হৃদমাঝারে শুধু তুমি পর্ব-০৪

0
481

#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:০৪

আদ্রিয়ান:আজকে কলেজের ফার্স্ট ডে!কোনো প্রকার ঝামেলা করবে না ওকে?

অরিন চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।
অরিন:ঝামেলা বলতে কি বোঝাচ্ছ?আমি ঝামেলা করি ?

আদ্রিয়ান:ঝামেলা তো আর নিজে স্বীকার করবে না সে একটা ঝামেলা।।

অরিন:এডি!

আদ্রিয়ান:জাস্ট কিডিং!আম..ছুটির পর আমি আসবো।ওকে?

অরিন:হুম।

অরিন এবার খুলনায় এসেছে।খুলনার ভালো মানের কলেজে ভর্তি হয়েছে।আজ প্রথম দিন।অরিন ভিতরে গেলো।কিছুদূর যেতেই দেখলো এক মেয়ে কান্না করছে।অরিন মেয়েটার কাছে গেলো।

অরিন:কি হয়েছে?

মেয়েটি:আমার মনে হয় আর পড়ালেখা হবে না!

অরিন: নিউ?

মেয়েটি:হুমম।

অরিন:কি হয়েছে সেটা তো বলো!

মেয়েটি:ওই আপু গুলো(তিনটা মেয়েকে দেখিয়ে )বলেছে প্রিন্সিপল স্যার এর ছেলেকে প্রপোজ করতে।কিন্তু তাকে প্রপোজ করলে আমায় টিসি দিয়ে দিলে আমি কি করবো?বহু কষ্টে এত দূর পড়ালেখা করেছি।বাবা জানতে পারলে আর পরাবে না।

অরিন:ওরা কারা?সিনিয়র?

মেয়েটি:না ওরাও নিউ কামার,কিন্তু ওই মাঝখানের আপুটার বাবা এখানের ৫০ পার্সেন্ট শেয়ার এর অধিকারী ।এখন না করলে উনি আমায় বের করে দিবে।

সব শুনে অরিনের রাগ হলো,এভাবে অসহায় মেয়েদের সাথে এরকম করে কি পায়?

অরিন:তুমি চলো ওদের কাছে।

মেয়েটি:কিন্তু!

অরিন:বললাম না চলো!

মেয়েটি ওদের কাছে যেতেই মাঝখানের মেয়েটি বলে উঠলো,”কিরে চাশমিশ!কমপ্লিট করেছিস?”

অরিন:এরকম করে কি পাও তোমরা?জানো এতে ওর কতটা রিস্ক আছে,তাও বলছো এরকম কাজ করতে।

মাঝখানের মেয়েটি আবার বলে উঠলো,”এ কে আবার?”

অরিন মিষ্টি হেসে বললো,
অরিন:আমি অদ্রি বিন অরিন। কলেজের নিউ কামার,ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট।

মেয়েটি:ওকে তাহলে ওর কাজটা তুমি করো নাহয়।

অরিন:উহু,কারণ আমি কমিটেড।

মেয়েটি: বাবা,এক কাজ করো তাহলে।সেই কমিটেডকারি ব্যাক্তিকে দিয়ে আমায় প্রপোজ করাও।

বলতে দেরি কিন্তু মুখে থাপ্পড় পড়তে দেরি হয় নি।অরিন মেরেছে থাপ্পড়টা,সব মানবে কিন্তু আদ্রিয়ান কে নিয়ে কোনো কথা হলে চুপ থাকার মেয়ে না সে।

মেয়েটি: হাও ডেয়ার ইউ!এই হৃদিতার গায়ে হাত তুলো তুমি?

অরিন:ভুল কথা বললে শাস্তি পেতে হবে। যা তোমায় দিয়ে দিলাম ।নেক্সট টাইম কাওকে এমন কাজ দেওয়ার আগে আমার থাপ্পড়ের কথা মাথায় রাখবে।

হৃদিতা:তুমি জানো তোমাকে আমি এই মুহূর্তে বের করে দিতে পারি কলেজ থেকে।

অরিন:তাতে আমার কি?কলেজের কি অভাব পড়ছে নাকি?আসছে! সর সামনে থেকে ।বলেই পাশের মেয়েটির হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো।

হৃদিতার পাশে থাকা নুহা মেয়েটি বলে উঠলো,
নুহা:তুই কি হি বললি না যে?

হৃদিতা: ও হৃদিতার গায়ে হাত দিয়েছে।এর ফল তো ও পাবে।

কলেজ শেষে আদ্রিয়ান কে দেখে অরিন ওর কাছে গেলো।

আদ্রিয়ান:কি ঝামেলা করেছো?

অরিন:কই কি করেছি?

আদ্রিয়ান:তবে আমি যে শুনলাম।

অরিন:না না আমি কিছু করি নি,আমি তো ওই মেয়েকে থাপ্পড় মারি ই নি।

আদ্রিয়ান:তার মানে কাওকে মেরেছো?

অরিন জিহ্বা তে কামড় দিল,

অরিন:আমার দোষ কি যদি সে তোমাকে নিয়ে কিছু বলে।

আদ্রিয়ান:কি বলেছে?

অরিন সব বললো। তা শুনে আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো।মেডাম জেলাস,সেটা বোঝা যাচ্ছে।

আদ্রিয়ান:আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে দিয়ে যদি অন্য কাওকে আপন করি ,তাহলে?

অরিনের বুক মোচড় দিয়ে উঠলো।তাও সামলে নিয়ে ছলছল চোখে বললো,

অরিন:যদি তাতে তুমি খুশি থাকো,ছেড়ে দিবো।কিন্তু ভালোবেসে যাবো।

আদ্রিয়ান কিছু না বলে অরিনকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরলো।
কলেজে এভাবেই হৃদিতা আর অরিনের ঝগড়া চলতে থাকে।একদিন অরিনের সাথে আদ্রিয়ান কে দেখে ফেলে ।

হৃদিতা:ঐটা কেরে ?

নুহা:ওর বিএফ মেবী।

হৃদিতা তা শুনে বাকা হাসলো।
ভাবনার জগতে থেকেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো হৃদিতা। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল তার আর অরিনের কাহিনী।কিন্তু সেটা বন্ধুত্বের না।শত্রুতার…তখনই ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে অরিন নাম জ্বলজ্বল করছে। ভাবতেই অবাক লাগে ওর। যার সাথে শত্রুতার শুরু সেই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।

অরিন:ওই চুন্নি!

হৃদিতা:বল।

অরিন:ঘুরতে যাবো চল।

হৃদিতা:ভালো লাগছে না রে।

অরিন:সবাই যাবে ,প্লিজ আয়।

হৃদিতা :ওকে।

অরিন:জলদি!!
হৃদিতা অনিচ্ছা সত্ত্বেও গেলো।

সামান্তা,অরিন ,মমি আর হৃদিতা কথা বলছে।অরিন মমিকেও ডেকেছে।মুন,ফাহিমা আর তনয়া নদীর তীরে দাড়িয়ে দুষ্টামি করছে।

নদীর অপরপ্রান্তে বসে আছে আদ্রিয়ান,সাথে অনিক আর সাগর।

অনিক:অরিন কে তুই কিভাবে চিনিস সাগর?

সাগর আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালো। ও বসে আছে।

সাগর:অরিন হলো আদ্রিয়ান অরি পাখি।

অনিক চুপ করে গেলো। ভার্সিটি সে বিদেশে কমপ্লিট করেছে।কিন্তু আদ্রিয়ান এর সাথে কন্ট্যাক্ট ছিল।সেই থেকে ওদের সব জানে।এমনকি বিচ্ছেদের ঘটনাও।

অনিক:এই সেই ধোঁকাবাজ।

সাগর:হুমম।

অনিক:এরকম মেয়ের জন্য তুই কষ্ট পাবি না,আদ্রিয়ান ।তোর লাইফ এ বেস্ট কেও আসবে।

আদ্রিয়ান কিছু বললো না,একসময় চোখ যায় অরিনের দিকে। চমকালো না।কারণ আগেও প্রায় হুটহাট নদীর তীরে আসত।অরিন হেসে হেসে কথা বলছে।

আদ্রিয়ান:একজনকে এভাবে পুড়িয়ে কত হাসি খুশি আছো।(মনে মনে)

সামান্তা:অরিন!

অরিন:হুমম।

সামান্তা:ওটা আদ্রিয়ান না?

অরিন:নদীর অপর পাশে তাকালো।আদ্রিয়ান তার দিকেই তাকিয়ে আছে।a

সামান্তা: ও এখানে কেনো?

অরিন:এটা আমাদের নিজস্ব জায়গা না।এখানে সবার থাকা স্বাভাবিক।

সামান্তা:প্রতারণা করার পরও কিভাবে পারে তোর সামনে আসতে।

অরিন:আপু,বাদ দেও।

সামান্তা:এইজন্যই মন মরা হয়ে থাকতি?

অরিন কিছু বলল না।

সামান্তা :এমন মানুষের জন্য তুই নিজের মন খারাপ কেন করবি,কেন নিজে কষ্ট পাবি।কষ্ট তো ওর পাওয়ার কথা।

অরিন:আপি রিলাক্স।

সামান্তা রাগে উঠে গেলো ।অরিনের এত দিন মন খারাপের কারণ জানতে পারলো।বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

অরিন:হৃদি,মমি আমি আপুকে সামলাই।তোরা তনয়া ,মুন আর ফাহিমা কে বাসায় পৌঁছে দিস।

বলেই সামুর পিছে পিছে গেলো।

মমি:আদ্রিয়ান আর অরিনের কাহিনী কি?

হৃদিতা:ভালোবাসতো একে অপরকে।

মমি:বিচ্ছেদ হলো কিভাবে?

হৃদিতা:আমার কারনে..

মমি:মানে?

হৃদিতা:কিছু না।তনয়া ,মুন আর ফাহিমা কে পৌঁছে দিয়ে মমি আর হৃদিতা নিজেদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
হৃদিতা আনমনে হাঁটছে।

অনিক:আরে মিস বুচি!

হৃদিতা অনিক কে দেখলেও কিছু বললো না।অনিক অবাক হলো।

অনিক:কিছু কি হয়েছে?

হৃদিতা ছল ছল চোখে তাকালো।

হৃদিতা: অপরাধবোধে গুমড়ে মরছি।

অনিক:কিসের অপরাধ?

হৃদিতা:কিছু না।

অনিক:অরিনের মত মেয়ের সাথে কিভাবে চলো?তুমি জানো ও একজন প্রতারক।

হৃদিতা: ও প্রতারক না।

অনিক: ওহ রিয়েলি?

হৃদিতা:বুঝবেন না,আপনি বুঝবেন না!

অনিক হৃদিতার কথা কিছুই বুঝলো না।হৃদিতা বাসায় চলে গেলো।

অরিন বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে তখনই ওর মা কল দিল।
অরিন:অবশেষে মাদার ইন্ডিয়ার আমাদের কথা মনে পড়লো?

মা:কিযে বলিস না!আচ্ছা তোরা পরশু আসবি তো?

অরিন:বিয়ের এখনও এক মাস বাকি ,এত আগে গিয়ে কি করবো?

মা:আরে বিয়ের দের এগিয়েছে ১০ দিন পর ।

অরিন:হটাৎ?

মা:তোর বড় খালুর শরীরটা ভালো না বেশি।তাই সে চাচ্ছে তার কিছু হওয়ার আগে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিক।

অরিন:আচ্ছা আসবো!

মা:জানিস আমার আর তোর বাবার বিয়ের জন্য তোর বড় খালা আর মেজো খালা বাসা ছেড়েছে তবুও আমাদের এক করেছে।এখন তাদের সকল কাজে আমাদের থাকতে হবে না?ঋণ যে অপূর্ণ।

অরিন: বুঝেছি,আমি সামান্তা আর তনয়া চলে আসবো। কালকের বিকেলের ট্রেনে।আম..ছেলে কি করে?

মা:আরে ছেলে তোর বড় খালুর বোনের ছেলে।ব্যাবসা করে।আপাতত ঢাকায় কিছু কাজ করছে। সেও আসবে।

অরিন:ওকে।

আরো কথা বলে রেখে দিল ।তখনই ফোন দিল তার বড় খালার মেয়ে।বিথী..

বিথী:অরিন?

অরিন:হুমম বল বিথী কেমন আছিস?

বিথী: আলহামদুলিল্লাহ!আসছিস তো?

অরিন:তোর বিয়ে আর আমি আসবো না।আসছি!!

বিথী:হৃদিতা কে কিন্তু আনবি।

অরিন:অবশ্যই,আম..আমার আরেকটা ফ্রেন্ড আছে!

বিথী:ওকেও আনিস।

কথা শেষে হৃদিতা আর মমি কেও বলে দিলো।

#চলবে…