হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো পর্ব-১০+১১

0
170

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১০

রাতের আকাশটাকে কালো গালিচার মতো লাগছে।বিশাল জায়গা জুড়ে নিজেকে মেলে ধরেছে।সুবিশাল আকাশটাতে কয়েকটা তাঁরা মিটমিট করছে।তারকাদের উজ্জ্বলতায় বুঝার দায় নেই আজ অমাবস্যা।শীতল সমীরণ এদিক সেদিক গন্তব্যহীন ছুটছে।গাছের পাতাগুলোকে নিজ দাপটে নড়াচড়া করাচ্ছে।নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে পাশাপাশি ছাঁদের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন মানব-মানবী।শীতল সমীরণ ছুঁয়ে দিচ্ছে দু’জনকেই।মানবীর শাড়ীর আঁচলটা,খোলা চুলগুলো বাতাসের সাথে উড়ছে।আঁচল ধরে রাখার কোনো স্পৃহা মানবীর মধ্যে নেই।দুনিয়ার কোনো বিষয়ই তাকে এখন আর ভাবায় না।তার হৃদয় স্পর্শ করতে পারে না।এ হৃদয় একজন খুব যত্ন করে নিজের অজান্তেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে।

পাশে দাঁড়ানো মানবের মুখেও কথা নেই।সে হয়তো নিজের মধ্যে কথা সাজাচ্ছে।কথাদের হিসেব-নিকেশে ব্যস্ত সে।হয়তোবা বুঝে উঠতে পারছে না কি বলা যায়!

মানব-মানবী দু’জনই যেনো নিরবতার খেলা খেলতে ব্যস্ত।কোনো একজন কথা বললেই অপরজন জিতে যাবে।তাই যেনো উভয়ই মুখে কুলুপ এঁটেছেন।কথা না বলার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।তবে বেশিক্ষণ এই প্রতিযোগিতা চললো না।হেরে গেলেন মানবী নিজেই।নিরবতা ভাঙ্গলেন।
ধরা গলায় বললেন,

“আপনি এখানে কেনো স্যার?আপনার তো এখন রাইমা আপুর সাথে থাকার কথা,সুখের খেলায় মেতে উঠার কথা।যতই হোক আজ আপনাদের ফুলশয্যা।প্রত্যেকটা মেয়েরই এই দিনটা নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে!”

প্রতিজ্ঞার প্রথম কথাগুলো সংকল্প এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিলো।সে জানে মেয়েটা এখন নিজের মধ্যে নেই।ঐ আকাশের পানে চেয়ে সংকল্প বললো,
“তোমারও ছিলো নাকি?”

প্রতিজ্ঞা তাচ্ছিল্যের হাসি হাঁসলো।চেহারায় মলিনতা স্পষ্ট।উল্টোদিকে ফিরে বললো,
“ছিলো!একটা মানুষকে ঘিরে অনেক অনেক স্বপ্ন-শখ-আহ্লাদ-ইচ্ছে ছিলো।কিন্তু আজ সব শখ-আহ্লাদ বৃথা।আমার সকল অপেক্ষা বৃথা।”

সংকল্প যেনো চাইলো প্রতিজ্ঞার দিকে।প্রতিজ্ঞা হুট করে সংকল্পের দিকে ফিরলো।নাহ!সংকল্প তাকায়নি।সে তো ঐ দূরের আকাশ দেখতে মত্ত।
প্রতিজ্ঞা সংকল্পে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।ধরা গলায় বললো,
“আমায় কেনো ভালোবাসলেন না,সংকল্প?”

শব্দের দল কর্ণগোচর হতেই সংকল্প ফিরলো।ঐ গভীর চোখগুলায় চোখ নিবদ্ধ করতে গিয়েও করলো না।দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“ভালোবাসা প্রকাশ করো নি তুমি!”

অধর প্রসারিত করলো প্রতিজ্ঞা।চেহারায় অসহায়ত্ব।থেমে থেমে বললো,
“অপেক্ষায় ছিলাম আসেননি। মিস করছিলাম বুঝেননি। আপনজন ভেবেছিলাম মানেন নি। দুঃখের ভাগ নিতে চেয়েছিলাম শেয়ার করেন নি।আপনি রাগী সেটা জানতাম, কিন্তু নিষ্ঠুর সেটা বুঝিনি।ভালোবাসা প্রকাশ করার আগেই অন্যের হয়ে যাবেন,ভাবতে পারি নি।

সংকল্প ধীরে ধীরে বললো,
“একদিন সময় সব ঠিক করে দিবে।সুদিন আসবে।”

“হাহ!সুদিন আসবে কিন্তু এসে দেখবে আমি আর নাই।কর্পূরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছি।”

বুকে তীব্র ব্যাথা সংগোপনে ঢেকে রেখে স্বাভাবিক গলায় সংকল্প বললো,
“নিজেকে সামলাও।সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

প্রতিজ্ঞা শব্দ করে হেঁসে উঠলো।পুরোটা ছাঁদ যেনো তার হাসির শব্দে ঝনঝনিয়ে উঠলো।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“সময়,সময়,সময়!এই সময়ই তো আমার থেকে আমার প্রাণপুরুষকে কেঁড়ে নিলো।”

“প্রাণপুরুষ” শব্দটা তড়িৎ গতিতে সংকল্পের বুকে গিয়ে লাগলো।যেনো ইলেকট্রিক শক্ খেলো মাত্র।”প্রাণপুরুষ”!একবার,দুইবার,তিনবার একে একে দশবার শব্দটা আওড়ালো সংকল্প।হৃদয়ের কতটা মাধুরি মিশিয়ে ভালোবাসলে একটা মানুষকে প্রাণপুরুষ বলে সম্বোধন করা যায়!সে কারো “প্রাণপুরুষ”, প্রাণের পুরুষ।কিন্তু নিয়তিতে অন্য কিছুই ছিলো বটে।

মলিন কন্ঠে বললো,
” সময় যেমন সব কেঁড়ে নিয়েছে,একদিন এই সময়ই তোমাকে সব ফিরিয়ে দিবে।দেখো,এমনভাবে ফিরিয়ে দিবে যা তুমি কল্পনাও করতে পারছো না।”

প্রতিজ্ঞা কিছু বললো না।কিছু সময় চুপ করে রইল।সংকল্পও যেনো এই নিরবতাকে সমর্থন করলো।

প্রতিজ্ঞার ভেতর থেকে আহাজারি বেরিয়ে আসতে চাইছে।চোখদুটো থেকে জল গড়িয়ে পরছে।সামনে প্রাণপুরুষকে দেখে তার বুকে হামলে পড়তে ইচ্ছে করছে।তাকে জাপটে ধরে শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।সকল অভিযোগ, অভিমান,দুঃখ-কষ্ট ভেতর থেকে উগড়ে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু সে কাছে গেলো না। দূর থেকেই উগড়ে দিতে লাগলো,

“আপনাকে পেয়ে গেলে হয়তো জীবন রূপকথার মতো সুন্দর হতো,কিন্তু আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি তা আপনার জানা হতো না।”

সংকল্প শুনলো,চোখ বুঁজে ভেতরের কষ্টগুলোকে গলাচাপা দিলো।গম্ভীর কন্ঠ বললো,
“এতোদিন যখন প্রকাশ করো নি, এখন সময় হারিয়ে আর প্রকাশ করো না,মেয়ে।আমার ভীষণ কষ্ট হবে যে।আমি যে এখন তোমার জন্য নিষিদ্ধ।”

“নিষিদ্ধ” এই শব্দটাই যেনো প্রয়োজন ছিলো প্রতিজ্ঞাকে উত্তেজিত করে দেওয়ার।
সে অস্থির চিত্তে বলতে শুরু করে,

“হ্যাঁ করিনি!সময়ের অপেক্ষা করছিলাম।প্রথম যখন বুঝতে পারি আমি আপনাকে ভালোবাসি,তখন আপনি কানাডায় ফিরে গিয়েছেন!কিভাবে জানাতাম?
ভার্সিটিতে কত কত স্টুডেন্ট টিচারদের প্রপোজ করে,আপনাকেও করেছে।আমি চাই নি আমি তাদের কাতারে পরি।আমার ব্যক্তিত্বের সাথে ঐগুলা যায় না।কিন্তু ভালোবাসাও অস্বীকার করতে পারতাম না।
একজনকে ভালোবেসে এক কঠিন ব্যক্তিত্বের অষ্টাদশী আজ দিশেহারা এক ভঙ্গুর নারী।”

সংকল্প চুপ করে রইলো।শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না সে।প্রতিজ্ঞা দু’কদম এগিয়ে গেলো।শান্ত গলায় বললো,

“জানেন তো!আমরা মানুষ, স্বভাবতই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমাদের ঝোঁক বেশি থাকে।আমার স্বভাবও তার ব্যতিক্রম নয়।আপনার প্রতি আমার ঝোঁক যে কমার নয়।বরং দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।”

সংকল্প চোখ মেলে প্রতিজ্ঞার পানে তাকালো।মেয়েটার মলিন দৃষ্টি, চেহারায় না পাওয়ার কষ্টের ছাপ,সংকল্পকে ভেতর থেকে পু*ড়াচ্ছে,বড্ড পু*ড়াচ্ছে।ইচ্ছে করছে,জাপটে ধরতে মেয়েটাকে।বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে যেনো পৃথিবীর কোনো শক্তি ছাড়াতে না পারে।তার বুকে মাথা রেখে মেয়েটা আহাজারি করুক, উগড়ে দিক বুকের ভেতরে জমানো সকল অপেক্ষা,সকল দুঃখ।নিমিষেই দূর হয়ে যাক সকল দুঃখ-কষ্ট।কিন্তু সংকল্প কিছুই করতে পারছে না।তার হাত-পা বাঁধা।তার কাছে এখন চুপ করে থাকাই শ্রেয়।হয়তোবা মেয়েটা এভাবেই কিছু বলে শান্তি পাক।সে নাহয় শ্রোতা হিসেবেই মেয়েটার দুঃখ-কষ্ট একটু কমাক।

প্রতিজ্ঞা সংকল্পের দিকে আরো দু’কদম এগিয়ে ডান হাত বাড়াতে বাড়াতে করুণ স্বরে বললো,
“আপনাকে একটু ছুঁই? ওপপস,না না আপনি তো পরপুরুষ। পরপুরুষকে ভালোবেসে যে ভুল করেছি,তাকে ছুঁয়ে সে ভুূলের পরিমাণ আমি বাড়াতে চাই না।”

বলে হাত নামিয়ে ফেলে প্রতিজ্ঞা।সংকল্পকে স্পর্শ করা হয় না আর।সংকল্পের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।মেয়েটার প্রতিটা কথা তার ভেতরের কষ্টগুলোর জানান দিচ্ছে।তার প্রতিটা বাক্য যেনো বি*ষবাক্য, তীরের মতো বুকে বিঁধছে।

প্রতিজ্ঞা পিছিয়ে গেলো।নিজের আগের জায়গাটায় দাঁড়ালো।আকাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“যে পুরুষকে শুধু ভালোবেসে প্রতি পদে পদে মৃত্যুসম শাস্তি ভোগ করছি,না জানি সেই পুরুষের স্পর্শ কত বি*ষাক্ত!”

প্রতিজ্ঞার প্রতিটা কথা সংকল্পের গায়ে কাঁটার মতো বিধছে।এই মেয়েটা কি জানে তার কথাগুলো কতটা পীড়াদায়ক!
সংকল্প প্রসঙ্গ পরিবর্তনে উদ্যত হলো।সে নিতে পারছে না এসব। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
“অনেক রাত হয়েছে।ঘরে যাও!”

প্রতিজ্ঞা চমৎকার হাসলো।বললো,
“কষ্ট লাগছে?খারাপ লাগছে?তাহলে বুঝে নিন আমার কেমন লাগছে!
আপনি আমার না হয়েও আমাকে রোজ পু*ড়িয়েছেন, সংকল্প।ভিতরটা জ্ব*লছে,বড্ড জ্ব*লছে।হৃদয়টা যেনো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।”

সংকল্প চোখ বুজে সব শুনছে,সহ্য করছে।আর কি-ই বা করার আছে!মন তো অঘটন ঘটাতে চাচ্ছে।সামনের মেয়েটাকে নিয়ে ছুট্টে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে।যেখানে কোনো বাঁধা থাকবে না,চেনা-জানা মানুষ থাকবে না।শুধু তারা দু’জন থাকবে।সুখে থাকবে,ভালো থাকবে।কিন্তু তা অসম্ভব।
ভাবনার মাঝেই ঐ ভঙ্গুর নারীর চিকন কন্ঠের বাক্য ভেসে এলো।

“আমার হৃদয়ে আপনার বসবাস ছিলো সংকল্প,আর সে বাসস্থান আজ ধ্বংসস্তূপ বৈ কিছুই নয়!

আপনি আমাকে ভালো না বেসেও কি নিখুঁতভাবে আমাকে ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে দিলেন!আপনার কাজকর্ম আপনার মতোই প্রশংসনীয়।”

সংকল্প আঁতকে উঠলো।নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো আদৌও কি কাউকে ভালো না বেসে তাকে ভাঙ্গা যায়!কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর সে পেলো না।ধরে নিলো,যায় হয়তো!কিছু বলবে তার আগেই প্রতিজ্ঞা বাঁধা দিলো।নিজেই বললো,

“আরো অনেক কিছু বলার ছিলো সংকল্প,কিন্তু সময় ফুরিয়ে যাবে আপনাকে নিয়ে আমার কথা ফুরোবে না।

আপনি নাহয় আমার অব্যক্ত কথাগুলি অনুভব করে নিয়েন,আমার প্রতিটা অব্যক্ত কথা আপনাকে জানান দিবে আমি আপনাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি!”

বলে আর একমুহূর্তও ছাঁদে দাঁড়ালো না মেয়েটি।দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।মেয়েটা কাঁদছে, কাঁদুক। কাঁদলে কষ্ট হালকা হয়।কিন্তু সংকল্প ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো।আবারো জীবনের হিসেব কষা শুরু করলো।মনে যেমন অনেক প্রশ্ন,তেমনি অনেক দোটানা।ছেলে মানুষের কাঁদতে নেই।তাই হয়তো সংকল্প কাঁদতে পারছে না।
সেই মুহুর্তে আহমেদ মেনশন ছেড়ে শো শো করে বেরিয়ে গেলো একটা সাদা গাড়ি।সংকল্প জানে গাড়িটা কার!একটু আগে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা রঙের শাড়ী পড়া মেয়েটার।ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।সংকল্প চেয়ে রইলো যতক্ষণ না গাড়িটা অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।সাথে সংকল্প এটাও টের পেলো তার গাল ভিজে এসেছে,চোখ বেয়ে নেমে আসা অশ্রুনামক কিছু জলবিন্দু গাল ভিজিয়ে দিচ্ছে……

খাটে হেলান দিয়ে মেঝেতে থম মে*রে বসে আছে প্রতিজ্ঞা।কতক্ষণ এভাবে বসে আছে জানা নেই।আসার পর থেকেই এখানে বসে আছে।খোলা চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে।মুখে কথা নেই,মনে ভাবনা নেই।সব যেনো ফুরিয়েছে।এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।কি দেখছে কে জানে!ফর্সা গালে অশ্রুর দাগ বসে গেছে।এখন চোখে জল নেই।হয়তো অশ্রুও ফুরিয়েছে,শুকিয়ে গেছে তার উৎস।ভেতরটা কেমন শূণ্য শূণ্য লাগছে।খা খা করছে বুকটা।হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো বুঝেই উঠতে পারলো না।সবটা স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে,একটা দুঃস্বপ্ন।খুব কি মন্দ হতো যদি আসলেই সবটা একটা স্বপ্ন হতো!খুব কি ক্ষতি হতো!

প্রতিজ্ঞা উল্টোদিকে ঘুরে খাটের উপর দু’হাত ভাজ করে তার উপর মাথা রাখে প্রতিজ্ঞা।তার অনেক অভিযোগ সৃষ্টিকর্তার কাছে।করুণ কন্ঠে বললো,
“আল্লাহ যেই স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে না,সেই স্বপ্ন নিয়েই কেনো সবসময় আমরা পরে থাকি।কেনো সেই অপূর্ণ থাকা স্বপ্নটা দেখি আমরা?এই অপূর্ণতা পো*ড়ায় আল্লাহ,বড্ড পো*ড়ায়।সহ্য করার মতো না।”

“অপূর্ণ স্বপ্নগুলো মৃত্যুসম দুঃখ দেয়।এরা গলায় কাটার মতো বিঁধে থাকে।মৃত্যুর আগে না কখনো গিলে ফেলা যায়,আর না কখনো উগড়ে ফেলা যায়।এরা প্রতি মুহুর্তে মনে করিয়ে দেয়, দেখো আমরা অপূর্ণ,আমরা আফসোস।”

ভালোবাসা তো কখনো বিশ্বাস করি নি।কিন্তু হুট করে ভালোবেসে ফেললাম।কেনো ভালোবাসলাম যদি অপূর্ণই থেকে যাবে?

কষ্ট হচ্ছে,বড্ড কষ্ট হচ্ছে।শোনো বিধাতা,এই ভালোবাসা নামক মরণ যন্ত্রণা সহ্য করা যায় না,এভাবে বেঁচে থাকা যায় না।
আমাকে সাহায্য করুন।আমার যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।বুকটা ফেটে যাচ্ছে।বারবার ঐ নতুন বর-বউয়ের ছবি মানসপটে ভেসে উঠছে।এভাবে বেঁচে থাকা যায় না, সত্যিই যায় না।
আমার অন্তরটা পুই*ড়া গেছে,আল্লাহ।
তাকে ফিরিয়ে দিন।তাকে বলুন না,আমার কাছে ফিরে আসতে।ফিরিয়ে দিন না তাকে আমার কাছে।আগের মতো করে দিন সব।এবার আমি একটুও সময় নিবো না এক ছুট্টে চলে যাবো তার কাছে। সব বলে দিবো তাকে, সব বলে দিবো।তারপর তাকে আমার করে নিবো।ফিরিয়ে দিন না তাকে!

“যাস না ফেলে আমারে,
দিবস রজনী কাটে তোর পথ চেয়ে।
চোরাবালিতে হাঁটতে গিয়ে
পড়ে গেছি ভরা নদীতে,
কি উপায়?

নৌকা হয়ে উঠিয়ে নে আমায়,
তবুও তুই ফিরে আয়।

সাঁতার জানি না আমি,
মৃত্যু করেছে আঁড়ি,
তুই ছাড়া বাঁচার নেই কোনো উপায়,
তুই ফিরে আয়,ফিরে আয়।

আছি আমি এখানে,
ফেলে গিয়েছিস যেখানে,
পিছু ফিরে দেখ সেখানে,
রয়েছি তোর পথ চেয়ে,
ডাকছি তোর নাম ধরে।

তুই ফিরে আয় ঐ পথ ধরে,
আগলে নে এই আমাকে,
আমি রয়েছি তোর পথে ফুল হয়ে,
বরণ করে নিতে তোকে,
তবুও আমার কাছে তুই ফিরে আয়।

মনভোলানো রাতে,
তুই আমি সেই ছাঁদে,
আমি গল্প বাড়িয়েছি,তুই শুনছিলি।
একলা একা পথে,
বাড়িতে ফিরে এসে,
মত্ত হয়েছি তোর ভাবনাতে।

তুই ফিরে আয়
আমার পাশে আয়
আমি চেয়ে দেখি
তোকে মন ভরে।

তোর চলার পথে ছড়ানো ছিলো যত কাচ ভাঙা,
আমি নিয়েছি তুলে,
রক্তাক্ত করেছি হাত,
লুকিয়েছি ক্ষত অনর্গল।
তবুও তুই কি দিলি?
দিলি তো দিলি এক বুক যন্ত্রণা।

আমার ছিলো কি দোষ?
ভালোবেসে করেছি ভুল,
তুই কি তা মেনে নিতে পারতি না?
তুই ফিরে আয় না, ফিরে আয় না।

ভালোবাসায় ভালো আছে টা কী
সেই তো দিলি ফাঁকি,
আমার কি হবে,বল না!
তুই ফিরে আয় না।

আমায় রেখে আঁধারে
তুই কি আছিস সুখে?
অন্ধকারে থাকে আলো নাকি
কোথায় বল!
তুই ফিরে আয় না
আমার মন যে মানে না
তুই অন্যকারো সে যন্ত্রণা।”

খাটের উপর মাথা রেখে আনমনেই কিসব বললো প্রতিজ্ঞা। দৃষ্টি ঝাপসা।এতোক্ষণ থেমে থাকা অশ্রু আবার বের হচ্ছে। এ কেমন যন্ত্রণা,বুক পু*ড়ছে।প্রতিজ্ঞা উঠে দাঁড়ালো।দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই মাথাটা ভন ভন করে উঠলো।পরে গেলো বিছানায়।মাথাটা দু’হাতে চেপে ধরলো।আবার উঠার চেষ্টা করলো।উঠে দাঁড়ালো।দ্বিতীয়বারের মতো পরে যেতে নিলেই নিজেকে সামলে নিলো।গাল ফুলিয়ে বুকভরা নিঃশ্বাস নিলো।ঢোক গিলে এগিয়ে গেলো বেলকনির দিকে।
ভোর হয়ে এসেছে প্রায়।পূব আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে।আকাশটা আগুনের মতো রং ধারণ করেছে যেনো সূর্যের পাশে কোথায় ভয়ানহ আগুন লেগেছে।ভোরের পাখিরা কিচিরমিচির করছে।পরপর অনেক গুলো পাখির ঝাঁক উড়ে গেলো।ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে প্রতিজ্ঞাকে।চুলগুলো উড়ছে,আঁচলটা উড়ছে।কিন্তু তার কোনো হেলদুল নেই।এই সূর্যোদয় তাকে আকর্ষণ করছে না।এই পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করতে পারছে না।এই প্রকৃতি তার দুঃখ দূর করতে পারছে না।অনেকসময় পরে প্রতিজ্ঞা ঐ পূব আকাশে চেয়ে করুণ
কন্ঠে শোধালো,

“কতটা রাত হলে আবার সকাল হবে আগের মতো?”

#চলবে…

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১১

সময় চলেছে গন্তব্যহীন।তার কোনো পিছুটান নেই।সৃষ্টিকর্তা ব্যাতিত তাকে আঁটকে রাখার সাধ্য নেই কারোর।সংকল্প-রাইমার বিয়ে হয়েছে একমাস পার হয়েছে।চোখের পলকে সময়গুলো কেটে যাচ্ছে।শুধু পরিবর্তন হয়নি কিছু মানুষের জীবনের সমীকরণ।অমীমাংসিত,অসমাধানকৃত সমীকরণ আজও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে।সম্পর্কগুলোর উন্নতির বদলে অবনতি হয়েছে।মানুষগুলোর অবনতিও কিছু কম হয় নি।তবে সবাই সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে আছে প্রতিজ্ঞা।ঐদিনের পর আর সে নিজ থেকে বাড়ির বাহিরে যায় নি।সংকল্পের সামনে যায় নি।নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে সবার থেকে।ঘরবন্দী করেছে নিজেকে।এখন সে আগের মতো হাসে না,কথা বলে না,আনন্দ করে না,ঘুরতে যায় না।এমনকি কলেজও যায় না।সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে যাওয়ায় তার মধ্যে এখন নিজস্ব বোধ খুব কম কাজ করে।সে নিজের মধ্যে নেই।সে আজ এক উন্মাদ প্রেমিকা।যাকে ভালোবাসা হারিয়ে নিয়মিত মনোবিশারদের শরণাপন্ন হতে হয়।তার কাউন্সিলিং চলে সপ্তাহে তিনদিন।
প্রথমদিকে যখন প্রতিজ্ঞা নিজেকে ঘরবন্দী করে নিলো, সবার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিলো বাড়ির লোক ভেবেছিলো মন খারাপ তাই এমন করছে।ধীরে ধীরে সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে।পরিবারের মানুষজন প্রতিজ্ঞার মনের অবস্থাটা বুঝেছিলো।কোনো চাপ প্রয়োগ করে নি।তাকে সঙ্গ দিতে চাইলে সে একা থাকতে চাইতো।নাহয় উত্তেজিত হয়ে পরতো।তাই তাকে একা থাকতে দেওয়া হলো।খুব একটা বিরক্ত করা হলো না তাকে।নিজের মতো করে থেকে যদি সুস্থ হয়,ঠিক হয় তাহলে মন্দ নয়।সে যথেষ্ট বুঝদার মেয়ে।এটাই সবাই জেনে এসেছে এতোদিন।কিন্তু দিন যত গেলো সবকিছু ঠিক হওয়ার বদলে খারাপ হতে থাকলো।

এই তো দশ বারোদিন আগেকার কথা।সকলে একসাথে টেবিলে সকালের খাবার খাচ্ছিলো।প্রতিজ্ঞা আসে না এখন টেবিলে,ঘরের বাইরে বের হয় না।ওর মা ওকে খাবার দিয়ে আসছেন আগেই।খাওয়ার মাঝেই আচমকা প্রতিজ্ঞার ঘর থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসে।সাথে কিছু পরার আওয়াজ।প্রতিজ্ঞার বাবা,মা,ভাই দৌড়ে যায় ওর ঘরে।ভাবী থেকে যায় তার ছোট্ট মেয়ে আদিবার সাথে।বাচ্চাটা আওয়াজ শুনে ভয় পেয়েছে অনেক।প্রতিজ্ঞার ঘরে গিয়ে দেখতে পায় খাবারের প্লেটটা টুকরো টুকরো হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে খাবার খায়নি প্রতিজ্ঞা।বিছানার কোণায় বসে বিলাপ বকছে যা শুনতে পেলো না কেউ।
আনোয়ার সাহেব মেয়েকে আদুরে স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন,
“প্রতিজ্ঞা মা, কি হয়েছে তোমার?খাবার ফেলে দিয়েছো কেনো?”

প্রতিজ্ঞা পিট পিট করে চেয়ে রইলো বাবার দিকে।দু’হাতের আঙ্গুল গুলো একে অপরের সাথে পেঁচাচ্ছে।দু’হাত ছড়িয়ে বললো,
“বি*ষ, বি*ষ!খাবারে বি*ষ।”

সবার মুখে বিস্ময়। একে অপরের মুখের দিকে চাইলেন।
আনোয়ার সাহেব মেয়ের দিকে এগোতে এগোতে বললেন,
“খাবারে বি*ষ?কে বলেছে তোমায়?তোমার খাবারে বি*ষ কেনো থাকতে যাবে?*

বাবাকে নিজের দিকে আসতে দেখে পা গুটিয়ে বিছানার মধ্যে চলে গেলো।বললো,
” একদম আসবে না।দূরে থাকো।তোমরা আমাকে মে*রে ফেলতে চাও।আমি জানি।এরজন্যই তো আমারে খাবারে বি*ষ মিশিয়েছো।দূরে থাকো আমার থেকে।একদম আসবে না।নাহয় আমাকে মা রার আগেই আমি তোমাদের মে রে ফেলবো।”

বলেই শব্দ করে হাসতে শুরু করলো প্রতিজ্ঞা।
প্রতিজ্ঞার কথায় উপস্থিত সবাই চমকালেন,থমকালেন।তানিম এক জায়গায় স্থির থেকেই আদুরে স্বরে বললো,
“কে বলেছে তোকে এসব?আমরা তোকে কেন মা র তে যাবো।আমরা তোকে খুব ভালোবাসি,বোন।”

প্রতিজ্ঞা ডান হাত নাড়িয়ে বলতে লাগলো,
“সে বলেছে, আমি শুনেছি।আমাকে তোমরা মা র তে চাও।আমি শুনেছি।”

বলেই আবার হু হু করে কেঁদে উঠে সে।
প্রতিজ্ঞার মা এগিয়ে গেলেন মেয়ের দিকে।প্রতিজ্ঞা চিৎকার করে নিষেধ করছে যাওয়ার জন্যে।তবুও তিনি গেলেন।প্রতিজ্ঞা তাকে ধাক্কা মা রলো।আস্তে ধাক্কা দেওয়ায় কিছু হয়নি।
প্রতিজ্ঞার এমন আচরণ অদ্ভুত ঠেকালো সবার কাছে। কেউ কাছে গেলেই তাকে সে সন্দেহ করছে, তাকে নাকি মে রে ফেলবে।সে নাকি অদ্ভুত কথা শুনতে পায়।হঠাৎ অট্টহাসিতে মেতে উঠে,আবার সাথে সাথেই হু হু করে কেঁদে উঠে।জোর করে কেউ কাছে আসলে আবার নিজের ক্ষতি করতে যায়।নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ভয় দেখায়।

একদিন,দুইদিন,তিনদিন প্রতিদিন এমন হচ্ছে।

দুইদিনের মাথায় নাদিয়া এবং কাজের লোক ছাড়া বাড়িতে কেউনেই।নাদিয়া রান্না ঘরে টুকটাক কাজ করছিলো।তখনই কাজের মেয়ে সুমি এসে জানায়,প্রতিজ্ঞা অনেকক্ষণ হয়েছে বাথরুমে গিয়েছে।বের হচ্ছে না। নাদিয়া ভয় পেয়ে যায়।সবাই তার উপর ভরসা করেই বেরিয়েছে।সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় প্রতিজ্ঞার ঘরে।অনেক ডাকাডাকি করে।তবুও দরজা খোলার নাম নেই।দুই ঘন্টা পার হয়ে যায়।ভয়ে ভয়ে নাদিয়া সবাইকে জানায়। তানিম বাড়িতে এসে অনেক কথা শোনায় তাকে।সবাই এসে ডাকাডাকি করে,তবুও খোলার নাম নেই।ভয়েরা ঝেঁকো বসেছে মাথায়।কত খারাপ খারাপ চিন্তা আসছে মাথায়।এক পর্যায়ে দরজা ভাঙ্গতে নিলে প্রতিজ্ঞা দরজা খোলে।সবার ভীতু চেহারা দেখে হো হো করে হাসতে শুরু করতে।সবাই নিশ্চিন্ত হয় এই দেখে যে সে ঠিক আছে।
তিনদিনের মাথায় তো নাদিয়া তার কাছে যাওয়ায় ছু*ড়ি নিয়ে নিজের হাত কে*টে ফেলেছিলো।ক্ষত মারাত্মক ছিলো না।
আবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হলো।ডাক্তার জানালো তিনি যা সম্ভাবনা করেছিলেন তাই হয়েছে।মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে প্রতিজ্ঞা।তবে সাথে সাথে সবাই জেনে যাওয়ায় এখন মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হলে সে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।ডাক্তারের কথা শুনে সবাই ভয় পেয়ে যায়।একের পর এক অ শান্তি যেনো মেয়েটাকে ধরে আছে।
সমস্যা বাঁধে প্রতিজ্ঞাকে নিয়ে।তার কাছেই কেউ যেতে পারে না।সবাইকে সন্দেহ করে সে।তার সন্দেহ ওকে ওরা মে রে ফেলবে।ফলস্বরূপ,তাকে মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যাওয়া যায় না।তার ভাষ্যমতে,
“তোমরা আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো।মিথ্যে বলে বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়ে মে রে ফেলবে আমাকে।গু*ম করে দিবে।সে বলেছে আমাকে।”

অগত্যা ডাক্তারকেই প্রতিজ্ঞার কাছে আসতে হয়েছে।প্রথমদিন প্রতিজ্ঞা ডাক্তারকে কা*মড়ে দিয়েছে।চল্লিশ বছর বয়সী ডাক্তার ঐদিন রে গে গিয়েছিলেন।আনোয়ার সাহেবকে রাগান্বিত হয়ে বললেন,
“আপনারা একটা আস্ত পা গল কে বাসায় রেখে দিয়োছেন।ওকে অ্যাসাইলামে পাঠানো উচিত।”

বাবার মন।যতই পুলিশ হোন,কাঠিন্যতা বাহিরের মানুষের জন্যে,মেয়ে তো তার প্রাণভোমরা।তিনি রাগলেন না ডাক্তারের কথায়।সবকিছু শুরু থেকে বুঝিয়ে বললেন।ডাক্তার রাগের চোটে বললেও পরে অবশ্য বলেছেন,সময় লাগবে।

নাদিয়া শাশুড়ীকে কানে কানে বললেন,
“মা দেখুন পা গ লের ডাক্তার কেমন পা গ লের মতো কথা বলছে।পা গলদের সাথে থাকতে থাকতে উনিও পা গল হয়ে গেছেন।”

অতি দুঃখে যেনো হাসি উঠে।শাশুড়ী চোখ গরম করে তাকাতেই নাদিয়া চুপ হয়ে যায়।

সবকিছু শুনে ডাক্তার গম্ভীর কন্ঠে বলেন,
“বিষণ্ণতার কারণে তার মাঝে মানসিক রোগের লক্ষণ যেমন হঠাৎ হঠাৎ বেশি করে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া,সকল সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া,সবকিছু থেকো আগ্রহ কমে যাওয়া,ব্যক্তিগত কাজের প্রতি অনীহা,সিদ্ধান্তহীনতা, মনোযোগ কমে যাওয়া প্রভৃতি বিষয়গুলো দেখা যাচ্ছে।এবং এটা অনেক খারাপ পর্যায়ে আছে।এই সময় সে সবাইকে সন্দেহ করবে,গায়েবি আওয়াজ শুনতে পাবে,অন্যকে আঘাত করার চেষ্টা করবে,এমনকি আত্ম হননের চেষ্টাও করবে।যেগুলো প্রতিজ্ঞার মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন যাবৎ এমনটা চলতে থাকলে সে সিজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।সিজোফ্রেনিয়ার প্রধান লক্ষণ যেমন আচরণে সমস্যা, অনুভূতির সমস্যাগুলো প্রতিজ্ঞার মধ্যে লক্ষণীয়।আচরণে সমস্যা বলতে এই হাসছে আবার কোনো কারণ ছাড়াই কাঁদছে। হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া, মারতে উদ্যত হওয়া। বকাবকি ও গালিগালাজ করা। বাথরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা। মানুষের সঙ্গে মিশতে না চাওয়া। একা ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ জাবনযাপন করা। হঠাৎ করে কাপড় বা অন্য কিছুতে আগুন ধরিয়ে দেয়া।অন্যদিকে,অনুভূতির সমস্যা বলতে গায়েবি আওয়াজ শোনা: আশপাশে কোনো লোকজন নেই, অথচ রোগীরা কথা শুনতে পায় : কেউ কেউ একদম স্পষ্ট কথা শুনতে পায় ২/৩ জন লোক রোগীর উদ্দেশ্য করে কথা বলছে।পরিবারের কেউ বা পরিচিতজনরা তার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে- এমন সন্দেহ করে থাকেন এই রোগীরা। এ ছাড়া আরও অমূলক সন্দেহ করে থাকেন তারা।এ ধরনের রোগীদের নিয়ে পরিবারের লোকেরা বড্ড ঝামেলায় পড়ে যান।মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়।”

ডাক্তারের কথায় সবাই মর্মাহত হয়ে পড়েন।আনোয়ার সাহেব চিন্তিত গলায় বলেন,
“এখন কি করা উচিত?”
ডাক্তার আশ্বস্ত দিয়ে বলেন,
“এতো চিন্তিত হবেন না।প্রতিজ্ঞা ফার্স্ট স্টেজে আছে।কাউন্সিলিং -এ ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।আর অবশ্যই আপনাদের তাকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে।সে যতই আক্রমণের চেষ্টা করুক, আপনাদের তাকে বুঝাতে হবে আপনারা তার কোনো ক্ষতি চান না।আপনারা তাকে ভালোবাসেন।তবে সমস্যা একটাই!”

তানিম কপাল সংকুচিত করে বলে,
“কি সমস্যা?”
ডাক্তার তানিমের দিকে নজর দেয়।সে বাবার পাশেই বসা।ডাক্তার তার নাকের উপর চশমাটা ঠিক করে বললেন,
“কাউন্সিলিং এর জন্য প্রতিজ্ঞা আমার হসপিটালে যাবে না।”
আনোয়ার সাহেব চোখ ছোট ছোট করে বলেন,
“কেনো যাবে না?আপনার হসপিটালে কি সমস্যা? ”
“সমস্যা আমার হসপিটালে নয়, সমস্যা ওর মধ্যে।ও এইমুহুর্তে বাড়ির বাহিরে যাবে না।প্রথমত সে নিজের মধ্যে নেই,কোথায় যাবে সে জানে না।দ্বিতীয়ত,আপনাদেরকে এখন সে সন্দেহ করে, আপনাদের সাথে সে বের হবে না। সে ভাববে আপনারা তাকে মে রে ফেলার জন্য বাহিরে নিয়ে যাচ্ছেন।তাছাড়া,বাহিরে গেলে তার মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিবে।আর……”

শেষ করতে পারলেন না ডাক্তার।এরমধ্যেই আবার প্রতিজ্ঞার ঘর থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসছে।সবাই আঁতকে উঠলেন।সে তো ঘুমাচ্ছিলো।এরমধ্যে আবার কি হলো।সবাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যান।দেখেন প্রতিজ্ঞার পুরো ঘর ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে।সে কিছুতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।সে ঘুমায় নি।এই সময় তার ঘুম থাকবে না।প্রতিজ্ঞা নিজের ওড়নাতে আগুন ধরানোয় তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি।ওড়না তার পরনে ছিলো না।কোনোমতে তাকে সামলাতে হয়।অনেক সময় নিয়ে পরিবেশ অনুকূলে আসে।ডাক্তার তাকে ঘুমের ইনজেকশন পুষ করেন।
প্রতিজ্ঞা ঘুমিয়ে পড়লে ওর মাকে ওর পাশে রেখে ডাক্তার আবার আনোয়ার সাহেবের সাথে পরামর্শ করেন।
অনেকক্ষণ ভেবে বলেন,

“সিজোফ্রেনিয়ার কারণ হিসাবে স্ট্রেস জড়িত বলে বিশ্বাস করা হয়। সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায়শই যে কোনও জায়গায় মনোনিবেশ করতে সমস্যা হয়, যার ফলে তারা উদ্বেগযুক্ত এবং বিরক্তিকর হন। এগুলো ছাড়াও, এই পরিস্থিতিতে পরিবার এবং নিজের প্রতি মনোযোগের অভাব ও চাপ তৈরি করে। এখানে বলা কঠিন যে সিজোফ্রেনিয়া স্ট্রেসের কারণে ঘটছে।
সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অডিটরি হ্যালুসিনেশন সবচেয়ে বেশি হয়। অডিটরি হ্যালুসিনেশন মানে হলো অবাস্তব কিছু শুনতে পাওয়া। অর্থাৎ অস্তিত্ব নেই এমন কিছুর আওয়াজ শোনা। ব্যাপারটা স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে এই হ্যালুসিনেশন অনবরত হতে থাকে। তারা অনবরত শুনতে থাকেন, তাদের সঙ্গে কেউ কথা বলছে।মানসিক রোগ বা সিজোফ্রেনিয়াতে অনবরত হ্যালুসিনেশন হয় ব্রেইনের ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার মাত্রাতিরিক্ত হওয়াতে। এজন্যে ডোপামিন রিসেপ্টর ব্লকার ঔষধ দেওয়া হয়। এতে অবিশ্বাস্য রকমভাবে হ্যালুসিনেশন বন্ধ হয়ে যায়। রোগীদের একা একা কথা বলা কমে আসে। এক সময় সে সাধারণ মানুষের মতই সুস্থ হয়ে উঠে।

আমার ধারণা অতিরিক্ত ভালোবাসার পরে সেই মামুষটাকে না পাওয়ার শক্ সে মানতে পারে নি ঐ স্ট্রেসের কারণেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে।তবে পাঁচ-ছয় মাস না গেলে আমরা সিউর হতে পারবো না ও সিজোফ্রেনিয়াতেই আক্রান্ত।এমনও হতে পারে কাউন্সিলিং এর জন্য ও ২-৩ মাসেই ঠিক হয়ে যেতে পারে।তবে ভেতরে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যেতে পারে।পরবর্তী কোনো সময়ে মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়লে তা দেখা দিতে পারে।
আর কাউন্সিলিং এই বাড়িতেই হবে।”

সেদিনের মতো কথা বলে চলে যান ডক্টর।

এখন প্রতিজ্ঞা বাড়ির মানুষকে বিশ্বাস করে।নিজের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে না।উত্তেজিত হয় না।বাড়ির বাহিরে কাউন্সিলিং এর জন্য যায়।তবে এখন কিছু সময় সে স্বাভাবিক থাকে,আবার কিছু সময় অস্বাভাবিক থাকে।ডাক্তার বলেছেন প্রথম থেকেই কাউন্সিলিং পাওয়ায় সে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আসছে।অসচেতনতার কারনে অনেক ব্যক্তির এই রোগ অনেক মাস অব্ধি অজানা থাকে পরে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে।যার কারণে সাইকোলজিক্যাল ইন্টারভেনশন থেরাপি-র মাধ্যমে রোগী স্ট্রেস এবং অন্যান্য মানসিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি লাভ করে।ভোকেশনাল রিহ্যাবিলিটেশন এর মাধ্যমে রোগীকে কাজে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।এছাড়াও, রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়া করে মাথায় ইলেকট্রোড লাগানো হয় এবং তারপর কারেন্টের শক দেওয়া হয়। এতে মানসিক অবস্থা এবং চিন্তাশক্তির উন্নতি হয়।

গত একমাসে আহমেদ বাড়ির পরিবেশ পরিবর্তন হয় নি।শাহআলম সাহেবকে এখন সবাই অবহেলা করে।রাইমা -সংকল্পের মধ্যে একটা নরমাল বন্ধুত্ব তৈরী হয়েছে।তবে বেশি না।সংকল্পও রাইমা অস্ট্রেলিয়া চলে যাক।নিজের ভালোবাসার মানুষকে ফিরে পাক।একজন ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে কি ভোগান্তিতে আছে সেটা কারো অজানা নয়।বলা বাহুল্য,সংকল্প-রাইমা আলাদা ঘরে থাকে।প্রয়োজন ব্যাতীত তাদের কথা হয় না।রাইমা অন্য সংস্কৃতিতে মানানসই হলেও এখন সে এখানে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।সেটাও করছে সংকল্পের কথা।সংকল্প বলেছে বাড়িতে এসব নিয়ে যেনো কোনো ঝামেলা না হয়।হলে সে রাইমাকে সাহায্য করবে না।
রাইমা এর মধ্যে নিজের বাবার বাড়ি গিয়েছিলো।মা-বাবার কাছে পাসপোর্ট,ডকুমেন্টস চায়লে তারা দেন নি।তারা জানেন মেয়ের স্বভাব।বলা যায় না,আজকে পাসপোর্ট দিলেন,পরশুদিন শুনবেন মেয়ে অস্ট্রেলিয়া।তারা চান না মেয়ে এই শারীরিক অবস্থায় কোনো অঘটন ঘটাক,দেশের বাহিরে যাক।তাই তারা রাইমাকে বলেছেন কয়েকমাস পরে সব কিছু ফিরিয়ে দিবেন।অগত্যা রাইমাকেও এখন চুপচাপ সব দেখে যেতে হয় আর অপেক্ষা করতে হয়।

প্রতিজ্ঞার মানসিক অবস্থার কথা সবাই জানে।সংকল্প অনেকবার গিয়েছিলো দেখা করতে কিন্তু তাকে বাড়ির ভেতর ঢুকতে দেওয়া হলেও প্রতিজ্ঞার সাথে দেখা করতে দেওয়া হয় নি।সাবিহা আর বন্ধুমহলও গিয়েছিলো কয়েকবার কিন্তু প্রতিজ্ঞার তাদের দেখলেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে।তাই তাদেরও দেখা করা নিষেধ।

আজ প্রতিজ্ঞাকে তার ভাবী যাবে কাউন্সিলরের কাছে।প্রতিজ্ঞা এখন কিছুটা স্বাভাবিক।কাউন্সিলিং শেষে কাউন্সিলর নাদিয়ার সাথে আলাদা কথা বলার জন্য ডাকলে প্রতিজ্ঞা এই ফাঁকে বেরিয়ে যায়।তখনই নিজেদের গাড়ির সামনে খুব পরিচিত একজনকে দেখতে পায় প্রতিজ্ঞা।তার পা থেমে যায়।এই ব্যক্তি এখানে কেনো সে জানে না।জানতেও চায় না এই ব্যক্তিকে দেখলেই তার রাগ হয়।সব শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।সে এগিয়ে যায় ব্যক্তিটির দিকে।ব্যক্তিটি আর কেউ নয়,সংকল্প নিজেই।কোনোভাবে সে জানতে পেরেছে আজ এখানে প্রতিজ্ঞার আসার কথা। তাই তো এসেছে সে।কতদিন মেয়েটাকে দেখে না সে।মেয়েটার চেহারার উজ্জ্বলতা হারিয়ে গেছে।চেনা-ই যাচ্ছে না এই সেই রূপবতী মেয়েটা।প্রতিজ্ঞাকে এগিয়ে আসতে দেখে সংকল্পও নড়েচড়ে দাঁড়ায়। প্রতিজ্ঞা সংকল্পের দিকে না তাকিয়েই পাশ কাটিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে।সংকল্প এতে আহত হলেও মনে নেয় না।সে ডাকে প্রতিজ্ঞাকে।

“প্রতিজ্ঞা!”

এই একটা সম্বোধন যেনো প্রতিজ্ঞার সারা শরীর আন্দোলিত করে দিলো।রন্ধ্রে রন্ধ্রে আলোড়ন সৃষ্টি করলো।কতদিন পর এই কন্ঠটা সে শুনেছে। কিন্তু কোনো শব্দ করলো না।
সংকল্প আবার ডাকলো,
“প্রতিজ্ঞা!কেমন আছো?”

এবারও প্রতিজ্ঞা চুপ করে রইলো।জানালার কাচ বন্ধ করে দিলো।সংকল্প কষ্ট পেলো।আরো কয়েকবার প্রতিজ্ঞাকে ডাকলেও সে নিরবতার ভূমিকা পালন করলো।
সর্বশেষে আহত হয়ে করুণ কন্ঠে সংকল্প বললো,
“প্রতিজ্ঞা কথা বলবে না আমার সাথে?বেশ চলে যাচ্ছি।”

চলে যাওয়ার জন্য পা ঘুরাতেই জানালার কাচটা নিচে নেমে গেলো।সংকল্পের ঠোঁটে দুর্বোধ্য হাসি।চোখগুলো ছলছল করছে।সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রতিজ্ঞা বলতে শুরু করলো,

“কেমন আছি জানি না।তবে আছি,বেঁচে আছি।পৃথিবীতে আমার অস্তিত্ব আছে।ঐ যে শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে।হৃৎস্পন্দন চলছে।
কেমন আছি জানি না তবে একাকি থাকলে হো হো করে হেসে উঠি আবার কখনো বুক ফাটা আর্তনাদে কাঁদি বালিশে মুখ গুঁজে। পুরোনো মেমরী গুলো সাজাই একের পর এক পাজলের মতো। ম্যাথ এ লেটার মার্ক পাওয়া আমি তখন মেলাতে পারি না জীবনের হিসেব নিকেশ। অকৃতকার্য হই আপনার করা হিসাব বিজ্ঞানের রেওয়ামিল গরমিলের পরীক্ষায়৷

ম্যাথমেটিক্স এর মিনিমাল ফাংশন এর মতো আমার হৃদয়ের হৃদস্পন্দন আপনার জন্য মিনিমাইজ হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন।

ভবিষ্যৎ দুনিয়ার কোডিং করা এ আই রোবোটিকস ডেভেলপমেন্ট এর বট গুলো ও ভাবনা শুরু করে দিয়েছে এই পৃথিবী তে ভালোবাসা রিয়েলি এক্সিস্ট করে কিনা।

তবু ও আমি মিথ্যে ভালোবাসার আশ্রয় নিয়ে নিজের যান্ত্রিক ব্রেইনের সফটওয়্যার গুলো কে পোগ্রামিং করে যাই পাইথন, জাভাস্ক্রিপ্ট, সি শার্প আর রুবি দিয়ে। অসংখ্য ডাটা এনালাইসিস করে হাজার চেষ্টার পর যখন পোগ্রাম রান করি আর সব শেষে তখন ও দেখি সেটা আপনার নিজস্ব এলগোরিদমেই চলছে।

ডার্ক ওয়েবে খুঁজে ফিরি আপনার দেয়া নিষিদ্ধ কষ্ট গুলো। রেড এলার্ট এ বুকে কাপন ধরে।আপনার মায়া আমার হৃদয় কে বিভাজন করে যেমন পারমানবিক চুল্লির মধ্যে প্লুটোনিয়াম ও ইউরোনিয়ামের নিউক্লিয়াসদ্বয় ফিসাইল পরমানু দ্বারা বিভাজন হয়।

বুক পকেটে আপনার দেয়া রোজা রুবিগিনোসার পরিবর্তে আজ নিকোটিনে এ পোড়ে আমার অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টর। যা শত গ্যালন এলকোহলেও পরিষ্কার হবার নয়।

হয়তো এক সময় আমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো ধূসর মরুর প্রান্তে পরে থাকা কোন এক নিস্বঃঙ্গ ম্যানিকুইন এর মতো। যার থেকে মোহ কেটে যাওয়ার পর তাকে ফেলে দিয়ে গিয়েছিলে আবর্জনার এই স্তুপকৃত জঞ্জালে।(ইপিলিয়াম)

এবার বুঝে নিন আমি কেমন আছি!”

বলেই হো হো করে হাসতে শুরু করলো প্রতিজ্ঞা।জানালার কাচটা আবার উঠে গেলো।
সংকল্প কিছু বলার অবকাশ পেলো না।এই মেয়েটার কথার বিপরীতে কথা হাতড়ে পাওয়া যায় না।একদমই যায় না।শুধু চোখের কোণ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো।
ঐ তো দেখা যাচ্ছে নাদিয়া ভাবী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে।হয়তো প্রতিজ্ঞাকে খুঁজছে।সংকল্প আর একমুহূর্তও দাঁড়ালো না।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল আড়াল করে সেও ভীড়ে হারিয়ে গেলো।জীবনতরী কোন ঘাটে গিয়ে থামে তার অপেক্ষায়……

#চলবে….