হৃদমাঝারে তুমি ছিলে পর্ব-২৪

0
679

#হৃদমাঝারে_তুমি_ছিলে❤
#পর্ব___২৪
#কায়ানাত_আফরিন❤
–”গুড মর্নিং জান!”

মাইশা স্তব্ধ। এখানে আয়াতই আছে।সেই নেশাজড়ানো কন্ঠ, যা দেখে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় হৃদয়ে। কিন্ত নুহাশ ভাইয়ের বারান্দায় সে কি করছে? ভাইয়া কিছু বুঝে যাবে না-তো?ভাবতেই গায়ে হিম ধরে গেলো মাইশার। বিচলিত কন্ঠে বলে ওঠলো,

–”আপনি? আপনি ওখানে কি করছেন?”

–”আবারও আপনি?”

দম নিলো মাইশা। নুহাশ ভাইয়ের ভয়ে নিজের হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। চোখজোড়া বন্ধ করে বারকয়েক নিঃশ্বাস ফেললো তাই। তারপর আয়াতের দিকে বিভ্রান্ত চোখে বললো,

–”তুমি নুহাশ ভাইয়ের বারান্দায় কি করছো?আর কিভাবেই বা আসলে?”

আয়াত চেয়ার থেকে উঠে রেলিংয়ের প্রান্তে দাঁড়ালো। এখান থেকে একটু সামনে মাইশার বারান্দা থাকাতে আয়াত চাইলে এক লাফেই সেখানে যেতে পারে। কিন্ত গেলো না। স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বললো,

–”আমি নিশ্চয়ই এখানে আর উড়ে উড়ে আসিনি।আর ওয়েট ! তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেনো? এট এনি চান্স তুমি কি এটা ভাবছো যে আমি লুকিয়ে এখানে উঠেছি?”

আয়াতের বিদ্রুপ কন্ঠ। ভ্রু এমনভাবে বাকিয়ে রেখেছে যেনো মাইশাকে বিভ্রান্ত করাই ওর আসল উদ্দেশ্য। মাইশা এর উত্তর দিতে যাবে তখনই নুহাশের রুমের ভেতর থেকে কেউ বলে ওঠলো,

–”আয়াত বারান্দায় আছো?”

বলতে বলতে বারান্দায় আসলো নুহাশ। মাইশাকে অপরপ্রান্তের বারান্দায় দাঁড়ানো দেখে কিছুটা অবাক হয়। আয়াত শুকনো একটা কাশি দিয়ে সরে আসলো রেলিংয়ের কোণা থেকে। এমন ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি। নুহাশ এবার বললো,

–”ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় কি করছিস তুই?”

মাইশা মিহি গলায় বললো,
–”তেমন কিছুনা ।”

–”তাহলে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। আজ বেশ সকালেই আঙ্কেল আর খালামণি এসেছে আয়াত আর আরিয়ারপুর সাথে।”

এবার মাইশা বুঝলো আয়াতের এখানে থাকার কারন। আয়াত স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও মাইশার এভাবে বিভ্রান্ত হওয়াতে বেশ মজা পেয়েছে। মাইশা এবার নুহাশকে প্রতিউত্তরে বললো,

–”আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

নুহাশ আর কিছু বললো না মাইশাকে। শুধু চোখের ইশারায় আয়াতকেও আসতে বলে সে চলে গেলো। তা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মাইশা। বুকটা কেমন যেন উত্তজনায় দুরুদুরু করছে। মাইশা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

–আগে বললেই তো পারতে যে আজ তোমরা সবাই এসেছো। আর আমি কি-না কি ভাবছিলাম। ইয়া আল্লাহ ! আর একটু হলে ভয়ের চোটে তো আমি মরেই যেতাম।

আয়াত চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে এমনভাবে হাসা শুরু করলো যে মাইশা হয়তো চমৎকার কিছু বলেছে। এ দৃশ্য দেখে চোখজোড়া ছোট করে ফেললো মাইশা। অবাকন্যায় বলে ওঠলো,

–এভাবে হাসার কি হলো?

আয়াত কিছু না বলে এক লম্বা ঝাপে রেলিং ধরে নুহাশের বারান্দার থেকে এসে পড়লো মাইশার বারান্দায়। ঘটনাচক্রে মাইশাও দুকদম পিছিয়ে গিয়েছে আয়াতের তৎক্ষণাৎ কাছাকাছি আসাতে। আয়াত এবার বিরক্ত হয়ে বললো,

–”তোমার মতো ইডিয়ট মেয়ে আমি আমার লাইফে দেখনি। লুকিয়ে আসতে হলে কি আর স্বয়ং যমরাজের ঘরে আসতাম? (তারপর ঠোঁট কামড়ে বললো) লুকিয়ে আসতে হলে আমি তো আমার জংলীবিড়ালের কাছে আসতাম। যেমনটা এখন এসেছি।”

শেষের কথাটি একদম মাথা নিচু করে বললো আয়াত। মাইশার ঠোঁটজোড়া থেকে সামান্য দুরত্বে ঠোঁটটি নামিয়েছে। দুজনের উষ্ণ নিঃশ্বাস খেলা করতে মগ্ন একে অপরের সাথে। মাইশা শীতল কন্ঠে বললো,

–”এখন এখান থেকে আপনি যান প্লিজ।”

–”আবার আপনি?”

–”আই মিন…………………এখন এখান থেকে তুমি যাও।”
মাইশার জড়ানো কন্ঠ। বুকের ডিপডিপ শব্দটা স্পষ্ট মাইশা শুনতে পারছে উত্তেজনায়। আয়াত মুচকি হেসে এক লাফে ওই বারান্দায় চলে গেলো। পেছনে ফিরে মাইশাকে বললো.

–”নিচে আসো জলদি। ওয়েট করছে সবাই।”

এটা বলে আয়াত চলে গেলেও মাইশা এখনও ধ্যানমগ্ন হয়ে গিয়েছে আয়াতের মোহনীয় কথাগুলোতে। ছেলেটা আসলে চাচ্ছেটা কি?কেন এভাবে ভালোবাসার কাঙাল করে তুলছে ওকে যেদিকে ওদের সম্পর্কের পরিণতি হবে কি-না এর কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।মাইশা কিছু না ভেবে জলদি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে গেলো।

————————————–

রহমান সাহেব চায়ে দু চামচ চিনি মিশিয়ে আনমনে নাড়াতে লাগলেন। ওপাশে রান্নাঘরে ওনার স্ত্র্ী শারমিন বেগম তার একমাত্র বড় বুবুর সাথে আড্ডার সহিত নাস্তা বানাতে মগ্ন। দূর থেকে দূজনকে দেখতেই খুব প্রাণোচ্ছোল দেখাচ্ছে। আর দেখাবেই না বা কেন, আজ এত বছরের সকল মান অভিমানের পাল্লা যে মিটে গিয়েছে। নিজের স্ত্রীর চোখের জল আর তার বড় বোনের কথা না রেখে পারেননি রহমান সাহেব। না চাওয়া সত্বেও মিজানের সাথে পুনরায় নতুনভাবে সম্পর্ক শুরু করলেন তিনি। কিন্ত মনে মনে এখনও মিজান সাহেবকে কেন যেন মানতে তিনি নারাজ।

এসব কিছুই পর্যবেক্ষণ করে চলছে তার বরাবরে সোফায় বসা মিজান সাহেব। বাধ্যর্কের ভারে চুল পেকে গেলেও রহমানের মনোভাব বোঝা তার জন্য পলকের ব্যাপার ছিলো। তবুও তা উপেক্ষা করে বললো,

–”আমি সত্যিই খুশি হয়েছি রহমান যে তুমি আবার আমাদের সাথে সম্পর্ক করে তুলেছো।”

–”হ্যাঁ , করেছি তবে শুধুমাত্র আমার স্ত্রী আর নুহাশ-মাইশার কথা ভেবে।”

রহমান সাহেবের গম্ভীর কন্ঠ। মলিন হাসলেন মিজান সাহেব। তারপর আবার বলে ওঠলেন,

–”যেভাবেই হোক তবে মেনে নিয়েছো তো। এতেই আলহামদুলিল্লাহ !”

রহমান কিছু বললেন না। একপলক ড্রইংরুমের কোণে বসা আয়াত আর আরিয়ার দিকে পরখ করে নিলেন। ছোট আরিয়াকে হঠাৎ এত বড় দেখে মন জুড়িয়ে গেলো রহমান সাহেবের। দেখতে পুরো মিজানের মতই হয়েছে। যতই মিজান সাহেবের সাথে রাগ করে থাকুক না কেন, মনে মনে আজও তাকে খুব সম্মান করে। রহমান বলে ওঠলো,

–”ছেলে কি করে আপনার।”

মিজান সাহেব অকপটে উত্তর দিলেন,
–”নামে মাত্র মাস্টার্সের পরীক্ষা দেবে। ঘুরাফিরাই মূলত ওর নেশা। তবে একটা রেডিও প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম জব করছে।হয়তোবা নুহাশের মতো এখনও কাজে মন দিতে পারেনি তবে ইনশাল্লাহ, সময় হতেই তা ধরে নেবে।”

–”ওহ !”
অসন্তুষ্ট স্বরে বলে ওঠলেন রহমান সাহেব। তখন তাদের আলাপচারিতার মাঝেই শারমিন বেগম ডেকে ওঠলেন সবাইকে নাস্তা করতে টেবিলে বসার জন্য। সবাই সেই অনুযায়ী বসে পড়লো টেবিলে। খাওয়ার মাঝেই শারমিন বেগম সবার উদ্দেশ্যে বলে ওঠলো,

–” আজ সবাই একেবারে রাতের খাওয়া-দাওয়া করে যাবে কিন্ত। আর আজকে বিকেলে আমরা নুহাশের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো। মেয়েটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”

ভীমড়ী খেলো নুহাশ। অপ্রস্তুত স্বরে বললো,
–”আজকেই?”

–”হ্যাঁ। তাছাড়া আজ বড় আপা-ভাইজান-আয়াত-আরিয়া সবাই আছে। এ ব্যাপারে আমি আর কোনো কথা শুনবো না।”

–তা তো ঠিকাছে কিন্ত মেয়েটা কে?
মাইশা জিজ্ঞেস করলো।শারমিন বেগম উদগ্রীব হয়ে বলে ওঠলেন,

–”সেটা সারপ্রাইজ। এখন বলবো না।”

শারমিন বেগমের এ প্রতিউত্তরে কেউ কিছু বললো না। আরিয়া আগ বাড়িয়ে বললো,
–নুহাশের সম্বন্ধটা পাকাপাকি হয়ে গেলো আমি নিজে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং এর ব্যবস্থা করবো।

আইডিয়াটা মন্দ না। বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে নুহাশের বিয়েটা ধুমধাম করে করার পরিকল্পনা আছে শারমিন বেগমের। তাই তিনি খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ওঠলেন,

–তবে তো অনেক ভালো হবে।

এসব দেখে মুচকি হাসলো মাইশা। নিজের মাকে এতটা প্রাণোচ্ছোল হতে ও আজই প্রথম দেখলো। আয়াত এক গ্লাস পানি পান করে বললো,

–”আমার তো লাভ ম্যারিজ করার ইচ্ছা। আর ডেস্টিনেশন? ওটা নাহয় ভাগ্যই বানিয়ে নিবে।”

আয়াতের সম্মোহোনী কন্ঠ শুনে সেদিকে নজর দিলো মাইশা। আয়াতের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি। মাইশার সাথে চোখাচোখি হতেই দুজন কিছুক্ষণ স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকলো একে অপরের দিকে। আয়াত সবার চোখের আড়ালে চুমুর ভঙ্গিমা দিতেই মাইশার কাশি শুরু হয়ে গেলো। রাহেলা বিবি অবাক সুরে বললেন,

–”কি হলো মাইশা?”

মাইশা ঢকঢক করে পানি খাচ্ছে এখন। এদিকে আয়াত এমন ভান করছে যে রাহেলা বিবির মতো সেও বিস্মিত। পানি খাওয়া শেষ করলো মাইশা। এখন কিছুটা ভালো লাগছে। আরিয়া বললো,

–”খাবার গলায় আটকে গিয়েছিলো নাকি?”
–হ্যাঁ।
শারমিন বেগম বিরক্ত হয়ে বললেন,
–এজন্যই মেয়েটারে বলি সাবধানে খাওয়া-দাওয়া করতে। কিন্ত না। খেতে বসলেই আকাশ কুসুম কল্পনা করে।
মাইশা বিড়বিড়িয়ে বললো,
–”তোমার আদরের ভাগ্নেকে আগে থামাও। বদমাশটার ভয়ঙকর সব কাজের জন্য একদিন আমার প্রাণপাখি ফুড়ুৎ করে উড়ে যাবে।😒

.
.
.
.
#চলবে
———————–