হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব-১৮

0
397

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে –[১৮]
#নিহা (মুনিয়া)
___________________

নিলা চলে যেতেই আহান তার বন্ধুকে ফোন করে গার্ড দের কছে যেতে বলে। এদিকে আহানের বন্ধু গার্ডদের সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে ঝা’মে’লা পাকিয়ে কথা বলে তাদের সময় নষ্ট করছে ওদিকে আহান দরজায় তালা দেখতে পেয়ে তালা ভা’ঙা’র চেষ্টা না করে গার্ডদের টেবিলেই চাবি রাখা ছিলো সেখান থেকে চাবিটা নিয়ে পেছনের দরজার তালা খুলে রুমে ঢুকতেই দেখতে পায় মৃদুলা বেডের উপর নিথর হয় পড়ে আছে! আহান তৎক্ষণাৎ দেরি না করে মৃদুলাকে নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে জলদি করে পালিয়ে গেলো। দরজা যেমন ছিলো ঠিক তেমন করেই বন্ধ করে দিলো যাতে গার্ডদের সন্দেহ না হয় আর আহান তাড়াতাড়ি পালাতে পারে। মৃদুলাকে নিয়ে অটোতে পৌঁছা মাত্রই আহান ফোন করে ওর বন্ধুকে খবর দেয় তারপর তড়িঘড়ি করে ওখান থেকে পালিয়ে যায়!…. (আমি ব্যতীত আমার গল্প অন্য কোথাও পোস্ট নিষিদ্ধ। যারা অন্য কোথাও পড়বেন তারা প্লিজ আমার পোস্ট থেকে পড়বেন।

-‘ মৃদুলা? মৃদুলা চোখ খোল কি হয়েছে তোর? এভাবে পড়ে আছিস কেন? কথা বল?’

গাড়িতে উঠেও যখন মৃদুলা কথা বলছে না কারো সঙ্গে এটা দেখে আহানের ভ’য় বেড়ে গেছে। বারংবার মৃদুলাকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু মৃদুলার কোনো সাড়া শব্দও নেই। শেষেমেষ আহানের বন্ধু আহানকে বোঝাতে লাগলো,

-‘ আমার মনে হয় ওরা মৃদুলাকে অ’জ্ঞা’ন করে রাখে যার প্রভাব এখনো কাটেনি। ঘোর কাটলে দেখবি মৃদুলা নিজ থেকেই চোখ খুলে কথা বলবে তুইই আর চিন্তা করিস না ওঁকে খুঁজে পেয়েছিস এটাই অনেক। এখন মা’থা ঠান্ডা রেখে চুপ করে বসে থাক।’

-আহান চুপচাপ থাকে। মৃদুলার মা’থা খানি আহান নিজের কোলের উপর রাখে। সন্তপর্নে হাত বুলিয়ে দেয় মা’থায়। আহান বেশ কিছুক্ষণ যাবত তাকিয়ে রইলো মৃদুলার দিকে। যেনো অন্তত কালের চক্ষু তৃষ্ণা মেটাচ্ছে মৃদুলাকে দেখে। এই দু’দিনেই মৃদুলার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে পুরো। বোঝাই যাচ্ছে খাওয়া দাওয়া করেনি। আহান সেসব কথা বাদ দিলো। আপাততো বাসায় গেলে নিলা স’ন্দে’হ করবে। আহান ঠিক করলো সেজন্য আহানের বন্ধু মৃদুলাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে আর আহান মিথ্যা এ’ক্সি’ডে’ন্টে বাহানা করে ব্যান্ডেজ করবে। আর ভি’খা’রির পোষাকও তো বদলাতে হবে নতুবা বাড়ির সবাই প্রশ্ন তুলবে। আহান সিদ্ধান্ত নিলো এখুনি নিলাকে কিছু বলা যাবে না এমনিতেই বাড়ির সবাই মৃদুলার ব্যাপারটা ঘেঁটে আছে তাই আর নতুন করে অ’শান্তি বাড়াতে চাইলো না আহনন। নিলাকে তার উপযুক্ত শা’স্তি তো দিবেই তবে সেটা তাদের বিয়ে হবার পরেই।

__________°
ওদিকে আহানের কথা মতন নিলা হাসপাতালে গিয়ে ভ্রিভান্ত হয়ে আবার ফিরে আসলো জ’ঙ্গ’লের দিকে! এসে দেখে গার্ড দু’জন একসাথে বসে আছে।

-‘ তোমাদের কি টাকা দিয়ে রেখেছি একসঙ্গে বসে থাকবার জন্য? নাকি পাহাড়া দেবার জন্য কোনটা?’

গার্ডরা মা’থা নিচু করে নিলাকে স্যরি বললো।
-‘ আসলে ম্যাডাম কি বলবো। একটা লোক এসে অহেতুক ঝা’মেলা করছিলো তাই উনাকে সামলাতে আর কি। ‘

-‘ লোকদের সামলানোর জন্য রেখেছি তোমাদের স্টু’পিট কোথাকার!’

নিলা গার্ডদের টেবিল থেকে চাবি নিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকে! রুমের ভেতরে মৃদুলাকে দেখতে না পেয়ে প্রথম ভাবে চোখের ভুল হয়তো কিন্তু পরে যখন পুরো ঘরে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মৃদুলাকে খুঁজে পায় না তখন নিলা রা’গের চোটে সবকিছু ভা”ঙ’চুর করা শুরু করে। নিলা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো পেছনের দরজার তালা নেই! দরজাটা একটু আবছা লাগানো আছে। নিলা হন্তদন্ত হয়ে সামাদকে ফোন করে। একটু পরেই সামাদ চলে আসে। সামাদ এসে মৃদুলাকে দেখতে না পেয়ে পা’গল প্রায় হয়ে গেছে বলা যায়। সামাদ গার্ডদের মা’রতে লাগলো।

-‘ তোরা থাকতে মৃদুলা এখান থেকে পালালো কি করে?’

-‘ ম্যাডাম ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দিন আমাদের। আমার মনে হয় সকালে যখন স্যার এসেছিলেন তখন পেছনের দরজায় তালা লাগাতে ভুলে গেছিলেন তিনি। কারন উনি পেছনের দরজা দিয়ে আসছিলেন। ‘

নিলার রা’গ গিয়ে পড়লো সামাদের উপর! সর্বশক্তি দিয়ে সামাদের গালে একটা জোরে থা’প্প’ড় মা’রে! সামাদ গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে রয়েছে!

-‘ মৃদুলা যদি নিজ থেকে পালায় তো এতোক্ষণে এই আশেপাশেই পাবে ওকে। যাও খুঁজো ফাস্ট! আর যদি ওকে পাওয়া না যায় তো বুঝে নিতে হবে ওকে অন্য কেউ পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। দাঁড়াও আগে দেখোতো এই ছেলেটাই ঝামেলা করেছিলো কি-না? ‘

নিলা আহানের ছবি দেখালো গার্ডদের।

-‘ ইনি না তো ম্যাডাম। লোকটি অন্য কেউ ছিলেন। ‘

এবার নিলার মনে স’ন্দে’হ রইলো না। ও বুঝে গেলো সামাদের নির্বুদ্ধিতার কারনেই মৃদুলা পালিয়েছে কারন মৃদুলাকে আহান সাহায্য করলো গার্ডরা ওরে চিনতো। আরো একটু কর্নফাম হবার জন্য আমাকে বাড়িতে যেতে হবে যদি ওখানে মৃদুলাকে আহান নিয়ে আসে তো হিসাস ক্লিয়ার মৃদুলাকে আহানই সাহায্য করেছে!

নিলার কথামতন সবাই ওকে খুঁজতে যেতে লাগলো। ওদিকে আহানের বন্ধু অটো ড্রাইভার সেজেই ওদের বাড়িতে ঢুকে নিলাকে বাড়িতে পৌোছে দিলো। মৃদুলার এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে সবাই বেশ ঘা’বড়ে গেলো!

-‘ মৃদুলার কি হয়েছে? ও এভাবে কেনো আছে? ওর এই অবস্থা কেনো?’

আহানের কথা মতন আহানের বন্ধু মিথ্যা কথা বলে।

-‘ আমি রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তো উনি দৌড়াচ্ছিলেন আমাকে বাড়ির ঠিকানা বলেই উনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন তারপর আমি আর কিছু জানি না উনাকে বাড়িতে দিয়ে গেলাম।’

আহানের বন্ধু চলে যেতেই সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ে মৃদুলাকে নিয়ে। ওদিকে নিলা বাড়িতে আসে আর সবটা শুনতে পায় কিন্তু নিলার মনে এখনো দ্বিধা আছে আহানকে নিয়ে। কারন নিলা আহানের কথা মতন সিটি হাসপাতালে আহানকে খুঁজে পায়নি।
নিলা বাড়ির সোফায় বসে ভাবছে মৃদুলা কি সত্যি পালিয়েছে না-কি আহানই ওকে সাহায্য করেছে?
এরই মধ্যে নিলা আহানকে দেখতে পেলো। আহানকে দেখতে পেয়েই এক গাদা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো আহানে দিকে।

-‘ তুমি আমাকে হাসপাতালে আসতে বলে কোথায় চলে গিয়েছো? আমি তো খুঁজে পায়নি তোমাকে। ‘

-‘ পাবে কি করে বলো? আমি তো মেডিসিন নিয়ে আর ব্যা’ন্ডে’জ করে আমার বন্ধুর সাহায্য নিয়ে বাড়িতে এসেছি।’

নিলা আহানের কথা বিশ্বাস করলো কারন আহানের হাতে, মা’থায় ব্যা’ন্ডে’জ করা আছে। বুঝেও গেলো আহান এই সম্পর্কে কিছু জানে না । কিন্তু নিলার মনে ভ’য় হচ্ছে এবার যদি মৃদুলা সবাইকে সব সত্যি টা বলে দেয় তো তখন কি হবে? এটা ভাবতেই ভ’য়ে গলা শুকিয়ে আসছে নিলার! এরই মধ্যে শুনতে পেলো মৃদুলার জ্ঞান ফিরেছে। আহান মৃদুলার কথা শুনে হন্তদন্ত হয়ে উপরের দিকে গেলো। মৃদুলা সবার সঙ্গেই বেশ টুকটাক কথা বলছে। সকলেরই মনে এক প্রশ্ন কে নিয়ে গেছিলো মৃদুলাকে?
মৃদুলা তুখর দৃষ্টিতে নিলার দিকে তাকিয়ে আছে যেটা নিলার মনে আরো ভ’য়ে সৃষ্টি করছে!
আহানও মনে মনে ভাবছে মৃদুলা হয়তো সব সত্যি টা বলে দিবে।

-‘ আমাকে কেউ একজন নিয়ে গিয়েছিলো। ব্যস অতুটুকুই। আমি তাদের ওখান থেকে পালিয়ে এসেছি আজকে।’

মৃদুলার কথা শুনে নিলা হাফ ছেড়ে বাঁচলো কিন্তু আহানের মনে প্রশ্ন মৃদুলা মিথ্যা বললো কেনো?’

বাকি সবাই টুকটাক একটু কথা বলে মৃদুলার সঙ্গে বাহিরে চলে যায়। আহানের মা-ও মৃদুলাকে ভুল বুঝেছিলো যার জন্য অনুতপ্ত তিনি। সবাই মৃদুলার সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে গেলো। মৃদুলার মা আহানকে দেখে ওদের দু’জনের খাবার রুমে দিয়ে গিয়ে চলে গেলো!
এতোক্ষণ সকল অপেক্ষার অবসান ঘটলো। মৃদুলা দেখতে পেলো আহান দাঁড়িয়ে আছে দরজার কোনায়! আহান মৃদুলার কাছে এসে বসলো। মৃদুলা দু চোখ ভরে দেখছে মানুষটাকে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা চিন্তায় ছিলো এতোক্ষণ। এই মানুষটিই তার ভালোবাসা এবার তাদের এক হবার পালা।

#চলবে?

[ছোটো হবার জন্য দুঃখিতো। অসুস্থ আছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন। আল্লাহকে স্মরন করুন। আসসালামু আলাইকুম ]