হয়তো_তোরই_জন্য পর্ব-২২+২৩

0
2091

Part 22+23
#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_২২
#নিশাত_জাহান_নিশি

তাহাফ ঘুম থেকে উঠে হন্তদন্ত হয়ে রুমে থেকে বের হয়ে সোজা তমার রুমের সামনে চলে গেলো। দরজাটা হালকা ভেঁজানো। তাহাফ দরজাটা ঠেলে রুমে ঢুকে পড়ল। রুমে ঢুকেই তাহাফ ডেস্কের দিকে তাকিয়ে দেখল ওয়াটার পটের পানি যেমন ছিলো তেমনই আছে। এক্টু ও কমে নি।

তাহাফ চোয়াল শক্ত করে ডেস্কের কাছে এগিয়ে গেলো। পানির পটটা হাতে নিয়ে তাহাফ কিছুক্ষন নাড়িয়ে চাড়িয়ে পানিটা পর্যবেক্ষন করল। প্রায় পাঁচ মিনিট পর তাহাফ চোখ, মুখ লাল করে পানির পটটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে হন্তদন্ত হয়ে তমার রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকেই তাহাফ দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে চোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,

—-“আবারো তুই বেঁচে গেলি জায়ান। আল্লাহ্ তোকে হাতে করে আবার বাঁচিয়ে দিলো। নিশ্চয়ই তুই ওয়াটার পটের পানি গুলো ফেলে আবার নতুন পানি ভরেছিস। পানিতে যদি হ্যামলক মেশানো থাকত তবে ওয়াটার পটটা হালকা নীল রং ধারন করত। তুই পানিটা পাল্টেছিস বলে পটটা এখনো আগের মতোই আছে। তুই কি ভেবেছিস জায়ান? আল্লাহ্ তোকে বার বার আমার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিবে? কক্ষনো না। একবার না একবার আমি চান্স পাবই।”

কথাগুলো বলেই তাহাফ সোফায় এক্টা জোরে লাথী দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। তমা আর জায়ান ছাদেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। সূর্য্যের তীর্যক রশ্মি জায়ানের চোখে পড়াতে জায়ান ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলল। জায়ান পাশ ফিরে তাকাতেই তমাকে দেখতে পেলো। তমা গুটিসুটি মেরে জায়ানের বুকে ঘুমিয়ে আছে। জায়ান আর তমা দুজনই ছাদের ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে। তমা নাক, মুখ কুচকে রেখেছে। জায়ান বেশ বুঝতে পেরেছে তমা কেনো মুখটাকে অমন করে রেখেছে। তাই সে তমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে সোজা দাঁড়িয়ে পড়ল।

তমার চোখে মুখে সূর্য্যের আলো উপছে পড়ছিলো। জায়ান সূর্য টাকে আড়াল করে তমার মুখোমুখি দাঁড়াল। সূর্য্যের পুরোটা তাপ এখন জায়ানের পিঠে পড়ছে। জায়ান বুকের উপর দুহাত গুজে মৃদ্যু হেসে তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তমা মুহূর্তেই মলিন হেসে নাক মুখ স্বাভাবিক করে আরামচে ঘুম দিলো। এভাবে কতক্ষন জায়ান দাঁড়িয়েছিলো তার হিসেব নেই। প্রায় ঘন্টা খানিক পর তমা আড়মোড়া ভেঙ্গে বড় এক্টা হাই তুলে চোখ খুলে তাকালো। তমা পিটপিট চোখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান এতক্ষনে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।

তমা মুখে কিছুটা অস্থিরতার ভাব ফুটিয়ে শোয়া থেকে উঠে সোজা জায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জায়ানকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,

—-“এতোটা ভালোবাসা আমার কপালে সইবে তো জায়ান?”

জায়ান কিছুটা নড়ে চড়ে তমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,

—-“সইবে ডিয়ার। কজ তোর আর আমার মধ্যে মরণ ছাড়া আর কিছুই আসতে পারবে না। তুই নিশ্চিন্তে থাক। খুব শীঘ্রই বিপদ কাটিয়ে আমরা দুজন এক হবো। তখন খুব সুখে শান্তিতে আমরা জমিয়ে সংসার করব।”

কথাগুলো বলেই জায়ান তমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে তমার হাত ধরে ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিলো। ঐদিকে তাহাফ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আলমারীতে কিছু এক্টা খুঁজে না পেয়ে পুরো আলমারীর জিনিস পএ ছুড়াছুড়ি করছে আর রাগে ঘামছে। অনেক খুঁজাখুঁজির পরে ও তাহাফ জিনিসটা খুঁজে না পেয়ে দাঁত গিজগিজ করে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমার আলমারী থেকে হ্যামলকের কৌটো টা কোথায় গেলো? কে সরিয়েছে এটা? কার এতো বড় সাহস?”

এর মাঝেই পেছন থেকে মিসেস তারিন কান্নাজড়িত কন্ঠে তাহাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“ছি তাহাফ ছি! তোর লজ্জা করল না এতো বড় পাপ করতে? তোর বিবেকে বাঁধে নি তাই না? তোর কি বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে? তুই কিভাবে পারলি নিজের ছোট বোনের জামাইকে বিষ দিতে?”

তাহাফ কিছুটা থতমত খেয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“কিকিকি বলছ এসব তুমি? আআআমি কি করেছি?”

মিসেস তারিন তেড়ে এসে বলল,,,,,,,

—-“বিষের বোতলটাই তো এতোক্ষন হন্ন হয়ে খুঁজছিলি তুই তাই না? আমি সরিয়েছি বোতলটা। আমি নিজের চোখে দেখেছি তুই স্পাইডের বোতলে কিছু এক্টা মিশিয়েছিলি। প্রথমে আমি কিছুই বুঝতে পারি নি। পরে যখন তুই দ্বিতীয় বার তমাদের রুম থেকে বের হচ্ছিলি তখন আমি ড্রইং রুম থেকে সব দেখছিলাম। এরপর ও ব্যাপারটা তেমন আমলে নেই নি। ড্রইং রুমের আড্ডা সেরে যখন তোর রুমের দিকে আসছিলাম তখন আমি সব শুনে নিয়েছি তুই যা যা বলছিলি। তুই যে দ্বিতীয়বার তমার রুমে ঢুকে ওয়াটার পটে বিষ মিশিয়েছিলি আমি তোর মুখ থেকে সব শুনেছি। তাই তুই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি আলমারী খুলে বিষ টা সরিয়ে নিয়েছি। বিষটা আমি নষ্ট করে ফেলেছি তাহাফ। তুই যেনো আর কোনো ভয়ংকর প্ল্যান করতে না পারিস তাই। আমি আমার একমাএ ছেলেকে অকালে হারাতে পারব না। আমার ছেলের সুন্দর জীবনটা এভাবে নষ্ট করতে পারব না। প্লিজ তাহাফ তুই তমাকে ভুলে যা। তমার চেয়ে আরো সুন্দুরী মেয়েকে আমি বউ করে আনব। তোকে খুব সুখে রাখবে দেখে নিস। ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখবে তোকে।”

তাহাফ চোয়াল শক্ত করে মিসেস তারিনকে ঝাড়ি মেরে বলল,,,,,

—–“আমি অন্য কোনো মেয়েকে চাই না। আমি শুধু তমাকে চাই। তমা হলেই আমার চলবে। যে কোনো মূল্যেই হোক আমি তমাকে চাই। তমাকে ছাড়া আমার মরন নিশ্চিত। তুমি প্লিজ আমার রুম থেকে বের হয়ে যাও। দয়া করে আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না। আমি আমার ভালোটা খুব ভালো করেই বুঝি। সো লিভ মি এলোন।”

মিসেস তারিন কাঁদতে কাঁদতে তাহাফকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,

—-“প্লিজ বাবা শান্ত হ। তোকে এমন উন্মাদ অবস্থায় আমি দেখতে পারছি না। আমি আমার সেই ছেলেকে চাই যে ছেলের প্রানবন্ত হাসিতে আমার বুক জুড়াতো। আমি প্রানভরে সেই হাসি আবার দেখতে চাই। প্লিজ বাবা তুই আবার আগের মতো হয়ে যা। আমি তোকে আর কোনো ক্রাইম করতে দেবো না। বার বার তোকে বাঁধা দেবো। এভাবেই বুকে আগলে রাখব।”

তাহাফ এক ঝটকায় মিসেস তারিনের থেকে নিজেকে সরিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে গার্ডেনে পার্ক করে রাখা গাড়িটা নিয়ে কোথায় যেনো ভোঁ ভোঁ করে চলে গেলো। মিসেস তারিন তাহাফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ছেড়ে বলল,,,,,,

—-“আমার আগের ছেলেটা হারিয়ে গেলো। আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার আগের তাহাফকে। আর হাজার চেষ্টা করে ও আমি তাহাফকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারব না। আমার ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছে।”

কথা গুলো বলেই মিসেস তারিন তাহাফের রুম গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তমা আর জায়ান ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এলো ব্রেকফাস্ট করতে। বাড়ির মোটামুটি সবাই ই ব্রেকফাস্ট টেবিলে আছে, কেবল তাহাফ আর মিসেস তারিন ছাড়া। মিসেস আন্জ্ঞুমান পুরো বাড়ি ঘুরে মিসেস তারিনকে খুঁজছে। এক পর্যায়ে উনি তাহাফের রুমে গিয়ে মিসেস তারিনকে খুঁজে পেয়েছে। মিসেস তারিন খুব মনযোগ দিয়ে তাহাফের আলমারী গুছাচ্ছে। মিসেস আন্জ্ঞুমান এক গাল হেসে পিছন থেকে মিসেস তারিনের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,

—-“তাহাফ টা এখনো বেশ অগোছালো রয়ে গেছে। দেখেছ রুমটা কেমন আবর্জনা করে রেখেছে? আমার তো মনে হচ্ছে তাহাফকে এবার বিয়ে করিয়ে দেওয়া উচিত সুন্দুরী আর লক্ষীমন্ত এক্টা মেয়ে দেখে।”

মিসেস তারিন মলিন হেসে পিছু ঘুরে মিসেস আন্জ্ঞুমানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“আমার তো মনে হয় না আমার ছেলেটা আর এই জন্মে বিয়ে করবে। এভাবেই কুমার হয়ে থাকবে। আমাকেই প্রতিদিন এসে ওর অগোছালো রুমটাকে গুছিয়ে দিতে হবে!”

মিসেস আন্জ্ঞুমান বেশ অবাক হয়ে বলল,,,,,

—-“এসব কি বলছ ভাবী? তাহাফ বিয়ে করবে না কেনো?”

মিসেস তারিন মুখটা ভাড় করে বলল,,,,,

—-“ওসব তুমি বুঝবে না আন্জ্ঞু। মাঝে মাঝে আমি ও বুঝি না। তাই নির্বাক হয়ে থাকি।”

কথাগুলো বলে মিসেস তারিন তাহাফের বেড গুছাচ্ছে আর মিসেস আন্জ্ঞুমানকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,

—-“যাও আন্জ্ঞু ব্রেকফাস্ট করে নাও। তাহাফ ফিরলে আমি ব্রেকফাস্ট করব।”

মিসেস আন্জ্ঞুমান আর কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। উনি মিসেস তারিনের কথার আগামাথা কিছুই বুঝে নি। কথা গুলো কেমন জট পাকানো। জট ছাড়াতে গেলে নির্ঘাত পাগল হতে হবে। তাই উনি আপাতত ব্যাপারটাকে মাথা থেকে সরিয়ে হাঁটার দিকে মনযোগ দিলো। ড্রইং রুমে পৌঁছেই মিসেস আন্জ্ঞুমান ডাইনিং টেবিলের দিকে এগুচ্ছে আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলছে,,,,,,

—-“তোমরা সবাই খাওয়া শুরু করো। বড় ভাবী পরে ব্রেকফাস্ট করবে। তাহাফ এলে।”

মিসেস আন্জ্ঞুমানের কথা শুনে সবাই ব্রেকফাস্টে মনযোগ দিলো তবে জায়ান ছাড়া। তাহাফের বের হওয়ার কথাটা শুনে জায়ান বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে। জায়ান জেলিভরা পাউরুটি মুখে গুজছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—-“তাহাফ নিশ্চয়ই নতুন কোনো প্ল্যান কষে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। আমার ব্যাপারটা সুবিধের ঠেকছে না। জাবেদ ভাইয়া ঠিক আছে তো? কেনো জানি মনে হচ্ছে তাহাফ জাবেদ ভাইয়ার সন্ধানে গেছে। তাহাফের যা ক্ষমতা হয়তো এতক্ষনে জাবেদ ভাইয়ার ঠিকানা জোগাড় করে ফেলেছে। ওর তো আবার চ্যালা ফ্যালার অভাব নেই। তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট সেরে জাবেদ ভাইয়াকে একবার কল করতে হবে।”

জায়ান কথাগুলো বলেই হম্বিতম্বি হয়ে পাউরুটি গুলো সাবার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। জায়ানের খাওয়া দেখে তমা বেশ বুঝতে পেরেছে জায়ান খুব তাড়ায় আছে। তাই সে ও খুব তাড়াহুড়ো করে খেতে লাগল।

অন্যদিকে,,,,,,,

তাহাফ এলোমেলো ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে আর চোখ দিয়ে জল ফেলছে। এক্টা পার্কের সামনে এসে তাহাফ গাড়িটা থামিয়ে পার্কের ভিতর ঢুকে এক্টা বেঞ্চিতে বসে মাথা নিচু করে কাঁদছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—-“কি ভুল ছিলো আমার? কাজিনকে ভালোবাসা কি অন্যায়? ভালোবাসায় তো কোনো জাত ধর্ম থাকে না। তাহলে আমার ক্ষেএে কেনো ধর্ম বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো? কেনো আমার ভালোবাসা স্বীকৃতি পেলো না? কেনো ধর্মের দোহাই দিয়ে সবাই আমাকে পিছু হটিয়ে দিলো। যদি আরো আগে আমার ফ্যামিলি আমার ভালোবাসা মেনে নিতো তবে জায়ানের আগে আমি তমাকে পেতাম। সম্পূর্ণ নিজের করে পেতাম। তমার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে নিশ্বাস নিতে পারতাম। ধর্ম আর জায়ান এ দুটো এসে আমার পথ আটকে দিলো। ধর্মকে টপকাতে পারি নি ঠিকি। তবে জায়ানকে টপকাতে পারব। আমি জানি এখন আমার পথে আম্মু বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। কজ আমার সব প্ল্যান আম্মু ধরে ফেলেছে। কিছু এক্টা অধটন ঘটালেই আম্মু আমার দিকে আঙ্গুল তুলবে। হয়তো সত্যিটা সবার কাছে ফাঁস ও করে দিতে পারে। তাই বিয়ের আগ পর্যন্ত আমাকে শান্ত হয়ে থাকতে হবে। কোনো অঘটন ঘটানো যাবে না। জায়ানের পিছনে লাগা যাবে না। ভিতরে ভিতরে সব গুটি সাজিয়ে রেখে বিয়ের দিন মুখ্যম চাল টা চালতে হবে। এর আগে জাবেদকে খুঁজে বের করতে হবে। জাবেদকে দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে। ভাগ্যিস কাল রাতে আমার গুপ্তচর জাবেদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার খবরটা জানিয়েছিলো। না হয় জাবেদকে ওর বাড়িতে খুঁজতে গিয়ে আমার অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যেতো। যাক আজ থেকে জাবেদকে খোঁজা শুরু করতে হবে। এই দেবদাস কোন চিপায় ঘাপটি মেরে আছে আল্লাহ্ মালুম। তবে আপসোস হয় দেবদাসটার জন্য। কারণ সে ও আমার মতোই বৈরাগী।”

তাহাফ কথাগুলো বলে চোখের জল গুলো মুছে পার্ক থেকে বের হয়ে সোজা গাড়িতে বসে পড়ল। গাড়ি ঘুড়িয়ে তাহাফ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

জায়ান খাওয়া শেষ করে সোজা ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে সিঁড়ি বেয়ে তমার রুমে ঢুকে গেলো। কাবার্ডের উপর থেকে সেল ফোনটা হাতে নিয়ে জায়ান জাবেদের নিউ সিমটাকে কল লাগালো। একবার কল করার পর দ্বিতীয় বারে জাবেদ কলটা রিসিভ করল। জায়ান কিছুটা উওেজিত হয়ে গড়গড় করে বলল,,,,,,

—–“ভাইয়া তুই ঠিক আছিস তো? তাহাফ তোকে খুঁজে পায় নি তো?”

জাবেদ ভ্রু কুঁচতে বলল,,,,,,

—-“তাহাফের সাধ্য আছে নাকি জাবেদকে এতো সহজে খুঁজে পাওয়ার? তাছাড়া আমি দিব্যি আছি জায়ান। আমাকে নিয়ে অতো টেনশান করিস না।”

—-“ওহ্ গড। এতক্ষনে শান্তি হলাম। আমি ভেবেছি কি না কি। যাই হোক তুই কি এখন ইরফান ভাইয়ার বাড়িতে আছিস?”

—-“হুম রে। ইরফানের বাড়িতে এসে বেশ ভালোভাবেই ফেসে গেছি।”

—-“বুঝলাম না! ফেঁসে গেছিস মানে?”

—-“আর বলিস না, এখানে এসে এক ডাইনীর সাথে দেখা হয়েছে। ডাইনীটা কেবল সারাক্ষন আমার পিছু পিছু ঘুরে। কেমন ভ্যাবলার মতো আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে কেমন চোখ রাঙ্গিয়ে উঠে। এইতো কিছুক্ষন আগে এসে আমাকে শাসিয়ে গেছে আমি যেনো ডাইনীটিকে দেখলে চোখ ফিরিয়ে না নেই। এতে নাকি ওর অনেক ইনসাল্ট ফিল হয়। কি জ্বালা ভাই। আমি ও নাকি ঐ ডাইনীর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকব। আমার কি কোনো কাজ কর্ম নেই?”

জাবেদের কথা শুনে জায়ান হু হা করে হেসে বলল,,,,,,

—-“বাঃহ ভালোই তো। আমি ফ্রীতে ভাবী পেয়ে গেলাম। উইদাউট এ্যানি খাটাখাটনি। তা ভাইয়া ভাবী দেখতে কেমন? নাম কি উনার?”

জাবেদ কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল,,,,,,

—-“এই তুই কি পাগল হয়েছিস? কি কখন থেকে ভাবী ভাবী বলে যাচ্ছিস। ঐ ডাইনী মোটে ও আমার বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। দেখতে একদম ডাইনীর মতো। গড়গড় করে বমি করার জন্য যথেষ্ট। অবশ্য বমির পর তুই লেবু ও ফ্রীতে পাবি। কারণ মেয়েটার নামই লেবু।”

কথা গুলো শেষ করার সাথে সাথেই পিছন থেকে এক্টা মেয়ে তেড়ে এসে জাবেদের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে জোরে জোরে চিল্লিয়ে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“আমার নাম মোটে ও লেবু না। আমার নাম লিমা। জাবেদ ছেলেটা প্রচন্ড রকমের খারাপ। তাই আমার এতো সুন্দর নামটা ব্যঙ্গ করেছে। আমি ছাড়ব না এই ডেবিলটাকে। ছেলেটার গলায় ঝুলে লাভ টর্চার করব। বাই দ্যা ওয়ে, তুমি ছেলেটার কি হও?”

জায়ান কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,,,,

—-“আমি ডেবিল ছেলেটার ছোটো ভাই হই। মানে আপনার দেবর।”

সাথে সাথেই লিমা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“বাঃহ। আপনি তো বেশ ট্যালেন্টেড, কি সুন্দর বুঝে গেলেন আমি আপনার ভাবী হতে চাই। বাট আপসোস আপনার বড় ভাইটা এখনো বুঝল না। কাল রাত থেকে লাইন মারছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পটাতে পারলাম না। প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়েছি বাট মাথা মোটা ছেলেটা আমাকে পাওা ই দিচ্ছে না।”

জায়ান হু হা করে হেসে বলল,,,,,,,

—-“আমার ভাইটা আসলেই মাথা মোটা। তাই আমি আপনাকে এক্টা দায়িত্ব দিতে চাই। নিবেন আমার দায়িত্বের ভার?”

—-“অবশ্যই নিবো। তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন।”

—-“আমার ভাইটাকে ভালোবাসা দিয়ে জয় করে আমার সত্যি সত্যি ভাবী হতে হবে। বলুন আপনি রাজী?”

এর মাঝেই তমা তেড়ে এসে জায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,

—-“এই তুমি কার সাথে ইটিস পিটিস করছ?”

ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে লিমা তমার ভয়েস শোনার সাথে সাথে কিছুটা উওেজিত হয়ে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“এই এই মেয়েটা কে? ভয়েসটা কেমন চেনা চেনা লাগছে।”

জায়ান তমার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে তমার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,

—-“তুমি নিজেই কথা বলে চেইক করে নাও আমি কার সাথে ইটিস পিটিস করছি।”

#পার্ট_২৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“তুমি নিজেই কথা বলে চেইক করে নাও আমি কার সাথে ইটিস পিটিস করছি।”

তমা ফোনটা কানে দিয়ে বেশ তেজী কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“এই কে আপনি? আমার বরের সাথে কিসের ইটিস পিটিস করছেন?”

ঐ পাশ থেকে লিমা মুখটা হা করে অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে বলল,,,,,,

—–“তমা না?”

সাথে সাথে তমার মুখের বিরক্তির ছাপটা মিইয়ে গেলো। তমা এক গাল হেসে মুখে হাত দিয়ে বলল,,,,,,

—–“লিমা না?”

—–“হুম লিমা। তুই তমু?”

—-“হুম তোর বেস্টি তমু। এই…. তুই আমার হাজবেন্ডের নাম্বার পেলি কোত্থেকে?”

লিমা মাথায় শয়তানী বুদ্ধি এঁটে কিছুটা লাজুক ভঙ্গিতে বলল,,,,,,

—-“কল তো আমি করি নি। করেছে তোর হাজবেন্ড।”

তমা চোখ, মুখ লাল করে জায়ানের দিকে তাকালো। রাগে তমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। তমার রাগী ফেইস দেখে জায়ান বেশ বুঝতে পেরেছে লিমা উল্টো পাল্টা কিছু বলেছে। তমা জায়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মনটা খারাপ করে লিমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“তোর সাথে কি জায়ানের আগের থেকে পরিচয়?”

—-“না রে এই তো কিছু দিন হলো উনার সাথে আমার ফেইসবুকে পরিচয়। তোর বর টা না বেশ হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং। আমার তো বেশ লাগে। তাই এক্টু ভাব জমানোর চেষ্টা করছি। বলা যায় না, হয়তো সেকেন্ড চান্স আমি ও পেতে পারি।”

লিমা আর কিছু বলতে পারল না এর আগেই তমা ফোনটা কেটে কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফেলল। জায়ান জোরে সোরে এক্টা ঝটকা খেয়ে দৌঁড়ে তমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,

—–“এই তমু কি হয়েছে? তুই এভাবে কাঁদছিস কেনো?”

তমা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে আর জায়ানের বুকে এলোপাথারি কিল ঘুষি মেরে বলছে,,,,,,,

—–“লিমার সাথে তুমি এতোদিন ধরে টাচে ছিলে, অথচ আমাকে একবার ও বলো নি। আমার বেস্টুর সাথে ভালোই ভাব জমিয়েছ। লিমার মনে তো অলরেডি লাড্ডু ফুটছে। শোন…. তুমি আর কোনো দিন আমার সাথে কথা বলবে না। তোমার সাথে ব্রেকাপ।”

কথা গুলো বলেই তমা খুব জোরাজুরি করে জায়ানের থেকে নিজেকে সরিয়ে যেই না সামনের দিকে পা বাড়ালো অমনি জায়ান তমাকে হেচকা টান দিয়ে বেডের উপর ফেলে জায়ান ও তমার উপর শুয়ে পড়ল। তমা অনেক ছোটাছুটি করছে জায়ানের থেকে নিজেকে সরানোর জন্য। কিন্তু জায়ানের শক্তির সাথে সে কিছুতেই পেরে উঠছে না। তমার চোখ থেকে এখনো পানি গড়িয়ে পড়ছে। জায়ান এসব সহ্য করতে না পেরে হুট করে তমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। তমা হাত দিয়ে জায়ানকে ঠেলছে। জায়ান কিছুটা বিরক্ত হয়ে তমার হাত দুটো টাইট করে চেপে ধরে তমার ঠোঁটে চুমো খেতে লাগল। এক পর্যায়ে তমা খানিক শান্ত হয়ে গেলো। জায়ান এবার তমার ঠোঁট ছেড়ে তমার দুচোখে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,

—-“লিমা মজা করেছে তোর সাথে। ওর সাথে আজ প্রথম বার আমার কথা হলো। তাও আবার বড় ভাবী হিসেবে। আসলে লিমা জাবেদ ভাইয়াকে পছন্দ করে। জাবেদ ভাইয়ার সাথে কথা বলার সময় ই লিমা এসে ফোনটা কেড়ে আমার সাথে কথা বলেছে। লিমার নামে আমরা দুই ভাই মিলে চর্চা করছিলাম তো তাই সে প্রচন্ড রেগে গেছে। তুই খামোখা আমাকে ভুল বুঝলি তমু। এক্টা কথা কান খুলে শুনে রাখ। জায়ান জীবনে কেবল এক জনকেই ভালোবেসেছে আর একজনকেই বিয়ে করেছে। তা ও আবার অনেক ধরনের ফাইট করে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে। যতোদিন পর্যন্ত জায়ানের নিশ্বাস চলবে ততদিন পর্যন্ত জায়ান কেবল একজনকেই ভালোবেসে যাবে। সেই একজনটাই হলো আমার অর্ধাঙ্গিনী। আমার তমু। ভালোবাসায় বিশ্বাস রাখতে হয় তমু। ভালোবাসার মূল খুঁটিই হলো বিশ্বাস। আজ যা বুঝতে পারলাম তুই আমাকে বিশ্বাস করিস না। বিশ্বাস করলে হয়তো এতো বড় ভুল টা করতে পারতি না। আর এভাবে ও আমার চোখের সামনে কাঁদতি না। আমি তোর চোখের জল সহ্য করতে পারি না তমু। আমার মনকে নাঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য তোর চোখের জল ই যথেষ্ট।”

কথাগুলো বলেই জায়ান তমার উপর থেকে উঠে সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তমা এখনো শুয়ে শুয়ে কেঁদে যাচ্ছে। তমা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,

—-“আমি জানি জায়ান খুব রাগ করেছে আমার উপর। আমি খুব খারাপ এক্টা মেয়ে। কিছু না বুঝে শুনেই জায়ানকে সন্দেহ করে বসলাম। জঘন্য ভুল করেছি আমি। জায়ানের কাছে আমার ক্ষমা চাইতে হবে। জায়ানের রাগ ভাঙ্গাতে হবে।”

কথা গুলো বলেই তমা শোয়া থেকে উঠে চোখের জল গুলো মুছে রুমে থেকে বের হয়ে গেলো জায়ানকে খুঁজতে।

ঐদিকে, লিমা ফোনটা কেটে হাসতে হাসতে বেহুশ হয়ে যাচ্ছে। জাবেদ বেকুব হয়ে লিমার দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে লিমা হাসি থামিয়ে জাবেদের গালে এক্টা টাইট চুমো খেয়ে বলল,,,,,,,,

—-“প্রস্তুত হয়ে যান আমার লাভ টর্চার সহ্য করতে। আপনাকে আমি নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুড়াবো। শেষ পর্যন্ত আপনি আমার গলায় ঝুলবেন। আজ শুধু গালে চুমো খেলাম। কাল ঠোঁটে চুমো খাবে। আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকবেন।”

কথাগুলো বলেই লিমা জাবেদকে চোখ মেরে হেলেদুলে হাঁটতে হাঁটতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। জাবেদ গালে হাত দিয়ে মুখটা হা করে লিমার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। জাবেদ এতো এতো ঝটকা সহ্য করতে না পেরে ঠাস করে বেডের উপর শুয়ে গেলো। সে প্রায় সেন্সলেস হয়ে আছে।

তাহাফ গাড়ি নিয়ে বাড়ি পৌঁছে গেছে। সে আপাততত নিজেকে শান্ত প্রকৃতির ছেলে হিসেবে সবার কাছে প্রেজেন্ট করতে চায়। কেউ যেনো ওকে সন্দেহ করতে না পারে তাই। তাহাফ গাড়ি থেকে নেমে খুব শান্তভাবে ধীর পায়ে হেঁটে বাড়ির ভিতর ঢুকে সোজা ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ল। মিসেস তারিন তাহাফকে দেখা মাএই এক গাল হেসে তাহাফের জন্য নাস্তা প্রিপেয়ার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তাহাফ মৃদ্যু হেসে মিসেস তারিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“তুমি ও খেতে বসো আম্মু। আ’ম ডেম সিউর তুমি এখনো কিছু খাও নি।”

মিসেস তারিন তাহাফের হাসি মুখটা দেখে চোখের জল ছেড়ে তাহাফের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এইভাবেই সবসময় হাসিখুশি থাকবি বাবা। অনেক দিন হলো আমার সাথে এতো ভালো করে কথা বলিস না। আজ নিজেকে বড্ড প্রফুল্ল লাগছে।”

তাহাফ মলিন হেসে মিসেস তারিনকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,

—-“চেষ্টা করব আম্মু।”

মিসেস তারিন তাহাফের মাথায় চুমো খেয়ে ছেলেকে খুব আদর করে জেলিমাখা পাউরুটি মুখে পুড়ে দিচ্ছে। তাহাফ ও ফাঁকে ফাঁকে মিসেস তারিনের মুখে পাউরুটি পুড়ে দিচ্ছে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে মা, ছেলের এমন ভালোবাসা দেখছে জায়ান। তাহাফের শান্ত রূপ দেখে জায়ান খুবই মুগ্ধ। জায়ান তাহাফের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসছে আর বলছে,,,,,,

—-“তাহাফ ভাইয়াকে এমন শান্ত রূপে খুব মানায়। কেনো যে তাহাফ ভাইয়া নিজেকে এতোটা হিংস্র করে তুলছে আই ডোন্ট নো। ভালোবাসলে যে পেতেই হবে এমন তো কোনো নিয়ম নেই। আমি তমাকে পেয়েছি কারণ তমা আমার ভাগ্যে ছিলো। ভাগ্য কখনো খন্ডানো যায় না। সবটা বুঝার পরেও তাহাফ ভাইয়া কেনো নিজেকে শুধরে নিচ্ছে না? মাঝে মাঝে খুব মায়া হয় তাহাফ ভাইয়ার জন্য।”

এসবের মাঝেই হুট করে তমা এসে পিছন থেকে জায়ানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল,,,,,,,

—-“আমাকে ক্ষমা করে দাও জায়ান। আমি বুঝতে পারি নি তুমি এতোটা হার্ট হবে। কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমাকে সন্দেহ করব না। অবিশ্বাস ও করব না। প্লিজ এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

জায়ান বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে তমাকে হেচকা টান দিয়ে ওর সামনে দাঁড় করিয়ে তমার চোখের জল গুলো মুছে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“আমাকে অবিশ্বাস করার জন্য আমি কষ্ট পাই নি তমু। তুই কেঁদেছিস বলে আমি কষ্ট পেয়েছি। তুই কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়। সহ্য করতে পারি না।”

তমা জায়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জায়ানের শার্ট আঁকড়ে ধরে বলল,,,,,,,

—-“আর কখনো কাঁদব না। প্লিজ তুমি আমার সাথে আর রাগ করে থেকো না।”

—-“রাগ করি নি পাগলী। জাস্ট এক্টু খারাপ লেগেছে। অবশ্য তুই যদি এক্টু কৃপা করিস তাহলে খারাপ লাগাটা ও উধাও হয়ে যাবে।”

তমা বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল,,,,,,

—-“কি করতে হবে বলো?”

জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,,,,,,

—-“ঠোঁটে চুমো খেতে হবে।”

সাথে সাথেই তমা লজ্জায় চুপসে গেলো। তমা পারছে না লজ্জায় জায়ানের বুকের ভিতর ঢুকে যেতে। জায়ান ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে হু হা করে হেসে দিলো।

তমা আর জায়ানের খুনসুটি, জাবেদের সাথে লিমার লাভ টর্চার, ভিতরে ভিতরে তাহাফের শয়তানী চাল। এভাবেই কেটে গেলো টানা পাঁচ দিন।

পাঁচ দিন পর,,,,,,

তমাদের পুরো বাড়ি জুড়ে ইয়া বড় প্যান্ডেল করা হয়েছে। চারিদিকে হাসি খুশি উপছে পড়ছে। আজ রাতেই তমার গায়ে হলুদ। দুই পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তমাদের বাড়িতেই জায়ান আর তমার বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠান হবে।। হলুদ থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত সব। জায়ানের পরিবারের সবাই এসে তমাদের বাড়িতে উপস্থিত। সাথে জয়া আর আকাশ ও আছে। দুই দিন হলো জয়া কনসিভ করেছে। আকাশ আর্দশ স্বামী হয়ে জয়াকে ভালোবেসে বুকে আগলে নিয়েছে। দুজনই বিবাহিত জীবনে বেশ খুশি।

সন্ধ্যা সাতটা,,,,,

জায়ান বেশ ব্যস্ত প্যান্ডেলের কাজে। আর তমা ব্যস্ত সাজগোজে। তমার সাথে জয়া আর লিমা ও আছে। আজ সকালে লিমা তমার বাড়িতে চলে এসেছে। লিমা আর জাবেদের ভালোবাসা জমে পুরো ঘি হয়ে গেছে। জাবেদ এখনো ইরফানের বাড়িতে। এই মুহূর্তে জাবেদের কুমিল্লা আসাটা জায়ানের সেইফ মনে হচ্ছে না। তাই সে জাবেদকে বিয়ের দিনই আসতে বলেছে। অন্যদিকে তাহাফ জাবেদকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যাচ্ছে। এই পাঁচ দিন তাহাফ বেশ শান্ত ছিলো। জায়ানের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে নি। তাহাফের এমন শান্ত রূপটাই জায়ানের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করছে।

তমা সন্ধ্যা সাতটা থেকে সাজা শুরু করেছে। পার্লারের মেয়েরা এসে তমাকে খুব উওম রূপে সাজানোর চেষ্টা করছে। তমা বেশ খুশি। কিছুক্ষন পর পর সে মিনমিনিয়ে হাসছে। জায়ান বেশ ব্যস্ত ডেকোরেটিং এর কাজ নিয়ে। জায়ানের সাথে তমাল আর আকাশ ও আছে। তবে তাহাফ মিসিং। সন্ধ্যা হওয়ার পর থেকেই তাহাফকে দেখা যাচ্ছে না। জায়ান ভীষন টেনশানে আছে তাহাফকে নিয়ে। এভাবে কাজে, টেনশানে কেটে গেলো প্রায় দুই ঘন্টা।

ঘড়িতে রাত নয়টা। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে ৯:৩০ মিনিট থেকে। মিঃ জামাল এসে জায়ানের কান মলে বলল,,,,,,

—-“রাত কয়টা বেজেছে খবর আছে? আর আধ ঘন্টা পরেই হলুদের অনুষ্ঠান। এক্ষনি তুই রুমে যাবি। তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে সোজা স্ট্যাজে চলে আসবি। কথা গুলো কানে ঢুকেছে?”

জায়ান নাক, মুখ কুচকে উহ্ আহ্ করে বলল,,,,,,

—-“প্লিজ আব্বু কানটা ছাড়ো। আমি এক্ষনি রেডি হয়ে আসছি।”

মিঃ জামাল এবার জায়ানের কানটা ছেড়ে দিয়ে তমাল আর আকাশকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“তোমরা ও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে স্ট্যাজে চলে এসো।”

কথাটা বলেই মি জামাল স্ট্যাজে চলে গেলো। স্ট্যাজে বাড়ির সবাই সেজে গুজে হাজির। এবার শুধু বর কনে আসলেই হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।

জায়ান, তমাল আর আকাশ হম্বিতম্বি হয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো। তমাল আর আকাশকে রুমে রেখে জায়ান একবার স্টোর রুমে গেলো। ল্যাপটপটা অন করে জায়ান পুরো বাড়ির সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেইক করে দেখল কোথা ও কোনো বিপদ বা আক্রমন উৎ পেতে আছে কিনা। কিন্তু না জায়ানের চোখে কিছুুই পড়ে নি। সবকিছু স্বাভাবিক। তবে তাহাফের অনুপস্থিতি জায়ানকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে। জায়ান আপাতত নিজেকে শান্তনা নিয়ে স্টোর রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুককেই জায়ান কিছু এক্টা মনে করে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে তাহাফের নাম্বারে কল লাগালো। প্রথম কল দেওয়ার সাথে সাথেই তাহাফ ফোনটা তুলে ফেলল। জায়ান মলিন হেসে তাহাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“তাহাফ ভাইয়া কোথায় তুমি?”

তাহাফ বেশ ব্যস্ত সুরে বলল,,,,,

—-“আমি তো অফিসে। কেনো?”

—-“আজ আমার আর তমার গায়ে হলুদ। আর তুমি কিনা অফিসে?”

—-“আমার ফিরতে এক্টু লেইট হবে তোরা অনুষ্ঠান শুরু করে দে।”

কথাটা বলেই তাহাফ কলটা কেটে রাগে জিদে চোয়াল শক্ত করে যেই না ফোনটা হাত থেকে ছুড়ে মারতে যাবে এর আগেই তাহাফের কল বেজে উঠল। তাহাফ তাড়াহুড়ো করে ফোনের স্ক্রীনে চোখ বুলিয়ে মুহূর্তেই শয়তানী হাসি দিয়ে কলটা চট জলদি রিসিভ করে ফেলল। কলটা রিসিভ করার সাথে সাথেই ঐ প্রান্ত থেকে কেউ বেশ খুশি খুশি কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“বস সুখবর আছে।”

তাহাফ বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল,,,,,,

—-“তাড়াতাড়ি বল। নিশ্চয়ই জাবেদের খবর পেয়েছিস?”

—-“হু বস একদম ঠিক বলেছেন। জাবেদ ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের বাড়িতে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ঠিকানাটা আপনাকে এক্ষনি সেন্ড করছি।”

—-“ওকে, তাড়াতাড়ি কর। হাতে বেশি সময় নেই।”

কথাটা বলেই তাহাফ কলটা কেটে দিলো। কলটা কাটার সাথে সাথেই ম্যাসেজের টুং টাং শব্দ এলো। তাহাফ খুব মনযোগ দিয়ে ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ম্যাসেজটা দেখে শয়তানী হাসি দিয়ে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,

—-“কাল ই জমবে মজা। জায়ান কে বরের জায়গা থেকে উঠিয়ে কিভাবে আমাকে ঐ বরের জায়গাটা দখল করতে হয় তা আমার ভালো করেই জানা আছে।”

তাহাফ কথা গুলো বলছে আর পৈশাচিক হাসিতে মেতে উঠছে।

অন্যদিকে,,,,,

জায়ান কিছুটা চিন্তা মুক্ত হয়ে জাবেদকে কল করল। জাবেদের নাম্বারটা ওয়েটিং এ আসছে। জায়ান কলটা কেটে আবার কল করল। আবারো জাবেদের কলটা ওয়েটিং। জায়ান কিছু এক্টা ভেবে সোজা লিমার নাম্বারে কল লাগালো। লিমার ফোনটা ও ওয়েটিং। জায়ান এতক্ষনে বুঝতে পেরেছে জাবেদ কেনো ওয়েটিং এ আছে। জায়ান মুচকি হেসে ফোনটা বেডের উপর রেখে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। প্রায় পনেরো মিনিট পর জায়ান ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেডের উপর রাখা হলুদ পান্জ্ঞাবী টা গায়ে জড়িয়ে নিলো। আয়নার দিকে তাকিয়ে জায়ান পান্জ্ঞাবীর বোতমগুলো লাগাচ্ছে। জায়ানের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। অজানা কোনো ভয়ে জায়ানের বুকটা ধুকপুক করছে।

পান্জাবীর বাটন লাগিয়ে জায়ান চুল গুলো স্পাইক করে, হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ ঝুলিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। জায়ানের পিছু পিছু তমাল আর আকাশ ও রেডি হয়ে ওদের রুম থেকে বের হলো। তিনজনই হাঁটতে হাঁটতে স্ট্যাজে চলে গেলো।

তমার সাজগোজ এতক্ষনে শেষ হলো। হলুদের সাজে তমাকে ভারী সুন্দর লাগছে। হলুদ পাড়ের কাপড়, পুরো শরীরে হলুদ ফুলের গহনা। মাথায় রাউন্ড করা হলুদ ফুলের টিকলি। হাতে ফুলের মালা। কোমড়ে বিছা, নাকে বড় এক্টা নত। চুলটা হাত খোঁপা করা। খোঁপায় ফুটন্ত গোলাপ ফুল গাঁথা। ঠোঁট ভর্তি লাল লিপস্টিক, চোখ ভর্তি কাজল। মুখে চিরল হাসি। সব মিলিয়ে তমাকে অসম্ভব সুন্দুরী লাগছে। জয়া আর লিমা ও খুব সেজেছে। লিমা তো সেজেগুজে কিছুক্ষন পর পর জাবেদকে হোয়াটস এ্যাপে ছবি সেন্ড করছে। জাবেদ কৃএিম লিমাকে দেখেই কোনো রকম মনটাকে জুড়িয়ে নিচ্ছে।

লিমা আর জয়া তমাকে ধরাধরি করে রুম থেকে বের করে সোজা স্ট্যাজে নিয়ে গেলো। জায়ান অবশ্য টেনশানের চাপে পড়ে তমার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। হুট করে জায়ানের তমার কথা মনে পড়ল। জায়ান হম্বিতম্বি হয়ে স্ট্যাজ থেকে উঠে যেই না সামনে পা বাড়ালো অমনি জায়ান থমকে গেলো।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,