।’

মেঘলার এসবে মন ছিল না। মনের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা ঘোরাফেরা করছিল। সেসবকে আমলে না নিয়ে মেঘলা হেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ একটি পাথরের সাথে ধা’ক্কা খেয়ে মেঘলা পড়ে যেতে যাচ্ছিল৷ আরিয়ান তাকে সামলে নেয়।

৩৬.
প্রকৃতি বড়ই অদ্ভুত! প্রকৃতি যেমন একদিক দিয়ে অপরূপ সুন্দর অন্যদিক দিয়ে ঠিক ততোটাই ভয়ানক এই প্রকৃতি। কোনরকমে বেশ কিছু মানুষের সাহায্য নিয়ে মেঘলারা নিজেদের কটেজে এসে পৌছায়। মেঘলার ইচ্ছা ছিল আজকেই ফিরে যাওয়ার। আজ যা হলো তাতে মন একেবারে ভালো নেই। তাই এখানে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই। আখিও এখন থাকতে চাইছে না। তবুও আরিয়ান চাইছে এখানে থাকতে। আরিয়ান ওদের বুঝিয়ে বলে,
‘দূর্ঘটনা একটা ঘটে গেছে। এখন আমাদের সেসব ভেবে বসে থাকলে চলবে না। এখানে যখন এসেছি তখন ঘুরে যাই। এখানে কটেজে আমার কিছু টাকা রেখে গিয়েছিলাম। এখন সেগুলো দিয়ে সর্বসাকুল্যে কিছুদিন চলতে পারব।’

আরিয়ানের কথায় মেঘলা ও আখি রাজি হয়ে যায়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কালকে তারা ফুরমোন পাহাড়ে যাবে৷ এটি বেশি দূরে নয়। রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে মেঘলার হাতে একটি বাটন ফোন দিয়ে আরিয়ান বলে,
‘এটা সঙ্গে রাখো কাজে লাগবে।’

মেঘলা প্রথমে ফোনটা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ইতস্তত বোধ করে।
‘আমি এটা নিতে পারবোনা।’

‘আরে রাখো না নিজের সাথে। এখানে কোন কাজে লেগে যেতে পারে। অচেনা জায়গায় কখন কি সমস্যা হয়। আমিও একটা বাটন ফোন নিয়েছি। নাম্বারটা ফোনে সেভ করে দিয়েছি। কোন বিপদ হলে কল দিতে পারবা। ঐ ছি’নতাইকারীরা আমাদের সবার ফোনই নিয়ে গেছে।’

আরিয়ানের কথা এবার মেনে নেয় মেঘলা। ফোনটা নিজের কাছে রেখে দেয়।

রাঙামাটির বুকে সূর্য উদিত হয়। এক নতুন দিনের আগমন ঘটে। মেঘলা, আখি ও আরিয়ান তৈরি হচ্ছে আজ ফুরমোন পাহাড়ে যাওয়ার জন্য। একটি গাড়ি ভাড়া করেই বেরিয়ে পড়ে তারা।


রিফাতকে সাথে নিয়ে রাঙামাটি এসে প্রথমদিন অনেক খোজ করেও মেঘলার খবর পায়নি মুন্নি। সে তো সেদিন আরিয়ান নামের ছেলেটাকে বলতে শুনেছিল যে, মেঘলাকে নিয়ে রাঙামাটি যাবে। সেটা শুনেই তো রিফাতকেও নিয়ে এসেছে। কিন্তু কোথায়, কখন ঘুরতে যাবে সেটা তো মুন্নি শুনতে পারে নি।

সেই কারণেই মুন্নি আজ আন্দাজে রিফাতকে নিয়ে ফুরমোন পাহাড়ে যাওয়ার কথা ভাবছে। তার মন বলছে সেখানে গিয়ে দেখা হলেও হতে পারে।

রিফাত তো চরম অধৈর্য হয়ে গেছে। সারপ্রাইজের কথা বলে নিয়ে আসলেও কাল সারাদিন রাঙামাটি ঘুরে বেড়িয়েছে তারা। কোন কাজের কাজ হয়নি। তাই আজ আর মুন্নির কথামতো ঘুরতে যেতে চায়না। মুন্নিও কম যায়না। সে বলেছে আজ শুধু শেষবারের মতো ঘুরতে যেতে চায়।

রিফাত মুন্নির জেদের কাছে হার মানে। মুন্নিকে নিয়ে ফুরমোন পাহাড়ের দিকে রওনা দেয়। ফুরমোন পাহাড়ে ওঠা মোটেও সহজ কাজ নয়। মোটামুটি আকাবাকা উচুনিচু পাহাড়ি এই রাস্তাধরে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট লাগে চূড়ায় উঠতে!

তবে কষ্টসাধ্য হলেও সুফল আছে। চূড়া থেকে পুরো রাঙামাটি শহর সুন্দরভাবে দেখতে পাওয়া যায়। মুন্নি ও রিফাতও ফুরমোন পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে। রিফাত বেশ বিরক্ত নিয়ে থাকে। আশেপাশের সবাই চূড়া থেকে শহর দেখতে ব্যস্ত। মুন্নির চোখ খুজছে মেঘলাকে।

এদিক ওদিক খুজে একটু বামে তাকাতেই মেঘলাকে দেখতে পায় মুন্নি। মেঘলা আখির সাথে পাহাড় থেকে মায়ামুগ্ধ হয়ে রাঙামাটি শহর দেখছে।

মুন্নি রিফাতের কাছে আসে। রিফাতের বিরক্তিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ঐদিকে দেখো তোমার সারপ্রাইজ আর খুশি হয়ে যাও।’

রিফাত মুন্নির কথা অনুযায়ী ঐদিকে তাকাতেই মেঘলাকে দেখতে পেয়ে যায়। রিফাত মেঘলাকে এতদিন পর দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘মেঘলা,,,’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨