হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব-১৯

0
300

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে — [১৯]
#নিহা (মুনিয়া)
____________________

আহান মৃদুলার পাশে এসো বসলো। মৃদুলার হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে পুরে নিলো।

-‘ কেমন আছিস নুড়ি পাথর? ‘

-‘ নুড়ি পাথর কেনো? মিলা কি ম’রে গেছে?’

-‘ মানে? কি বলছিস?’

আর সামলাতে পারলাম না নিজেকে। লোকটা এখনো অব্দি আমাকে আড়ালেই রয়েছে। অথচ সত্যি টা জানার পর আমার সে কি ছ’ট’ফ’টানি একটু উনার কাছে যাবো বলে দু হাত দিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরবো বলে। আর নিজেকে সামলানোর শক্তি নেই আমার!

মৃদুলা আহানকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আহান চুপচাপ বসে ছিলো মৃদুলার এহেনো কান্ডে কিছুটা ভড়কে গেলো। শেষে নিজেও মৃদুলাকে তার দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো! যেনো দুটো শরীর নয় দু’টো আ’ত্না’র মিল ঘটেছে এতোদিন অপেক্ষা করবার পর!

মৃদুলা আহানকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগলো।

-‘ আর কতো আড়াল করবে নিজেকে? আমাকেই মিলা বলে ডাকতে। আমাকেই আমার বিরুদ্ধে জে’লা’সি ফিল করাতে। সব সত্যি টা বললে না কেনো বলোতো? তাহলে তো এই এতোদিন এতো দূরে থাকতে হতো না আমাদের। আমার কষ্টও হতো না। কেনো এরকম করলে তুমি? ‘

-‘ আপনি থেকে তুমি? হটাৎ! তুই দূরে সরিয়ে দিয়েছিলে তাই! অভিমানের পাহাড়টক যে বড্ড বেশি বড়ো হয়ে গেছিলো তাই। ‘

মৃদুলার কান্নার গতি এবার আরো বেড়ে গেলো। নিজেকে অ’প’রা’ধী মনে হচ্ছে আহানের কাছে।

-‘ সেই অভিমানের পাহাড় থেকেই তুমি থেকে আপনি বলেছি এতোদিন। তুমি একবার বলতে তো পারতে সবটা? ‘

-‘ ওই যে বললাম না অভিমানের পাহাড়টা বড্ড বেশি ছিলো যেটা ভেদ করে তোমার কাছে যেতে পারিনি। ‘

-‘ কিন্তু ভালো তো আমাকে বেসে এসেছো তাহলে কেনো এতো লুকোচুরি?’

আহান এবার মৃদুলার চোখ মুখ মুছিয়ে দিলো বেশ যত্ন করে। মাথার চুলগুলো মুখের সামনে এসে চোখের পানিতে লেপ্টে রয়েছে সেই লেপ্টানো চুলগুলোও ঠিক করে দিলো।

-‘ ভেবেছিলাম তুমি নিজে এসে ধরা দিবে ভালোবাসবে কিন্তু তুমি আসোনি।’

-‘ ধরা দিবো কি? আমি তো তোমার শূন্যতায় তোমারই মতন করে তোমার প্রেমে পড়েছি! কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনি।’

আহান এবার বেশ আগ্রহের স্বরে শুনতে লাগলো মৃদুলার কথাগুলো। তার মানে তার মিলাও তাকে ভালোবাসে?

-‘ সবটা খুলে বলো?’

-‘ তুমি যখন ওইদিন চলে গেছিলি তোমার শূন্যতা আমাকে অনুভব করিয়েছি আমি ঠিক কতোটা ভালোবাসি তোমাকে। শেষ অব্দি তুমি আমারই হলে কিন্তু যখন মিলার কথা বলতে তখন আমি ভেবেছি তুমি যার সঙ্গে থেকে ভালো থাকবে তার সঙ্গেই থাকো। কিন্তু একবারো বুঝিনি তুমি আমাকেই মিলা বলতে।’

-‘ তাহলে সবটাই বুঝে গেছো দেখছি? কিন্তু আমি তো কিচ্ছু বলিনি টের পেলে কি করে?’

-‘ তুমি যে ডায়েরি টা আমার ব্যাগে রেখেছো সেটা ভুলে গেছো?😒 সেই ডায়েরি পড়েই সব জেনেছি। তুমি এরকম কেনো? সেদিন তিনদিন পর আমাদের বিয়ে হতো তাও তুমি আমাকে কিছু বলোনি কেনো?’

-‘ বলতেই গেছিলাম কিন্তু তার আগেই সবটা ঘেঁটে দিয়েছে নিলা। ও-ই তো আমাকে আ’ঘা’ত করে তোমাকে নিয়ে গেছিলো। তারপর কতো কষ্টে সারারাত নিদ্রাহীন থেকে তোমাকে খুঁজে বের করেছি। কিন্তু তুমি মিথ্যা বললে কেনো যে তোমাকে অন্য কেউ নিয়ে গেছিলঁ?’

মৃদুলা এবার নড়ে চড়ে বসলো। বেশ ভ’য় পাচ্ছি আহান রে’গে যাবে না তো?

-‘ কালকে আমাদের বিয়ে আমি চাইনি এসব জানাজানি হয়ে অশান্তি সৃষ্টি হউক পরিবারে! আর শতো হলেও একদিন তো নিলা তোমাকে বন্ধুর মতন সাহায্য করেছে বলো? ‘

-‘ সে তুই সুযোগ দে কিন্তু আমি ওর মু’খো’শ খুলে দিবো সেটা বিয়ের পর আমিও চাচ্ছি না আমাদের বিয়েতে কোনো অ’শান্তি হউক!’

-‘ সেটাই হউক না হয়। আপাততো আমাদের বিয়েটা একটু শান্তিতে মিটুক। তারপর তোমার যা ইচ্ছে তুমি করো।’

আহান মৃদুলার দিকে চেয়ে বাঁকা হাসলো। মৃদুলা বুঝতে পারলো না সে এমন কি বললো যে আহান এতে হেঁসে ওঠবে?

-‘ যা ইচ্ছে তাই করবো তো নুড়ি পাথর? ‘

-‘ সেটাই তো বললাম!’

আহান এবার মৃদুলার কাছে গিয়ে বসলো একটু। আচমকাই মৃদুলার কপালে চু’মু একে দিলো! মৃদুলা ভড়কে গেলো। আহান আস্তে আস্তে করে মৃদুলার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতেই মৃদুলা তার দু’হাত দিয়ে ঠোঁট চে’পে ধরলো!

-‘ অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় বুঝেছেন? ধৈর্য্য ধরুন। সবুরে মেওয়া ফলবে?’

-‘ কবে?😒

-‘ উমম কালকেই তো? ভুলে গেছেন নাকি কালকে আমাদের বিয়ে? একটা স্মরনীয় দিন হবে। আমি আর আপনি এক হবো। পূর্নতা পাবে আপনার আর আমার অপূর্ন ভালোবাসা। সকল অপেক্ষার অবসান ঘটবে! ‘

আহান মুচকি হেঁসে মৃদুলাকে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো!

মৃদুলার মুখে এবার হাসি ফুটলো সবটা ঠিক হয়ে গেছে এই তো চাই আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।
মৃদুলা পরম আবেশে আহানকে জড়িয়ে ধরলো। আহানও বেশ গাঢ়ো করে কপালে একখানি চুমু একে দিলো।

-‘ আমার নুড়ি পাথর, আমার মিলা আমার সঙ্গেই থাকবে সারাজীবন। বড্ড বেশি ভালোবাসি যে তোকে। ‘

মৃদুলা মুচকি হেঁসে আহান জড়িয়ে ধরে রইলো। কিছুক্ষণ পর বিশ্রাম নেবার পর সকলে তাড়া দিতে লাগলো সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। একটু পরেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। তারপরেই কালকে বিয়ে সকলেই খুব ব্যাস্ততার মধ্যে আছে। এরই ভেতর নিলাকে আর দেখা যায়নি বাড়ির ভেতর। হয়তো বাড়িতে আসার সা’হস নেই। আহান অনেকক্ষণ আগেই মৃদুলার রুম ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেছে রেডি হতে। হিসেব মতন দু’টো বাড়িরই গায়ে হলুদ এক জায়গায় হয়ে যাচ্ছে তাই আহান রেডি হয়েই নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেবার আগে মৃদুলার রুমে গেলো। আহানের বাবা মা অনেক আগেই চলে গেছেন। মৃদুলার রুমে গিয়ে দেখলো মৃদুলা ঘুমাচ্ছে বেঘোরে। হয়তো দুদিন ক্লান্ত থাকার কারনে ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি। আহান তার প্রেয়সিকে খুবই মনোযোগ সহকারে দেখতে লাগলো। কপালে চুমু একে দিয়ে চলে গেলো মৃদুলার যেনো ঘুম না ভেঙে যায়। আহানের মনে খুশির অন্ত নেই আজ তার মিলা তার হয়ে যাবে আর কয়েক ঘন্টকর পর…
সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে মৃদুলাও আহানকে ভালোবাসে বলেছে বলে।
মৃদুলা ঘুম থেকে ওঠতেই দেখতে পায় সারা বাড়ি সাজানো হয়েছে খুব সুন্দর করে। নানান রকম আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে ওঠছে একেবারে মুদুলার! একটু বাইরে বেরোতেই মা রুমে পাঠিয়ে দিলেন মৃদুলাকে।
মুদুলা রুমে বসে আছে। ওমনি তার একদল কাজিন এসে হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলো!

-‘ কিরে মৃদুলা? খুব তো আহানকে দেখতে পারিস না এখন তারই বউ হতে হচ্ছে তোকে। ‘

-‘ বউ হবো কি? আমি তো উনার বউই আছি!’

মৃদুলার কথা শুনে পুরো রুম জুড়ে হাসির শোরগোল পড়ে গেলো। মৃদুলা বুঝতে পেরে লজ্জায় রঙিন হলো।

-‘ বুঝেছি বুঝেছি বিয়ের আগেই একেবারে ভালোবাসা উতলে পড়ছে তোর। এখন তোকে সাজাতে এসেছি আমরা। এই শাড়ি পড়াবো তারপর তোর গায়ে হলুদ হবে তুই কালকে একেবারে আহানের বউ হয়ে যাবি বুঝলি?’

মৃদুলা কিছু বললো না। মা’থা দুলালো। মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। এখন আর কোনো ভুল বুঝাবুঝি নেই ওদের মধ্যে আর কয়েট প্রহর অপেক্ষার পরে একেবারে আহানের হবে।

একটু পরেই মৃদুলাকে টকটকে হলুদ রঙের শাড়ি পড়িয়ে দেওয়া হলো। শাড়ির সঙ্গে মা’থায় ঘোমটাও দেওয়া আছে। চুলগুলো সামনের দিকে ফুলিয়ে বেঁধে একটা বিনুনি করে সামনের দিকে এনে দিয়েছি। হাতে, গলায়, কানে গায়ে হলুদের ফুলের সাজ! মুখ ভর্তি মেক-আপ সব মিলিয়ে মৃদুলাকে কোনো হলুদ পরির চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে না!

-‘ আহান ভাই না জানি এবার তার বউকে দেখে মু’র্ছা যায়!’

বলেই হাসতে লাগলো কাজিনের দলগুলো। একটু পর মৃদুলাকে স্টেজে নিয়ে বসানো হলো। চারিদিকে গান বাজনা হই হুল্লোড় হচ্ছে। মৃদুলাকে সর্বপ্রথম তার মা গায়ে হলুদ ছুঁইয়ে দিলো! এভাবে একে একে সবাই হলুদ রঙে হলদে করে দিলো একেবারে! ছাঁদে নাচ গান হচ্ছে। মৃদুলা অনেক্ক্ষণ যাবত বসে ছিলো। রুমে এসেছিলো রুমে এসেই দেখতে পায় ফোন বাজছে! স্ক্রিনে ভেসে ওঠেছে আহান নামটি! মৃদুলার অজান্তেই ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে!

-‘ অন্য কিছু না শুধু তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি শুনতে চাই। শুধু ভালোবাসি। তখন তুমি একবারো আমাকে এটা বলোনি।’

-‘ বলেছি না অপেক্ষা করো। সঠিক সময়ে বলবো।’

-‘ এতো অপেক্ষার ভীড়ে একবার তুমি হারিয়ে গিয়েছিলে। যদি এবারও সে-রকম কিছু হয়? ‘

মৃদুলার মনে ভ’য় ঢুকে গেলো সত্যিই তো যদি নিলা কিছু করে আবার?

#চলবে