হৈমন্তীকা পর্ব-৫+৬

0
566

হৈমন্তীকা

৫.
রোদের কিরণ তেছরাভাবে পরছে হৈমন্তীর মুখে। জ্বলজ্বল করছে রাগান্বিত আঁখিজোড়া। কাঁপতে থাকা ওষ্ঠ নাড়িয়ে হৈমন্তী বললো,
— “কোন সাহসে আপনি ইভানকে মেরেছেন?”
তুষারের সহজ সরল জবাব,
— “ও আপনার ক্ষতি করতে চাইছিল হৈমন্তীকা। আপনাকে কষ্ট দিতে চাইছিল! আমি সহ্য করতে পারি নি সেটা।”
— “কি সহ্য করতে পারেন নি? ইভান টাইমপাস করলে আমার সঙ্গে করতো। ক্ষতি করতে চাইলে সেটা আমি দেখব। আপনি কেন আগ বাড়িয়ে মারামারি করতে যাবেন? আমার সব বিষয়ে আপনাকে কে চিন্তা করতে বলেছে?”
— “আমিই তো চিন্তা করব হৈমন্তীকা। আপনি সংক্রান্ত সবই তো আমাকে ঘিরে।”

হৈমন্তীর রাগের তেজ বাড়লো। বক্ষস্থলে সৃষ্টি হলো এক বিরক্তিকর অনুভূতি। কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— “দূরে থাকবেন আমার থেকে। আপনাকে যেন আমি আমার ত্রিসীমানায়ও না দেখি।”
— “সম্ভব না।”
— “কি সম্ভব না? আপনাকে কিছু বলি না দেখে বেশি বাড় বেড়েছেন আপনি। আজই আপনার বাবাকে আপনার এসব কর্মকান্ডের কথা বলে দেব আমি। পিঠে চার পাঁচটা ঘা পড়লেই মগজ ঠিক জায়গায় চলে আসবে।”

ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো হৈমন্তী। চলে যেতে উদ্যোগী হতেই তৎক্ষণাৎ শক্ত বাঁধনে তার হাত ধরে ফেলল তুষার। হৈমন্তী চোখ রাঙিয়ে তাকায়। হাত ছাড়াতে নিলেও পারে না। তুষারের দিকে আবার তাকাতেই তুষার তার শান্ত, শীতল কণ্ঠস্বরে আওড়ায়,
— “আমি ভয় পাচ্ছি না হৈমন্তীকা। বিশ্বাস করুন, এসবের মোটেও ভয় নেই আমার। ভয় আছে শুধু আপনাকে হারিয়ে ফেলার। আপনি যা ইচ্ছে তাই করুন। আমি বাঁধা দেব না। তবে আপনার পিছুও ছাড়বো না কোনোদিন। সেটা আপনার যতই অপছন্দ হোক।”

কথাটুকু বলে হাতের বাঁধন ঢিলে করে দিলো সে। হৈমন্তী এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলো। তপ্ত নিশ্বাস ফেলে রোষপূর্ণ দৃষ্টি মেলে ধরল তুষারের নিষ্প্রভ মুখপানে।

___________

মাগরিবের আযান দিয়েছে।
হৈমন্তী নামায পড়া শেষে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। মনটা বড্ড অশান্ত হয়ে আছে তার। মাথায় শুধু তুষার নামক ব্যক্তিটির কথা ঘুরছে। এমন আধপাগল মানুষ দু’টো দেখে নি সে। এতটা জেদি কেন ছেলেটা? ভাবতেই বিরক্তি যেন আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেল তার সর্বত্র জুড়ে। তারওপর পায়েও জ্বালা করছে ভীষণ। তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে গিয়ে পায়ে কাঁচের ফুলদানি পড়ে গেছে। ফুলদানি তো ভেঙ্গেছেই, সঙ্গে তার পায়ের কোণাও কেঁটে গেছে কিছুটা। রাবেয়া সেই যে এ নিয়ে বকা শুরু করেছেন! এখনো থামেন নি।
হৈমন্তীর এখন একটু শান্তিপূর্ণ জায়গা প্রয়োজন। যা ছাদ ছাড়া কোথাও নেই। রুমে গিয়ে গায়ে ওড়না জড়িয়ে নিলো হৈমন্তী। রাবেয়া সোফায় বসে টেলিভিশন দেখছিলেন তখন। সদর দরজার কাছে যেতে যেতে হৈমন্তী বলে উঠলো,
— “মা, আমি ছাদে যাচ্ছি। একটু পরে চলে আসবো।”

রাবেয়া পেছন থেকে হাঁক দিয়ে উঠলেন, “দাঁড়া।”
হৈমন্তী দাঁড়ালো। নিজ মায়ের দিকে তাকাতেই তিনি বেশ রাগী গলায় বলে উঠলেন,
— “এমনি তো তোকে ছাদে পাঠাতে পারি না। এই সন্ধ্যাবেলায় আসছিস ছাদে যেতে! পায়ের কি অবস্থা দেখেছিস? রুমে গিয়ে বিশ্রাম কর যা!”
হৈমন্তী চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,
— “উফফ মা! রুমে ভালো লাগছে না। একটু পরে চলে আসবো বলেছি তো!”

হৈমন্তী আর দাঁড়ালো না। এক ছুটে চলে গেল ছাদের উদ্দেশ্যে। ওদিকে রাবেয়া ডাকতেই রইলেন তাকে।

__________

চারিদিকের নির্মল বাতাসে নিজেকে মুক্ত পাখির ন্যায় মনে হচ্ছে হৈমন্তীর। দারুণ ভাবে অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে গেছে নিমিষেই। আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে নিলো সে। লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ স্থীর হতেই হঠাৎ মনে হলো, তার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। তড়িৎ গতিতে চোখ মেলে পাশে তাকালো হৈমন্তী। তুষার দু’হাত রেলিংয়ের ওপর রেখে, বুক ভর করে নিমেষহীন দেখছে তাকে। হৈমন্তী চমকালো। চোখ বড় বড় করে চাইলো। তুষার আরও কিছু সময় চেয়ে থেকে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো এবার। লহু স্বরে বললো,
— “কপালের চুলগুলো কানে গুঁজে নিন উদাররাণী। আমি গুঁজে দিলে তো আপনি রাগ করবেন।”

হৈমন্তী ভ্রু কুঁঞ্চিত করে তাকালো। অবুঝের মতো কপালে পরে থাকা চুলগুলো কানে গুঁজে জিজ্ঞেস করলো,
— “উদাররাণী, মানে?”
— “আপনার নামের অর্থ উদার, মনোযোগী, বন্ধুত্বপূর্ণ। অথচ এসবের কিছুই আপনার মধ্যে নেই।”

বড্ড আফসোসের সঙ্গে শেষের কথাটা বললো তুষার। হৈমন্তী তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। খেয়ালে এলো, কপালের বিকালের বেন্ডেজটা এখনো খুলে নি তুষার। বেন্ডেজের আশেপাশে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত লেগে আছে। সে চট করে তুষারের হাতের দিকে তাকালো। বাম হাতটা বেন্ডেজ করা। পরনে ছাই রঙা টি-শার্ট আর থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট। মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে। সরব তুষার করুণ স্বরে বলে উঠল,
— “ভালোবাসি হৈমন্তীকা। কেন বোঝেন না?”
— “আপনি সুধরাবেন না কখনো, তাই না তুষার? আমারই দোষ! বারবার আপনাকে সুযোগ দিচ্ছি। আপনার বাবাকে কিছু বলছি না। কিন্তু আর না। এবার আমি সত্যিই আপনার বাবাকে বলে দেব তুষার।”

তুষার দূর্বোধ্য হাসলো। হৈমন্তীর দিকে এক পা এগোতেই আরও দু’পা পিছিয়ে গেল হৈমন্তী। এতে হাসি আরও গাঢ় হলো তুষারের। হুট করে পায়ে ভর দিয়ে নিচে বসে পরলো সে। হৈমন্তীর পায়ে ইশারা করে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
— “পা কাঁটলো কিভাবে হৈমন্তীকা?”
— “আপনাকে কেন বলবো? উঠে দাঁড়ান, আর দূরে সরুন।”

তুষার কানে নিলো না সেকথা। ডান পায়ের হাঁটু মেঝেতে লাগিয়ে বসলো। অত্যন্ত গাম্ভীর্যের সঙ্গে হৈমন্তী ক্ষতগ্রস্ত পা নিজের উরুতে নিয়ে আলতো ভাবে হাত বোলালো ক্ষত স্থানে। হৈমন্তী কেঁপে উঠল। অতি দ্রুত হওয়ায় সে বুঝতে পারে নি কি হচ্ছে। সম্বিৎ ফিরতেই পা সরিয়ে নিতে চাইলো সে। তুষার দিলো না। শক্ত বাঁধনে আটকে রাখলো।

হৈমন্তী রেগে গেল,
— “পা ছাড়ুন তুষার! অসভ্যতামি করছেন কেন?”
তুষার ক্ষীণ আওয়াজে উত্তর দিলো,
— “আপনাকে ভালোবাসা আমার সবচেয়ে প্রিয় অসভ্যতামি, হৈমন্তীকা।”

_______________

চলবে…

হৈমন্তীকা

৬.
দরজার একদম মধ্যিখানে বিশাল বড় নেমপ্লেটে নামের জায়গায় গুটিগুটি অক্ষরে লেখা, ‘It is forbidden to bother at special times and for no reason. Stranger girls are strictly forbidden to come. ‘Coz I hate it! And mustly nock the door.’

আফতাব সাহেব বিড়বিড় করে পড়লেন পুরো চার বাক্যের ইংরেজী পাঠ্যটি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কড়া নাড়লেন দরজায়। দুই, তিনেক বার কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, “কে?”
আফতাব সাহেব থমথমে গলায় জবাব দিলেন,
— “আমি।”

মিনিট পেরোতেই আলস্য ভঙ্গিতে দরজা খুললো তুষার। ভ্রু কুঁচকে আফতাব সাহেবের দিকে তাকিয়ে, মাথার পেছনের অংশের চুলে হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করলো,
— “তুমি হঠাৎ এখানে? কিছু বলবা?”
— “পড়ালেখার কি খবর তোমার? কি করছো আজকাল?” আগের মতোই থমথমে গলা উনার।
তুষারের কপালে আরেকটু দৃঢ় ভাঁজ পড়লো। প্রশ্নাত্মক চাহনিতে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
— “ভালোই চলছে। কয়েকদিন পর টেস্ট এক্সাম আছে। ওটারই প্রিপারেশন নিচ্ছি। তুমি হঠাৎ এসব জিজ্ঞেস করছো কেন?”
— “কারণ তুমি পড়ালেখা করছো না। বখাটেগিরি করে বেড়াচ্ছ। প্রায় প্রতিদিনই তোমার মারপিটের কমপ্লেন আসে আমার কাছে। আজকে তো আমাদের বিল্ডিংয়ের হৈমন্তী নামের মেয়েটাও এসেছিল। তুমি নাকি ওকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছো?”
— “না। আমি উনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি।”

বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো তুষার। যেন সে জানতো, এমন পরিস্থিতিতে পরতে হবে তাকে। এবং সে এর জন্য প্রস্তুতও হয়ে ছিল। ছেলের কাঠকাঠ উত্তরে আফতাব সাহেব খানিক থমকালেন। অবিশ্বাস্য চোখে তুষারের দিলে চেয়ে বললেন,
— “মেয়েটা তিন বছরের বড় তোমার, তুষার! তাছাড়া তুমি অনার্সে উঠেছ মাত্র। এসব চিন্তা আসে কোথা থেকে তোমার? আদরে, আহ্লাদে পাগল হয়ে গেছ নাকি?”
তুষার কণ্ঠস্বর আরও শীতল করলো,
— “একদম না। আমি সুস্থ মস্তিষ্কেই আছি। আর হৈমন্তীকাকেই বিয়ে করতে চাই।”
আফতাব সাহেব ধমক দিয়ে উঠলেন,
— “নিজের চেয়ে তিন বছরের বড় মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়াকে সুস্থ মস্তিষ্ক বলো তুমি? আমি তোমাকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি তুষার। ওই মেয়ে থেকে দূরে থাকবে। আবার যদি তোমার নামে এমন বাজে কমপ্লেন আসে, তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

চেঁচামেচি শুনে তুষারের মা হেনা চলে এলেন সেখানে। আফতাব সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন,
— “কি হয়েছে? ছেলেকে এভাবে বকছো কেন?”
শুনে যেন আরও তেঁতে উঠলেন তিনি। গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বললেন,
— “তোমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে, হেনা। নিজের চেয়ে বয়সে বড় মেয়েকে বলে কি-না বিয়ে করবে! কিছু বলো একে।”
হেনা বিস্ফোরিত নয়নে ছেলের দিকে তাকালেন। প্রশ্ন ছুড়লেন,
— “তুষার? তোর বাবা কি বলছে এসব?”
— “জানি না মা।” একটু থেমে আবার বললো, “টেবিলে নাস্তা বাড়ো তো মা। ক্ষুধা লেগেছে। আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসছি।”

বলেই কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিঃশব্দে দরজা আটকে দিলো সে।
আফতাব সাহেব রেগে গেলেন,
— “দেখেছো? দেখেছো তোমার ছেলেকে? কি পরিমাণ বেয়াদব হয়েছে! আমাদের মুখের ওপর দরজা আটকে দিলো।”
হেনা শান্ত ভাবে ব্যাপারটা সামলাতে চাইলেন,
— “এবার থামো তো! পরে কথা বলো এ নিয়ে। এখন একটু শান্ত হও।”
আফতাব সাহেব শান্ত হলেন না। একদফা রাগারাগি করার পর নিজের রুমে চলে গেলেন। একটু পরেই আবার উঁচু গলায় হাঁক ছাড়লেন,
— “হেনা? একগ্লাস ঠান্ডা পানি আনো।”

_____

সকাল ৯টা ৩০.
ভার্সিটির বিরাট বড় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে আছে হৈমন্তী। আজকে এখনো পারু আসে নি। হৈমন্তী উদাস মনে একটা চ্যাপ্টার পড়ার চেষ্টা করছে। আকস্মিক, কোত্থেকে তুষার এসে বসল তার পাশে। হৈমন্তী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কিন্তু তুষার তাকালো না। তার ফর্সা মুখটা গরমে ঘর্মাক্ত হয়ে আছে। কপালে বেন্ডেজ এখনো বিদ্যমান। চেহেরায় এক আলাদাই ক্লান্তি। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিঁজিয়ে, এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে তুষার বললো,
— “আপনার কাছে পানি আছে হৈমন্তীকা?”

হৈমন্তী জবাব দিলো না। কিছুপলক ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করলো। তুষারের দিকে এগিয়ে দিতেই সে বিনাবাক্যে নিয়ে নিলো বোতলটি। আঘাত প্রাপ্ত হাত দিয়ে বোতলের ঢাকনা খুলে যেই না মুখে দিতে যাবে, ওমনি হৈমন্তী দ্রুততার সঙ্গে বলে উঠল,
— “বোতলে মুখ লাগাবেন না!”
তুষার ভ্রু উঁচালো। কথাটা শুনেই নি এমন ভাব করে মুখ লাগিয়ে ঢকঢক করে পান করে নিলো পুরো অর্ধেক পানি। হৈমন্তী তখন ঝাঁঝালো স্বরে আঁওড়ালো,
— “সমস্যা কি? মুখ লাগাতে মানা করেছি না? তাও এমন করলেন কেন?”

তুষার ধীর স্থির ভঙ্গিতে বোতলের ঢাকনা লাগালো। সবুজ দূর্বাঘাসের ওপর বোতলটি রেখে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো হৈমন্তীর পানে। বললো,
— “আপনি যদি তখন ওই কথাটা না বলতেন, আমি বোতলে মুখ লাগাতাম না। তাই দোষ আপনার।”

হৈমন্তী তাজ্জব বনে গেল,
— “আমার দোষ? আপনি এমন কেন বলুন তো তুষার! আমাকে জ্বালানো কবে বন্ধ করবেন?”
— “যখন আমার নিশ্বাস থেমে যাবে।”
— “বাজে কথা বন্ধ করুন। আপনার বাবা কি আপনাকে কিছু বলে নি?”
— “বলেছে।”
— “বকা খেয়েছেন উনার কাছে?”
— “হ্যাঁ।”
— “তবুও নির্লজ্জের মতো আমার কাছে এসেছেন কেন?”
তুষার নির্বিকার ভাবে বললো,
— “কারণ আমার লজ্জা নেই।”

হৈমন্তীর রাগ যেন এবার আকাশসম হয়ে গেল। রাগে আর কিছু বলার ইচ্ছেই মিইয়ে গেল তার। শব্দ করে ঘাসের ওপর থেকে বোতলটি নিয়ে, ব্যাগে পুরে নিতেই তুষার প্রশ্ন করলো,
— “আপনি আমাকে আপনি করে ডাকেন কেন হৈমন্তীকা? আপনার মনে তো আমার জন্য কিছুই নেই। তাহলে?”
— “কে বলেছে কিছু নেই? ছোট ভাই হিসেবে যথেষ্ট আদর করি আপনাকে। আর হ্যাঁ, ঘনিষ্ঠতা নেই এমন ছোট বড় সবাইকেই আপনি বলে ডাকি আমি। আপনি কেন ব্যতিক্রম হবেন?”

তাচ্ছিল্য ভাবে বললো হৈমন্তী। পালটা জবাব দিতে পারলো না তুষার। শক্ত মুখে বসে রইলো। তারপর যখন দেখল হৈমন্তী চলে যাচ্ছে, তখন আবার বললো,
— “চলে যাচ্ছেন হৈমন্তীকা?”
— “হ্যাঁ।”
— “আরেকটু বসুন।”

ভীষণ মায়াময় কণ্ঠে আবদার করে উঠল সে। হৈমন্তীর মন গলে গিয়েও গললো না যেন। বাহ্যিক দিকে শক্ত রইলো সে। তাকে উপেক্ষা করে চলে গেল। তুষার পিটপিট নেত্রে চেয়ে রইল সেদিকে।

_____

হেমন্তর কাছে তুষার হলো একটা প্রিয় নাম। তুষারের সাথে বেশ খাতির তার। এ নিয়ে কম বকা খায়নি সে হৈমন্তীর কাছে। হৈমন্তীর এক কথা, “তুষারের সঙ্গে মেলামেশা করা যাবে না মানে যাবে না!”

হেমন্ত শুনে না সেকথা। যতই বকা দেওয়া হোক না কেন, সে সর্বদাই তুষারের পেছনে আঠার মতো লেগে থাকে। হৈমন্তীও এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে প্রায়।
বারান্দার গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছিলো হৈমন্তী। তার অত গাছের প্রতি নেশা নেই। রাবেয়ার আছে। তিনিই গাছগুলো রেখেছেন এখানে। যার পরিচর্যা করতে হয় তাকে। অবশ্যক এতে খারাপ লাগে না তার। ভালোই লাগে। তার সবচেয়ে প্রিয় ফুল হলো বেলী। বেলীর ঘ্রাণে মনটা কেমন নিমিষেই ভালো হয়ে যায় তার।

হৈমন্তী বেলী ফুলের গাছে পানি দিচ্ছিল। হঠাৎ হেমন্ত দৌঁড়ে এলো তার কাছে। অত্যাধিক উত্তেজনার সঙ্গে বললো,
— “জানো আপু কি হয়েছে?”

হৈমন্তী আগ্রহহীন ভাবে জবাব দিলো,
— “কি হয়েছে?”
— “তুষার ভাইয়ার জ্বর হয়েছে। ভয়াবহ জ্বর। এক’শ দুই ডিগ্রি!”
হৈমন্তীর কপাল কুঁচকে গেল,
— “মানে?”

___________________

চলবে…
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা