হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব-০২

0
670

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২
প্রিয়া যখন জানতে পারলো, বাসের ওই ছেলেটা ওর ভার্সিটির ও ডিপার্টমেন্টের নতুন স্যার তখন ওর অজ্ঞান হবার দশা। কিছুতেই মানতে পারছে না সে। শীতের মধ্যেও সে ঘেমে উঠছে। মা*থার ভিতরে ভনভন করছে। প্রিয়ার বান্ধুবী নিশি ওকে হাত দিয়ে ডেকে বলে,

“কীরে? কই হারালি? জারিফ স্যার কিন্তু অনেক কিউট। তাই না?”

“হু!”

নিশি প্রিয়ার অন্যমনস্ক জবাবে ওকে আবারও ঠে*লা দিয়ে বলল,
“কীসের হু? তুই না কালকে পর্যন্ত খুব এক্সাইটেড ছিলি স্যারকে দেখবি বলে? হি ইজ সো হ্যান্ডসাম! জাস্ট লুক এট হিম বেব।”

নিশি কথাটা বলে হা করে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া বিষন্ন মুখে গালে হাত দিয়ে ক্লাসে স্যারের দিকে তাকালো। স্যার তখন কম্পিউটারে নিজের মেইল আইডি লগইন সম্পর্কিত ঝামেলা ঠিক করছিল। প্রিয়া জানতো যে তাদের ডিপার্টমেন্টে এক নতুন স্যার আসবে। গতকালই হোয়াটসএপ গ্রুপে তা জানতে পেরেছিল। নতুন স্যারের ছবি ছাড়া অন্যান্য কিছু তথ্য প্রিয়ার জানা ছিল। কিন্তু ওর মনে ঘুণাক্ষরেও আসেনি যে বাসে তার পাশে বসা নার্ভাস ও বিরক্তিকর ছেলেটা নতুন স্যার হতে পারে। শুনেছে, নতুন স্যার নাকি কানাডা থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে এসেছে। উনার মতো কোয়ালিফাইড স্যারের চেহারাতে নিশ্চয়ই একটা ভাব থাকার কথা! আচ্ছা ছিল কী? প্রিয়ার মনে প্রশ্নের সঞ্চার হয়। মুখ ভার করে বসে থাকে প্রিয়া।
_______________

ফ্ল্যাশব্যাক,
প্রিয়া যখন ক্যান্টিনে বাসের ছেলেটাকে দেখার পরই নিশি, মিম, অর্ষা, সাদ, আয়ান, রিক, রাদ ওদের দেখাতে যায় তখন ওদের সামনের দিকে তাকাতে বলে দেখে ছেলেটা সামনে নেই। প্রিয়া আশেপাশে খুঁজেও তখন ছেলেটাকে পায়নি তারপর দেখে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে তারপর সেদিকে দেখাতে নিলে সেটাও দেখাতে পারে না। প্রিয়ার তখন মনঃক্ষুণ্ণ হয়। প্রিয়া তখন ভাবছিল, ‘যদি ছেলেটা কোনো সিনিয়র হয়? তাহলে কী র‍্যাগ ট্যাগ দিবে?’ মনের দুঃখে আবারও পানি খেতে গেলে বিদঘুটে স্বাদের কারণে পানি মুখ থেকে ফেলে দিয়ে ফ্লাস্কটা ভালো করে ধৌত করতে ভেসিনের কাছে যায়। ভেসিনের কাছেই খাবার পানির কল আছে। সেখান থেকে পানি নিয়ে আসে।

নাস্তার পর ওরা ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করে সাথে নতুন স্যার সম্পর্কে বিশদ আলোচোনাও করে। অর্ষার সকালে ক্লাস ছিল তবে সে ঠিক টাইমে আসতে পারেনি। এসেছিল আধঘণ্টা পর তাই আর ক্লাসে যায়নি। অর্ষা নতুন স্যারকে দেখেছে বলে সেগুলোই বলছে। তারপর ওরা ক্লাসে যায় আর সেই ক্লাসটা নতুন স্যার নিবে বলে সবাই খুব এক্সাইটেড।
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড,
_______________

এবার জারিফ নিজের কাজ শেষ করে সকল স্টুডেন্টের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে। ক্লাসে এসেই সবার উদ্দেশ্যে সালাম ও ‘গুড মর্নিং’ বলে সাথে সকলে কেমন আছে জেনে সে যে নতুন লেকচারার তা জানিয়ে নিজের মেইল আইডি লগইন করতে লেগে পরে। এখন সকলের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।

প্রিয়া এদিকে নিজের শালটাকে উল্টো করে জড়িয়ে মুখে মাক্স পরে নেয়। ওর শালটার এক পাশ লাল আরেকপাশ কালো। দুই সাইডই ব্যবহার করা যায়। পুরো ক্লাসে কারও মুখে মাক্স নেই শুধু প্রিয়া ছাড়া। জারিফ সবাইকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলে,

“আমার নাম ইতোমধ্যে আপনারা জেনে গেছেন নিশ্চয়ই! তাও আরেকবার বলছি। মাইসেল্ফ জারিফ আহমেদ। আমি ‘ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া’ থেকে অনার্স, মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি বাট আমার পিএইচডি করার ইচ্ছে এখন নেই। পিএইচডি করলে আরো তিন বছর সময় যেত কিন্তু আমার পারিবারিক কারণে আমি দেশে ফেরত এসেছি। পরে না হয় আবার যাবো। এই তো এখন আপনাদের সামনে। আপনাদের নিউ লেকচারার হিসেবে। আর কিছু জানার আছে আমার সম্পর্কে?”

সবাই মাথা নাড়িয়ে না জানায়। জারিফ তা দেখে হেসে বলে,

“কিন্তু আমার জানা আছে। আপনাদের সাথে এটাই আমার ফার্স্ট ক্লাস এমনকি আমার এই ভার্সিটিতে ফার্স্ট ক্লাস নেওয়া। সকালে মিটিং ছিল সিনিয়রদের সাথে। যেহেতু এটাই আমার লেকচারার লাইফের ফার্স্ট ক্লাস তাই আপনাদের পরিচয় জানার আছে। আপনারা সকলে আপনাদের নাম-ঠিকানা, স্কুল এন্ড কলেজ এটুকু বলবেন। কাউকে দাঁড়িয়ে বলতে হবেনা। নিজ নিজ সিটে বসেই বলবেন। সো লেটস স্টার্ট।”

স্টুডেন্টরা সকলে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে কেউ বসে কেউ দাঁড়িয়ে। এদিকে প্রিয়ার অবস্থা কাঁদো কাঁদো। তাকে চিনে ফেললে মহা ঝামেলা। ক্লাসে চল্লিশ জন স্টুডেন্ট। প্রিয়া তো আর লাস্টে বসেনি। সে তো সাইডের দিকে প্রায় ফার্স্টের দিকেই বসেছে। একে একে প্রিয়ার পরিচয় দেওয়ার সময় এলে প্রিয়া ভয়ে ঢোক গিলে অতঃপর ক্ষীণ স্বরে বলে,

“আমি প্রিয়া হাসান। আমার স্কুল কলেজ দুটোই সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। আমি ঢাকাতেই থাকি।”

জারিফ খানিকটা হেসে বলে,
“ওয়েল প্রিয়া, ক্যান ইউ ওপেন ইউর মাস্ক? ইফ ইউ হ্যাভ নো প্রবলেম সো দেন।”

প্রিয়ার এবার হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়েছে। বাসের ঘটনাটার জন্যই সে বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে। সামনে থেকে নিশি পেছোনে ঘুরে ফিসফিস করে বলে,

“কীরে? তুই আবার মাক্স পড়ছিস কেনো? মাক্স খোল।”

প্রিয়া নিশির মাথা সামনে ঘুরিয়ে দেয়। জারিফ প্রিয়ার হাবভাব দেখে বলল,

“ধর্মীয় দিক হলে সরি। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হার্ট। তবে আপনার গেটআপ দেখে মনে হচ্ছে না আপনি রিলিজিয়াস কারণে মাক্স পরেছেন।”

প্রিয়া চোখ-মুখ খিঁচে ফেলেছে। ওর চুলগুলো খোলা তাও একদম ছেড়ে রেখেছে। প্রিয়া ভাবতে শুরু করলো। হুট করে মস্তিষ্কে দারুন বুদ্ধি এলে হালকা কেশে বলে,

“একচুয়ালি স্যার আমার ফ্লু আছে। আমি চাইনা সবাই এফেক্টেড হোক।”

“ওহ। ইটস অকে। প্লিজ সিট ডাউন।”

প্রিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। মুখে মাক্স লাগিয়ে রাখতেও ওর বিরক্ত লাগছে। এমনিতে ঠান্ডার কারণে নাক বন্ধ এখন মাক্সের উপর দিয়ে শ্বাস নিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। পাশের সিট থেকে মিম বলে,

“তোর এতো চিন্তা আমাদের জন্য? কই সকালেও তো মাক্স ছাড়া ঘুরছিলি। হুট করে তোর মনে এতো দয়া-মায়ার উদয় হলো কী করে?

প্রিয়া চোক পাঁকিয়ে তাকায়। এবার পেছোন থেকে রাদও বলে,
“মনে হয় স্যারকে দেখে ওর সচেতনতা বেড়ে গেছে। স্যারের জন্য কেয়ার দেখাচ্ছে। আমরা তো আর কেউ না। স্যারের যাতে ক্ষতি না হয় সেটা লক্ষ্য রাখছে।”

প্রিয়া পেছোনে ঘুরে মাক্স নামিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

“কারন জানলে এসব বলতি না। আমি বাধ্য হয়েই মুখে মাক্স লাগিয়েছি। আসছে তার জন্য আমি কেয়ার দেখাবো! ক্লাসের পর বলতেছি।”

আবার মুখে মাক্স লাগিয়ে সামনের দিকে ঘুরে। দেড় ঘণ্টা শেষ। জারিফ ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেছে। এই রুমেই আবার ওদের ক্লাস। সাদকে ও রিককে পাঠিয়েছে ক্যান্টিন থেকে রোল, সিঙ্গারা, সমুচা, ডিমচপ, সবার জন্য নিয়ে আসতে। দশ মিনিট ব্রেক আছে। এবার নিশি জিজ্ঞেস করে,

“তোর কি হয়েছে সেটা বল? মাক্স পড়া ও ফ্লু এসব? তোরে তো ল্যাবেও মাক্স পড়তে দেখা যায় না।”

প্রিয়া এবার কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,

“আজকে সকালে বাসে স্যারের সাথে আমি বসেছিলাম। আমি স্যারকে মিন করে বিরক্তি প্রকাশ করেছি আর নামার সময়ও মিন করে বলেছি। আল্লাহ্ জানে স্যার কী না কী ভেবেছে। এই ভয়ে আমি মাক্স পরে নিয়েছি সাথে দেখ শালটাকেও উলটে নিয়েছি।”

প্রিয়ার দুঃখী দুঃখী কন্ঠে কেউ একটু ছিঁটেফোঁটাও দুঃখ পেলো না। ওরা সবাই সমস্বরে হেসে উঠলো। প্রিয়া ওদের হাসি দেখে বোকার মতো তাকালো। তারপর ভ্রুকুটি করে বলল,

“তোরা হাসছিস? কেমন নির্দয় তোরা? আমি কীভাবে রক্ষা পাবো সেটা না বলে তোর হাসছিস! কেমন হা*রামি তোরা!”

অর্ষা চোখ মুখে রাজ্যের বিস্ময় এনে বলল,

“এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তোর পাশে বসেছে আর তুই কিনা! এতো ব*ল*দ কেন তুই?”

প্রিয়া ওদের প্রতি বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে উঠে অন্যত্র গিয়ে বসে। ওরা শুধু স্যারের গুণগানই গাচ্ছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্,
কাল্পনিক গল্প। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।