হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
180

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ৩০ (১৮+ এলার্ট)

প্রতিজ্ঞা ভাবছিলো সংকল্পকে ফিরতি কি মেসেজ পাঠানো যায়।যাতে করে সংকল্পকে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ানো যাবে।ভাবতে ভাবতেই অনেকটা সময় পার হয়ে যায়।এর মধ্যে প্রতিজ্ঞার ঘরে তার দুই শাশুড়ী জাহানারা বেগম এবং মাধুরী বেগমের আগমন ঘটে।প্রতিজ্ঞার আর মেসেজ পাঠানো হয় না।দুই শাশুড়ীকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে বেশি অবাক হয়েছে তাদের হাতের একগাদা জিনিসপত্র দেখে।দুই শাশুড়ীর হাতভর্তি শপিং ব্যাগ আর গয়নার বাক্স।প্রতিজ্ঞা বিস্ময় নিয়ে তাকালো।শাশুড়ীরা হাসিমুখে বিছানার উপর সব রাখলেন।সাথে সাথেই সাবিহা কয়েকটা ব্যাগ নিয়ে ঢুকলো।প্রতিজ্ঞা ভাবলো এগুলা সাবিহার বিয়ের জন্য করা শপিং।তাকে দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছে।
সাবিহা প্রতিজ্ঞাকে বললো,
“দেখে বলতো কেমন হয়েছে এগুলো।”

প্রতিজ্ঞা মজা করে বললো,
“তোর বিয়ের শপিং দেখে তো আমার হিং সে হচ্ছে রে সাব্বু।”

সাবিহা মুখ কুঁচকে বলে,
“তুই আমার বিয়ের শপিং দেখলি কি করে?কবে দেখলি?কে দেখালো?”

সাবিহার কথা শুনে থতমত খায় প্রতিজ্ঞা।ভ্রু জড়িয়ে বিছানার উপর রাখা জিনিসপত্রের দিকে তাকিয়ে বলে,
“মানে?এগুলো তোর বিয়ের শপিং না?”

প্রতিজ্ঞার কথা শুনে উপস্থিত তিনজনেই শব্দ করে হেসে ফেলে।প্রতিজ্ঞা বোকাবনে যায়।বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
“হাসছো কেনো তোমরা?”

জাহানারা বেগম এগিয়ে এলেন প্রতিজ্ঞার দিকে।মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“পা গলী মেয়ে আমার।এগুলো সব তোর জন্য।”

মাধুরী বেগম সাথে সাথেই বললেন,
“খুলে দেখ তো পছন্দ হয় কিনা!”

শাশুড়ীদের কথা শুনে আশ্চর্য হয় প্রতিজ্ঞা।সে এই বাড়িতে
এতোদিন আসে নি।অথচ এই বাড়ির মানুষগুলো ওর কথা ভেবেছে।প্রতিজ্ঞা যে এই বাড়ির বউ,এই বাড়িতে থাকে না,তারা এসব বিষয় মাথাতেই আনেন নি।বাড়ির বউয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন নি।ভাবতেই প্রতিজ্ঞার চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো।ভাবনা বিঘ্নিত হয় জাহানারা বেগমের কথায়।তিনি কয়েকটা গয়নার বাক্স প্রতিজ্ঞার দিকে এগিয়ে দিলেন। বললেন,
“এই গয়নাগুলো আমাদের বাড়ির ঐতিহ্য।উত্তরাধিকার সূত্রে বংশ পরম্পরায় শাশুড়ীরা তাদের বউমাকে দেয়।আমি আমার শাশুড়ী থেকে পেয়েছি,এখন এগুলো তোর।”

প্রতিজ্ঞা বাঁধা দিলো,নিতে চায়লো না। জাহানারা বেগম ধমক দিলেন। বললেন,
“এগুলা তোর দায়িত্ব। রাখ!”
“এগুলো নিতে হয়।আমরাও নিয়েছি।গহনাগুলো বংশের ঐতিহ্য। ”

মাধুরী বেগমের কথায় গয়নার বাক্সগুলো নিয়ে পাশে রাখলো প্রতিজ্ঞা।জাহানারা বেগম আরো তিনটে গয়নার বাক্স এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“এই গহনাগুলো আমি গড়িয়েছি আমার সংকল্পের বউয়ের জন্য।দেখ তো পছন্দ হয় কিনা!”

প্রতিজ্ঞা বিস্ময় নিয়ে বললো,
“আমি এতো গহনা নিয়ে কি করবো?আমি অলংকার পড়ি না।”
“পাঁচ অলংকারেই নারী সুন্দর।বুঝলি?আরো আছে!”

আরো চারটে বক্স এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“এখানে তোর বিয়ে উপলক্ষে কেনা গহনা আছে।আর সাবিহার জন্য গহনা কিনতে গিয়েও তোরে জন্য কিনেছি। সব এখানে।তোকে তো বারবার বলেছি আসতে,আসিস নি।আমাদের পছন্দমতোই কিনেছি।”

এইবার সত্যিই প্রতিজ্ঞার চোখের কার্ণিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।বাড়ির মানুষগুলো বাড়ির প্রতিটা অনুষ্ঠানে তার কথা স্মরণ করেছিলো।তাকে আনতেও গিয়েছিলো কয়েকবার।সাবিহার বিয়ের কথাবার্তা বলা সময়ও তাকে জানানো হয়েছে। শপিং করবে,সেখানেও তাকে থাকতে বলা হয়েছিলো।সংকল্পের প্রতি অভিমানে প্রতিজ্ঞা আসে নি।একজনের সাথে অভিমান করে এই বাড়ির মানুষগুলোকে কষ্ট দিয়েছে সে।ভাবতেই কেমন অপরাধবোধ কাজ করছে।প্রতি পদে পদে অনুভব হচ্ছে এই বাড়িতে থেকে গেলেই পারতো,মানুষগুলোকে কষ্ট না দিলেও পারতো।সংকল্প না থাকলেও এই মানুষগুলোর ভালোবাসায় সে সুন্দর জীবন কাটাতে পারতো।জাহানারা বেগমের কোমড় জড়িয়ে ধরলো প্রতিজ্ঞা।শাড়ীর ভাজে মুখ গুঁজে ক্রন্দনরত স্বরে বললো,

“আমি স্যরি।আমি তোমাদের কষ্ট দিয়েছি।আমার কথা তোমরা ভাবলেও,আমি তোমাদের কথা ভাবি নি।তোমরা রাগ করো না,ক্ষমা করে দাও।”

জাহানারা বেগম মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
“ধূর পা গল।কান্না করছিস কেনো?তোর জায়গায় থাকলে যে কেউ এমন করতো।তোর মনে হয় আমরা তোর উপর রেগে আছি?পা গল।”

আবার বললেন,
“শোন আমরা কিন্তু জানি গত দুই বছর প্রতি ঈদে,বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে আমাদের সবার জন্য এতো এতো গিফট্, জামা-কাপড় কে পাঠাতো।শুধু শুধু মন খারাপ করবি না।”

জাহানারা বেগমের কথা শুনে প্রতিজ্ঞা চকিতে তাকালো তার দিকে।চোরাচোখে তাকালো সবার দিকে।উপস্থিত তিনজনের ঠোঁটের কার্ণিশে হাসির ছাপ।প্রতিজ্ঞা বুঝলো সে ধরা পড়ে গিয়েছে অনেক আগেই।উনারা সবাই জানেন অজ্ঞাত উপহারগুলো সব প্রতিজ্ঞা-ই পাঠাতো।রাগ-অভিমানের উর্ধ্বে ভালোবাসা,কর্তব্য। প্রতিজ্ঞা দূরে থাকলেও এই বাড়ির মানুষগুলোর প্রতি কর্তব্য পালনে ভুলে নি।বাড়ির বউ হিসেবে দূর থেকে যা যা করার সবই করেছে।ধরা পড়ে গিয়ে ঠোঁট উল্টে বসে রইলো সে।

মাধুরী বেগম হেসে এগিয়ে এলেন।তার হাতে চারটে বক্স।প্রতিজ্ঞাকে উদ্দেশ্য করে আদর মাখানো স্বরে বললেন,
“হয়েছে,কান্নাকাটি বাদ।ছোট আম্মুর গিফ্ট গুলো পছন্দ হয় কিনা দেখ তো।”

প্রতিজ্ঞা চোয়াল ঝুলিয়ে বললো,
“তোমরা কি আমাকে রাণী সাজানোর চেষ্টায় আছো?”
“তুই তো আমাদের বাড়ির রাণী-ই।”

প্রতিজ্ঞার থুতনিতে ধরে বললেন মাধুরী বেগম।কথা শুনে অশ্রুপূর্ণ চোখেও হেসে ফেললো প্রতিজ্ঞা।শাশুড়ীরা একে একে বিয়ে উপলক্ষে প্রতিজ্ঞার জন্য কেনা সব জামা-কাপড়,শাড়ী তাকে বুঝিয়ে দিলেন।সব দেখানোর শেষে প্রতিজ্ঞার মাথায় হাত।
“তোমরা আমাকে ছাড়াই এতো কিছু কিনে ফেলেছো?এর জন্যেই আমাকে শপিংমলে যেতে দাও নি!”

জাহানারা বেগম অধর প্রসারিত করলেন।বললেন,
“সব দেখানো শেষ।এবার তুই শপিং করতে যা।তোর পছন্দমতো কেনাকাটা কর।”

“এগুলো কয় বছরে শেষ করবো?আবার নাকি কেনাকাটা!”

প্রতিজ্ঞার কথায় তিনজনেই হেসে ফেললো।আরো অনেকক্ষণ কথা বলে তারা নিজ নিজ কাজে চলে গেলেন।

ধরণীতে তমসা বিরাজ করছে নিজ গতিতে।ঘড়ির ঘন্টার কাঁটা নয়টার ঘরে।সংকল্প ফোন করে জানিয়েছে আজকে আসতে দেরী হবে।মিটিং আছে, বাহিরেই খাবার খেয়ে ফেলবে।প্রতিজ্ঞা যেনো অপেক্ষা না করে।বেশি দেরী হলে যেনো ঘুমিয়ে পড়ে।

প্রতিজ্ঞা বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছে।এখন নিজেকে দুনিয়ার সবথেকে বেকার মানুষটা মনে হয়।কোনো কাজকর্ম নেই।সারাদিন শুয়ে বসে থাকো,খাও,ঘুরো।এই তো দিন কেটে যাচ্ছে এভাবেই।সে শুয়ে শুয়ে ভাবছে কি করা যায়!পরক্ষণেই মনে পড়ে সংকল্পের সকালের মেসেজটা।মনে পড়তেই লজ্জায় রাঙ্গা হয় প্রতিজ্ঞার বদন।মাথায় চাপে দুষ্ট বুদ্ধি।উঠে যায় পরিকল্পনা সফল করতে।

সংকল্পের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সাড়ে এগারোটা বেজে যায়।আজ বড্ড ধকল গেছে।অনেক ক্লান্ত সে।নিজের ঘরে প্রবেশ করতেই দেখে ঘরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে।বুঝে নিলো প্রতিজ্ঞা ঘুমোচ্ছে।আলো জ্বালালো সে।দেখলো প্রতিজ্ঞা ঘরে নেই।বড্ড অবাক হলো।কিন্তু পরক্ষণেই ভেবে নিলো সে আসতে দেরী হওয়ায় হয়তো সাবিহার সাথে আড্ডা দিচ্ছে।মাথা না ঘামিয়ে সে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ পেতেই বেলকনি থেকে ঘরে এলো প্রতিজ্ঞা। সংকল্পের গাড়ির আওয়াজ পেয়েই ঘর,বেলকনির আলো নিভিয়ে বেলকনিতে লুকিয়ে ছিলো সে।ধীর পায়ে হেটে এসে ঘরের আলোটা নিভিয়ে বসে রইলো।ওয়াশরুম থেকে পানির ঝিরিঝিরি শব্দ আসছে।বুঝে নিলো সংকল্প গোসল করছে।

প্রায় আধা ঘন্টা পরে ওয়াশরুম থেকে বের হলো সংকল্প।আবার ঘরটা অন্ধকার দেখে হতবাক হলো।সে তো আলো জ্বেলেছিলো।তবে কি প্রতিজ্ঞা এসেছে?সে নাম ধরে ডাকলো কয়েকবার। সাড়াশব্দ পেলো না।সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে আলো জ্বালালো।পেছন ফিরতেই বিস্ময়ে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।সে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না।কয়েকবার চোখ কঁচলে তাকালো।নাহ,ঠিকই দেখছে।সংকল্পের মন বলছে সে যাকে দেখছে সে তার কল্পনা।সংকল্প তো তার প্রেয়সীকে এমন রূপে কল্পনা করতো সবসময়।সংকল্পের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীল বেনারসী পরিধান করা তার প্রেয়সী।টানা টানা চোখগুলোয় গাঢ় করে কাজল দেওয়া,বদনে হালকা কৃত্রিমতার ছোঁয়া,গোলাপের পাপঁড়ির মতো ঠোঁটে লালচে খয়েরী রঙের লিপস্টিক।মাথায় মাঝখানে সিথী টানা,সেই সিথীজুড়ে নিজের কর্তৃত্ব বিস্তার করছে ছোট্ট একটা টিকলি,কানে টানা তিন ঝালরের বড় টানা দুল,নাকে টানা নথ,গলায় চোকার,সীতাহার,হাত ভর্তি চুড়ি,উন্মুক্ত পেটে কোমড় বিছা নিজের আধিপত্য স্থাপন করে নজরকাড়ছে ভীষণ।অধর অল্প-স্বল্প প্রসারিত।শাড়ীর ভাজ করা লম্বা আচল হাঁটু ছুঁই ছুঁই।কোমড় অব্ধি চুলগুলো অবাধ্য হয়ে উড়ছে। প্রতিজ্ঞা সেজেছে আজ।নিজের মন মতো সাজিয়েছে নিজেকে।অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো এভাবে সাজাবে নিজেকে,সংকল্পকে অবাক করে দিবে।সংকল্প যখন বিস্ময় নিয়ে তাকে দেখবে,তার ত্রুটি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে যাবে,তখন সেই বিস্মিত চোখজোড়ায় ডুব দিবে সে।

সংকল্পের মনে হচ্ছে যেনো কোনো রাজরাণী তার সামনে দাঁড়িয়ে।এতো টুকুই যথেষ্ট সংকল্পকে আকৃষ্ট করার জন্যে।
তার গলা শুকিয়ে আসছে।এসির শো শে বাতাস পুরো ঘরময় শীতল পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখলেও,সদ্য গোসল করা সংকল্পের গরম অনুভব হচ্ছে অনেক।হাসফাস লাগছে তার।এ কি মরণফাঁদ?সে বারবার ঢোক গিলছে।প্রতিজ্ঞা ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে ধীর পায়ে সংকল্পের দিকে এগিয়ে আসছে।পায়েলের রিনিঝিনি শব্দে মুখরিত পুরো ঘর।রিনিজিনি শব্দটাও প্রতিফলিত হচ্ছে,ঘরের প্রতিটি দেয়ালে দেয়ালে সর্বোচ্চ গতিতে আঁচড়ে পড়ছে।

সংকল্প ঢোক গিললো।কোনোভাবেই ধাতস্থ করতে পারছে না নিজেকে।সদ্য স্নান করলেও ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে।প্রেয়সীর বিধ্বং সী রূপ বুঝি এমনই হয়।হাসফাস করছে সে।সময় নিয়ে ধাতস্থ করলো নিজেকে।এতোক্ষণে প্রতিজ্ঞা তার কাছে চলে এসেছে।সংকল্প বুক ভরে প্রলম্বিত শ্বাস নিলো।সংকল্পের কথারা দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।জড়িয়ে যাচ্ছে।কোনো ভাবে জড়ানো কন্ঠে ঢোক গিলে বললে,
“তোমার এই বি ধ্বংসী রূপের কারণ কি?”

খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো প্রতিজ্ঞা।সংকল্পের মনে হলো এ কোনো লাস্যময়ী,কোনো কুহকিনী।প্রতিজ্ঞা ঠোঁটের কার্ণিশে অদ্ভুত হাসি ঝুলিয়ে আবেশি কন্ঠে বলে,

“আপনাকে ধ্বং স করার জন্য।আমার যে বড্ড শখ আপনাকে ঘায়েল করে নিজের সর্বনাশ করার।”

“আমাকে ঘা*য়েল করা কি আদৌ বাকি?”

“প্রতিদিন নিত্যনতুন উপায়ে কাঁপন ধরাবো আপনার বুকে,ঘা*য়েল করবো আপনাকে,নিজেকে ঠেলে দিবো সর্ব*নাশের পথে।”

“ওহে সর্ব*নাশিনী,নিজের সর্ব*নাশ কে চায়?”

“আমি চাই।প্রতিক্ষণে চাই,প্রতিমুহুর্তে চাই,প্রতিদিন চাই,প্রতি পদে পদে চাই।পৃথিবীকে যতটা সময় ঘিরে আছে,ততটা সময় চাই।”

“তোমার সর্ব*নাশ নাকি আমার মরণফাঁদ?”

“হোয়াটএভার ইউ ফিল।”

সংকল্প হেচকা টানে প্রতিজ্ঞাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।একদম কাছে,এতো কাছে যেখানটার দূরত্ব ভার্নিয়াল স্কেল দিয়েও মাপা যাবে না।প্রতিজ্ঞা সম্মুখীন হলো র*ক্তলাল হয়ে থাকা সম্মোহনী দুটি চোখের।নে*শাক্ত চোখ দুটো যেনো বলে দিচ্ছে,
“আজ তোমার বিনা*শ নিশ্চিত,লাস্যময়ী।ওহে কুহকিনী,তোমার জাদুর খেলার পাঠ আজই চুকে বুকে যাবে।তৈরী হও নিজের তৈরী ফাঁদে নিজের সর্ব*নাশ দেখতে।”

আচমকা প্রতিজ্ঞার নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে গেলো।এ যেনো সংক্রমণ।তার মনে হলো কেউ সংকল্পের বুকের ভেতরে ঢাক-ঢোল পেটাচ্ছে।ফলস্বরূপ,সংকল্পের হৃদপিণ্ডের অবস্থা করুণ।ইতোমধ্যে নিঃশ্বাসের গতিবেগ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে।সংকল্পের স্পর্শে যেনো এই গতিবেগ তরঙ্গায়িত হয়ে প্রতিজ্ঞার শরীরে সঞ্চারিত হলো।কাঁপন ধরলো পুরো দেহে।দু’জনার নিঃশ্বাস মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।নিজেকে সামলানো যে বড্ড কঠিন।প্রতিজ্ঞার কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো অস্থির চিত্তে জড়ানো কন্ঠে বলা কয়েক শব্দ।

“আই ক্যান্ট ফিল এনিথিং,আই ক্যান্ট ব্রেথ।হৃদপিণ্ডটা অশান্ত নদীর পা গলাটে ঢেউয়ের মতো বয়ে চলেছে।কিনারায় আঁছড়ে পড়তে চাচ্ছে,কিন্তু পাচ্ছে না।ঢেউয়ের চাই কিনারা,আমার চাই তোমাকে।আমি তোমাকে খুব বাজেভাবে অনুভব করতে চাই,এক্ষুনি চাই।আই নিড ইয়্যু বেডলি,রাইট নাউ।”

সংকল্প আচমকা পাঁজা কোলে নিয়ে নিলো প্রেয়সীকে। শিউরে উঠলো প্রতিজ্ঞা।আঁকড়ে ধরলো তার প্রাণপুরুষের কাঁধ।সংকল্প আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো নিজ প্রেয়সীকে।প্রতিজ্ঞা চোখ বন্ধ করে আছে।দেহ মৃদু কাঁপছে।পরিচিত অনুভূতি তবুও অদ্ভুত।তবে কি নিত্যনতুন রূপের সাথে অনুভূতিরাও নিত্যনতুনরূপে ধরা দিচ্ছে।সংকল্প সময় নিয়ে গাঢ় পরশ এঁকে দেয় প্রতিজ্ঞার কপালে।বদন ভরিয়ে দেয় আদরে আদরে।গোলাপের পাঁপড়ির মতো অধরে নিজ পুরুষালি অধর ডুবায়।আদূরে অবাধ্য স্পর্শ চলে অনেকক্ষণ।একটা সময় পরে অস্থির প্রতিজ্ঞার কানে ভেসে আসে উন্মত্ত স্বর,
“কার জন্য তোমার এই বি*ধ্বংসী সাজ?”

প্রতিজ্ঞার প্রমত্ত দৃষ্টি সংকল্পের র*ক্তলাল চোখে নিবদ্ধ।কথারা গলায় আঁটকে যাচ্ছে।সংকল্পের যেনো এই বিরতি বিরক্ত লাগলো।নে শা ক্ত স্বরে বললো,
“বলো!”
“আ-প-না-র জন্যে!”
“তবে এই সাজ আমার হাতেই নষ্ট হোক!”

প্রতিজ্ঞার আটকে যাওয়া কথার বিপরীতে ভরাট কন্ঠে বললো সংকল্প।
এক এক করে প্রতিজ্ঞার গা থেকে সকল অলংকার সরিয়ে দিলো সংকল্প।তারপর!

তারপর প্রতিজ্ঞার সারা অঙ্গে শোভা পেলো সংকল্প নামক অলংকার।

#চলবে…

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ৩১

সূর্যের আলো ফুটতেই ঘুম ভেঙে যায় সংকল্পের।বুকের উপর ভারী কিছুর অস্তিত্ব টের পায়। এটা নতুন না।প্রতিদিনই এমন হয়।প্রতিজ্ঞা তার গলা জড়িয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে ঘুমায়।অদ্ভুত অদ্ভুত কান্ড তার বউয়ের।সে প্রতিজ্ঞাকে পাশের বালিশে শুইয়ে দেয়।কপালে গাঢ় পরশ এঁকে দেয়।চলে যায় ফ্রেশ হতে।

গোসল সেরে বেরিয়ে আসে সংকল্প।পরনে তার সাদা টি-শার্ট, কালো টাওজার।দেখলো প্রতিজ্ঞা আড়মোড়া ভেঙ্গে বসে আছে।ঘুমে ঢুলু ঢুলু অবস্থা প্রতিজ্ঞার।গায়ে তার শুধু সাদা চাদর জড়িয়ে রাখা।উন্মুক্ত কাঁধ,গলা,হাতের আবরণ হয়েছে খোলা চুলগুলো।ছড়িয়ে ছিটিয়ে আধিপত্য বিস্তারে তৎপর।প্রতিজ্ঞার অবস্থা দেখে সংকল্পের হাসি পেলো।টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে।বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে সরু চোখে তাকায়।নিরস কন্ঠে বলে উঠে,

“এমন অবতারে বসে আছো কেনো?এটাও কি আমাকে সি-ডিউস করার নতুন প্ল্যান নাকি?নতুন রূপ?”

সংকল্পের কথা শুনে ঘুম উবে যায় প্রতিজ্ঞার।হা হয়ে তাকিয়ে থাকে।কি বললো লোকটা? সে সিডিউজ করে?এতো বড় অপমান!কিছুতেই মেনে নিতে পারে না সে।পরক্ষণেই কটমট দৃষ্টিতে তাকায় প্রতিজ্ঞা।রাগী স্বরে বলে,

“আমি আপনাকে সিডিউস করি?”

সংকল্প পাশ ফিরে নিঃশব্দে হাসলো।হাসি দেখতে পেলো না প্রতিজ্ঞা।প্রতিজ্ঞার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,

“হ্যাঁ করো তো।প্রতিদিন করো,কালকেও করলে।আমার মতো বোকা বাচ্চাটাকে তুমি সি-ডিউজ করো।”

প্রতিজ্ঞা থ হয়ে গেলো আবারো।এই লোক বোকা বাচ্চা?সে কি কোনোরকমে বোকা বাচ্চাদের অপমান করছে?প্রতিজ্ঞা রেগেমেগে বিছানা থেকে নেমে গেলো।সামনে এলো সংকল্পের।আঙ্গুল তুলে রাগান্বিত স্বরে বললো,
“আমি সি-ডিউস করি আপনাকে?”

সংকল্প প্রতিজ্ঞার আঙ্গুলের ডগায় ঠোঁট ছোঁয়ালো।নে-শা-ক্ত স্বরে বললো,
“এখনো তো করছো।নিজের রূপটা দেখেছো?লজ্জা করে না আমার মতো একটা পুরুষের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে?তুমি আমার ইজ্জত হরনের চেষ্টায় আছো।ছিহ বউ ছিহ।আমার মতো নাদান,মাসুম, ভোলা বালা লোকটার ইজ্জতের দাম নেই তোমার কাছে?”

সংকল্পের কথা শুনে বোকাবনে গেলো প্রতিজ্ঞা।হতবিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সংকল্পের দিকে।সে ইজ্জত হরন করেছে?সে অবাক,হতবাক।নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেক্কল ব্যক্তিদের তালিকার শীর্ষে রাখতে ইচ্ছে করছে প্রতিজ্ঞার।পরক্ষণেই সংকল্পের ঠোঁটের দুষ্ট হাসি দেখে তরতর করে রাগ বাড়লো প্রতিজ্ঞার।রাগে গিজগিজ করতে করতে বললো,
“তোর ইজ্জত তোকে ধুয়ে ধুয়ে খাওয়াবো।আর আসবি না আমার কাছে।”

প্রতিজ্ঞার কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো সংকল্প।ঘরময় আলোড়ন সৃষ্টি করলো তার পুরুষালি কন্ঠ।কোনোপ্রকারে হাসি থামিয়ে প্রতিজ্ঞাকে ঠেলতে ঠেলতে ওয়াশরুমে পাঠায়।বলতে থাকে,
“হয়েছে হয়েছে আর রাগতে হবে না।তোমার কাছে না আসলে কার কাছে যাবো?পাশের বাসার ভাবীর কাছে?তুমি অনুমতি দিলে যেতে পারি।”

সংকল্প যেনো আগুনে ঘি ঢাললো।প্রতিজ্ঞা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“পাশের বাসার ভাবীর সাথে তোকেও ক-ব-র দিবো।তুই রেডি থাকিস।”

সংকল্প শব্দ করে হেসে ফেললো।বুঝেছে বউ তার বড্ড রেগে আছে।ঠেলেঠুলে প্রতিজ্ঞাকে ঝর্ণার নিচে দাঁড় করিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিলো।মুহুর্তেই ভিজে জবুথবু হয়ে গেলো প্রতিজ্ঞা।তবে সেও কম যায় না।সংকল্পকে জোর করে ধরে রেখেছে,ভিজিয়ে দিয়েছে।সংকল্প ভ্রু কুঁচকে অসহায় চেহারা করে বলে উঠলো,
“আমি মাত্রই শাওয়ার নিয়েছি।”
“আবার নিবেন!”

————–

সূর্য মাথার উপর তা থৈ তা থৈ নৃত্য করছে।বেলা এগারোটা।প্রতিজ্ঞা এসেছে শপিংমলে।সঙ্গে নিয়ে এসেছে সাবিহা এবং দুই বিচ্ছু রাহিব-সাহিবকে।সবার কেনাকাটা শেষ।তবুও প্রতিজ্ঞা চায় সে নিজেও বাড়ির সকলের জন্যে কেনাকাটা করুক।যেই ভাবা সেই কাজ।তাদের কেনাকাটা শেষ হতে হতে দুপুর গড়িয়ে যায়।রাহিব-সাহিব বিরক্তিতে পারছে না কয়েকটা ডোজ একসাথেই প্রতিজ্ঞা-সাবিহার উপর প্রয়োগ করতে।দাঁত কিড়মিড়িয়ে সরু চোখে শুধু দেখেই যাচ্ছে।
একটু পর পর বলেই চলেছে,
“হুদায় আমাদের সময় নষ্ট করছো।জানো তো আমরা কত বিজি থাকি।কত কাজ আমাদের।”

ওদের পাকা পাকা কথা হেসে উড়িয়ে দেয় সাবিহা-প্রতিজ্ঞা।
কেনাকাটা শেষ হলে সবাই চলে যায় রেস্ট্রুরেন্টে।এতোক্ষণে রাহিব-সাহিবের মুখে হাসি ফুটেছে।তাদের মতে,
“পেট শান্তি তো সব শান্তি।”

খাবার অর্ডার দিয়ে চারজনে বসে আছে।অপেক্ষা খাবার আসার।রাহিব-সাহিব আশপাশটা অবলোকন করছে।সাবিহা ফোনে ব্যস্ত।প্রতিজ্ঞাও ভাবলো সংকল্পকে কল করবে একটা। কল লিস্টে গেলেও আর কল করা হয় না।হঠাৎ তাদের টেবিলের সামনে বসে এক সুদর্শন পুরুষ।
ঠোঁটে তার অদ্ভুত হাসি।প্রতিজ্ঞা তাকে দেখে অবাক হয়।তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে লোকটাকে দেখে সে অপ্রসন্ন হয়েছে।
সাবিহা,রাহিব-সাহিব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে।রাহিব-সাহিবের কাছে লোকটা অপরিচিত হলেও সাবিহার কাছে পরিচিত।সাবিহা একে দেখেছে আগেও।প্রতিজ্ঞার সাথে কয়েকদিন দেখেছে। আবার ঐদিন প্রতিজ্ঞাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো সেখানেও ছিলো।যতটুকু জানতে পেরেছে এই সেই পাত্র,আকাশ।মনে একটাই প্রশ্ন,এ এখানে কি করছে!”

রাহিব আকাশের দিকে সন্দেহের দৃষ্টি রেখে সাহিবের কানে কানে ফিসফিস করলো,
“এটা কোন ক্ষেতের মূলা?”
“সেটা তো আমিও ভাবছি।দেখ কি হয়!”
“মূলা না গাজর সেটাই বুঝতে পারছি না।”
“করল্লা হবে দেখিস!”
“হতেও পারে।”
“চুপ কর তো।ব্যাপারটা বুঝতে দে।”

প্রতিজ্ঞা শান্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করলো,
“তুমি এখানে কেনো?”

আকাশ অধর প্রসারিত করলো।সানগ্লাসটা চোখ থেকে খুলে নিজের হাতে নিলো।বললো,
“কেনো আসতে পারি না?”
“অবশ্যই আসতে পারো।তবে আমাদের টেবিলে কেনো?” কঠিন স্বরে জিজ্ঞাসা করলো প্রতিজ্ঞা।
“রাগ করছো কেনো প্রতিজ্ঞা?সুন্দরভাবে কথা বলো।”
“তোমার সাথে আমার সুন্দর করে কথা বলার সম্পর্ক?”
“আগে তে তাই করতে।”
“ভুল করতাম।পার্টির রাতের কথা আমার অজানা নয়।”

আকাশ পাত্তা দিলো না।সোজাসুজি বললো,
“আমাকে বিয়ে করলে সুখী হতে প্রতিজ্ঞা।আমি সুখে ভরিয়ে দিতাম তোমাকে। ”

প্রতিজ্ঞার চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো।রাগান্বিত হয়ে বললো,
“এক থাপ্পড় দিয়ে মুখ বাঁকা করে ফেলবো।সাহস কি করে হয় আমাকে এগুলা বলার?আমাকে অসুখী লাগে কোন দিক দিয়ে?আমার কি সুখের অভাব পড়ছে?নাকি টাকা পয়সার অভাব কোনটা?”

আকাশ হেসে বললো,
“আরেহ আরেহ এতো হাইপার হচ্ছো কেনো?চিইইল।”
“চলে যাও এখান থেকে।”
“যাবো।তোমার সাথে একটু আড্ডা দিয়ে নেই।”
“তুমি একটা নির্লজ্জ।”
“সবাই বলে।”

তখনই ওয়েটার এসে আকাশের সামনে একটা কফির মগ রাখে।মগটা থেকে গরম ধোঁয়া উড়ছে।প্রতিজ্ঞাদের অর্ডার দেওয়া খাবার আরো আগেই চলে এসেছে।

রাহিব-সাহিব বুঝলো এই মূলা ভালোভাবে যাবে না।তাই রাহিব কায়দা করে ফাঁক বুঝে তাদের জুস টা আকাশের উপর ফেলে দেয়।আকাশ রেগে যায়।দু-একটা কথা শুনিয়ে দেয়।রাহিব স্যরি বলে।আকাশ রাগান্বিত হয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।এই সুযোগে রাহিব-সাহিব তাদের ব্যাগ থেকে একটা শিশি বের করে আকাশের কফির মগটায় ঢেলে দেয়।বলা বাহুল্য,দুই ভাই যেখানেই যায়,সাথে করে ব্যাগ নিয়ে যায়।প্রতিজ্ঞা সরু দৃষ্টিতে তাদের কাজ দেখছে।সে বাঁধা দেয় না।একটু শিক্ষা পাওয়া উচিত।মেশানো শেষ হলে তারা খেতে শুরু করে।বিনোদন দেখতে হবে তো।

বেহায়া আকাশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে আগের জায়গাতেই বসেছে।নিজ থেকেই গা জ্বালানো কথাবার্তা বলে চলেছে আর কফির মগে চুমুক দিচ্ছে।প্রতিজ্ঞা রাগ করলেও প্রকাশ করলো না আর।সাবিহা মুচকি মুচকি হাসতে থাকলো।রাহিব-সাহিব বলেছে ভালো কিছু দেখতে পাবে।সেই আশায় বসে আছে।

রাহিব সাহিবকে ফিসফিসিয়ে বলে,
“কিরে ভাই কাজ হচ্ছে না কেনো?এতোক্ষণ তো লাগার কথা না।”
“আরে ব্যাটা মূলা তো।পেটে রিয়েকশন করতে সময় লাগছে।চুপচাপ খেতে থাক।”

রাহিব মাথা নেড়ে খেতে শুরু করলো।

হঠাৎ আকাশের মুখের রঙ পরিবর্তন হয়ে গেলো।তার পেট মোচড় দিচ্ছে।গা জ্বালানো কথার বুলি বন্ধ হয়ে গেলো।মেয়েদের সামনে ওয়াশরুমে যাবে ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে।উপস্থিত চারজন আড়চোখে অবলোকন করছে। রাহিব-সাহিব মিটিমিটি হাসছে।চকলেট বয় ঘামতে শুরু করলো। সহ্য করতে না পেরে ছুটলো ওয়াশরুমে।

প্রতিজ্ঞা রাহিব-সাহিবকে জিজ্ঞাসা করলো,
“কি করেছিস রে?”

রাহিব-সাহিব শ য় তা নি হাসি দিয়ে বললো,
“ডোজ নাম্বার টুয়েন্টি সিক্স”
প্রতিজ্ঞা ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি হবে এটার জন্য?”

রাহিব-সাহিব কিছু বলবে তার আগেই আকাশ এলো।টিস্যু দিয়ে কপাল মুছে বসলো সামনে।জোর করে হাসি দিলো।প্রতিজ্ঞা তীক্ষ্ণ চোখে দেখছে তাকে।আকাশ কিছু বলতে যাবে,আবার পেট মোচড় দিয়ে উঠলো।ছুটলো ওয়াশরুমে।দুইবার,তিনবার পরপর পাঁচবার এমন হতে থাকলে আকাশ ছুটলো নিজের বাড়ির দিকে।সে চলে যেতেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো সবাই।প্রতিজ্ঞা বুঝলো ডোজ নাম্বার টুয়েন্টি সিক্সের রিয়েকশন!

রাহিব-সাহিব হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।সাবিহা জিজ্ঞাসা করলো,
“কতক্ষণ থাকবে এর প্রভাব?”

রাহিব-সাহিব একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হাসি দিলো।বললো,
“তিনদিন ওয়াশরুম আর ঘর ছাড়া কোথাও যাওয়ার সুযোগ পাবে না।”

প্রতিজ্ঞা সরু চোখে তাকালো।বললো,
“বেশি ক্ষতি হবে রে?”
“বেশি হবে না।তবে ওয়াশরুমের সামনে একটা চেয়ার রেখে তিন-চারদিন বসে থাকতে হবে।বিছানায় বসার সময় নাও পেতে পারে।”

প্রতিজ্ঞা,সাবিহার চোখ আপনাতেই বড় বড় হয়ে গেলো।তাদের বাড়িতে এমন সার্টিফিকেট প্রাপ্ত দুই গবেষক আছে।কেউ জানেই না।জানলে নিশ্চয়ই অস্কার,নোবেল,গোল্ড মেডেলের মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কারগুলো তাদের বাড়িতে থাকতো।

প্রতিজ্ঞা হাতে ভর দিয়ে চোয়াল ঝুলিয়ে বলে,

“গিনেস বুকের অথোরিটি তোদেরকে খুঁজছে ভাই।”

রাহিব ভাব নিলো,
“খুঁজছে মানে?কয়েকদিন আগে আমাদের নাম লিখে নিয়ে গেছে।”
প্রতিজ্ঞার চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম,
“অ্যা?”
“হ্যাঁ!”
ভাব নিয়ে বলতেই উপস্থিত চারজন শব্দ করে হেসে উঠলো।

#চলবে…

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ৩২

সময় ও স্রোত কারো জন্যে অপেক্ষা করে না।সময় ছুটে, ছুটতেই থাকে।সে থামে না,তাকে থামানো যায় না।অনন্তকাল সে ছুটতেই থাকে।আনন্দ,হাসি,দুষ্টুমি, রোমান্টিসিজমের মধ্যে দিয়ে কেটেছে অনেকগুলো দিন।দিনগুলো প্রতিজ্ঞার কাছে স্বপ্নের মতো ছিলো।স্বর্গীয় সুখের খোঁজ যেনো সে পৃথিবীতেই পেয়ে গেছে।শত দুঃখের শেষে অতিরিক্ত চাওয়ার মানুষটাকে পেয়ে গেলে হয়তো সেই সুখকে স্বর্গীয় সুখ নামেই অ্যাখ্যায়িত করা যায়।প্রতিজ্ঞার কাছে এসব কল্পনা মনে হয়।সে বিশ্বাস করতে পারে না, এতো সুখ তার কপালে ছিলো।সে যেনো সুখের সাগরে ভাসছে প্রতিনিয়ত।রাত যতই বড় হোক,সকাল একসময় হবেই,ভোরের আলো ফুটবেই,দুঃখ যতই গভীর হয় সুখ তত নিকটে।সুখ আসবে, আসবেই,এটা নিশ্চিত।

আহমেদ মেনশন সেজে উঠেছে ফুলে ফুলে।সারা বাড়ি লাল-নীল মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।ফুলের গন্ধে মো মো করছে পুরো বাড়িটা।লোক সমাগমে গম গম করছে সারা বাড়ি।আত্মীয়স্বজন সবাই চলে এসেছে।বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।ছেলের বিয়ে হুট করে হয়ে যাওয়ায় কোনো আয়োজন হয় নি।কিন্তু মেয়ের বিয়েতে কোনোরকম ত্রুটি রাখতে চান না শাহআলম সাহেব এবং সাইদুল সাহেব।বিয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পড়েছে সংকল্পের উপর।শাহজাহান সাহেব তদারকি করছেন।সংকল্পের বড্ড ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।

ঘড়িতে সময় সাতটা কি আটটা বাজে।সূর্য অস্ত গেছে অনেকক্ষণ।একটু পর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে।হলুদের ড্রেস কোড কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ী,হলুদ রঙের পাঞ্জাবি।সাবিহার সাজগোজ শেষ।যেখানে অনুষ্ঠান হবে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পালা।সাবিহাকে ঘিরে বসে আছে বন্ধুমহল।
তবে সবাই উপস্থিত থাকতে পারে নি।সাব্বির লেখাপড়ার জন্য কানাডা চলে গেছে।রিমার বিয়ে হয়ে গেছে।স্বামীর সাথে জার্মানিতে থাকে এখন।গোল চশমার পড়ুয়া আয়েশা স্বামীর সাথে কক্সবাজার।আজ আসতে পারে নি।জানিয়েছে স্বামী ছুটি পায় নি।তবে কাল এসে পৌছাবে।

সাবিহাকে ঘিরে রয়েছে ফিহা,সোহানা,রামিম আর প্রতিজ্ঞা।এরা একসাথে হলে দিন দুনিয়ার খবর থাকে না।আজও একই অবস্থা।হাসি-ঠাট্টা যেনো শেষ হওয়ার নয়।এই হাসি-ঠাট্টার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে প্রতিজ্ঞা-সংকল্প।সবাই মিলে প্রতিজ্ঞার ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করছে।প্রতিজ্ঞার অবস্থা নাজেহাল।পুরনো কথা মনে করে লজ্জা পাচ্ছে সে।

সোহানা খোঁ চা মার লো,
“তোর গালগুলো তো পুরাই টমেটোর মতো টসটসে লাল হয়ে গেছে।বাই এনি চান্স,তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?”

সবাই মুখ টিপে হাসছে।প্রতিজ্ঞা কটমট করে তাকিয়ে আছে।ফিহা বলে উঠলো,
“আমাদের লজ্জা আছে?ছিলো কখনো?সিরিয়াস মোমেন্টে হাসাহাসি করতাম,স্যার কথা শুনাচ্ছেন,তখনও উনার সামনে হাসতাম।পড়া না পারলেও হাসতাম।কেউ কাঁদছে, তা দেখেও হাসাহাসি করতাম।মা-বাবা বকছে,তাদের সামনেও হেসে ফেলি।কত কথা শুনি,তবুও লজ্জা লাগে না ভাই।”

রামিম মধ্যে বা হাত ঢুকায়।
“তোরা জন্মের পরেই লজ্জা শরমের কাঁথা পু*ড়ে ফেলছিস।”

সবাই উচ্চস্বরে হেসে ফেলে।
সোহানা ভাবুক হয়ে বলে,
“না রে ভাই।বিয়ের পর লজ্জা পায় সবাই।দেখিস না রিমার মতো নির্লজ্জ মেয়েটাও কেমন লজ্জায় লাল নীল হলুদ কমলা হয়ে যায়।তাও ভিডিও কলে।আয়েশা তো লজ্জায় আমাদের সাথে কথা-ই বলতে পারে না।এখন দেখ প্রিতুকে।কেমন লজ্জা রাঙ্গা নববধূ হয়ে গেছে।”

প্রতিজ্ঞা কটমট করে তাকালো,
“আগে বিয়েটা হোক তারপর বুঝবা!”

সাবিহা লাজুক হয়ে বললো,
“ইশশশশশ ভাবতেই ভালো লাগতেছে,আমি লজ্জায় লাল নীল হবো।”

আবারো হাসির রোল পড়ে যায়।ফিহা ঠোঁট উল্টিয়ে ফেলে,অসহায়ের মতো তার দৃষ্টি,
“আমিও লজ্জা পেতে চাই।আমার জামাই বিয়া কেন করে না ভাই?ভাতিজার পুত কি বুড়া হইয়া বিয়া করবো?আমার মা তো উঠতে বসতে বলে আমি নাকি লজ্জা-শরমের মাথা খাইয়া ফেলছি।বিয়াটা হইলে আমিও মারে দেখিয়ে দিতাম যে দেখো দেখো আমিও লজ্জা পাচ্ছি।”

ফিহার কথা শুনে রামিম খুকখুক করে কেশে উঠে।সোহানা, সাবিহা,প্রতিজ্ঞা তাকায় ওর দিকে।ওদের চোখে দুষ্ট হাসি।রামিম চোরা চোখে আশপাশ তাকায়।গলা খাকারি দিয়ে আমতাআমতা করে,
“তোরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো?”

“আমরাও জানতে চাই ফিহার জামাই বিয়া কেন করে না!ভাতিজার পুত কি বুড়ো বয়সে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে?”

প্রতিজ্ঞার কথায় সাবিহা,সোহানা মুচকি হাসলো।ফিহা বুঝলো আবেগের বশে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে দিয়েছে।তার তো সমস্যা এটাই,বেফাঁস কথাবার্তা বলে ফেলে।
ফিহা অসহায় চোখে রামিমের দিকে তাকালো।রামিম ফিহার দিকে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।ফিহা চোখ সরিয়ে ফেলে।

“ফিহার জামাই বিয়া কেন করে না সেটা আমি কি করে বলবো?ওর জামাইকে খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসা কর।”

সাবিহা চোখ পিটপিট করে বলে,
“আমাদের দেখে কি মনে হচ্ছে আমরা ঘাসে মুখ দিয়ে চলি?”

রামিম চোরা দৃষ্টিতে তাকালে।আমতাআমতা করলো,
“কি বুঝাতে চাচ্ছিস?”

সোহানা গাল ফুলিয়ে হাসলো।বললো,
“তলে তলে টেম্পু চালাও,আমরা শুনলেই হরতাল?
গত এক সপ্তাহ আগে বিকাল পাঁচটার সময় তিতাস ওয়েব রেস্ট্রুরেন্টে তুই আর ফিহা রাণী কেনো গিয়েছিলি?হুম?”

রামিম আর ফিহার চেহারাটা পুরাই চোর ধরা পরলে যেমন দেখতে হয়,ঠিক তেমন।ফিহা চোয়াল ঝুলালো,
“তোরা আমাদের উপর নজর রাখছিলি?”
“সেই শুরুর দিন থেকে।আমাদের চোখের সামনে থেকে চুটিয়ে প্রেম করবা,আর আমরা জানবো না?তোরা চলিস ডালে ডালে আমরা চলি পাতায় পাতায়।”

সোহানার কথার পিঠে ফিহা কোনো কথা খুঁজে পায় না। রামিম কপট রাগ দেখায়,
“আগে বলিস নি কেনো?আর কে কে জানে?”
“সবাই!”

সাবিহার কথার পিঠে রামিম থতমত খায়।এরা ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দিয়েছে সবাইকে।এই হচ্ছে বন্ধুমহল।কারোর গোপন বলতে কিছু নেই।একজন জানলে সবাই জেনে ফেলে।ইশশশ,কি লজ্জা!

এর মধ্যেই জাহানারা বেগম এলেন।ধমকালেন সবাইকে।বলেন,
“এই তোরা কি ভুলে গেছিস আজকে অনুষ্ঠান?একসাথে হলেই আড্ডা দিতে শুরু করিস।দিন-দুনিয়ার খবর থাকে না।বাড়ি ভর্তি মানুষ।আর বিয়ের কনে কিনা ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি ছাদে যা।অনুষ্ঠান শুরু করতে পারছে না।নাদিমদের বাড়ি থেকে লোকজন এলো বলে!”

সাবিহা ভ্রু কুঁচকালো,
“আহ!আম্মু,বকছো কেনো?একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম তো।”

“আহা গো মা আমার।উনার বিয়ে কালকে,উনি অনুষ্ঠান ফেলে আড্ডা দিচ্ছেন।তা আবার সগৌরবে বলছেন।তা মা আড্ডা যখন দিবা,তখন কাজী ডেকে বিয়ে করে নিলেই পারতা,এতো অনুষ্ঠান কেনো করিয়েছো।”

মায়ের ধমকের বিপরীতে সাবিহা গাল ফুলালো।বাকিরা মুচকি মুচকি হাসছে।

প্রতিজ্ঞা হেসে গিয়ে জড়িয়ে ধরে শাশুড়ীকে।বলে,
“এক্ষুণি যাচ্ছি আম্মু।”

প্রতিজ্ঞার কথার বিপরীতে জাহানারা বেগম বললেন,
“তুই আমার সাথে যাবি এখন।”

সোহানা,ফিহা,রামিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“তোরা সাব্বুকে নিয়ে যা।গেস্টদের রুম থেকে বের করে নিজেরা আড্ডা দিতে বসেছেন।”

সোহানা রামিমকে ফিসফিসিয়ে বললো,
“আন্টি আসায় বেঁচে গেলি।”

বলে সাবিহাকে নিয়ে অনুষ্ঠানের জায়গায় চলে গেলো।

ঘরে প্রতিজ্ঞা এবং জাহানারা বেগম ছাড়া কেউ নেই।প্রতিজ্ঞা ভাবনায় পড়ে গেলো তাকে কেনো থাকতে বললো।চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ।উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,

“কিছু হয়েছে?আমাকে থাকতে বললে যে?”

জাহানারা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,
“কিছুই হয় নি।আমার ফুফু শাশুড়ীর সাথে তো তোর পরিচয় হয় নি।দেখতে চেয়েছেন তোকে।একটু আগেই গ্রাম থেকে এসেছেন।শোন,ঐখানে কিন্তু আমাদের বয়স্ক অনেক আত্মীয় আছে।উনারা অনেক গম্ভীর,কটু কথা শোনাতে পারে।চুপচাপ থাকিস।কিছু বললেও হজম করে নিস।ফুফু শাশুড়ীর দাপট অনেক।তোর শ্বশুরমশাইও উনার উপর রা কাটে না।সবাই ভয় পায় উনাকে।উনার মুখের উপর কথা বলার সাহস নেই আমাদের।”

শাশুড়ীর কথায় মাথা নাড়ে প্রতিজ্ঞা।

জাহানারা বেগম প্রতিজ্ঞাকে একটা ঘরে নিয়ে আসেন।ঘরে একজন বয়স্ক মহিলাকে কেন্দ্র করে সব মহিলারা বসে আছেন।মহিলার পরনে ঘেওয়া রঙের শাড়ী,চোখে চশমা, চশমায় চেইন লাগানো।দেখতেই অন্যরকম লাগছে।এই মহিলাই সম্পর্কে শাহআলম সাহেবের ফুফু।অন্য ভাই-বোনরা সেই কোন কালেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন।নাম তার নূরজাহান।নামের মতোই দাপুটে ব্যবহার তার।বয়স আশির ঘরে।সব ভাই-বোনদের মধ্যে,এমনকি বংশের সবার ছোট তিনি।এই বৃদ্ধা বয়সেও পরিবারে তার দাপট কম হয়।হুংকার ছাড়তে বেশি সময় নেন না।

প্রতিজ্ঞাকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করার পর সবার আকর্ষণ হয় প্রতিজ্ঞা।প্রতিজ্ঞা সবাইকে সালাম দেয়।নূরজাহান সরু চোখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন প্রতিজ্ঞাকে।হাতের ইশারায় নিজের কাছে ডাকলেন।প্রতিজ্ঞা জাহানারা বেগমের দিকে তাকালে তিনি চোখ দিয়ে ইশারা করলেন যাওয়ার জন্য।সে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো।নূরজাহানের সামনে দাঁড়ালে তিনি প্রতিজ্ঞার উপর পূর্ণ দৃষ্টি স্থাপন করেন।আচমকা দৃঢ় কন্ঠে হুংকার ছাড়লেন,

“এই মেয়ে তো সেই মেয়ে নয়।যার ছবি শাহআলম পাঠিয়েছিলো আমায়।বুড়ো হয়েছি বলে কি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি নাকি?দুই বছর আগের কথা মনে থাকবে না আমার?”

ঘরে যেনো মুহুর্তের মাঝেই বজ্রপাত হয়।প্রতিজ্ঞা চকিতে তাকায় নিজের শাশুড়ীর দিকে।পুরনো কষ্টরা হানা দিতে থাকে।মুহূর্তের মাঝেই বিষাদ স্মৃতি মনে পড়তে থাকে।ইশশশ,কত দূর্বিষহ ছিলো দিনগুলো।সে বুঝতে পারে নূরজাহান রাইমার কথা বলছে।জাহানারা বেগমের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে অনেক কিছুই।তিনি ভয় পাচ্ছেন প্রতিজ্ঞা কিরকম প্রতিক্রিয়া করে!

রাইমা-সংকল্পের বিয়েটা হঠাৎ হওয়ায় কোনো আত্মীয়স্বজনকে বলা হয় নি।তারা শুধু শুনেছিলো বিয়ের কথা।নূরজাহান বেগমকে ছবি পাঠানো হয়েছে এটা জানতে না জাহানারা বেগম। পরে ঘটা ঘটনাগুলো সবার থেকে আড়ালে রেখেছিলেন সবাই।কেউ সংকল্পের বউয়ের কথা জানতে চায়লে তারা বলতেন,সে সংকল্পের সাথে কানাডায় থাকে।নাহয় লোকে পাঁচটা কথা শুনাতো।পরিবারের সম্মান নষ্ট হতো।

আশ্চর্যের বিষয়,প্রতিজ্ঞা নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো।জাহানারা বেগম কিছু বলতে যাবেন তার আগেই প্রতিজ্ঞা হাসি মুখে বলে,
“দুই বছর আগে আমাকেই দেখেছিলেন।যেই ছবিটা দেখেছিলেন ঐটা ছিলো আবার তিন বছর আগের।বয়স হয়েছে তো আপনার তাই মেলাতে পারছেন না।চশমার পাওয়ারটা ঠিক করে নিবেন,তাহলে মেলাতে পারবেন।আমি আমার স্বামীর ভাগ আগেও দেই নি কাউকে,এখনো দেই না,আর ভবিষ্যতে দিবোও না।আমিই তার একমাত্র স্ত্রী।তার জীবনের একমাত্র নারী।”

শেষের দৃঢ় কন্ঠ শুনে উপস্থিত সকলেই অবাক হয়।নূরজাহান বেগমের সামনে আজ অব্ধি এমনভাবে কেউ কথা বলেছে কিনা সন্দেহ!
প্রতিজ্ঞা সবাইকে সম্মান জানিয়ে বের হয়ে যায় ঘর থেকে।নূরজাহান বেগম দাঁত কিড়মিড়িয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তখনই প্রতিজ্ঞা চলে যায়।এ যেনো আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো অবস্থা।জাহানারা বেগম বুঝলেন যখন তখন বো*মা বি*স্ফোরণ হবে।ভয় পেলেন তিনি।আজকে অনুষ্ঠানের দফারফা করে ছাড়বেন নূর জাহান বেগম।ঘরের পরিবেশ থমথমে।
জাহানারা বেগম আতঙ্কিত হয়ে বললেন,
“ফুপুজান কিছু মনে করবেন না।বাচ্চা মানুষ,বুঝে নি।আমার ছেলেটাকে বড্ড ভালোবাসে মেয়েটা,তাই তো অন্য কারো কথা শুনে….

কথা শেষ করতে পারলেন না তিনি। নূরজাহান হাতের ইশারায় থামিয়ে দেন তাকে।
রাগান্বিত স্বরে বললেন,
” আজ অব্ধি কেউ আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলে নি।আর এই হাঁটুর বয়সী মেয়ে এভাবে কথা বললো আমার সাথে!আমাকে অসম্মান করলো!বে য়া দব।নেহাতই আজ নাতনির বিয়ে নাহয় ঐ পুঁচকে মেয়েকে আমি দেখে নিতাম।”

জাহানারা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।ফুফু শাশুড়ী তুলকালাম কান্ড ঘটাবেন না এই অনেক।

ঐ দিকে প্রতিজ্ঞার অবস্থা নাজেহাল।পুরনো বিষাদময় স্মৃতি যেনো সব আনন্দ মাটিতে মিশিয়ে দিলো।তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।দৌড়ে নিজের ঘরে চলে আসে সে।সংকল্পের সাথে পথে দেখা হলেও সে পাত্তা দেয় নি।সংকল্প অবাক হয়।হঠাৎ কি হলো!সেও পেছন পেছন ছুঁটে।ঘরে এসে দেখে দরজা বন্ধ করে দেয়।প্রতিজ্ঞা হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে।ঘরে সংকল্পের উপস্থিত টের পেয়েছে সে।
সংকল্প ব্যস্ত ভঙ্গিতে জানতে চাইলো,
“কি হয়েছে প্রতিজ্ঞা?”

“প্রতিজ্ঞা?”

“এই প্রতিজ্ঞা,কথা বলছো না কেনো?কি হয়েছে?”

“না বললে বুঝবো কিভাবে?”

পরপর কয়েকবার প্রশ্ন করেও জবাব পেলো না সংকল্প।দু’হাত বাড়িয়ে প্রতিজ্ঞার মুখটা উপরে তুলে অবাক হলো।প্রতিজ্ঞার চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে।চোখের কার্ণিশ বেয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে।রীতিমতো ফোঁপাচ্ছে সে। কয়েকমুহুর্তের জন্য সংকল্পের পুরুষালী কঠিন চিত্ত কেঁপে উঠলো।এতো আনন্দ উৎসবের মধ্যে হঠাৎ কি এমন হয়ে গেলো,তার বউয়ের অবস্থা এমন করুণ।সে বুঝে উঠতে পারলো না।মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রতিজ্ঞা জাপ্টে ধরে তাকে।ডুকরে কেঁদে উঠে।আকস্মিক হওয়ায় সে টাল সামলাতে পারে না।বসা থেকে পড়ে যেতে নেয়।কোনোরকমে সামলায়।প্রতিজ্ঞা ফোঁপাচ্ছে।
সংকল্প বুঝলো গুরুতর কিছু হয়েছে।সে ধীরে ধীরে প্রতিজ্ঞার পিঠে হাত বুলাতে থাকে।শান্ত হলে নিজ থেকেই সব বলবে।প্রতিজ্ঞা ফোঁপাতে ফোপাঁতে বললো,
“আপনি শুধু আমার,তাই না?”

আচমকা এমন প্রশ্নের কারণ মাথায় আসলো না সংকল্পের।তবুও সে সায় দিলো।তাল মেলালো,
“হ্যাঁ,আমি তোমার।”
“আমার ছিলেন?”
“ছিলাম!”
“আমার আছেন?”
“এইতো আছি!”
“আমার থাকবেন?”
“আমৃত্যু!
পরজন্ম বলেও যদি কিছু থেকে থাকে,সেখানেও আমি তোমার থাকবো।”

সংকল্প টের পেলো প্রতিজ্ঞার শরীর মৃদু কাঁপছে। প্রতিজ্ঞা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সংকল্পকে।যেনো ছেড়ে দিলেই কেউ নিয়ে যাবে।ফোঁপানো কিছুটা কমে এসেছে।অস্থির হয়ে বললো,

“আপনার সর্বত্র জুঁড়ে শুধু আমি থাকবো।অন্য কোনো নারী আপনার টিকিটাও ছুঁতে পারবে না।আপনার আগে-পিছে,ডানে-বামে,অতীত,ভবিষ্যৎ, বর্তমান সব জায়গায় শুধু একজন নারীর নামই থাকবে।সে হলো আমি, এই প্রতিজ্ঞা।প্রতিজ্ঞা মানেই সংকল্প,সংকল্প মানেই প্রতিজ্ঞা।একে অপরের সমার্থক,একে অপরের পরিপূরক।মাঝখানে এক চুল পরিমাণ জায়গায়ও আমি কাউকে দিবো না।”

#চলবে..