হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো পর্ব-২৭+২৮+২৯

0
233

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ২৭

পড়ন্ত বিকেল।প্রতিজ্ঞা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে।সে কৃষ্ণচূড়া বিলাসে মত্ত।গ্রীষ্মের বিকেলবেলার সৌন্দর্য কৃষ্ণচূড়ার হাতে।গ্রীষ্মের সৌন্দর্য মানেই কৃষ্ণচূড়া।রক্তের মতো লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া দেখতে কত সুন্দর! এ কারণেই হয়তো এটি সবার মন কেড়ে নেয়।
কৃষ্ণচূড়ার লালিমা ছড়িয়ে যাক গোটা বসুন্ধরায়।সূর্যের লালচে কমলা রঙের আলো যেনো এই লাল টুকটুকে ফুলগুলোর পরিপূরক,অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সংকল্প সাইদুল সাহেবের সাথে কোম্পানিতে গিয়েছে।এখনো ফেরে নি।আজ শাহআলম সাহেবও গিয়েছেন কোম্পানিতে।ছেলের কোম্পানিতে প্রথমদিন।উনি না যেয়ে থাকতে পারলেন না।সংকল্পের সাথে প্রতিজ্ঞার ফোনে কথা হয়েছে।জানিয়েছে আজ আসতে দেরী হবে। প্রথমদিন তাই সব বুঝতে,দেখতে,জানতে সময় লাগবে।

ভাবনার মাঝেই প্রতিজ্ঞার ফোনটা নিজ ছন্দে বেজে উঠে।ফোনটা ঘরে।প্রতিজ্ঞা ঘরে চলে যায় ফোন আনতে।স্ক্রিনে ভেসে উঠা নাম দেখেই ঠোঁটে কোণে হাসি ফুটে উঠে। স্ক্রিনে “প্রাণপুরুষ” শব্দটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।ফোন রিসিভ করে কানে নিয়ে চলে যায় বেলকনিতে।ওপাশ থেকে ভেসে আসে পুরুষালি কন্ঠ।বাচ্চাদের মতো করে বলছে,
“আই মিস্ ইয়্যু, বউ।”

প্রতিজ্ঞা খানিকটা হাসলো।ঠোঁট টিপে বললো,
“আমি তো একদমই মিস্ করছি না।বরং শান্তি শান্তি লাগছে। কেউ জ্বা লা তন করছে না।”

সংকল্প বুঝলো বউ তার মজা উড়াচ্ছে।শোধালো,
“আমি তোমাকে জ্বা লা তন করি?”
“প্রচন্ড!”

সংকল্প হাসলো।অভিমানী সুরে বললো,
“তুমি এটা বলতে পারলে বউ?”
“পারলাম।”
“আচ্ছা।বাসায় এসে বুঝাচ্ছি জ্বা লাতন কাকে বলে,কত প্রকার ও কি কি!”

বলে ফোন কেটে দেয় সংকল্প।প্রতিজ্ঞা বুঝে আজ কপালে দুঃখ আছে।তবুও তার চেহারায় শান্তির ছাপ।কত বছরের অপেক্ষার শেষ হয়েছে।তার অপেক্ষা মিষ্টি হয়েছে।খুউউউউব খুউউউউব বেশিই মিষ্টি হয়েছে।লোকে ঠিকই বলে,”সবুরে মেওয়া ফলে।” আর সে পেয়েছে তার প্রাণপুরুষকে।

এরমধ্যেই ঘরে সাবিহা প্রবেশ করে।প্রতিজ্ঞার পাশে দাঁড়ায়।
মজা করে বলে,
“ভাবীজান তো দেখি তার প্রাণপুরুষকে পেয়ে দিন দুনিয়া ভুলে গেছে।বলি আমরা ওতো পৃথিবীতে এক্সিস্ট করি নাকি!”

প্রতিজ্ঞা সাবিহার দিকে তাকালে মাথা নাড়ে।তারপর খোঁচা মে রে বললো,
“তলে তলে টেম্পু চালাবা আর সব দোষ আমার?”

সাবিহা লজ্জায়থতমত খায়।প্রতিজ্ঞার অধর প্রসারিত।বললো,
“সারাদিন তো ফোনে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করো, আমার সাথে কথা বলার সময় আছে তোমার?”

সাবিহা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“আমায় তো পেয়ে বসেছে প্রেম নামক এক কঠিন অসুখ।পৃথিবীর একমাত্র অসুখ যাকে সারাতে হলে ঐ এক নির্দিষ্ট মানুষকেই প্রয়োজন হয়।”

প্রতিজ্ঞা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।সাবিহা বললো,
“হাসবি না।জানিস আগে বুঝতাম না প্রেম কি,ভালোবাসা কি।ভাবতাম বিষয়টা অনেক সহজ।তোকে যখন দেখতাম ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতি,ভালোবাসা প্রকাশ করতি না তখন মনে হতো এটা তো সহজ।কিন্তু যখন প্রেমে পড়লাম,ভালোবাসলাম কাউকে তখন বুঝলাম ব্যাপারটা মোটেও সহজ কিছু না।প্রেম-ভালোবাসা-অপেক্ষা পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল বিষয়গুলোর মধ্যে একটা।তখন অনুধাবন করলাম তোর কষ্টটা।একদিন কথা না হলে কত কষ্ট হয় যেনো দম বন্ধ হয়ে আসে।শ্বাস নিতে পারি না।কান্না পায়।অস্থির অস্থির লাগে।ঝগড়া হলে তো হলোই।প্যানিক এট্যাক করে ফেলি।কাঁদতে কাঁদতে বন্যা ভাসিয়ে দেই।সেখানে তুই একপাক্ষিক ভালোবাসলি,মানুষটাকে জানানোর আগেই দেখলি তার বিয়ে হয়ে গেছে,তারপর যাও তাকে নিজের করে পেলি,সে তোকে ছেড়ে চলে গেলো।কিভাবে পারলি এতোগুলো বছর এগুলা সহ্য করতে?আমার তো ভাবতেই প্যানিক অ্যাটাক হয়।হাত পা কাঁপতে শুরু করে। এতো ধৈর্য্য কিভাবে ধরিস!কিভাবে পারিস!”

প্রতিজ্ঞা মনোযোগ দিয়ে শুনলো।চমৎকার হাসলো সে।বললো,
“ধৈর্য্যের ফল মিঠা হয়।”
সাবিহা হাসি দিয়ে বললো,
“আল্লাহ তোর ধৈর্য্য আরো বাড়িয়ে দিক।
ধৈর্য্যের ফল কি মিঠা হয়েছে ভাবীজান?”

শেষের কথাটা মজা করে টেনে টেনে বললো সাবিহা।
প্রতিজ্ঞা পূর্ণতার হাসি হাসলো।বললো,
“আমার চেহারা দেখে কি মনে হয়?”
“উমমম মনে তো হয় অনেক কিছুই।স্বামী সোহাগের ছাপ তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।”

শব্দগুচ্ছ অন্তঃকর্ণে পৌছা মাত্রই লজ্জার দলেরা ঘিরে ধরলো প্রতিজ্ঞাকে।ফর্সা চেহারায় লাল আভা আধিপত্য স্থাপন করলো।সাবিহা হাসছে।প্রতিজ্ঞা মেকি রাগ দেখিয়ে বললো,
“এতো দিকে তাকাস কেন?নজর ঠিক কর।”

শোনামাত্রই সাবিহা উচ্চস্বরে হেসে ফেললো।হেসে যেনো লুটোপুটি খাচ্ছে।বললো,
“সব আমার চোখের দোষ।কোথায় কোথায় চলে যায়!”
“বেয়াদব!ভাবী হই তোর।সম্মান কর।”

ভ্রু উচিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বললো প্রতিজ্ঞা।

সাবিহার হাসি যেনো থামছেই না।প্রতিজ্ঞা চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে।কোনোমতে হাসি থামালো।কিন্তু কার কি, আবার জোরে হেসে ফেললো।
প্রতিজ্ঞা ওর কান্ড দেখে বললো,
“ভাই-বোন দু’টোই পাবনাফেরত পা গল।”

সাবিহা কোনোমতে হাসি থামালো।ঠোঁট উঁচু করে টেনে টেনে বললো,
“ওওওওওওও আমার ভাইও পা গল!তা কি কি পা গলামী করেছে তোর সাথে?বল না কি কি করেছে!”

প্রতিজ্ঞা বাঁকা হেসে বললো,
“মাত্র দু’সপ্তাহ পর তুই নিজেই প্র্যাকটিকেলি বুঝতে পারবি।এখন তুই যা এখান থেকে,যা।”

সাবিহা যেনো লজ্জা পেলো।লজ্জা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঠিক সেই মুহুর্তেই তার হবু বর নাদিম কল করে।স্ক্রিনে “সুইটহার্ট” নামটা ভেসে উঠলো।প্রতিজ্ঞা ভ্রু উঁচিয়ে দেখে ফেললো।দুষ্টুমি স্বরে বললো,
“যাও ননদিনী যাও,তোমার সু-ই-ট-হার্ট ফোন দিয়েছে।কথা বলো যাও যাও।সু-ই-ট-হার্ট,সু-ই-ট-হার্ট।”

বলতে বলতে শব্দ করে হেসে ফেললো সে।সাবিহা লজ্জা পাচ্ছে।কলটা কেটে দিয়েছে।আড়চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বললো,
“মজা নিবি না একদম।”
“তুই যে নিচ্ছিলি এতোক্ষণ, তার বেলায়?”
“আ-আমি তোর ননদ হই,মজা নিতেই পারি।”
“আমিও তোর ভাবী হই,মজা নিতেই পারি।”
সাবিহার থুতনিতে ধরে বললো প্রতিজ্ঞা।

এর মাঝে নাদিম আবার কল করলো।প্রতিজ্ঞা হেসে বললো,
“তোর সুইটহার্ট বেচারা পা গল হয়ে যাবে বইন।কথা বল যা।”

সাবিহা কটমট করে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করতে করতে চলে গেলো।

সাবিহা চলে যেতেই প্রতিজ্ঞা রেলিং এ ভর দিয়ে দাঁড়ালো। আশেপাশে চোখ বুলাতে গিয়েই নজর পড়লো দু’জনকে।দু’জনের কাধেই স্কুল ব্যাগ ঝুলানো।বাগানের ঐ শেষের দিকটায় কি জানি করছে।মুখে শয় তানি হাসি।প্রতিজ্ঞা বোঝার চেষ্টা করলো তারা দু’জন আবার কি অঘটন ঘটানোর চেষ্টায় আছে।কিন্তু দূর থেকে কিছুই বুঝলো না।সে চলে গেলো তাদের কাছে।

দু’জন রাহিব-সাহিব ব্যাতীত আর কেউ নয়।বাগানের শেষ দিকটায় অনেক অদরকারি, পরগাছা গাছ জন্মেছে।দুই ভাইয়ের এখন টিউশনে যাওয়ার কথা।কিন্তু হাতে গ্লাভস্ পরে কিসব পাতা নিয়ে কি যেনো বানাচ্ছে।এর মাঝেই শুনতে পেলো প্রতিজ্ঞার গলার স্বর।
“কি করছিস রে এখানে?

বুকে দু’হাত গুঁজে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দু’জনের দিকে।দুই ভাই একে অপরের দিকে তাকালো।তাদের চোখে ভয়ের আভাস।মাথা নেড়ে দু’জন দু’জনকে কিছু একটা ইশারা করলো।অকপটে বলে উঠলো,
” কিছু না প্রতিজ্ঞা আপু।”

প্রতিজ্ঞা বুঝলো অবশ্যই কিছু লুকচ্ছে।সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে দু’জনকে।দুই ভাই চেহারা এমন করে রেখেছে যেনো তাদের মতো নিষ্পাপ, ভদ্র, ভালো মানুষ আর দু’টো নেই।ভদ্র বাচ্চার অ্যাওয়ার্ড দিলে তারা প্রথম পুরস্কারটা পেতো।প্রতিজ্ঞা ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কিছু তো অবশ্যই করছিলি।তোদের তো টিউশনে যাবার কথা।চাচী আম্মুকে ডাক দিবো?”

“না না,তুমি না আমাদের ভাবী হও।আমাদের একমাত্র ভালোবাসার ভাবী।তুমি আমাদের মতো ভালো,অবুঝ বাচ্চাকে বকা খাওয়াবে?তোমার একটুও কষ্ট হবে না?তুমি এতো নি ষ্ঠুর প্রতিজ্ঞা আপু?”

রাহিব অসহায় গলায় বললো। সাথে সাথে সাহিব বললো,
“তুমি এতো হৃদয়হীনা আপু?তোমার হৃদয় এতো কঠিন আপু?”

প্রতিজ্ঞা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফেলে।চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে দু’জনের দিকে।এরা এতো ভালো অভিনয় করে!কিম্তু প্রতিজ্ঞা দমলো না।কিছু বলতে যাবে,তার আগেই চোখে পড়লো রাহিবের ডান হাতের দিকে।ডান হাতটা পেছনে লুকোনো।প্রতিজ্ঞা রাহিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“এই তোর হাতে কি?দেখা।কি লুকোচ্ছিস?তোদের হাতে গ্লাভস্ কেনো?তাড়াতাড়ি বলে ফেল।নাহয় চাচী আম্মকে ডাকছি।”

সাহিব অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে রাহিবের দিকে।চোর ধরা পড়লে যেমন অবস্থা হয়, তাদের এমন অবস্থা হয়েছে।
রাহিব ধীরে ধীরে হাতটা সামনে আনলো।একটা ঔষধের শিশি।প্রতিজ্ঞা শিশিটার দিকে হাত বাড়াতে গেলেই রাহিব হাত সরিয়ে নেয়।তাড়াতাড়ি বললো,
“ধরো না এটা। হাত চুলকাবে।”

প্রতিজ্ঞা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।জিজ্ঞাসা করলো,
“কি আছে এটায়?
” ডোজ নাম্বার থার্টি ফোর।”

সাহিব চোয়াল ঝুলিয়ে বললো।
প্রতিজ্ঞা মুখ খিঁচিয়ে ফেললো।বললো,
“ডোজ? কিসের ডোজ?কি হবে এতে?”

রাহিব করুণ কন্ঠে বললো,
“আপু তোমাকে তোমার পছন্দের আইসক্রিম খাওয়াবো।কাউকে বলো না কিন্তু। ”

সাহিবও করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।প্রতিজ্ঞা দেখলো।আশ্বাস দিয়ে বললো,
“আচ্ছা বলবো না।কাহিনী কি বল আগে!”

সাহিব বললো,
“পরশুদিন রেজাল্ট দিবে,তাই ক্লাস বাঙ্ক করেছিলাম আমরা।টিচারকে বলে ছিলাম আমাদের অনেক জ্বর। কিন্তু আমাদের এক ক্লাসমেট আমাদেরকে পার্কে ঘুরতে দেখে নিয়েছিলো।তারপর টিচারকে বলে দিয়েছে।টিচার কালকে আমাদের কথা শুনিয়েছে। আবার মাকেও সব জানিয়েছে।মা কাল রাতে এক ঘন্টা কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো।”

বলে থামলো সাহিব। প্রতিজ্ঞা সাথে সাথে বললো,
“তোরা তো জীবনেও এক ঘন্টা কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকিস নি এই বিশ্বাস আমার তোদের উপর আছে।আসল কাহিনী কি বল।

দুই ভাই আবার ধরা খেয়ে সেন্টি ইমুজির মতো মুখ করে তাকিয়ে আছে। সাহিব আবার বললো,
” সত্যি! তাই আজ ঐ ক্লাসমেটের উপর এই ডোজ নাম্বার থার্ট ফোর এপ্লাই করবো।”

প্রতিজ্ঞা বুঝলো আসল কাহিনী।বললো,
“এপ্লাই করলে কি হবে?”

দুই ভাই এবার পৈশাচিক হাসি হাসলো।রাহিব বললো,
“আগামী তিন-চারদিন শুধু চুলকাবে।চুলকাতেই থাকবে।অনেক বেশি চুলকানি ওর শরীরে। এবার বুঝবে আসল চুলকানি কাকে বলে!”

প্রতিজ্ঞা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। দু’জন টিউশনে যাওয়ার জম্য উদ্যত হলো।বলে গেলো,
“কাউকে বলবে না।তোমার জন্য আইসক্রিম আনবো।”

বলে হেলতে দুলতে চলে গেলো।
প্রতিজ্ঞা তাদের যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।অস্ফুটস্বরে বললো,
“কি সাংঘাতিক! ”

#চলবে….

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ২৮

ঘড়ির কাঁটায় আটটা বিশ।প্রতিজ্ঞা সবেমাত্রই শাশুড়ীর ঘর থেকে নিজের ঘরে ফিরেছে।আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে কাপড় ভাজ করছিলো।তখনই পেছন থেকে কেউ এসে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করলো তাকে।খোলা চুলে মুখ ডুবালো।প্রতিজ্ঞা জানে সে কে।প্রতিক্রিয়া করলো না।শুধু অধর প্রসারিত করলো।মুখ ডুবিয়ে রাখা ব্যক্তি প্রতিজ্ঞার ঘাড়ে নাক ঘষাতে ঘষাতে বললো,
“আই মিসড্ ইয়্যু এ ল্যট, বউ।”
“আই মিসড্ ইয়্যু টু।”
আদুরে স্বরে বললো প্রতিজ্ঞা।নিজেকে ছাড়িয়ে সংকল্পের দিকে ফিরে তাকালো সে।সংকল্পের চেহারায় ক্লান্তিভাব স্পষ্ট। প্রতিজ্ঞা পা উঁচু করে সংকল্পের কপালে ঠোঁট স্পর্শ করে।সংকল্প বউয়ের কোমড়ে ধরে বলে,

“বাহ বাহ!আমার বউ তো অনেক রোমান্টিক!”
“মোর দ্যান ইউ থিংক।” নাকে নাক ঘষিয়ে বললো প্রতিজ্ঞা।
“অওওওওওও!”
“ইয়েস মিস্টার সংকল্প।এখন ফ্রেশ হতে যান।”
“যথাজ্ঞা মিসেস সংকল্প।”বলে প্রতিজ্ঞার ঠোঁটে ঠোট ছুঁয়ে দেয় সংকল্প।
বিপরীতে প্রতিজ্ঞা মুচকি হাসে।

সংকল্প আলমারি থেকে কাপড় নিতে গেলে চোখে পড়ে বিছানার উপর তার কাপড় রাখা।মুচকি হেসে প্রতিজ্ঞাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” বাহ বাহ মিসেস সংকল্প তো দেখি তার স্বামীকে অনেক ভালোবাসেন!”

প্রতিজ্ঞা এগিয়ে আসে সংকল্পের দিকে।আহ্লাদী হয়ে শোধায়,
“সেটা কি মিস্টার সংকল্প আজকে জানেন?”

সংকল্প প্রতিজ্ঞার কপালের উপর থাকা অবাধ্য চুলগুলোকে কানের পেছনে গুঁজতে গুঁজতে বলে,
“প্রতিদিন নতুন নতুন উপায়ে জানতে চাই।”

প্রতিজ্ঞা স্মিত হেসে বললো,
“জানাবো,দেখাবো,উপলব্ধি করাবো।এখন যান তো।”

সংকল্প প্রতিজ্ঞাকে হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে।ভরাট কন্ঠে বলে,
“তোমাকে নিয়ে যাই?”

প্রতিজ্ঞা বিস্ময় নিয়ে তাকায়। বলে,
“হ্যাঁ?”
“একসাথে শাউয়ার নিবো,চলো বউ।”

প্রতিজ্ঞা কপট রাগ দেখালো।বললো,
“সরুন তো।আমি এখন নিচে যাবো।সবাই একসাথে খাবার খাবে।শাশুড়ী আম্মুদের হেল্প করতে হবে।ছাড়ুন!”

সংকল্প ছেড়ে দিলো।ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললো,
“নিরামিষ কোথাকার!”

প্রতিজ্ঞা থতমত খেলো।তার মতো একটা রোমান্টিক মেয়েকে নিরামিষ বললো!ভেঙচিয়ে বললো,
“আমি কেমন সেটা দেখিয়ে দিবো।”

সংকল্প ওয়াশরুম থেকে মাথা বের করে হাসি হাসি মুখ করে বলে,
“দেখাও প্লিজ।আই ওয়ান্ট টু অবজার্ভ ইয়্যু বউ।”

প্রতিজ্ঞা বোকাবনে গেলো।লজ্জায় কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে শুরু করলো।কোথাকার কথা কোথায় নিলো!গরম চোখে তাকিয়ে ধমকালো। বললো,
“নির্ল জ্জ পুরুষমানুষ।”

বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো প্রতিজ্ঞা।বউয়ের লজ্জা মাখা রাগ দেখে সংকল্পের হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা।

সংকল্প ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেলকনিতে যায়।সেখানে টাওয়েলটা রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়।চুল ব্রাশ করার সময় নজর পড়ে আয়নার মধ্যে।দরজার বাহির থেকে দু’জন সাবধানতার সাথে উঁকি দিচ্ছে।সংকল্প তাদের বুঝতে দিলো না সে যে তাদের দেখে ফেলেছে।সে নিজের মতো কাজ করে চলেছে।সংকল্পকে উল্টোদিকে ঘুরতে দেখে বিচ্ছু দু’জন দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়ে।সংকল্প সেটা টের পায়।ধীর পায়ে হেটে দরজার সামনে দাঁড়ায়,যাতে ওরা দেখতে না পায়।আড়াল থেকে দুই ভাইয়ের কান টেনে বের করে।রাহিব-সাহিব আঁতকে উঠে।চোখ-মুখ কুঁচকে রেখে বললো,
“ও ভাইয়া ছাড়ো,ব্যাথা পাচ্ছি তো।”

সংকল্প ছাড়ে না।কপাল সংকুচিত করে বলে,
“আগে বল দু’টোতে মিলে কি করছিলি?”

রাহিব বললো,
“ধুর!বড়মা তোমাকে খেতে ডাকছে।তাই এসেছি।”

সাহিবও সঙ্গ দিলো।মত মেলালো। সংকল্পের কপাল প্রসারিত হলো।ওদের কান ছেড়ে দিলো।বুকে হাত গুঁজে রাহিব-সাহিবকে ভালো করে অবলোকন করছে। ভ্রু উঁচু করে শোধালো,
“তাহলে উঁকিঝুঁকি মা রছিলি কেনো?”

সাহিব ভদ্র বাচ্চার মতো করে বললো,
“তোমাকে ভয় পাই তো।বিদেশ থেকে এসে তো আমাদের সাথে কথাও বলো নি।তাই!”

সত্যি কথা বলেছে।বাড়িতে ফিরে ওদের সাথে তেমন কথা হয় নি সংকল্পের।ওদের কথা বিশ্বাসযোগ্য।কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছে না সংকল্প।তারা কি বিচ্ছু সংকল্পের ভালো করেই জানা আছে।রাহিব-সাহিব অবুঝের মতো চেহারা করে দাঁড়িয়ে আছে।সংকল্প চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞাসা করলো,
“সত্যি বলছিস?”
“আমরা মিথ্যা বলি না ভাইয়া।” কানে হাত ঢলতে ঢলতে বললো দু’জনে।
সংকল্প সেন্টি খেয়ে বললো,
“এটাই তো সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।”

রাহিব তাকালো সংকল্পের দিকে।বললো,
“সব সময় সত্যি কথা বলতে নেই।জানো না তুমি?এই বুঝি এতো লেখাপড়া করেছো।আবার কত মানুষ পড়াও!”

সাহিব রাহিবের মাথায় চাটি মে রে থামিয়ে দিলো।রাহিব তাকাতেই কটমট করে তাকালো সাহিব।রাহিব বুঝলো বেশি কথা বললে কাজের কাজ হবে না।রাহিব এসে সংকল্পের ডান হাত জড়িয়ে ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে যেতে লাগল।বললো,
“বাদ দাও তো ভাইয়া।চলো চলো খেতে চলো।”

রাহিব সংকল্পের হাত ধরে নিয়ে যাওয়ায় সময় সংকল্প সাহিবকে ডাকলো,
“এই তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? আয়!”

সাহিব কয়েক কদম এগিয়ে পেটে হাত দিয়ে আর্তনাদ করতে শুরু করলো।
সংকল্প থতমত খেলো।হঠাৎ কি হলো!ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,
“তোর আবার কি হলো?”
সাহিব মুখ খিঁচিয়ে বললো,
“দুই নাম্বার চেপেছে ভাইয়া!”

সংকল্পের চেহারা বিরক্তিতে ছেয়ে গেলো।বিরক্তির স্বরে বললো,
“তো উহ আহ করছিস কেনো?যা এখান থেকে।”

রাহিব সংকল্পের হাত ছাড়ে নি।আবার টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
“ওর কথা শুনো না ভাইয়া।ওর ডায়রিয়া হয়েছে।এই পর্যন্ত দশ-বারোবার বাথরুম থেকে ঘুরে আসছে।যাচ্ছে আর আসছে।”

বলে সাহিবের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো।সংকল্প দেখে নি।সে রাহিবের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো। হাটতে হাটতে বললো,
“এতোক্ষণ যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো?তখন তো মনে হয় নি ও অসুস্থ!”

“আরেহ ভাইয়া তুমি বেশি প্রশ্ন করো।তোমার সিআইডিতে জয়েন করা উচিত ছিলো।চলো তো।”

রাহিব বিরক্তি নিয়ে বলে নিয়ে গেলো সংকল্পকে।ওরা চলে যেতেই সাহিব সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মুখে শ য় তানি হাসি।বোঝা যাচ্ছে পরিকল্পনা সফল হতে কিছুক্ষণ বাকি।সে হেলতে দুলতে সংকল্পের ঘরে গেলো।আশপাশে দেখলো,পর্যবেক্ষণ করলো।ভেবেচিন্তে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে পকেট থেকো একটা জিনিস বের করে নিজের চোখের সামনে রাখলো।শ য় তা নি হাসি দিয়ে বললো,

“ডোজ নাম্বার থ্রি।”

জিনিসটা প্রতিজ্ঞার কসমেটিকস্ বক্সে রেখে দিলো।ভেঙচিয়ে বললো,
“আমাদের নামে মায়ের কাছে নালিশ করবে!বের করছি নালিশ করা।”

তারপর হেলতে দুলতে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষে সবাই নিজ নিজ ঘরে চলে যায়।শুধু প্রতিজ্ঞা আর তার দুই শাশুড়ী রয়ে যায়।সাথে বাড়ির পরিচারিকারা।প্রতিজ্ঞা ভেবেছিলো শাশুড়ীদের হাতে হাতে সাহায্য করবে।কিন্তু শাশুড়ীরা তাকে ধমকে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। জাহানারা বেগম বলেছেন,
“আমরা আছি এখানে।সাথির মা,নিলু ওরা তো আছেই।তুমি ঘরে যাও।সংসারের কাজ করতে হবে না তোমাকে।নিজের খেয়াল রাখো আগে।”

মাধুরী বেগমও তাতে সায় দিলেন।বললেন,
“ভাবী ঠিক বলছে।তুমি চলে যাও।আমরা সামলে নিবো।পাকামি করবে না।”

আর কি!শাশুড়ীদের কথা শুনে নিজের ঘরের দিকে চলে যেতে নেয়।তার ঘরে যাওয়ার জন্য রাহিব-সাহিবের ঘর পার করতে হয়।প্রতিজ্ঞা কিছু একটা ভাবতে ভাবতে যাচ্ছিলো।তখনই রাহিব-সাহিব একসাথে বলে উঠে,

“অল দ্য বেস্ট প্রতিজ্ঞাপু।”

হঠাৎ বিচ্ছু দু’টোর আওয়াজ পেয়ে প্রতিজ্ঞা ভয় পায়।বুকে থুতু দিয়ে।কটমট করে তাকায় ওদের দিকে।ওদেরকে একটা দৌড়ানি দিতে যাবে তখনই দুই ভাই হেসে দরজা বন্ধ করে দেয়।প্রতিজ্ঞা ওদের কান্ড দেখে হাসে।এই বিচ্ছু দুটোর জন্যই বাড়িটা এতো হাসি-খুশি থাকে।সবাই যেমন ওদের বকা দেয়,তেমনি ওদের কান্ডগুলো সবাইকে আনন্দ দেয়।প্রতিজ্ঞা আর এসবে পাত্তা না দিয়ে চলে যায় ঘরে।মাথা থেকে বেরিয়ে যায় “অল দ্য বেস্ট ” রহস্য।

প্রতিজ্ঞা ঘরে ঢুকে দেখতে পায় সংকল্প চোখ বুঁজে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।প্রতিজ্ঞা বুঝলো সংকল্প অনেক ক্লান্ত।সে কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়।হাত-মুখ ধুয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায়। চুল আঁচড়ে বক্স থেকে ব্যান নেওয়ার জন্য বক্স খুলতেই চিৎকার করে উঠে।সংকল্প লাফ দিয়ে উঠে আসে।অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“কি হয়েছে?চিৎকার করছো কেনো?ভয় পেয়েছো?”

প্রতিজ্ঞা বক্সের দিকে আঙ্গুল তাঁক করে বলে,
“ঐ-ঐখানে ককরোচ!”

সংকল্প মুখ খিঁচিয়ে বলে,
“তেলাপোকা? ”
“হুহ!”

সংকল্প বক্স থেকে একটা প্লাস্টিকের তেলাপোকা বের করে হাসতে থাকে।হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। কথা-ই বলতে পারছে না।
প্রতিজ্ঞা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
“আপনি হাসছেন কেনো?”

সংকল্প হাসতে হাসতে পেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছে।কোনোমতে থেমে বললো,
“হাসবো না?আমার বউ কিনা তেলাপোকা ভয় পায়। তাও প্লাস্টিকের তেলাপোকা।”

বলে আবার হাসতে লাগলো।
প্রতিজ্ঞা চোখ-মুখ কুঁচকে রেখেছে।বললো,
“এই একটা জিনিসই ভয় পাই। উড়ে এসে গায়ে লাগে। গা ঘিন ঘিন করে।কেমন যেনো লাগে!”

সাথে সাথে আবার বলে,
“এই ওয়েট!প্লাস্টিকের তেলাপোকা এখানে আসলো কিভাবে?”

এতোক্ষণে সংকল্পের হাসি থেমে গিয়েছে। সেও ভাবছে কিভাবে এলো!পরক্ষণেই দু’জনে একসাথে বলে উঠলো,
“রাহিব-সাহিব!”

প্রতিজ্ঞার মাথায় এলো একটুর আগের ঘটনা।ওরা দুইজন “অল দ্য বেস্ট” জানিয়েছে।সবটা পরিষ্কার হলো তার কাছে। গিজগিজ করতে করতে বললো,
“এরজন্যই আমাকে অল দ্য বেস্ট বলা!আমার আইসক্রিম না দিয়ে উল্টো আমাকে ভয় দেখানো। কালকে বুঝাবো মজা। শ য় তানের হাড্ডি!”

সংকল্প চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।বোঝা যাচ্ছে, প্রতিজ্ঞার কথা সে বুঝে নি।জিজ্ঞাসা করলো,
“কিসের অল দ্য বেস্ট? কিসের আইসক্রিম?”

প্রতিজ্ঞা পরপর সব কথা খুলে বললো।বিকাল থেকে এই একটু আগ অব্দি সব।সব শুনে সংকল্প হাসছে।সংকল্পের হাসি দেখে প্রতিজ্ঞাও হেসে ফেললো।

সংকল্প হাসতে হাসতে বললো,
“ভাই দু’টো আমাদের এতো বিচ্ছু হয়েছে! এতোক্ষণে বুঝেছি কেনো আমার ঘরে উঁকিঝুঁকি মা র ছিলো।”

সংকল্প সব খুলে বললো প্রতিজ্ঞাকে।সব শুনে তার হাসির বেগ বেড়ে গেলো।দু’জনেই হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো।দু’জনের পা গুলোই খাটের বাহিরে।

এভাবে অনেকসময় পার হয়ে গেলো।হাসি থেমে গেছে অনেক আগেই।দু’জনের দৃষ্টিই সিলিং ফ্যানের দিকে।সংকল্প এক হাতের উপর ভর দিয়ে প্রতিজ্ঞার পাশ ফিরলো।ডাকলো প্রতিজ্ঞাকে,
“প্রতিজ্ঞা!”
“হুম?”
ছোট্ট জবাব প্রতিজ্ঞার।দৃষ্টি এখনো সিলিং এ।
সংকল্প বললো,
“আমাদের বেবিরা যদি ওদের চাচ্চুদের মতো বিচ্ছু হয়?”

বেবির কথা শুনে প্রতিজ্ঞার শরীর বেয়ে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো।অনুভূতি ভিন্ন।কেমন কেমন লাগছে।খানিকটা লজ্জা পেলেও প্রকাশ করলো না।উচ্ছ্বাস নিয়ে সংকল্পের দিকে ফিরে বললো,
“হোক হোক!আমি তো খুউউব এনজয় করবো।”

সংকল্প প্রতিজ্ঞার আরেকটু কাছে এসে প্রতিজ্ঞাকে আগলে নিলো।প্রতিজ্ঞার মাথা দখল করে নিলো সংকল্পের প্রশস্ত বুক।চুপচাপ হৃদস্পন্দন শুনতে লাগলো।এতো মনোযাোগ দিয়ে শুনছে যেনো কেউ তাকে সংকল্পের হৃদস্পন্দর গুণার মহাদায়িত্ব দিয়েছে।তার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে সংকল্পের ভারী কন্ঠে।সংকল্প ডাকলো তাকে,
“প্রতিজ্ঞা!”
“হুহ!”
“আই নিড অ্যা বেবি।”
“চেম চেম।”
নাক টেনে টেনে বললো প্রতিজ্ঞা।বাক্য কর্ণপাত হতেই তার হৃৎস্পন্দনের হার কয়েকগুণ বেড়ে যায়।ঐ অনুভূতি অকথ্য!তবুও মজা করলো সে।
সংকল্প বোকাবনে গেলো।অন্য কোনো মেয়ে হলে এতোক্ষণে লজ্জার সাগরে হাবুডুবু খেতো।কথা বলতে পারতো না।আর এই মেয়ে কিনা মজা নিচ্ছে।সংকল্প বিস্ময় নিয়ে বললো,
“তুমি একটুও লজ্জা পেলে না?”

প্রতিজ্ঞা বাচ্চাদের মতো খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।বললো,
“আমার লজ্জা কিছুটা কম!”
“লজ্জা নারীর ভূষণ,অলংকার।”

কর্ণপাত হতেই প্রতিজ্ঞা সংকল্পের বুক থেকে মাথা উঠালো।সংকল্পের মুখের দিকে ঝুঁকে গাঢ় কন্ঠে বললো,
“আর আমার অলংকার আপনি!”

#চলবে…

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ২৯

ঘড়ির কাঁটাগুলো টিকটিক করছে।ঘন্টার কাঁটা নয়টার ঘরে,মিনিটের কাঁটা দশের ঘরে।প্রায় দশটা বাজে।সংকল্প অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে।প্রতিজ্ঞা বিছানায় বসে বসে অবলোকন করছে।সংকল্প গায়ে শার্ট জড়াচ্ছে।দু’টো বোতাম শেষে তিন নম্বর বোতামটা আটকাতে যাবে তখনই প্রতিজ্ঞা বাঁধা দেয়।সে ঠোঁট উল্টিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে।সংকল্প ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“কী?”
“আমি আঁটকে দিচ্ছি।”

বলে আগের দু’টো বোতামও খুলে ফেললো।নিজে পরপর সবগুলো বোতাম আঁটকাতে শুরু করলো।সংকল্প নিঃশব্দে হাসলো ।প্রতিজ্ঞার কপালের উপর ছড়িয়ে থাকা চুল গুলোকে ডান হাত দিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বললো,
“আমার বউ এতো রোমান্টিসিজম কোথা থেকে শিখছে?”

তার ঠোঁটের কার্ণিশে হাসির রেশ।কর্ণকুহরে প্রবেশমাত্রই প্রতিজ্ঞা চমৎকার হাসলো। এতোক্ষণে তার বোতাম আঁটকানো শেষ।সে পাশ থেকে টাই নিয়ে দু’হাতে সংকল্পের গলায় টাই জড়ালো।টাইয়ের দুই প্রান্তে দু’হাতে নিজের দিকে টান দিয়ে সংকল্পের মাথাটা নিচু করলো।সংকল্পও বাধ্য ছেলের মতো ঝুঁকলো।প্রতিজ্ঞা সংকল্পের চোখে চোখ মেলালো।দৃষ্টি মাতাল করা! নে শা ক্ত স্বরে বললো,
“সব আপনার জন্য জমিয়ে রেখেছিলাম প্রাণপুরুষ।”

সংকল্পের অধর প্রসারিত হলো।প্রতিজ্ঞার নাকে নাক ঘষে বললো,
“আর কি কি জমিয়ে রেখেছো বউ?”
“লিস্ট অনেএএএএএএক বড়।”
টাই বাঁধতে বাঁধতে ঠোঁট টিপে বললো প্রতিজ্ঞা।
সংকল্প বললো,
“আমি জানতে চাই।আমার যে তর সইছে না বউ।”
“ধীরে ধীরে।”
“হাউ ম্যানি নাইটস্ আর নিডেড টু ফিল?”

আকস্মিক ভরাট কন্ঠ কর্ণপাত হতেই প্রতিজ্ঞা চকিতে তাকালো সংকল্পের দিকে। সংকল্পের দৃষ্টিতে,ঠোঁটে দুষ্ট হাসি।প্রতিজ্ঞা ধাক্কা দিলো সংকল্পকে। মেকি রাগ দেখিয়ে বললো,
“ধ্যাত অ সভ্য লোক।”

সংকল্প শব্দ করে হেসে ফেললো।প্রতিজ্ঞার চেহারায় লজ্জার আভাস।সংকল্প প্রতিজ্ঞার ডান হাত টেনে নিজের কাছে আনলো।দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরলো।ঘাড়ে থুতনি রেখে বললো,
“যাক আমার বউ একটু লজ্জা পেয়েছে।”

প্রতিজ্ঞার রাগী দৃষ্টি আয়নায় সংকল্পের প্রতিবিম্বে নিবদ্ধ।বললো,
“অফিসে যাবেন না?নাকি এখন দিনকেও রাত বানিয়ে ফেলবেন?”

প্রতিজ্ঞার সূক্ষ খোঁচাটা বুঝতে পারলো সংকল্প।তার ঠোঁটে হাসির রেখা।প্রতিজ্ঞাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে কপালে উষ্ণ পরশ এঁকে দেয়।বলে,
“ভালোবাসি বউ।”
“কতটা?”
“অনেকগুলা।”

খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো প্রতিজ্ঞা।সংকল্পের গাল টেনে বললো,
“আমিও আপনাকে এত্তোগুলা ভালোবাসি, প্রাণপুরুষ।”

সংকল্প চলে গেলো।প্রতিজ্ঞা ঘর গুছাতে শুরু করলো।ঘর গোছানো শেষ হলে নিচে চলে যায় সে।

আজ রাহিব-সাহিব স্কুলে যায় নি।স্কুলে এইচএসসি পরীক্ষা চলায় স্কুল বন্ধ দিয়েছে।আপাতত তারা বাড়িতে এখন।অবসর সময় কাটাচ্ছে।যার জন্য মাথায় কু বু্দ্ধিগুলো বেশি আসে।যদিও অন্যসময়েও আসে।তবে এই অবসর সময়ে বেশি আসে। সময় নিয়ে গবেষণা করতে পারে তো।কিন্তু আজকে তাদের কপালে শনি লেগেছে।দুই ভাই গত পনেরো মিনিট যাবৎ কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তাও ড্রয়িংরুমে।মুখগুলো প্যাঁচার মতো করে রেখেছে দু’জন।সামনে বসে থাকা মানবীকে ইচ্ছেমতো গা লা গাল দিচ্ছে তারা।তবে মনে মনে।পাশ থেকে জাহানারা বেগম আর মাধুরী বেগম দেখছেন আর হাসাহাসি করছেন।রাহিব-সাহিবের সামনে বসে থাকা মানবী অন্য কেউ নয়,প্রতিজ্ঞা।প্রতিজ্ঞা সোফায় হেলান দিয়ে বসে চিপস্ খাচ্ছে আর রাহিব-সাহিবের দিকে তাকিয়ে গা জ্বা লানো হাসি দিচ্ছে।মূলত এটা রাহিব-সাহিবের শাস্তি।গতকাল রাতে প্রতিজ্ঞা ভয় দেখানোর জন্য।প্রতিজ্ঞা একটা চিপস্ মুখে পুড়ে দিলো।চিবুতে চিবুতে বললো,
“কেমন লাগছে আমার ফর্মূলা নাম্বার জিরো জিরো ওয়ান?’

দুই ভাই একসাথে ভেঙচি কাটলো।সাহিব চোয়াল ঝুলিয়ে বললো,
” খুউউউউবই বাজে।”

প্রতিজ্ঞা মুচকি হাসলো।রাহিব মেকি রাগ দেখিয়ে বললো,

“বিশ্বাস করো আমরা কিছু করিনি।তুমি হুদায় আমাদেরকে শা স্তি দিচ্ছো।আমাদের সময় নষ্ট করছো।আমাদের সময়ের দাম আছে।তুমি না-ই দিতে পারো।”

রাহিবের সাথে সাহিবও তাল মেলালো।বললো,
“সহমত সহমত।”

রাহিবের কথায় প্রতিজ্ঞা বিষম খেলো।কাশতে শুরু করলো। মাধূরী বেগম পানি নিয়ে দৌড়ে আসলেন।ছেলেদের ধমক দিলেন।বললেন,
“এই তোদের কিসের সময় নষ্ট রে?বেশি পেঁকেছিস। প্রতিজ্ঞা তো শুধু কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।আমি তোদের খাবার বন্ধ করে দিতাম।শ য় তানের দল।”

রাহিব-সাহিব মাকে ভেঙচি কাটলো।মাধুরী বেগম কটমট করে তাকিয়ে আছেন ছেলেদের দিকে।
প্রতিজ্ঞা পানি খেলো।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো ওদের দিকে।বিচ্ছুদের নাকি সময়ের দাম আছে।সে নাকি ওদের সময় নষ্ট করছে।বাবাগো বাবা!প্রতিজ্ঞা মাধুরী বেগমকে ওদের ধমকাতে নিষেধ করলো।বললো,

“ওদের বকো না চাচীআম্মু।আমি সামলে নিবো।তুমি যাও।”

“হ্যাঁ এতোদিন সবাই লাই দিয়েছে,এখন তুই ও দে। মাথায় তোল।কালকে প্লাস্টিকের তেলাপোকা রেখেছে,কোনো একদিন দেখবি আস্তো চিড়িয়াখানা উঠিয়ে নিয়ে এসেছে।”

রাগে গিজগিজ করতে করতে চলে গেলেন তিনি।
সাহিব ভাবুক হয়ে বললো,
“মা বুদ্ধিটা তো খারাপ দাও নি।”

সাহিবের কথা শুনে প্রতিজ্ঞা শব্দ করে হেসে ফেললো।মাধুরী বেগমও হেসে ফেললেন ছেলেদের কথায়।ছেলেদের পা গ লামীতে তিনি অভ্যস্থ হয়ে গেছেন।জাহানারা বেগম অধর প্রসারিত করে বললেন,
“ছেড়ে দে তো আমার মানিক-রতনকে।তোরা এতো বকিস কেন আমার বাচ্চাদের!”

রাহিব-সাহিবকে উদ্দেশ্য করে আদুরে স্বরে বললেন,
“যা তো মানিক-রতন।তোদের শা স্তি শেষ।”

দুই ভাইয়ের মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি।জাহানারা বেগমের দিকে ফ্লাইং কিস্ ছুড়ে দিয়ে উচ্চস্বরে বললো,
“লাভিউ বড়মা।”
“বড়মা লাভিউ মোর।”
জাহানারা বেগম আদুরে স্বরে বললেন।
রাহিব-সাহিব চলে যেতে নিলে প্রতিজ্ঞা বাঁধা দেয়।বলে,
“এই দাঁড়া। ”
“কি হলো?” ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো রাহিব।
“আমরা ঘুরতে যাবো এখন।”
“কেনো?” চোখ ছোট ছোট করে বললো সাহিব।
“তোরা তো আমাকে আইসক্রিম খাওয়াস নি,আমিই খাওয়াবো চল।”

প্রতিজ্ঞার কথায় দুইভাই খুশি হলো।রাজি হয়ে গেলো যাওয়ার জন্য।

জাহানারা বেগম প্রতিজ্ঞাকে জিজ্ঞাসা করলো,
“এই দুপুর বেলায় কেনো বের হবি?”
“আম্মু সাবিহার বিয়ে তো এগিয়ে এলো। আমি তো শপিং করি নি।পরে তো সময় পাবো না।”

প্রতিজ্ঞার কথা শুনে দুই জা নিজেদের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।কিছু একটা মনে করে মন খারাপ হলো প্রতিজ্ঞার।সে তো ভেবেছিলো এই বাড়িতে আসবে না।সাবিহার বিয়ে উপলক্ষে সব আয়োজনেই ওকে এই বাড়ি থেকে ফোন করা হয়েছে, বাড়িতেও যাওয়া হয়েছিলো ওকে আনতে। কিন্তু সংকল্পের প্রতি অভিমানে,রাগে সে আসে নি।তার মতে,যার জন্য এই বাড়ির সাথে সম্পর্ক সেই তো নেই।দরকার কি!
কিন্তু হুট করে কি থেকে কি হলো।আচমকা অভাবনীয় ভাবে সুখের ঝড় এলো,সুখের ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে নিলো।

তার ভাবনার অঙ্ক থেমে যায় জাহানারা বেগমের কথায়।বললেন,
“এখন বের হওয়া লাগবে না।তুই ঘরে যা।আমরা আসছি।”
“কেনো?”
“যা তো,এতো প্রশ্ন করিস কেন!”
বললেন মাধুরী বেগম।

দুই শাশুড়ীর কথায় ঠোঁট উল্টিয়ে চলে গেলো প্রতিজ্ঞা।রাহিব-সাহিবের খুশিতে ভাটা পড়লো।বিরক্তি নিয়ে বললো,
“খালি আমাদের সময় নষ্ট!”

বলে মুখ ঝামটা মেরে চলে গেলো দুই ভাই।

প্রতিজ্ঞা বিছানায় বসে আছে।কোনো কাজ না থাকায় মাথায় বুদ্ধি চাপলো। সংকল্পকে জ্বালানোর জন্য মোবাইলটা হাতে নিলো।মেসেজ অপশনে গিয়ে সংকল্পকে মেসেজ দিলো,
“আই ওয়ানা হাগ ইউ,জামাইজাাাাাাাান।”

পাঁচ মিনিটের মাথায় মেসেজটা সিন্ হলো।সংকল্প নিঃশব্দে হাসলো।বুঝলো তার রোমান্টিক বউ তাকে জ্বা লানোর চেষ্টায় আছে।সেও কম যায় না।সেও একটা মেসেজ পাঠালো।মেসেজটা সাথে সাথেই সিন্ হলো।মেসেজটা দেখা মাত্রই প্রতিজ্ঞা কাশতে শুরু করলো।বদ লোকটাকে জ্বা লা তে গিয়ে নিজেই জ্বলে পু ড়ে গেলো।সংকল্পের আফসোস হচ্ছে।মেসেজটা দেখে তার বউয়ের প্রতিক্রিয়া কেমন হয় তা দেখার জন্য।ইশশশ!তার কম লজ্জা পাওয়া বউটাকেও লজ্জা দেওয়া যেতো।ভেবেই নিঃশব্দে হাসলো সংকল্প। তার বউ আর রিপ্লাই দিচ্ছে না।ভেবে নিলো বউ লজ্জায় লাল-নীল হয়ে আছে,তাই কিছু বলছে না। সে আবার কাজে মনোযোগ দিলো।

অন্যদিকে,প্রতিজ্ঞার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে।মেসেজ দেখে ভ্যাবচ্যাকা খেয়েছে সে। ভেবেছিলো সংকল্প ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলবে যে,
“বউ আমাকে কাজ থেকে ডিসট্রাক্ট করো না।বিজি আছি।”

কিন্তু করলো উল্টোটা।বলে কিনা,
“তোমার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে ইচ্ছে করছে বউ।তাড়াতাড়ি কাছে আসো তো।আই ক্যান্ট ওয়েট ফর ইয়্যুর লিপস্ টেস্ট।আই অ্যাম ডাইয়িং ফর টেস্টিং ইয়্যু,বউ।”

#চলবে…