হৃদয়ের সুখ আপনি পর্ব-০১+০২

0
500

#হৃদয়ের সুখ আপনি
#পর্ব-০১+০২
#Nishi_khatun

লাল টকটকে বেনারসি শাড়ি পড়ে বউ সাজে একজন সুপুরুষের হাত ধরে মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ইফা।

নিলুফা নিজের মেয়েকে এমন নববধূ সাজে
পরপুরুষের সাথে দেখে প্রচুর রেগে যায়।

মেয়েকে উদ্দেশ্যে করে “ইফা এসব কেমন বেহায়াপনা?”
তা-ই বলে সে রাগের বসে মেয়ের গালে থাপ্পড় দিতে হাত উঁচু করতেই এক বলিষ্ঠ হাত তাকে বাধা দেয়।

গম্ভীর কন্ঠে বলে,”আপনার কোন অধিকার নেই আমার স্ত্রীর গায়ে এভাবে হাত দেওয়ার। ”

নিলুফা বেগম বলে,”আরে যে পুরুষ ঘরে সুন্দরি বউ আরেকটা বিয়ে করতে পারে সে কখনো ভালো স্বামী হতে পারে না।”

ইফা তার মায়ের সামনে এসে বলে,”আরে মা তোমার সমস্যা কোথায়? দাইয়ানের ঘরে বউ আছে বলে সমস্যা? আচ্ছা উনি তার প্রথম স্ত্রীর কে তাড়িয়ে দিবে এবার তুমি খুশি তো?”

নিলুফা এবার নিজের মেয়ের গালে ঠাটিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলে,”বেইমান মেয়ে একটা! যাদের অনুগ্রহের খেয়ে পড়ে বেঁচে আছিস। তাদের মেয়ের সংসারটা এভাবে ভেঙ্গে চুরমার করতে তোর একটু বিবেকে বাধলো না? মানুষেরা ঠিকি বলে, খারাপের রক্ত কখনো ভালো হয় না। তোর মতো মেয়েকে জন্মের সময় মেরে দেওয়া উচিৎ ছিলো আমার। তাহলে আজ ঐ মমতাময়ী মায়ের মেয়ের সংসারটা বেঁচে যেতো।”

ইফা বিরক্তির শুরে বলল- ইফফ মা!
এতো নাটক করিও না তো। কেউ সাহায্য করেছে বলে সারাজীবন তার দাস হয়ে থাকতে হবে না কি? তাছাড়া দাইয়ান আমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছে।
দোয়া করার থাকলে করো নয়তো চুপচাপ থাকো। তবুও পরের মেয়ের জন্য ওকালতি করতে এসো না।

নিলুফা বলে,”তুই পেটে থাকতে তোর বাপে অন্য মহিলার হাত ধরে আমাদের ছেড়ে চলে গেছিলো। তখন তোর রক্তের কেউ সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেইনি। তুই আজ যে মেয়ের সংসারটা ভাঙ্গলি! এই রিমশা’র বাবা- মা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল। তোকে পৃথিবীর আলো দেখতে সাহায্য করেছে। শুধু কি তা-ই? তারা তোকে নিজের মেয়ের থেকে কম ভালোবাসা দেইনি। রিমশা’র বাবা- মা সব সময় তোর সকল চাহিদা পূরণ করেছে। রিমশা তোকে নিজের বোন ছাড়া অন্য কিছু কখনোই ভাবে নাই। সেই তুইই আজ মেয়েটার দুনিয়া উজার করে দিতে পারলি? আর কোনদিন কেউ কারো উপকার করতে চাইবে না। যদি কারো উপকার করার জন্য নিজের ঘরে আগুন লাগে। কেউ জেনে বুঝে দুধ কলা দিলে ঘরে কালসাপ পুষবে না।
তুই তো কালসাপের থেকেও বিষাক্ত।
তুই কোনদিন সুখি হতে পারবি না।
অন্যকে কষ্ট দিয়ে বা অন্যের সংসার ভেঙ্গে কখনো নিজে সুখি হওয়া যায় না।”

ইফা বিরক্তিবোধ করে দাইয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে,” এই তুমি এখানে থেকে আমাকে নিয়ে তোমার বাড়িতে চলো। আমার মা বেশি ঘ্যানঘ্যান করছে। এর এতো ঘ্যানঘ্যান শোনার সময় আমার নেই। এতো বকবকানি শুনলে মাথাব্যথা করে। শেষে আমার মাথা ব্যাথার জন্য কী বাসররাতটা নষ্ট করবো?”

দাইয়ান ইফা আর নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে স্ত্রীর হাত ধরে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে প্রস্থান করে।

এদিকে ইফার মা প্রলাপ করে বলে,”ইফা তুই বড় ভুল করেছিস রে মা। যে মেয়ে ছোট থেকে কখনোই অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে না। সে মেয়ে সহজেই তোকে তার স্বামী নিয়ে সংসার করতে দিবে? যে মেয়ে ছোট থাকতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য বনবাসী হয়েছিল। সে যখন সুখের মুখ দেখেছে! সে সুখ তোকে এতো সহজেই নষ্ট করতে দিবে? তুই যদি কোনদিন বিদ্ধস্ত হয়ে ফিরে আসিস আমি কখনোই তোকে আমার বুকে আগলে রাখবো না।”

*
*

এদিকে চেয়ারম্যান বাড়ির সদর দরজার সামনে নতুন বউ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দাইয়ান। বাড়ির সদরদরজার সামনে শোরগোল শুনে রিমশা এগিয়ে আসে, সদরদরজার সামনে যে তার জন্য বড় ধরণের সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল।
সে সারপ্রাইজ যে, তার দুনিয়া অন্ধকার করার জন্য যথেষ্ট।

নিজের স্বামীর পাশে সতীন রুপে নিজের কাছের মানুষকে দেখে রিমশা অবাক!
এটা কি ভাবে সম্ভব? যাকে নিজের ছোট বোনের থেকে বেশি ভালবাসা দিয়েছে, কোনদিন বুঝতে দেয়নি, সে আমাদের আপন কেউ না। আজ সে আমার সংসারটা এভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে পারলে?

হয়তো এই জন্য মানুষেরা বলে,

-“আপনের থেকে পর ভালো,পরের থেকে জঙ্গল ভালো!”

এসব চিন্তা ভাবনা করে সেখানে ধপাস করে বসে পড়ে রিমশা।

নিজের চোখেরজল কে বাঁধ ভাঙ্গতে এতো সহজেই দিবে না। নিজেকে শক্ত করে সদরদরজার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়।

সোজাভাবে সে স্বামীর পাঞ্জাবীর কলার ধরে বলে,

-“আপনি আমার সাথে এমনটা করতে পারেন না। ঘরে বিয়ে করা বউ থাকা অবস্থায় আপনি দ্বিতীয় বিয়ে কেনো করেছেন?”

দাইয়ান ধূলা পরিষ্কার করার মতো নিজের গা থেকে রিমশা’র হাত সরিয়ে বলে,

-“আমি কোনদিন ও তোকে বিয়ে করতে চাইনি। আমাদের বিয়েটা একটা এক্সিডেন্ট মাত্র। আমি ইফা কে ভালোবাসি। ইফার সাথে সারাজীবন একসাথে পথ চলার স্বপ্ন দেখেছি। সেখানে তুমি হঠাৎ আমার জীবনের কালবৈশাখী ঝড় ছাড়া আর
কিছুই না। ”

রিমশা সোজাভাবে স্বামীকে প্রশ্ন করে,

-“আচ্ছা মেয়েদের জীবনে বিয়ে কয়বার হয়? প্রথম স্বামী জীবিত থাকলে তার সাথে সারাজীবন থাকতে হয়। স্বামী মারা গেলে অথবা ডির্ভোস হলে তখন মেয়েদের দ্বিতীয় বিয়ে হয়। পুরুষের মতো নারীদের চারটা বিয়ের অনুমিত নেই।”

দাইয়ান বলে,”তোমার মতো বেহায়া মেয়েদের জীবনে প্রেম বিয়ে বহুত বার হয়। অযথা আমার কানের কাছে আপনি আমার স্বামী! আমার পুরো পৃথিবী এসব বলে ক্যাচাল করবে না। তোমাকে বিয়ের আগে থেকে আমার পছন্দ ছিলো না। তবুও পরিবার আর সমাজের চাপে পড়ে বহুত মাস দায়বদ্ধতার সংসার করেছি। এখন তো মুক্তি দাও আমাকে।”

সে সময় সেখানে দাইয়ানের বাবা বদুরুদ্দিন চেয়ারম্যান সাহেব উপস্থিত হয়ে ছেলের গালে ঠাসিয়ে চড় বসিয়ে দেয়।

তারপর সে বলে,”তুই কার চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তুলছিস জানিস? আরে ঐ মেয়ের চরিত্রের দিকে কালি তুই ছিঁটিয়ে নোংরামি করতে চেয়েছিলি। তোর নোংরামির শাস্তি স্বরুপ আমি তোকে শিক্ষা দিতে ঐ মেয়েকে বাড়ির বউ করে এনেছিলাম। আজ আমার আফসোস হচ্ছে কেনো ঐ মেয়েটাকে তোর মতো জানোয়ারের বউ করে এবাড়িতে এনেছিলাম।”

দাইয়ান রিমশা’র চুলের মুঠি ধরে বলে,

-“আজ তোর জন্য আমার বাবা আমাকে এতো কথা শোনাচ্ছে বেহায়া নিলজ্জ মেয়ে।”

রিমশা নিজেকে ছড়িয়ে নিয়ে বলে,”আপনি যদি একটু আমাকে ভালোবাসতেন! তাহলে হয়তো এই পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষের সংসার হতো আমাদের। আফসোস আমার #হৃদয়ের_সুখ_আপনি কিন্তু আমি আপনার হৃদয়ের মরিচা হতে পারি নাই। তবে আফসোস করি না। উপরে একজন আছে! সে আমাকে অবশ্যই সুখ দান করবেন। একদিন আপনি মাথা নিচু করে নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ফিরে আসবেন।হয়তো সেদিন আমার ক্ষমা করে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। আমিও সেইদিনের অপেক্ষা করবো তবে আপনাকে কোনদিন আমার থেকে মুক্তি দিবো না।”

কথা গুলো বলা শেষ না হতেই দাইয়ান রিমশা কে ধাক্কা দিয়ে ঘরের সদরদরজার সামনে থেকে সরিয়ে দেয়।

বদুরুদ্দিন সাহেব রিমশা’র মাথায় হাত বু্লিয়ে দিয়ে বলে,”মা রে আমার জন্য তোর জীবনটা বিষাক্ত হয়ে গেলো। এই ছেলেটা কে সঠিক পথে কোনদিন আনতে পারবোনা। তুই বরঞ্চ বাবার বাড়িতে ফিরে যা।
নতুন করে জীবনটাকে শুরু কর।
জানি মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়। তবে ভুলে যাসনে মা খারাপ লোকের সাথে থেকে জীবন নষ্ট করার থেকে ভালো তাকে মুক্তি দিয়ে, নতুন করে জীবনটাকে সাজানো। বাকিটা তোর ইচ্ছে মা।”

রিমশা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”বিয়ে দেওয়ার সময় কেউ আমার ইচ্ছার কথা জানতে চাইনি। অথচ বিয়েরপর থেকে সবাই আমাকে আমার ইচ্ছা মতো চলতে বলছে। কি এক অবস্থা। কেউ সংসারটা সাজিয়ে দিতে পারলো না। আমার অগোছালো সংসারটা সাজানোর আগেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো। এটাই কি আমার জীবনের পরিণাম ছিলো?”

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-০২
#Nishi_khatun

পরেরদিন সকালে চেয়ারম্যান বাড়ির সকলের ঘুম ভাঙ্গে বাড়ির বাহিরে লোকজনের শোরগোল শুনে।

বাড়ির সদস্যরা বাহিরে এসে জানতে পারে তাদের গ্রামের শেষে যে রুপসী খালটা আছে! সে খালের পাড়ে আজও একজনের লাশ পড়ে আছে।

সকালে গ্রামের জেলেরা খালে মাছ ধরতে যেয়ে দেখে পানির ভেতরে মাথা আর শরীরটা উপরে। তাদের বুঝতে বাকি থাকে না এটা লাশ। আর মৃত মানুষের লাশের গায়ে হাত দিলে পুলিশের ফ্যাসাদে পড়তে হবে। এর আগেও এমন লাশ পড়েছিল এই খালের পাড়ে। গ্রামের লোকজন সে লাশ ডাঙ্গাতে এনেছিল বলে কতোশত কাহিনী। গ্রামের নিরিহ বেচারা মানুষদের পুলিশ কম হয়রানি করে নি। তারপর থেকে সবাই কান ধরেছে!
যে কাজে পুলিশ আছে সে কাজের মধ্যে আমরা নাই। তা-ই তারা সকাল সকাল চেয়ারম্যান বাড়িতে এসেছে।
যা কিছু করার গ্রামের চেয়ারম্যান,
মেম্বার করবে। গ্রামের সহজসরল মানুষেরা নাই এই ভেজালের মধ্যে।

বদুরুদ্দিন সাহেব বাহিরে এসে এতো লোকের জামায়াত দেখে জানতে চাই কি হয়েছে এতো শোরগোল কিসের?

গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টারমশাই বলেন,

-“চেয়ারম্যান সাহেব আজকেও খালের পাড়ে একটা লাশ পাওয়া গেছে।”

বদুরুদ্দিন সাহেব চিন্তিত হয়ে সাথে সাথে বলেন,

– “ইন্না লিল্লাহ! আজকে আবার কে মরেছে আল্লাহ জানে। তোমরা লাশটা উল্টেপাল্টে দেখো নাই কার লাশ?”

পাশের এক যুবক বলে,”হ্যা! আর তো কাজ কাম নাই আমাদের ঐ লাশের গায়ে হাত দিয়ে হাজতে যাওয়ার ব্যবস্থা করি তা-ই না? এসব খুন- খারাপির বেপার সেপার পুলিশ কেস হবে। আপনি পুলিশের কাছে খবর দেন। যা করার পুলিশ এসে করবে।”

চেয়ারম্যান সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

-“আল্লাহ জানে আমাদের এই সুন্দর গ্রামটি যে কার নজরের পড়েছে আল্লাহ জানে!” তারপর সে দ্রুত তার মুঠোফোন হাতে নিয়ে পুলিশকে লাশের কথা সম্পর্কে অবগত করেন।”

এদিকে বদুরুদ্দিনের বড় ছেলে দিরহাম এসে বলে,

-“আব্বা আগেই বলেছিলাম আপনার ছোট ছেলের বউটা অপয়া। না হলে দেখেন সে যেদিন থেকে এবাড়ির বউ হয়ে এসেছে সেদিন থেকেই যতো অশান্তি। এমন কি রহস্য জনক ভাবে লোকজন মরতে শুরু করেছে।”

তখন চেয়ারম্যানের একমাত্র মেয়ে ইলমা এসে বলে,

-“বড় ভাইয়া অযথা ছোট ভাবীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে চেষ্টা করবে না। পুরো গ্রামের লোকেরা জানে ঐ খালাটা এমনিতে ভয়ানক অভিশপ্ত। দিনের বেলায় সেখানে কেউ একলা যায় না। জানো সেখানে কেউ রাতের বেলা যাবার সাহস করে না। ঐ রুপসী খাল নিয়ে লোকমুখে কাহিনীর অভাব নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে ছোট রিমশা ভাবীকে দোষী বলছো?”

তখন দাইয়ানের বড় ভাবী তার স্বামীর হাত ধরে আড়ালে সরিয়ে নিয়ে বলে,

-“এই আপনার ঘটে বুদ্ধি শুদ্ধি কবে হবে? এক মেয়ের বাপ হয়ে গেছেন। একঘর লোকের সামনে রিমশা কে অপমান করার চেষ্টা না করে নিজের পজিশনটা তো সুন্দর করে ফুঁটিয়ে তুলতে পারতেন। তাছাড়া কাল আপনার ভাই কি কেচ্ছা করেছে তা সম্পর্কে গ্রামের সকলে অবগত। তা-ই রিমশা এখন অবলা নারী। তাকে সাহারা দিন, অপমান নয়! তাহলেই তো সবার চোখে আপনার স্থান উঁচু হবে।”

দিরহাম বউয়ের কথার যুক্তি শুনে একটু দমে যায়।

এদিকে দাইয়ান রুম থেকে বেড়িয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে রুম থেকে বাহিরের দিকে আসছিল।

ঠিক সে সময় দিরহামের চোখ পড়ে তার ছোট ভাইয়ের উপর। দ্রুত দাইয়ান কে পথিমধ্যে আটকে দিয়ে বলে,

-“নাউজুবিল্লা ! বাড়ির মান-সম্মান সাত সকালে এইভাবে নষ্ট করার দরকার নেই, তুই দ্রুত নিজের রুমে যা। ”

দাইয়ান বিরক্তিবোধ করে বলে,

-“আমি কি এমন করেছি যার জন্য আপনার নাউজুবিল্লা পড়া লাগছে?”

দিরহাম বলে,

-“কাল যে দ্বিতীয় বিয়ে করে বাসরঘর করেছেন তার প্রমাণ বুঝি বাহিরে উপস্থিত জনগণ কে দেখাতে চাইছিস? ”

দাইয়ান আর বড় ভাইয়ের সাথে তর্ক না করে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে এসে সোজা দরজা বন্ধ করে আবারো ঘুমিয়ে পড়ে।
যা গেলাম না বাহিরে, তোরা থাক তোদের মান- সম্মান নিয়ে।

এদিকে গ্রামের উৎসুক জনগণ মরা দেখার জন্য দলবেঁধে সেই রুপসী খালের পাড়ে যাচ্ছে।

রিমশা তখন তার ননদ ইলমা আর বাড়ির কাজের মেয়ে ঝর্ণা কে বলে,”চলো আমরাও রুপসী খালে পাওয়া লাশটা দেখে আসি!”

রিমশা’র মুখে এমন কথা শুনে ইলমা আর ঝর্ণার চোখ কোঠর থেকে বাহিরে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।

ঝর্ণা বলে,”ভাবী আপনে ঠিক আছেন? কালকের শোক বুঝি এখনো সামলাইয়া উঠতে পারেন নাই তা-ই না?”

রিমশা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”কালকের শোকটা আমাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। তা-ই তা থাক না অন্তরের ভেতরে কয়লার জ্বলন্তআগুন হয়ে। বাহিরে না হয় ঠাণ্ডা ছাই হয়ে প্রকাশ্যে থাকি।”

ইলমা বলে,”দাইয়ান ভাই- কোনদিন সঠিক জিনিষের কদর বুঝলো না। তা-ই তো আপনার মতো হিরা ফেলে রেখে ঐ ভাঙ্গা আয়নার কাঁচ নিয়ে আসছে বাড়িতে।”

ঝর্ণা – আফায় ঠিক কথা বলছেন! ভাইজান বুঝবে একদিন! সে দ্বিতীয় বিয়ে করে মস্ত বড় ভুল করেছে।

রিমশা এবার একটু জোড়ে বিরক্তির সাথে বলে,

-“তোমরা কি যাবে আমার সাথে মরা দেখতে না কি আমি একাই চলে যাবো?”

ইলমা বলে,”আপনি এই বাড়ির বউ হয়ে আসার পর একদিন ও একা কোথাও গেছেন? আমি আপনার সাথে সব সময় ছায়ার মতো থেকেছি! আর আমার ছায়া ঝর্ণা। তাহলে আজ আপনার এই দুঃখের দিন একলা ছাড়ি কেমনে?”

রিমশা বলে,”হ্যা! এবাড়িতে আশার পর থেকে তোমাদের দু জনের জন্য আমি এতোগুলা দিন এখানে টিকে আছি। নয়তো বিয়েরপর দিন হয়তো আত্মহত্যা করতে হতো আমাকে।”

ইলমা রিমশা কে জড়িয়ে ধরে বলে,

-“আরে ভাবী ঐ সব বাজে কথা বাদ দাও বলো মরা দেখতে সত্যি যাবে?”

রিমশা হাস্যমুখ করে বলে,”হ্যা! আমার মরা মানুষ দেখতে খুব ভালো লাগে। আহা দুনিয়ার সকল মোহ-মায়া ত্যাগ করে তারা নিজের আসল দুনিয়ার পথে পাড়ি দেয়।”

ইলমা বলে,”ভাবীর মাথা সত্যি গেছে। বাদ সে সব ঝর্ণা চলে রওনা দেই মরা দেখতে।”

এদিকে ঝর্ণা যাবার সময় তার মা’কে বলে,”আম্মা সকালে সব কাজ তুমি দেখো আমি একটু বেড়িয়ে এসে বাকিটা সামলে নিবো।”

ঝর্ণার মা কিছুই বলে না! এই চেয়ারম্যান বাড়িতে ঝর্ণার মা কাজ করে। তা-ই মায়ের সাথে মেয়েও মাঝেমধ্যে কাজ করে। তবে কেউ তাদের কাজের লোক মনে করে না। তাদের বাড়ির একজন সদস্য মনে করে। এবাড়ির মেয়ে ইলমার সাথে ঝর্ণা ছোট থেকে বড় হয়েছে । ইলমা কখনো ঝর্ণা কে বুঝতেই দেয়নি সে বাড়ির কাজের মেয়ে। তা-ই কাজ করতে কষ্ট হলেও ঝর্ণার মা এই তিনজনের মাঝেমধ্যের লুকোচুরি গুলো সবার আড়ালে রাখে।
কখনো প্রকাশ্যে আনে না।

এদিকে ইফা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে শাশুড়ি কে সাহায্য করতে আসে। রেহেনা বেগম (দাইয়ানের মা) তাকে জব্দ করতে রান্নার সকল দায়িত্ব তাকে দিয়ে দেয়।সকাল থেকে শুরু করে দুপুরবেলার সব রান্না ইফাকে মাটির চুলায় করতে হবে তাও আবার একা কেউ কোন সাহায্য করবে না।

ইফা এবার নিজের ফাঁদে নিজেই পড়েছে। সাজগোজ করে পাটরানি সেজে এসেছিল শাশুড়ি কে পাটাইতে। কিন্তু শাশুড়ি তাকে চাকরানি বানিয়ে রাখল।

ইফার কত শখ ছিলো চেয়ারম্যান বাড়ির ছোট বউ হয়ে রাজরানির মতো থাকবে তবে তার সে সকল আশায় শাশুড়ি জান পানি ঢেলে দিল।

রেহেনা বেগম নিজের রুমের দিকে প্রস্থান করার পূর্বের ঝর্ণা’র মা’কে সাহায্য করতে নিষেধ করে। বলে,

-“নতুন বউ সব কাজ একা করবে! কেউ জেনো ভুলেও তাকে সাহায্য না করে এদিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখবে।”

ঝর্ণার মা বলে,”জি ভাবী সাহেবা আপনি চিন্তা করবে না আমার দৃষ্টি থাকবে তার উপর। আপনি নিশ্চিন্ত মনে ঘরে যেয়ে আরাম করেন।”

রেহেনা বেগম রান্না ঘর থেকে প্রস্থান করে।

ইফা ঝর্ণার মা’কে সাহায্য করতে বললে সে রেহেনা ভাবীকে ডাকার হুমকি দিতে শুরু করে।

ইফা আর কিছু বলার সাহস করে না।

ঝর্ণার মা মনে বলে,”আমার বয়ে গেছে এই ডায়নী কে সাহায্য করতে! হুহ। এই শাঁকচুন্নির জন্য আমাদের রিমশা আম্মা কতো কষ্টটা না পাচ্ছে মনে। তবুও মেয়েটা চুপচাপ। আর এই ডায়নীর মনে কেন চেহারাতে কোন অনুতাপের লেশ মাত্র নেই।”

চলবে….