হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব-২+৩

0
934

#হৃদয়ের_স্পন্দন
#পর্ব_২
#নন্দিনী_চৌধুরী

[৩.]

ব্যাথায় বার বার কুকড়িয়ে উঠছে শুভ্রতা।পিঠে খুব জ্বালা করছে তার।কালো পিঠে পোড়ার লাল দাগ ভালোই ফুটে গেছে।খুব কষ্টে হাত পিছনে নিয়ে নিয়ে মলম লাগাচ্ছে সে।হাত দিতেই জ্বলে যাচ্ছে জায়গাটা।একটু আগেই মামি তাকে গরম খুন্তি এখানে চেপে ধরেছে।

কিচ্ছুখন আগে,,,

মামি:কোথা থেকে আসা হচ্ছে নবাবজাদী।
শুভ্রতা মামির কথায় ভয় পেয়েযায়।এটা যে ঝর এর পুর্বেআবাস তা সে বুজতে পারছে।শুভ্রতা আসতে করে বলে উঠে,

শুভ্রতা:মামি আজ কলেজে এক্সট্রা ক্লাস ছিলো তাই আসতে দেরি হয়েছে।তুমি চিন্তা করোনা মামি।আমি সব রান্না করে দিচ্ছি।

মামি এভার শুভ্রতার দিকে তেরে আসলো তারপর শুভ্রতার চুলের মুঠি ধরে চেচিঁয়ে বলতে লাগলো,

মামি:হারামজাদি তোর এক্সট্রা ক্লাস জাহান্নামে যাক।তুই জানস ১২টায় উনুন না জ্বালালে রান্না হতে দেরি হয়।এখন ঘরের বেটাছেলে গুলো ফিরলে তাদের খাবার দেবে কে তোর মরা বাপ।

শুভ্রতা মামির হাত থেকে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে,

শুভ্রতা:আল্লাহর দোহাই লাগে মামি আমার মৃত বাবাকে কিছু বলোনা।যা বলার যা কিছু করার আমাকে বলো করো কিন্তু খবরদার আমার বাবাকে কিছু বলবানা।

শুভ্রতার কথা শুনে মামি আরো ও রেগে গেলো রেগে বললো,

মামি:ফক্কিনির বাচ্চা তোর এতো বড় সাহস তুই আমার মুখের উপরে কথা বলিস আজকে তোকে এর মজা দেখাচ্ছি।

বলেই আশে পাশে কিছু খুজতে থাকেন তারপর চুলার পাশে খুন্তি পায় গরম খুন্তি নিয়ে শুভ্রতার চুল ধরা অবস্থায় লাগিয়ে দেয় পিঠে।

শুভ্রতা:আল্লাহ গোওওও।মামি দোহাই লাগে ও মামি খুন্তিটা সোরাও।মামি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মামি।আমি মাফ চাচ্ছি তোমার কাছে।

শুভ্রতার মামি শুভ্রতাকে ছেড়ে দিয়ে বলেন,

মামি:ফের আমার মুখে মুখে কথা বলললে খুব খারাপ হবে মনে রাখিস।আর তোর আর আজকে রান্না করতে হবেনা।এখনি সব এলোবলে আমি খাবার বাহির থেকে আনিয়ে রাখছি।তুই যাহ তোর ঘরে যা খাওয়ার সময় যেনো তোকে টেবিলের আশে পাশে না দেখি।

শুভ্রতার মামি হনহন করে চলে গেলো আর শুভ্রতা উনুন বন্ধ করে চলে আসে রুমে।খুব জ্বলছে পিঠতার।ড্রয়ার থেকে পোড়ার মলম বের করে সেটা খুব কষ্টে লাগাচ্ছে পিঠে।গায়ের জামাটা খুলে একটা ওড়নাকে ভালোভাবে শরীলে পেচিয়ে নিলো।যাতে পোড়া জায়গায় কোনো সমস্যা না হয়।এখন নিচে কোনো কাজ নেই।তাই শুভ্রতা দরজা আটকে দিয়ে জানালায় পর্দা দিয়ে দিলো।তারপর উপুত হয়ে শুয়ে পরলো খাটে।খুব ব্যাথা করছে পিঠে।শুভ্রতা খাটে শুয়ে বাবার কথা ভাবতে লাগলো।আজ বাবা থাকলে তার জীবন্টা এমন হতোনা।শুভ্রতা কাদঁছে আর বলছে,

কেন চলে গেলে বাবা আমাকে একা রেখে।আমার যে তোমাকে ছাড়া খুব কষ্ট হয়।জানো বাবা কেউ আমাকে ভালোবাসেনা।আমাকে দেখতে পারেনা।শুধু মাত্র আমি কালো বলে।তুমিই তো আমাকে কত ভালোবাসতে আদর করতে।কিন্তু কেউ এখন আমাকে ভালোবাসেনা।সার্থপর মা নিজের সুখের জন্য আমাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করে চলে গেলো।আমার কোনো খোঁজ খবর সে নেয়না।বাবা তোমাকে ছাড়া আমার কেউ নেই।তুমি চলে গেলা।যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেতে তাহলে আমাকে এতো কষ্ট সইতে হতোনা।

আমি যাদের বেশি ভালোবাসিই তারাই আমাকে ছেড়ে চলে যায়।দেখোনা বাবা সায়ানকে আমি কত ভালোবাসলাম সে আমাকে ঠকালো।আমার জীবনের প্রথম প্রেম আমাকে ঠকিয়েছে।আচ্ছা বাবা আমি কি দোষ করেছিলাম বলো।একটা ভুল করে থাপ্পরই মারছিলাম তার প্রতিশোধ ও এভাবে নিলো।আমাকে তার বদলে কয়েকটা থাপ্পর মেরে দিতো।আমার মনটা কেন ভাংলো।

নিজের মনে মনে কথা গুলো আউরিয়ে আসতে আসতে ঘুমিয়ে পরে শুভ্রতা।ব্যাথা আর কান্না কাটি করায় অনেকটাই ক্লান্ত সে।

🦋
হোটেলের এক রুমে দীর্ঘসময় মিলনের পর রাহাতের বুকের উপর শুয়ে আছে প্রিয়া।প্রিয়ার ২০২ নাম্বার বড়লোক বয়ফ্রেন্ড রাহাত।সায়ানের সাথে রিলেশনের পাশাপাশি রাহাতকেও হাত করে রেখেছে প্রিয়া।বড়লোক বাবার আদুরে ছেলে রাহাত।মেয়েবাজ নেশাখোর সব গুন তার ভেতর বিদ্যমান।মেয়েরা তার কাছে আসেই তার বাবার অগাত পয়সার কারনে।প্রিয়াও তাদের মাঝে একজন।প্রিয়ার সাথে রাহাতের দেখা হয় একটা ক্লাবে।সেখান থেকে বন্ধুত্ত তারপর রিলেশন।প্রিয়া এটা জানায় ও নি রাহাতকে তার যে সায়ানের সাথে রিলেশন আছে।সায়ানের পাশাপাশি রাহাতের সাথে সময় কাটায় সে।রাহাতের সাথে এই নিয়ে অনেকবার মিলিত হয়েছে সে।বদলে রাহাত তার পিছনে অনেক টাকা ব্যয় করে।প্রিয়া রাহাতের বুকে শুয়ে বুকে নখ দিয়ে আচর কেটে কেটে দিয়ে বলছে,

প্রিয়া:বাবু আমরা বিয়ে করবো কবে?
রাহাত:খুব তাড়াতাড়ি বাবু।
প্রিয়া:এভাবে আর তোমার ভালোবাসা পেতে ইচ্ছা করেনা।বৈধ ভাবে তোমার ভালোবাসা পেতে চাই।
রাহাত:হ্যা পাবাতো বাবু একটু অপেক্ষা করো।(তোর মতো মেয়েকে এই রাহাত বিয়ে করবেনা।তুইতো শুধু আমার বিছানার সজ্ঞি।মুড উঠে গেলেই তোকে ছুড়ে ফেলে দিবো।)
এরপর রাহাত আর প্রিয়া ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে গেলো হোটেল থেকে।সায়ান অনেকবার কল করেছে প্রিয়ার নাম্বারে।কিন্তু প্রিয়া রাহাতের সাথে বিজি থাকায় ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলো।এখন তাকে সায়ানের সাথে দেখা করতে হবে।প্রিয়া চলে গেলো সায়ানের সাথে দেখা করতে।

[৪.]
বিকালের দিকে ঘুম ভাংগে শুভ্রতার।ব্যাথায় শরীরে জ্বর চলে আসছে তার।খুব কষ্টে উঠে।একটা জামা গায়ে দিয়ে নিলো সে।পিঠের ব্যাথা হাল্কা কমেছে।শুভ্রতা রুমের বাহিরে এসে দেখে বাসায় কেউ নাই।পরে তার মনে পরলো আজ তার ছোট মামির বোনের এংগেজমেন্ট সেখানে গেছে সবাই।শুভ্রতা আসতে করে রান্নাঘরে এসে ফ্রিজ খুলে দেখে খাবার আছে কিনা।খুজে সে পেলো পান্তা ভাত আর কালকের বাশিঁ তরকারি।এগুলাই খায় শুভ্রতা।এবাড়িতে এসে কবে যে ভালো কিছু খেয়েছে তা মনে পরেনা শুভ্রতার।অনেক ভালো ভালো রান্না হলেও তার কপালে জোটে পান্তা ভাত আর বাশিঁ তরকারি।একবার সে মাংসের তরকারি থেকে এক পিছ ছোট মাংস খেয়েছিলো তা মামি দেখার পর শুভ্রতার জিবলা ছ্যাকা দিয়ে দিছিলো আর পুরা একদিন কিছু খেতে দেয়নি।এরপর শুভ্রতা কোনোদিন সাহস করে কিছু মুখে দেয়নি।এসব বাশিটাশি খেয়েই থাকতো।খাওয়া শেষে শুভ্রতা নাপা খেলো।তারপর ওযু করে এসে নামাজ পরলো আসরের।নামাজ পরলে নিজের মনটা অনেক হালকা লাগে।শুভ্রতা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।দূর আকাশের পাখিরা নিজ নিজ বাসায় ফিরছে।তাদের পরিবারের কাছে ফিরছে।আচ্ছা শুভ্রতাকি কোনোদিন এখান থেকে মুক্তি পাবে।কেউ কি তাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে এখান থেকে।নাহ কে নিয়ে যাবে তাকে এখান থেকে।তার মতো কালো মেয়েকে কে নেবে নিজের জীবনে।সবাই তো সুন্দরের পূজারী।তার এই কালোময় জীবন কালো মেঘেই ডেকে থাকবে।

সবাই বলে কালো জগৎ এর আলো।কিন্তু এই কালো সবার চোখের সাল মনে হয়।সাদা চারমড়ার অধিকারি হয়েও কালো মন নিয়ে বসবাস করে অনেক মানুষ।আর কালো চামড়া নিয়েও ভালো একটা মন নিয়ে বসবাস করে অনেক মানুষ।মাগরিবের আজান দিয়ে দিছে।শুভ্রতা মাগরিবের নামাজ পরে কলেজের পড়া নিয়ে বসলো।

কফির মগ হাতে নিয়ে ভাইয়ের রুমে আসলো মহুয়া।কফি নিয়ে রুমে এসে দেখে ফাইল নিয়ে গম্ভির মুখ করে বসে আছে তার ভাই।মহুয়া আসতে করে ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলে,

মহুয়া:এই নে ভাইয়া তোর কফি।

বোনের গলার আওয়াজ পেয়ে ফাইল রেখে সামনে তাকায় মিষ্টি হাসি দিয়ে কফিটা হাতে নেয় শিশির।মহুয়া শিশিরের পাশে বসতে বসতে বলে,

মহুয়া:তোমাকে এতো গম্ভির লাগছে কেন ভাইয়া কোনো সমস্যা হইছে?
শিশির:নারে একটা ক্যাশ মাথায় ডুকছেনা সেটা নিয়ে রিচার্জ করছি।
মহুয়া:ওহ।আচ্ছা ভাইয়া শুনো আমাকে কালকে কলেজে দিয়ে আসবে।এই তিনদিন জ্বরের কারনে যেতে পারিনাই।
শিশির:আচ্ছা ঠিক আছে দিয়ে আসবো।
মহুয়া:আচ্ছা তাহলে আমি এখন যাই।

বলেই মহুয়া উঠে চলে গেলো আর শিশির পুনরায় ফাইল দেখতে বিজি হয়ে গেলো।

শুভ্র আহমেদ শিশির।একজন আইজিবি পুলিশ অফিসার।শিশিরের বাবা মিস্টার এনাউল আহমের ছিলেন একজন আইজিবি অফিসার।খুব সৎ আর দায়িত্বশীল ছিলেন তিনি।কিন্তু একদিন এক ক্যাসের সমাধান করা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।শিশির মানে এটা কোনো নরমাল মৃত্যু নয়,এটা একটা খুন।শিশির ও তাই বড় হয়ে একজন পুলিশ অফিসার হয়েছে।বাবার খুনিদের ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে।শিশিরের পরিবার বলতে তার মা আর বোন।শিশিরের মা সাবিনা আর ওর ছোট বোন মহুয়া ইসলাম মুন।এদের নিয়েই শিশিরের একটা ছোট দুনিয়া।

রাতের দিকে শুভ্রতার মামারা সবাই বাসায় আসে।শুভ্রতা সবাইকে সব গুছিয়ে দিয়ে আসে।আজকে সে একবার ও সায়ানের সামনে যায়নি।অথচ আগে হাজার বাহানায় যেতো সায়ানের কাছে তাকে একটু দেখতে।শুভ্রতা চায়না নিজেকে দুর্বল করতে।সে সায়ানকে দেখিয়ে দেবে সে কালো হলেও কোনোদিক দিয়ে অযোগ্য নয়।

#চলবে

#হৃদয়ের_স্পন্দন
#পর্ব_৩
#নন্দিনী_চৌধুরী

[৫.]

সকালে শুভ্রতা ফজরে উঠে নামাজ পরে নেয়। তারপর কিছু পড়াপড়ে রান্না ঘরে আসে নাস্তা বানাতে।সকালে সবার আগে সবাইকে চা দিতে হয়।একটু দেড়ি হলেই বকা খেতে হয়।শুভ্রতা এক চুলায় চায়ের পানি দিয়ে আরেকচুলায় আটা মাখার জন্য গরম পানি দিলো।রুটির সাথের ভাজি কেটে নিলো।তারপর চা বানিয়ে ফ্লাকসে ভরে রাখলো।সবাই উঠলেই দিয়ে দেবে চা।ভাজি রান্না করে রুটি বানানো শুরু করলো।এর মাঝেই সবাই উঠে পরে।প্রথমেই শুভ্রতার মেঝ মামির ঘর থেকে ডাক আসলো।শুভ্রতা চায়ের ট্রে নিয়ে তার রুমে গেলো।রুমে ডুকার সময় শুনতে পেলো শুভ্রতার মামি মামাকে বলছে,

শুভ্রতার মামি:শুনো বাবাকে বৃদ্ধআশ্রমে রেখে আসো।আমার আর ভালো লাগছেনা এসব।পেরালাইজ হবার পর থেকে সেই যে বিছানায় পরেছে তো পরেছে।যদি ভালো না হয় তাহলে মরে যায়না কেন।উফফ অহেতুক টাকা নষ্ট হচ্ছে ওনার পিছনে।

শুভ্রতার মামা:কি বলছো এসব উনি আমার বাবা।বাবাকে এসব বলছো কেন।আর আমি টাকাতো কম কামাইনা তাহলে।

শুভ্রতার মামি:হ্যা কম কামাও না কিন্তু উনি একটা বারতি খরচ ঘারে।তার ওপর তোমার বোনের মেয়ে।সেও আমাদের ঘারে।গায়ের রং কালি।যে বিয়ে দিয়ে পার ও করতে পারবোনা।

শুভ্রতার মামা:আচ্ছা তুমি এসব কথা থামাও তো ভালোলাগছেনা।

শুভ্রতা এত্তখন দরজার বাহিরে থেকে সব শুনছিলো।মানুষ কতটা খারাপ হলে বাবার মৃত্যু কামনা করে।শুভ্রতা আসতে করে রুমে এসে মামা মামির হাতে চা দিলো।শুভ্রতা চলে যেতে নিলে তার মামি পিছন থেকে বলে উঠে,

মেঝ মামিঃশোন শুভ্রতা আজকে কলেজে যাবিনা।আজকে অনেকদিন পর আমার বড় ভাই আসছে।তাদের জন্য রান্না বান্না করবি।একটু পর বাজারে যাবি গিয়ে বাজার করে নিয়ে আসবি।
শুভ্রতাঃঠিক আছে মামি।

শুভ্রতা রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

শুভ্রতার নানা আজ চার বছর পেরালাঈজড।দুই পা কাজ করেনা হাত একটা কাজ করেনা।মুখের জবান ও বন্ধ।অন্যের সাহায্যে জীবন চালাতে হয়।নানা দেখা শুনার জন্য চাঁপা কে আনা হয়েছে।চাঁপা একটা হিন্দু মেয়ে কিন্তু নানার অনেক খেয়াল রাখে।বাড়ির কেউ নানার সাথে
ভালো ব্যবহার করেনা।শুভ্রতার খুব কষ্ট হয় নানার জন্য।মানুষটাকে এই বয়সে সবাই এতো অবহেলা করছে।এই নানা নামক মানুষটার জন্য তার মায়ের থেকে সে আলাদা।কিন্তু তবুও তাকে শুভ্রতা কিছু বলেনা।শুভ্রতা আসতে করে চলে আসে।নানার রুম পরেছে রান্না ঘরের আগের রুমটা।রুমটায় অনেক গরম লাগে।সেই রুমেই নানাকে রেখেছে।শুভ্রতা রান্না ঘরে এসে চায়ের কাপ গুলো রেখে সব খাবার সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে টেবিলে।তারপর চলে আসে নিজের রুমে।শুভ্রতার রুমের পাশের রুমে সায়ানের রুম।শুভ্রতা সায়ানের রুমের পাশ দিয়ে আসার সময় শুনতে পেলো সায়ান ঘুম জোরানো কন্ঠে কাউকে বলছে”আই লাভ ইউ বাবু আজকে কলেকে তাড়াতাড়িই আসবো।তারপর তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।”সায়ানের কথা শুনে শুভ্রতা বুজতে পারলো সায়ান প্রিয়ার নামক মেয়েটার সাথে কথা বলছে।সায়ানের সাথে সব ঠিক ছিলো তখন সায়ান তাকেও এভাবে কল দিতো।ঘুম জোরানো কন্ঠে কথা বলতো।তবে রিলেশনে থাকার সময় সে দেখেছিলো প্রিয়াকে তবে সায়ান ওকে নিজের ফ্রেন্ড বলেছিলো।তবে প্রিয়ার সাথে শুভ্রতার কখোনো সরাসরি কথা হয়নি।শুভ্রতা নিজের রুমে এসে বিছানায় বসে বিড়বিড় করে বললো,

“প্রিয় মিথ্যা গল্পের শ্রেষ্ট লেখক ছিলে তুমি,আর সেই গল্পের বিস্বস্ত পাঠিকা ছিলাম আমি।কত কত মরা নদী জেগে উঠে বর্ষায় ভেংগে যাওয়া মানুষ ও জেগে উঠে ভরসায়।”

শুভ্র‍তা নিজের চোখের কোণের পানি মুছে মাথায় কাপড় দিয়ে বেরিয়ে পরে বাজারের জন্য।খালিপেটে হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছে।শুভ্রতা বাজারে এসে লিস্টে লেখা সবকিছু কিনে নিলো।সব কিনাকাটা করে এখন শুধু চিজ আর কেচাপ কিনতে গ্রসারি মার্কেটে যাবে।গ্রসারি মার্কেটে এসে চিজ আর কেচাপ কিনেনিলো।এখন রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে শুভ্রতা।অনেক রোদ মাথা ঘুরাচ্ছে শুভ্রতার।দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।একটা রিকশাও সে পাচ্ছেনা।

বোনকে নিয়ে গ্রসারি মার্কেটে যাচ্ছে শিশির।মুন কিছু জিনিশ কিনবে তাই।শিশির গাড়ি চালাইয়ে গ্রসারি মার্কেটের সামনে চলে আসছে।এদিকে শুভ্রতা খুব কষ্ট হচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকতে কিন্তু তাকে বাসায় যেতে হবে নাহলে মামির হাতে মার খেতে হবে।শুভ্রতা পায়ে হাটা দিলে মাথা ঘুরিয়ে ওঠে শিশির তখন গাড়ি নিয়ে গ্রসারির সামনে আসতেই শুভ্রতা ওর গাড়ির উপরেই পরে যায় সেন্সলেস হয়ে।শুভ্রতাকে এভাবে পরে যেতে দেখে মুন চিৎকার দিয়ে বলে,

মুনঃওহ মাই গড! ভাইয়া দেখ একটা মেয়ে গাড়ির উপরে পরে আছে।

মুন আর শিশির তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বের হয়ে শুভ্রতার কাছে গেলো।মুন গিয়ে শুভ্রতাকে উঠিয়ে ওর মাথা কাধে রাখলো।শুভ্রতার গায়ে হাত দিতে চমকে যায় মুন।শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
মুনঃভাইয়া মেয়েটার গায়ে অনেক জ্বর।এই জন্য মনে হয় সেন্সলেস হয়ে গেছে।ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।
শিশিরঃহুম।
শিশির শুভ্রতাকে কোলে তুলে নিলো।শিশির শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো।কালো চেহারা হলেও মেয়েটার মুখে একটা মায়া আছে।ঘুমন্ত অবস্থায় খুব সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।শিশির নিজেকে ধমক দিলো,

শিশির মেয়েটা অসুস্থ আর তুই এসব কি চিন্তা করছিস।

শিশির শুভ্রতাকে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দিলো।মুন সিটে বসে শুভ্রতার মাথা নিজের কোলের উপর রাখলো।তারপর শিশির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

হাসপাতাল কাছেই থাকায় কিচ্ছুখনের মাঝের শিশির হাসপাতালে এসে পৌছালো।শিশির গাড়ি থেকে বের হয়ে শুভ্রতাকে আবার কোলে তুলে নিলো।তারপর হাসপাতালের ভিতরর ডুকলো।শিশির হাসপাতালে ডুকে ডাক্তার কে খুজলো একজন নার্স গিয়ে ডাক্তার কে ডেকে আনলো।ডাক্তার আসার পর শুভ্রতাকে কেবিনে নিয়ে গেলো।ডাক্তার শুভ্রতাকে চেক করতে লাগলো।শিশির আর মুন তখন কেবিনের বাহিরে দাঁড়ানো।মুন শিশিরের কাছে এসে বললো,

মুনঃভাইয়া আমাদের মেয়েটার বাড়ির লোকেদের খবর দেওয়া উচিত।
শিশিরঃহুম মেয়েটার পার্স আছেনা ওখানে দেখ মোবাইল আছে কিনা সেখানে ওর বাড়ির লোকের নাম্বার থাকবে।
মুন ভাইয়ের কথা মতো শুভ্রতার পার্স ব্যাগ খুলে একটা ফোন পেলো।ডায়াল নাম্বারে গিয়েই প্রথমে লেখা মেঝ মামা সেই নাম্বারেই কল লাগালো।কিছুক্ষন রিং হবার পর ফোন রিসিভ হলো।

মুনঃহ্যা আসসালামু আলাইকুম।
সজিব আহমেদঃওয়ালাইকুমুস সালাম কে বলছেন।
মুনঃজি আপনি আমাকে চিনবেন না আমি যার মোবাইল থেকে কল করেছি সে কিছুক্ষন আগে আমাদের গাড়ির উপরে অজ্ঞান হয়ে পরেগেছে।আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসছি আপনারা যদি আসতেন ভালো হতো।
সজিব আহমেদ ফোনের স্ক্রিনের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে শুভ্রতার নাম্বার থেকে কল এসেছে।কল সে না দেখেই রিসিভ করায় প্রথমে খেয়াল করেনি।সজিব আহমেদ আবার ফোন কানে দিয়ে বললেন,

সজিবঃজি কোন হাসপাতালে আছে শুভ্রতা?
মুনঃএইতো আদ্বীন হাসপাতালে।
সজিবঃজি আমি আসছি।

সজিব অফিসের বসের থেকে কিছু সময়ের ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পরলেন।শুভ্রতাকে সে মোটেও অপছন্দ করেনা।কিন্তু স্ত্রীর ভয়ে কিছু বলেও না।তার স্ত্রী মেয়েটার উপর যখন অত্যাচার করে তার খারাপ লাগে।কিন্তু সে কিছুই করতে পারেনা।আগে প্রতিবাদ করলেও এখন তার স্ত্রী তাকে ধমক মেরে চুপ করিয়ে দেন।

শিশিরঃআসছে কেউ?
মুনঃহ্যা শুভ্রতার বাড়ির লোক আসছে।
শিশিরঃশুভ্রতা?
মুনঃআরে এই মেয়েটার নাম শুভ্রতা।
শিশিরঃঅহ আচ্ছা।

কিছুক্ষন পর ডাক্তার আসলেন।শিশির শুভ্রতার অবস্থা জানতে চাইলে।ডাক্তার জানান যে শুভ্রতা প্রচুর দূর্বল হয়তো খাওয়া দাওয়া করেনা ঠিক মতো।আর জ্বরের কারনে আরো ও দূর্বল হয়েগেছে।ঘুমের মেডিসিন দিয়েছে এখন শুভ্রতা ঘুমাচ্ছে।ডাক্তার চলে যায় মুন যায় শুভ্রতার কাছে।শিশির ফোনে ওর কলিগকে কল করে জানায় আজ আসতে দেরি হবে।সে একটু হাসপাতালে আসছে।শিশির কল কেটে ভিতরে গেলো।শুভ্রতাকে সেলাইন দেওয়া হয়েছে।শরীর দূর্বল বলে।একটু পর সজিব সাহেব সেখানে আসলেন।হাসপাতালের রিসিপশোন থেকে শুভ্রতার কেবিনের নাম্নার জেনে সেই রুমে গেলেন।

#চলবে
ভুল ত্রুটি মাফ করবেন🙏।