হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস পর্ব-০৩

0
304

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_০৩
#মোহনা_হক

-‘রুয়াত চল দোস্ত আর দু মিনিট পর ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। পরে ক্লাসরুমে ঢুকলে স্যার অনেক কথা শোনাবে।’

‘নিমির কথায় রুয়াত নড়চড়ে উঠলো। জীবন শুরু হওয়ার আগেই যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে আসলে ঠিক কেমন লাগবে?’

-‘আচ্ছা নিমি তোর কি মনেহয় না আমার সাথে অন্যায় হচ্ছে? আমি শুধু তাকে একটির উত্তর দিতে পারিনি বলে সে আমার সাথে জোর করবে? এমন কেনো হচ্ছে আমার সাথে?’

‘রুয়াত সব বলেছে নিমি কে কিছু সময় আগে। নিমি রুয়াত কে শান্ত করার জন্য বললো-‘

-‘যেখানে সে তোকে ভালোবাসে তাহলে তো আর কিছু করার নেই। যদি তাকেও জোর করা হতো তাহলে হিসেবটা অন্য রকম ছিলো। হয়তো তখন দেখা যেতো বিয়ের পর ও তুই শান্তি পাবি না । তোরা তোদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারবি না। অবহেলা করবে সে তোকে। কিন্তু এখানে তো হিসেব উল্টো দাঁড়াচ্ছে। মানুষের মন পরিবর্তন হতে কতক্ষণ? দেখবি এমন না না করতে করতেই কবুল বলে দিবি। আর যেহেতু আয়াজ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে তাহলে সেটা নিশ্চিন্তে ভালো হবে। আর যারা পলিটিক্স করে তারা কি বিয়ে করে না? তাদের কি বউ নেই সন্তান নেই? আচ্ছা একবার ভাব তো তাদের বউরা তাহলে কিভাবে আছে। হ্যাঁ আমি প্রথমে বলেছিলাম অন্য কথা এখন বলছি তোর সব কিছু ভালোই হবে দেখে নিস। আর কোনো বাবা মা তাদের সন্তানের খারাপ চায় না। হয়েছে এখন উঠে পড়। অনেক তো বসে বসে দুঃখ বিলাস করেছিস।’

‘রুয়াতের থেকে নিমি কোনো রেসপন্স পেলো না। নিমির এখন মনে হচ্ছে যেনো রুয়াত কে বলি দেওয়া হবে তাই এমন করছে সে। হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো।’

-‘শুন একটা কথা বলি তুই ওনার সাথে কথা বলে দেখ। কথা-বার্তায় যদি খারাপ কিছু পেয়ে থাকিস তাহলে তোর বাবা মা কে জানাবি। আর আমার মনেহয় ওনি অনেক ভালো মানুষ। বাকিটা তোর ইচ্ছে।’

‘রুয়াত তার দৃষ্টি নিচু করে ফেললো। সেদিন সামান্য উত্তর দিতে পারেনি, আবার কথা বলবে। থমথমে অবস্থা। মনের ভিতর উত্তাল ঝড় বইছে।’

-‘কি করে কথা বলবো আমি? আমার তো কথা মুখ দিয়ে বেরই হবে না। সংকোচবোধ কাজ করবে। আর যোগাযোগ করার ও কোনো মাধ্যম নেই। না আছে তার ফোন নাম্বার আর না আছে কিছু।’

‘নিমি কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর দু আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে বললো-‘
-‘এক কাজ কর। তোর আপুকে বল। তারপর মিট কর তার সাথে।’

‘রুয়াত চোখ বড় বড় করে তাকালে নিমির দিকে। সে নাকি মিট করবে। হায় এমন দিন এখনো আসেনি। আসবে ও না বোধহয়। ‘

-‘তুই কি পাগল হয়েছিস নিমি? আমি কিভাবে? না না আমি এসব পারবো না।’

‘নিমি হাল ছেড়ে দিলো। ‘
-‘পারবি না যেহেতু তাহলে টেনশন করছিস কেনো? আবার এখানে বসে বসে ভাবছিস। নিজেকে আবার নিজেই বলছিস তোকে ঠকানো হচ্ছে। পাগল আমি হইনি রে তুই পাগল হয়েছিস। প্লিজ বোন আমার চল ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

‘নিমির কথাটা পুরোপুরি ফেলে দেয়নি রুয়াত। মাথায় কিছু একটা আসছে। তবে বান্ধুবী কে বলে নি। আবার নিমির কথা অপ্রয়োজনীয় হিসেবে ধরেনি। যদি চেষ্টা করে তাহলে তো দোষ নেই। অবশ্যই একবার চেষ্টা করা উচিৎ তার। রুয়াত উঠে নিমির সাথে ক্লাসরুমে চলে গেলো। অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে এখন না গেলে তো স্যার আর ক্লাসে ঢুকতেই দিবে না।’

‘দুপুর দু’টো বাজে। তাও সূর্যের তেজ কমছে না। যেনো এরকম তপ্ত দুপুরে পৃথিবী গরম হয়ে গিয়েছে। এরকম গরম রুয়াতের পছন্দ না। মুখ জ্বলছে তার। এক প্রকার বিরক্ত লাগছে। একটা হাত গালে রাখলো, না অনেক বেশিই গরম। নিমির থেকে বিদায় নিয়ে রিকশায় উঠে পড়লো। তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে পারলেই হলো। এ গরমে বাহিরে থাকা যাবে না। নাহয় কিছু সময় বাদে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।’
‘বাসায় এসে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। ফ্যানের বাতাস ও গায়ে লাগছে না। ‘

উচ্চস্বরে তার মা কে বললো-‘
-‘মা একটু ঠান্ডা পানি দাও।’

‘ছোট মেয়ের আওয়াজে তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে আসলেন মেহরুবা। আর ঠান্ডা পানি খেয়ে রুয়াত চোখ বুজে আছে। মেয়ের পানি খাওয়া শেষ হওয়ার পর পরক্ষণেই স্থান পরিবর্তন করলেন তিনি।’

‘ রুয়াত রুমে ঢুকেই দেখলো তার একমাত্র বোনের মেয়ে ছোট্ট জাফরি কে। পায়ের উপর পা তুলে ফোন দেখছে। রুয়াত ভাবলো জাফরির মতো বয়সে মোবাইল কি জিনিস সেটা জানত না আর তার বোনের মেয়ে একদম পায়ের উপর পা তুলে মোবাইল দেখছে। রুয়াতের নিজের মোবাইল থাকা সত্ত্বেও সে দেখে না। মোবাইলের প্রতি এখনো তার কোনো ইন্টারেস্ট জন্মায়নি। আর এই যুগের বাচ্চা ছেলে মেয়ে হতে শুরু করে বয়স্ক লোকদের ও আজকাল মোবাইল ছাড়া চলে না। নিজেকে অন্য জগতের প্রানী মনে হচ্ছে রুয়াতের।’

(*)

‘এলাকার চেয়ারম্যান, সকল নেতা, ছাএলীগের সম্পাদক, সহ সম্পাদক, ব্যবসা সমিতির লিডার সবাই উপস্থিত আজ। মাসের শেষ সময়ে এমন একটা মিটিং হয়। প্রতি মাসে কে কি করেছে সব হিসেব তোলা হয়। আর সে কাজগুলো এমপি দেখাশোনা করে। যা কয়েক বছর ধরে আয়াজই দেখে আসছে।’
‘সবার মুখোমুখি বরাবর আয়াজ বসে আছে। তার পাশেই সাহেদ দাঁড়ানো। একজন কে ছাড়া এই মিটিং শুরু করা হবে না। সে হচ্ছে ইকরামুল তাহের। বর্তমান ব্যবসা সমিতির লিডার ও চেয়ারম্যান তিনি। মূলত তার জন্যই সবাই অপেক্ষা করছে। আয়াজের সাথে পার্সোনালি মন মালিন্যর ব্যাপার থাকলেও সবার সামনে সে তা প্রকাশ করেনি কখনো। হাসিমুখে কথা বলে। আয়াজ খুব ভালো করেই অবগত যে তাকে তার জায়গা থেকে সরানোর মতো দুঃসাহসের পরিকল্পনা একমাত্র ইকরামুল তাহের ছাড়া আর কেউ করার সাহস পাবে না। আরও কয়েকমাস পর ইলেকশন। চেয়ারম্যান পদ থেকে এবার এমপি পদে দাঁড়াবে ইকরামুল। আর আয়াজ থাকলে কোনোমতেই তাকে জায়গা থেকে সরানো যাবে না। তাই গোপনে পরিকল্পনা অব্যহত রাখছে ইকরামুল। কিন্তু সব খবর আয়াজ জেনে বসে আছে।’

‘ইকরামুল তাহের এই মিটিং এ সব সময় দেরি করে আসেন। এতে সবাই খুব বিরক্ত। শুধুমাত্র আয়াজের চোখমুখে নিস্তব্ধতা। তার যেনো ভালো লাগছে এভাবে বসে থাকতে। অতঃপর ইকরামুল তাহেরের আগমন ঘটলো। তিনি আসার সাথে সাথেই মিটিং শুরু করে দিলো। এক এক করে সবাই সবার কথা বললো আয়াজের কাছে। কিন্তু ইকরামুল তাহের চুপ মেরে আছে। এ বিষয় বিশেষ করে খেয়াল করছে আয়াজ। মিটিং শেষ হলে যে যার মতো চলে যায়। শুধু বসে আছে ইকরামুল তাহের। ‘

‘আয়াজ পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলো ইকরামুল কে।’

-‘কি তাহের সাহেব এখানে বসেই কি রাত পার করবেন নাকি?’

‘ইকরামুল আয়াজের প্রতি ক্ষোভ থাকলেও তা প্রকাশ করলো না। এক বড়সড় হাসি দিয়ে বললো-‘
-‘মাএই তো সন্ধ্যা সাতটা বাজে। আপনার অফিসে সবাই আসলো চা কফি কিছু খাওয়ালেন না যে?’

‘আয়াজ হেসে দিলো।
-‘সাহেদ তাহের সাহেবের জন্য কড়া লিকারের একটা চা দিতে বলো। কফিতে ভেজাল থাকে বেশি।’

‘ইকরামুল তাহের হেসেই রইলেন। তবে আয়াজের চোখমুখে কঠোরতা। কাঠের চেয়ারটায় নিজ হাতের আঙুল দ্বারা ঠক ঠক আওয়াজ করতে লাগলো। সাহেদ চা এনে ইকরামুল তাহেরের সামনে এনে রাখল। সাদরে চায়ের কাপটা মুখ ধরলো। গরম ধোঁয়া উঠছে সদ্য আনা চা থেকে। ফুঁক দিতে ভুলে গিয়েছে তাই জিহ্বা তৎক্ষনাত জ্বলে উঠলো। তিরিক্ষি মেজাজে আবার কাপটা রেখে দিলো।’

‘আয়াজ শান্ত স্বরে বললো-‘
-‘শুনলাম এবার এমপি পদে দাঁড়াবেন নাকি?’

‘ইকরামুল থতমত খেয়ে গেলো। তার এই খবর আয়াজ জানে কিভাবে ভেবে পাচ্ছে না। কার থেকে শুনেছে। কে এই খবর দিয়েছে। এই নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলো। চেহেরায় সন্দিহান অবস্থা। ‘

-‘কে বলেছে? আমি তো নিজেই জানি না। আপনি কার থেকে শুনেছেন?’

-‘এসব কথা বাতাসের সাথে আশেপাশে ছড়িয়ে যায়। রটানোর কি মানুষের অভাব পড়েছে নাকি?’

‘ইকরামুল এবার মেজাজ দেখালো। কারও এমন ভাবলেশহীন কথাবার্তা পছন্দ করে না। নিজেকে খুব বড় মাপের মানুষ ভাবে। তার আশেপাশের মানুষদের নিতান্তই তুচ্ছ ভাবে সে। আর আয়াজের এ কথাটা তার শরীরে যেনো আগুন ধরিয়ে দিলো। নিশ্চয়ই লোক লাগিয়েছে আয়াজ তার পিছনে। ‘

-‘কে কিভাবে কথা বের করে সেটা ভালো করেই জানা আছে। গোপনে গোপনে তো লোক লাগায় তাই না এমপি সাহেব?’

‘বলেই হেসে দিলো ইকরামুল। আয়াজের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো। কথাটা যে আয়াজের উদ্দেশ্যই বলা হয়েছে খুব স্পষ্ট ভাবে বুঝে গিয়েছে সে। হুটহাট মাথা গরম করলো না আর।’

-‘অস্বীকার করলেন কেনো প্রথমে? এখন তো নিজেই নিজের কাছে ছোট হয়ে গেলেন।’

‘ইকরামুল দাঁড়িয়ে গেলো। অপমান করা হলো তাকে। এভাবে ইকরামুল কে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে আয়াজ বললো-‘

-‘উত্তেজিত হবেন না। এখানে আসলে অবশ্যই মনে রাখবেন যে এটা আমার অফিস।’

‘ইকরামুল এবার বেশ জিদ দেখিয়ে আয়াজের অফিস ত্যাগ করলো। ইকরামুল যাওয়ার সাথে সাথে একটা অমায়িক হাসি ফুঁটে ওঠলো আয়াজের। সাহেদের উদ্দেশ্যে বললো-‘

-‘সাহেদ ইকরামুল নাকি এবার এমপি পদে দাঁড়াবে। এটা হাস্যকর না?’

‘স্যারের কথায় না চাইতেও হাসলো সাহেদ। কি যে বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে তার স্যারের মাথায় একমাত্র তিনিই ভালো জানেন।’

(*)

‘পড়া শেষ করে জাফরির পাশে এসে শুয়ে পড়লো রুয়াত। রাত এগারোটার বেশি বাজে। কিছুক্ষণ আগে ইনিমা এসে খাইয়ে দিয়েছে জাফরি কে। রুয়াতের কারণে আর মোবাইল দেখতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু জাফরি এমন কান্না শুরু করেছে পরে বাধ্য হয়ে মোবাইল দিয়েছে ইনিমা। এক নাগাড়ে কার্টুন দেখে যাচ্ছে জাফরি। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই নিমির কথাটা মনে পড়ে গেলো রুয়াতের। আবার উঠে বসে পড়লো সে। আয়াজের সাথে যোগাযোগ করার উপায় একমাত্র জাফরি। সেই পারে রুয়াতের সাথে আয়াজের কথা বলিয়ে দিতে। তার আপুকে অবশ্য বলা যাবে না নাহলে অনেক পঁচাবে সে। তিল থেকে তাল বানিয়ে ফেলার মতো ক্ষমতা তার বোনের আছে।’

‘ রুয়াত জাফরি কে শোয়া থেকে কোলে নিয়ে নিলো। জাফরি তার মিম্মিমের এরুপ আচরণে বিরক্ত। শুয়ে শুয়ে কি সুন্দর কার্টুন দেখছিল।’

‘রুয়াত বেশ আহ্লাদী কন্ঠে বললো-‘
-‘জাফরি ময়না মিম্মিমের একটা কাজ করে দিতে পারবে?’

‘জাফরি সাথে সাথে নাকোচ করে দিলো। মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে সে করতে পারবে না। বাচ্চা হলে কি হবে বেশ পাকনা বুড়ি।’

‘রুয়াত আবারও বললো-‘
-‘প্লিজ জাফরি বাবু তুমি না গুড গার্ল। মিম্মিমের কাজটা করে দিলে তোমার জন্য কাল অনেক বড় বড় চকলেট এনে দিবো। যদি না করো তাহলে কিন্তু মিম্মিম আর কক্ষনো তোমাকে আদর করবে না চকলেট ও দিবে না।’

‘জাফরি রাজি হলো। চকলেটের প্রতি তার দুর্বলতা বেশি। বিশেষ করে বাচ্চাদের এই জিনিস অনেক ভালো লাগে। তারা পছন্দ ও করে এটা।’

-‘শুনো জাফরি তুমি এখন তোমার চাচ্চু কে কল দিবে। দিয়ে বলবে আমাদের বাসার নিচে আসতে।’

‘জাফরি তাই করলো। সোজা তার চাচ্চুর কাছে কল দিলো। গাড়িতে চোখ বুজে বসে আছে আয়াজ। সব কাজ শেষ করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। হঠাৎ কারও কল আসায় চোখ খুলে ফেললো। ভ্রু কুচকে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকালো। ‘Jafrir Ammu’ লিখাটা ভাসছে। আয়াজ ভেবেছে হয়তো তার ভাবি কল দিয়েছে। তাই রিসিভ করলো। কিন্তু রিসিভ করার পর জাফরির আওয়াজ শুনতে পেলো সে।’

-‘চাচ্চু এখন আমাদের বাসায় আসো।’

‘রুয়াত অধির আগ্রহে বসে আছে। কিন্তু জাফরি তো ঝামেলা করে ফেললো। জাফরি কে আস্তে করে আবার সঠিক কথা বলে দিয়েছে।’

-‘ না বাসায় এসো না। বাসার নিচে আসো। মিম্মিম বলছে।’

‘রুয়াত চোখ বড় করে ফেললো। এই যা বলে দিলো কথাটা। এইজন্য বাচ্চাদের দিয়ে কোনো কাজ করাতে নেই।’
‘আয়াজ প্রথমে রাজি হলো না। কিন্তু রুয়াতের কথা বলায় রাজি হলো। হঠাৎ কেনো রুয়াত এতো রাতে তাকে যেতে বলেছে এটাই বোঝা মুশকিল। ড্রাইভার কে বললো গাড়ি যেনো রুয়াতদের বাসার দিকেই যায়।’

‘রুমে পায়চারি করছে রুয়াত। মনে শান্তি নেই। একটু পর আয়াজ চলে আসবে। কি কথা বলবে সেগুলোই মুখস্থ করছে। কেউ যদি জানে নিশ্চয়ই রুয়াত কে বেহায়াপনা মেয়ে ভাববে। হান্নান সাহেব ওর তার স্ত্রী ঘুমিয়ে গিয়েছেন। আর রইলো ইনিমা, সে যদি একবার জেনে যায় তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ইনিমা আপাতত অন্য রুমে বসে বসে তার বরের সাথে কথা বলছে রুয়াতের ফোন দিয়ে। কিভাবে বাসা থেকে বের হবে আর আয়াজের মুখোমুখি হবে সেটা নিয়েই চিন্তিত রুয়াত। মিম্মিমের এরুপ কান্ড জাফরি শুয়ে শুয়ে দেখছে।’
‘গাড়ির আওয়াজ শোনার সাথে সাথেই রুয়াতের বুকটা কেঁপে উঠলো। মনে হচ্ছে আজই সে উপরে চলে যাবে। আরো একবার হর্ন দিলো। তাড়াহুড়ো করে জাফরি কে কোলে নিয়ে নিচে আসলো। এতো বেশি হর্ন দিলে তো তার বাবা মা জেগে যাবে। আর বাবা মা জেগে গেলো হবে এক সমস্যা। কোনো কিছু না ভেবেই মাথায় কাপড় দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো। ‘

‘গাড়ির একদম সামনে আয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি এখন মোবাইলের দিকে। ড্রাইভার কে বলে দিয়েছে একটু হেঁটে আসতে। জাফরি তার চাচ্চুকে দেখেই ডাক দিলো। আয়াজ মাথা তুলে দেখলো রুয়াত ও জাফরি দাঁড়িয়ে আছে। রুয়াতের কোলের জাফরি। মোবাইলটা পাঞ্জাবীর পকেটে পুড়ে নিলো সে। আয়াজ সোজা তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর রুয়াতের কোল থেকে জাফরি কে নিলো। কয়েকটা চুমু বসিয়ে দিলো ছোট্ট জাফরির গালে। আর জাফরি সে তো মহাখুশি তার চাচ্চু কে দেখে ওমনিই গলা জড়িয়ে ধরলো। আর এদিকে রুয়াতের ভয় ক্রমাগত বেড়ে চলছে। আয়াজের সামনে তো ঠিকই আসলো কিন্তু আয়াজ কিছু জিগ্যেস করলে কি উত্তর দিবে? এখন এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মনে হলো আয়াজ কে এখানে আসার কথা না বলাই ভালো ছিলো। কেনো যে নিমির কথাটা শুনতে গেলো। হাসফাস করতে লাগলো একপ্রকার। ‘

‘আয়াজ জাফরি কে আদর করা শেষে তার প্রেয়সীর দিকে তাকালো। চেহেরা দেখে ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে ভয়ে আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।’
‘কয়েক মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পর ও রুয়াতের কিছু বলার সাহস জোগাড় হলো না। এভাবে এতো রাতে দাঁড়িয়ে থাকতেও ভালো লাগছে না আয়াজের।’

‘গম্ভীর কন্ঠে বললো-‘
-‘এভাবে আমাকে দাঁড়িয়ে রাখার জন্য নিশ্চয়ই ডাকো নি? কেনো ডেকেছিলে বলো। বাসায় যেতে হবে আমার। টায়ার্ড লাগছে।’

‘রুয়াত মাথা তুলে তাকায় আয়াজের পানে। প্রথম দিন কথা বলার সময় আপনি বলে সম্মোধন করেছে, এখন আবার তুমি বলছে।’

-‘আ আপনি তো আমায় তুমি করে কখনো বলেন নি?’

‘আয়াজের মনে খুব আনন্দ হচ্ছে। রুয়াত ভয়ে কথা গুলিয়ে ফেলেছে। কেনো জানি খুব ভালো লাগলো তার। তার প্রেয়সীকে সে আপনি বলবে তুমি বলবে সব বলবে।’

‘এটা বলার জন্য ডেকেছো?’

‘রুয়াত মাথা নাড়লো দু’দিকে। মুখ দিয়ে শব্দ করলো না। আয়াজ একটু ধমকের সুরে বললো-‘
-‘এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ঢং করতে পারবো না আমি। এক কথা ক’বার বলতে হয় তোমায়? এতো রাতে ডেকে এনে এখন নাটক দেখাচ্ছো?’

‘রুয়াত ভয় পেলো। জাফরি বেচারা একবার চাচ্চুর মুখের দিকে তাকাচ্ছে তো আবার মিম্মিমের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। মাসুম বাচ্চাটি অবুঝের মতো রইলো।’

‘রুয়াত অস্পষ্ট সুরে বললো-‘
-‘আপুর কাছ থেকে শুনেছি আপনি আমায় ভালোবাসেন। এ কথাটা কি সত্যি?’

‘আয়াজ বুঝে গেলো রুয়াতের কথা। কি সাংঘাতিক এতো রাতে ডেকে এনেছে এ কথা বলার জন্য। তবে আয়াজ সত্যি কথা বললো-‘

-‘ হ্যাঁ তোমাকে তোমার আপু যে কথাটা বলেছে সেটা একদম সত্যি কথা।’

‘রুয়াত আর কথা বাড়াতে চাইলো না। এখানে আর এক মুহুর্ত ও থাকা যাবে না। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে বার বার। হাত পেতে বলল-‘

-‘জাফরি কে দিন। বাসায় যাবো।’

‘আয়াজ হেসে দিলো। মাথায় এক সয়তানি বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। এতো রাতে ডেকে এনেছে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে নাকি?’

‘আয়াজ রুয়াতের কব্জি ধরে টান দিলো। মেয়েটি কে টেনে তার সামনে দাঁড় করালো। পিঠ বরাবর হাত দ্বারা তাদের দু’জনের মধ্যে দূরত্ব ঘুচিয়ে দিলো। আচমকা এমন হবে একদমই ভাবে নি রুয়াত। সর্বাঙ্গ শরীর কেঁপে উঠলো মুহুর্তেই।’

‘আয়াজ জাফরির দিকে তাকিয়ে বললো-‘
-‘তোমার মিম্মিম এতো রাতে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। এমনি এমনি ছেড়ে দিবো নাকি তাকে বলো তো জাফরি?

‘আবার পরক্ষণেই রুয়াতের দিকে তাকালো।
-‘কি জাফরির মিম্মিম এতো রাতে দেখা করতে এসেছেন আপনার হবু বরের সাথে। কিছু না করে ছেড়ে দিবো ভাবছেন?’

#চলবে….