হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব-০৮

0
488

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
প্রিয়ম ফোনটা হাতে নিতেই আবারও জারিফের কল এলো। কল রিসিভ করলে জারিফ অপর প্রান্ত থেকে বলছে,

“মা-বাবা ও ভাবি নাকি কাল তোদের বাড়ি গিয়ে তোর বোনকে পছন্দ করে এসেছে। জানিস তুই?”

“হ্যাঁ। বাবা খাবারের টেবিলে বলল। অবাক হয়ে গেছি আমি। কী থেকে কী হলো!”

জারিফ চিন্তিত সুরে বলল,
“মা যে হুট করে এমন করবে ভাবনায়ও আসেনি। কী করব এখন?”

প্রিয়ম জারিফের কথার ধাঁচ না বুঝে জিজ্ঞেস করে,
“তোর অন্যকাউকে পছন্দ আছে? থাকলে মানা করে দে। আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড বলে যে তোকে বাধ্য হতে হবে এর কোনো কারণ নেই।”

জারিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আরে না। আমার কারও সাথে এসব প্রেমঘটিত সম্পর্ক নেই। না কানাডা যাওয়ার আগে ছিল আর না এখন আছে। ভাবি আমার ফোনে তোর বোনের ছবি দিয়েছে। এখনও দেখিনি কিন্তু তোর বোন নাকি আমাকে দেখতে চায় না। আমাকে তার পছন্দ না হলে তো পরে আফসোস করবে।”

“আমি এখনও ওকে জিজ্ঞেস করিনি। বাবা বলেছে তোকে কাল বাড়িতে নিয়ে আসতে। তোর যদি বিয়েতে অমত থাকে তাহলে বিনাসংকোচে মানা কর।”

“ভেবে দেখি।”

জারিফ ফোন রেখে ভাবির দেওয়া ছবিটা দেখছে। মেয়েটাকে তার ভালোই লেগেছে। আর বেস্টফ্রেন্ডের বোন। জারিফ তার মাকে গিয়ে জানায়,

“তোমাদের যদি ফারদার ভালো লাগে তবে আগাও। আমার অপছন্দ হয়নি।”

জারিফের মা বেজায় খুশি। সে খুশি হয়ে ছেলের কপালে চুমু দেন আর বলেন,

“তবে সামনের শুক্রবার গিয়ে তোকে নিয়ে দেখে আংটি পড়িয়ে আকদ করে আসব।”

জারিফ “আচ্ছা” বলে চলে যায়। প্রিয়ার ছবি দেখেও জারিফ চিনতে পারেনি কারণ জারিফ সেদিন বাসে বসা মেয়েটার চেহারা ভালো করে লক্ষ্য করেনি। আর ছবিতে দেখলেও অনেক সময় চেনা মানুষকেও চেনা যায় না।

_____________

প্রিয়ারা সকালের ক্লাসটা করে ক্যাম্পাসে বসেছে। নিশি আজ পুডিং বানিয়ে এনেছে তা নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেছে কিন্তু প্রিয়া পুডিং অতোটা পছন্দ করে না। সর্বোচ্চ ছোটো এক পিস খেতে পারে কিন্তু আজ খেতে ইচ্ছেই করছে না। নিশি প্রিয়াকে কয়েকবার খাওয়ার জন্য বলেও লাভ হয়নি। প্রিয়া আনমনে কিছু একটা চিন্তা করছে। মিম ওকে ডেকে বলে,

“কীরে তুই কই হারালি?”

হকচকিয়ে উঠে প্রিয়া। আমতা আমতা করে বলে,
“কই? কোথাও নাতো!”

সাদ রম্য স্বরে বলে,
“মনে হয় জামাইয়ের দুঃখে বান্ধুবী আমার বৈরাগী হয়েছে।”

পুরো বন্ধুমহল হেসে উঠলো। অর্ষা উদাসী কন্ঠে বলে,
“কবে যে একটা জামাই হবে? আর কবে তার পকেট ফাঁকা করব! এই চিন্তায় আমি দিনরাত ঘুমাতে পারিনা কিন্তু তোর কী হলো রে প্রিয়া? তুই তো আমার মতো বিয়ে পা*গলী না।”

প্রিয়া ভাবলেশহীন কন্ঠে বলে,
“বিয়ে পা*গলী নই বলেই তো আমার বিয়েই আগে ঠিক!”

সবাই গোল গোল চোখ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া ওদের চাহনি দেখে লম্বাশ্বাস নিয়ে বলে,

“তোরা ঠিকই শুনছিস। পরশু ভাইয়ার বন্ধুর পরিবার এসে দেখে গেছে। তোদের জানাতে পারিনি কারণ তখন আমি বুঝতে পারছিলাম না। রাতে ভাইয়া এসেছিল তার বন্ধুর ছবি দেখাতে কিন্তু রাহা আমাকে দেখতে দিলো না। রাহার ভাষ্যমতে, রাহার যদি পছন্দ হয় তবে বিয়ে হবে কারণ রাহার ও আমার সব ক্রা*শ সেম! এদিকে ভাইয়ার বন্ধু রাহার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আর ছেলের বড়োভাইকে দেখেছি। রাহা বলল, ছেলে তার বড়ো ভাইয়ের থেকেও সুদর্শন। ছেলের ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো। ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড তো।”

হতবাক কন্ঠে মিম বলল,
“তো তুই দেখবি না?”

“না। আমার বিয়েতে আপত্তি নেই আর রাহার পছন্দেও না। রাহার কথামতো সত্যি একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। ছেলেকে না দেখে আজকাল কেউ বিয়ে করেনা কিন্তু আমি করব।”

সবাই প্রিয়াকে অভিনন্দন জানাচ্ছে আর হেসে হেসে কথা ও পিঞ্চ তো আছেই। কিন্তু একজনের মনে আষাঢ়ের কালোমেঘে ছেয়ে গেছে। রাতের অমানিশায় আচ্ছন্ন তার হৃদয় অন্তরিক্ষ। সেই কেউটা আয়ান। ভার্সিটির ফার্স্ট দিন থেকে প্রিয়ার প্রতি নিজের মনে দুর্বলতা অনুভব করে সে কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে সে সব চেপে গেছে কারণ প্রিয়া জীবনে রিলেশনশিপ নামক প্যারা নিতে চায় না। আয়ান প্রিয়ার মুখশ্রীতে এক আলাদা ভয়, এক্সাইটমেন্ট ও লাজুকতা দেখল। হৃদয়ের র*ক্তক্ষরণ সে আর কাউকে বোঝাতে পারবে না। সাদ ও রাদ আয়ানের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে। আয়ানের পাণ্ডুর মুখশ্রী তাদেরকে হৃদয়ের ভাঙন বুঝাচ্ছে। আয়ান ওদের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক মলিন হাসে। ওরাও বিনিময়ে হেসে আয়ানকে টেনে দূরে নিয়ে গিয়ে রাদ হড়বড়িয়ে বলে,

“তুই বললি না কেনো? তুই তো প্রিয়াকে ভালোবাসিস।”

“নারে। আমার বাড়িতেও এখন বিয়ে মানবে না আর প্রিয়া আমাকে বন্ধু ছাড়া অন্যকিছু ভাবে না। ওর চোখে-মুখে তোরা লাজুকতা দেখেছিস? ও সবসময় এরেঞ্জ ম্যারেজ প্রিফার করতো। নাহলে বল? ছেলের ছবি না দেখেও কতোটা লাজুক আভা ওর মুখাবয়বে।”

সাদ আয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“সহ্য করতে পারবি? আমাদের ভার্সিটি লাইফ কিন্তু সবে শুরু। আরও সাড়ে তিন বছর প্রিয়া তোর চোখের সামনে ঘুরবে। সে খুশিও থাকবে। পারবি সহ্য করতে?”

আয়ান মলিন হেসে বলে,
“পারব। আমি অতোটা এক্সপ্রেসিভ না। যদি হতাম তবে প্রিয়া বুঝতো। আশাকরি তোরাও এই ব্যাপারে আর কথা বাড়াবি না। আমি ভেবেছিলাম প্রিয়ার পরিবার ওকে অনার্সের পর বিয়ে দিবে। আমি এখানে দুই বছর পড়ার পর ক্রেডিট ট্রান্সফার করে এব্রোডে চলে যাবো। আমার রেজাল্ট ভালোই। সবই হবে প্রিয়াকে ছাড়া।”

বিষণ্ণতা ও খুশি দুইটাই ছোঁয়াচে। একজনের থেকে অন্যজনে বহন করে। প্রিয়ার লুকানো খুশিতে যেমন নিশি, মিম, অর্ষা খুশি তেমনিভাবে আয়ানের বিষন্নতায় সাদ, রাদ বিষন্ন।

________
জারিফ ক্লাসে এসে পড়ানো শুরু করেছে। খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে পড়াচ্ছে। পড়াতে পড়াতে স্টুডেন্টদের দিকে নজর যাবেই। সবাইকে বোর্ডের লেখাটা লিখতে বলে হঠাৎ নজর গেলো কর্নারের সারির চার নম্বর চেয়ারে। মেয়েটার চেহারা পরিচিত লাগছে কিছুটা। এই ক্লাসের স্টুডেন্ট যেহেতু পরিচিত হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু ক্লাসে দেখেছে বলে মনে পরছে না। প্রিয়া খাতায় লিখতে লিখতে জারিফের দিকে তাকালে ভয় পেয়ে যায়। জারিফ সরু দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে তাকানো। প্রিয়া আজ মাস্ক পরেনি। ভেবেছে সপ্তাহখানেকের মধ্যে নিশ্চয়ই জারিফ বাসের ঘটনাটা ভুলে যাবে। এখন জারিফের চাহনি দেখে প্রিয়া কাশি আসার ভান করে ব্যাগ থেকে দ্রুত মাস্ক বের করে পরে নেয়। জারিফও প্রিয়ার অস্থিরতা ও অপ্রস্তুত হতে দেখে নজর সরিয়ে আবার বোর্ডে মনোযোগ দেয়।

প্রিয়া এরপর এটেন্ডেন্সের সময়ও কোনোমতে এটেন্ডেন্স দিয়ে বাঁচে। জারিফ প্রিয়ার নামটা মনে রাখে। জারিফ ক্লাস থেকে বের হয়ে যাবার পর প্রিয়া বলে,

“ধুর! কী হলো এটা!”

নিশি বলে,
“কী হলো?”

“আমি তো ভেবেছি এক সপ্তাহের মধ্যে বেটা ভুলে যাবে কিন্তু এখন দেখি সে সরু নজরে আমার দিকে দেখছিল। কেমন সন্দেহের দৃষ্টি ছিল স্যারের।”

মিম হাই তুলতে তুলতে বলে,
“সে কী এমনে এমনে টিচার হইছে? তাদের চোখ-কান সর্বদা খোলাই থাকে। যেহেতু সে তোকে কিছু বলেনি তাই নিশ্চিন্তে থাক। কিচ্ছু হবে না। সেও বুঝবে যে তুই না জেনে করেছিস।”

প্রিয়া চুপ করে বসে রইল। চিন্তা তার কিছুটা হলেও হচ্ছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,