হৃদমাঝারে তুমি পর্ব-২+৩

0
351

#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_২+৩

মেহমান যাওয়ার পরে সব কিছু গোছাতে গোছাতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে টের পাইনি।সেই কোন সকালে একবার পান্তা ভাত খেয়েছিলাম তারপর কাজের ঠেলায় আর কিছু খাওয়া হয়নি।এখন সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করছে তাই না খেয়েই একটু দরজাটা চাপিয়ে শুয়ে পড়লাম।ঘুমের মাঝে টের পেলাম কে যেন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মনে হচ্ছে মা যেমন করে সন্তানকে আগলে রাখে সেরকম করে আগলে রাখছে।তবে ঘুম অনেক গাঢ় হওয়ায় আর কিছুই মনে নেই।যখন ঘুম থেকে উঠলাম তখন রাত দশটার কাছাকাছি।ক্ষুধায় পেট টা চো চো করছে।চোখে মুখে পানি দিয়ে রান্নাঘরে গেলাম।পাতিলের তলায় দুই মুঠো ভাত দেখলাম। এটা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম।প্লেটে ভাত নিলাম তখন বড়চাচি রান্নাঘরে আসলেন।

-মিহু বুঝলি মাহিন ওর কয়েকজন ফ্রেন্ড নিয়ে আসছিল ওদের খাইয়ে দিয়েছি তাই আজ ভাত একটু কম পড়েছে।তুই আজ একটু কষ্ট করে মরিচ দিয়ে খেয়ে নে।

চাচির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।না খাওয়ার বিষয় নিয়ে নয়।তিনি আমার সাথে অনুনয় বিনয় করে কথা বলছেন।

-আর খাওয়ার পরে একটু কষ্ট করে থালাবাসন গুলো ধুয়ে রাখিস,মহুয়া আজকে আসে নাই।

মহুয়া আমাদের বাসায় কাজ করে।ও থাকা শর্তেও অনেক কাজ আমার করতে হয়।কারণ ও নাকি কাজে ফাকি দেয়।ভালোভাবে কাজ করে না তাই আমাকে দিয়ে রান্নাবান্না আর কাপড়-চোপড় ধোয়া মোছা করায়।মহুয়া আসেনি বলে আমার সাথে এমন বিনয় এর স্বরে কথা বলছেন। একটু মুচকি হেসে বললাম

-ঠিক আছে।
-আর শোন সকালে একটু তাড়াতাড়ি উঠিস।তোর ফুফু আসবে সাথে বিদিশা।ওর ভাই আর ভাবি আসবে গায়ে হলুদের আগে।তাই তাদের জন্য রুম ঠিক করে রাখবি।

ভাত খাচ্ছিলাম আর চাচির কথা শুনছিলাম।তখনই হঠাৎ মাহিন ভাই বোতল নিয়ে আসলেন পানি নিতে।আমাকে দেখে মজার ছলে বললেন

-কিরে মেও বিড়াল কয়বার খাওয়া লাগে?এতবার খেলে যে মোটা হয়ে যাবি পরে আর জামাই পাবি না।আর তুই এই অসময়ে ঘুমিয়ে ছিলি কেন?বিরিয়ানি এনেছিলাম।মা বললো তুই নাকি খেয়ে-দেয়ে ঘুমাচ্ছিস তাই আর ডাকি নাই।

মুখে একটা উচ্ছ্বাসের ভাব ফুটিয়ে বললাম
-আরে ভাই আমাকে নিয়ে এতো টেনশন করো না।দেখোই তো আমি প্রতি বেলায় দুইবার করে খাই তারপরও মোটা হচ্ছি না।তাই অযথা বকবক করো না।

-এটাও ঠিক বলছো যখনই তোর কথা জিজ্ঞেস করি হয় খেয়ে ঘুমাচ্ছিস না হয় পড়ছিস।

-আসলে কি বলোতো ভাই আমার তো কোনো কাজ নাই তাই অযথা সময় নষ্ট করি।তোমার তো কাজের অভাব নাই তাই তুমি সময় নষ্ট করো না।

-আরে হ্যাঁ আমিতো আমার ল্যাপটপ অন করে রেখে এসেছি।ভালো কথা মনে করেছিস

মাহিন ভাই পানি নিয়ে চলে যাওয়ার পরে চাচি কৈফিয়তের সুরে বললো
-বুঝলি মাহিন ওর ফ্রেন্ডদের সামনে বসে জিজ্ঞেস করেছিল তাই বলেছিলাম। আমি যাই না হলে সকালে উঠতে দেরি হয়ে যাবে।
বলে চলে গেলেন। আমিও কিছুই বললাম না।কি বলব? আর কাকেই বা বলব?

রাত আড়াইটার দিকে বই পড়ে উঠলাম।ঐ সময় ঘুমানোর ফলে চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।তাই ছাদে গেলাম। অল্প খাওয়ার জন্য ক্ষুধা মিটে নাই।তারপরও ব্যাপার না এতেই সারা রাত চলে যাবে।ছোট বেলায় যখন মন খারাপ করে কান্না করতাম তখন দাদু চাদের পাশের একটা তারা দেখিয়ে বলতো ঐ যে দেখেছিস তোর মা আকাশে বসে তোকে দেখে।তখন আমি দাদুর কথা বিশ্বাস করে ঐ তারাটাকে মনের সব কথা বলতাম।বড় হওয়ার সাথে সাথে ব্যাপারটা যে ভিত্তিহীন তা জেনেও এখনো মনের সব কথা বলি ছাদে এসে।আজকে দু চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু গড়ে পড়ছে।থামার কোনো নাম নাই।মনের সব অভিযোগ জানালাম।

সিড়ির কাছে বসে আরেকজন এই অভিযোগ শুনে কান্না করছে।আর মনে মনে বলছে

-আমায় ক্ষমা করে দিস। আমি সব জেনেও তোকে সাহায্য করতে পারছি না।তবে কথা দিলাম তোকে এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবো।আর সব সময় নিরবে পাশে থাকব।

সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে।এর মধ্যেই একটি সাদা হুডি আর কালো ট্রাউজার পড়ে রাস্তায় দৌড়াচ্ছে এক যুবক।তার মুখে মাস্ক।জগিং করা শেষ হলে তার রুমে এসে মিনি ছাদের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটে।তারপর ছাদের একপাশ থেকে সিড়ি দিয়ে নেমে পড়ে ফুলের বাগানের মধ্যে।তার সবচেয়ে পছন্দের ফুল বেলী।কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে সে এখন পর্যন্ত তার বাগানে বেলীর একটা চারা আনতে পারেনি।বাগানে সবকিছু থাকতেও যেন অপূর্ণ রয়েছে।বাগানে একটা দোলনা আছে সেটায় বসে ব্লুটুথের মাধ্যমে কথা বলছে

-হুম পিয়াস বল।

পিয়াসের হাত পা কাঁপছে।সবাই মিলে ওকে বোকা বানালো।ওর হাত দিয়ে আরফানকে ফোন দেওয়াচ্ছে যে ওকে ড্রয়িং রুমে আনতে হবে।যা কিছুই বলুক না কেন ওকে এখানে আনতে হবে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল

-ভাই তুমি কই?
-কেন?

আরফানের গম্ভীর কথা শুনে পিয়াসের হার্ট এটাক করার অবস্থা।কোন মতে বলল

-ভাই একটু ড্রয়িং এ আসো কথা আছে।

বলেই ফোনটা কেটে দিল। এখন পিয়াস জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।মনে হয় বাঘের গুহা থেকে বেঁচে ফিরছে।

-নেহাল নীলু থাকতে আমার হাতে ফোন দেওয়ালি কেন?নীলু তো ভাইয়ের অর্ধেক পরাণ।তাইলে?

-আরে ভাই বুঝিস না কেন নীলুই তো ভাইকে রাজি করাবে।তাই ও এখন কোনো কথা বলবে না।

-ওহ তারমানে আমার রোল শেষ তাই না

-আরে পিয়াস ভাই এত খুশি হতে নেই।একটু পড়ে যখন ভাইয়া এসে জিজ্ঞেস করবে তখন কী বলবে?

নীলু চোখ নাচিয়ে পিয়াসকে জিজ্ঞেস করল।নীলুর কথায় পিয়াসের কেঁদে দেওয়ার অবস্থা।

-ভাই আর বোন এ কোন বিপদে ফেললি।ছোট থাকতে ভাইয়ের হাতে অনেক মাইর খাইছি এখন আর খাইলে মান ইজ্জত কিচ্ছু থাকবে না।ভাই কোনো মতে বাচাইস।
পিয়াসের আকুতি মিনতির আগেই আরফানের আগমন ঘটলো।পিয়াসকে জিজ্ঞেস করল

-কি জন্য ডেকেছিস?
-ভাই আম্ ম্ মি ডাক্ কি নাই তো

আরফান শান্ত চোখে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে আছে।নেহাল বুঝতে পারলো এই পিয়াস যেকোনো মুহূর্তে গড়বড় করে দিতে পারে।তাই সে নিজেই বলল

-ভাই আসলে হয়েছে কি নীলু কালকে থেকে মন খারাপ করে বসে আছে।আমাদের কিছু বলছে না।দেখোতো তোমাকে কিছু বলে নাকি।

নেহালের কথা শুনে আরফান নীলুর পাশে বসল।খুব নরম স্বরে জিজ্ঞেস করল
-মন খারাপ?
নীলু মাথা নাড়ালো
-কী জন্য?
চুপ করে থাকলো
-ওদের যেতে বলব?

নীলু কিছু বলার আগেই পিয়াস বলল
-হ্যাঁ ভাই আমরা গেলেই মনে হয় ও বলতে পারবে।নেহাল চল্ চল্।
নেহালের মনে হচ্ছে পিয়াসকে ধরে কাঁচা চিবিয়ে ফেলি।আরফান কি বলছে তা তারা ওর জন্য সামনে বসে শুনতে পাবে না।নেহাল পিয়াসের গলায় হাত দিয়ে বের হয়ে আসলো।রুমের বাইরে এসেই ওর গলা চেপে ধরল।
-ভাই ছাড় মরে যাব তো।
নেহাল ওর গলা ছেড়ে বলল-হাদারাম
কিছুক্ষণ বসার পরে পিয়াস বলল-চল আমরা উঁকি মেরে দেখে আসি আরফান ভাই কি বলছে?
বলার পরে নেহালের চোখের দিকে তাকাতেই নিজে নিজে বলে উঠল
-ভাই বুঝেছিস আম্মু না কি যেন নিতে বলেছিল। আমি সেটা কিনে দিয়ে আসি ঠিক আছে।পাশাপাশি ই তো বাড়ি।যাব আর আসবো।বলে চলে গেল আর বিরবির করতে লাগলো
-একটায় চক্ষু দিয়ে চাকু মারে আরেকটায় কথা দিয়ে ছুড়ি

-কিছু বলবি না?
-তুমি জানো নেহাল ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে
-হ্যাঁ তো সমস্যা কোথায়?
-ভাই তোমার ছোট হয়ে আগে বিয়ে করছে কেন?
-আরে কোথাও কি লেখা আছে নাকি বড় ভাই বিয়ে না করলে ছোট ভাই আগে বিয়ে করতে পারবে না।

-আমি চাই তুমি আগে বিয়ে করো।

#চলবে

#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৩

-নীলু তোর কি এখন জেদ ধরার বয়স?
-আমিতো জেদ ধরছি না।আমিতো আবদার করেছি
-তুই যেখানে জানিস এটা পসিবল না সেখানে কেন মিছে বায়না করছো?
-ভাইয়া আমি কিছু জানি না,আমি শুধু জানি তুমি বিয়ে করবে ব্যাস্

আরফান কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই ওর ফোন এলো।ফোনে ফারিশের নাম দেখে নীলুকে বলল

-এখন আমার একটা জরুরী কাজ আছে।আমার একটু অফিসে যাওয়া লাগবে।এ বিষয়ে পরে কথা বলব

বলেই আরফান উপরে নিজের রুমে চলে গেল।কিন্তু নীলু নিজের জায়গায় স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।এতক্ষণ মন খারাপের অভিনয় করলেও এবার সত্যিকারেই মন খারাপ করেছে।ওর ভাইয়ার কাছে এখন ওর থেকে কাজ ইমপর্টেন্ড হয়ে গেল। ওর কান্না পাচ্ছে খুব।তাই দৌড়ে ওপরে নিজের রুমে চলে গেল।দরজা আটকিয়ে বিছানায় বসে বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে লাগল। ওর ভাই কখনো ওকে এক্সকিউজ দেখায় না কিন্তু আজ এই সামান্য বিষয়ের কারনে ওকে উপেক্ষা করল।সদ্য সতেরো এর ঘরে পা দেওয়া নীলু অনুভূতি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।তার কাছে মনে হতে লাগল তার ভাই তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে

এই বয়সটা আসলেই একটা গোলকধাঁধা।কখন কি মনে হয় সেটা কেউই ভাবতে পারে না।অনেক সময় সামান্য আঘাতে তারা অসীম বেদনায় সিক্ত হয়ে ওঠে আবার অনেক বড় ঘটনাকেও পাশ কাটিয়ে যেতে পারে।তারা কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তা মানতে চায় না।তারা তাদের মনের অনুভূতিটাকে প্রধান্য দেয় হোক সেটা ভুল।তবে নীলুর করা এই ভুলের কারণে হয়ত বদলে যেতে পারে কারো জীবন।

আরফান অফিস ড্রেস পড়ে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে নিচে নামল। একবার ড্রয়িং রুমের দিকে তাকালো কিন্তু নীলুকে দেখতে পেলো না।সে ভেবেছিল তার আবেগ প্রবণ বোনকে একটু বুঝিয়ে যাবে যে তার এখন সময় নাই।মিটিং এর মাত্র বিশ মিনিট সময় আছে কিন্তু সেটা বলতে পারল না।সত্যিই তার দেরি হচ্ছে,ফারিশ ফোন না দিলে তো আজকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো।

পিয়াস আরফানকে বের হয়ে যেতে দেখে বাড়িতে ডুকল। এতক্ষণ সে বাইরে এমনিই ঘুরঘুর করছিল।কারণ সত্যিকারেই তার মা তাকে কি যেন নিয়ে যেতে বলেছিল।বার বার করে বলে দিয়েছিল আনতে এমন কি নামটা লিখেও দিয়েছিল যাতে ভুলে না যায় কিন্তু সে প্রেস্টিজ দেখিয়ে বলেছিল
– ‘মা আমি কি বাচ্চা মানুষ? আমি এখন বড় হয়েছি।দেখেছো আমার বয়সী নেহাল বিয়ে পর্যন্ত করে ফেলল আর আমি কিনা ভুলে যাব?হাহ্ মা তুমি হয়তো ভুলে গেছো তোমার একটা আবিয়াইত্তা ছেলে আছে যাকে বিয়ে করানো দরকার’
কথাটা বলার পরেই ওর মা ওকে বেলন দৌড়ানি দিছে আর বলেছে
– ‘যেদিন ঠিক মতো বাজার করতে পারবি ঐ দিন বিয়ের কথা মাথায় আনবি তার আগে না’

এখন বাজার না নিয়ে ফিরলে নিশ্চিত জিন্দেগিতে বিয়ের সাধ ঘুচিয়ে দেবে।আর নেহালের কাছে যাওয়াও বৃথা।কারন সে তার হবু বৌ এর সাথে ডাটা ট্রান্সফার করতে আছে।তাই সে নীলুর রুমের দিকে রওনা দিল।নীলুর রুমে সবসময় দরজা খোলা থাকে কিন্তু পর্দা দেওয়া থাকে আর সবসময়ের মতো এটা ভেবে ও ঢুকতে গেছে কিন্তু নাকে বাড়ি খেয়ে ফ্লোরে পড়ে গেছে।

-বজ্জাইত্তা মহিলা দেখিস তোর জীবনে বিয়ে হবে না।আর হলেও নাকবোচা জামাই পাবি।

-কে নাকবোচা জামাই পাবে?
নেহালের ধারালো মার্কা চোখ দেখে পিয়াস ক্যাবলা কান্তের মতো হেসে বলল
-আরে ভাই আমার কথা বলছি আমি নাকবোচা বৌ পামু।আর কারো কথা বলি নাই বিশ্বাস। এই তোরে ছুয়ে বলছি বিশ্বাস কর।

কথাটা বলে পিয়াস নেহালের হাত ধরেছিল।নেহাল হাত ছাড়িয়ে বলল-তোর কথা তোর মাও বিশ্বাস করে না।সর দূরে যা।শেষে দেখা যাবে বিয়ের আগেই আমার বৌ বিধবা হয়ে যাবে

কথা শেষ হওয়ার আগেই পিহুর কল এলো।নেহাল ফোন নিয়ে দৌড় দিল।পিয়াস নিজেকে গালি দিয়ে বলল-জীবনে করলাম ডা কি?না করলাম প্রেম আর না হলো বিয়া।কিন্তু এইবার দুইভাইয়ের বিয়েতে একটা প্রেম করবই

সকাল সকাল সব কাজ শেষ করে ফেলল মিহু।আজকে বিকেলের দিকে একটু ভার্সিটিতে যেতে হবে।আর তাছাড়াও দশটার দিকে ফুফুদের আসার কথা।আবার তুলি আপুর খালার ও আসার কথা।তাদের জন্য রুম গোছাতে হবে।আবার রান্নার জন্যও সব কিছু প্রস্তুত করতে হবে।এসব ভেবে নিজের বিছানায় বসে পড়ে।ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ও।কিন্তু বিশ্রাম নেবার সময় নাই।হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠল,প্রমির নম্বরটা স্ক্রিনে ভেসে উঠল।কিন্তু মিহু ফোনটা ধরল না কারণ এই ফোনটা তাকে তার দাদুর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।পিহু যখন কলেজে উঠে বায়না ধরে ফোন কেনার জন্য তখন ওর বাবা দুটো ফোন আনে।একটা দেয় পিহুকে আর একটা দেয় তুলিকে।ওর দাদু যখন ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করে যে
মিহুর ফোন কোথায়?তখন বলেছিল ও তো আর পিহুর মতো দূরের কলেজে পড়ে না তাই ওর ফোন লাগবে না।

তারপর ওর দাদুর কথার চাপে পড়ে বলেছিল তুলির পুরনো ফোনটা ওকে দিবে আনে।কয়েকদিন পরে তুলি ওর কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে যায় তারপর ওর দাদু ওকে একটা ফোন কিনে দেয়।

দাদুর কথা মনেকরে ওর চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।ফোনটা দুইবার কেটে যাওয়ার পরে তৃতীয়বারে মিহু ফোনটা ধরে।

-পেত্নীর বাচ্চা হাতি এতক্ষণ লাগে ফোন ধরতে?

প্রমির কথা শুনে মুচকি হাসে মিহু।প্রমি মেয়েটাই এমন।ভিত্তিহীন কথা বললেও সবার মুখে হাসি ফোটে।

-এইতো একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম
-হুহ্ বিশ্রাম না ছাই।তুই সত্যি করে বলতো ঐ ঘষেটি বেগম সকাল থেকে তোকে কি কি কাজ করিয়েছে?

-তুই জীবনেও শুধরাবি না।বলতো কি জন্য ফোন দিয়েছিস?

-তুই তো ভারী পাজি মেয়ে।আমি তোর হয়ে তোর চাচির বিরুদ্ধে কথা বলছি আর তুই তার পক্ষ নিচ্ছিস? একেই বলে যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর। আচ্ছা যাক বাদ দে,,,শোন তোর হোয়াট্স অ্যাপ এ যা।তোর দাদুভাই কথা বলবে।

-ভাই আমার এমবি নাই তো
-অহ্ আমার তো মনে থাকে না।আচ্ছা বিকেলে ভার্সিটিতে আসবি যখন তখন বলবি আনে।
-আচ্ছা।এখন রাখি একটু পরে ফুফু আসবে।

ডবল এ গ্রুপ এন্ড ইন্ডাস্ট্রির মিটিং রুমে বসে অপেক্ষা করছে বিদেশী কয়েকজন ক্লায়েন্ট।অন্য কম্পানির কয়েক জন সেই ক্লায়েন্টদের শুনিয়ে ফারিশ কে বার বার জিজ্ঞেস করছে
-দশটা তো বেজে গেলো।আপনার বন্ধু কখন আসবে?আপনি তো বলেছিলেন সে নাকি পাংচুয়াল।কখনো লেইট করেনা।দশটা বাজার আর মাত্র এক মিনিট বাকি,সে কি আদতেও আসবে?

-আমরা কিন্তু দশটার একমিনিট বেশিও ওয়েট করবো না।যে লোক টাইম ই মেইনটেন করতে পারে না সে কি করে একটা কম্পানির মালিক হয়।

ফারিশ ওদের কথায় কর্ণপাত করে না।কারণ ও আরফান কে ছোট থেকে চিনে।ও জানে আরফান কতটা পাংচুয়াল।ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক দশটা বাজলো তখন

-আরফান আদিত্য কখনো টাইম লস করে না।সব সময় টাইম মেইনটেন করে চলে।

আরফানের এরকম টাইম মেইনটেন দেখে ক্লায়েন্টরা হাত তালি দিলো।আর খুশি হয়ে বলল

-মিস্টার আরফান আমরা অনেক খুশি হলাম আপনার টাইম মেইনটেন দেখে।এখন বাকি কথা গুলো হয়ে গেলে আমরা আমাদের প্রজেক্টা আপনাদের কম্পানিকে দিতে চাই।

ফারিশ একটু টিটকারী মেরে বলল
-আগেই আমাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আরফানের টাইম নিয়েই শুধু খুশি হয়েন না ওর বাকি কাজগুলোও দেখুন।না মানে সবার ই তো জানা উচিত কম্পানির মালিক হতে গেলে যে যোগ্যতা লাগে তা সবার আছে কিনা?

ফুফুরা এসে পৌছালেন সাড়ে দশটায় আর তুলি আপুর খালা এসেছেন দশটার দিকে।বিদিশা এসেই মিহুর সাথে লেগে থাকে।ও সবথেকে মিহুকে বেশি পছন্দ করে।মিহু রান্নাবান্নার জন্য মহুয়ার সাথে জোগাড় করছিল কিন্তু বিদিশা এসে ওকে টেনে নিয়ে গেল। ওর সাথে গল্প করতে হবে।এটা দেখে তুলি আপুর খালা চিৎকার করে বলে উঠল

-এই মেয়ে তুমি কই যাও?তুমি গেলে রান্না করব কে?
মিহুর হয়ে বিদিশা উত্তর দেয়
-কেন মহুয়া আপু করবে
-কি আমরা খামু কামের বেটির রান্না?ও তুলির মা ও তুলির মা দেখে যা তোর বারিতে আইসা এইরহম অপমান করতেছো?

মিহু রান্না ঘরে যেতে চাইছে কিন্তু বিদিশা যেতে দিচ্ছে না।খালার চিৎকারে ঘরের সবাই দৌড়ে আসে।

-কি হয়েছে আপা?
-দ্যাখ এই মাইয়্যা আমারে কয় আমি নাকি কামের বেডির রান্না খামু

-আন্টি আমি তা কখন বললাম
বিদিশার মা ওকে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল
-বড়দের মুখে মুখে কথা বলতে হয় নাকি।যাও ঘরে যাও।
বলার পরে বিদিশা থমথমে মুখ করে ওপরে চলে গেল।

-মিহু তুই এখানে কি কর যা রান্নাটা কর গিয়ে।খালি সুযোগ খুঁজে কাজ না করার।যা

মিহু ফুফুর দিকে একবার তাকায়।তিনি কিছু বলছেন না।তারপর রান্নাঘরে চলে যায় ।খালাও পান চিবুতে চিবুতে চলে গেল।ওর ফুফু বলল

-ভাবি মেয়েটাকে এত কেন কষ্ট দিচ্ছ?
-তোমার এত দরদ থাকে তুমি নিয়ে যাও
-আমি নিতাম ঠিকই যদি না আমার হাত পা বাধা থাকত। আমি ওকে সাহায্য করতে পারছি না তো কি হয়েছে, দেখবে একদিন ঠিকই ওর জীবনে এমন কেউ আসবে যেকিনা ওর সব দুঃখ ভুলিয়ে দেবে

ওর চাচি মুখ বেকিয়ে চলে গেল। ওর ফুফু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল

-আল্লাহ তুমি সব কিছুর মালিক। তুমিতো জানো আমি সব কিছু জেনেও কিছু করতে পারছি না।কিন্তু তুমি ওর জীবনে এমন কাউকে পাঠিও যে ওকে সব কষ্ট থেকে মুক্তি দেবে

#চলবে