হয়তো তোমারি জন্য পর্ব-০৩

0
431

#হয়তো_তোমারি_জন্য💙
#Part_03
#Writer_Ayana_Ara (ছদ্মনাম)

আমাদের বাড়ি থেকে বড় ফুপিদের বাসা দূরে না থাকার জন্য আমরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরি। আমাদের যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই মুন আপুরা চলে আসে। এখন আপুকে ঘিরে আমরা সকল কাজিনরা বসে আছি। মুন আপু হেসে বলল,”কি হয়েছে তোরা এইভাবে আমাকে ঘিরে বসে আছিস কেনো?”

ইলমা আপু আর আমি বেশ কৌতুহল নিয়ে একসাথে বলে উঠি,”কেমন কাটলো শশুড় বাড়ি?”

সবার চোখেই কৌতুহল দেখা যাচ্ছে মুন আপু উচ্চস্বরে হেসে বলে,”কেমন কাটবে বাকি সবার যেমন কাটে আমারও ওইরকমই কেটেছে।”

বেশ অনেকক্ষন মুন আপুর সাথে গল্প করলাম তখনই ফুপি এসে বলে,”খেতে আয় তোরা খাবার বাড়ছি।”

আমরা খেয়ে দেয়ে আবার বসলাম গল্প করতে। এইবার রুবায়েত ভাইয়া আর আয়াশ ভাইয়াও আছেন। রুবায়েত ভাইয়া বলেন,”কি হয়েছে ডেকেছিস কেনো?”

আমি বললাম,”গল্প করতে ডেকেছি তুমিও আমাদের সাথে গল্প করবা।”

রুবায়েত ভাইয়া আমাকে ধমকে বলেন,”ওই মাইয়া তোর কোনো কাম নাই তো কি আমারো নাই? আমার অনেক কাজ আছে আমি যাই তোরা কর গল্প।”

আয়াশ ভাইয়াও সায় জানিয়ে বলেন,”হুম আমিও যাই।”

বলে দুইজন বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মুন আপু বলল,”আচ্ছা থাক ওদের বাদ দে আমরা গল্প করি একাই।”

আমি মুখ গোমড়া করে বলি,”হুম!”

৮.

আয়াশ আর রুবায়েত বাহিরে আসতেই রুবায়েত বলে,”ভাগ্যিস!কোনোরকম অজুহাত দিয়ে চলে আসলাম না হলে আয়ানার গল্প করা শুরু হলে আমার শেষ হতো না।”[লেখিকা আয়ানা আরা]

আয়াশ কিঞ্চিৎ হেসে বলে,”হুম!”

দুইজনে বাড়ির বাহিরে চলে যায়।

🍁🍁🍁🍁
বিকালের দিকে আমরা বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে আমি নিজের রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রাত নয়টা ছুঁই ছুঁই। পড়ার টেবিলে বসলাম। সামনে পরীক্ষা আমার। ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম রোজার অনেক ফোন এসেছি। রোজা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। রোজাকে কল ব্যাক করতেই ও বলে উঠলো,”কিরে তুই ঢাকা আসছোস আমাকে বললি না?”

“এমনি বলতে ভুলে গিয়েছিলাম আগে বল কেনো ফোন দিয়েছিলি?”

“ভার্সিটি আসবি কালকে?”

“হ্যা আসবো। এখন রাখি?”

ওর সাথে কথা শেষ করে কিছুক্ষন পরে ঘুমাতে চলে যাই।

৯.
হেমন্তের মাঝারে। হালকা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ছড়িয়েছে চারদিকে। সূর্যের প্রখর তাপ আয়ানার মুখে পড়তেই ধীরে চোখ খুললো। বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয় ভার্সিটির জন্যে। নিচে যেয়ে দেখে তার মা ব্রেকফাস্ট বাড়ছে তার আব্বুর প্লেটে। আয়ানা যেতেই ওর প্লেটে দিলো। আয়ানা তাড়া দিয়ে একটা রুটি মুখে পুড়ে বলল,”আমার যেতে হবে এমনিতেই অনেক দেরী হয়েছে আরেকটু দেরী হলে ক্লাসে আর ঢুকতে হবে না।”

আয়ানার মা স্নান হেসে বললেন,”এতো দেরীতে উঠেছিস কেনো?সকাল সাতটায় ডেকেছিলাম না?উঠিস নি কেনো এখন বুঝো ঠেলা!”

আয়ানা জবাবে কিছু না বলে দ্রুত বাড়ির বাহিরে চলে গেলো।

ভার্সিটি আয়ানার বাড়ি থেকে বেশি দূরে না তাই হেঁটেই যায় সাধারণত কিন্তু আজ দেরী হয়ে গিয়েছে অনেকটাই,যার জন্য আয়ানা রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু এখন পর্যন্ত একটা রিকশারও দেখা মিললো না। আয়ানা আশাহত হয়ে হাঁটা ধরলো।

হঠাৎই দ্রুত বেগে একটা গাড়ি আসতেই আয়ানা চমকে যায়। কাহিনিটা এতো দ্রুত ঘটলো যে আয়ানা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। পরপর দুইটা শ্বাস নিয়ে গাড়িটার কাছে যেয়ে টোকা দেয়। গাড়ির গ্লাস খুলতেই যাকে দেখে আয়ানার মাথা ঝিম ধরে যায়। নিজেকে সামলে বলে,”আয়াশ ভাইয়া আপনি? এইখানে কেনো?”

আয়াশ নিজের পরিধান করা সান গ্লাস খুলে বলে,”এইখানে কোনো কাজ থাকতে পারে না আমার?আর তুই এইখানে কেনো?”

“এদিক দিয়ে আমার ভার্সিটির রাস্তা তাই যাচ্ছিলাম!”

আয়াশ কিছু না বলে কিছুক্ষন ভেবে ফের বলল,”গাড়ি তে উঠে পর তোকে ভার্সিটি পৌছে দেই ফাস্ট!”

আয়ানা কিছু বলবে তার আগেই আয়াশ গরম চোখ করে ওর দিকে তাকায় আয়ানা শুকনো ঢোক গিলে পিছনের সিটে বসতে নিলে আয়াশ ভ্রুকুচকে বলে,”ও হ্যালো!তোমার ড্রাইভার না আমি ওকে?”

আয়ানা কিছু না বলে ফ্রন্ট সিটে বসে পরে। আড়চোখে একবার আয়ানার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আয়ানাকে ভার্সিটি দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়।

আয়ানা ভার্সিটির সামনে থাকা সবার দিকে চোখ বুলায় একবার। সবাই কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় কিছু চুরি করে পালিয়েছে। আয়ানা গায়ে না মাখিয়ে ভার্সিটির গেট দিয়ে প্রবেশ করে। নিজের ক্লাস রুমে আসতেই ওকে কেউ ঝাপ্টে ধরে আয়ানা তাল সামলাতে না পেরে পরে যায়। নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়িয়ে রেগে বলে,”কে রে তুই!”

তাকাতেই রামিযাহ্কে দেখতে পায়। রামিযাহ্ দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আয়ানা রেগে বলে,”কি সমস্যা তোর?”

“দোস্ত তোর সাথে যে একটা ছেলে আসছে না?”

আয়ানার আর বুঝতে বাকি রইলো না কার কথা বলছে?আয়ানা মাথা নাড়িয়ে বলে,”হুম তো?”

“আমার সাথে সেটেল করায় দে না!”

আয়ানা ঠোঁট চেপে হেসে বলে,”হাহাহাহা,,নিজেরটা নিজে কর আমাকে বলিস কেনো?বাই দা রাস্তা আওসাফ,জোয়াইরিয়া,রোজা,সাবা,আন্নি,আহনাফ ওরা কোথায়?”

“জানিসই তো ওরা অনেক পেটুক!ক্যান্টিনে গেছে খাইতে।”

তখনই আগমণ ঘটলো ছয়জনের। সাবা এসে বলল,”কিরে কতোদিন পর আসলি!কেমন কাটলো তোর বিয়ের দাওয়াত?”

“হ্যা ভালো তুই কেমন আছিস?”

“এইতো ভালো, তুই?”

“হুম ভালো।”

বলে ওদের দিকে তাকিয়ে আমি বললাম,”তো বাচ্চারা কেমন আছো তোমরা?”

আওসাফ বলে,”চুপ থাক!আমরা বাচ্চা?”

আমি মিটমিটিয়ে হেসে বললাম,”হ্যা তোরা ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা!”

শুরু হলো আমাদের দুইজনের মধ্যে ঝগড়া। অতঃপর ঝগড়া মিটমাট হলে সবাই যার যার বেঞ্চে যেয়ে বসে পরে।[লেখিকা আয়ানা আরা]

ব্রেক টাইমে আমরা সবাই ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে গেলাম। সাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে স্যার বট গাছের নিচে যেতে বলছে কালকে।”

আমি (😳) এইরকম ফেস করে বললাম,”কিহ!শেখ রাসেলের জন্মদিন না আরো আগে চলে গেছে?”

বলতে বলতে ক্যান্টিনে এসে দাড়ালাম। সাবা বলল,”কি জানি?এতো কিছু আমি জানি না ভাই!”

ব্রেকটাইম শেষ হতেই আমরা আবার আমাদের ক্লাসে এসে পরি। আমি রামিযাহ্কে বলে,”রামু কাকা এখন কার ক্লাস?”

ও বলল,’এখন রামিন মিসের ক্লাস” (রামিন আমাদের স্কুলের একজন টিচারের নাম তাই কেউ ভাববেন না টিচারকে নিয়ে মজা করেছি)

তখনই আগমণ ঘটলো রামিন মিসের। চল্লিশ মিনিট উনার বকবক শেষ হতেই সবাই হুরমুড় করে ক্লাস থেকে ছুটলো।

আমরা পুরো ক্যাম্পাসে একবার চক্কর দিয়ে বের হলাম। আমরা সবাই অনেকটাই উড়নচণ্ডী টাইপ!কোনো জায়গায় গেলে এদিক থেকে ওদিক ছুটি।সাবা আর আমার বাসা প্রায় অনেকটাই কাছে তাই আমরা একটা রিকশা নিয়ে আমাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাসায় এসে রিকশা থেকে নেমে সাবাকে বললাম,”বাসায় আয়!তোর জন্য স্পেশাল খাবার বানিয়ে রাখছি।”

বলে হাসলাম। সাবা বলল,”না থাক পরে একদিন আসবো নে এখন যাই টাটা বাই বাই!”

সাবাকে বিদায় দিয়ে আমি বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম। বড় ফুপি এসেছে!মা আর বড় ফুপি গল্প করছে। আমি বড় ফুপিকে সালাম দিয়ে বললাম,”মুন আপুরা চলে গিয়েছে?”

বড় ফুপি বললেন,”হ্যা আজ ভোর সকালেই চলে গিয়েছে সায়ানের বলে অফিসে কাজ আছে তাই।”

আমি ছোট করে “ওহ” বলে নিজের রুমে চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে যেয়ে দাড়ালাম। বাহিরে হিম স্নিগ্ধ বাতাস বইছে। সামনের এক মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি শোনা যেতে লাগলো।

#চলবে

[ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং]